Next
Previous
Showing posts with label কবিতা. Show all posts
0

কবিতা - গৌতম দাস

Posted in





















জানি এই মুহূর্তে তুমি খুলে দিয়েছ তোমার জানলার কপাট, চাঁদ নেই আকাশে আজ, হাওয়া লেগে কেঁপে কেঁপে ওঠা মোমবাতির আলো খুব সাবধানে তাই আগলে রেখেছ, আমিও এই মুহুর্তে শরীর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে এসে দাঁড়িয়েছি রাতের উঠোনে, একলাই, আমার চারিদিকে ছড়িয়ে এখন কোলোকল ঘণ্টা, পুরনো ক্যাথিড্রাল, বিরাট একটা কালো ঘড়ি আর অজস্র পাখির মৃতদেহ

আশ্লেষা বিশ্বাস করো, প্রতি রাতে আমি চেষ্টা করি এত শব পার না হওয়ার

মৃতদের ঘুম ভাঙিয়ে অভিমান না ছোঁয়ার




প্রতিরাত আমার অতীতকে ছুঁয়ে থাকে


আর সেখানে লুকিয়ে থাকে বিরাট এক জিভ, তরল লালা ছিটোয় সে, সরীসৃপের মত তখন আমি বুকে হেঁটে পথ চলি আর জলজ পথ গিয়ে শেষ হয় অসমাপ্ত বিন্যাসে, এসবই আমার প্রতিরাতযাপন অথচ আকাশ ছেয়ে তখন ছড়ানো থাকে দীর্ঘ এক অরুণাভ ইশারা, আর তাই তখনই গল্প থেকে জানলার ফাঁক ধরে প্রখর জোৎস্নায় নেমে আসো তুমি, নেমে আসো আমার ভেঙে পড়া ঘরে, তিনটে বোতাম ছেঁড়া শার্টের ঝুল ধরে, না-কাটা দাড়ির জঙ্গলে লুকোতে থাকো তোমার বিষাদী ঠোঁট, দু'জনেই তখন আমরা মুখ রাখি পরস্পরের ভয়ংকর অংশগুলোতে


দূরে সুপুরি গাছের মাথায় এসে দাঁড়ায় তখন কলঙ্কিনী চাঁদ, ধূসর ফুলদানিতে মাথা দোলায় বাসী রজনীগন্ধা, বিষাক্ত লালায় মিশে যায় যাবতীয় পাপ'পূণ্য আর জন্মায় অক্ষম বিন্দুকণাময় মুহুর্তস্বেদ


অপেক্ষায় থেকো আশ্লেষা, এ আয়োজন শুধু তোমারই জন্য,
নিজের চিতাভষ্ম নিয়ে ঠিক কোনো একদিন এসে দাঁড়াবো আবার


চোখ মেলে তাকিও


দেখবে দরজায় দাঁড়িয়ে পরিচিত বন্য কোনো প্রেত...




কোনো রাতেরই আজ আর কোনো শর্ত থাকে না, চতুর বাতাস তাই সরল জানলার সীমাবদ্ধ গরাদ পার করে হুড়মুড়িয়ে লুটপাট করে টেবিলবাতীর সঞ্চিত আলো, বইমুখে অন্ধকারে পায়চারি করি রাতভর, জিজ্ঞাসা করি, নিঃশব্দ প্রেমিকার সাদা শীৎকারহীন শরীর আসলে কি প্রেম না কি প্রেমিকের অপমান, তুমি তখনই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠো যেন একবার, তারপর দরজা খুলে হেঁটে যাও পরচর্চাকারী জোৎস্নায়


পাহাড়ের নীচেই তো সব সময় থাকে কোনো না কোনো শান্তগ্রাম অথবা উচ্ছ্বল ঝর্ণা


আজ তোমায় ঘিরে তাই সিঁথিছোঁয়া সিঁদুর, শৃঙ্খল, কপালে কখনো বা করুন মেরুন টিপ, হাতে সব সময়ের বৈষয়িক শাঁখাপলা


আর আমার নিরাপরাধ আয়নায় প্রতিদিন প্রতিরাত অর্ধেক কোনো মুখ


আর অর্ধেক হারানো সেই সুখ...




অসতর্ক নিশিডাকে দরজা খুলে যায়, পাঁচিলের গা ঘেঁষে ঘুমন্ত লতাটি তখন জাপটে ধরে তার একমাত্র ফুল, ধ্বংস চুইয়ে নামতে থাকা জোৎস্নার দিকে তাকায় না সে, রাত্রিরেখার খোঁজে রাতজাগা পাখিরা হঠাৎ করেই যেন একসাথে একটানা ডেকে ওঠে


স্বাভাবিক আর শব্দহীন বাতাসে ফিরে ফিরে আসে আরো একবার মনখারাপেরা


প্রতিফলিত আয়নায় তখনই তুমি ভেসে ওঠো, ভেসে ওঠো আমাদের সেই অবিশ্বাস্য সরল অতীত হয়ে


তবু একসাথে আমাদের কোনোদিন রাত্রিরেখা পার হওয়া হয়নি


ভোরের অস্পষ্ট আলোয় হেঁটে গেছি আলাদা আলাদা পথ হয়ে


দূরত্ব তো আসলে এক ছলনা, মৃত তারার আলোয় তাই আজও তুমি পুঁথি খুলে বসো


প্লাটফর্ম ফাঁকা রেখে রেলগাড়ি চলে যায় সময় মত




এসো, ছুঁয়ে দাও আমায়, ভাঙা রোদ স্পর্শ করুক অবুঝ সেই পিয়ানো


শীত ও অসম্পূর্ণ সান্নিধ্যের মাঝে যে ঘুম আমার খুব প্রিয় তাকে আজ বিলিয়ে দেব নির্ধারিত বালিশ অথবা চাদরে, সন্ধ্যার বেদনাময় জলে মিশিয়ে দেব কলঙ্কিত সুরভী, বীঠোভেন বালিকা, এসব শুধু তোমারই জন্য, বৃষ্টি এবং বিদ্যুৎভরা তোমার আঙুলগুলো আজ হোক আবার সংকেতময়, প্রথম দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সিম্ফনির সুরে স্পষ্ট হয়ে উঠুক আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস, চতুর্থ পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ অথবা সপ্তমে খসে যাক সব মুখোশ অথবা পরচুলো, তারপর তুলনামূলক প্রেমে রাত থাকুক আজ অভিসন্ধিময়ী ঈর্ষা হয়ে


সেখান থেকেই না হয় জন্মহোক অষ্টম, নবম


জন্ম হোক ব্যথিত প্রশ্নের অথবা ভ্রুক্ষেপহীন করোটি কিংবা কংকাল


তবু ছুঁয়ে দাও, ছুঁয়ে দাও আমায় তুমি, বেজে উঠুক দশম


তোমার আঙুল ভাসিয়ে দিক আজ মরা মেঘ আঁকড়ে থাকা বৃষ্টি ভেজা এক সকাল




আলো জ্বলেনি, বারণ না মানা চাঁদ তবু জানলা জুড়ে, ঝুঁকে পড়েন কবি লেখার টেবিলে


কবে উঠেছিল এই ঘুর্ণিঝড়, কবে থেকে আমাদের ঘিরে পরস্পর উন্মাদ হয়েছিল ঝরাপাতা বা কাগজের সব টুকরো, বিচূর্ণ আলোর মত সেদিন কি তুমি ছড়িয়ে পড়েছিলে সৌখিন কোনো মেঘের পরতে পরতে


আর হয়ত বা আমার সব অবৈধতার জন্ম সেদিন থেকেই, উন্মাদ লিপ্সায় সেদিন থেকেই দৌড়চ্ছি আমি, দৌড়চ্ছে আমার প্রতিটি শিরা আর ধমনী, শহরের ব্যস্ত জনপথে তারা অহর্নিশ খুঁজে বেড়ায় তোমায়, খোঁজে চলন্ত বাসে, পরিত্যক্ত গির্জায়, ঝিমিয়ে পড়া অফিসবাড়িতে অথবা হাইরাইজের ফাঁকে, তারপর প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ম মেনে এসে বসি আমার কবিতার পাতায়, পরিচিত সকলের নজর এড়িয়ে অবগহন করি অগণন কবিতায়, সেখানে ডুবতে ডুবতে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমার, মুখের দু'কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে সাদা ফেনা, জলজ শিকড়রা বারবার পেঁচিয়ে ধরে কণ্ঠনালী, তারপর বাঁচবার জন্য, শুধু বেঁচে থাকবার জন্য প্রতিদিন নতুন করে লিখি রূপকথা আমার


আর এসব অবৈধতার মাঝে তুমি এসে দাঁড়াও নিস্পাপ এক বালিকা হয়ে


কান্না আমার দত্তক নিয়েছিলে একদিন আশ্লেষা, প্রেমকে করেছিলে সেদিন অবিনশ্বর


জানলা থেকে চাঁদ সরে গেছে, কলম নামান কবি


বেঁচে আছি আমি যাকে একদিন ডেকেছিলে তুমি অসমাপ্ত ঈশ্বর




সদর দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছেন কবি, হেঁটে চলেছেন, কখনও বা থমকে দাঁড়াচ্ছেন, ভাঙ্গাচোরা মধ্যবয়স্ক মানুষটি বড় যেন ক্লান্ত, বড় জীর্ণ, দু পা ধুলোময় তার, হাওয়াই চপ্পলদুটো কখন যেন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে যেভাবে লেখার টেবিলে ছিটিয়ে থাকে তাঁর মুখখোলা কলমেরা


সাদা পাতায় আমরা দেখি কবিতা


আজ বড়ই অস্থির তিনি, অসম্পূর্ণ কবিতায় তাকে দিতে হবে স্বীকৃতি অথবা অস্বীকার


আর এখানেই আমি আর তুমি দাঁড়িয়ে আশ্লেষা


আজও আমরা জানি না আমাদের পরিচয়, স্বীকৃতি না অস্বীকার


স্বাক্ষর করো, বলো আশ্লেষা, শুধু না হয় কবিকেই গোপনে তুমি বলো


কবি তোমার অস্বীকার না স্বীকৃতি




বুকপকেট জুড়ে রয়েছে শুধু ভুল শহরের ঠিকানা, পথে পথে আজও খুঁজে বেড়াই পরিত্যক্ত সেই ভাঙা স্টেশন, বাসনা আর আয়ত্ত তো ছিল বিপন্ন এক রেলপথ, দ্বিধাহীন জটিলতায় সেখানে কখনো কখনো এসে দাঁড়াতো ভরদুপুরের রেলগাড়ি আর চলা শেষে তা পৌঁছত নিরুত্তাপ নামহীন কোনো স্টেশনে


ভুল হয়, তবু ছুটে আসি আজও, ছুটে আসি দুটো বিয়াল্লিশের উদাসী গাড়ির শব্দে, নিরুত্তাপ প্লাটফর্ম একসময় গুমগুম শব্দে অন্যমনস্কতায় ক্রমশই ফিকে হয়ে আসে আর স্টেশন মাস্টার এসে বসেন তার অলস বারান্দায় মেয়ের অঙ্ক খাতায় সরল জ্যামিতিক হিজিবিজি নিয়ে


আশ্লেষা এই সব ছবি একদিন একান্তই আমাদের ছিল আর ছিল আমাদের রোজকার অনিশ্চিত যাপন


আজ চরিতার্থহীন বেলা শেষে অনুযোগহীন কিছু শব্দ নিয়ে প্রতিদিন এসে বসি


বসি সত্যিকারের প্রেমের কবিতা কোনো একদিন লেখা হবে তার প্রতীক্ষায়




কিছু চাইনি আমি


অভিমতহীন গল্পের মত স্মৃতিরা উড়ে বেড়ায় অথবা তারা খোঁজে অতিরিক্ত চলাচলটুকু পায়ে পায়ে, থাকে সরল ঘূর্ণি অথবা জটিল আশ্বাস তবু মন মনে মনে থাকে অনুযোগহীন, জানে শিমুল তো বসন্ত খুঁজবেই, জানে শেষবিকেলে তুমি চুল খুলে এসে দাঁড়িয়েছ এখন কোনো একতলা সরল বজ্ঞা বাড়ির বিধিবদ্ধ ছাদে, ক্লান্ত পথিক আমি, তাই এই দৃশ্যের শেষে সামান্য কমা দিয়ে থমকে যাই, শ্বাস নেই, অপেক্ষায় থাকি রাতভর স্বপ্নের যেখানে প্রতিরাতে তুমি আমায় ছারখার করো


আশ্লেষা প্রতিরাতেই এভাবে আমরা মৃত্যুবদল করি, মৃত্যুবদল করি উদাসীন এক ভোরের দিকে চেয়ে যেখানে দুপুরের রোদ ক্রমশ ফিকে হয়ে এসে পড়ে


পড়ে জীবনের জটিল লতাপাতায়


১০


তোমার জানলার গরাদ ছুঁয়ে আজ রাতের আকাশদীঘি, সেখানে শিশিরের টুপটাপ ঝরে পড়া, এলোমেলো জোৎস্নায় বারবার উচাটন তোমার আনমনা ওড়না আর বারণ না মানা ছায়াপথ ক্রমশ যেন ঝুকে পড়েছে, ঝুকে পড়েছে তোমার কপাল বেয়ে, নীচে, নিষ্পাপ জ্যামিতিক সরলরেখায়,
ঘুমিয়ে পড়ো না আশ্লেষা, এসব আয়োজন তোমায় শেষ চুম্বন উৎসর্গ করব বলে


শেষবার আগুন হব আমি


উন্মাদ কবি জ্বলতে জ্বলতে চিনে নেবে আজ তার লেখা না হওয়া কবিতার লিপি


১১


হয়তো বা তোমার বাড়ির সামনের আকাশে মেঘের পরত এখন, আসলে যে দিন প্রতিদিন শেষ হয় তারা সব পুরনো মনখারাপ আর তুমি আমি আনমনা হই তখন, মনে পড়ে মৃত সেই কোনো সর্ম্পক, চোখ মেলে তাকাই, আয়ত চোখে নেমে আসে মৃত সব বৃষ্টিরা


আশ্লেষা এই বৃষ্টিফোঁটারা এখন আর আমাদের নয়, নিজেদের জন্য তো আমরা আর কাঁদি না,
শুধু নিঃস্ব মেঘদুটো কখনও কখনও ফুঁপিয়ে ওঠে, আর তখনই পৃথিবীতে নেমে আসে আশ্চর্য সব জটিল প্রেম, আশ্চর্য সব সরল বৃষ্টি


তুলি ধরেন কবি


এ গল্পের শুরু হয় আকাশে আয়ত দুই মেঘ নিয়ে


অভিশাপ নিয়ে যারা বেঁচে থাকে গায়ে বৃষ্টিজল মেখে


১২


জীবনে যে প্রেম কখনো আসেনি বা আসবে না তার নাম অপেক্ষা


পিছন ফিরে তাকালে শুধুই সরলরেখায় হেঁটে চলা, বাতাস তা সে যতই হোক না অসাবধানী তাকে তো আমরা অনেক বেশী জানি, স্বপ্নে মিথ্যে মেশায় মন, মিথ্যে চুম্বনের স্বপ্নে ঘুম ভাঙে, বাইরে তখন শুধুই অন্ধকার, এই অন্ধকারে দুটো ভিন্ন রূপকথায় ক্রমশ ডুবে গেছি আমরা, ডুবে গেছি দুটো ভিন্ন ঝর্ণাধারায়, ক্লান্ত হয়ে খুঁজছি শ্যাওলা মাখা কোনো ঘর


অবসন্ন সন্ধ্যায় সে ঘরে তুমি প্রতিদিন সন্ধ্যাবাতি দাও আর আমি ফিরে ফিরে আসি ক্লান্ত করণিকের প্রেতাত্মা বয়ে,
শুধু আকাশ থেকে যেদিন খসে পড়ে কোনো এক রক্তলাল তারা, ছারখার হয় বুকের মধ্যে রাখা জমানো সব স্মৃতিছায়াপাড়া


খোলা ছাদে তুমিও তখন এসে দাঁড়াও,চোখ মেলে দেখো


কালপুরুষ সেজে দাঁড়িয়ে আছে আমি, আসলে দাঁড়িয়ে আছে ব্যর্থ কিছু তারা


১৩


সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিম আকাশে, হেঁটে যান কবি, শেষ বিকেলে ছায়া সামান্য ঝুকে এখন, শিকড় জুড়ে স্মৃতির অনিয়ন্ত্রিত টান, বারবার পিছু ডাকে, পীড়িত রাত্রির ক্ষুধা কবিকে ভাবায় না, নোঙর তোলেন তিনি যেমন দ্রুতগামী বাতাসেও পাল ওড়ে টানটান স্পর্ধায়,আশ্লেষা আর কিছুক্ষণে


তারপর হয়তো মিলিয়ে যাবে নিহিত শব্দের সব ঘ্রাণ, শুধু পরিযায়ী পাখিরা যে পালকের স্তুপ ফেলে গিয়েছিল তা আর কুড়ানো হবে না


বিকেল মিলিয়ে যাবে দ্রুত কোনো আহত সন্ধ্যায়


ঢলে পড়বে সূর্য পশ্চিম আকাশে


ঢলে পড়বে কবির বারান্দায়


১৪


অক্ষত্রিয় আমি


ভেঙ্গে যায় প্রতিরোধ সব, ভুল হয় বৃষ্টির বিন্যাসে, বিষণ্ন মাধবী আজ একা একা ফুটে আছে, তোমায় নিয়ে সেদিন শহরতলীর ট্রেন ছুটে গিয়েছিল, মুখরিত আত্মায় মিশে গিয়েছিল তা আমাদের সময়ের গুঞ্জন, অবলীলায় রোজকারের খুঁটিনাটি সেরে তুমি বলেছিলে, নিহিত সন্ধ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলে আমাদের আলোর সন্ন্যাস


মন্ত্রমুগ্ধ কবি কান পাতেন, শোনেন স্মৃতির কণ্ঠস্বর, আঁকড়ে ধরেন পূর্বজন্ম যার বৈভব আজ গোধূলিবেলায়, দূরে উপকুলে দাঁড়িয়ে ঝাউবীথি, দাঁড়িয়ে নক্ষত্রের সারি, কবি লিখে যান


আগে কখনো জানিনি জীবনের সমস্ত অভিষেক আসলে অনুভূতিরই বিস্তৃতি, রক্তে আনে তা ঝড়ের জাগৃতি, অলৌকিক বাগান থেকে তাই বহুবর্ণ পাতা ঝরে পড়ে অন্ধকারে আসলে ঝরে পড়ে আমারই রক্ত হয়ে,
আশ্লেষা তোমায় ডাকতে পারতাম আমি রাধা কিংবা খাদিজা কিংবা মারিয়া বলে, অথবা অন্য কোনো নামে, কিন্তু পারিনি, আর তাই ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছে আমার মস্তিস্কের উজ্জ্বল কর্টেক্স, নিভে এসেছে আমার সেই দীপ্ত চোখদুটো, তবু দেখো অবেলায় আজও অবিরল ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে আমার জীবন, বয়ে যাচ্ছে তা আমার সারা শরীর বেয়ে, অনিঃশেষ আবেগের স্রোতে, আজ না হয় ভিজে যাক আবার জাহাজের পাটাতন, জলমগ্ন না হয় হোক আজ আবার সব স্মৃতি, ভেসে যাক না হয় রঙিন সব ফানুস


তবু আমি বর্মহীন থাকিব আজও


অক্ষত্রিয় হব আজ আবার


অভিশপ্ত চক্রব্যূহই হবে আমার শেষ অহঙ্কার


১৫


আমার দ্বিতীয় সত্তা আজ শহরের পথে পথে, খুঁজে বেড়ায় সে না লেখা উপন্যাসের সেই সব চরিত্র, ব্যস্ত রাজপথ, একাকী চিলেকোঠা অথবা রাতের আকাশ আজ বিদ্ধ করে আমার চোখের মণি, আর আমার উপন্যাস হয়ে যায় আমারই মত কলঙ্কভাগী, দিনের শেষে সেখানে পড়ে থাকে না পরা সব মুখোশ, পড়ে থাকে প্রাণহীণ চরিত্র আর গ্রিনরুম থেকে যায় নির্বাক, সংলাপহীন, আচ্ছা, মৃত্যুর আগে মানুষ কি খুব কাঁদে, জানি না, তবু কবি এসে দাঁড়ান জলপ্রপাতের নীচে, পলকহীন চোখে দেখে যান বয়ে যাওয়া জলের স্রোত, সতী নির্মাণের জন্য তো কতবার জেগেছে এই শ্মশান, কতবার পুড়েছে ফুল, পুড়েছে বেলপাতা, চন্দনকাঠ, এই শ্মশানেই তো তিনি দেখেছেন অগ্নি আর বায়ুর অশেষ মৈথুন, দেখেছেন ভাঙ্গা কলসি, কালো ছাই, অর্ধদগ্ধ কাঠ, ইত্যাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নির্মোহ নিস্পৃহ শ্মশান


তারপর পুড়ে গেছে সবকিছু একদিন


তবু নিশ্চল রাতে ক্ষীণকায়া নদীর তীরে ফিরে ফিরে আসেন কবি আবার, ফিরে আসেন ভাঙা সেই সাঁকো বুকে নিয়ে


এই ফিরে আসা শুধু তোমারই জন্য আশ্লেষা


ফিরিয়ে দিও না কবিকে তুমি আবার


১৬


গোল হয়ে পাখীরা ওড়ে আকাশে আর পালকের রঙে অন্ধ হন কবি, যা দেখেন তা শেষ হয় না তাই ঢাল নীচে নামে, নীচে ছোট্ট সেই ডোবা, তিন ধাপ তার সিঁড়ি, সিঁড়িবেয়ে একফালি উঠোন, আর উঠোন শেষে কাঠের দরজা, দরজার ওপারে খাট, ছোট তোশক, হাতেতোলা মাটির উনোন, কুলুঙ্গিতে শুধু শূন্যতা, সামনের দাওয়াও ফেটে চৌচির, চৌচির বুনো শেকড়ের আলপনা, বছরের পর বছর তাতে ধুলো পড়ে ঝরঝর, বালি পড়ে ঝুরঝুর, কান পাতেন কবি, সেদিনের মতই পাতাভাঙার অস্পষ্ট শব্দ, শাড়িতে জড়ানো বুনোকাঁটা, মাথাছোঁয়া গুলঞ্চলতা, জানি এ পায়ের শব্দ তোমারই, চোখ মেলেন কবি, চুলে কুটো, কপালে কাঁচপোকা, নাকে ঘাম, বুকে ওঠা-পড়া


বারবার ছায়াচ্ছন্ন বয়স হয়ে তুমি ফিরে ফিরে আসো আশ্লেষা, সন্ধ্যা হয়, পাখীরা গোল হয়ে আকাশে ওড়ে আর পালকের রঙে অন্ধ হন কবি আবার


স্মৃতিরা তখনই নীচে নামে যদিও


চড়াই জুড়ে এখন শুধুই স্মৃতিটান




১৭


আজও স্বপ্ন দেখি আশ্লেষা আর সে স্বপ্নে তুমি এসে দাঁড়াও, চারপাশে তখন আমার অন্ধ অতীত, তোমাকে ছোঁওয়ার জন্য হাত বাড়াই আর বাড়ানো সে হাত কে যেন আচম্বিতেই নিজের আগলে বন্দী করে নেয়, যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠি আর দেখি তুমিও আমার মতই যন্ত্রণায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছ অক্ষরহীন কিছু পংক্তিতে, বিচূর্ণ সূর্যের গান গেয়ে তখনই মানুষের নিঃসঙ্গ জীবনে ফিরে আসে লুব্ধক নক্ষত্র, গভীর রাতে তখনই শরীর মিশে যায় একরাশ নিহত কুয়াশায়, কালি ও কলম পাশাপাশি এসে দাঁড়ায় তবু ঈশ্বর রয়ে যান শব্দহীন,
রঙহীন বিবর্ণ নদী হয়ে আবর্তিত হতে থাকি ফেলে আসা অতীতে, আবর্তিত হতে থাকে আমার স্বপ্নরা, পড়ন্ত বিকেলে তখনই উদ্দেশ্যহীন দিন শেষ হয়, নিভে আসে শেষ বিকেলের আলো, ঘরে ফেরে পাখিরা, সন্ধ্যার নিয়ন পেরিয়ে অতিক্রম করতে থাকি একটার পর একটা বৃত্ত, যদি খুঁজে পাই ঘর, ঘর নয় বাসা, দূর বহুদূর হেঁটে যাই, হাঁটতে থাকি যতক্ষণ না একটা মরচে ধরা ভোর একতারা হাতে আমাকে স্বাগত জানায়, ডেকে নেয় তার সুরহীন চলার পথে, চলতে থাকি আমি, চলতে থাকে আমার নিঃশব্দ ছায়া


ঘুর্নিঝড় তখনই শব্দের পেখম মেলে, চোখ মেলি,
চশমার ভাঙ্গা কাঁচে বৃষ্টির জল এসে পড়ে


আশ্লেষা, প্রিয় উৎসবের ফুল আজও রাখা আছে নির্ধারিত টবে, হয়তো বা কখনো আবার ভোর হবে আর শরীরের যুদ্ধ থেকে বহুদুরে চলে গিয়েও সেদিন ঠিক ফিরে আসব তোমারই কাছে


ভোরের আজান শেষে নতজানু কবি আজও লেখে অক্ষরহীন প্রেমকথা


১৮


সেদিনও বৃষ্টি হবে আশ্লেষা যেমন হয়েছিল কোনো একদিন, বৃষ্টির একপারে থাকবে তুমি, অন্যপারে আমি, দুঃখমেঘ তারপর কখন জানি কান্না হয়ে যাবে, ছুঁয়ে যাবে তোমার চোখ, অপলক আমি, বিন্দুজলকণা চিবুক ছুঁয়ে টলমলো প্রতীক্ষায় আর আমি লম্পটের মত চুরমার করব স্মৃতির সব আয়না, উড়িয়ে দেব বুকের কোনে থাকা বেহিসেবী সব যন্ত্রণা, নীলশিখায় পুড়ব


পোড়াব তোমার সব পাপ


নিজের চিতাভষ্ম দুহাত ভরে বলবো ভালবাসি


আরো একবার, শেষবার


১৯


আকাশের বুকে শুয়ে আছে নক্ষত্রের এক আশ্চর্য নদী আর আধভাঙ্গা চাঁদ নেমে আসে উঠোনের পোড়া নিমগাছে, তবুও অসমাপ্ত কবিতার খাতায় অক্ষরগুলো যেন বড়ই অনুজ্জ্বল আজ, ফিকে জোৎস্নায় দাঁড়ান কবি


পলাশগড়ে আজও সন্ধ্যার ট্রেন সময় মেনেই হয়তো থামে আর তড়িঘড়ি তুমি হেঁটে যাও তোমার পাঁচিলঘেরা ডানামেলা বাড়িটার দিকে যাকে তুমি সাজিয়েছ নিয়মবেঁধে, সাজিয়েছ তোমার সম্পর্কের রোদ ও রোদ্দুরে


রাত গড়ায়, দরজা বন্ধ হয়, রাতজাগা পাখীরা ঘরে ফেরে আর আশ্চর্য কষ্টরা আবার ডানা ঝাপটায় একা একা


বারোটা বছর অনেকখানি সময় আশ্লেষা


আজও জোৎস্নায় একা একা স্নান করেন কবি


জলপায়ে আবার যদি হেঁটে আসে একদিন নদী


২০


আশ্লেষা, বাড়ি ফিরে তুমি কি এখন চুল খুলে দাঁড়িয়েছ, দাঁড়িয়েছ তোমার আয়নার সামনে, তোমার ঘরের অনিশ্চিত হাওয়ায় বারবার কি ফিরে আসছে ভালবাসি বলতে না পারার সেই আত্মরক্ষাহীন অপরাধবোধ, তোমার শরীরে হয়তো পলাশ রঙ এখন, কপালে উজ্জ্বল স্বঘোষিত টিপ, বিধিবদ্ধ আত্মীয়রা তোমার নিরীহ আর সমাজসম্মত জানলার কপাট হয়তো বন্ধ করে দেবে একটু বাদে আর অনুযোগহীন কোনের ঘরে তুমি পাতবে আর এক সফল রাত-বিছানা


হেঁটে যেতে যেতে আমি এখন অভিমতহীন এই দৃশ্যের শেষে একটি সামান্য কমা দিয়ে থমকে যাব


না বলা না লেখা কোনো রূপকথারই অপেক্ষায়


২১


শেষবার যখন দেখা হলো তুমি কাঁদছিলে আশ্লেষা, আমি দু'হাত পেতে দিয়েছিলাম, ফোঁটা ফোঁটা জলে ক্রমশ দগ্ধ হচ্ছিল আমার হাতের পাতা, তারপর পুড়ে গিয়েছিল আমার বাহু, বুক, আর সবশেষে মন, সেই থেকে রাত্রির আকাশে দাঁড়িয়ে আমি অর্দ্ধদগ্ধ এক মানুষ


সারারাত মাথা ঝাঁকাই, চিকিচিকি তারারা খসে পড়ে, হাত বাড়াই, চাঁদ সরে যায় আর শেষরাতে পায়ে পায়ে নেমে দাঁড়াই তোমার ঘুমের মাঝে, মাংসহীন আঙুল ছোঁয়াই তোমার চুলে, পোড়া ঠোঁটে ফিসফিসিয়ে বলি


বলি তোমার ঘুমকে


জ্বলন্ত শরীর নিয়ে আনন্দ আজও যে জল চায় চণ্ডালিনীর কাছে


২২


"যদি ছুঁয়ে যাই তোমার দু-খানি হাত, সারাদিন-সারারাত..."


ঘুম আসে না, অস্থির কবি একা রাত্রি পোড়ান, শব্দ খোঁজেন


"চারিদিকে বড় কোলাহল, বৃষ্টির কাছে যাবে কি তুমি আশ্লেষা, খুঁজে এনে দেবে দু-ফোঁটা চোখের জল..."


বৃষ্টি আসে না


ধুলোবালি করে দিতে চান তাই কবি সব পাওয়া সম্মান


বারবার যে এ জীবনে ভুল হয় জীবনের বানান


২৩


পিছন ফিরে তাকান না


আনমনা আলো মেখে কবি দাঁড়িয়ে, পিছে বিস্তৃত উতরাই, চেনা-অচেনারা ফিরে গেছে এ পথ বেয়ে আর কুলীন বাতাস বয়ে এনেছে দীর্ঘশ্বাস ...


অসংখ্যবার এই শরীরের মৃত্যু হয়েছে অথচ কখনো গুনিনি মৃত্যুর ঠিক কতদিন বাদে আবার বেঁচে উঠি, এই যে ঘুমের মধ্যে পুরনো সময়ের দিকে হেঁটে যাওয়া, এই যে প্রতিদিন জেগে ওঠা, এক টুকরো আয়নায় দু'জনার তাকিয়ে থাকা যেখানে তুমি কথা বলো আমার প্রতিবিম্বের সঙ্গে আর আমি তোমার ছায়ার হাতে হাত রাখি


হেঁটে যান কবি চড়াইয়ের পথে, আরো বেশী বেশী করে কাছে যেতে চান আকাশের, আশ্লেষা যদি কোনোদিন ফিরে আসো, যদি দেখো পথ ভুল করেছে কেউ, দিগন্তে কেউ ভুলে ফেলে গেছে তার গান জানবে সে আসলে আমারই ছায়া, তুলে নিও পড়ে থাকা মৃত সে কবিতার খাম


লেখা আছে দেখো 'ভালবাসা' যা ছিল তোমাকে দেওয়া আমার ডাকনাম


আনমনা আলো গায়ে কবি দাঁড়িয়ে, পিছনে বিস্তৃত উতরাই


পিছন ফিরে তাকান না কবি...


২৪


আকাশের বাতিল তারা কবির ঘরে এখন, জোৎস্নারা টলোমলো করছে যেন দুজনার হাতে, ছায়াপথ টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে যাচ্ছে গ্লাসে গ্লাসে


হয়তো বা প্রেমিকার কথা বলছিল তারা তখন, হাঁটখোলা কলেজের সামনের সেই রাস্তা, কপালে সিঁদুরের ছোঁয়া, চোখদুটো জলে ভাসা


তোমাকে পাওয়া আর না পাওয়ার সুখে আমি ঘুমিয়ে পড়ব এবার আশ্লেষা, আর ঘুমের মধ্যে অভিশাপে পুড়ে যাবে আমার সমস্ত ভালবাসা


হয়তো একদিন হয়ে যাবে তা হীরের কোনো নাকছাবি


একলা কবি কাঁদেন,একলা কবি বাঁচেন


আজও সাথে নিয়ে অসম্ভবের শেষ আশা
0

কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী

Posted in







অবিনাশবাবুর কাছে আজকের
রাতটা মনে রাখার মতো

তার ঘরটি প্রশস্তে ছোট
কিন্তু লম্বাটে
খানিকটা গুহার মতো দেখতে

অবিনাশবাবু সোজা লম্বা হয়ে
শুয়ে থাকে

ছাদ থেকে
ঝুলে থাকে না নিজের ঘরে
বাদুড়ের মতো

অবিনাশবাবুর ঘরের এক কোণে
বসে ওরা স্তোত্র পাঠ করতে থাকে

রাতের অন্ধকারে ত্রিমূর্তি নিজের
রীতি মেনে
ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে

তার মাথার কাছে রাখা
সাদা কাগজ ওদের স্পর্শে পাথরে
পরিণত হয়

অবিনাশবাবুর মাথার মধ্যে
স্তোত্র পাঠের উচ্চারিত
শব্দগুলি ভাসতে থাকে

নিয়মের উলটো দিকে
একত্রিত হয়
অনুচ্চারিত কথা হয়ে

অবিনাশবাবু চিৎকার করে
আমাকে ঘুমতে দাও তোমরা
তার শরীর কেঁপে উঠে

অবিনাশবাবু স্পষ্ট
দেখতে পায়
ওই মেয়ের হাতে
একটা লাউ ধরা আছে
পৃথিবীর আকৃতিতে

অবিনাশবাবুর কাছে
আজকের রাতটা যথেষ্টই ছিল।
0

কবিতা - অঞ্জন বল

Posted in



















( ১৯শে মে বরাক উপত্যকার ভাষা শহীদদের স্মরণে )


যে জনপদের ছিল একটি ইতিহাস
দেশভাগে হারিয়েছিল সে ভূগোল
সুরমা কুশিয়ারা হয়ে বরাকের ঢেউ
স্রোতে স্রোতে প্রান্তর হাওড়ের ডাঙ্গা
স্বভূমি হারিয়ে নতুন ভূগোল ।
বাস্তুভিটে , প্রসারিত দ্বৈপায়ন ,
ভূমিজ কৃষিক্ষেত , জরায়ুজ যা কিছু
সব ছেড়ে বরাকের তীরে বাঙালির নতুন
স্বদেশ ।

যে মাটিতে শস্য বুনি সেই মাটিতে বর্ণমালা
যা কিছু নির্মাণ জন্মগাথা
ধামাইলের সুরে --
সব হারিয়েও ভাষা থেকে যায়
জড়িয়ে থাকে নাড়িতে
নিরঙ্কুশ প্রজননে ।
মাটির গন্ধে জড়ানো থাকে গান --
কান্দে হাসন রাজার মন ময়নারে
মাটি ও পিঞ্জিরার মাঝে ।

গিলোটিনের শাসনে ভাষা সন্ত্রাস
১৯ মে ১৯৬১ সাল -
বরাক নদীর পারে
ভাষা শহীদের রক্ত ঝরেছিলো
স্বাধীনতার দেশে।

১৯শে মে আবেগে ধুলো জমে--
১৯ শে মে ফুল মালার উদযাপনে
১৯ শে মে বাঙালির বিস্মরণে
বাঙালির ইতিহাস বেঁচে থাকে,
সেই যে ছিল একটি ভাষা
আ-মরি বাঙলা ভাষা,
বেঁচে থাকার ইতিহাস ইতিকথা
মনুষ্যের জাত নেই , শুধু আছে ভাষা
নির্মাণ জন্মগাথা ।
0

কবিতা - অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়

Posted in






দেবতারা ক্ষমতা হারাচ্ছে দিনে দিনে।
বৃষ্টি আর সময়মত হয় না।

মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে
একদল মানুষ
সাহস করে
দেবতাদের শাস্তি দিল।

বৃষ্টি দাও নি তুমি—
আরও যা মানত করেছিলাম, তাও—
নির্বাসিত হলে তা‌ই।

বিস্তর স‌ওয়াল জবাবের পর
মনমত শাস্তিবিধান করে
ভরপেট খেয়ে
হাসিমুখে বাড়ি গেল ওরা।

বছরের বাকি কটা দিন
মন্দিরে নয়;
খোলা আকাশের নীচে কাটাবে দেবতারা।

আমরা গা-বাঁচিয়ে চলা ছাপোষা বাঙালী—
অতটা স্পর্দ্ধা দেখা‌ই না।
বছরের পর বছর,
কপালে হাত ঠেকিয়ে এক‌ই কথা বলি।
“সকলকে ভালো রেখো মা—দুগ্গা দুগ্গা”।
0

কবিতা - গৌতম দাস

Posted in



















দিকনির্দেশ

এখানে আর আমার নাম কেউ মুখে আনে না, সময়, সে তো আসলে চলে বিপরীত অপেক্ষায়, হারুনের ছেলে বন্ধুদের সাথে কাজের খোঁজে বিদেশ গিয়ে ফিরলো না আর

হারুন রোজ তাই অপেক্ষায় থাকে একটি চিঠির, আর ঐ যে মেয়েটি সামনের শনিবার বয়-ফ্রেন্ডকে বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেবে বলে বাসের হাতল ধরতে ছুটেছিল

সে-ও আর ফিরে আসেনি বাসস্টপে, ছাপোষা মধ্য বয়স্ক মানুষটিও চায়ের ভাড় বেঞ্চে রেখে সেই যে সেদিন রাস্তা পার করে সিগারেট কিনতে গেলো

আজও সে ফিরে আসলো না...

আসলে বড় অপেক্ষার শহর এই শহর, সন্ধে নামলে তাই এখানে কাঁধ জড়িয়ে বাতাসের উৎসব শুরু হয়, বুড়ো ক্ল্যারিনেটবাদকের টুপি তখন উপচে ওঠে করুণায়, পাতাল রেলের সিঁড়ির শেষে ফিসফিস করে গল্পে মেতে ওঠে দুই অসফল মানুষ

ছদ্মবেশী শহর তাদের কথা শুনবে বলে কান পাতে তখন

আর আমি বাড়ি ফেরার দিকনির্দেশ যেন হারিয়ে ফেলি

শুধু মনে পড়ে যেদিকেই হাঁটি, এ অপেক্ষার শেষ নেই, সাবধানে হাঁটি

জানতে চাইলে কাউকে বলি না কতদূর আসলে যেতে চাই...

বাড়ি ফেরার আগে মৃত্যুর পরেরটুকু শুধু যেন লিখে যেতে চাই...







প্রতিশ্রুতি

আলো জ্বালানো নিষেধ, মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে সব তারা, ধুলোবালি মনে স্মৃতিকথা নিয়ে বসে আছি ছাদের কিনারে

নাবিক তো ঘরে ফেরে এসময়ই, দুয়ার খুলে দেয় তার নারী, তবু সমুদ্র আর চাঁদ আজ আত্মহত্যার স্বপ্ন দেখে

যেমন নি:শর্ত কবিতার মত তুমি আজও ভেসে যাও জোৎস্না হয়ে, পাহাড়ের বুকে বদলাও বারবার তোমার গতিপথ

প্রতিশ্রুতিগুলি চিরদিন শুধু থেকে যায়

গোপন কথার মতই সৎ







মিথ্যে

মনে মনে দৃশ্যপট এভাবেই সাজিয়েছি

পথ চলতি এ শহরের কোনো এক ব্যস্ত অথবা অব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ করেই তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে একদিন, দূর থেকে তোমায় দেখে দাঁড়িয়ে পড়ব আর কাছে এসে চোখ তুলে আমায় দেখে চমকে উঠবে তুমি, ততক্ষণে আমার ধুকপুক করা বুকের ওঠানামা সামলে খুব আলতো করে তোমায় জিজ্ঞাসা করব, কেমন আছ, ঈষৎ ঘাড় নেড়ে সেকথার জবাব দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুমি জানতে চাইবে কবে চশমা নিলাম, ছেলে কোন ক্লাসে পড়ছে, বৌকে নিয়ে গতবার শীতে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলাম কি না, আমিও জেনে নেব তোমার মেয়ে বনজোৎস্নার কথা, তোমার স্বামীর কথা, অলস দুপুরে এখনও কি তুমি মাঝে মাঝে রং তুলি নিয়ে ছবি আঁকো, এইসব ...

আসলে এসব এক দৃশ্যকল্প মাত্র অথবা এক অস্থির অস্থিরতা যা শুধু আমাকেই ছুঁয়ে থাকে অথবা বলতে পারো গলে পড়া মোমের নীচের বাসনা-রুদ্ধ মুখ

কিংবা মেনে নিতে পারো সেই বিশ্বাস

বিন্দুর ওপর যে কোনো সময় আমি জেগে উঠতে পারি, জেগে উঠতে পারি এক সৌধ হয়ে অথবা সংকেত ছাড়াই চলে যেতে পারি কখনো বিস্মৃতির আড়ালে...

তস্কর বাতাস শুধু তখন ছুঁয়ে থাকবে তোমায়, ছুঁয়ে থাকবে আমার আকাঙ্ক্ষা হয়ে...

একদিম তুমি একে বিভ্রম বলেছিলে

কিন্তু সত্যি বলো তো, কখনো কি মিথ্যে বলতে পেরেছিলে...
0

কবিতা - সমরেন্দ্র বিশ্বাস

Posted in





আজকে মে-দিন।
সামনে টান টান পড়ে থাকা ঝিমধরা পথ তোমায় ডাকছে!
পথের উপর লেপ্টে থাকা ম্লান রোদ্দুরের-আলো ইশারায় ঈঙ্গিতে তোমায় ডাকছে!
এই পথ চলে গেছে লড়াই-এর ময়দানে,
এই পথ শেষ হয়েছে ক্ষুধার্ত শিবিরের পরিখায়।
এই পথ ছুটে গেছে মেহনতী মানুষের ইচ্ছের দিকে,
এই পথ মিশে গেছে পাঠশালার অনুভবে, ভালবাসায়।

গত কাল বৃষ্টি হয়ে গেছে,
মানুষের ভালবাসা উজ্জ্বল বৃষ্টির মতো
ধুইয়ে দিয়েছে মে-দিনের এই অনন্ত পথ।

এখনও পথে ছড়ানো কিছু লাল ফুল –
সেই সব রক্তাক্ত ইতিহাসের চিহ্ন, যা আমরা ভুলি নি।
এখনও পথে ছড়ানো কিছু হলুদ ফুল –
মেহনতী আকাঙ্ক্ষার সেইসব পীতাভ চিহ্ন –
যার জন্যে আমরা যুগ যুগ লড়াই করেছি।
এই পথে কিছু সাদা ফুল এখনও ছড়ানো বাকী
যা আমাদের নিয়ে যাবে আগামীর দিকে।

আজকে মে-দিন।
সামনের অনন্ত পথ প্রতীক্ষায় ঝিম মেরে আছে,
মেহনতী মানুষের মন বর্ণময় রামধনু, কিম্বা বাঁকা কাস্তে।
একটা অনন্ত পথের সামনে দাঁড়িয়ে আজকের মে-দিনটা হেসে হেসে পেপার বেচছে!

3

কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী

Posted in



















হালকা সাদা নর্তকী
ভেসে বেড়াচ্ছিল
সকাল থেকে

বাতাসের মোহে ও আনুকূল্যে
আকাশের উপরের দিকে
আকাশ জুড়ে

নিজের ধীরে গতি মেনে
সমুদ্রের উপরে ডানা মেলে
জল ছুঁয়ে যায়

তীরের কালো কালো পাথরগুলি
ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে
শুয়ে আছে
নর্তকীর সামনে

একের পর এক
একের থেকে এক আলাদা ঢেউগুলি
কোঁকড়ানো ঝালর লাগানো অলঙ্কারের
মতো
নর্তকীর পা ছুঁয়ে যায়

ঘূর্ণিঝড়ের তির্যক বাতাসে
জলের ছিটেয়
নিজেকে ভিজিয়ে নিল
ঠোঁট রাখে
ঢেউ অলঙ্কারের উপরে

জল স্পর্শ করে
পাগুলি ভিজিয়ে নেয়
নর্তকীর নরম,
অবরোহী সিদ্ধান্তে

জল ফ্যাকেশে হয়
নর্তকীর পায়ের রঙে,
গরিমায়

ফ্যাকেশে জল ঢেউ ভাঙতে শুরু
করে
ভাঙতে ভাঙতে ঢেউ শান্ত হয়ে যায়

আরেক ঢেউের নাচনীতে
নর্তকী কাঁপতে কাঁপতে
নিজের ঠোঁট বেঁকিয়ে
জলের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে

ওর শরীর জুড়ে
সাদা রেশমি পোশাক
জলের শব্দ নর্তকীর কানে আসে
জলের ঝাপটায় রেশমি পোশাক ভিজতে থাকে

এখানে এখন এর থেকে
সুন্দর কিছু নেই

নর্তকীর সুখের শরীরে
অর্থহীন আগুনে, দাবানলে
হৃদয় কাঁপিয়ে
নর্তকী ভেসে যায় আকাশে
বাতাসের মোহে।
0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





রোদ বৃষ্টির মিষ্টি আলাপ খুব জমেছে
ভিজবে বলে বর্ষাতি আজ অপেক্ষাতে
পদ্ম পাতা হীরের লোভে বুক চিতিয়ে
বেলের কুঁড়ি মেলবে বলে গন্ধ ছড়ায়

পায়ের নিচে গরম বালির মরীচিকা
গাছের ছায়া স্বপ্ন দেখে শীতলপাটি
কৃষচূড়া আকাশ জুড়ে লালচে ছড়ায়
বারান্দাতে রোদ ছুঁয়েছে জলের বাটি

জ্বলব বলে হওয়ার নিচে দাঁড়িয়েছিলাম
সূর্য কি আর তোমার মত রাগতে পারে?
নিবিয়ে দিলো ছটাক মেঘের আভাস এসে
আমিও তাই তপ্ত দিনে ডিঙা ভাসাই

গরম হাওয়া আজ ছুঁয়েছে দেশের মাটি
ছোয়াঁচ লেগে পাশের বাড়ির তপ্ত চুলা
এসব বুঝি গরম দিনের তপ্ত দাওয়াই
এসব ছেড়ে আমরা বরং দাওয়ায় জুড়াই
0

কবিতা - ইন্দ্রাণী সরকার

Posted in






ড্যান্ডিলায়নের পাপড়ি হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কদমের রেণু ঘাসের ওপর ঝরে পড়ে রোদেলা আকাশে মেঘদের নৌকো ভেসে চলে পাহাড়ের মাথায় সবুজ আঁকিবুঁকি তেরছা আলো ঝুঁকে আছে দোরের আনাগোনায় দূরে একটি ফড়িং পাতার চৌখুপিতে উঁকিঝুঁকি মারে বনশালিক কিছু মাথা নাড়িয়ে বচসায় রত ছবির মত বাড়িগুলি নদীর ওপারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে জলে কিছু নৌকো অল্প হাওয়ায় ঢেউয়ের দোলায় কচিপাতার ফাঁক দিয়ে উড়ে যায় রঙিন প্রজাপতিদের পাখা ।



0

কবিতা - রঞ্জন ঘোষ দস্তিদার

Posted in




















শূন্যতা তুই কোথায় ছিলি বল?
কোথায় ছিলি সেইক্ষণের ও আগে
দূর অতীতে প্রথম শুরুর দিনে
কার গর্ভে সম্ভাবনা হয়ে
আমি যেমন ছিলাম মায়ের সাথে।

এমনি দিনে আলো দেখার পরে
তোরই মতন শুধু বেড়ে চলা
অধরাকে ধরার চেষ্টা করা।
যতই ধরি "অধরা" ঠিক থাকে
সময় যেমন সদাই আগে আগে।

শূন্যতা তোর ব্যাপ্তি কতদূর ?
অন্তহীন ওই রেখাটির মাঝে ?
নাকি, অতি বাদে অসীম যতদূর ?
এখন আমি আরও কাছাকাছি
মাঝে থেকেও হাত বাড়িয়ে আছি ।

বোধ, কথা, আর গান, কান্না শেষে
আলো আঁধার যে সীমানায় মেশে,
যে কালের ঘোড়া ছুটত আগে আগে
তাকে এবার আনব আমার বশে
অসীম শূন্যে সেই সীমাতে এসে।
0

কবিতা - আশীষ কুমার বিশ্বাস

Posted in




















মৃতদেহ ফেলে রেখে
যাচ্ছি ছুটে অন্য দেশে
মারছি সেথায় আরও মানুষ
অন্য ভাবে , অন্য বেশে ।

মৃত্যু যেন খোলামকুচি
করছি বেশ কচুকাটা
জাত পাতের দোহাই দিয়ে
সাজছি আমি আচ্ছা বেটা !

উত্তরণের এই জগতে
অন্ধকার ডাকছি মনে
বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধ মানব
হুঙ্কার দেয় ক্ষণে ক্ষণে ।

প্রিয়জনের ছিন্ন দেহ
ছড়িয়ে পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন
জেহাদীরা করছে উল্লাস
উগ্রপন্থী বলছে ধন্য ।

বুদ্ধ , যিশু , শ্রীচৈতন্য
লুপ্ত জরথ্রুস্ট , লুপ্ত মহাম্মদ
এই ভাবেই চলতে থাকলে
ঘনিয়ে আসবে বিরাট বিপদ ।
0

কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী

Posted in




















ঘনাদা তুমি চুপ করে আছো
তোমার মনে শান্তি অটুট থাকে
চক্রব্যূহে অভিমন্যুর মৃত্যুর পরেও
শান্তির স্মারক লিপি লেখা আছে
তোমারই আচরণে

অভিমন্যুর মৃত্যুতে
ওরা সন্ধ্যা আরতির মন্ত্র পড়তে থাকে
ওঁ, নারায়ণ যা হবে এবং তাই হয়েছে

ঘনাদা তোমার চুপ করে
বসে থাকা উচিত
ওই শামিয়ানার নিচে
যে শান্তি ধরে রাখা আছে
তাইই থাকুক ওইখানে

যা নিজের কাছে ঠিক মনে হয়নি
তুমি এতদিনে তা নিয়ে বলতে পারোনি
বা কিছু করে দেখাতে পারোনি

এখন তুমি প্রশ্ন তুলেছো
ওদের আনুগত্য দেখে
যোদ্ধার মতো

এখন আর মানতে না পেরে
তুমি বিড়বিড় করে বলছো
ওহে তোমরা থামো
তোমাদের অন্য গাল জিভকে
চেপে ধরেছে

ঘনাদা ওদের দেওয়া নেওয়ার
কাগজটা একটা সাদা কাগজে ঠেকেছে
স্ক্যালপেলটা সামনে রাখো
কাটতে থাকো ওদের দেওয়া নেওয়াকে

ঘনাদা তোমার শান্তিপ্রিয়ের গর্বটা
গিলে ফেলো
তারা কখনই
তোমাকে খারাপ বলবে না
তারা পছন্দ করে না ওই তোমার গর্বকে
ওরা তোমাকে ছেড়ে দেবে না

তুমি ওদেরকে চা-বিস্কুট খাইয়ে
বার করে দাওনি, বসতে দিয়েছিলে

ঘনাদা
তোমার নামে
তোমার সম্পর্কে
সত্তর হাজারের বেশী মিথ্যে
কথা বলছে ওরা

চক্রব্যূহে অভিমন্যুর যাওয়ার সময়
ওকেও শুনতে হয়েছে একই
মিথ্যে কথা
তারা গুণতে ভুল করেনি
বা কখনো বিরতিও নেয়নি

তারা যে তালিকা তৈরি করেছিল
এক এক করে ওদের
সম্বন্ধে যে খবর যোগাড় করেছিল
তুমি তা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছো

ঘনাদা স্ক্যালপেলটা হাতে তুলে নাও

তোমার কাছ থেকে তারা অনেক
কথা শুনেছে
আর তোমার কথা শুনতে চায় না
তোমার গানও আর গাইতে চায় না

অবশেষে
ঘনাদা তুমি গিলেছো শান্তির গর্ব
যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তুমি মনে মনে
তৈরি হয়েছো অভিমন্যুর মতো

তোমার হাতে অভিমন্যুর অস্ত্রগুলো
তুলে দিয়েছে
আর অনেক কিছু বাকি আছে ঘনাদা

শান্তির গর্ব ছেড়ে
এই যুদ্ধে তুমি যাবে
চক্রব্যূহে থেকে বেরিয়ে আসতে হবেই
ঘনাদা তুমি দাঁড়িয়ে উঠো।
0

কবিতা - সব্যসাচী রায়

Posted in




















২৬ নম্বর গলির খুন

লাল, লাল, লাল—
পায়ের কাছে ঝুলে
বাদামি, বাদামি, বাদামি
অন্ধকার চামড়া।

মাথা কাত?
চোখের ইশারা?
একটি দৃষ্টি, এক বিনিময়—
না?

হুঁশ! রাত।
রাতপাখি ডাকে।

লাল, লাল, লাল—
ছিটকে পড়ে
বাদামি, বাদামি, বাদামি
অন্ধকার চামড়ায়।


বিপরীত যুক্তি

ফিকে আকাশের নিচে জন্ম— প্রকৃতির রসিকতার উত্তরাধিকার। রক্তের ভেতর মিশে থাকে মিষ্টি বিষ,
পতনশীল পাতারা অক্ষরে গাঁথে ভাঙা কবিতা। শকুনের মতো তীক্ষ্ণ ডানা মেলে উড়ি, পরিত্যক্ত হতে হতে বংশলতিকা হারিয়ে ফেলে। বৃক্ষহীন স্বপ্নের বনে হারিয়ে যাই প্রতিধ্বনির ভেতর, প্রতিটি কান্না যেন এক বিষাক্ত ইতিহাস- অপূর্ণতার রক্ত। একটি ছেঁড়া আত্মার পাশে লেখা টীকা: কফির দাগে মোড়ানো প্রান্তে লিখি গান, সিনেমার সংলাপ, পরিত্যক্ত স্বপ্ন। ডায়েরিটা ব্যর্থ মীম? একদিন ভাবতাম শব্দে পূর্ণ হবে শূন্যতা— ওটাকে আঁকড়ে ধরা ছিল ঝড়ে উড়তে থাকা কাগজের মতো। এখন প্রতিটি কমা টেনে নেয় ভুলে যাওয়া, অর্ধেক স্মৃতির দিকে। একটা বাজারের তালিকা, হয়ে যায় নৈরাজ্যের অঙ্গীকার, আশার শেষ টুকরো উড়ছে তার ফাঁকে ফাঁকে। একবার মধ্যরাতে বসে ছিলাম— নিজের হাতের লেখায় হারিয়ে যেতে যেতে বুঝলাম, বিশ্ব আসলে পরোয়া করে না।


ম্লান ছায়ার প্রাসাদ

একদিন আয়নার রাজ্য গড়েছিলাম,
তারারাও ভেঙে পড়েছিল সেখানে—
ভুলে যাওয়া প্রতিশ্রুতির মতো।
সিংহাসন ছিল বাঁকা হাসি,
নিয়ন চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছায়া।
কলামগুলো ছিল পুরাণের গল্প,
যা ভেঙে পড়ে, একটা ব্যর্থ স্বপ্নের মতো।
গৌরব এখানে কেবলই বিদ্রূপের প্রতিচ্ছবি,
নক্ষত্রেরা কপালে বসে ঠাট্টা করে।

একদিন নিজেই নিজের রাজ্য ছিলাম—
শুধু জানতে পারিনি, আমার মুকুটটাই ছিল একটা ব্যঙ্গ।


পরমাণু তিমি

একটা সংবাদ শিরোনাম দেখলাম,
যেন খারাপ স্বপ্নের মতো—
পরমাণুর তিমিরা সাঁতার কাটছে বিশৃঙ্খলার গভীরে।
আমরা বেঁচে আছি ধার করা সময়ের ওপর,
ভাগ্যের ছেঁড়া পাতায় লিখিত একটা ছোট ভুল।
ক্ষমতার জাদুকরেরা তাদের কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে,
একটা সার্কাস,
যেখানে বড় বড় কথারা ভেঙে পড়ে,
রাতের মীম হয়ে যায়।
একটা সস্তা বিয়ার চুমুক দিই, মাথা নাড়াই,
ভাবি


অচেনা মুখ: অস্থিরতার আয়না

জানো না তুমিই লক্ষ্যবিন্দু
নিঃসঙ্গ এক ছায়া দাঁড়িয়ে থাকে
শীতের বাতাসে কাঁপে চোখের পাতা
মুহূর্তটা পুরোটাই আমাদের
একটা খেলা, কিছুটা লোভ
আর শরীরের বোবা কৌতূহল
ভোর হতেই হয়তো শেষ হবে
কারণ শরীর প্রেম বোঝে না
প্রত্যেক স্পর্শের সহযাত্রী হতে পারে ভালোবাসা?
0

কবিতা - অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়

Posted in




















তুমি আসবে বলে
একাকী তপস্বিনী
পম্পা সরোবরের তীরে কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন।

তোমায় একবার দেখবে বলে
মহর্ষি ফিরিয়ে দিল ইন্দ্রের রথ।
বারংবার।

শুধু একবার
ঝরা বকুলের অর্ঘ্য তোমার চরণে রাখবে বলে
আশ্রমিকেরা অপেক্ষায়।

হে পুরুষোত্তম
তুমি আরেকবার এস
এ‌ই ধুলোর ধরণীতে।

0

কবিতা - সমরেন্দ্র বিশ্বাস

Posted in




















ছন্দের উদাসীন ঝংকার। তাই দেখে টু্পটাপ গলে গলে পড়ে সূর্য।
উদভ্রান্ত মন সাঁতরে যেতে চায়। মায়াবী আলোর নদী।
বুকের মধ্যে উথাল পাথাল। সূর্য-গলা নদীর জল লাল।
নাকি তোমার শালোয়ার কামিজ প্রতিবিম্বিত? তারই রঙ নদীতে।
স্টীলের ব্রীজ হাওয়ায় দোলে, তরঙ্গে তরঙ্গে বিদ্রোহিনী উচ্ছ্বাস?
নাকি তুমি এসেছো, তাতেই হাওয়ারা পাগল পাগল? গ্যালন গ্যালন প্রজাপতি!
সবাই মাতাল। নরম পাখনায় উড়ছে সবাই - তোমাকেই দ্যাখে।
অথচ আমি গান গাইতে পারছি না। পঙ্গুগ্রস্ত একটা দোতারা।
না কি আমার মধ্যেই ভয়! তোমাকে না পাবার! তোমাকে হারাবার?
গলে যাওয়া সূর্যটার জন্যে নদীর জল ঘোলা ও হলুদ।
সূর্যকে গিলে নদী ভেসে যাচ্ছে দূর সমুদ্রে, তুমিও সরে যাচ্ছো অজানায়?
নদী পাড়ে আমি একলা, শরীরে শাপ ভ্রষ্ট প্রেম, আমার দূহাত শূণ্য!
সামনে স্মৃতিভ্রষ্ট ছায়াছবি। আকাশ লাল। তোমার সালোয়ার কামিজ উড়ছে।
ডেকে ডেকে দূরে চলে যাচ্ছে ব্যথার পাখি। বেবাক আমি স্থানু।
সূর্য-গলা নদী জল অপসৃয়মান। লাল দৃশ্যের ঝঙ্কারে আমিও উদাসীন।
ছুঁতে যাই, পিছলে যায় মহাকাব্য। পিপাসার্ত আমি, নদীর জলও অচ্ছুত।
চাতক-বারি মন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, তবু দিনানুদিন স্বপ্নেরা আসে, জলে ভাসে।
অচ্ছুত নদী ধারে অস্পৃশ্য-আমি যুগ যুগ তোমার অপেক্ষায়!
সূর্য-গলা লাল নদী ছুঁতে পারি কই? শালোয়ার কামিজের প্রতিবিম্ব অধরাই!
ছুঁতে পারি না তোমাকেও। আমার রাস্তায় জবরদস্ত রোড-রোলার প্রতিদিন।
একটা স্বপ্নালু আত্মা তোমাকে চায়। অথচও রৌদ্র গলা পীচে তালাবন্দী দুটো পা।
                                            দেখো কি?
অথচ কত অনায়াসেই প্রাত্যহিক লাল পোষাকে তুমি নির্বিকার হাঁটো!
ছন্দের উদাসীন ঝংকারে নিয়তই আহত আমি। টুপ করে গলে পড়ে সূর্য।
সূর্য-গলা নদী লাল? জলস্রোতে তোমার কামিজের রঙ, না কি আমার বুকের রক্ত?
0

কবিতা - অমিতাভ মুখোপাধ্যায়

Posted in






চোখের পাতার
সামান্য নাড়াচাড়ায়
রাধিকার চাহনিতে

যূথিকানগরের ইতিহাস
ভেসে উঠে ওরই চোখে

ওর ওই বিস্তৃত চাহনিকে
গ্রহণের অন্ধকার
আড়াল করে দেয়

বৃষ্টি আসে গ্রহণের শেষে

যৎসামান্য আলোকে
উত্তেজিত করে
বৃষ্টি
অস্পষ্ট আলোয়

ওই ইতিহাসের বাকি আশাকে
গ্রহণের অন্ধকার এড়িয়ে

রাধিকা
এক চোখে
আরেক চোখে
নিজের করে রাখে
হিসেব মতো

খিদের সময় দুই
হাত রাখে টেবিলে

তিনটে কলাপাতা
তিনজনের জন্য
এক এক করে সাজিয়ে দেয়

খোলা বাতাসে
দেখতে পায়
রাধিকা
সবুজ কলাপাতার
প্রতিটি ঘটনার সাথে
ও নিজেই জড়িয়ে আছে

বাতাস পরিষ্কার হয়
ওরই নিশ্বাসে

ধুলো ও মৃত্যু
রাধিকার
চাহনিতে থেকে সরে যায়

থাকে শুধু
রাধিকার দুই চোখে
যূথিকানগরের বাকি ইতিহাস...
0

কবিতা - সব্যসাচী রায়

Posted in
অধ্যায় ১: শূন্যতার পদার্থবিদ্যা

প্রত্যেক ক্রিয়ার জন্য একটি সমান ও বিপরীত শূন্যতা থাকে।
কফি ঠাণ্ডা হয়- 9.8 m/s²-এ, তোমার ছোঁয়ার মতো।
এনট্রপি চামচ নাড়ায়, চিনির বাটিতে নীরব এক ভাঙচুর।
আমি আমাদের x-এর সমাধান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সমীকরণ ভেঙে গেল—
ডিনোমিনেটরে এক ভৌতিক উপস্থিতি।
তোমার কণ্ঠ, স্পেকট্রাল তরঙ্গ: শোনা যায় কিন্তু দেখা যায় না,
তোমার পিছু হটার ডপলার শিফটে হারিয়ে যায়।

এখন সকালগুলো মেপে দেখি মিস করা দৃষ্টির অর্ধ-আয়ুতে,
উপস্থিতির ক্ষয় গুনে গুনে
যখন বাজপাখি চক্কর দেয় পিছনের উঠোনে, দেহাবশেষের অপেক্ষায়
বা এক অলৌকিক ঘটনার।

বাইরে, বাতাস আমায় ঠাট্টা করে—এ এক বিশৃঙ্খলার ক্যালকুলাস
যেখানে প্রতিটি ভ্যারিয়েবল একাকীত্ব।

আর আমি এখানে,
অস্তিত্বের গরম পাথরে লিখি,
দেখি প্রান্তগুলো বাদামি হয়ে যায়
যখন আরেকটি প্যানকেক কবিতা
শূন্যতায় বুদবুদ তোলে।

অধ্যায় ২: মার্চের গাণিতিকতা

একাকীত্বের সমাধান করো।
দরজায় দাঁড়িয়ে
নিজেকে দিগন্ত দিয়ে ভাগ করি।
বাতাস আমার পাঁজরে
সমীকরণ ঝাঁকায়।
একটি জ্যাকেট যথেষ্ট নয়,
উষ্ণতার অসমতা।

সূর্যাস্ত ≠ শান্তি।
মেঘে অনিশ্চয়তার গ্রাফ,
বক্ররেখাগুলি ঢলে পড়ে
অসীম ধূসরতার দিকে।

বাতাসের দাঁত আছে।
আমার ভগ্নাংশে খায়।
চামড়া ফাটে,
রক্তের সমাধান হয়।

আমার ছায়া ভেঙে যায়—
উপাংশ উপরে,
গুণাংশ নিচে।

রাত প্রমাণ হিসেবে নামে।
আমি এক অনির্ধারিত উপপাদ্য,
যেখানে ছিলাম আর যেখানে হতে পারতাম
তার মধ্যে আটকে থাকা এক অনুমান।

অধ্যায় ৩: বাইনারিতে পাখির গান

কিছু সুর ডিকোড করা যায় না।
01110100 01101000 01100101
পাখিরা গান গায়—
না হয় হয়তো তা শুধুই স্ট্যাটিক।
আমি ভুলে গেছি
কীভাবে শুনতে হয়
স্ক্রিনের ফিল্টার ছাড়া।

কখনো স্বপ্নে দেখেছিলাম রবি।
এখন তাদের স্থানাঙ্ক খুঁজি:
অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ,
বিলুপ্তির হার।
তাদের ডানা অ্যালগরিদম,
তাদের উড়ানের পথ
অবাক হওয়ার জন্য খুব সোজা।

তাদের বিশৃঙ্খলা আমি হিংসা করি।
তাদের সুর কোনো হ্যাশট্যাগ নয়।
তাদের মৃত্যু কোনো ডেটা পয়েন্ট নয়।

যদি আমি খুব স্থির থাকি,
তাহলে হয়তো শুনতে পাই:
এক পৃথিবীর অ্যানালগ ফিসফিসানি,
যা আনপ্লাগড,
এক বধির আকাশে
পালকের স্পন্দন।

অধ্যায় ৪: রাসায়নিক হৃদয়

ভালবাসা এক ভুল প্রতিক্রিয়া মাত্র।
C₂H₅OH আমার মধ্যে প্রবাহিত হয়—
স্মৃতির মলোটভ ককটেল।
তোমার হাসি দাহ করে
আমার ত্বকে,
প্রেমের ছাই রেখে যায়।

আমরা ছিলাম এক্সোথার্মিক বিশৃঙ্খলা,
সামঞ্জস্যের জন্য খুব বেশি প্রজ্জ্বলিত।
তুমি ছিলে NaCl,
আমি H₂O—
আমরা মিলে কিছুইতে দ্রবীভূত হলাম।

এখন আমি শ্বাস নিই
তোমার রেখে যাওয়া অণু,
বিদ্রূপমাখা অক্সিজেন।
আমাদের ভালোবাসা,
একটি অস্থিতিশীল আইসোটোপ:
অর্ধ-আয়ু চিরকালীন,
কিন্তু শুধুই স্বপ্নে।

অধ্যায় ৫: বিষাদের অ্যালগরিদম

ইনপুট: নিঃশ্বাস, চিন্তা, বাসনা।
আউটপুট: একটি যন্ত্র
খুবই মানবিক, তাই কাজ করতে পারে না।

নিয়ম ১: বিষাদ বাধ্যতামূলক।

সমীকরণ থেকে সব আনন্দ বাদ দাও।
একজন চিত্রশিল্পীর হতাশা যোগ করো,
একটি খালি গ্যালারির নীরবতায় গুণ করো।

নিয়ম ২: সেক্স এক ভুল।

তার শরীর ছিল এক প্যারাবোলা,
তার স্পর্শ, এক অ্যাসিম্পটোট।
তারা কখনো ছেদ করেনি,
কিন্তু গ্রাফটি ছিল অশ্লীল।

নিয়ম ৩: কেউ পরিবর্তন হয় না।

পাহাড় রয়ে যায় পাহাড়।
নদী উল্টো প্রবাহিত হয়।
চরিত্রগুলো অনন্ত লুপে ঘুরে,
তাদের ট্রমা রিওয়াইন্ড করে
একটা ক্ষতিগ্রস্ত ভিনাইলের মতো।

চূড়ান্ত আউটপুট: এক জীবন।
না তোমার। না আমার।
শুধু আরও একটি সিমুলেশন,
এক স্ক্রিনে ঝলমলানো পিক্সেল
যা খুবই ম্লান
যত্ন করার জন্য।
0

কবিতা - অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়

Posted in

মহাকাল উদাসীনের মত হেঁটে চলেছে—
মানুষের খেলনা-বাটি সংসার
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে তার পায়ের ধুলো।
এক হাঁটু ধুলো নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো কি ভালো?
0

কবিতা - আশীষ কুমার বিশ্বাস

Posted in








নদী ভাসা খড়-কুটো
কবিতার খুঁটি
এ ভাবেই সাজিয়েছি
কবিতার গুঁটি ।

নাই তার ভরসা
ভেসে ভেসে চলে
এ কবিতা জীবনের
অন্য কথা বলে ।

অভাব অনটন আছে
আয় করার পথ খোঁজে
বাঁধা আছে পদে পদে
অপরাধে মাথা গোঁজে ।

মায়ের প্রবল অসুখ
বাবার বেতন নেই
দিদির বিয়ের বয়স
মন তাই সুখে নেই !

ভাইয়ের স্কুল আছে
বোনের পড়া নেই
বেটি বাঁচাও , বেটি পড়াও
তাঁতে আর তাড়া নেই ।

সুখের কথা ভাবি নাকো
দুঃখে দিন যাপন
দুঃখেই কবিতা লিখি
এ ভাবেই উদযাপন ।
0

কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী

Posted in








সত্যি করে বলছি
তোমাকে আমি দীপিকা
বলে ডাকিনি

তোমাকে হলফ করেছি
আমি আর দীপিকার সাথে একই
ফ্লাইটে বিজনেস ট্রিপে আর যাব না

তোমাকে আগেই বলেছি
আমি যখন ভুট্টার ক্ষেতে ঘুরে বেড়াই
সূর্যের আলোয় যে মুখ বারবার
ভেসে আসে, সে ত’ দীপিকারই

তুমি জানতে আমি চোখ
রেখেছিলাম ঐ রাঙা মেয়েটির দিকে
সে কেউ নয়, সেই চোখ দীপিকারই

তোমার বারংবার বারণ শোনার পর
আমি বলিছি
আমি দীপিকাকেই চুম্বন করেছি

তোমাকে এটা বলতে ভুলে গেছি
প্রতি রাতে যে তারা গুলোর আলো
খসে পড়ে তাদের ত্বকে
তাদের সবাইয়ের ত্বক দীপিকারই ত্বক

তুমি এত রাগ করে থেকো না
আমার চোখে সব লুকোনো
ভালোবাসা দীপিকার চোখেরই

আমি যেদিন শীতের সকালে
ব্রেকফাস্ট টেবিলে তোমার নাম ভুলে
দীপিকা বলে ডেকেছিলাম
তুমি তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে
কিছু বলে ওঠোনি

তুমি মাধুরী সেদিন আমায় কিছুই বলনি
শুধু তাকিয়ে ছিলে
আমি তোমার চোখে গোপনে চোখ রেখেছিলাম
সত্যি বলছি সেও দীপিকারই

আজ সন্ধ্যেতে ডিনার শেষে
পোর্ট ওয়াইন নিয়ে মাধুরী
তোমার সাথে যে গল্প হয়েছে
তা বেশীর ভাগ দীপিকাকে নিয়ে

তোমাকে কথা দিয়েছি
দীপিকাকে নিয়ে
আর কিছু বলবো না ২০২৪-এ

মাধুরী আছ, যেমন ছিলে
বছর বছর আমার দীপিকা
পালটে যায়
এবার নতুন কোনো দীপিকা

কিছু মনে করো না—সহজ হয়
সহজ ভাবে নাও

গোপন তারা গুলোর আলো
খসে পড়ে তাদের ত্বকে

আর দীপিকার নাম লেখা নেই
হয়ত বা অন্য কেউ
হয়ত বা সেই দীপিকা
আবার দীপিকাই হয়ে।