অন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলঅন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলচেনা মানুষ অচেনা হলো, চেনা পরিমণ্ডল অচেনা লাগছে, তবে সে কোন অচিন এমন করে বদলে দিচ্ছে সম্পর্কের সমীকরণ? যার সাথে আজ তিরিশ বছর চেনা, যে আমার প্রাণের মিতা মজন্তালি আজ দেখি তার স্বার্থে সামান্য আঘাত লাগলে কুৎসিত আঘাত হানতে তার বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ নেই। শুধু কি তাই, ঘরের অন্দরে নিজের সব থেকে কাছের মানুষগুলিকেও কত শত এমন আঘাতে বিদ্ধ করছে পরস্পর, হয়তো বিদ্ধ করে এসেছে চিরটা কাল। সমাজের চারপাশে মধ্যযুগীয় বর্বরতার ছায়াচিহ্ন যেন বিজ্ঞানের উন্নতিকে বিদ্রূপ করে নখ দাঁত বের করে হাসছে। কোথা থেকে বার বার আঘাত হানছে
এত অসহিষ্ণুতা? দেখি না উঁকি মেরে অন্তর মহলে।
ছোট পরিসরে ব্যক্তিমানুষের অন্তরের গরলই তো এক সময়ে বৃহত্তর সমাজে অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটায়। বিশেষত: আজ এই মারীর আবহ যেন সভ্যতার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কিসের তাগিদে মানুষ হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মী বা ডাক্তারকে বাড়ি ছাড়া তথা পাড়া ছাড়া করছে?
বাঁচার তাগিদ যদি ধরে নিই তবে ধিক সে স্বার্থপর বাঁচা যে বাঁচার তাগিদে অসুস্থ প্রতিবেশি পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিয়ে তাকে অসময়ে কোণঠাসা করে ফেলি আমরা। তাতেই কি বেঁচে যাওয়া যাবে? এই সব প্রশ্নবাণে জর্জরিত করি নিজের অন্তরাত্মাকে। সামাজিক মাধ্যমে দেখি তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের আচরণ কিভাবে অসহিষ্ণুতার সীমা লঙ্ঘন করছে কত সামান্য কারণে। কি উদগ্র হয়ে ফুটে বেরোচ্ছে সমাজের ধৈর্যচ্যূত চেহারাখানা। অথচ বিচার করে দেখলে দেখা যাবে সামান্য হলেও সমাজের সর্বস্তরেই সিংহভাগ মানুষের জীবনের মান আজ থেকে তিরিশ বছর আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে। হয়তো সামান্য, তবু হয়েছে যে সে তথ্য এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
আমাদের এই আচরণের কারণ কি অবদমিত ধর্ষকাম। অন্যের পীড়নে আনন্দ পাওয়া থেকেই এত অসহিষ্ণুতার উৎপত্তি। ধর্ম নিয়ে অসহিষ্ণুতা, পারিবারিক সম্পর্কে অসহিষ্ণুতা, প্রেম ভালবাসায় অসহিষ্ণুতা এসব দেখতে দেখতে মনে হয় একটা যদি এমন অতিমারী আসত পৃথিবীতে যেখানে মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতা নামের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ত তা হলে কি সুন্দরই না হতো এই পৃথিবী।
সভ্যতার সংকট প্রবন্ধে রবি ললিখেছেন,"মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর-একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপমান মনে করি। এই কথা আজ বলে যাব, প্রবলপ্রতাপশালীরও ক্ষমতা মদমত্ততা আত্মম্ভরিতা যে নিরাপদ নয় তারই প্রমাণ হবার দিন আজ সম্মুখে উপস্থিত হয়েছে; নিশ্চিত এ সত্য প্রমাণিত হবে যে-
অধর্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি।
ততঃ সপত্নান্ জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি॥
ঐ মহামানব আসে।
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—
এল মহাজন্মের লগ্ন।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন।
উদয়শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ রব
নবজীবনের আশ্বাসে।
‘জয় জয় জয় রে মানব - অভ্যুদয়'
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে।
এই মহামন্ত্র বিশ্বাসেই মানবতার জয়, অসহিষ্ণুতার অপমৃত্যু সাধিত হোক। আমরা সব সংকটে যেন নিজের মনুষত্ব না ভুলে যাই।
অন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলঅন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলঅন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলআমার আমি
'আমি' শব্দটা ভারি ভাবায় আমায়। ঠিক কবে থেকে অন্তরমহলের সর্বেসর্বা হয়ে উঠলো সে তাও মনে করতে পারি না। অথচ এই 'আমি'-কে কেন্দ্র করেই তো আমাদের সমস্ত জগত অস্তিত্ব অনস্তিত্বের দোলায় দুলছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'আমি' কবিতায় বলেছেন, "আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে ।
আমি চোখ মেললুম আকাশে ,জ্বলে উঠল আলো
পুবে পশ্চিমে ।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’ ,
সুন্দর হল সে ।”
এই আমি আসলে সমগ্র চেতন মনের সিংহদুয়ার যেন। যার ভিতর মহলের জগত আর বার মহলের জগতে আছে বাস্তব অবাস্তব পরাবাস্তবের আড়াআড়ি দ্বন্দ। আমিত্ব সেই দ্বন্দ যুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে রফা করে চলেছে। আমি আছি তাই জগতের অস্তিত্ব আমার কাছে সত্য। চুনি লাল, পান্না সবুজ, গোলাপ সুন্দর। এও যেমন সত্য আবার এই আমিত্বের বোধ থেকেই বুঝি বা জগতের উৎস মুখ। অন্তরমহলের আরও সব সদস্য যেমন অবচেতন, অর্ধ চেতন, বিবেক, বোধ বুদ্ধি সব কিছুর মধ্যে জেগে আছে একটা আমি যে কিনা জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছে। ভেতরের গুঁতো সামলে বাইরের রক্তচক্ষু সমাজের সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে "আমি" র জুড়ি মেলা ভার। অন্তরমহলে নিরন্তর উঠছে কত যে চাহিদার ঝড়। সে সব চাহিদা সমাজ সংসার বোঝে না, ন্যায় নীতির ধার ধারে না। তারা শুধু পূর্তি পূরণের উচ্ছাসে গা ভাসিয়ে দিতে চায়। এই সব চাহিদা আর ইচ্ছারা যদি বেগবান আর সফল হয় তবে সমাজে গেল গেল রব উঠবে। এমনকি অস্তিত্ব সংকট ঘটাও বিচিত্র নয়। কে তবে আমাদের রক্ষা করে চলেছে নিরন্তর? "আমি" সেই "আমি"। একদিকে বিবেকের দংশন অন্যদিকে সমাজের রক্তচক্ষু আর এদিকে অন্তরমহলে ইচ্ছাপূর্তির গুঁতো সামলে "আমি" আমাকে আপনাকে এমন কঠিন যুদ্ধের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছে। অস্ত্র কি রে ভাই ঢাল তলোয়ার, নান চাক্কু? না না নিধিরাম সর্দার 'আমি'
সে সব নিয়ে লড়ে না। তার লড়াই অন্য জাতের। ইগো ডিফেন্স ব্যবহার করে সব কিছুতে সমতা বজায় রেখে চলে সে। হরেক রকম ইগো ডিফেন্স আছে।
এই ইগো ডিফেন্স সব যে মনের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর এমনটাও নয়। বিপদ ঘনায় তখন যখন তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর ডিফেন্স বেশি ব্যবহার করা হয়ে যায়। সে যা হোক এখন এক নজরে কয়েকটা বহু ব্যবহৃত ডিফেন্স:
রিপ্রেশন বাঙলায় যা অবদমন। ব্যাপারটা কি? অনেক চাহিদা 'আমি' কে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে। কামনা বাসনায় লালায়িত সে চাহিদাদের ঠেলে অবচেতনের গভীর খাদে ঠেলে ফেলে 'আমি'। চেতন স্তরে ওঠার সব পথ বন্ধ। চিরতরে হারিয়ে গেল ভেবে নিশ্চিন্তে থাকে সে। কিন্তু অবচেতনের গর্ত থেকে প্রায়ই ছদ্মবেশে বেরিয়ে আসে সেই সব অবদমিত ইচ্ছারা। অজান্তেই আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে সেই সব অবদমিত কামনা বাসনা।
বাস্তব সত্য যদি মনোমত না হয় তবে তাকে অস্বীকার করলে বেড়ে হয়। বাঙলা সাহিত্যের দেবদাস তো এ ব্যাপারে আইকন বলা চলে। প্রেমে ঝাড় আর মদে ডুবে যাও। এ আসলে ডিনায়ালের চূড়ান্ত।
নিজের অবাঞ্ছিত চাহিদা বা আবেগ অনেক সময় অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে 'আমি'। অফিসের সহকর্মী মেয়েটির প্রেমে পাগল বিবাহিত পুরুষটি অন্যদের বোঝাতে থাকে মেয়েটি আসলে তার প্রতি দূর্বল। প্রোজেকশন।
মনে এক, মুখে আর এক। কোনো মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে, মনে মনে নিজেকে দুর্বল ভাবছে অথচ বাইরে প্রচন্ড তর্জন গর্জন করছে। রিয়াকসন ফরমেসন।
আবার অবাঞ্ছিত আবেগ বা চাহিদাগুলো বিপথে চালিত করার বদলে তাকে সৃষ্টিশীল দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া এক ধরণের ডিফেন্স বটে।
এমন সব অস্ত্র নিয়ে লড়তে লড়তে আমি এগিয়ে চলে মহাকালের পথ ধরে। আলো অন্ধকার পর্যায়ক্রমে আসে, দিন বদল হয়, যুগ যুগ পার হয়ে যায়। বিবর্তিত আমি এগিয়ে চলে অস্ত্বিত্ব রক্ষায়।
অন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলঅন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলঅন্তরমহল - রুমঝুম ভট্টাচার্য
Posted in অন্তরমহলবিধিসম্মত বিজ্ঞপ্তি
দর্শকসংখ্যা
ঋতবাক পরিচালনায়
উপদেষ্টামণ্ডলী – সুদিন চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, চিন্ময় গুহ, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, শুভ্র ভট্টাচার্য, পল্লববরন পাল
সম্পাদনা – সুস্মিতা বসু সিংহ
কার্যনির্বাহী সম্পাদনা – শিশির রায়, সৌম্য ব্যানার্জী
কারিগরী সহায়তা – সুমিত রঞ্জন দাস
ব্লগ সংরক্ষণাগার
-
▼
2024
(200)
-
▼
December
(17)
- সম্পাদকীয়
- প্রচ্ছদ নিবন্ধ - স্মৃতিকণা সামন্ত
- প্রবন্ধ - সেবিকা ধর
- প্রবন্ধ - অম্লান রায় চৌধুরী
- ধারাবাহিক - শৌনক দত্ত
- ধারাবাহিক - নন্দিনী সেনগুপ্ত
- ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল
- ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়
- গল্প - মনোজ কর
- গল্প - অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী
- গল্প - গান্ধর্বিকা ভট্টাচার্য
- গল্প - বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়
- কবিতা - অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়
- কবিতা - কুমকুম বৈদ্য
- কবিতা - সুস্মিতা মজুমদার
- কবিতা - আশীষ কুমার বিশ্বাস
- ঋতু ম্যাডামের রান্নাঘর থেকে - মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী
-
▼
December
(17)