0

ধারাবাহিক - শৌনক দত্ত

Posted in



















১০.
প্রান্তিক মানুষের মহাশ্বেতা দেবী




সুপরিচিতাসু বাসু,

নীরদ সি চৌধুরীকে প্রথম চিনেছিলাম আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ পড়ে। এই বইয়ে রবীন্দ্র-জীবনের নানা অনুজ্জ্বল দিক নিয়ে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ করলেও রবীন্দ্রনাথের বাইরে যে বাঙালির সংস্কৃতি খানিকটা অস্তিত্বহীন তা-ও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, "বাঙলা ও বাঙালির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক জন্ম-নাড়ির সম্পর্ক। বাঙলায় না জন্মালে, রবীন্দ্রনাথকে কিছু মাত্র না জানলে বাঙালির বাঙালিত্ব বজায় থাকে না। রবীন্দ্রনাথকে জানার চেষ্টা বাঙালীর স্বরূপ উপলব্ধরই প্রয়াস মাত্র"। তিনি রবীন্দ্রনাথকে ৪০ বছর, ৬০ বছর এবং ৮০ বছর বয়সে তাঁর কবি কৃতি, তাঁর প্রতিভা, তাঁর প্রখর মননশীলতা নিয়ে সমসাময়িক কালের বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাগণের সঙ্গে তুলনা করেও তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দিতে কার্পণ্য করেননি। রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসের প্রতিটা বাক্য মনে হয় তিনি শুধু পড়েননি, বুঝেছেন এবং আত্মস্থ করেছেন। এক অপূর্ব স্বাভিমানী বাঙালি যেভাবে সারা জীবন ইংরেজিয়ানা চর্চা করে গেলেন তা বাঙালি মনীষার বিকাশেরও একটা রূপরেখা স্পষ্ট করে। এবং সেই ছবিটার ভুল ব্যাখ্যা করার কোনও সুযোগই তাঁর বিরোধীরা কখনও হাতছাড়া করেননি। আমার মনে হয় উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলাভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ভুবনে যে ক'জন ক্ষণজন্মা তুখোড় লিখিয়ে এবং মৌলিক চিন্তকের আবির্ভাব ঘটে, নীরদ সি চৌধুরী এঁদের অন্যতম।

নীরদ সি চৌধুরী নিয়ে তোমার ভাবনা পড়তে পড়তে সহসা মনে পড়লো এমন একজন সাহিত্যিকের কথা যিনি নীরদ সি চৌধুরীর একদম বিপরীত। যিনি নিপীড়িত মানুষের অলিখিত সংগ্রামী জীবনেতিহাসকে সাহিত্যের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। জীবনবিচ্ছিন্ন ভাবকল্পনা বা নিছক প্রণয়ের অর্ধকল্পিত উপাখ্যান নয়, প্রবলভাবেই জীবনসম্পৃক্ত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী সমগ্র জীবন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি প্রবল দায়বোধে সাহিত্য রচনা করেছেন। জল-মাটি-শস্যের গন্ধবাহী মহাশ্বেতা দেবীর কথাসাহিত্য বাংলা সাহিত্যে যে স্বতন্ত্র ধারার সূচনা করেছে তা বহমান আছে, থাকবে আরো বহুকাল। ঝাঁসীর রাণী তাঁকে লেখক হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়।ইতিহাস-আশ্রিত জীবনীগ্রন্থ ঝাঁসীর রাণী সাহিত্যিক হিসেবে মহাশ্বেতার অবস্থানকে একটি শক্ত ভিত্তি দেয়। সেই ভিত্তিতেই তাঁর পরবর্তী জীবনের সুউচ্চ সাহিত্য-পিরামিড স্থাপিত। ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মীবাঈ চরিত্রটির গভীরে ডুব দিতে দিতে দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে ন্যাশনাল লাইব্রেরি গিয়ে এতদসংক্রান্ত বইপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে তাঁর সংকল্পে থিতু হলেন তিনি, এই রানিকে নিয়ে লিখবেন তিনি। প্রাথমিকভাবে লিখেও ফেললেন চারশো পৃষ্ঠা। স্বস্তি পেলেন না লিখে। ছিঁড়ে ফেললেন সে-লেখা আর ঝাঁসী গিয়ে রানির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি হৃদ্গত করে নিয়ে লিখবার জেদ তাঁকে সেখানে নিয়ে ছাড়ল। ‘সারা ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ-আয়োজন শুরু হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য কর্তৃক লিখিত বীরশ্রেষ্ঠা ভারতীয় নারী লক্ষ্মীবাঈয়ের বহু নূতন তথ্য সংবলিত জীবনালেখ্য ‘ঝাঁসীর রাণী’ ‘দেশ’ পত্রিকায় ১৯৫৫ সাল জুড়ে ধারাবাহিকভাবে তা ছাপা হলো।

এমন কিন্তু নয় যে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি শুরু হয় এ লেখাটির মাধ্যমে। এর আগে ‘দেশ’ পত্রিকাতেই তাঁর দু-তিনটে ছোটগল্প বেরিয়েছিল। জিম করবেট, যাঁকে তিনি পরবর্তীকালে অনুবাদ করবেন, ছিল তাঁর প্রবন্ধের বিষয়, ওখানেই। তাছাড়া মহাশ্বেতা দেবীর লেখক সত্তার উন্মেষকাল তো শৈশবেই, শান্তিনিকেতন পর্বে। সেখানে সে সাহিত্যসভা হত নিয়মিত, সরলা দেবী চৌধুরানী সভাপতিত্ব করতেন, দশ-বারো বছরের মহাশ্বেতা দেবী লেখা পড়তেন সেখানে, যা ছাপাও হয়েছিল। সেই বয়সে আলফ্রেড নোবেলকে নিয়ে মহাশ্বেতা দেবী প্রবন্ধ লিখছেন, ভাবা যায়? পরবর্তীকালে খগেন্দ্রনাথ সেনের ‘রংমশাল’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেবেলা’ বইয়ের আলোচনা করেন যখন, তখন তাঁর বয়স মাত্রই তের (১৯৩৯)। হাতে-লেখা পত্রিকা বার করাও বাদ যায়নি, বয়সে তিন মাসের ছোট ঋত্বিক ঘটক যে-কাজে তাঁর সহযোগী। পত্রিকায় ছবি আঁকার দায়িত্ব ছিল ঋত্বিকের। রাজলক্ষ্মী দেবী ছিলেন বেলতলা স্কুলে মহাশ্বেতার সহপাঠিনী, এমএ ক্লাসেরও। স্কুলে পড়ার সময় তাঁরা আর-একবার হাতে-লেখা পত্রিকা বার করলেন, নাম ‘ছন্দ-ছড়া’। দ্বিতীয়বারের শান্তিনিকেতন-পর্বে তাঁর গল্প লেখার সূচনা। ‘দেশ’, ‘সচিত্র ভারত’ পত্রিকা-সহ আরও নানা পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন এ-সময়ে, পাঁচের দশকের গোড়া থেকে।

মহাশ্বেতা দেবী নিয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি কি? তুমি কিভাবে দেখো তাঁর লেখাকে? খুব জানতে মন চাইছে। জানি এইসময় মুখোমুখি বসে থাকলে তুমি অনেক জানা অজানা কথা খুলে বসতে। তোমাকে যতটা চিনি ও জানি আমার বিশ্বাস মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্য জগতের চেয়ে তুমি বেশি নজর দিতে তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে। উচ্ছাসিত হয়ে বলতে শুরু করতে তার রাজনৈতিক যাপনের কথা অনুমান করি সেসব তথ্যের ভিড়ে তুমি উজ্জ্বল হয়ে উঠতে। শ্রেণী সংগ্রাম, সমাজতন্ত্র নিয়ে বলতে বলতে তুমি চেনাতে অনন্য এক মহাশ্বেতা দেবীকে, যিনি লেখার পাশাপাশি অন্যতর এক পরিচয়ে পরিচিত, তিনি একজন সমাজকর্মী এবং তা কোনও সৌখিনতায় মোড়া নয়। বাংলা-বিহার-ওড়িশার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আদিবাসীর মধ্যে কাজ করে গেছেন তিনি আজীবন। জঙ্গলমহলের খেড়িয়া, শবর, লোধাদের সামাজিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন তিনি। এই জনজাতিকে জমির পাট্টা দিতে তাঁর নেতৃত্বদানের জন্য তিনি সেখানে মায়ের মত সম্মান পান। শবর জাতির ওপর ঔপনিবেশিক শোষণ ছিল সীমাহীন উপরন্তু ব্রিটিশরা এঁদের আখ্যা দেয় ‘অপরাধপ্রবণ’ জাতি হিসেবে। মহাশ্বেতা দেবী তাঁদের সেই দুর্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেখান, তাঁদের প্রাচীন সংস্কৃতি কী মহান। একদিকে তিনি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে গিয়েছেন, অন্যদিকে তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে ভারতের আদিবাসী সমাজের এক বিরাট অংশ তাঁদের সভ্যতা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-উত্তরাধিকার নিয়ে প্রামাণ্য ও মহত্ত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’, ‘কৈবর্তখণ্ড’ ইত্যাদি উপন্যাস এবং তাঁর অসংখ্য ছোটগল্পে আদিবাসী মানুষের স্বেদ রক্ত হাহাকার ও সহজ আদিম জীবনযাপনের রেখাচিত্র অঙ্কিত হয়ে আছে। আদিবাসীদের জীবনের গভীরে গিয়ে তাঁদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া, তাঁদের লোকাচার এবং ইতিহাসের পরম্পরাকে শ্রদ্ধাসহকারে অনুধাবনের চেষ্টা আর কোনও বাঙালি লেখকের মধ্যে দেখা যায়নি। বাংলা সাহিত্যের ভূগোলকে বিস্তৃতি দিয়েছেন তিনি, আদিবাসী সমাজের সঙ্গে আমাদের নৈকট্য এনে দিয়েছেন। উপন্যাসের মতো ছোটগল্পেও মহাশ্বেতা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-সংগ্রামকে উপজীব্য করেছেন অনায়াস দক্ষতায়। ‘দ্রৌপদী’, ‘জাতুধান’, ‘শিকার’, ‘শিশু’, ‘সাগোয়ানা’, ‘লাইফার’, ‘মাছ’, ‘বিছন’ প্রভৃতি গল্পে সমাজের নানা অবিচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনতার প্রতিবাদের শিল্পভাষ্য নির্মিত হয়েছে।

জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়ে এসে পিছনে ফিরে গেলে দেখি পরাগ দা আমাদের কমরেড পরাগ মিত্র ঘরময় বইয়ের স্তুপ। মনে আছে তোমার পরাগ দার কথা? পরাগ দা এখন মালবাজারে থাকে। তার ঘরেই বইয়ের স্তুপে মহাশ্বেতা দেবীর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। স্মৃতি বিট্রে না করলে সম্ভবত নকশালবাড়ি আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত হাজার চুরাশির মা উপন্যাসটি মহাশ্বেতা-কথাসাহিত্যের এক মাইলফলক বলে বিবেচিত হয় বলে সেই বইটিই পড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু পরাগ দা বলেছিল আগে অরণ্যের অধিকার পড়, নিজেই বইয়ের স্তুপ থেকে খুঁজে বের করে দিল। সেই প্রথম আমার মহাশ্বেতা পাঠ। মুন্ডা বিদ্রোহের আখ্যানকে উপন্যাসের কলেবরে স্থান দিয়ে, অভাবী মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রতি শুধু মমত্বই প্রকাশ পায়নি, মুন্ডাজীবনের গভীর বেদনাও প্রকাশ পেয়েছে। পেটভরা ভাত, গায়ে মাখার তেল, পরনের জন্য কাপড় – এটাই তাদের জীবনের সর্বশেষ আকাঙক্ষা। ব্রিটিশ সরকার মনে করত, মুন্ডাদের বিদ্রোহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। আসলে বিদ্রোহটা ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে। সেই শোষক বিদেশি নয়, ভারতের ভিন্নভাষী, ভিন্ন বর্গের মানুষ – বাঙালি, বিহারি, রাজপুত, মাড়োয়ারি, পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী ও জমির মালিকরা – আদিবাসীদের ভাষায় ‘দিকু’। ‘দিকু’রা আদিবাসীদের কষ্টে ফেলে, সুদের জালে আটকে তাদের ফসল নিয়ে গিয়ে তাদের নিঃস্ব ও ভূমিদাসে পরিণত করত। খাদ্য, বাসস্থান হারিয়ে, শোষণের পীড়নে মুন্ডারা তীর, টাঙি, বর্শা হাতে নিরুপায় হয়ে প্রশাসনের বন্দুকের গুলির সামনে এসে দাঁড়ায়। মহাশ্বেতা দেবী অরণ্যের অধিকার উপন্যাসে সেই দ্রোহের চিত্রটি জীবন্ত করে তুলেছেন। যেমন – ‘মুন্ডার জীবনে ভাত একটা স্বপ্ন হয়ে থাকে।… কোন না কোনভাবে ভাত বীরসার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বেশিরভাগ সময়েই বীরসার যে উদ্ধত ঘোষণা মুন্ডা শুধা ‘ঘাটো’ খাবে কেন? কেন সে ‘দিকুদের’ মত ভাত খাবে না। ’ বীরসার ভগবান হয়ে ওঠার পেছনে অরণ্য-চেতনাটিকে লেখক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এভাবে সে জিতেন্দ্রিয় পুরুষে পরিণত হয়। তার প্রতি আকর্ষণ অনেক মুন্ডা যুবতীর। কিন্তু সে নিজেকে উৎসর্গ করেছে ‘উলগুলানে’র কাজে। আকর্ষণ নিয়েও সে থাকে নিরাসক্ত। তাই বীরসাকে শুদ্ধ চরিত্র, জিতেন্দ্রিয়, আত্মত্যাগী, আদর্শ পুরুষে রূপ দিয়েছেন লেখক। কেননা অরণ্যের অধিকার উপন্যাসে বীরসার নেতৃত্বে পরিচালিত বিদ্রোহ বা ‘উলগুলান’ দেখানোই তার উদ্দেশ্য। আদিবাসী জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে অরণ্য। অরণ্য উচ্ছেদ করা মানে আদিবাসীদের জীবন বিপন্ন করা। অরণ্যবাসীদের আহার এবং আবাস – দুই জোগায় বনভূমি। সেই বনভূমি ‘দিকু’রা কেড়ে নিচ্ছে, বনভূমিতে তাদের অসিস্ত আর থাকছে না – বনভূমির কান্না, আদিবাসীদেরই কান্না। আদিবাসীরা ফিরে চায় অরণ্যের অধিকার। এজন্যই বীরসা মুন্ডাকে মহাশ্বেতা দেবী ভগবান মহিমা দান করে ঈশ্বরোপম করে চিত্রিত করেছেন। তার দ্রোহ ও নেতৃত্বে সঞ্জীবিত করে দিয়েছেন চিরকালের মহিমা। অরণ্যের অধিকার পড়ার অনেক পরে আমি পড়েছিলাম হাজার চুরাশির মা,যদিও এর আগে ‘রং নাম্বার’, ‘শরীর’, ‘প্রাত্যহিক’ গল্পেও একই বিষয় অবলম্বিত হয়েছিল। ‘রং নাম্বার’ গল্পে নকশাল আন্দোলনে নিহত দীপঙ্করের বাবা তীর্থবাবুর মানস জগতের উন্মোচনের মতো হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে নকশালপন্থী নিহত তরুণ ব্রতীর মা সুজাতার অন্তর্দহনকে বিসত্মৃতি দিয়ে সত্তরের উত্তাল সময়কে ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় জীবনের রক্তাক্ত এক অধ্যায়কে সাহিত্যের দলিলীকরণের মধ্য দিয়ে এ-উপন্যাসে লেখক মধ্যবিত্তের আত্মতৃপ্তি ও মুগ্ধ সংকীর্ণতার প্রাকারে তীব্র আঘাত হানেন। গোর্কির মায়ের মতোই ব্রতীর মা সুজাতার অরাজনৈতিক সত্তা রূপান্তরিত হয় বিপ্লবী চেতনাসমৃদ্ধ সত্তায়।

জীবনের দুপুর পেরিয়ে এসে এই পড়ন্তবেলায় মনে হয় মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যভাবনার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা বিচিত্রমুখী প্রান্তিকজীবনের আখ্যান। নিকট ও দূরের ইতিহাসকে তিনি যেমন গ্রথিত করেন তাঁর সাহিত্যে, তেমনি সাম্প্রতিক সময়কেও ইতিহাসেরই বস্তুনিষ্ঠ তাৎপর্যে তুলে ধরেন তাঁর লেখায়। বর্তমানতার মধ্যেও তাই তাঁর লেখায় থাকে যেন দূরকালের ইতিহাসের বিভ্রম। তিনি একাধারে সমাজকর্মী এবং লেখক। বঙ্গদেশ তথা ভারতসহ বিশ্বক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত প্রায় নজিরবিহীন। মহাশ্বেতা দেবী শুধু লেখেন না। যা লেখেন, তাই করেও দেখান। তাই তাঁর সাহিত্য আর কর্মজীবন একাত্ম সাধনার এক অনন্য প্রয়াস। সর্বস্বহারাদের জন্য লেখেন না, তাদের জন্য সর্বস্ব ত্যাগও করেন। সৃষ্টির প্রাপ্তি অর্থ নিয়ে কলকাতা শহরে বসে থাকেন না। চলে যান প্রান্তিক পুরুলিয়ায়। তিনি শুধু ভয়েসলেস সেকশনের রাইটার নন, নিরক্ষর বাক্যহারা মানুষের মনের সম্রাজ্ঞী। যেখানে অত্যাচার, নিপীড়ন সেখানেই সবার আগে ছুটে গেছেন জননী মহাশ্বেতা দেবী। কারোর কাছে তিনি দিদি কিংবা বহিন, আবার কারো কাছে মমতাময়ী মা। সর্বার্থেই তিনি একজন যোদ্ধাকর্মবীর। তিনি কর্মসাধক। ব্যক্তিগতকে গুরুত্ব না দিয়ে সমাজের অবহেলিতদের সংগঠিত করার দুর্বার ব্রতকে আজীবন পালন করেছেন। আদিবাসীজনজাতি সমাজ ও সংস্কৃতির ভ্রান্ত ভাবনাকে দূর করার জন্য আপসহীন লড়াই করেছেন।

মুখরিত শ্রাবণ এসে গেলো, রাত ভর বৃষ্টি ছিল গতকাল এইখানে। স্কুলের দিনগুলোর মতন ইচ্ছে করেই আজ অফিস কামাই করেছি। মেঘলা দিনের সরলতা মেখে গ্যাসচুল্লিতে খিচুড়ী বসিয়েছি। কিন্তু ভেবে পাচ্ছিনা সঙ্গে কি ডিম অমলেট নেবো নাকি মাংস কষা। সামনেই তোমার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন চিরযুবক। তোমার জন্মদিনে ‘বিবেক বিদায় পালা’বইটি পাঠালাম। জানিনা বইটি তোমার পড়া কিনা যদি তোমার সংগ্রহে থেকে থাকে তাহলে আমার কপাল মন্দ। মহাশ্বেতা দেবী এই উপন্যাসে ধরেছেন শ্রীচৈতন্য ও তাঁর সমসময়কে। কোথায় জানি পড়েছিলাম এ উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ড লেখার ইচ্ছে ছিল তাঁর। দুর্ভাগ্য, নানান উপকরণ সংগৃহীত হলেও শেষ পর্যন্ত লেখা হয়ে ওঠেনি এ-উপন্যাসের খণ্ডটি। নিরন্তর ভালো থেকো। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকলাম।



শুভেচ্ছা ও শুভকামনায়-

তোমার সুস্মি

১৯ জুলাই, ২০২৫

0 comments: