অনুগল্প: তাপসকিরণ রায়
Posted in অনুগল্প
অনুগল্প
ফেসবুক নামা
তাপসকিরণ রায়
চাইছি তোমার বন্ধুতা - সুনন্দার ফেসবুকের ইনবক্সে এমনটা লিখে দিয়ে ছিলেন রমাকান্ত। চেনা জানার প্রয়োজন নেই - চেহারাই যথেষ্ট। দেখতে টেকতে বেশ, বয়স একটু বেশী লাগলেও চৌকস চেহারা, যাকে বলে সাড়া জাগানো ভাবের মাঝে গাম্ভীর্য ভাব লুকানো। তার ওপর সাজ সজ্জা চেহারা ছবির পোশাকের ভেতর দিয়ে কেমন একটা আকর্ষণ-বিকর্ষণ ভাব ধরে রাখা!
সুনন্দার তরফ থেকে প্রথমে ফ্রেন্ড হবার অপশন এলো। রমাকান্ত ওর টাইম লাইন দেখে নিলেন। ওর নিজের পোস্টিং-এ কথাও বাংলা অক্ষর নেই - বাংলিশে লেখা। কিছু কবিতা সৃষ্ট হয়েছে সেখানে - বেশ প্রেম প্রেম বসন্ত পলাশের নেশা লাগানোর মতই মনে হয়েছে।
টুক করে বন্ধুত্ব একসেপ্ট করে নলেন রমাকান্ত। তারপর, ঐ সাহস করে ইনবক্সে লিখে দিলেন,চাইছি তোমার বন্ধুতা -
ওই আকর্ষণ বিকর্ষণের টানাপড়েনে উচিত অনুচিত ভুলে বন্ধুত্বের টোপ ফেলে বসে আছেন রমাকান্ত। মিনিট পাঁচ ধৈর্য ধরার পর ফাতনা নড়ে উঠলো, সুনন্দার উত্তর, বন্ধু তো হয়েই গেলাম - আবার আলাদা করে বন্ধুতা চাইছেন কেন ? এত দূরত্বে থেকে আর কি ভাবনা থাকতে পারে ?
ওরে বাস, গিলে ফেলেছে কি টোপ ? রমাকান্ত লিখলেন, না, মানে একটু কথা—একটু গল্প -
খানিকক্ষণ পরে সুনন্দার বার্তা এলো, হ্যাঁ তার বেশী নয় - এত দূরে থেকে ছোঁয়াছুঁয়ি ভাবনা তো থাকতে পারে না--
- এঁ - একেবারে গপাত, গিলে ফেলেছে নাকি টোপ! তবু ভাষায় ভদ্রতার লেয়ার চড়িয়ে রমাকান্ত লিখলেন - ওই আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ে যদি মন্তব্য করেন -
- ও, অবশ্যই, আপনি পাঠান -
- আমার টাইম লাইনে গিয়ে পড়তে পারেন -
সুনন্দা - ঠিক আছে...
সে দিনের মত সব চুপচাপ। উভয় পক্ষই হয়ত ভেবেছে, না একদিনে বেশী এগোনো সমীচীন হবে না।
পরদিন রমাকান্ত ফেসবুক খুলে নিজের টাইম লাইন দেখলেন, তাঁর অনেকগুলি লেখাতেই সুনন্দার লাইক পড়েছে--কোথাও কোথাও উচ্ছ্বসিত মন্তব্যও। তার মানে তুরন্ত একশন ! সুনন্দার উপস্থিতি সূচিত হচ্ছিল ফেসবুকের বার লাইনে। রমাকান্ত চুপ থাকতে পারলেন না, লিখে ফেললেন এক প্রেমের কবিতা—
তিলোত্তমা
একগুচ্ছ কবিতার মাঝে তুমি নেই এমনটা ভাবতে পারি না -
অক্ষর সাজাবার মাঝে ক্ষণকাল থেমে থাকা কলমের বিন্দুতে দেখি তুমি,
তুমি তিলোত্তমা !
একগুচ্ছ কবিতার মাঝে তুমি ছুঁয়ে আছো—
তুমি যদি নেই - বাসন্তিক ভাবনা নেই,
তুমি নেই, পলাশ নেই,
তুমি নেই বৈশাখী ঝড়ে তোমার আলুথালু চুলের মাঝে সে ভাবনালোক নেই,
তুমি আছো - কলম থেমেছে তাই বিন্দু তিলোত্তমায় ।
- আর সুনন্দার ইনবক্সে পোস্ট করে দিলেন।
মিনিট পাঁচ পরেই মন্তব্য এলো--খুব সুন্দর হয়েছে--
আরও একটু সাহস যুগিয়ে রমাকান্ত লিখলেন, আসুন না, চা খাই - আপনার পাশটিতে বসে -
সাথে সাথে উত্তর এলো - বসলাম...
- আমিও চায়ে চুমুক দিচ্ছি—রমাকান্ত উচ্ছল হলেন।
- আমায় চা দেবেন না? সুনন্দার বার্তা।
- চা না দিয়ে যদি চুমুক দিই?
- হা-হা-হা—সুনন্দার হাসির উচ্ছ্বাস।
এবার সামান্য নীরবতা।
- আচ্ছা জানতে পারিনি - আপনি কি বিবাহিত? সুনন্দার প্রশ্ন।
ইতস্তত করে সত্যিটাই বললেন রমাকান্ত, হ্যাঁ, বিবাহিত...
- আচ্ছা - যেন সুনন্দার একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে এলো ইথার তরঙ্গে...
- আগের উত্সাহ নিয়ে রমাকান্ত লিখলেন, এসো এবার তোমায় চুমুক দিই...
অন্যদিক স্তব্ধ...
- শুনছেন?
তরঙ্গহীন শান্ততা ।
উৎকণ্ঠিত রমাকান্ত, কি হল—শুনছেন ?
কোন উত্তর নেই সুনন্দার। রমাকান্ত তাকালেন উপস্থিতি সূচক ইনডেক্স বারের দিকে - না, সুনন্দার নামের পাশে গ্রিন স্পট নেই...
0 comments: