Showing posts with label কবিতা. Show all posts
কবিতা - অন্তর চন্দ্র
Posted in কবিতাস্কেল নিরপেক্ষ
রেখা টেনে কাঁধে নিল, আমাদের
সূত্র- রক্ত প্লাস হিমোগ্লবিন কার্পেট
দৈর্ঘ্য- ঐক্যের একক প্রার্থী
প্রস্থ- সাড়ে তিন হাত ভূমি
রিখটার স্কেল
সমান্তরাল চোখের জ্যোতি ফেলতে জানে
চোখ আমাদের, তীর্থস্থান
স্নান সেরে ফিরে এলে, প্রণাম করি
রেখা টেনে কাঁধে নিল, আমাদের
সূত্র- রক্ত প্লাস হিমোগ্লবিন কার্পেট
দৈর্ঘ্য- ঐক্যের একক প্রার্থী
প্রস্থ- সাড়ে তিন হাত ভূমি
রিখটার স্কেল
সমান্তরাল চোখের জ্যোতি ফেলতে জানে
চোখ আমাদের, তীর্থস্থান
স্নান সেরে ফিরে এলে, প্রণাম করি
কবিতা - অমিতাভ মুখার্জি
Posted in কবিতারাধিকা গল্প বলে তোমাকে নিয়ে
তুমি কিছুতে নায়ক
আর অন্য কিছুতে অ-নায়ক
রাধিকার কাছে
এছাড়া আর অন্য কিছুতে
সে তোমাকে ভাবতে পারিনি
তুমি যে অ-নায়ক ভিন্ন চরিত্রের
ছিলে ওই সময়ে
রাধিকা তোমাকে
সাহায্য করতে পারেনি কিছু বলে
শুধুমাত্র শুনে গেছে তোমার সম্বন্ধে
রাধিকা তাদের উত্তর দেয়
যা জানে না তোমার সম্বন্ধে
রাধিকার কেমন লাগে শুনতে
নিজের কাছে, তাই শোনে
রাধিকা নিজের কেমন লাগে
এগুলোর সত্য শুনতে
রাধিকা নিজেও বলতে পারেনি
রাধিকা যে ভালোবাসে
তাই সে এই গল্প শোনাচ্ছে
তা নয়
কখন কখনও তোমাকে অ-নায়ক
বানানোর চেষ্টা করেছে
রাধিকা তোমাকেই নায়কের
অভিন্ন চরিত্রে ধরে রেখেছিল
তোমাকেই পরে বলেছিল
তুমি তখন রাধিকার কাছে
ছিলে না
সে জানে এটা কেমন লেগেছিল
শুনতে
তুমি রাধিকার দিন সম্পর্কে কিছুই
জানো না
তার রাত সম্পর্কে অল্প জানো
প্রতিটি কুমিরের জলদস্যুর সঙ্গে
লড়াইয়ে তার কণ্ঠস্বর কিরকম হয়
তা শুনতে পাওনি
সে সত্যিই নরকের মধ্যেই
লড়াই করেছিল
এই লড়াই ছিল নরকের মধ্যেই
রাধিকা এর পরেই বুঝতে পারে
জলদস্যুর সম্বন্ধে
তোমার মধ্যে আগুনের চেয়ে
ধোয়া ছিল বেশী
সখ্যতার চেয়ে নীরবতাই ছিল
রাধিকা এর পরেই বুঝতে পারে
তোমার সম্বন্ধে
রাধিকা অ-নায়কের ভিন্ন চরিত্রের
না শোনা কথাই বলেছিল
তোমার সম্বন্ধে গল্প বলে।
কবিতা - কুমকুম বৈদ্য
Posted in কবিতাআমাদের মন্দদিনে, আমাদের সেসব খুশির হওয়ায় জলীয় বাষ্পের হানা , মেঘভাঙ্গা জল ভেঙে নিয়ে যায় মুক্তাঞ্চল| সপ্রতিভ শিবলিঙ্গ খাড়া থাকে বারোমাস | তীর্থ -তীর্থঙ্কর অতীশ দীপঙ্কর সিঁড়িভাঙ্গা আঁকা মেলাতে বসেন সিঁড়ির সাতান্ন ধাপে | মনাস্ট্রি থেকে ভেসে আসে ঘন্টা ঘরের হৈচৈ | থ্রিলার জমছে ভালো রাজার শিবিরে | রাজা আছে রানী আছে বিবাহবহির্ভূত, লিভইনে | রাজপুত্র রেডি আছে গর্দানটি নিয়ে হাডুডু খেলবে ভবিষ্যতে | তুমি আমি ডুবেছি ষোলো আনা | বানভাসি মার্সিডিসের স্টিয়ারিং ভেসে ওঠে তিস্তার জলে | সভ্যতা চাপাপড়ে পলিমাটি আস্তরণে | পাঁক কাদা নদীতে গোর দিয়েছে আমাদের |
কবিতা - রঞ্জন রায়
Posted in কবিতাপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে
ডাইনোসর চালে কিছু গাড়ি;
হেঁটে যাচ্ছে ছুটে যাচ্ছে
ঘরে ফেরা হা-ক্লান্ত মানুষ।
"জল দাও, পানি দাও, মেঘরাজা"
--এই শোর তুলে
ভাতঘুম থেকে উঠে
আড়মোড়া ভাঙছে কোলকাতা।
পিচরাস্তা থেকে দেখ শব্দ উঠছে
-- পা চালা রে, পা চালিয়ে চল্!
কার্জন পার্কের গা্ছে হিসি করছে
আমার ঈশ্বর।
শুধু এক পাগলি মেয়ে
ফুটপাথে মাথা ঠুকে দুলে দুলে বলে,
--' ও পাথর, দয়া কর!
দয়া কর হে জাদুপাথর।'
কেউ কাউকে চিনতে চায় না
পথ চলতে এখানে-ওখানে,
কেউ কাউকে ছেড়ে দেয়?
কেন ছাড়বে, এক ইঞ্চি জমি।
ক্ষান্তপিসি ডালে কাঠি ,
পান্তভূত আহ্লাদে ফোঁপায়,
রোববারে শিকাকাইয়ে
মাথা ঘসে রামি আর বামী।
শুকনো ডালে পলাশ এসেছে।
কেমন নির্লজ্জ যেন,
বিনা কোন রাখঢাক
ভেঙে দেবে আমাদের ঘর।
তবু এক পাগলি মেয়ে
ফুটপাথে মাথা ঠোকে
গাঢ় হয়ে বলে,
--' ও পাথর, দয়া কর!
দয়া কর হে জাদুপাথর।'
কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী
Posted in কবিতাশুরু বা শেষ নেই
রাস্তার উপরে
চাঁদের নীরব আলোর
চাঁদের নীরব
আলোতে সানায়ের সুরে
একা নয় চাঁদ
অচেনা ছেলে আর এক
অজানা মেয়ে
শুয়ে আছে কাগজের উপরে
পোশাকে
কাগজের উপরে ঘুমচ্ছে
উপরের দিকে মুখ রেখে
নতুন, পুরানো তারারা
পরিষ্কার আকাশে
অবিশ্বাস্য ভাবে
কত বছর ধরে টিকে আছে
টিমটিমে আলো নিয়ে
আর কত বছর ধেরে
টিকে থাকবে একই ভাবে?
তাদের উপর ছড়িয়ে থাকা
পোশাকটি রুক্ষ
তারা সেভাবেই ঘুমোয়
আলোর সহানুভূতি থাকে
নীরব চাঁদে
যার শুরু বা শেষ নেই।
কবিতা - কুমকুম বৈদ্য
Posted in কবিতাঘুমের মধ্যে ঘুরপাক খাক স্বপ্নগুলো
সাউন্ড স্লীপের বারোটা বাজার সময়গুলো
জীবন এখন নীলচে বিষে আলাদা করে
কতটুকু আর জ্বলবে বলো অ্যাড অন নিলে
ডেসটিনি যা হবার হবে
বৃথাই তুমি চিন্তা করে বেকুব ভবে
রাগলে তুমিই মাত খাবে পাশার চালে
পথের দাবী পথিক ভাবে
খড়ের চালে বৃষ্টি নামে
ইচ্ছাকৃত ভুলের মাশুল গুণবে বলেই
করছো যে ভুল সে
এই পৃথিবীর মুখোশ জানে ---
কবিতা - সব্যসাচী রায়
Posted in কবিতাআলাদিনের কমিক স্ট্রিপে ভিলেন ছিলেন ‘ম্যাথেমেটিক্যাল’। সঙ্গে জিনি, আবু, ইয়াগো... আর প্রিন্সেস ফিয়োনা... আহা! যাইহোক, নিচের লেখাগুলো ম্যাথেমেটিক্যাল সাহেবের। যেমন লিখেছেন, তেমনই তুলে দিলাম।
0.00001%
তার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল ০.০০০০১%। আমি বিয়ে করলাম। পাঁচ সপ্তাহ পর, আমি যেরকম রান্না করলাম... এত হেসেছিল যে প্রায় মরে যাচ্ছিল। আমরা সেকেন্ড গুনতাম, যেমন লোকে পয়সা গোনে। একদিন বলল, “আগামী মঙ্গলবার যদি বেঁচে থাকি, একটা ছাগল চাই।” বললাম, ঠিক আছে। এখন রান্নাঘরে একটা ছাগল আছে, আর আমার বুকে একটা ফাঁকা গর্ত। হিসেব মিলল না। সে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাঁচল। একদম ওর মতো।
রাত ৪:১৩
প্রতিদিন রাত ৪:১৩-এ, সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আধা বাক্য ফিসফিস করে— “জানলাটা—” “মেঝের নিচে—” “ও নয়—” আজ বলল, “পালাও।” আমি আর কারণ শোনার জন্য থাকছি না।
অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ৭টি ধাপ (Aro anada July 2025)
১. লোকজনকে ভুল প্রমাণ না করা।
২. “ভালো আছি” বলা, অথচ থাকা না।
৩. ঠিক জায়গায় হাসা।
৪. প্লেলিস্ট মুছে ফেলা।
৫. খাকি। সবসময় খাকি।
৬. নিজেকেই ঘোস্ট করে দেওয়া।
৭. গায়েব। কেউ খেয়ালও করল না।
৮ (বোনাস)। হঠাৎ ফিরে এসে শেষ সিঙ্গারাটা তুলে নেওয়া।
%
সে আমাকে ভালোবাসত ৬০%। নিজেই বলেছিল। যেন আবহাওয়ার খবর দিচ্ছে— “৬০% বৃষ্টি, ৬০% আমি আবার ধোঁকা দেব না।” আমি জবাব দিলাম ৪০% মন দিয়ে, ১০০% ব্যঙ্গে, আর চলে এলাম। এখন সে ১০০% সিঙ্গল। কাজেই, সমীকরণ মিলে গেছে।
ফিবোনাচ্চি প্রেমের কবিতা
I.
হাই।
II.
তোমার চোখ—
বিপদ, ডাবল।
III.
তুমি এমন করে হেসেছিলে
যেন আমি উত্তর। আমি ছিলাম না।
V.
আমরা বিজোড় সংখ্যায় চুমু খেয়েছি,
প্রাইম নাম্বারে ঝগড়া।
ভালোবাসা (benke giyechhilo) বাঁকা হয়েছিল,
তোমার বুকশেলফের মতো।
VIII.
আমি নীরবতা মেপেছিলাম।
১ ঘণ্টা। ১ দিন। ২ সপ্তাহ। ৩টা মিথ্যে।
৫টা রাত তুমি আসোনি।
XIII.
আমি চলে গিয়েছিলাম। তুমি বললে “যেও না।”
আমি বললাম, “অঙ্কে কাঁচা, না?”
তুমি বললে “কি?”
আমি বললাম, “ঠিক তাই।”
শোকের সমীকরণ
(আলজেব্রা দিয়ে মন ভাঙা যাক।)
(তুমি − আমি)² + সময় = প্রতিধ্বনি
X এর মান বের করো, যেখানে—
X =
তোমার নাম, অন্য কারও মুখে,
বিয়োগ আমার অভিনয়ের ক্ষমতা,
ভাগ ৩টা বাজে রাত।
আর, কুকুরটা এখনও দরজার পাশে বসে থাকে।
সম্ভাবনার দিকে তাকানোর ১৩টি উপায়
(না, এটা মার্কিন কবি, আধুনিকতাবাদী, ওয়ালেস স্টিভেন্স-এর মতো না। একেবারেই না।)
১. ফিফটি-ফিফটি। যেমন ভালোবাসা আর কয়েন টস।
২. তোমার সঙ্গে দেখা? ৭০০ কোটি’র মধ্যে এক। হা।
৩. তুমি লিখলে “হয়তো।”
৪. আমি “নিশ্চয়ই” ডিলিট করলাম।
৫. রাশিয়ান রুলেট মানে আসলে অভিমানী প্রোবাবিলিটি।
৬. তুমি বললে, “আবার দেখা হবে।”
৭. আমি এখন বৃত্তের মধ্যে থাকি।
...১৩. প্রোবাবিলিটি= আশা, মুখে জোকারের মেকআপ পরে।
ব্রেকআপ ম্যাথ ১০১
৩০% আমি ক্লোজার চাই।
৭০% শুধু হুডিটা ফেরত চাই।
ও হুডির ১০% এখনও তোমার গন্ধ।
৫% আমি এখনও তোমার প্লেলিস্ট চেক করি।
৯৫% ভান করি করি না।
১০০% রিগ্রেট করি সেই ২টা বাজে “u up?” মেসেজটা।
১১০% নিশ্চিত তোমার মা এখনও আমাকে পছন্দ করে।
গণিত মিথ্যে।
মনন নয়।
দুঃখজনকভাবে।
কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী
Posted in কবিতাকামিনী সুধার নিকটে আসিয়া
ব্রজ হাত পাতিয়া
চাহিয়া লয়ে
তোমার যা সামগ্রী আছে
তোমারই শরীরের স্তবকে স্তবকে
আমাকে দান করো
যত আমোদ আছে
তোমার কামিনী শরীরে
আমাকে দান করো
তোমার মুক্ত মনের
সারসীতে
তোমার বামভাগের দক্ষিণ দিক বা
দক্ষিণভাগের বাম দিক দিয়া
আমাকে তুষ্ট করো
আমার পিছনে ছুটিয়া আসিতেছে
শৃগালের মতো
মদনে পূর্ণ ওই প্রবীণেরা
আমার কাছে কোনো মুদ্রা
নেই
আছে তোমার রমন মনসিজ
তুমি আমায় দান করিয়াছিলে
বসন্ত পঞ্চমীর রাতে রতি বিহারে
সুধা দ্বার খুলিয়া দেয়
সুধার গমন লালিত্য
চাক্ষুষ করিতে করিতে
ব্রজ প্রবেশ করে সুধার আলয়ে
সুধার রমনাবিলাসী রাজবল্লভের
সহিত নানা আমোদ প্রমোদ
শেষ হইয়াছে
শত সহস্র মুদ্রা হাতে লইয়া
আবদার করিয়া থাকে
আগামীকাল আসিবার সময়
আমার জন্য চন্দাহার আনিবে
আমার কটিদেশে তাহা শোভা পাইবে
রাজবল্লভ মুখে উল্লাস লইয়া বাহির হইয়া যায়
ব্রজ কোন বিনয় বাক্য না বলিয়া
প্রযত্নে প্রতিপালিত উদ্যানের
একটি একটি পুষ্পকে টানিয়া
সুধাকে
পুষ্পহীন করিয়াছে
সুধা দক্ষিণ দিকের বামদিক দিয়া
তুষ্ট করিয়া
সহস্র মুদ্রা দিয়া বিদায় করিয়াছে
ব্রজ ফিরিয়া যায় কোন বাক্য না কহিয়া
সুধা ব্রজের চলে যাওয়া দেখিতে থাকে
আলয়ের দ্বার উন্মুক্ত থাকে
বসন্ত সেনের জন্য...
কবিতা - ইন্দ্রাণী সরকার
Posted in কবিতাজানি তুমি ফিরবে না আর
ঘুমহীন চোখে জেগে প্রেম
চাঁদও বুঝি তাই নিদ্রাহারা ॥
মনের মাঝে বেদনা জমেছে
স্বপ্নের হাতে তাই সঁপে দেয়
নদীর ছলছল শব্দে জাগে ॥
ভোরের আলোর আভাসে
তার দুয়ার হয় আলোকিত
তবু সে জাগতে চায় না আর ॥
এই ভয়াবহ একাকিত্ব থেকে
মুক্তির আশায় অশ্রুসিক্ত মুখ
বেদনার পদ্মসম ফুটে থাকে ॥
কবিতা - সব্যসাচী রায়
Posted in কবিতাদরজার কাছে প্রত্যাবর্তন
একদিন বলেছিলে, "বাড়ি আসলে একরকম মায়া।" আমি তখন হ্যাঁ বলেছিলাম, কারণ আমার মুখটা হয়ে গেছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ একটা হারানো জিনিসের বাক্স।
গত সপ্তাহে ভুল পাখিকে খাবার দিলাম... হাওয়ায় কামড় বসাচ্ছিল, যেন সব গোপন কথা জানে।
কখনো মাঝরাতে উঠে পড়ি—অর্ধেক কথা ঠোঁটে আটকে। বাবার গলাটা মাঝে মাঝে মনে ভেসে উঠছে, একটা পুরনো ওভারকোটের মতো।
মা বলে, শোক একরকম ঋতু। কিন্তু কেউ বলে না— নীরবতাও উত্তরাধিকার হতে পারে। আমারটা হাঁটে খুঁড়িয়ে, আর কাশে মাঝে মাঝে।
একটা মেয়ে একদিন এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরেছিল, যেন হারিয়ে যাবে...ভয়ে আঁকড়ে ছিল। আমি চুপ করে ছিলাম—তাও কি ভালোবাসা হয়?
বিয়ের অ্যালবামটা মোজার নিচে চাপা। কেউ খোলে না, কিন্তু রাতের খাবারের পর আগুনটা একটু জোরে ফোঁস ফোঁস করে।
আয়নায় তাকালে একটা জন্তু দেখি, নিজের নাম জানে না, তবু রোজ এক দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়।
গণিত
গোলাপ, চকোলেট, গোধূলি,
আর ছিল— ছুরি।
অভিশাপ লেখা ইতিহাসে,
প্রেমিকেরা হেরে গেছে।
তুমি দেশলাই হাতে,
আমি ভুল নম্বর।
মৃত এক নম্বরে ফোন বাজে,
কন্ঠ হাসে, থেমে থাকে।
নিঃশব্দের সুর… অন্তহীন ঢেউ।
মেট্রোনোমের ছন্দ
বেতের আঘাতে তাল কেটে গেল রাগের গোপন পত্র।
ধর্ম ছিল না, পাপও নয়, সীমা ছিলো গানের ছন্দ।
আমি দেখলাম, একটা ঘূর্ণি, নৃত্য লুকিয়ে।
টিক-হ্যাঁ, টিক-না, টিক-হ্যাঁ, টিক-
গানটা থামে, প্রশ্ন রেখে।
অর্ধেক নোট কোথায় গেলো? নীরবতা?
নক্ষত্রের কেন্দ্রে
সবকিছুই দাহ্য, একটা উত্তপ্ত বাতাসের মধ্যে
যেকোনো কিছু জ্বলে উঠতে পারে—
কাগজ, শুকনো বুনো ঘাস,
তোমার চুল, আমার হাত,
একটা অস্পষ্ট ভাবনা।
সূর্যাস্ত? নাকি নির্ঘুম ভোর?
নিশ্চিত কিছু নেই, শুধু যা পুড়ে গেছে তা ছাড়া—
ছাই হয়ে যাওয়া জল, গলিত ইস্পাত,
আর সেইসব স্বপ্ন
যা একদিন আগুনের মতো ছিল।
কিন্তু তারও গভীরে,
একটা নক্ষত্রের কেন্দ্রে,
সবকিছু আবার জ্বলে উঠতে পারে।
সবকিছুর তত্ত্ব
আমার ঘর ছোট, তাতে রহস্য নেই।
জানালা খুলে বসি, বাইরে শুনি—
পাখির ডাক, নিঃসন্দেহে পাখিরই।
আমার বইগুলো— পড়তে পারি না,
তারা খুব বেশি মানে করে ফেলেছে।
একজন স্কুল ফাঁকি দেয়: ও জানে যথেষ্ট।
একজন চাকরি হারায়: বুঝিয়ে বলা হয় কেন।
একজন ভেঙে পড়ে: সেও ব্যাখ্যা করা যায়।
এক রোগী সুস্থ হয়, তারপর ওষুধে মারা যায়।
কাগজ জমা দেওয়া হয়: স্বাভাবিক মৃত্যু।
সবটা পরিষ্কার, পরিষ্কার।এত যে, বোঝার দরকার নেই।
কবিতা - গৌতম দাস
Posted in কবিতা১
জানি এই মুহূর্তে তুমি খুলে দিয়েছ তোমার জানলার কপাট, চাঁদ নেই আকাশে আজ, হাওয়া লেগে কেঁপে কেঁপে ওঠা মোমবাতির আলো খুব সাবধানে তাই আগলে রেখেছ, আমিও এই মুহুর্তে শরীর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে এসে দাঁড়িয়েছি রাতের উঠোনে, একলাই, আমার চারিদিকে ছড়িয়ে এখন কোলোকল ঘণ্টা, পুরনো ক্যাথিড্রাল, বিরাট একটা কালো ঘড়ি আর অজস্র পাখির মৃতদেহ
আশ্লেষা বিশ্বাস করো, প্রতি রাতে আমি চেষ্টা করি এত শব পার না হওয়ার
মৃতদের ঘুম ভাঙিয়ে অভিমান না ছোঁয়ার
২
প্রতিরাত আমার অতীতকে ছুঁয়ে থাকে
আর সেখানে লুকিয়ে থাকে বিরাট এক জিভ, তরল লালা ছিটোয় সে, সরীসৃপের মত তখন আমি বুকে হেঁটে পথ চলি আর জলজ পথ গিয়ে শেষ হয় অসমাপ্ত বিন্যাসে, এসবই আমার প্রতিরাতযাপন অথচ আকাশ ছেয়ে তখন ছড়ানো থাকে দীর্ঘ এক অরুণাভ ইশারা, আর তাই তখনই গল্প থেকে জানলার ফাঁক ধরে প্রখর জোৎস্নায় নেমে আসো তুমি, নেমে আসো আমার ভেঙে পড়া ঘরে, তিনটে বোতাম ছেঁড়া শার্টের ঝুল ধরে, না-কাটা দাড়ির জঙ্গলে লুকোতে থাকো তোমার বিষাদী ঠোঁট, দু'জনেই তখন আমরা মুখ রাখি পরস্পরের ভয়ংকর অংশগুলোতে
দূরে সুপুরি গাছের মাথায় এসে দাঁড়ায় তখন কলঙ্কিনী চাঁদ, ধূসর ফুলদানিতে মাথা দোলায় বাসী রজনীগন্ধা, বিষাক্ত লালায় মিশে যায় যাবতীয় পাপ'পূণ্য আর জন্মায় অক্ষম বিন্দুকণাময় মুহুর্তস্বেদ
অপেক্ষায় থেকো আশ্লেষা, এ আয়োজন শুধু তোমারই জন্য,
নিজের চিতাভষ্ম নিয়ে ঠিক কোনো একদিন এসে দাঁড়াবো আবার
চোখ মেলে তাকিও
দেখবে দরজায় দাঁড়িয়ে পরিচিত বন্য কোনো প্রেত...
৩
কোনো রাতেরই আজ আর কোনো শর্ত থাকে না, চতুর বাতাস তাই সরল জানলার সীমাবদ্ধ গরাদ পার করে হুড়মুড়িয়ে লুটপাট করে টেবিলবাতীর সঞ্চিত আলো, বইমুখে অন্ধকারে পায়চারি করি রাতভর, জিজ্ঞাসা করি, নিঃশব্দ প্রেমিকার সাদা শীৎকারহীন শরীর আসলে কি প্রেম না কি প্রেমিকের অপমান, তুমি তখনই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠো যেন একবার, তারপর দরজা খুলে হেঁটে যাও পরচর্চাকারী জোৎস্নায়
পাহাড়ের নীচেই তো সব সময় থাকে কোনো না কোনো শান্তগ্রাম অথবা উচ্ছ্বল ঝর্ণা
আজ তোমায় ঘিরে তাই সিঁথিছোঁয়া সিঁদুর, শৃঙ্খল, কপালে কখনো বা করুন মেরুন টিপ, হাতে সব সময়ের বৈষয়িক শাঁখাপলা
আর আমার নিরাপরাধ আয়নায় প্রতিদিন প্রতিরাত অর্ধেক কোনো মুখ
আর অর্ধেক হারানো সেই সুখ...
৪
অসতর্ক নিশিডাকে দরজা খুলে যায়, পাঁচিলের গা ঘেঁষে ঘুমন্ত লতাটি তখন জাপটে ধরে তার একমাত্র ফুল, ধ্বংস চুইয়ে নামতে থাকা জোৎস্নার দিকে তাকায় না সে, রাত্রিরেখার খোঁজে রাতজাগা পাখিরা হঠাৎ করেই যেন একসাথে একটানা ডেকে ওঠে
স্বাভাবিক আর শব্দহীন বাতাসে ফিরে ফিরে আসে আরো একবার মনখারাপেরা
প্রতিফলিত আয়নায় তখনই তুমি ভেসে ওঠো, ভেসে ওঠো আমাদের সেই অবিশ্বাস্য সরল অতীত হয়ে
তবু একসাথে আমাদের কোনোদিন রাত্রিরেখা পার হওয়া হয়নি
ভোরের অস্পষ্ট আলোয় হেঁটে গেছি আলাদা আলাদা পথ হয়ে
দূরত্ব তো আসলে এক ছলনা, মৃত তারার আলোয় তাই আজও তুমি পুঁথি খুলে বসো
প্লাটফর্ম ফাঁকা রেখে রেলগাড়ি চলে যায় সময় মত
৫
এসো, ছুঁয়ে দাও আমায়, ভাঙা রোদ স্পর্শ করুক অবুঝ সেই পিয়ানো
শীত ও অসম্পূর্ণ সান্নিধ্যের মাঝে যে ঘুম আমার খুব প্রিয় তাকে আজ বিলিয়ে দেব নির্ধারিত বালিশ অথবা চাদরে, সন্ধ্যার বেদনাময় জলে মিশিয়ে দেব কলঙ্কিত সুরভী, বীঠোভেন বালিকা, এসব শুধু তোমারই জন্য, বৃষ্টি এবং বিদ্যুৎভরা তোমার আঙুলগুলো আজ হোক আবার সংকেতময়, প্রথম দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সিম্ফনির সুরে স্পষ্ট হয়ে উঠুক আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস, চতুর্থ পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ অথবা সপ্তমে খসে যাক সব মুখোশ অথবা পরচুলো, তারপর তুলনামূলক প্রেমে রাত থাকুক আজ অভিসন্ধিময়ী ঈর্ষা হয়ে
সেখান থেকেই না হয় জন্মহোক অষ্টম, নবম
জন্ম হোক ব্যথিত প্রশ্নের অথবা ভ্রুক্ষেপহীন করোটি কিংবা কংকাল
তবু ছুঁয়ে দাও, ছুঁয়ে দাও আমায় তুমি, বেজে উঠুক দশম
তোমার আঙুল ভাসিয়ে দিক আজ মরা মেঘ আঁকড়ে থাকা বৃষ্টি ভেজা এক সকাল
৬
আলো জ্বলেনি, বারণ না মানা চাঁদ তবু জানলা জুড়ে, ঝুঁকে পড়েন কবি লেখার টেবিলে
কবে উঠেছিল এই ঘুর্ণিঝড়, কবে থেকে আমাদের ঘিরে পরস্পর উন্মাদ হয়েছিল ঝরাপাতা বা কাগজের সব টুকরো, বিচূর্ণ আলোর মত সেদিন কি তুমি ছড়িয়ে পড়েছিলে সৌখিন কোনো মেঘের পরতে পরতে
আর হয়ত বা আমার সব অবৈধতার জন্ম সেদিন থেকেই, উন্মাদ লিপ্সায় সেদিন থেকেই দৌড়চ্ছি আমি, দৌড়চ্ছে আমার প্রতিটি শিরা আর ধমনী, শহরের ব্যস্ত জনপথে তারা অহর্নিশ খুঁজে বেড়ায় তোমায়, খোঁজে চলন্ত বাসে, পরিত্যক্ত গির্জায়, ঝিমিয়ে পড়া অফিসবাড়িতে অথবা হাইরাইজের ফাঁকে, তারপর প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ম মেনে এসে বসি আমার কবিতার পাতায়, পরিচিত সকলের নজর এড়িয়ে অবগহন করি অগণন কবিতায়, সেখানে ডুবতে ডুবতে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমার, মুখের দু'কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে সাদা ফেনা, জলজ শিকড়রা বারবার পেঁচিয়ে ধরে কণ্ঠনালী, তারপর বাঁচবার জন্য, শুধু বেঁচে থাকবার জন্য প্রতিদিন নতুন করে লিখি রূপকথা আমার
আর এসব অবৈধতার মাঝে তুমি এসে দাঁড়াও নিস্পাপ এক বালিকা হয়ে
কান্না আমার দত্তক নিয়েছিলে একদিন আশ্লেষা, প্রেমকে করেছিলে সেদিন অবিনশ্বর
জানলা থেকে চাঁদ সরে গেছে, কলম নামান কবি
বেঁচে আছি আমি যাকে একদিন ডেকেছিলে তুমি অসমাপ্ত ঈশ্বর
৭
সদর দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছেন কবি, হেঁটে চলেছেন, কখনও বা থমকে দাঁড়াচ্ছেন, ভাঙ্গাচোরা মধ্যবয়স্ক মানুষটি বড় যেন ক্লান্ত, বড় জীর্ণ, দু পা ধুলোময় তার, হাওয়াই চপ্পলদুটো কখন যেন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে যেভাবে লেখার টেবিলে ছিটিয়ে থাকে তাঁর মুখখোলা কলমেরা
সাদা পাতায় আমরা দেখি কবিতা
আজ বড়ই অস্থির তিনি, অসম্পূর্ণ কবিতায় তাকে দিতে হবে স্বীকৃতি অথবা অস্বীকার
আর এখানেই আমি আর তুমি দাঁড়িয়ে আশ্লেষা
আজও আমরা জানি না আমাদের পরিচয়, স্বীকৃতি না অস্বীকার
স্বাক্ষর করো, বলো আশ্লেষা, শুধু না হয় কবিকেই গোপনে তুমি বলো
কবি তোমার অস্বীকার না স্বীকৃতি
৮
বুকপকেট জুড়ে রয়েছে শুধু ভুল শহরের ঠিকানা, পথে পথে আজও খুঁজে বেড়াই পরিত্যক্ত সেই ভাঙা স্টেশন, বাসনা আর আয়ত্ত তো ছিল বিপন্ন এক রেলপথ, দ্বিধাহীন জটিলতায় সেখানে কখনো কখনো এসে দাঁড়াতো ভরদুপুরের রেলগাড়ি আর চলা শেষে তা পৌঁছত নিরুত্তাপ নামহীন কোনো স্টেশনে
ভুল হয়, তবু ছুটে আসি আজও, ছুটে আসি দুটো বিয়াল্লিশের উদাসী গাড়ির শব্দে, নিরুত্তাপ প্লাটফর্ম একসময় গুমগুম শব্দে অন্যমনস্কতায় ক্রমশই ফিকে হয়ে আসে আর স্টেশন মাস্টার এসে বসেন তার অলস বারান্দায় মেয়ের অঙ্ক খাতায় সরল জ্যামিতিক হিজিবিজি নিয়ে
আশ্লেষা এই সব ছবি একদিন একান্তই আমাদের ছিল আর ছিল আমাদের রোজকার অনিশ্চিত যাপন
আজ চরিতার্থহীন বেলা শেষে অনুযোগহীন কিছু শব্দ নিয়ে প্রতিদিন এসে বসি
বসি সত্যিকারের প্রেমের কবিতা কোনো একদিন লেখা হবে তার প্রতীক্ষায়
৯
কিছু চাইনি আমি
অভিমতহীন গল্পের মত স্মৃতিরা উড়ে বেড়ায় অথবা তারা খোঁজে অতিরিক্ত চলাচলটুকু পায়ে পায়ে, থাকে সরল ঘূর্ণি অথবা জটিল আশ্বাস তবু মন মনে মনে থাকে অনুযোগহীন, জানে শিমুল তো বসন্ত খুঁজবেই, জানে শেষবিকেলে তুমি চুল খুলে এসে দাঁড়িয়েছ এখন কোনো একতলা সরল বজ্ঞা বাড়ির বিধিবদ্ধ ছাদে, ক্লান্ত পথিক আমি, তাই এই দৃশ্যের শেষে সামান্য কমা দিয়ে থমকে যাই, শ্বাস নেই, অপেক্ষায় থাকি রাতভর স্বপ্নের যেখানে প্রতিরাতে তুমি আমায় ছারখার করো
আশ্লেষা প্রতিরাতেই এভাবে আমরা মৃত্যুবদল করি, মৃত্যুবদল করি উদাসীন এক ভোরের দিকে চেয়ে যেখানে দুপুরের রোদ ক্রমশ ফিকে হয়ে এসে পড়ে
পড়ে জীবনের জটিল লতাপাতায়
১০
তোমার জানলার গরাদ ছুঁয়ে আজ রাতের আকাশদীঘি, সেখানে শিশিরের টুপটাপ ঝরে পড়া, এলোমেলো জোৎস্নায় বারবার উচাটন তোমার আনমনা ওড়না আর বারণ না মানা ছায়াপথ ক্রমশ যেন ঝুকে পড়েছে, ঝুকে পড়েছে তোমার কপাল বেয়ে, নীচে, নিষ্পাপ জ্যামিতিক সরলরেখায়,
ঘুমিয়ে পড়ো না আশ্লেষা, এসব আয়োজন তোমায় শেষ চুম্বন উৎসর্গ করব বলে
শেষবার আগুন হব আমি
উন্মাদ কবি জ্বলতে জ্বলতে চিনে নেবে আজ তার লেখা না হওয়া কবিতার লিপি
১১
হয়তো বা তোমার বাড়ির সামনের আকাশে মেঘের পরত এখন, আসলে যে দিন প্রতিদিন শেষ হয় তারা সব পুরনো মনখারাপ আর তুমি আমি আনমনা হই তখন, মনে পড়ে মৃত সেই কোনো সর্ম্পক, চোখ মেলে তাকাই, আয়ত চোখে নেমে আসে মৃত সব বৃষ্টিরা
আশ্লেষা এই বৃষ্টিফোঁটারা এখন আর আমাদের নয়, নিজেদের জন্য তো আমরা আর কাঁদি না,
শুধু নিঃস্ব মেঘদুটো কখনও কখনও ফুঁপিয়ে ওঠে, আর তখনই পৃথিবীতে নেমে আসে আশ্চর্য সব জটিল প্রেম, আশ্চর্য সব সরল বৃষ্টি
তুলি ধরেন কবি
এ গল্পের শুরু হয় আকাশে আয়ত দুই মেঘ নিয়ে
অভিশাপ নিয়ে যারা বেঁচে থাকে গায়ে বৃষ্টিজল মেখে
১২
জীবনে যে প্রেম কখনো আসেনি বা আসবে না তার নাম অপেক্ষা
পিছন ফিরে তাকালে শুধুই সরলরেখায় হেঁটে চলা, বাতাস তা সে যতই হোক না অসাবধানী তাকে তো আমরা অনেক বেশী জানি, স্বপ্নে মিথ্যে মেশায় মন, মিথ্যে চুম্বনের স্বপ্নে ঘুম ভাঙে, বাইরে তখন শুধুই অন্ধকার, এই অন্ধকারে দুটো ভিন্ন রূপকথায় ক্রমশ ডুবে গেছি আমরা, ডুবে গেছি দুটো ভিন্ন ঝর্ণাধারায়, ক্লান্ত হয়ে খুঁজছি শ্যাওলা মাখা কোনো ঘর
অবসন্ন সন্ধ্যায় সে ঘরে তুমি প্রতিদিন সন্ধ্যাবাতি দাও আর আমি ফিরে ফিরে আসি ক্লান্ত করণিকের প্রেতাত্মা বয়ে,
শুধু আকাশ থেকে যেদিন খসে পড়ে কোনো এক রক্তলাল তারা, ছারখার হয় বুকের মধ্যে রাখা জমানো সব স্মৃতিছায়াপাড়া
খোলা ছাদে তুমিও তখন এসে দাঁড়াও,চোখ মেলে দেখো
কালপুরুষ সেজে দাঁড়িয়ে আছে আমি, আসলে দাঁড়িয়ে আছে ব্যর্থ কিছু তারা
১৩
সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিম আকাশে, হেঁটে যান কবি, শেষ বিকেলে ছায়া সামান্য ঝুকে এখন, শিকড় জুড়ে স্মৃতির অনিয়ন্ত্রিত টান, বারবার পিছু ডাকে, পীড়িত রাত্রির ক্ষুধা কবিকে ভাবায় না, নোঙর তোলেন তিনি যেমন দ্রুতগামী বাতাসেও পাল ওড়ে টানটান স্পর্ধায়,আশ্লেষা আর কিছুক্ষণে
তারপর হয়তো মিলিয়ে যাবে নিহিত শব্দের সব ঘ্রাণ, শুধু পরিযায়ী পাখিরা যে পালকের স্তুপ ফেলে গিয়েছিল তা আর কুড়ানো হবে না
বিকেল মিলিয়ে যাবে দ্রুত কোনো আহত সন্ধ্যায়
ঢলে পড়বে সূর্য পশ্চিম আকাশে
ঢলে পড়বে কবির বারান্দায়
১৪
অক্ষত্রিয় আমি
ভেঙ্গে যায় প্রতিরোধ সব, ভুল হয় বৃষ্টির বিন্যাসে, বিষণ্ন মাধবী আজ একা একা ফুটে আছে, তোমায় নিয়ে সেদিন শহরতলীর ট্রেন ছুটে গিয়েছিল, মুখরিত আত্মায় মিশে গিয়েছিল তা আমাদের সময়ের গুঞ্জন, অবলীলায় রোজকারের খুঁটিনাটি সেরে তুমি বলেছিলে, নিহিত সন্ধ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলে আমাদের আলোর সন্ন্যাস
মন্ত্রমুগ্ধ কবি কান পাতেন, শোনেন স্মৃতির কণ্ঠস্বর, আঁকড়ে ধরেন পূর্বজন্ম যার বৈভব আজ গোধূলিবেলায়, দূরে উপকুলে দাঁড়িয়ে ঝাউবীথি, দাঁড়িয়ে নক্ষত্রের সারি, কবি লিখে যান
আগে কখনো জানিনি জীবনের সমস্ত অভিষেক আসলে অনুভূতিরই বিস্তৃতি, রক্তে আনে তা ঝড়ের জাগৃতি, অলৌকিক বাগান থেকে তাই বহুবর্ণ পাতা ঝরে পড়ে অন্ধকারে আসলে ঝরে পড়ে আমারই রক্ত হয়ে,
আশ্লেষা তোমায় ডাকতে পারতাম আমি রাধা কিংবা খাদিজা কিংবা মারিয়া বলে, অথবা অন্য কোনো নামে, কিন্তু পারিনি, আর তাই ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছে আমার মস্তিস্কের উজ্জ্বল কর্টেক্স, নিভে এসেছে আমার সেই দীপ্ত চোখদুটো, তবু দেখো অবেলায় আজও অবিরল ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে আমার জীবন, বয়ে যাচ্ছে তা আমার সারা শরীর বেয়ে, অনিঃশেষ আবেগের স্রোতে, আজ না হয় ভিজে যাক আবার জাহাজের পাটাতন, জলমগ্ন না হয় হোক আজ আবার সব স্মৃতি, ভেসে যাক না হয় রঙিন সব ফানুস
তবু আমি বর্মহীন থাকিব আজও
অক্ষত্রিয় হব আজ আবার
অভিশপ্ত চক্রব্যূহই হবে আমার শেষ অহঙ্কার
১৫
আমার দ্বিতীয় সত্তা আজ শহরের পথে পথে, খুঁজে বেড়ায় সে না লেখা উপন্যাসের সেই সব চরিত্র, ব্যস্ত রাজপথ, একাকী চিলেকোঠা অথবা রাতের আকাশ আজ বিদ্ধ করে আমার চোখের মণি, আর আমার উপন্যাস হয়ে যায় আমারই মত কলঙ্কভাগী, দিনের শেষে সেখানে পড়ে থাকে না পরা সব মুখোশ, পড়ে থাকে প্রাণহীণ চরিত্র আর গ্রিনরুম থেকে যায় নির্বাক, সংলাপহীন, আচ্ছা, মৃত্যুর আগে মানুষ কি খুব কাঁদে, জানি না, তবু কবি এসে দাঁড়ান জলপ্রপাতের নীচে, পলকহীন চোখে দেখে যান বয়ে যাওয়া জলের স্রোত, সতী নির্মাণের জন্য তো কতবার জেগেছে এই শ্মশান, কতবার পুড়েছে ফুল, পুড়েছে বেলপাতা, চন্দনকাঠ, এই শ্মশানেই তো তিনি দেখেছেন অগ্নি আর বায়ুর অশেষ মৈথুন, দেখেছেন ভাঙ্গা কলসি, কালো ছাই, অর্ধদগ্ধ কাঠ, ইত্যাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নির্মোহ নিস্পৃহ শ্মশান
তারপর পুড়ে গেছে সবকিছু একদিন
তবু নিশ্চল রাতে ক্ষীণকায়া নদীর তীরে ফিরে ফিরে আসেন কবি আবার, ফিরে আসেন ভাঙা সেই সাঁকো বুকে নিয়ে
এই ফিরে আসা শুধু তোমারই জন্য আশ্লেষা
ফিরিয়ে দিও না কবিকে তুমি আবার
১৬
গোল হয়ে পাখীরা ওড়ে আকাশে আর পালকের রঙে অন্ধ হন কবি, যা দেখেন তা শেষ হয় না তাই ঢাল নীচে নামে, নীচে ছোট্ট সেই ডোবা, তিন ধাপ তার সিঁড়ি, সিঁড়িবেয়ে একফালি উঠোন, আর উঠোন শেষে কাঠের দরজা, দরজার ওপারে খাট, ছোট তোশক, হাতেতোলা মাটির উনোন, কুলুঙ্গিতে শুধু শূন্যতা, সামনের দাওয়াও ফেটে চৌচির, চৌচির বুনো শেকড়ের আলপনা, বছরের পর বছর তাতে ধুলো পড়ে ঝরঝর, বালি পড়ে ঝুরঝুর, কান পাতেন কবি, সেদিনের মতই পাতাভাঙার অস্পষ্ট শব্দ, শাড়িতে জড়ানো বুনোকাঁটা, মাথাছোঁয়া গুলঞ্চলতা, জানি এ পায়ের শব্দ তোমারই, চোখ মেলেন কবি, চুলে কুটো, কপালে কাঁচপোকা, নাকে ঘাম, বুকে ওঠা-পড়া
বারবার ছায়াচ্ছন্ন বয়স হয়ে তুমি ফিরে ফিরে আসো আশ্লেষা, সন্ধ্যা হয়, পাখীরা গোল হয়ে আকাশে ওড়ে আর পালকের রঙে অন্ধ হন কবি আবার
স্মৃতিরা তখনই নীচে নামে যদিও
চড়াই জুড়ে এখন শুধুই স্মৃতিটান
১৭
আজও স্বপ্ন দেখি আশ্লেষা আর সে স্বপ্নে তুমি এসে দাঁড়াও, চারপাশে তখন আমার অন্ধ অতীত, তোমাকে ছোঁওয়ার জন্য হাত বাড়াই আর বাড়ানো সে হাত কে যেন আচম্বিতেই নিজের আগলে বন্দী করে নেয়, যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠি আর দেখি তুমিও আমার মতই যন্ত্রণায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছ অক্ষরহীন কিছু পংক্তিতে, বিচূর্ণ সূর্যের গান গেয়ে তখনই মানুষের নিঃসঙ্গ জীবনে ফিরে আসে লুব্ধক নক্ষত্র, গভীর রাতে তখনই শরীর মিশে যায় একরাশ নিহত কুয়াশায়, কালি ও কলম পাশাপাশি এসে দাঁড়ায় তবু ঈশ্বর রয়ে যান শব্দহীন,
রঙহীন বিবর্ণ নদী হয়ে আবর্তিত হতে থাকি ফেলে আসা অতীতে, আবর্তিত হতে থাকে আমার স্বপ্নরা, পড়ন্ত বিকেলে তখনই উদ্দেশ্যহীন দিন শেষ হয়, নিভে আসে শেষ বিকেলের আলো, ঘরে ফেরে পাখিরা, সন্ধ্যার নিয়ন পেরিয়ে অতিক্রম করতে থাকি একটার পর একটা বৃত্ত, যদি খুঁজে পাই ঘর, ঘর নয় বাসা, দূর বহুদূর হেঁটে যাই, হাঁটতে থাকি যতক্ষণ না একটা মরচে ধরা ভোর একতারা হাতে আমাকে স্বাগত জানায়, ডেকে নেয় তার সুরহীন চলার পথে, চলতে থাকি আমি, চলতে থাকে আমার নিঃশব্দ ছায়া
ঘুর্নিঝড় তখনই শব্দের পেখম মেলে, চোখ মেলি,
চশমার ভাঙ্গা কাঁচে বৃষ্টির জল এসে পড়ে
আশ্লেষা, প্রিয় উৎসবের ফুল আজও রাখা আছে নির্ধারিত টবে, হয়তো বা কখনো আবার ভোর হবে আর শরীরের যুদ্ধ থেকে বহুদুরে চলে গিয়েও সেদিন ঠিক ফিরে আসব তোমারই কাছে
ভোরের আজান শেষে নতজানু কবি আজও লেখে অক্ষরহীন প্রেমকথা
১৮
সেদিনও বৃষ্টি হবে আশ্লেষা যেমন হয়েছিল কোনো একদিন, বৃষ্টির একপারে থাকবে তুমি, অন্যপারে আমি, দুঃখমেঘ তারপর কখন জানি কান্না হয়ে যাবে, ছুঁয়ে যাবে তোমার চোখ, অপলক আমি, বিন্দুজলকণা চিবুক ছুঁয়ে টলমলো প্রতীক্ষায় আর আমি লম্পটের মত চুরমার করব স্মৃতির সব আয়না, উড়িয়ে দেব বুকের কোনে থাকা বেহিসেবী সব যন্ত্রণা, নীলশিখায় পুড়ব
পোড়াব তোমার সব পাপ
নিজের চিতাভষ্ম দুহাত ভরে বলবো ভালবাসি
আরো একবার, শেষবার
১৯
আকাশের বুকে শুয়ে আছে নক্ষত্রের এক আশ্চর্য নদী আর আধভাঙ্গা চাঁদ নেমে আসে উঠোনের পোড়া নিমগাছে, তবুও অসমাপ্ত কবিতার খাতায় অক্ষরগুলো যেন বড়ই অনুজ্জ্বল আজ, ফিকে জোৎস্নায় দাঁড়ান কবি
পলাশগড়ে আজও সন্ধ্যার ট্রেন সময় মেনেই হয়তো থামে আর তড়িঘড়ি তুমি হেঁটে যাও তোমার পাঁচিলঘেরা ডানামেলা বাড়িটার দিকে যাকে তুমি সাজিয়েছ নিয়মবেঁধে, সাজিয়েছ তোমার সম্পর্কের রোদ ও রোদ্দুরে
রাত গড়ায়, দরজা বন্ধ হয়, রাতজাগা পাখীরা ঘরে ফেরে আর আশ্চর্য কষ্টরা আবার ডানা ঝাপটায় একা একা
বারোটা বছর অনেকখানি সময় আশ্লেষা
আজও জোৎস্নায় একা একা স্নান করেন কবি
জলপায়ে আবার যদি হেঁটে আসে একদিন নদী
২০
আশ্লেষা, বাড়ি ফিরে তুমি কি এখন চুল খুলে দাঁড়িয়েছ, দাঁড়িয়েছ তোমার আয়নার সামনে, তোমার ঘরের অনিশ্চিত হাওয়ায় বারবার কি ফিরে আসছে ভালবাসি বলতে না পারার সেই আত্মরক্ষাহীন অপরাধবোধ, তোমার শরীরে হয়তো পলাশ রঙ এখন, কপালে উজ্জ্বল স্বঘোষিত টিপ, বিধিবদ্ধ আত্মীয়রা তোমার নিরীহ আর সমাজসম্মত জানলার কপাট হয়তো বন্ধ করে দেবে একটু বাদে আর অনুযোগহীন কোনের ঘরে তুমি পাতবে আর এক সফল রাত-বিছানা
হেঁটে যেতে যেতে আমি এখন অভিমতহীন এই দৃশ্যের শেষে একটি সামান্য কমা দিয়ে থমকে যাব
না বলা না লেখা কোনো রূপকথারই অপেক্ষায়
২১
শেষবার যখন দেখা হলো তুমি কাঁদছিলে আশ্লেষা, আমি দু'হাত পেতে দিয়েছিলাম, ফোঁটা ফোঁটা জলে ক্রমশ দগ্ধ হচ্ছিল আমার হাতের পাতা, তারপর পুড়ে গিয়েছিল আমার বাহু, বুক, আর সবশেষে মন, সেই থেকে রাত্রির আকাশে দাঁড়িয়ে আমি অর্দ্ধদগ্ধ এক মানুষ
সারারাত মাথা ঝাঁকাই, চিকিচিকি তারারা খসে পড়ে, হাত বাড়াই, চাঁদ সরে যায় আর শেষরাতে পায়ে পায়ে নেমে দাঁড়াই তোমার ঘুমের মাঝে, মাংসহীন আঙুল ছোঁয়াই তোমার চুলে, পোড়া ঠোঁটে ফিসফিসিয়ে বলি
বলি তোমার ঘুমকে
জ্বলন্ত শরীর নিয়ে আনন্দ আজও যে জল চায় চণ্ডালিনীর কাছে
২২
"যদি ছুঁয়ে যাই তোমার দু-খানি হাত, সারাদিন-সারারাত..."
ঘুম আসে না, অস্থির কবি একা রাত্রি পোড়ান, শব্দ খোঁজেন
"চারিদিকে বড় কোলাহল, বৃষ্টির কাছে যাবে কি তুমি আশ্লেষা, খুঁজে এনে দেবে দু-ফোঁটা চোখের জল..."
বৃষ্টি আসে না
ধুলোবালি করে দিতে চান তাই কবি সব পাওয়া সম্মান
বারবার যে এ জীবনে ভুল হয় জীবনের বানান
২৩
পিছন ফিরে তাকান না
আনমনা আলো মেখে কবি দাঁড়িয়ে, পিছে বিস্তৃত উতরাই, চেনা-অচেনারা ফিরে গেছে এ পথ বেয়ে আর কুলীন বাতাস বয়ে এনেছে দীর্ঘশ্বাস ...
অসংখ্যবার এই শরীরের মৃত্যু হয়েছে অথচ কখনো গুনিনি মৃত্যুর ঠিক কতদিন বাদে আবার বেঁচে উঠি, এই যে ঘুমের মধ্যে পুরনো সময়ের দিকে হেঁটে যাওয়া, এই যে প্রতিদিন জেগে ওঠা, এক টুকরো আয়নায় দু'জনার তাকিয়ে থাকা যেখানে তুমি কথা বলো আমার প্রতিবিম্বের সঙ্গে আর আমি তোমার ছায়ার হাতে হাত রাখি
হেঁটে যান কবি চড়াইয়ের পথে, আরো বেশী বেশী করে কাছে যেতে চান আকাশের, আশ্লেষা যদি কোনোদিন ফিরে আসো, যদি দেখো পথ ভুল করেছে কেউ, দিগন্তে কেউ ভুলে ফেলে গেছে তার গান জানবে সে আসলে আমারই ছায়া, তুলে নিও পড়ে থাকা মৃত সে কবিতার খাম
লেখা আছে দেখো 'ভালবাসা' যা ছিল তোমাকে দেওয়া আমার ডাকনাম
আনমনা আলো গায়ে কবি দাঁড়িয়ে, পিছনে বিস্তৃত উতরাই
পিছন ফিরে তাকান না কবি...
২৪
আকাশের বাতিল তারা কবির ঘরে এখন, জোৎস্নারা টলোমলো করছে যেন দুজনার হাতে, ছায়াপথ টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে যাচ্ছে গ্লাসে গ্লাসে
হয়তো বা প্রেমিকার কথা বলছিল তারা তখন, হাঁটখোলা কলেজের সামনের সেই রাস্তা, কপালে সিঁদুরের ছোঁয়া, চোখদুটো জলে ভাসা
তোমাকে পাওয়া আর না পাওয়ার সুখে আমি ঘুমিয়ে পড়ব এবার আশ্লেষা, আর ঘুমের মধ্যে অভিশাপে পুড়ে যাবে আমার সমস্ত ভালবাসা
হয়তো একদিন হয়ে যাবে তা হীরের কোনো নাকছাবি
একলা কবি কাঁদেন,একলা কবি বাঁচেন
আজও সাথে নিয়ে অসম্ভবের শেষ আশা
কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী
Posted in কবিতাঅবিনাশবাবুর কাছে আজকের
রাতটা মনে রাখার মতো
তার ঘরটি প্রশস্তে ছোট
কিন্তু লম্বাটে
খানিকটা গুহার মতো দেখতে
অবিনাশবাবু সোজা লম্বা হয়ে
শুয়ে থাকে
ছাদ থেকে
ঝুলে থাকে না নিজের ঘরে
বাদুড়ের মতো
অবিনাশবাবুর ঘরের এক কোণে
বসে ওরা স্তোত্র পাঠ করতে থাকে
রাতের অন্ধকারে ত্রিমূর্তি নিজের
রীতি মেনে
ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে
তার মাথার কাছে রাখা
সাদা কাগজ ওদের স্পর্শে পাথরে
পরিণত হয়
অবিনাশবাবুর মাথার মধ্যে
স্তোত্র পাঠের উচ্চারিত
শব্দগুলি ভাসতে থাকে
নিয়মের উলটো দিকে
একত্রিত হয়
অনুচ্চারিত কথা হয়ে
অবিনাশবাবু চিৎকার করে
আমাকে ঘুমতে দাও তোমরা
তার শরীর কেঁপে উঠে
অবিনাশবাবু স্পষ্ট
দেখতে পায়
ওই মেয়ের হাতে
একটা লাউ ধরা আছে
পৃথিবীর আকৃতিতে
অবিনাশবাবুর কাছে
আজকের রাতটা যথেষ্টই ছিল।
কবিতা - অঞ্জন বল
Posted in কবিতাযে জনপদের ছিল একটি ইতিহাস
দেশভাগে হারিয়েছিল সে ভূগোল
সুরমা কুশিয়ারা হয়ে বরাকের ঢেউ
স্রোতে স্রোতে প্রান্তর হাওড়ের ডাঙ্গা
স্বভূমি হারিয়ে নতুন ভূগোল ।
বাস্তুভিটে , প্রসারিত দ্বৈপায়ন ,
ভূমিজ কৃষিক্ষেত , জরায়ুজ যা কিছু
সব ছেড়ে বরাকের তীরে বাঙালির নতুন
স্বদেশ ।
যে মাটিতে শস্য বুনি সেই মাটিতে বর্ণমালা
যা কিছু নির্মাণ জন্মগাথা
ধামাইলের সুরে --
সব হারিয়েও ভাষা থেকে যায়
জড়িয়ে থাকে নাড়িতে
নিরঙ্কুশ প্রজননে ।
মাটির গন্ধে জড়ানো থাকে গান --
কান্দে হাসন রাজার মন ময়নারে
মাটি ও পিঞ্জিরার মাঝে ।
গিলোটিনের শাসনে ভাষা সন্ত্রাস
১৯ মে ১৯৬১ সাল -
বরাক নদীর পারে
ভাষা শহীদের রক্ত ঝরেছিলো
স্বাধীনতার দেশে।
১৯শে মে আবেগে ধুলো জমে--
১৯ শে মে ফুল মালার উদযাপনে
১৯ শে মে বাঙালির বিস্মরণে
বাঙালির ইতিহাস বেঁচে থাকে,
সেই যে ছিল একটি ভাষা
আ-মরি বাঙলা ভাষা,
বেঁচে থাকার ইতিহাস ইতিকথা
মনুষ্যের জাত নেই , শুধু আছে ভাষা
নির্মাণ জন্মগাথা ।
কবিতা - অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়
Posted in কবিতাদেবতারা ক্ষমতা হারাচ্ছে দিনে দিনে।
বৃষ্টি আর সময়মত হয় না।
মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে
একদল মানুষ
সাহস করে
দেবতাদের শাস্তি দিল।
বৃষ্টি দাও নি তুমি—
আরও যা মানত করেছিলাম, তাও—
নির্বাসিত হলে তাই।
বিস্তর সওয়াল জবাবের পর
মনমত শাস্তিবিধান করে
ভরপেট খেয়ে
হাসিমুখে বাড়ি গেল ওরা।
বছরের বাকি কটা দিন
মন্দিরে নয়;
খোলা আকাশের নীচে কাটাবে দেবতারা।
আমরা গা-বাঁচিয়ে চলা ছাপোষা বাঙালী—
অতটা স্পর্দ্ধা দেখাই না।
বছরের পর বছর,
কপালে হাত ঠেকিয়ে একই কথা বলি।
“সকলকে ভালো রেখো মা—দুগ্গা দুগ্গা”।
কবিতা - গৌতম দাস
Posted in কবিতাদিকনির্দেশ
এখানে আর আমার নাম কেউ মুখে আনে না, সময়, সে তো আসলে চলে বিপরীত অপেক্ষায়, হারুনের ছেলে বন্ধুদের সাথে কাজের খোঁজে বিদেশ গিয়ে ফিরলো না আর
হারুন রোজ তাই অপেক্ষায় থাকে একটি চিঠির, আর ঐ যে মেয়েটি সামনের শনিবার বয়-ফ্রেন্ডকে বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেবে বলে বাসের হাতল ধরতে ছুটেছিল
সে-ও আর ফিরে আসেনি বাসস্টপে, ছাপোষা মধ্য বয়স্ক মানুষটিও চায়ের ভাড় বেঞ্চে রেখে সেই যে সেদিন রাস্তা পার করে সিগারেট কিনতে গেলো
আজও সে ফিরে আসলো না...
আসলে বড় অপেক্ষার শহর এই শহর, সন্ধে নামলে তাই এখানে কাঁধ জড়িয়ে বাতাসের উৎসব শুরু হয়, বুড়ো ক্ল্যারিনেটবাদকের টুপি তখন উপচে ওঠে করুণায়, পাতাল রেলের সিঁড়ির শেষে ফিসফিস করে গল্পে মেতে ওঠে দুই অসফল মানুষ
ছদ্মবেশী শহর তাদের কথা শুনবে বলে কান পাতে তখন
আর আমি বাড়ি ফেরার দিকনির্দেশ যেন হারিয়ে ফেলি
শুধু মনে পড়ে যেদিকেই হাঁটি, এ অপেক্ষার শেষ নেই, সাবধানে হাঁটি
জানতে চাইলে কাউকে বলি না কতদূর আসলে যেতে চাই...
বাড়ি ফেরার আগে মৃত্যুর পরেরটুকু শুধু যেন লিখে যেতে চাই...
প্রতিশ্রুতি
আলো জ্বালানো নিষেধ, মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে সব তারা, ধুলোবালি মনে স্মৃতিকথা নিয়ে বসে আছি ছাদের কিনারে
নাবিক তো ঘরে ফেরে এসময়ই, দুয়ার খুলে দেয় তার নারী, তবু সমুদ্র আর চাঁদ আজ আত্মহত্যার স্বপ্ন দেখে
যেমন নি:শর্ত কবিতার মত তুমি আজও ভেসে যাও জোৎস্না হয়ে, পাহাড়ের বুকে বদলাও বারবার তোমার গতিপথ
প্রতিশ্রুতিগুলি চিরদিন শুধু থেকে যায়
গোপন কথার মতই সৎ
মিথ্যে
মনে মনে দৃশ্যপট এভাবেই সাজিয়েছি
পথ চলতি এ শহরের কোনো এক ব্যস্ত অথবা অব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ করেই তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে একদিন, দূর থেকে তোমায় দেখে দাঁড়িয়ে পড়ব আর কাছে এসে চোখ তুলে আমায় দেখে চমকে উঠবে তুমি, ততক্ষণে আমার ধুকপুক করা বুকের ওঠানামা সামলে খুব আলতো করে তোমায় জিজ্ঞাসা করব, কেমন আছ, ঈষৎ ঘাড় নেড়ে সেকথার জবাব দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুমি জানতে চাইবে কবে চশমা নিলাম, ছেলে কোন ক্লাসে পড়ছে, বৌকে নিয়ে গতবার শীতে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলাম কি না, আমিও জেনে নেব তোমার মেয়ে বনজোৎস্নার কথা, তোমার স্বামীর কথা, অলস দুপুরে এখনও কি তুমি মাঝে মাঝে রং তুলি নিয়ে ছবি আঁকো, এইসব ...
আসলে এসব এক দৃশ্যকল্প মাত্র অথবা এক অস্থির অস্থিরতা যা শুধু আমাকেই ছুঁয়ে থাকে অথবা বলতে পারো গলে পড়া মোমের নীচের বাসনা-রুদ্ধ মুখ
কিংবা মেনে নিতে পারো সেই বিশ্বাস
বিন্দুর ওপর যে কোনো সময় আমি জেগে উঠতে পারি, জেগে উঠতে পারি এক সৌধ হয়ে অথবা সংকেত ছাড়াই চলে যেতে পারি কখনো বিস্মৃতির আড়ালে...
তস্কর বাতাস শুধু তখন ছুঁয়ে থাকবে তোমায়, ছুঁয়ে থাকবে আমার আকাঙ্ক্ষা হয়ে...
একদিম তুমি একে বিভ্রম বলেছিলে
কিন্তু সত্যি বলো তো, কখনো কি মিথ্যে বলতে পেরেছিলে...
কবিতা - সমরেন্দ্র বিশ্বাস
Posted in কবিতাসামনে টান টান পড়ে থাকা ঝিমধরা পথ তোমায় ডাকছে!
পথের উপর লেপ্টে থাকা ম্লান রোদ্দুরের-আলো ইশারায় ঈঙ্গিতে তোমায় ডাকছে!
এই পথ চলে গেছে লড়াই-এর ময়দানে,
এই পথ শেষ হয়েছে ক্ষুধার্ত শিবিরের পরিখায়।
এই পথ ছুটে গেছে মেহনতী মানুষের ইচ্ছের দিকে,
এই পথ মিশে গেছে পাঠশালার অনুভবে, ভালবাসায়।
গত কাল বৃষ্টি হয়ে গেছে,
মানুষের ভালবাসা উজ্জ্বল বৃষ্টির মতো
ধুইয়ে দিয়েছে মে-দিনের এই অনন্ত পথ।
এখনও পথে ছড়ানো কিছু লাল ফুল –
সেই সব রক্তাক্ত ইতিহাসের চিহ্ন, যা আমরা ভুলি নি।
এখনও পথে ছড়ানো কিছু হলুদ ফুল –
মেহনতী আকাঙ্ক্ষার সেইসব পীতাভ চিহ্ন –
যার জন্যে আমরা যুগ যুগ লড়াই করেছি।
এই পথে কিছু সাদা ফুল এখনও ছড়ানো বাকী
যা আমাদের নিয়ে যাবে আগামীর দিকে।
আজকে মে-দিন।
সামনের অনন্ত পথ প্রতীক্ষায় ঝিম মেরে আছে,
মেহনতী মানুষের মন বর্ণময় রামধনু, কিম্বা বাঁকা কাস্তে।
একটা অনন্ত পথের সামনে দাঁড়িয়ে আজকের মে-দিনটা হেসে হেসে পেপার বেচছে!
কবিতা - অমিতাভ মুখার্জী
Posted in কবিতাহালকা সাদা নর্তকী
ভেসে বেড়াচ্ছিল
সকাল থেকে
বাতাসের মোহে ও আনুকূল্যে
আকাশের উপরের দিকে
আকাশ জুড়ে
নিজের ধীরে গতি মেনে
সমুদ্রের উপরে ডানা মেলে
জল ছুঁয়ে যায়
তীরের কালো কালো পাথরগুলি
ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে
শুয়ে আছে
নর্তকীর সামনে
একের পর এক
একের থেকে এক আলাদা ঢেউগুলি
কোঁকড়ানো ঝালর লাগানো অলঙ্কারের
মতো
নর্তকীর পা ছুঁয়ে যায়
ঘূর্ণিঝড়ের তির্যক বাতাসে
জলের ছিটেয়
নিজেকে ভিজিয়ে নিল
ঠোঁট রাখে
ঢেউ অলঙ্কারের উপরে
জল স্পর্শ করে
পাগুলি ভিজিয়ে নেয়
নর্তকীর নরম,
অবরোহী সিদ্ধান্তে
জল ফ্যাকেশে হয়
নর্তকীর পায়ের রঙে,
গরিমায়
ফ্যাকেশে জল ঢেউ ভাঙতে শুরু
করে
ভাঙতে ভাঙতে ঢেউ শান্ত হয়ে যায়
আরেক ঢেউের নাচনীতে
নর্তকী কাঁপতে কাঁপতে
নিজের ঠোঁট বেঁকিয়ে
জলের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে
ওর শরীর জুড়ে
সাদা রেশমি পোশাক
জলের শব্দ নর্তকীর কানে আসে
জলের ঝাপটায় রেশমি পোশাক ভিজতে থাকে
এখানে এখন এর থেকে
সুন্দর কিছু নেই
নর্তকীর সুখের শরীরে
অর্থহীন আগুনে, দাবানলে
হৃদয় কাঁপিয়ে
নর্তকী ভেসে যায় আকাশে
বাতাসের মোহে।
জল ছুঁয়ে যায়
তীরের কালো কালো পাথরগুলি
ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে
শুয়ে আছে
নর্তকীর সামনে
একের পর এক
একের থেকে এক আলাদা ঢেউগুলি
কোঁকড়ানো ঝালর লাগানো অলঙ্কারের
মতো
নর্তকীর পা ছুঁয়ে যায়
ঘূর্ণিঝড়ের তির্যক বাতাসে
জলের ছিটেয়
নিজেকে ভিজিয়ে নিল
ঠোঁট রাখে
ঢেউ অলঙ্কারের উপরে
জল স্পর্শ করে
পাগুলি ভিজিয়ে নেয়
নর্তকীর নরম,
অবরোহী সিদ্ধান্তে
জল ফ্যাকেশে হয়
নর্তকীর পায়ের রঙে,
গরিমায়
ফ্যাকেশে জল ঢেউ ভাঙতে শুরু
করে
ভাঙতে ভাঙতে ঢেউ শান্ত হয়ে যায়
আরেক ঢেউের নাচনীতে
নর্তকী কাঁপতে কাঁপতে
নিজের ঠোঁট বেঁকিয়ে
জলের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে
ওর শরীর জুড়ে
সাদা রেশমি পোশাক
জলের শব্দ নর্তকীর কানে আসে
জলের ঝাপটায় রেশমি পোশাক ভিজতে থাকে
এখানে এখন এর থেকে
সুন্দর কিছু নেই
নর্তকীর সুখের শরীরে
অর্থহীন আগুনে, দাবানলে
হৃদয় কাঁপিয়ে
নর্তকী ভেসে যায় আকাশে
বাতাসের মোহে।
কবিতা - কুমকুম বৈদ্য
Posted in কবিতাভিজবে বলে বর্ষাতি আজ অপেক্ষাতে
পদ্ম পাতা হীরের লোভে বুক চিতিয়ে
বেলের কুঁড়ি মেলবে বলে গন্ধ ছড়ায়
পায়ের নিচে গরম বালির মরীচিকা
গাছের ছায়া স্বপ্ন দেখে শীতলপাটি
কৃষচূড়া আকাশ জুড়ে লালচে ছড়ায়
বারান্দাতে রোদ ছুঁয়েছে জলের বাটি
জ্বলব বলে হওয়ার নিচে দাঁড়িয়েছিলাম
সূর্য কি আর তোমার মত রাগতে পারে?
নিবিয়ে দিলো ছটাক মেঘের আভাস এসে
আমিও তাই তপ্ত দিনে ডিঙা ভাসাই
গরম হাওয়া আজ ছুঁয়েছে দেশের মাটি
ছোয়াঁচ লেগে পাশের বাড়ির তপ্ত চুলা
এসব বুঝি গরম দিনের তপ্ত দাওয়াই
এসব ছেড়ে আমরা বরং দাওয়ায় জুড়াই
কবিতা - ইন্দ্রাণী সরকার
Posted in কবিতাড্যান্ডিলায়নের পাপড়ি হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কদমের রেণু ঘাসের ওপর ঝরে পড়ে রোদেলা আকাশে মেঘদের নৌকো ভেসে চলে পাহাড়ের মাথায় সবুজ আঁকিবুঁকি তেরছা আলো ঝুঁকে আছে দোরের আনাগোনায় দূরে একটি ফড়িং পাতার চৌখুপিতে উঁকিঝুঁকি মারে বনশালিক কিছু মাথা নাড়িয়ে বচসায় রত ছবির মত বাড়িগুলি নদীর ওপারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে জলে কিছু নৌকো অল্প হাওয়ায় ঢেউয়ের দোলায় কচিপাতার ফাঁক দিয়ে উড়ে যায় রঙিন প্রজাপতিদের পাখা ।
Subscribe to:
Comments (Atom)
বিধিসম্মত বিজ্ঞপ্তি
দর্শকসংখ্যা
ঋতবাক পরিচালনায়
প্রধান উপদেষ্টা - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী ও স্বপন দেব
উপদেষ্টামণ্ডলী – সুদিন চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, চিন্ময় গুহ, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, শুভ্র ভট্টাচার্য, পল্লববরন পাল
সম্পাদনা – সুস্মিতা বসু সিংহ
কার্যনির্বাহী সম্পাদনা – শিশির রায়, সৌম্য ব্যানার্জী
কারিগরী সহায়তা – সুমিত রঞ্জন দাস
উপদেষ্টামণ্ডলী – সুদিন চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, চিন্ময় গুহ, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, শুভ্র ভট্টাচার্য, পল্লববরন পাল
সম্পাদনা – সুস্মিতা বসু সিংহ
কার্যনির্বাহী সম্পাদনা – শিশির রায়, সৌম্য ব্যানার্জী
কারিগরী সহায়তা – সুমিত রঞ্জন দাস
ব্লগ সংরক্ষণাগার
জনপ্রিয় লেখাগুলি
পরবর্তী সংখ্যা প্রসঙ্গে
পরবর্তী সংখ্যা প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ২১/১১/২০২৫, লেখা পাঠান অভ্রতে টাইপ করে, লেখা সম্পূর্ণরূপে অপ্রকাশিত হওয়া চাই। লেখা পাঠানোর ঠিকানা - RRITOBAKB@gmail.com.










.jpeg)

.jpeg)
















