সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়১৩৪৮ সনের পয়লা বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ আশি ছুঁইছুঁই। কবির শেষ জন্মোৎসব পালনের অনুষ্ঠান। ক্ষিতিমোহন সেন পাঠ করলেন কবির লিখিত এক ভাষণ। 'সভ্যতার সংকট' শিরোনামের সেই প্রবন্ধের উৎসারণ সামগ্রিক এক হতাশা থেকে। যা কিছু শোভন, সুন্দর, ন্যায়ানুগ, তার সর্বাঙ্গে যেন দুর্দশার গ্রহণ! তিনি লিখলেন, 'প্রত্যহ দেখতে পেলুম, সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কি অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে!'
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর চুরাশি বছর পরে আমরা আজ যে সামাজিক পরিমন্ডলে আবদ্ধ, সেখানে দাঁড়িয়ে কথাগুলি কি একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে করা হয়ে থাকলেও এমন এক যুগমানবের কলম-নিঃসৃত মনে হয় না, যিনি আজকের দিনটি স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলেন? অথচ সুন্দরের পূজা ছিল তাঁর জীবনের ব্রত।
বেশি নয়, মাত্র আটমাস আগের একটি ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল নগরজীবন। কর্তব্যরত একজন তরুণী-চিকিৎসক ধর্ষিত এবং খুন হয়েছিলেন। ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি থেকে জল গড়িয়েছিল অনেকদূর। বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছে গিয়েছিল এক মহাদেশ থেকে অন্যত্র। এক যুগেরও বেশি সময় আগে ঘটে যাওয়া 'নির্ভয়ার স্মৃতি' এখনও বহু মানুষের মনে অমলিন। কিন্তু যে 'রিপুর প্রবর্তনায়' একের পর এক ঘটে চলেছে মানবতার এই বলাৎকার, তাকে বশে আনা গেছে কি? যাবে কোনওদিন? আপাতভাবে এমন প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জটিল নানান অনুষঙ্গ। জিন যার অন্যতম। একমাত্র প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গেই বিশেষ এই রিপুটিকে বশে আনার বিষয়টি সম্পর্কিত বলে ভাবা মানবসমাজের পরিচায়ক।
চারপাশের লক্ষণগুলি কিন্তু অন্য ভবিষ্যত নির্দেশ করে। মহারাষ্ট্রের অম্বাজোগাই শহরে একজন মহিলা আইনজীবী প্রকাশ্য, এক বর্বর শারীরিক নিগ্রহের শিকার হলেন। দিল্লির অনতি দূরত্বে আইসিসিউ- এর ঘেরাটোপের মধ্যে ধর্ষিতা হলেন এক এয়ারহোস্টেস আর আমাদের এই বঙ্গে কী ঘটল? প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রথমে পাঁচ লক্ষ টাকার প্রতারণা তারপর অভিযোগ জানানোর ফলে সেই তরুণীকে ধর্ষণ!
এ কোন সমাজের অন্তর্গত আমরা? যা কিছু নিয়ে আমাদের গর্ব ছিল, তার সবকিছুই ভূলুণ্ঠিত। আর কি কখনও চেতনা ফিরবে? সামাজিক ন্যায় কি কখনও প্রতিটি প্রত্যন্তবাসীর নাগালে আসবে? কোনওদিন কি আমরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে কাটিয়ে উঠতে পারব রিপুর তমসা, দাঁড়াতে পারব নতুন এক ভোরের সামনাসামনি?
সুস্থ থাকুন। ন্যায়বদ্ধ থাকুন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।