3

সম্পাদকীয়

Posted in







কী আশ্চর্য অতীন্দ্রিয় সমাপতন! ১৬ জুলাই ১৯৪৫ আর ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ এক 'বৈবাহিক' সম্পর্কে জুড়ে যাওয়া যেন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আটাত্তর বছর আগের জুলাই মাসের ওই দিনটিতে নিউ মেক্সিকোর মরুপ্রদেশে একইসঙ্গে নির্মিত হয়েছিল অসামান্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির এক শৃঙ্গ এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসের এক অতি কলঙ্কময় অধ্যায়। 'ট্রিনিটি টেস্ট' - কাব্যময় এই নামকরণের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ! বিশ্ববরেণ্য আরও অনেকের সঙ্গে যে প্রকল্পের নায়ক ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। ধোঁয়া, আগুন আর ধ্বংসের মাশরুম আকৃতির মেঘ যখন সূর্যকে ঢেকে ফেলেছে, ভগবৎগীতার একনিষ্ঠ পাঠক ওপেনহাইমারের মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে এসেছিল কৃষ্ণের সেই অমোঘ বাণী, 'এখন আমিই মৃত্যু, সংহারক আমি বিশ্বের'। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে বিপক্ষে আত্মীয়-বন্ধু-পরিজনের মুখোমুখি দ্বিধাদীর্ণ অর্জুনকে উজ্জীবিত করতে কৃষ্ণ উচ্চারণ করেছিলেন কথাগুলি।

ওপেনহাইমারের প্রিয় কবি ছিলেন জন ডান, যাঁর কবিতা থেকে শব্দ ধার করে তিনি নাম দিয়েছিলেন সেই নিরীক্ষার আর ভগবৎগীতা বিরাজ করত তাঁর অন্তরের অন্দরমহলে। কাব্য আর দর্শনে নিবেদিতপ্রাণ ক্ষুরধার এই প্রতিভা কিন্তু চিহ্নিত হয়ে রইলেন সর্বকালীন বিচারে এক বৃহত্তম গণহত্যার নেপথ্যকর্মী হিসাবে। সফল সেই মরুনিরীক্ষার তিন সপ্তাহের মধ্যে নাগাসাকির মাটিতে নেমে এসেছিল 'ফ্যাট বয়' - পারমাণবিক বোমার সর্বপ্রথম নিদর্শনস্বরূপ।

আগামী ২৪ জুলাই ২০২৩ কলকাতায় এক বিশাল গীতা পাঠের আয়োজন হয়েছে, যেখানে গুঞ্জন এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিরও। সাহিত্য আর দর্শনের এই উৎকৃষ্ট সপ্তশতী গ্রন্থটির উপাদান আণবিক বোমার সঙ্গে তুলনীয়। এর ব্যবহার সঙ্গত দায়িত্বশীলতা দাবী করে। আমরা সতর্ক থাকব।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

3 comments: