Next
Previous
Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in



































এক সম্রাট মাটির তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন অনেক শতাব্দী জুড়ে। তাঁর সময়ে তিনি বিতর্কিত। মৃত্যুর বহু বছর পর আবার তাঁর রাজত্বে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ড আতশকাচের তলায়।

এই ঘটনাক্রম আমাদের খুব চেনা। এসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঘটনাবলী এই উপমহাদেশের বাসিন্দাদের প্রজন্মসঙ্গী। পরাধীনত্বের তকমা ঘুচিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু দ্বিজাতি তত্ত্বের 'সফল' প্রয়োগ জন্ম দিয়েছিল দুটি ভিন্ন রাষ্ট্রের। সেই বিষবৃক্ষটি রোপণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই ছিলেন স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সেনানী।

'সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।' স্বাধীনতার প্রায় আশি বছর অতিক্রান্ত। এখনও আমরা অর্জন করতে পারিনি সেই কাঙ্খিত পরিণতিবোধ, যা আমাদের জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের দিকে অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারত। কোনও একটি চলচ্চিত্র বা সাহিত্যকর্ম এখনও আমাদের আবেগকে এতটাই বিপথগামী করতে পারে, যার মূল্য দিতে হয় আমজনতাকে। এমন উদাহরণ ভুরিভুরি।

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ছবির কিছু দৃশ্য হঠাৎই যেন ঘুমন্ত বারুদের স্তূপে অগ্নিসংযোগ করল। অশান্তির আঁচ লাগল এমন অনেক মানুষের গায়ে, ইতিহাসের ওই পর্বের সঙ্গে সুদূরতম যোগাযোগও যাঁদের নেই। যাঁরা সঠিকভাবে জানেনও না ঠিক কী ঘটেছিল। আর যাঁরা আগুন লাগালেন তাঁরা? তাঁরা ইতিহাসের এমন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি সম্পর্কে কতটা অবগত আছেন? পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের দূরভিসন্ধি থেকে যে মন্তব্যগুলি করছেন, সেগুলি আরও কতবড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা কি মুহূর্তের জন্যও ভেবে দেখেছেন? তাঁরা সম্ভবত ভুলে গেছেন যে 'ইতিহাস' শব্দটির সত্যতা নিহিত আছে এটির অপরিবর্তনশীল রূপের মধ্যেই। ভালো বা মন্দ, সেটি যেমন, সেভাবেই তাকে গ্রহণ করতে হয়। যা প্রকৃত শিক্ষা আর পরিণতিবোধের পরিচায়ক।

সুস্থ থাকুন। সতর্ক থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in








একটি গান কোনও এক বিশেষ ভাষাগোষ্ঠীর অধরাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে, এমন ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু একটি বা দুটি গান রচনা করে, সেগুলিতে সুর এবং কন্ঠ দিয়ে একটি সংস্কৃতিতে চিরন্তন জায়গা করে নেওয়া সহজ কথা নয়। ভিড়ের মধ্যে অনায়াসে অনেক অগুনতি মাথার সঙ্গে অবলীলায় মিশে যেতে পারতেন যিনি, সেই সদ্যপ্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায় ঠিক এই রকমই এক উদাহরণ হয়ে রইলেন।

তাঁর নিজস্ব অননুকরণীয় উচ্চারণে তিনি যখন গেয়ে ওঠেন, 'পুবের আকাশ রাঙ্গা হল সাথী/ঘুমায়ো না আর' তখন আর এগুলি কোনও গানের পংক্তি থাকে না। রচয়িতা, সুরকার আর গায়কের স্তর ছাপিয়ে জেগে থাকে সচেতন একটি মানুষের অস্তিত্ব।

২০১৬ সালে বব ডিলানকে সাহিত্যের নোবেল প্রদান নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু নোবেল কমিটি তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। সত্যি বলতে কী, উৎকৃষ্ট কবিতার পরম আশ্রয়েই তো একটি গান হয়ে ওঠে সঙ্গীত। সেই অর্থে গান রচনা তো সাহিত্যচর্চাই!

এ বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি ১২৬ বছর পূর্ণ করলেন জীবনানন্দ দাশ। ঠিক তার দুদিন আগেই থেমে গেল প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের হাঁটা। প্রসঙ্গত দুজনেরই জন্ম অবিভক্ত বঙ্গের বরিশালে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যে অঞ্চলের খ্যাতি সুবিদিত। প্রতুলের মননও কি জীবনানন্দের মতো ছেয়ে নেই সেই অপরূপ প্রকৃতি? শেষ বিচারে তিনিও তাই এক অনন্য ভাষাশিল্পী।

আজ ভাষাদিবসে এই ভাবনা খুব সঙ্গত মনে হল।

সুস্থ থাকুন, দায়বদ্ধ থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in








বাতাসে আবার সেই পরিচিত বাৎসরিক উৎসবের ছোঁয়া। বইমেলা দোরগোড়ায়। এবারের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক দেরিতে। পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না। একটি ভয়াবহ অপরাধের আবহ আমাদের চিন্তন করে দিয়েছিল অবশ। উত্তাল হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক সমাজ। সেই সূত্রে সদ্য যখন কোনও একজনের শনাক্তকরণ আর সাজা ঘোষণা হল, আমাদের বিবেকের পরিশুদ্ধি হল কি? অপরাধ প্রবণতার বাস মানুষের মনের গভীরতম বিন্দুতে। অনেক ক্ষেত্রে আদিম এজাতীয় প্রবণতা জিনগত। সভ্যতার আলো, তা সে যত জোরালোই হোক না কেন, এখনও পৌঁছয়নি নিকষতম সেই স্থানে।

এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েও জোর গলায় নিজেদের সভ্য বলতে পারি কি? সম্প্রতি এক বিখ্যাত ব্যক্তির ওপর আততায়ী হামলা নিয়েও দেখা গেল রাজনৈতিক চাপানউতোর। অপরাধ এবং তার প্রেক্ষাপট কার্যত হয়ে পড়ল গৌণ।

বইয়েরই সম্ভবত একমাত্র সেই শক্তি রয়েছে, যা আমাদের ভাবনাকে করতে পারে যুক্তি আর ন্যায়সঙ্গত। দিতে পারে সৃজনশীল ডানা এবং অবশ্যই শুশ্রূষা করতে পারে রুগ্ন মনের। অপরাধের আঁতুড়ঘর যা।

সুস্থ থাকুন। সৃজনী থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in








সদ্য অতীত হয়ে গেল একটি দিন। ১৬ ডিসেম্বর। তিপ্পান্ন বছর আগে এই দিনটিতেই পরিসমাপ্তি ঘটেছিল তেরো দিনের এক যুদ্ধের। ভাষার গরিমা বজায় রাখার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা এক আন্দোলন থেকে অনেক প্রাণের বিনিময়ে জন্ম নিয়েছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দিনটি তাই অর্জন করেছিল এক অনন্য মর্যাদা। দিনপঞ্জিতে চিহ্নিত হয়েছিল 'বিজয়-দিবস' রূপে। ইতিহাসে এমন তুলনা মেলা ভার, যখন দুই পড়শি দেশ যৌথভাবে একটি দিনের উদযাপন করে। পাকিস্তানি বাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের যে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল, ভারত তার সর্বশক্তি নিয়ে সেই লড়াইয়ে সামিল হয়। চেতনায় এক হয়ে যায় একদা রাজনৈতিক বিভাজনের শিকার এক সংস্কৃতি, একটি ভাষা। যার নাম বাংলা। দুই বাংলায় একই উদ্দীপনায় আজও পালিত হয় ভাষাদিবস। একই কবির কথা দিয়ে গাঁথা দুদেশের জাতীয়সঙ্গীত। এও এক বিরল দৃষ্টান্ত।

এবছর 'বিজয় দিবস'-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন স্মরণ করলেন সেইসব বীর সেনানীর কথা, যাঁদের বলিদান ছাড়া ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতে পারত, সীমান্তের ওপার থেকে থেকে ভেসে এল বৈরিতার বাতাস। সরকারি প্রতিক্রিয়ায় বলা হল, ভারত রক্তস্নাত সেই দিনগুলির এক বন্ধুভাবাপন্ন অংশীদারমাত্র। তার বেশি কিছু নয়।

ঔপনিবেশিক প্রভুরা একদিন উপমহাদেশের মানচিত্রটি নতুনভাবে এঁকেছিলেন। আজ আবার যেন আরেকটি মানচিত্র রচিত হল। এবার আর ভৌগলিক নয়, মানসিক। আবার প্রমাণ হল রাজনীতির দায় বড় বিষম। প্রয়োজনে তা অস্তিত্বের মূল শিকড়টিতেই করতে পারে কুঠারাঘাত।

সুস্থ থাকুন। সচেতন থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in



































'বহির্বিমুখিতা' বা 'আত্মমগ্নতা' কি অসুখ? নাকি ব্যক্তিত্বের একটা ধরন? অজ্ঞতাবশে যে ধরনটি বুঝতে ভুল হয়ে যেতে পারে আমাদের। এমন ভ্রান্তি শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটলে তাকে কোনওভাবে ছাড় দেওয়া যায় কি? অমার্জনীয় কাজ তাহলে আর কাকে বলা হবে? 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ম শুধু তো কতিপয় খাঁচার তোতাপাখি তৈরি করা নয়! চারপাশকে চিনতে এবং আতশকাচের তলায় জরিপ করতে শেখানোই তো ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করে তোলা। তাদের মূল্যবোধের বুনিয়াদি গঠন তো নির্মিত হয় শিক্ষাক্ষেত্রের আবহেই। যে মূল্যবোধ সহজেই চিহ্নিত করতে পারে একটি ব্যাধি আর স্বতন্ত্র এক ব্যক্তিত্বের মাঝবরাবর অবস্থান করা সূক্ষ, প্রায় অদৃশ্য একটি রেখাকে। তা যদি না হত, গরিষ্ঠের স্থুল বিচারে অনেক কালজয়ী প্রতিভাই হয়ে যেতেন ব্রাত্য। কারণ তাঁরা আর পাঁচজনের মত ছিলেন না। 

তবুও তাঁদের সৃষ্টির সামনে নতমস্তকে দাঁড়াতে হয় আমাদের। এটাই স্বাভাবিক। তাই অটিজম-এর দোহাই দিয়ে যখন একটি বিদ্যালয় একটি ছাত্রকে দলবদ্ধ ভ্রমণ থেকে বাদ দিতে চায়, শরীরে রক্তস্রোত দ্বিগুণ বেগে বইতে শুরু করে।

সুস্থ থাকুন। দায়বদ্ধ থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর!
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in






বিচারের আশায় ইতিমধ্যে দু'মাস অতিক্রান্ত। প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতার যাবতীয় আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছে নিয়ম মেনেই। প্রাথমিকভাবে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্বে যাঁদের থাকার কথা ছিল, অনেক আগেই তাঁরা নিজগুণে নিষ্কৃতিলাভ করেছেন। এখন দোষারোপ এবং পাল্টা দোষারোপের খেলা চলছে। অবশ্য আগেই বলা হয়েছিল, 'খেলা হবে'। সে প্রতিশ্রুতির অন্যথা হয়নি।

মুশকিল হল কয়েকটি অবাধ্য ছেলেমেয়েকে নিয়ে। যারা প্রশাসনিক রদবদল এবং আরও কিছু অস্বস্তিকর দাবিদাওয়া নিয়ে আজ দু'সপ্তাহব্যাপী অনশনে। অনেক বিদ্রূপ, প্রলোভন এবং চাপের মুখেও এরা অনড়। অনমনীয়। এদের মূল শক্তি তারুণ্য এবং আদর্শবোধ। যার ভিত্তি নিশ্চিতভাবেই এক ধরনের মূল্যবোধের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা।

এমন দৃশ্য এ রাজ্য তো বটেই, এ দেশও দেখেনি কখনও। জটিল রাজনীতির আবহে এবং আবর্তে ভবিষ্যতে এই আন্দোলনের অভিমুখ কী হবে, তা অনুমান করা সহজ নয়। তবু টগবগে এই ছেলেমেয়েগুলি যে নতুন করে আমাদের ভাবতে শেখালো, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। মেকি অনেক সম্পর্কের খোলস খসে গেল দমকা এই হাওয়ায়। আগলহীন হয়ে পড়ল দম্ভের অট্টালিকাগুলি।

সুস্থ থাকুন। মননে থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in






আবার সেই উৎসবের দোরগোড়ায় আমরা। কিন্তু উৎসবের অর্থ কী? তার প্রয়োজনীয়তার গণ্ডি কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত? এইসব প্রশ্ন অনেকাংশে উত্তরগর্ভ। সেইসব উত্তর আবার জন্ম দিতে পারে বিবিধ জিজ্ঞাসার।

একথা অবশ্য অনস্বীকার্য এই বিষয়টির দুটি মূল ধারা - সামাজিক এবং ধর্মীয়। আবার এই দুই ধারার মধ্যে প্রধান সাযুজ্য স্বতস্ফূর্ততা। এই আপন অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত বহতা নদীর মতো সহজিয়া ভঙ্গীটিই এর প্রকৃত নিয়ন্ত্রক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষের সানন্দ যোগদান - যার অনুপস্থিতিতে একটি উৎসব কখনওই তার যথার্থ মর্যাদা পেতে পারে না। তাহলে এমন যদি ভাবা হয়, কোনও বিশেষ উপলক্ষ্যে দলবদ্ধভাবে মানুষের নিঃসঙ্কোচ একত্র হওয়াই একটি উৎসবের প্রাথমিক শর্ত, ভুল হবে কি? সেই যুক্তিতে যে কোনও উৎসবের একটি মানবিক মুখ থাকা নিতান্ত জরুরি।

আসন্ন বার্ষিক উৎসবের প্রেক্ষাপটে এই ভাবনাগুলি অত্যন্ত সঙ্গত মনে হওয়ার কারণ উৎসব পালনে ফতোয়ার ঘোষণা। আর একথা কি আমাদের জানা নেই যে ফতোয়া আর মৌলবাদ সর্বদা হাত ধরাধরি করে থাকে। সেক্ষেত্রে উদযাপনের মূল সুরটির যায় তাল কেটে। ফুটন্ত ভাতের গন্ধে মাতোয়ারা মানুষের চেয়ে উৎসবপ্রিয় আর কে আছে?

সুস্থ উৎসবে থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







কী লিখবো আমরা এই মাসিক পরিসরে? গত এগারো-বারো দিনের ঘটনাপ্রবাহে আচ্ছন্ন হয়ে আছে সমগ্র চেতনা। 'সংবেদনশীলতা' নামে যে শব্দটি আমাদের জানা আছে, তার প্রকৃত অর্থ আমরা ভুলতে বসেছি। আমরা যে সমাজবদ্ধ কোনও জীবপ্রজাতির অংশ তাও তো মনে হচ্ছে না আর।

একথা অনস্বীকার্য যে, সভ্যতার ইতিহাস চিরকালই বর্বরতাকীর্ণ। প্রতিবারই আমরা অবলীলায় অতিক্রম করে গিয়েছি কৃতকর্মের নব নব সোপান। এইভাবেই চলে আসছিল। এভাবেই চলে আসে কিন্তু হঠাৎ আসে একটি বাঁক - এক যুগসন্ধি। যখন 'এমন ঘটনা তো কতই ঘটে!' - জাতীয় মন্তব্য করে আর স্বতস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না।

এবারও ঠিক তেমনই হল। একটি নৃশংস, ভয়াল অপরাধ সংঘটিত হল। এ প্রসঙ্গে কোনও পরিসংখ্যান টেনে আনা শুধু আরেক ধরনের অপরাধ নয়, তাতে যে হতে পারে অসন্তোষের আগুনে ঘৃতাহুতি, প্রশাসন তা হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুলে যেতে চাইলেন। চেষ্টা করলেন, জনমানসে 'অন্য গল্পে'র রসদ গুঁজে দিতে। এখানেই চরম ভুলটা হল। সমাজের নানা স্তরে, নানান বিষয়ে পুঞ্জীভূত যে আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছিল, তা যেন ছিল এই স্ফুলিঙ্গটির অপেক্ষায়। ফলত হল কী, সেই ছাইচাপা আগুন এখন দাবানলের আকার ধারণ করেছে প্রায়।

আপাতত দেখার বিষয় এটাই যে নির্যাতিতার পরিবার ন্যায় বিচার পেলেন কিনা। সমগ্র আন্দোলনের সার্থকতা সেখানেই। সৃজনী সংস্কৃতিরই বা কী মূল্য নির্ধারণ করব আমরা… 

সুস্থ থাকুন। দায়বদ্ধ থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান!
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







এই সম্পাদকীয় লেখার সময়ে চারপাশটা ভারী হয়ে আছে। একটা থমথমে পরিবেশ। মৃতের সংখ্যা শতাধিক  ইতিমধ্যেই। অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী যা আরও বেশি। আহত অসংখ্য। যার সূত্রপাত ঘটেছিল একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসাবে, এখন তা রক্তাক্ত সংগ্রামের আকার ধারণ করেছে। প্রায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিতে। কেন এমন হলো?

যে বিষয়টি নিয়ে এই সংঘাতের শুরু, সেটি হল সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে কোটা-পদ্ধতি। যার ফলে দেখা যাচ্ছে ন্যূনতম ষাট শতাংশ, বিশেষ ক্ষেত্রে নব্বই শতাংশ পর্যন্ত পদ সংরক্ষিত। আর মেধার জন্য সংরক্ষণ? তার কী হবে? নাকি চাকরির ক্ষেত্রে সেই বিষম বস্তুটির প্রয়োজনীয়তা খুবই সীমাবদ্ধ? তাহলে পড়াশোনার পাট তো তুলে দিলেই হয়! আসলে এটি এক নোংরা রাজনীতি। যার আগুনে পুড়েছি আমরাও। বারবার। তবু এদেশে এখনও ঘাসের মধ্যে বিরাজমান এই বিষধর সাপটি। এমন কোনও আন্দোলন এখানে এখনও পর্যন্ত দানা বেঁধে ওঠেনি, যার ফলে লেখা হতে পারতো অন্য ইতিহাস।

আমাদের দেশের ছাত্রসমাজও সময়ে সময়ে উত্তাল হয়েছে কিন্তু তা এমন আকার ধারণ করেনি কখনও। তার কারণ বহুবিধ। কিন্তু ছাত্ররাই তো আসলে পারে, তারাই তো তারুণ্যদীপ্ত পথ দেখাবে অন্যদের।

সভ্যতার ইতিহাসে যত গণ অভ্যুত্থান ঘটেছে, তার স্ফুলিঙ্গ তো পড়ুয়াদের বিবেক আর তাদের টানটান মেরুদন্ড। তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে সাঁজোয়া গাড়ি বা ট্যাংকের প্রবেশ দমাতে পারেনি ছাত্র-আন্দোলন। প্রাণ দিয়েছিলেন অনেকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এক রক্তক্ষয়ী, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বাধিকার অর্জনের সেনানী ছিলেন যাঁরা, তাঁদের জন্য কোটা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর সরকারকে বলপ্রয়োগ করতে হচ্ছে আজকের সেনানীদের ওপর। ভবিষ্যত দেশ গড়ার কারিগর যারা। আরও অবাক হওয়ার বিষয়, সরকারের দিক থেকে সংলাপের পরিসরটি উন্মুক্ত করে দিলে সহজেই এড়ানো যেত যে সংকট, তার মোকাবিলায় নিয়োগ করা হলো বিরোধী ছাত্রদলকে। এভাবে কি এক স্বতস্ফূর্ত বিপ্লবকে গলা টিপে হত্যা করা যায়?

বন্দুকের নলের সামনে ভয়ডরহীন ছাত্রটির ছবি এখন ছোঁয়াচে অসুখের মতো ফারহান, রোশেনারা, শমীকদের মজ্জায় মজ্জায়। শুনতে পাওয়া যাচ্ছে যেন সেই কবিকণ্ঠ 'ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে'।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in



বাড়ি ফেরার কথা ছিল অনেকগুলি মানুষের। হয়ে উঠলো না। চিরপ্রতীক্ষায় থেকে গেলেন তাঁদের আত্মীয়-পরিজন। কেউ গিয়েছিলেন পেশাগত কারণে, কেউবা নিছক বেড়াতে কিন্তু তাঁরা সবাই ঘরমুখো হয়েছিলেন যে ট্রেনটি চেপে, যাত্রা শুরু করার অল্পক্ষণের মধ্যেই সেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। অনেকেরই ফেরা হলো না আর।

এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কেউই এই ভয়ংকর বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করেননি। হাস্যকরভাবে মামলা রুজু হয়েছে যে মালগাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে, তার চালকের বিরুদ্ধে, যিনি সেদিনই প্রাণ হারান। আরও ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এমন একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন এবং যিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। 

এ তো কল্পনাতীত! বিশ্বের এক অন্যতম বৃহৎ রেল পরিষেবার মান ঠিক কীরকম হওয়া উচিত, সে নিয়ে ভারতবাসী হিসাবে আমাদের কোনও স্পষ্ট ধারণা আছে কি? আছে কি নির্দিষ্ট কোনও প্রত্যাশা? আমরা বরং চোখ - ধাঁধানো কিছু 'বন্দে ঘোষণা'য় যারপরনাই প্রীত। 

রাজনৈতিক প্রভুদের সাফল্য ঠিক এইখানে। যে ন্যারেটিভটি তাঁরা আমাদের গলাধঃকরণ করতে বাধ্য করেছেন, আমাদের চাহিদার সীমারেখাটি ঠিক তার সঙ্গে মানানসই। কিন্তু অতর্কিতে, বলা যায়, বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হলো যাঁদের জীবনে, আলো নিভে গেলো বরাবরের মতো, তাঁদের পরিজনদের কী হবে? আরও কতটা পথ চললে আমরা আমাদের মানুষ বলে ভাবতে পারবো? উত্তরগর্ভ এই প্রশ্নগুলি আপাতত রইলো কিছু লাশচাপা।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
1
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in






অনেকদিন পর্যন্ত দিনটির অস্তিত্ব সন্ধান করতে পঞ্জিকার সাহায্য নিতে হতো অথবা হালখাতায় পাওয়া বাংলা ক্যালেন্ডারের বৈশাখ মাসের এই তারিখটির তলায় দেওয়া থাকতো দিনটির বিশেষ তাৎপর্যের সূত্র। এইমাত্র।

সত্যি কথা বলতে কী, হিন্দু পুরাণের আরেক মহানায়ক কৃষ্ণের জন্মদিনটি বরং উদযাপিত হয়ে এসেছে অনেক বর্ণাঢ্যরূপে। সেই বিচারে রাম যেন ছিলেন একটু ব্রাত্য। অন্তত বঙ্গদেশে তো বটেই। সে অবশ্য প্রাক অযোধ্যাপর্বে। রাম তখনও রাজনীতির ধারালো হাতিয়ার হয়ে ওঠেননি। বড় জোর বাঙালি সমাজ ঈষৎ দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন মধুসূদন-রচিত 'মেঘনাদবধ কাব্য' নিয়ে, যেখানে মহাকাব্যের এই নায়ককে 'আপন মনের মাধুরী মিশায়ে' অন্য চেহারায় হাজির করেছিলেন বিরল গোত্রের সেই স্রষ্টা।

কিন্তু সে ছিল সম্পূর্ণ বৌদ্ধিক এক শ্রেণীবিভাজন, যা নিয়ে তর্কের তুফান উঠলেও কখনও শোনা যায়নি অস্ত্রের ঝনঝনা!

অযোধ্যাকান্ডের পর সুকুমারী ভট্টাচার্য শাণিত এক নিবন্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কোন রামরাজ্যের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা? সর্বতোভাবে তা কাঙ্খিত তো?

সেই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর কেটে গেছে তিনটি দশক। ভারতবাসী হিসাবে নিজেকে এর চেয়ে বিপন্ন কখনও মনে হয়েছে কি? সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষটি সেদিন রোপিত হয়েছিল, আজ সেটি পূর্ণবয়স্ক। প্রতিনিয়ত এটি থেকে নির্গত দূষিত বাতাস গ্রাস করে নিচ্ছে সমগ্র চরাচর। রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে হাত ধরাধরি করে সেই কলুষমণ্ডলে শোভাযাত্রায় মগ্ন।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







দিনকয়েক হল সূচি ঘোষণা হয়েছে। আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের দোরগোড়ায় আমরা। বলা হয়ে থাকে গণতন্ত্রের বৃহত্তম পার্বন এই প্রক্রিয়া। ভোট কী এবং কেন? প্রায় ঋতুচক্রের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা কতদূর? আমজনতার কাছে সত্যিই কি এই প্রহসনের কোনও তাৎপর্য আছে? 

'নির্বাচন' মানে যদি হয় 'বেছে নেওয়া', তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কাকে বা কাদের বেছে নেব আমরা? কেনই বা নেব? স্বাধীনতার পর সাতাত্তর বছর অতিক্রান্ত প্রায়। এতগুলি দশক অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন তবে সমাধান হয়নি বহু মৌলিক সমস্যার? একদিকে যেমন 'ডিজিটাল ভারতে'র বিজ্ঞাপন ফুলে ফেঁপে উঠেছে, অন্যদিকে অনাহার আর অশিক্ষার করুণ চিত্রটিতে আমাদের লজ্জিত হতে হয় বারংবার। যে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল আমাদের কোহিনুর, তার গরিমা এখন অপসৃয়মান! 

বিপুল যে অর্থ ব্যয় করে নির্মাণ করা হয় একটি মন্দির অথবা মূর্তি, তাতে গড়ে তোলা যেত অগণন বিদ্যালয় বা হাসপাতাল। নির্বাচিত যেসব জনপ্রতিনিধি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সেইসব সৌধ স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা নিলেন, তাঁরা কি একমুহূর্তের জন্যও ভেবেছিলেন সেইসব মানুষগুলির কথা, যাঁরা নিরন্ন কিংবা বস্ত্রহীন অবস্থাতেও গণতন্ত্রের এই সুবিশাল স্তম্ভটিকে রক্ষা করে এসেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে? প্রশ্নগুলি মাথাচাড়া দেবে আবার চাপাও পরে যাবে বেআইনি কোনও নির্মাণের ধ্বংসস্তূপের তলায়।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে রাশিয়ার নির্বাচনের ফলাফল। পঞ্চমবারের জন্য প্রায় পঁচাশি শতাংশ গরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসে ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন বিশ্বের পরিস্থিতি এমন যে ঘটে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর আরেকটি নির্বাচনযুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তিনি জয়ী না হতে পারলে বইবে রক্তগঙ্গা।

প্রাজ্ঞ এক বন্ধু বলছিলেন, আমরা যা দেখছি, শুনছি, প্রকৃত রাজনীতির পরিধিটা নাকি তার চেয়ে অনেক বড়। আমাদের দেশে বা অন্যত্র যা ঘটমান, তার কোনও কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়, সবকিছুই সেখানে অদৃশ্য একটিই সুতোয় গ্রন্থিত। রাম জন্মানোর আগেই যেমন রচিত হয়েছিল 'রামায়ণ', আগামী দিনে চারপাশে আমরা কী দেখবো, একটি সামগ্রিক নকশার অঙ্গ হিসাবে তা নির্ধারিত হয়ে আছে অনেক আগেই।

রঙের উৎসবও আসন্ন। আমাদের চেতনা যেন রামধনু-রঙা হয়ে ওঠে!

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in








আজ আরও একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কালের নিয়মে প্রতি বছর দিনটি ফেরত আসে। কিন্তু এমন একটি দিনের সার্থকতা কি কেবল বিশেষভাবে চিহ্নিত হওয়ার মধ্যে? সঠিক প্রেক্ষিত থেকে সরে এলে এই দিনটির আর আলাদা কোনও মর্যাদা থাকে না। কারণ প্রশ্নটি নিছক একটি ভাষার আব্রু রক্ষার প্রয়াসের চেয়েও অনেক বড়। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে বিষয়টির সঙ্গে।

ভাষার অধিকার যে কোনও মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির অন্যতম। তার সঙ্গে স্বভাবতই যুক্ত হয়ে যায় কোনও একটি ভাষায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নিজেকে মেলে ধরার একান্ত আপন ক্ষেত্রটি। গোল বাধে এখানেই।

বল্গাহীন, স্বতস্ফূর্ত ভাষার স্রোত আটকাতে বারবার প্রয়োজন হয়েছে রাষ্ট্রীয় পেশীশক্তির। ভাষার জাদুকরী ক্ষমতা এই যে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে। একক থেকে বহুস্বর হয়ে উঠতে সময় লাগে না। এর ফলে শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতা আর ভীতি সঞ্চারিত হয়, তার একমাত্র নিবৃত্তি অন্ধ বলপ্রয়োগে। স্বৈরতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বারবার প্রত্যক্ষ করেছে।

পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে যে দেশ শ্লাঘার উত্তাপ উপভোগ করে, তার এরকম আচরণ শোভা পায় কি? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে ভারত থেকে ফরাসি সাংবাদিক ভানেসা দুনাকের বহিষ্কার এই ধন্দের সামনে বেআব্রু করে আমাদের।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







এই সম্পাদকীয় লেখার সময় আমরা এক অভূতপূর্ব সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এদেশ এমন একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে, যা চিরতরে বদলে দিতে পারে প্রাচীন এক সংস্কৃতির ভবিষ্যত গতিপথ। নানান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসী বারবার ভারত নামক বহুধাবিভক্ত আশ্চর্য এক দেশকে দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখতে চেয়েছে। অতি শীঘ্র আমরা বুঝতে পারব, সেই চিত্রটির আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল কিনা।

যে ঘটনাটির সম্ভাব্য অভিঘাত ঘিরে এত কথা অথবা বলা ভালো কল্পনা আর আবেগ ঢেলে এক মহাকবি একদিন যে চরিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন, তিনি তো ভালোবাসার নায়ক হয়ে এক বিপুল জনজাতির অন্তঃপুরে বসবাস করে আসছিলেন। শতাব্দীপ্রাচীন এক সৌধের বিনিময়ে নির্মিত এক বাসস্থানে তাঁর পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোনও আবশ্যকতা ছিল কি?

চারপাশের অসংখ্য অনৈতিক কার্যকলাপ সহ্য করতে করতে অবশ্য এই আয়োজনটিকে আর বিচ্ছিন্ন বলে মনে হয় না। কারণ ভালো-মন্দের মধ্যে যে লক্ষণরেখাটি বিরাজ করত, তা ঘুচে গেছে অনেক আগেই। মূল্যবোধ নামক যে বস্তুটি কোনও একদিন আমাদের মধ্যে অবস্থান করত, তার কংকালসার দেহটি বড়জোর এখনও বহন করে চলেছি আমরা।

এরই মধ্যে আমাদের বার্ষিক বই-পার্বণ শুরু হয়ে গেছে। বিগত বছরগুলির তুলনায় এর কলেবর বৃদ্ধিও পেয়েছে অনেক। সত্যিই তো বইয়ের ক্ষমতা যে সীমাহীন। নিরক্ষরকে আক্ষরিক করা ছাড়াও সে যে পারে মনের বন্ধ জানালাগুলির আগল খুলে দিতে!

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in






ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারা। যে বিষয়গুলির ঢাল হয়ে উঠে অধঃপতনের গহ্বর থেকে সমাজকে রক্ষা করার কথা, তার প্রথম অবশ্যই মূল্যবোধ আর তার নীতিনিষ্ঠ প্রয়োগই একদিন জন্ম দিয়েছিল এই আইন নামক বিষম বস্তুটির। প্রণেতারা নিশ্চয়ই একথাই ভেবেছিলেন, যখন মানুষের অপরাধী প্রবৃত্তি মূল্যবোধের লক্ষণরেখা ভঙ্গ করবে, সমাজের গা দিয়ে চুইয়ে পড়বে পুঁজরক্ত, সেই ক্ষতস্থানের নিরাময়ের জন্য দরকার হবে আইনের। 

সেইসময় একথা তাঁরা অবশ্যই মনে রাখেননি যে প্রাণীকূলে মানুষই সবচেয়ে ধূর্ত এবং বিপদে পড়লে, একটি বিশেষ পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্বে আনার জন্য অন্য অনেক প্রাণীর মতোই চকিতে বদলে ফেলতে পারে বাহ্যিক চেহারা। 

আইনের অনুশাসন সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবিস্কৃত হল তার চোরা ফাঁকফোকরগুলি। বিষয়টি অধিক আক্ষেপের হয়ে ওঠে যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যে ন্যায়ালয়ের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের কাছে সুবিচার পৌঁছে দেওয়া এবং প্রমাণ করা আইন 'অন্ধ' হলেও তা নিরপেক্ষ, পবিত্র সেই স্থানটি থেকে একটি বিশেষ আইনের পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা করা হল। এই দেশেই। 

৩৭৫ নম্বর এই বিশেষ ধারাটিতে স্পষ্ট বলা আছে কোনও নারীর অসম্মতিতে যে কোনও রকম যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অর্থ ধর্ষণ এবং একমাত্র ধর্ষণই। এই একই আইনে এতদিন অবশ্য বৈবাহিক সম্পর্ককে এই ব্যাখ্যার আওতায় রাখা হয়নি, ছাড় দেওয়া হয়েছিল 'স্বামী দেবতাকে'। 

সম্প্রতি দেশের দুই প্রান্তের দুটি হাইকোর্ট আলাদা একই গোত্রের দুটি মামলায় এমন রায় দিলেন যাতে 'ধন্দ' শব্দটির যথার্থ মানে অনুধাবন করা গেল। একজন বিচারপতি বললেন, নারীর অসম্মতিতে যৌন মিলন হলে তা ধর্ষণই, বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আর অন্যজন বললেন, আলোচ্য ক্ষেত্রে মেয়েটির বয়স যদি হয় আঠারো বা তার অধিক, তাকে ধর্ষণ বলে গ্রাহ্য করা যাবে না। 

সমাজের অভিমুখ কোনদিকে এর পর নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না! 'সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ'।

সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন

শুভেচ্ছা নিরন্তর
3
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







কী আশ্চর্য অতীন্দ্রিয় সমাপতন! ১৬ জুলাই ১৯৪৫ আর ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ এক 'বৈবাহিক' সম্পর্কে জুড়ে যাওয়া যেন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আটাত্তর বছর আগের জুলাই মাসের ওই দিনটিতে নিউ মেক্সিকোর মরুপ্রদেশে একইসঙ্গে নির্মিত হয়েছিল অসামান্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির এক শৃঙ্গ এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসের এক অতি কলঙ্কময় অধ্যায়। 'ট্রিনিটি টেস্ট' - কাব্যময় এই নামকরণের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ! বিশ্ববরেণ্য আরও অনেকের সঙ্গে যে প্রকল্পের নায়ক ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। ধোঁয়া, আগুন আর ধ্বংসের মাশরুম আকৃতির মেঘ যখন সূর্যকে ঢেকে ফেলেছে, ভগবৎগীতার একনিষ্ঠ পাঠক ওপেনহাইমারের মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে এসেছিল কৃষ্ণের সেই অমোঘ বাণী, 'এখন আমিই মৃত্যু, সংহারক আমি বিশ্বের'। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে বিপক্ষে আত্মীয়-বন্ধু-পরিজনের মুখোমুখি দ্বিধাদীর্ণ অর্জুনকে উজ্জীবিত করতে কৃষ্ণ উচ্চারণ করেছিলেন কথাগুলি।

ওপেনহাইমারের প্রিয় কবি ছিলেন জন ডান, যাঁর কবিতা থেকে শব্দ ধার করে তিনি নাম দিয়েছিলেন সেই নিরীক্ষার আর ভগবৎগীতা বিরাজ করত তাঁর অন্তরের অন্দরমহলে। কাব্য আর দর্শনে নিবেদিতপ্রাণ ক্ষুরধার এই প্রতিভা কিন্তু চিহ্নিত হয়ে রইলেন সর্বকালীন বিচারে এক বৃহত্তম গণহত্যার নেপথ্যকর্মী হিসাবে। সফল সেই মরুনিরীক্ষার তিন সপ্তাহের মধ্যে নাগাসাকির মাটিতে নেমে এসেছিল 'ফ্যাট বয়' - পারমাণবিক বোমার সর্বপ্রথম নিদর্শনস্বরূপ।

আগামী ২৪ জুলাই ২০২৩ কলকাতায় এক বিশাল গীতা পাঠের আয়োজন হয়েছে, যেখানে গুঞ্জন এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিরও। সাহিত্য আর দর্শনের এই উৎকৃষ্ট সপ্তশতী গ্রন্থটির উপাদান আণবিক বোমার সঙ্গে তুলনীয়। এর ব্যবহার সঙ্গত দায়িত্বশীলতা দাবী করে। আমরা সতর্ক থাকব।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







একই অঙ্গে এত রূপ? সইবে তো? দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে জারি করা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাম্প্রতিক একটি নির্দেশিকা ঘিরে এই সংশয়। এই প্রথম অবশ্য নয়। নানান বিষয়ে বিভ্রান্তি-সৃষ্টিকারী সরকারি বিজ্ঞপ্তি আর তুঘলকি, একনায়কতন্ত্রী সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে অনেকটাই গা - সওয়া হয়ে গিয়েছে আমাদের। কিছুতেই তেমন আর কিছু এসে যায় না।হেঁয়ালি সরিয়ে বিষয়টির অভ্যন্তরে একটু প্রবেশ করা যাক এখন।

২১ ফেব্রুয়ারি তারিখটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। ভারত তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল কোনও অজ্ঞাত বিশেষ কারণে ১১ ডিসেম্বর দিনটিকে সমগুরুত্ব দিয়ে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার প্রয়াস শুরু হয়েছে। আমাদের জানা আছে ওই বিশেষ তারিখটি তামিল মহাকবি সুব্রহ্মণ্য ভারতীর জন্মদিন। ওই নির্দেশিকায় বলা হল, এখন থেকে দিনটিকে 'বাধ্যতামূলকভাবে' ভারতীয় ভাষা দিবস হিসাবে পালন করতে হবে। এবং শুধু তাতেই শেষ হচ্ছে না। প্রমাণস্বরূপ অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং স্থিরচিত্র আপলোড করতে হবে সরকারি পোর্টালে। অকস্মাৎ এই টনক নড়ার কারণ কী হতে পারে? আর কেনই বা মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপক্ষরূপে সুচারুভাবে এক বিশেষ ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে শিখন্ডি করে তোলার এই নির্লজ্জ অপপ্রয়াস? রাজনীতির কুনাট্যমঞ্চের অংশগ্রহণকারীরা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

তাঁদের সেই সঙ্গে একথাও স্মরণে রাখতে হবে যে স্বতঃস্ফূর্ত মানবিক আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও ইতিহাসকে আপন তাঁবেতে নিয়ে আসার চেষ্টা এর আগেও ইতিহাসের অনেক খলনায়ক করেছেন। তাঁদের একজনের নাম আডলফ হিটলার। যাঁর পরিণতি ভালো হয় নি।

শারদীয় শুভেচ্ছা আপনাদের সকলকে।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in








পর্দা জুড়ে খয়েরি রঙা অন্ধকার আর তার মধ্য দিয়ে মাঝবয়সী উপবীতধারী এক পুরুষ পায়ের আঙুলে দড়ি বেঁধে অসীম ক্লেশে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একটি লাশ। সৎকারের উদ্দেশে। মৃতদেহটি এক দলিতের। কন্যাদায় থেকে মুক্ত হবার জন্য যে গ্রামের উচ্চবর্ণের প্রতিভূ সেই ব্রাহ্মণের গৃহে ভৃত্যের কাজ করতে সম্মত হয়েছিল। মৃত্যুর পরও যাতে নিম্নবর্গের সেই মানুষটির ছোঁয়াচ না লেগে যায়, তার জন্যই সেই বিশেষ ব্যবস্থাপনা। 

মুন্সি প্রেমচন্দের ছোটগল্প অবলম্বনে ১৯৮১ সালে নির্মিত সত্যজিৎ রায়ের ছবি 'সদগতি'র এই দৃশ্য দেখতে দেখতে শিউরে উঠেছি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না 'সদগতি' কাহিনি আকারে প্রকাশ পেয়েছিল চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পাঁচ দশক আগে। তার অর্থ পঞ্চাশ বছর পরেও বদলায়নি এই দেশ। তেমনই প্রাসঙ্গিক রয়ে গিয়েছিল অস্পৃশ্যতার বিষয়টি। 

আর সম্প্রতি সারাদিনের অজস্র টুকরো খবরের মধ্যে চোখ আটকে গেল একটি চমকপ্রদ মানচিত্রে। একটি সমীক্ষার ফলাফল বলছে দেশের অধিকাংশ অঞ্চল প্রবলভাবে এখনও বহাল রেখেছে আদিম সেই প্রথা! আজও। শিরদাঁড়া দিয়ে বরফঠান্ডা স্রোত নেমে গেল তৎক্ষণাৎ। 

চিত্রটি সঠিক হলে সামাজিক এই দূষণ এখনও গ্রাস করে রেখেছে ডিজিটাল ভারতকে। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ভারতবর্ষের উন্নয়নের কার্পেটের তলায় লুক্কায়িত এ কোন দেশ? নানা জাতি, ধর্ম আর কৃষ্টির এই মিলনভূমির সর্বত্র কমবেশি শোণিত-চিহ্ন! প্রতিনিয়ত সামাজিক সমতার সোচ্চার ঘোষণা কি প্রকৃতপক্ষে এক রাজনৈতিক ঢক্কানিনাদ? মুখোশের আড়ালে না-দেখা মুখটি কি তবে ভয়াল? উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার সন্নিকটে বসবাস করে নিকষ আঁধার - এই তত্ত্বের কাছেই কি পরাজয় ঘটবে আমাদের? বারংবার?

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান!
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in






ভাষার সৃষ্টি কেন এবং কীভাবে? মার্কিনী ভাষাতাত্ত্বিক ড্যানিয়েল এভারেট তাঁর চাঞ্চল্যসৃষ্টিকারী গ্রন্থ 'হাউ ল্যাঙ্গুয়েজ বিগ্যান' (How language began)- এর প্রারম্ভে বর্ণনা করছেন একটি ঘটনা। তাঁর প্রপিতামহ সপরিবারে তুলোর ক্ষেতের মধ্য দিয়ে চার্চ থেকে ফিরছেন। টেক্সাসে সেসময় ওই অঞ্চলে সাপের খুব উপদ্রব। বিশেষত রাটলস্নেক। অকস্মাৎ মাটিতে পড়ে গেলেন তিনি। যে বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সাবধান করছিলেন, তাঁকে আঘাত হেনেছে সেই অজানা আশঙ্কা। কিন্তু এমনই অদ্ভুত এই প্রাণী যে দংশনের আগে ঘোষণা করে তার উপস্থিতি। তবুও সেই সংকেত আক্রান্তের কাছে পৌঁছয়নি সময়মতো।

অথচ প্রায় ছত্রিশ হাজার বছর আগে আলতামিরার গুহামানব চারকোলের ছোঁয়ায় যখন সেই আশ্চর্য সুন্দর বাইসন অঙ্কনে মগ্ন, কথ্য ভাষার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও সংযোগ স্থাপনের নির্দিষ্ট ইঙ্গিত ইথারে ভর করে রওনা দিয়েছিল সুদূর ভবিষ্যতের দিকে। সেদিন সেই শিল্পীর মধ্যে ভবিষ্যত প্রজন্মের সঙ্গে কোনও যোগাযোগের স্পৃহা কাজ করছিল কি? আমরা জানি না। কিন্তু ভাষার প্রয়োজনীয়তার সূত্রপাত কি এইভাবে নয়? বইটির শিরোনাম এমনও দাবী করে, ভাষাই হলো মানবসভ্যতার মহত্তম আবিষ্কার।

নিঃসন্দেহে। সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাস কি ভাষার ক্রমিক উত্তরণের দিনলিপি নয়? অবশ্যই। কারণ ভাষার এই সরণি জন্ম দেয় সার্বভৌমত্বের অধিকারের। ভাষার বুনিয়াদি জমিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন এক রাষ্ট্র। তবু ভাষা কেন সন্ত্রাসের উপকরণ?

বিবিধের মাঝে মিলনের মন্ত্র অনুসন্ধানকারী এক দেশ যখন সদ্য স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি উদযাপন করে, প্রশ্নগুলি চ্যালেঞ্জসঞ্চারী হয়ে দাঁড়ায় আমজনতার অজান্তেই। কারণ অনেক পথ পেরিয়ে ভাষা এখন আর শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নেই, তা পীড়নের হাতিয়ারও। বর্বরতম অত্যাচারের চিহ্ন শরীরে নিয়ে একটি স্বপ্ন যখন অকালে ঝরে যায়, আমরা জানতে পারি সেই নৃশংসতার শুরু ভাষার হাত ধরেই। অধঃপতিত বিবর্তনের এই উত্তরাধিকার আমাদেরই।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর!
0
undefined undefined undefined

সম্পাদকীয়

Posted in







তিন বছর আগের ভারতবর্ষ। তখনও অতিমারির হিংস্র দৃষ্টি স্তিমিত হয়ে আসেনি পুরোপুরি। অজানা আশঙ্কা ঘিরে রেখেছে আমাদের তখনও। তারই মধ্যে উত্তরপ্রদেশের হাথরাস উঠে এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। একটি উনিশ বছরের দলিত মেয়েকে গণধর্ষণের পর মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে যায় চারটি উচ্চ বর্ণের যুবক। নির্যাতিতা যাতে কোনও মৌখিক বয়ান দিতে না পারে, সেইজন্য ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছিল তার জিভ। কিন্তু আশ্চর্য তার জীবনীশক্তি! পক্ষকাল বেঁচে থেকে সে শুধু অন্তিম জবানবন্দীই নথিভুক্ত করে না, শনাক্তও করে যায় অপরাধীদের।

পরবর্তী ঘটনাক্রমকে অতি নাটকীয় বললেও কিছুমাত্র বলা হয় না। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে মেয়েটির দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় ময়না তদন্তের আগেই। নানান চাপের মুখে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলেও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় তারা এবং অসামান্য তৎপরতায় গ্রামটির চারপাশে রচনা করা হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়।

এমন পরিস্থিতিতে কেরালা থেকে অকুতোভয় এক তরুণ সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান প্রকৃত সত্য খুঁজে পেতে প্রায় অকুস্থলে পৌঁছে যান। বিশেষ ক্ষমতাবলে প্রশাসন সেদিন কাপ্পানকে শুধু আটকই করেনি, কাল্পনিক নানাবিধ অভিযোগে কারাবাস করতে হয় তাঁকে পরবর্তী আঠাশ মাস।

অবশেষে স্বাধীনতার 'অমৃত মহোৎসব' উদযাপনের মধ্য পর্যায়ে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি পান কাপ্পান। কিন্তু শেষ হয় না তাঁর হয়রানি। জটিল আইনী প্রক্রিয়ার নাগপাশে আজও রুদ্ধ তাঁর জীবন। এ কেমন মুক্তির আলো, যা তাঁকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দেয় না? প্রাণনাশের অদেখা হুমকিতে কাটে বিনিদ্র রজনী? শুধু আদালতে হাজিরা দিতে লেগে যায় সপ্তাহব্যাপী সময়? এ কি তবে এক 'মুক্ত কারাবাস'? 'প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা'।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান।