Next
Previous
Showing posts with label অনুগল্প. Show all posts
0

অণুগল্প - সুবর্ণা রায়

Posted in


অণুগল্প


নিহারী আর মিতুমা
সুবর্ণা রায়



ভিতরটা শুকিয়ে আসছে টের পাচ্ছেন মিত্রা। একটা অমোঘ কালো ছায়া চুপিচুপি এগিয়ে আসছে। দূরত্ব কমে আসছে ক্রমশ। উপন্যাসটার শেষ লাইনটা লিখে পেনটা বন্ধ করলেন। ক্লান্তির থেকেও তৃপ্তি হচ্ছে অনেক বেশী। অনেক কাজ বাকি ছিল, শেষ করেছেন একে একে।

নিহারী টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে একমনে পড়ছিল কিছু। পেনের ক্লিকের সামান্য আওয়াজে, মুখ না তুলেই বলল, ‘‘হল তোমার নায়িকার জয়? এবার তো একটু ঘুমাও! এগারোটা বেজে গেছে।’’

ভারী পর্দার গাম্ভীর্য যেমন আটকাতে পারে নি পূর্ণিমার আলো, নিহারীর নির্লিপ্ততা কিছুতেই ঢাকতে পারে না ওর স্নেহ, মায়া, মমতা। মিত্রা জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে দেখলেন আর একবার। মন ভরে দেখলেন। চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে, চশমাটার আড়ালে দীর্ঘ চোখের পাতা রিসার্চের একতাড়া কাগজকে দুষছে নিশ্চয়ই কাজলকালো চোখকে কষ্ট দেবার জন্য। হাসলেন মিত্রা। ঠিক যেরকম হাসলে মনে হয় মনের মণিকোঠায় না পাওয়ার দুঃখগুলোয় ছাতা পড়ে গেছে, ভেসে আছে শুধু শরতের ভোরের শিউলির গন্ধের মত সুখ...

দুদিন কাজে আসে নি সন্ধ্যা। একবার খবর নেবে কি না গিয়ে ভাবছে মিতু, ড্রাইভার লক্ষ্মণ এসে খবর দিল, সন্ধ্যার জ্বর। মাঝেমাঝেই জ্বর হচ্ছিল। এবার একেবারে পেড়ে ফেলল। মিতু দাঁতে নখ কাটছিল চিন্তায়, লক্ষ্মণ বলল, ‘‘আপনাকে একবার যেতে বলেছে গো মা। যদি পারেন আজই।’’

মিতুর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল সন্ধ্যা। কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে। চোখের অবিশ্রান্ত জলের ধারা মুছিয়ে দিয়েছিল মিতু। কাতর ভাষাটা পড়েছিল। সন্ধ্যার এত বছরের কষ্টার্জিত রুক্ষতাকে নিজের উষ্ণতা দিয়েছিল। একসময় নিথর হাতটা ছেড়ে আর একটা ছোট হাত ধরে বাড়ি ফিরে এসেছিল অনেকটা শূন্যতা নিয়ে।

কাস্টডি নিয়েছিল আইনি মতে। নিহারী তখন ছয়। বুঝত হয়তো অনেক কিছুই। চুপ করে থাকত। মিতুও একটু এড়িয়ে চলত। একটা অস্বস্তি ছিল কোথাও। অনেকটা দূরত্ব পেরোতে কিছুটা সময় তো লাগারই ছিল...

মিত্রা চোখ বুজে আছেন। ঠোঁটে আলতো স্বর্গীয় হাসি। ডান হাতটা ভাঁজ করে পেটের ওপর রাখা। নিহারী ডাকছে, ‘‘মিতুমা, তুমি ঘুমোলে মিতুমা?’’ ঝরণার মত বাজছে স্বরটা কানে, মিত্রা আল ধরে দৌড়চ্ছেন, খালি পায়ে শিশিরের ঠাণ্ডা, হাসছেন আর হাসছেন, পিছনে ছোট্ট নিহারী দুই বেণী দুলিয়ে দৌড়ে ধরতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। কপট রাগ দেখিয়ে ডাকছে, ‘‘মিতুমাআআআ, আমার কিন্তু পেটে ব্যথা করছেএএএ...’’

মিত্রা ঘুরে দাঁড়ালেন। একটু দূর থেকে দেখছেন, নিহারী ঝুঁকে পড়েছে মুখের ওপর। একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছে এবার। 

উনিশ বছর আগেও বোঝেননি মিত্রা, এখনো বোঝেন না, সেদিন কে কাকে বাঁচিয়েছিল।


0

অণুগল্প - শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়

Posted in


অণুগল্প


শিউলির রঙ 
শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়



বর্ণময় যাপন। এই ময়ূরপঙ্খী সাতমহলা সুখের দ্রিমি দ্রিমি ঝাঁপতাল, তো ওই দ্যাখো শ্বেতশুভ্র দরবারী কানাড়া্য় গম্ভীর অভিজাত চলনের বুকে হঠাৎ গাঢ় হলুদের দুষ্টু আবেগ। তবুও তুমি বলবে আমরা সাদা কালো বাদামী? ধবধবে পেয়ালার তরল উষ্ণতা তবে কেন বোনে ঘন নীল বিষাদ, লাল সংগীতের উদাত্ত আহ্বান ঢাকে গৈরিক সন্ন্যাস! শিউলিও ভেবেছিল – বুঝি ওর ভালোবাসার খুশি-ঝলমলে সাতরঙা রঙিন মোজাইকের খোঁজ পেয়েছে অনিমেষ, শেষে কালো রঙ নিয়ে গঞ্জনা শুনতে শুনতে কৃষ্ণতর অভিমানে সব থেকে ফর্সা শাড়ীটা নিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে...


0

অনুগল্প : ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

Posted in



অনুগল্প 




জয়েন্ট এন্ট্রান্স
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী 



মেডিক্যাল / ইঞ্জিনিয়ারিঙের জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফর্ম বিক্রি হচ্ছে । তখন অন লাইনে ফর্ম ডাউন-লোড এর ব্যবস্থা ছিলনা । ছেলে মেয়েরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম কিনছে । হঠাৎ একটি মেয়ে এসে লাইনে দাঁড়ালো । মেয়েটিকে দেখতে সত্যি খুব খারাপ । মিস কালো, রোগা, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, পরনে সালোয়ার কিন্তু বেমানান । মোট কথা, ওই বয়েসে এতো হতকুৎসিৎ চেহারা খুব কম চোখে পড়ে । মেয়েটি লাইনে দাঁড়িয়ে রইলো । প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে ও ফর্ম পেল। অনেকের ই চেহারা টা মনে রইলো । কারণ ওকে নিয়ে কিছু মৃদু আলোচনা শুনলাম দুজন মাঝ বয়েসি মহিলার মধ্যে । বোধ হয় এখানে এসেছেন ছেলে কিম্বা মেয়ের সঙ্গে ঃ

- কিরকম দেখতে বল ! ওই মেয়ের বিয়ে দিতে মা বাবা হিম সিম খাবে !

- হ্যাঁ, কিরম যেন ! ও বিয়ে না করতেও পারে ! কে বিয়ে করবে ওকে ? 

- তোর মেয়ে তো ভালোই নাম্বার রেখেছে । জয়েন্টেও ভালো করবে ।

- ভগবান জানেন! তোর মেয়ের রেজাল্ট কেমন ?

- ওই মোটা মুটি । দেখি কি হয় !

- কিচ্ছু বলা যায়না, রে ! ওখানে অনেক গ্যাঁড়াকল হয়। তুই আমি কি বুঝবো ?


আজ জয়েন্টের রেজাল্ট বেরিয়েছে । ওই কালো মেয়েটির ফটো সমেত ওর র‍্যাঙ্ক বেরিয়েছে । মেডিক্যাল এন্ট্রান্সে প্রথম হয়েছে । টিভি তে ইন্টারভ্যু নিচ্ছে প্রায় সব টিভি চ্যানেল। পরের দিন কাগজে ওর নাম সমেত ফটো দেখে আমি হতবাক ।

- সত্যি একেই বলে মেয়ে !

- আমার মেয়ে যদি কালো হত ক্ষতি নেই কিন্তু কি মেধা বলুন ?

- বাঃ খুব ভালো মেয়ে । 

সকলে এক বাক্যে বলছে, খুব পরিশ্রম করেছে নিশ্চয় !

- এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার ছেলে মেয়ের মধ্যে ও প্রথম হয়েছে । কম কথা ! 

- আসলে রূপের চেয়ে গুনটাই বড় । কারণ রূপ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু গুন .......? 

ওটা চিরস্থায়ী ।


আমার ওই মহিলা দুটির কথা আজও মনে আছে । আসলে পি এন পি সি করাই মানুষের স্বভাব।
0

অনুগল্প : শ্যামল সোম

Posted in



অনুগল্প


হাবুর বউ পিয়ালী পালিয়েছে
শ্যামল সোম



হাবুর খুবই মন খারাপ করে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আজ তিন হয়ে গেল, খায় না, শোয় না, কাজে যায় নি বেশ অনেক দিন হয়ে গেল, ভালো হাতের কাজ জানে -ওস্তাদ কারিগর, কারিগর কারখানার মালিক হাবুর কাজের নিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ রয়েছিল। বিশু বললে, তুই একটা গর্ধব, ভুল মেয়েকে ভালোবেসে ছিলি, আমরা সবাই কত করে বোঝাতাম, যে মেয়ে বিয়ের আগেই বলে দামী মোবাইল ফোন কিনে দাও, কোলকাতার মলে ঐ মেয়েকে নিয়ে গেলি কেনাকাটা করতে, তোকে হাবাগোবা পেয়ে, দুয়ে মুসে ছেড়েছে। শালা এর নাম প্রেম, ও সব প্রেম ভালোবাসায় অনেক হাঁপাতে হয় গুরু। ও সব ঝুট ঝামেলায় আমি নেই, আমার সোজা হিসাব, শালা ধর তক্তা মার পেরেক, পেরেক ঠুকে সরে পড়, তুই হাঁদারাম !

বসে বসে ভাবেছে হাবু এই বছর দুয়েক বহু হাবুডুবু খেয়ে, বহুত টাকা গচ্চা দিয়ে, এখন এই নির্জনে বন বাদারে, কখন শ্মশানে, ভূতের খাল পারে, একা একা ঘোরে, লুকিয়ে চোখের জল মুছে ফেলে, পাছে কেউ যদি দেখে।

পিয়ালীকে, বড় ভালোবেসে ফেলেছিল, উজ্জল শ্যাম বর্ণা, সরু কোমর, উন্নত স্তন, শরীরের সুবাদে হাবু মোহগ্রস্ত বদ্ধ উন্মাদের মত, পিয়ালীর- রূপ সাগরে ডুব দিতে গিয়ে নুনের পুতুল গেল গলে।

বিয়ের রাতে গা ভরা গয়না, আসমানী রঙের বেনারসী, নিজে পছন্দ করে কিনে ছিল, বিউটি পার্লারের, মেয়েটা আলাদা বেশী টাকা নিয়ে কী অপূর্ব সাজিয়ে ছিল।

আহাহা, হাবু শুভ দৃষ্টির সময় উন্মাদের মত ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে আছে! হাসির রোল উঠলো, নাপিত রসের ছড়া কাটছে, কি হল ? মালা বদল করবে কে? ও পাড়ার সে? অনেকেই পিয়ালীর এই ছিনালিকে রথতলা নন্দের সঙ্গে এখানে সেখানে বাইকে চোড়ে, হাওয়া হয়ে যেত।

হাবু, দু একবার সাঁই করে বেড়িয়ে যেতে দেখেছিল, আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করতে গলা জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে সে কী কান্না, মা মরা মেয়ে বাপ আবার বিয়ে করেছে, সৎমায়ের অভাবের সংসার, দুবেলা পেরে খেতে পায় না, দাদার মত নন্দদা শুনে ভালো হোটেলে খাওয়াল আবার এই দেখো ননী থেকে কী সুন্দর গয়নার সেট কিনে দিয়েছে ।

হাবু কোন সাধ অপূর্ণ রাখবে না বলে নিজের কেনা জমি বেচে, কারখানা বড়বাবু কে হাতে পায়ে ধরে নিজস্ব জমা মোটা টাকা খরচ করে বিয়ে করে তারপর কনে বউ সেজে এসে- হাবুর মা বৌদি, বোনকে জড়িয়ে ধরে কত আদিখ্যেত !

বিশুকে আড়ালে বলতে শুনলো " শালি ছেনাল মাগো! "
ফুল সজ্জা ভর দুপুরে একা মায়ের ঘরে ঘুমিয়ে স্বপন দেখছে দীঘায় পিয়ালীর সঙ্গে একসাথে স্নান করছে ! হঠাৎ হৈ চৈ চিৎকার, মায়ের আর্তনাদ, বৌদি বুকফাটা কান্না, ধুর চরে উঠে শুনে হতভম্ব, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু দু-বাড়ির গয়না, নূতন শাড়ীগুলো, বেনারসী নয়, বৌদির ও অন্তঃপুরের অনেকের গয়না, নিয়ে - " হাবুর বউ পিয়ালী পাইলেছে! " 

রাতে পুলিশ এলো, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পয়েজন স্প্রে করে ছিল সারা ঘরে ঘরে। একেই সবাই ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে, ঐ সুযোগে পগার পার, আবার হাবুর ভালোবাসার সংযোগে এ বাড়িতে অনেক বারই আসার জন্য সব নখ দর্পণ, নন্দ দার দাদাগিরি, থানা পুলিশের এ সব আর ভালো লাগে না।

তারপর একদিন খবর এলো বাড়ি থেকে গ্রামের থেকে - মায়ের কাছ হতে, সংসারে ছেড়ে, সমস্ত বন্ধন মুক্ত হয়ে, সংসারের মায়া কাটিয়ে, হারিয়ে যাওয়া হাবু কাশীর কেদার ঘাটে গেরুয়া ধারী সন্ন্যাসী স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ হয়ে গাইছেন ,
--- " মন লাগে মেরে ইয়ার, ফকিরী মে, 
জো সুখ পায়ও, রাম ভজন মে " !

নূতন এক অমূল্য জীবন এলো, অরূপ রতন পেলো হাবুল চন্দ্র ঘোষ।
3

অনুগল্প : পিয়ালী বসু

Posted in



অনুগল্প


দেখা
পিয়ালী বসু



ঢং ঢং ঢং ! চৌরঙ্গীর বোস এন্ড কোম্পানি থেকে বাবার কেনা দেওয়াল ঘড়িটা পেন্ডুলাম দুলিয়ে সময়টা জানিয়ে দেয় , দুপুর বারোটা !

ইস ! এত দেরি হয়ে গেছে ? তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায় মানালী , ভাত ঘুমের এই গড়িমসিটা কাটাতেই হবে তাকে 

আলমারি খুলে জামা কাপড় বাছতে থাকে সে , কি পরবে ? আজ তো বেশ গরম , তাহলে সাদা কুর্তি টা পরে নি ? সঙ্গে জিনস ? নিজের মনেই প্ল্যান কসতে থাকে মানালী । 

নাহহ ! আর দেরি করা চলবে না , রাজদীপ নিশ্চয়ই এতক্ষণে গোল পার্কের সি সি ডি র প্রায় কাছাকাছি । দেরি করা মোটেই পছন্দ করে না দীপ। 

অভ্যস্ত হাতে চুলে ব্রাশ চালাতে থাকে মানালী । “চুলটা কি খুলেই রাখবে ? না কি ? ঘামে ভিজে আবার কাঁধে লুটাবে না তো ? দীপ যদিও খোলা চুলেই তাকে দেখতে ভালবাসে , তবুও” ...

চুলটা খোলাই রাখে মানালী । কিন্তু ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় ব্যান্ডআনা টা , দুপুরের এই লু টা চুলের পক্ষে ভালো নয় মোটেই ।

সাদা কুর্তিটাই শেষমেশ পরে সে , গরমে সাদা রঙের জুড়ি মেলা ভার ।

Nothing gonna change my love for you... Bryan Adams এর গলায় মোবাইল বেজে ওঠে ।

“আর কতক্ষণ ? আমি তো গন্তব্য স্থলে দণ্ডায়মান ম্যাডাম” ।

“এইতো ! আর পাঁচ মিনিট , প্লিজ সোনা ! bare with me .” দীপ কে সামলে নেয় মানালী ।

রাজদীপের সঙ্গে মানালীর আলাপ প্রায় এক বছর । ভাবতে বসলে বেশ অবাক লাগে তার । কত তাড়াতাড়ি এই মন দেওয়া নেওয়ার পাট টা চুকিয়ে ফেলেছে তারা ।

অটো থেকে নেমে এগিয়ে যায় মানালী । “কই দীপ কে দেখা যাচ্ছে না তো” ?
ফোনটা বার করতে যায় ব্যাগ থেকে , একটা ফোন করে দেখবে কি ? রেগে গেল না তো ? বেশ টেনশনে পড়ে যায় সে ।

একবছরের মধ্যে আজ তাদের প্রথম দেখা । ফেসবুকের গণ্ডি ছাড়িয়ে ।
0

অনুগল্প: ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

Posted in



অনুগল্প 



ইন্দ্রধনু 
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



পারুল সবে +২ সাইন্স এ এ্যাডমিসন নিয়েছে । প্রথম দিন কলেজে সিনিয়র মেয়েরা র‍্যাগিং আরম্ভ করাতে খুব অস্বস্তি লাগছিল। মেয়েরা আবার র‍্যাগিং করে ! খুব শ্রুতিকটূ, তবুও মানতে বাধ্য, উপায় নেই । খুব ভাল পড়াশুনোয় না হলেও পারুল ফেলে দেওয়ার মত মেয়ে নয় । ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সি বি এস সি তে । 
সকালে প্রাক্টিকাল ক্লাসে যাওয়ার সময় ওদের পাডার ছেলে অনির্বাণের সঙ্গে দেখা । 
- এই অনির্বাণ দা শোন , বলে হাঁপাচ্ছিল পারুল । 
- কি বল ? 
- আমার সঙ্গে কলেজ অবধি যাবে ? 
- না যাওয়ার কি আছে ? আমিতো কলেজেই যাচ্ছি । 
- হ্যাঁ, জানি । তুমি কি সাইন্স নিয়েই পডছো অনির্বাণ দা ? 
- হ্যাঁ, পিওর সাইন্স । আমার ‘কম্প্যুটার’ ফোর্থ অপশনাল । 
- ও, তবে ত ভালোই, বল ! 
- কেন ? 
- আমিও ‘কম্প্যুটার’ ফোর্থ অপশনাল নিয়েছি । 
- হুঁ। ভালো করেছ। খাটুনি আছে। প্রোজেক্ট করতে হবে। পারবে তো ? একটু গুরু গম্ভীর ভাবে বলে। 
- পারতে হবে । না পারার কি আছে ! একটা কথা বলবো অনির্বাণ দা ! 
- বল । 
- আমার না ভয় করে সিনিয়রদের । 
- কিছু ভেবোনা আমি বলে দেব ওদের। ফাজিল ছেলে সব । 
- না না - শুধু ছেলেরা নয় মেয়েরাও আছে ওই মহৎ কাজে । কি করে সময় পায় ওরা ? আমার ভয় করে । তুমি যদি ওদের একটু বলে দিতে “তোমার বোন বলে”! 

অনির্বাণের ভুরু কুঁচকানো সহজেই অনুমেয় ! পারুলের চোখ এড়ালোনা । 
- ঠিক আছে । বলে দেব । 

এরমধ্যে কলেজ ক্যাম্পাস এসে যায় । পারুল দ্রুত বেগে এগোয় ক্লাসের দিকে ।
অনির্বাণ ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে পারুলের হাঁটার পথের দিকে । এটাই কি হয় সবার ! নিজেকে ছোট মনে হয় । ও হাঁটতে শুরু করে ক্লাসের দিকে !

ইন্দ্রধনুর সাত রঙ্গের কোন রংটা মনে লেগেছে বুঝতে পারে না অনির্বাণ । তবে কিছু একটা ঘটেছে । তাও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে । তবে রংটা টিকবে কিনা জানেনা !



0

অনুগল্প: মমতা দাস (ভট্টাচার্য)

Posted in




অনুগল্প




মন
মমতা দাস (ভট্টাচার্য)



সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। হাঁটা তো দূর, দাঁড়ান-ই কষ্টকর ! শোভা দত্ত, ... সুগৃহিনী, শিক্ষিতা, নীরব। বয়েস কালে অতি নিপূণ হাতে ঘর-বার দুদিক সামলেছে। স্বামী চাকরির খাতিরে প্রায়-ই টুরে থাকত। সংসারের সব দায় অতএব শোভার ছিল, ছেলে, সংসার, বাজার-হাট সব একা সামলাত হাসি মুখে, একটা কৃতজ্ঞসূচক শব্দ অবশ্য কখনো শোনেনি। যতদিন পেরেছে টেনেছে, এখন শরীর ছেড়ে দিয়েছে, বয়সের তুলনায় বুড়ো হয়ে গেছে, শরীর ভেঙ্গে গেছে, ...যেন মুক্তি চায় এবার !


স্বামী আর যুবক পুত্র হুইলচেয়ার –এ বসিয়ে নিয়ে এসেছে, এপোলো হাসপাতালে বড় ডাক্তারের কাছে। বাড়ির ডাক্তার, পাড়ার ডাক্তার, পাড়ার নার্সিংহোম, কাছের হাসপাতাল- সব ফেল, ধরতেই পারেনা কি হয়েছে ! অতএব শেষ ভারসা এপোলো। যথা সময়ে ডাক পড়ল। হুইল চেয়ার সমেত ওরা ভিতরে গেল। খুব ভালো করে চেকআপ করলে ডাক্তার। তারপর বসলেন পুরনো সব কাগজপত্র, MRI রিপোর্ট, x-ray রিপোর্ট নিয়ে। ভাল করে দেখে বললেন, ..."আপনি বাইরে বসুন, আমি এদের বুঝিয়ে দি কি কি করতে হবে, কেমন ?" ... তারপর ছেলেটিকে বললেন, “মাকে বাইরে বসিয়ে আবার এসো , কথা আছে। " 


ছেলে মা-র হুইলচেয়ার ঠেলে, মাকে বাইরে জায়গা মত বসিয়ে ফিরে এল। 


মুহূর্তে রাগে ফেটে পড়লেন ডাক্তার, ... "বাড়িতে যে এই মহিলা থাকেন জানেন আপনারা বাপ-ছেলে ? জানেন ওনার কি চাওয়া ? কি অনুভব ?" 


বাপ-ছেলে হতভম্ব, ডাক্তারের হঠাৎ রাগের মানেই বোঝেনা ! এ-ওর মুখ দেখে অবাক হয়ে। 


আবার মুখ খুলে রাগত স্বরে ডাক্তার বলেন ..."ওনার কিচ্ছু হয়নি জানেন ?" 


...কিচ্ছু হয়নি ? বাপ-ছেলে অবাক। ..."হয়নি ? মানে?"... 


"আর মানে" বিরক্তি ডাক্তারের ..."মানে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ। ওনার কোনো অসুখ নেই, সব ঠিক আছে"... 


বাপ ছেলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে ... "তাহলে এত ব্যাথা ?"... 


সব মানসিক, ঝটিতি জবাব ডাক্তারের,... "মানসিক ?"... 


আরো অবাক প্রশ্ন,... "কেন ?"... 


"কেন তার আমি কি জানি ? আপনাদের কাছে দাম পাননা, ভালবাসা পান না নিশ্চয়, তাই " ... 


"তার মানে ?" ... ছেলের আমতা আমতা প্রশ্ন, ... 


"মানে?" ... গর্জে ওঠেন ডাক্তার,... " মানে, তোমরা দেখোনা ওঁকে। মা কি খায়, কখন খায়, আদৌ খায় কিনা, জিগ্গেস করেছ কখনো? মার মনে কি আছে জানতে চেয়েছ ? বসেছ মা-র কাছে দুদন্ড, গল্প করেছ? নিজেকে নিয়েই তো মত্ত সবাই সারাদিন। আরেক জন মানুষ যে আছে, সে খেয়াল থাকে ?" .. .কথা থামিয়ে রাগে ফুলতে থাকেন, ... 


"না তা নয়, তবে কোনো অসুখ না থাকলে এত কষ্ট, হাঁটতে পারেনা, সেটা " ... হাল ধরার চেষ্টা করে বাবা। 


এবার ডাক্তারের রাগের ঝাপটা আছড়ে পড়ে বাপের উপরে, ... "আপনি কোনো কথা বলবেননা। চেয়ে দেখেছেন কখনো ঘরের মানুষটার দিকে? জানতে চেয়েছেন সে কি চায়, কি ভালবাসে ? ছেলেকে শিখিয়েছেন মাকে ভালবাসতে, মা-র মন বুঝতে ? আসল দোষীতো আপনি। সারা জীবন যে মানুষটা নিজেকে মুছে দিয়ে, শুধু আপনাদের খুশির কথা ভাবলেন, আপনাদের সুখের ব্যবস্থা করলেন, তার খোঁজ নিয়েছেন কোনদিন ?" একটু থামেন, তারপর ... "একদিন বাইরে নিয়ে গেছেন খাওয়াতে? সিনেমা দেখিয়েছেন ? কিনে দিয়েছেন কোনো শখের জিনিস ? ওনার কিচ্ছু হয়নি। আমার কোনো চিকিৎসার ওনার দরকার নেই। এই বয়সে এসে ওনার মন আর পারছেনা। চাইছে একটু যত্ন, একটু খেয়াল, আর অনেক ভালবাসা। ওটাই ওঁর চিকিৎসা। ওঁকে কিছু বলার দরকার নেই, আমি কালসিয়াম আর ভিটামিন লিখে দিচ্ছি, আর একটা সিম্পল MRI করতে দিচ্ছি। কিন্তু আসল দায়িত্ব আপনাদের। যদি পারেন ঠিক মত, উনি সেরে যাবেন, নইলে শুধু মনের অসুখে উনি শয্যাসায়ী হয়ে পড়বেন।" ... অনেক কথা বলে থামেন ডাক্তার। নিস্তব্ধ ঘর, বাপ-ছেলে লজ্জিত, দু:খিত, মাথা নিচু করে বসে থাকে স্তব্ধ হয়ে!
0

অনুগল্প: তাপসকিরণ রায়

Posted in






অনুগল্প



ফেসবুক নামা 
তাপসকিরণ রায়


চাইছি তোমার বন্ধুতা - সুনন্দার ফেসবুকের ইনবক্সে এমনটা লিখে দিয়ে ছিলেন রমাকান্ত। চেনা জানার প্রয়োজন নেই - চেহারাই যথেষ্ট। দেখতে টেকতে বেশ, বয়স একটু বেশী লাগলেও চৌকস চেহারা, যাকে বলে সাড়া জাগানো ভাবের মাঝে গাম্ভীর্য ভাব লুকানো। তার ওপর সাজ সজ্জা চেহারা ছবির পোশাকের ভেতর দিয়ে কেমন একটা আকর্ষণ-বিকর্ষণ ভাব ধরে রাখা! 


সুনন্দার তরফ থেকে প্রথমে ফ্রেন্ড হবার অপশন এলো। রমাকান্ত ওর টাইম লাইন দেখে নিলেন। ওর নিজের পোস্টিং-এ কথাও বাংলা অক্ষর নেই - বাংলিশে লেখা। কিছু কবিতা সৃষ্ট হয়েছে সেখানে - বেশ প্রেম প্রেম বসন্ত পলাশের নেশা লাগানোর মতই মনে হয়েছে। 


টুক করে বন্ধুত্ব একসেপ্ট করে নলেন রমাকান্ত। তারপর, ঐ সাহস করে ইনবক্সে লিখে দিলেন,চাইছি তোমার বন্ধুতা -


ওই আকর্ষণ বিকর্ষণের টানাপড়েনে উচিত অনুচিত ভুলে বন্ধুত্বের টোপ ফেলে বসে আছেন রমাকান্ত। মিনিট পাঁচ ধৈর্য ধরার পর ফাতনা নড়ে উঠলো, সুনন্দার উত্তর, বন্ধু তো হয়েই গেলাম - আবার আলাদা করে বন্ধুতা চাইছেন কেন ? এত দূরত্বে থেকে আর কি ভাবনা থাকতে পারে ? 


ওরে বাস, গিলে ফেলেছে কি টোপ ? রমাকান্ত লিখলেন, না, মানে একটু কথা—একটু গল্প -


খানিকক্ষণ পরে সুনন্দার বার্তা এলো, হ্যাঁ তার বেশী নয় - এত দূরে থেকে ছোঁয়াছুঁয়ি ভাবনা তো থাকতে পারে না-- 


- এঁ - একেবারে গপাত, গিলে ফেলেছে নাকি টোপ! তবু ভাষায় ভদ্রতার লেয়ার চড়িয়ে রমাকান্ত লিখলেন - ওই আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ে যদি মন্তব্য করেন -


- ও, অবশ্যই, আপনি পাঠান -


- আমার টাইম লাইনে গিয়ে পড়তে পারেন -


সুনন্দা - ঠিক আছে...


সে দিনের মত সব চুপচাপ। উভয় পক্ষই হয়ত ভেবেছে, না একদিনে বেশী এগোনো সমীচীন হবে না। 


পরদিন রমাকান্ত ফেসবুক খুলে নিজের টাইম লাইন দেখলেন, তাঁর অনেকগুলি লেখাতেই সুনন্দার লাইক পড়েছে--কোথাও কোথাও উচ্ছ্বসিত মন্তব্যও। তার মানে তুরন্ত একশন ! সুনন্দার উপস্থিতি সূচিত হচ্ছিল ফেসবুকের বার লাইনে। রমাকান্ত চুপ থাকতে পারলেন না, লিখে ফেললেন এক প্রেমের কবিতা—


তিলোত্তমা 


একগুচ্ছ কবিতার মাঝে তুমি নেই এমনটা ভাবতে পারি না -
অক্ষর সাজাবার মাঝে ক্ষণকাল থেমে থাকা কলমের বিন্দুতে দেখি তুমি,
তুমি তিলোত্তমা ! 
একগুচ্ছ কবিতার মাঝে তুমি ছুঁয়ে আছো—
তুমি যদি নেই - বাসন্তিক ভাবনা নেই,
তুমি নেই, পলাশ নেই,
তুমি নেই বৈশাখী ঝড়ে তোমার আলুথালু চুলের মাঝে সে ভাবনালোক নেই,
তুমি আছো - কলম থেমেছে তাই বিন্দু তিলোত্তমায় ।


- আর সুনন্দার ইনবক্সে পোস্ট করে দিলেন। 


মিনিট পাঁচ পরেই মন্তব্য এলো--খুব সুন্দর হয়েছে--


আরও একটু সাহস যুগিয়ে রমাকান্ত লিখলেন, আসুন না, চা খাই - আপনার পাশটিতে বসে -


সাথে সাথে উত্তর এলো - বসলাম...


- আমিও চায়ে চুমুক দিচ্ছি—রমাকান্ত উচ্ছল হলেন। 


- আমায় চা দেবেন না? সুনন্দার বার্তা। 


- চা না দিয়ে যদি চুমুক দিই? 


- হা-হা-হা—সুনন্দার হাসির উচ্ছ্বাস। 


এবার সামান্য নীরবতা। 


- আচ্ছা জানতে পারিনি - আপনি কি বিবাহিত? সুনন্দার প্রশ্ন। 


ইতস্তত করে সত্যিটাই বললেন রমাকান্ত, হ্যাঁ, বিবাহিত...


- আচ্ছা - যেন সুনন্দার একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে এলো ইথার তরঙ্গে...


- আগের উত্সাহ নিয়ে রমাকান্ত লিখলেন, এসো এবার তোমায় চুমুক দিই...


অন্যদিক স্তব্ধ...


- শুনছেন?


তরঙ্গহীন শান্ততা । 


উৎকণ্ঠিত রমাকান্ত, কি হল—শুনছেন ?


কোন উত্তর নেই সুনন্দার। রমাকান্ত তাকালেন উপস্থিতি সূচক ইনডেক্স বারের দিকে - না, সুনন্দার নামের পাশে গ্রিন স্পট নেই...