0

ছোটগল্পঃ বাবুই

Posted in


ছোটগল্প



UNKNOWN NUMBER 
বাবুই 



এপাশ ওপাশ করতে করতে যখন টেবিল ক্লকটার দিকে চোখ গেল তখন রাত ১ টা । কিছুটা বিরক্তিভাব নিয়েই ঋষি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো । কারণ আজ আবার রাত জাগতে হবে, ঘুম আসবে না আজ ওর । এরকম প্রায়ই রাত জাগতে হয় ওকে , ঘুম আসে না । অভ্যেশবশত ঋষি মোবাইল এর সাথে হেডফোন কানেক্ট করে গান শুনতে শুনতে জানলার বাইরের দিকে দেখতে থাকলো । দূরের ল্যাম্প পোস্ট এর ক্ষীণ আলোটা যেন তেন প্রকারে এই ঘন অন্ধকারের সাথে নীরবে লড়াই করে যাচ্ছে । আর সেই নীরবতাকে মাঝেমধ্যে ছন্দ তুলে ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনের কূঁউউ ঝিক ঝিক শব্দ । এইসবের মধ্যেই ঋষি ভেসে চলেছে গানের সুরের স্রোতে । 



এমন সময় মেসেজ টোন টা বিকট আওয়াজ করে ছন্দপতন ঘটালে ঋষি চমকে তাকায় মোবাইল স্ক্রিনে । এত রাতে এস এম এস... তাও ওর প্রাইভেট নম্বরে , নম্বর টাও অপরিচিত ! একটু যেন অবাকই হয় । কারণ এত রাতে তাকে এস এম এস করার মত কেউ নেই । ঋষি মোবাইল এ ওকে বাটন টা প্রেস করতেই মেসেজ টা ওপেন হয়ে গেল । লেখা আছে, “what are you doing now?” । কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে পাল্টা রিপ্লাই দিল ঋষি, “ who is this ?”

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো, “ that’s not important who I am .... tar thekeo important holo eto rate jege tui ki korchis? Ekhono tor jege thakar ovyesh jayni ? naki preme porechis? Which one re ?? ”

মেসেজ টা পড়ার পর ঋষি এটুকু নিশ্চিন্ত হল যেই হোক না কেন , সে তাকে ভাল করেই চেনে । কিন্তু কে হতে পারে ...! ওকে চেনার মধ্যে সুপ্রতিম, অদিতি, দিপ্যায়ন আর নীল, যাদের কাছে ওর এই প্রাইভেট নাম্বারটা দেওয়া আছে ওর বাবা মা ছাড়া । এদের কারোরই এই সময় হেঁয়ালি করার কথা নয় । কারণ সুপ্রতিম কাজের সূত্রে অ্যামেরিকায় থাকে । বছরে দু-একবার আসে , দেখা করে যায় । দিন রাত প্রায় কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকে । দিপ্যায়ন বিয়ে করে রীতিমত সাংসারিক হয়ে উঠেছে , তাই তার নাম লিস্ট থেকে বাদ দেওয়াই ভালো । অদিতি একদমই অন্যরকম ...ওর আবার এসব হেঁয়ালি ভালো লাগে না, এমনকি কেউ ওর সাথে এরকম হেঁয়ালি করার সাহসটুকুও পায় না বোধহয় । বাকি পড়ে রইলো নীল , শান্তশিষ্ট গোবেচারা টাইপের... লোককে এভাবে বিরক্ত করা (সে চেনা হোক বা অচেনা) ওর মতে একপ্রকার অন্যায় । তাই ও এসব কল্পনাও করতে পারে না । আচমকা মেসেজ টোন টা বিকট আওয়াজ করে ঋষির ভাবনায় ইতি টানে...।



“ki re , ki holo reply nei je, khnujte beroli naki ami ke..” বিরক্ত হয়ে ঋষি একটু রাগ দেখিয়েই রিপ্লাই দিলো , “porichoy jodi gopon rakhtei hoy tobe keno ei majh rate disturbe korchhen, raat dupure evabe stranger der sathe adda dewar saukh amar nei, asha korbo sms kore ar birokto korben na.” . এরপর বেশ কিছুক্ষণ কোনও মেসেজ নেই ।ঋষি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল লাস্ট মেসেজে কাজ না হলে এবার ডিরেক্ট ফোন করবে । কিন্তু যে মেসেজেই নিজের পরিচয় গোপন করতে চাইছে সেকি ফোনটা আদৌ রিসিভ করবে…! 


এইসবের মধ্যেই কখন যে দু- ঘণ্টা পার হয়ে গেছে বোঝাই যায়নি । এখন রাত ৩ টে বাজে । চারিদিক যেন নিস্তব্ধতার চাদর গায়ে দিয়েছে । এমন সময় মেসেজ টোনের বিকট আওয়াজটা সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বেজে উঠলো ।ঋষি মোবাইলটা নিয়ে মেসেজ পড়তে শুরু করল , “ number ta unknown , ami noi. Sei sutre porichoy o goponio noy.amay tui chinis, Aj 8TH JANUARY.” একেই ঘুম আসছে না , তার ওপর আবার unknown নাম্বারের উটকো ঝামেলা , কার ভালো লাগে । বিরক্ত হয়ে ঋষি মোবাইলের সুইচ অফ করে দিলো । দু-তিন মিনিট পরেই কি মনে হতে মোবাইল অন করে unknown নাম্বার থেকে আসা লাস্ট মেসেজ টা আবার পড়লো । মেসেজের লাস্ট লাইনে বড় বড় অক্ষরে লেখা আজকের তারিখ “Aj 8TH JANUARY” এর ওপর তাকিয়ে ঋষি একটু অবাক হয়ে ভাবল ।


মনে মনে বিড় বিড় করে দু-তিন বার আজকের তারিখটা উচ্চারণ করল । মনে করার চেষ্টা করল আজকের দিনটা এমন কি যা দিয়ে চেনা যাবে এই unknown নাম্বার থেকে মেসেজ করা ব্যাক্তিটি কে । তাড়াতাড়ি করে মোবাইলের ক্যালেন্ডার এ রিমাইন্ডার দেখতে থাকলো । তাড়াতাড়ি মোবাইল ক্যালেন্ডারে রিমাইন্ডার দেখতে লাগলো । কিন্তু কোনও লাভ হল না ... 8th January ব্ল্যাঙ্ক । কোনও রিমাইন্ডার নেই । একটু হতাশ হয়েই জানলার পাশে রাখা টেবিল চেয়ারটায় গিয়ে বসলো । ভাবতে থাকলো কিভাবে জানবে আজ কি । এমনই সময় মনে পড়ে ছোট্টবেলায় তৈরি করা বার্থডে রিমাইন্ডার ডাইরীর কথা । সঙ্গে সঙ্গে টেবিলে রাখা টেবিল ল্যাম্পটার সুইচ অন করে ব্যস্ত হয়ে টেবিলের ড্রয়ার এ খুঁজতে শুরু করল । বেশি সময় না নিয়েই নীল কভারে মোড়া ডাইরীটা বেরিয়ে এলো । ঋষি হন্তদন্ত ভাবে ডাইরির পাতা ওলটাতে লাগলো ।



8th JANUARY ... পাতাটায় হলদেটে ভাব ধরেছে যা অনেক দিনের পুরনো এর অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে । রঙ পেন্সিল দিয়ে কাঁচা পাকা হাতে ছোট ছোট ফুল আঁকা পুরো পাতা জুড়ে , তারই মাঝে বড় বড় করে লেখা “ HAPPY BIRTHDAY SRI ” । ঋষি ফ্ল্যাশব্যাক এ গিয়ে পুরনো দিনগুলোর কথা ভাবতে থাকলো । সৃ... ছোট্টবেলার বেস্টফ্রেন্ড ... দুষ্টু মিষ্টি খেলার সাথী ... তার ক্লাসমেট ... ভালোলাগা ... সবকিছুই । যাকে শুধু মনে মনে ভালবেসেছে এতদিন ধরে, যার জন্য সে যেকোনো অসাধ্য সাধন করতেও রাজি একপায়ে, যে হঠাৎ করেই কিছু না জানিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলো লোকালয়ের ভিড়ে । আজ এতবছর পর আবার তার মেসেজ ...! ঋষি যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না , সৃ এর সাথে আবার যোগাযোগ হতে পারে । কারণ শুনেছিল সৃ এর বাবা কাজের সূত্রে আজ এখানে তো কাল ওখানে । 

মোবাইলটা তুলে নিয়ে ভাবল ফোন করবে কিনা । তারপর সব ভাবনাকে ঝেড়ে ফেলে মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করল “ HAPPY BIRTHDAY SRIJONEE” , না সৃ নয় ... সৃজনী ই লিখলো । পাঠিয়ে দিলো unknown নাম্বারে , থুড়ি, নাহ্‌ আর unknown নেই । দু-এক মিনিট চুপ । তারপর মোবাইলটা বেজে উঠলো সুর করে । নাহ এবারে মেসেজ নয় , ফোন এসেছে সৃ এর । ঋষির হার্টবীটটা যেন অজান্তেই বেড়ে গেলো । ফোন রিসিভ করল ঋষি ।




বলল , , “ হ্যালো ...”

“ চিনতে পারলি তাহলে ...?” , ওপাশ থেকে সেই মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এলো ।

“ হ্যাঁ , পারলাম । হ্যাপি বার্থডে সৃ ... সৃজনী । কেমন আছিস ? ” , কথাগুলো একটু কেটে কেটে বলল ঋষি ।

,
“থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ... ভালো আছি, তুই কেমন আছিস? কাকু কাকিমা কেমন আছেন?”

“সবাই ভাল আছে ।” ঋষি যেন কথা খুঁজে পাচ্ছে না , অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই বলতে পারছে না ।


“হুমম ... তবে শুকনো উইশে কাজ চলবে না, গিফট চাই আমার ... বার্থডে গিফট ...” 

“ঠিক আছে , বল কি চাই ...?” অন্য কেউ হলে ঋষি এতক্ষণে বলত , গিফটের আগে ট্রীট চাই । কিন্তু সৃ এর কোনও আবদারই ঋষি না করতে পারেনা বললেই চলে ।


“দেখ ভেবে নে , আগেই বলে দিচ্ছি যা চাইব দিতে হবে কিন্তু । না করতে পারবি না ।”

“আচ্ছা ঠিক আছে , বল কি চাই তোর?” আগেই বলেছি ঋষি সৃ এর কোনও আবদারকেই চট করে না করতে পারে না ।


একটু চুপ থেকে সৃজনী বলল , “ সৃজনী নয় , আমার সৃ নামটা ফেরত চাই । শুধু সৃ ... তোর সৃ ...”

নিজের কান কে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না ঋষি । মনে মনে বলতে থাকলো ... কি বলছে সৃ ! আমার সৃ ...। শুধু আমার ...! ভেতরে ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছে । চিৎকার করে বলতে চাইছে “ ইউরেকা ইউরেকা ... পেয়েছি আমি , পেয়েছি ...”


নীরবতা কাটিয়ে অস্ফুটে ঋষি বলল , “ সৃ ... ”




বাইরে তখন ভোরের আলো ফুটে গেছে । পাখিদের কিচির মিচির রব শোনা যাচ্ছে । জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া এসে ঢুকে বার্থডে রিমাইন্ডার ডাইরির পাতা গুলো উল্টে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক । বার্থডে গিফট টা আসলে যে কে কাকে দিলো তার সাক্ষী রয়ে গেল একমাত্র সেই বার্থডে রিমাইন্ডার ডাইরী ।।

0 comments: