দীর্ঘ কবিতা - পল্লববরন পাল
Posted in দীর্ঘ কবিতা১
দেশ জুড়ে তখন লক্ষ খোকার না-কাগজ হল্লাবোল
পাহাড় থেকে সাগর, কচ্ছ থেকে চেরাপুঞ্জি
না দেখানো সেই সব কাগজেরা আধারকার্ড ঠোঁটে
পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে এ আকাশ থেকে ও আকাশে
নৌকোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে এ জল থেকে ও জলে
বিশ্ববিদ্যালয় উঠোন থেকে অজ এপাড়া থেকে ওপাড়ায়
খোকা ঘুমোয়নি, পাড়া জুড়োয়নি
কিন্তু থালা-ক্যানেস্তারা বাজাতে বাজাতে
ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মতো ড্যাঙডেঙিয়ে
ঠিক তখনই
বর্গি এলো দেশে
সেই থেকে সমস্ত কাগজের গুষ্টির ইয়ে
সেই থেকে চব্বিশ-গুন-সাত আমি-তুমি আর তুমি-আমি
সেই থেকে আলুর ছেলের সঙ্গে পিঁয়াজের ননদের ইন্টুবিন্টু
কাতলা মুরগি আর ভদকা হেঁটে হেঁটে সদর দরজায় টিংটং
এ ঘর থেকে ডাইনিং পেরিয়ে ও ঘর – এইটুকু মুখস্থ পথে
মাঝেমাঝেই মুখোমুখি মনখারাপের সঙ্গে মনভালোর -
আকৈশোর বন্ধু – দেখা হলে তাই দু’হাত বাড়িয়ে দুই যিশু
আষ্টেপৃষ্ঠে এ-ওর বুকে জড়াতে চায় – অমনি ঘন্টা বাজে
আর্তনাদ করে ওঠে অন্তর্যামী –
তফাৎ যাও
অন্তত ছ’ফুট
ইচ্ছে হলো, বলি –
এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ – কিন্তু এই কথাটায়
পরিভাষাগত ভুল – অনাপোশী - নইলে বলাই যেতো -
উপত্যকা – এ শব্দের মানে
দুই পাহাড়ের মাঝে ক্ষুদ্র
এক চিলতে রোমান্টিক অবসরভূমি মাত্র
আমার স্বদেশ সাড়ে বারো লক্ষ বর্গ মাইল –
এখানে মৃত্যু মানে হাজার হাজার চাষী
কাজ হারানো উপবাসী শ্রমিক
এখানে মৃত্যু মানে মাণিক ব্যানার্জি থেকে গৌরী লঙ্কেশ
এখানে মৃত্যু মানে কামদুনি নির্ভয়া থেকে হাথরস
সকল দেশের সেরা সপ্তম বৃহত্তম মারণ শিবির
সোজা বাঙলায় যাকে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প বলে -
হলোকাস্ট উৎসবে তালাবন্ধ কাগজ-ফাগজ
এখন আমার সারাদিনে একমাত্র নিয়মিত কাজ
পরিযায়ী হাহাকার সুরে গুনগুন মৃত্যু সংখ্যা গোনা
সকালে ঘুম থেকে উঠে লেবু-মধু আঁতাতী শরবত
রাত্রে শোবার আগে আলজিভে দুই ফোঁটা গোরুর পেচ্ছাপ
সামাজিক দূরত্ব মেপে আত্মনির্ভর সুখী সঙ্গম অভ্যেস
মুখবই জানলায় নাচা-গানা-রেসিপির দীর্ঘ কার্নিভাল
ব্যাস! বিন্দাস আছি
রাষ্ট্রও বিন্দাস –
চুপিসাড়ে ঘটিবাটি বেচেবুচে ঝাড়া-হাত দিগম্বর
রমণীর গর্ভগৃহে অনৈতিক আগ্রাসী প্রাতরাশ সেরে
মন্দিরের গর্ভগৃহে পুষ্পচন্দনধূপ ভক্তি-গদগদ
রামনাম ‘সাত্যিয়া’ হ্যায়
এই সূত্রে বলে রাখি
সততার ভাইরাস ঝড়ে ‘সত্য’টত্য হয় উড়ে গেছে
নচেৎ সে ‘সত্য’ আজ শৈত্যভয়ে সিক্ত শিরদাঁড়া –
পাছে রেপকেস কিম্বা উগ্রপন্থী শিরোপায় সম্মানিত হয়
সেই ‘সাত্যিয়া’ - যা রচিব আমি,
ঘটে যা তা দেশদ্রোহ শুধু
চোখ বুঁজে ঈশ্বরের মতো আমাকেই বিশ্বাস করবে
মেরে প্যারে ভোটার্কার্ডগণ,
সুতরাং চোখমুখ বুঁজেই থাকুন
খুললেই শুদুমুদু একুশেআইনের প্রহসন ব্যাগাডুলি –
রাষ্ট্রের ফালতু খরচ
২
এখন কোথায় রাখি খুনসুটে দুঃখ পসার
কুলুঙ্গিতে সুখী লেপ পশমের মুদ্রাভীড় জ্যাম
দেয়ালে তৈলচিত্র ঠাণ্ডাবাক্স মেঝে-কার্পেট
বিছানায় ঘুমবৌ অন্যঘরে ছেলে এমবিএ
এই রাত্রি উপন্যাসে অন্ধকার অক্ষরের ফাঁকে
তবু জ্বলে ইতস্তত অবিমৃশ্য দুঃখজোনাকি
ছুঁয়ে যায় অশরীরী যথাসাধ্য আমার শরীর
আয়নায় মুহুর্মুহু দন্তরাক্ষস হাহাহিহি
ধূসর আদর ছোঁড়ে কৃতাঞ্জলী হরির বাতাসা
হামাগুড়ে তুলে রাখি – টেবিলে পাহাড় বেড়ে চলে
মৃত্যু বাড়ে, সংখ্যাতত্ত্ব, লাশপোড়া মধ্যরাত হাঁটে
নিঃশব্দে চুপিচুপি – হলোকাস্টে বাম্পার বোনাস
আমাদের মাথা থেকে গজগজে কাগজ হাপিশ
জানিনা সেখানে কবে মন্দিরের ভিতপুজো হলো
আমারই অজ্ঞাতে আমি আয়না ভাঙি, আদরের ঘুষ
ঠোঁট চেটেপুটে খাই, কার্পেটে আদরের গুঁড়ো
টুকি খেলে, তন্নতন্ন নক্ষত্র খুঁটি উবুদেহে
উজবুক উন্মাদের মতো – সব মিথ্যা আশপাশে
মুদ্রাওম পরিবার ইতিহাস ভবিষ্যৎ - সব
মহেঞ্জোদারোর সুর ভেসে আসে হার্মোনিয়মে
ব্রাহ্মীলিপির ধুলো মাকড়শার কঙ্কালডানায়
শিকনির মতো ঝোলে – ঝুলে থাকে শ্বাস-নাক থেকে
নতুন সংজ্ঞা সেজে দেশপ্রেম হেঁটে গেলে পর
প্রিয় ধূপধুনোগন্ধে আনন্দ বসন্ত সমাগমে
শুধু আদরের গুঁড়ো বাতাসের সঙ্গে বাঁধে জোট
শহর গুঁড়িয়ে যায় অলৌকিক গুঁড়ো প্রতিবেশে
৩
আমার কন্ঠ তুমি এ মুহূর্তে স্তব্ধ করতে পারো
হে সম্রাট, বলছি আবারো
যতোই আদর করো আরো
যতোই সন্ত্রাস হোক গাঢ়
বিনির্মিত এই অন্ধকার
বাপের সম্পত্তি নয় কারো
তোমার চিৎকার বাড়ে হিংস্র নখর ডেসিবেলে
অবাস্তব প্রোপাগাণ্ডা গাণ্ডেপিণ্ডে জড়িবুটি খেলে
ওপক্ষ নির্বোধ – এই ভাবনাও খেলারই নিয়মে
হারজিত ঘামপুষ্প ফুটে ওঠে চামড়ার লোমে
জানি
তোমার চামড়া খুব পুরু
যতোই কুঁচকে থাকো ভুরু
পাশা ঠিক ওল্টাবে
আবার সকাল হবে শুরু
দাঁড়াও দেখাচ্ছি তবে মজা
থালা তালি ছন্দে লয়ে
হে শাসক, শুনতে পাচ্ছো
মুহুর্মুহু ধাক্কাহত কম্পমান বন্ধ দরোজা?
অন্যপার ছত্রভঙ্গ লণ্ডভণ্ড জন্মকাগজ
মুখোশে ঢেকেছে সব অনুভূতি, নিরেট মগজ
জেলবন্দী অসহায় মানুষ-মানুষী মুখোমুখি
হাসি ক্রোধ একাকার – রাষ্ট্রের পক্ষে বড়ো ঝুঁকি!
মুখোশিত মুখ, তবু কেন এতো ধাক্কাধাক্কি?
না দেখানো কাগজের অসমাপ্ত ক্রোধ ও রাগ কি?
রাষ্ট্রের সিংদরজায়
দুমদুম কারা ধাক্কায়?
ধর্মে সইবে না হে রাষ্ট্রের সঙ্গে এ চালাকি
খোলা শুধু দুটো চোখ – তাও বন্ধ হোক
চাস নাকি?
তুলিস না আর মাথা –
বেঁটে হ
কোবিদ ধর্ম ছলে
রাষ্ট্রেরই কৌশলে
বিরোধী কন্ঠ সব
২
এখন কোথায় রাখি খুনসুটে দুঃখ পসার
কুলুঙ্গিতে সুখী লেপ পশমের মুদ্রাভীড় জ্যাম
দেয়ালে তৈলচিত্র ঠাণ্ডাবাক্স মেঝে-কার্পেট
বিছানায় ঘুমবৌ অন্যঘরে ছেলে এমবিএ
এই রাত্রি উপন্যাসে অন্ধকার অক্ষরের ফাঁকে
তবু জ্বলে ইতস্তত অবিমৃশ্য দুঃখজোনাকি
ছুঁয়ে যায় অশরীরী যথাসাধ্য আমার শরীর
আয়নায় মুহুর্মুহু দন্তরাক্ষস হাহাহিহি
ধূসর আদর ছোঁড়ে কৃতাঞ্জলী হরির বাতাসা
হামাগুড়ে তুলে রাখি – টেবিলে পাহাড় বেড়ে চলে
মৃত্যু বাড়ে, সংখ্যাতত্ত্ব, লাশপোড়া মধ্যরাত হাঁটে
নিঃশব্দে চুপিচুপি – হলোকাস্টে বাম্পার বোনাস
আমাদের মাথা থেকে গজগজে কাগজ হাপিশ
জানিনা সেখানে কবে মন্দিরের ভিতপুজো হলো
আমারই অজ্ঞাতে আমি আয়না ভাঙি, আদরের ঘুষ
ঠোঁট চেটেপুটে খাই, কার্পেটে আদরের গুঁড়ো
টুকি খেলে, তন্নতন্ন নক্ষত্র খুঁটি উবুদেহে
উজবুক উন্মাদের মতো – সব মিথ্যা আশপাশে
মুদ্রাওম পরিবার ইতিহাস ভবিষ্যৎ - সব
মহেঞ্জোদারোর সুর ভেসে আসে হার্মোনিয়মে
ব্রাহ্মীলিপির ধুলো মাকড়শার কঙ্কালডানায়
শিকনির মতো ঝোলে – ঝুলে থাকে শ্বাস-নাক থেকে
নতুন সংজ্ঞা সেজে দেশপ্রেম হেঁটে গেলে পর
প্রিয় ধূপধুনোগন্ধে আনন্দ বসন্ত সমাগমে
শুধু আদরের গুঁড়ো বাতাসের সঙ্গে বাঁধে জোট
শহর গুঁড়িয়ে যায় অলৌকিক গুঁড়ো প্রতিবেশে
৩
আমার কন্ঠ তুমি এ মুহূর্তে স্তব্ধ করতে পারো
হে সম্রাট, বলছি আবারো
যতোই আদর করো আরো
যতোই সন্ত্রাস হোক গাঢ়
বিনির্মিত এই অন্ধকার
বাপের সম্পত্তি নয় কারো
তোমার চিৎকার বাড়ে হিংস্র নখর ডেসিবেলে
অবাস্তব প্রোপাগাণ্ডা গাণ্ডেপিণ্ডে জড়িবুটি খেলে
ওপক্ষ নির্বোধ – এই ভাবনাও খেলারই নিয়মে
হারজিত ঘামপুষ্প ফুটে ওঠে চামড়ার লোমে
জানি
তোমার চামড়া খুব পুরু
যতোই কুঁচকে থাকো ভুরু
পাশা ঠিক ওল্টাবে
আবার সকাল হবে শুরু
দাঁড়াও দেখাচ্ছি তবে মজা
থালা তালি ছন্দে লয়ে
হে শাসক, শুনতে পাচ্ছো
মুহুর্মুহু ধাক্কাহত কম্পমান বন্ধ দরোজা?
অন্যপার ছত্রভঙ্গ লণ্ডভণ্ড জন্মকাগজ
মুখোশে ঢেকেছে সব অনুভূতি, নিরেট মগজ
জেলবন্দী অসহায় মানুষ-মানুষী মুখোমুখি
হাসি ক্রোধ একাকার – রাষ্ট্রের পক্ষে বড়ো ঝুঁকি!
মুখোশিত মুখ, তবু কেন এতো ধাক্কাধাক্কি?
না দেখানো কাগজের অসমাপ্ত ক্রোধ ও রাগ কি?
রাষ্ট্রের সিংদরজায়
দুমদুম কারা ধাক্কায়?
ধর্মে সইবে না হে রাষ্ট্রের সঙ্গে এ চালাকি
খোলা শুধু দুটো চোখ – তাও বন্ধ হোক
চাস নাকি?
তুলিস না আর মাথা –
বেঁটে হ
কোবিদ ধর্ম ছলে
রাষ্ট্রেরই কৌশলে
বিরোধী কন্ঠ সব
ঘেঁটে ঘ
৪
আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে হাতে তুলে নাও পুষ্পপ্রস্তাব
একমাত্র ফুল দেখে এযাবৎ মানবেতিহাসে
জাগেনি কখনো হত্যা রক্ত লাশ ধ্বংসবাসনা
পুষ্পবর্ণে কোনোদিন জাতপাত দ্বন্দ্ব জাগেনি
ফুলের ধর্ম কি কি? – এর উত্তরে এযাবৎ
রে রে দাঙ্গা, খুনোখুনি, তরোয়াল নয়তো ত্রিশূল
মুণ্ডু নিয়ে লোফালুফি, স্তন কেটে নৌকোবিহার,
যোনি খুবলে মদমত্ত পাণিত্রাসে পিকনিক
ভুলেও ভেবেছে কেউ দুঃস্বপ্নে আগে কোনোদিন?
বরং ফুলের ঘায়ে মূর্ছা গেছে পাপতাপবোধ
একদা কী পবিত্র ছিলো ধর্ম এবং রাজনীতি
ফুলের ঠিকানা ছিলো উপাসনা নৈবেদ্যডালি
মন্ত্রোচ্চারণকালে ছুঁয়ে থাকতো কপাল ও বুক
ফুলের গন্ধে ছিলো সম্প্রীতির নরম ঠিকানা
যেন সাত সমুদ্দুর এক শ্বাসে বুক বারান্দায়
আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে তাই হাতে নাও পুষ্পপ্রস্তাব
এ পথেই একমাত্র মানুষের ক্রমমুক্তি হবে
ফুল ও ফুলকি এই দ্বন্দ্ব সমাস ব্যকরণে
কারক-বিভক্তি নয়, ভক্তিহীন শ্লেষ অলঙ্কার
মন্ত্র ছিলো – ভালো হোক শ্রেণীহীন সব মানুষের
৫
যারা ভেবেছিলো শ্রেণীহীন হলে বাজিমাত
যারা রেখেছিলো কাঁধে কাঁধ আর হাতে হাত
যারা বিশ্বাস করেছিলো - শুধু বিপ্লব
পারে সমস্যা সমাধান করে দিতে সব -
দেয়ালে দেয়ালে দুনিয়ার সব মজদুর
এক হও – লিখে লাল গান আর লাল সুর
মিছিলে হেঁটেছে - তারা আজ শত টুকরোয়
ভেঙে চুরমার - নিজেরা এ ওকে ঠুকরোয়
শ্রেণীহীন সেই সমাজ গড়ার ইচ্ছে
এখন নিজের ইসিজি রিডিং নিচ্ছে
মুলতুবি থাক ক্লাশ-স্ট্রাগলের দ্বন্দ্ব
আমরা-ওরার সুক্ষ্ম বিচার গন্ধ
এখন সময় হুঙ্কার তোলা কোরাসে
অ্যাসিড-বৃষ্টি মূত্রের ফস- ফোরাসে
বিভাজনপ্রিয় ধর্মের হোক শুদ্ধি
সত্যিকারের মানবধর্মে বুদ্ধি
সংহত হোক - ধ্বংসের থেকে মুক্তি
আসুক। তখন তক্ক গপ্পো যুক্তি
৬
একটা বারান্দা শুধু নাঘর নাঘাট রয়ে গেলো
কারণ সে পরিযায়ী, উপেক্ষিত ক্যান্টিলিভার
কাঠামো দাক্ষিণ্যে বাঁচে - যেমন দলিত এ সমাজে
অতএব ভারি পর্দা, এসি ঠাণ্ডা, নকশি জাজিম
এবং মাংসভাত, দিবানিদ্রা, টিভি সিরিয়াল
এ সবের যোগ্য নয় – নিষেধ নিষেধ
আমরা ঘরের মধ্যে লকডাউন লুডো সহবাসী
আমরা উচ্চবর্ণ ঘরে ফিরি রাষ্ট্রের বিমানে
এসসি-এসটি তুমি – যাও রোদে পোড়ো, আর হাঁটো
বুকে কইমৎস জান, জানি মরবে না
ভেঙেচুরে পড়বে না ক্যান্টিলিভার
কারণ সে রোদে জলে পুড়ে ভিজে
নিজ শ্বাস নিজ শ্রমে উপার্জন করে
আকাশের কাছে শেখে মহত্তর যাপন সংগ্রাম
দূরের সমুদ্রের কাছে গর্জনের সারেগামা শিখে
কোনো এক আশ্চর্য সকালে
সমুদ্র আর আকাশের দ্বৈত নীল যেখানে মিশেছে
দিকচক্রবাকের মুখোমুখি
নতজানু হয়ে বসে, বলে – ক্ষমা কোরো
কাগজ আমরা দেখাবো না
হে দিগন্ত, তোমার উজাড় নীলে
আমাকে নীলকন্ঠ করো
৪
আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে হাতে তুলে নাও পুষ্পপ্রস্তাব
একমাত্র ফুল দেখে এযাবৎ মানবেতিহাসে
জাগেনি কখনো হত্যা রক্ত লাশ ধ্বংসবাসনা
পুষ্পবর্ণে কোনোদিন জাতপাত দ্বন্দ্ব জাগেনি
ফুলের ধর্ম কি কি? – এর উত্তরে এযাবৎ
রে রে দাঙ্গা, খুনোখুনি, তরোয়াল নয়তো ত্রিশূল
মুণ্ডু নিয়ে লোফালুফি, স্তন কেটে নৌকোবিহার,
যোনি খুবলে মদমত্ত পাণিত্রাসে পিকনিক
ভুলেও ভেবেছে কেউ দুঃস্বপ্নে আগে কোনোদিন?
বরং ফুলের ঘায়ে মূর্ছা গেছে পাপতাপবোধ
একদা কী পবিত্র ছিলো ধর্ম এবং রাজনীতি
ফুলের ঠিকানা ছিলো উপাসনা নৈবেদ্যডালি
মন্ত্রোচ্চারণকালে ছুঁয়ে থাকতো কপাল ও বুক
ফুলের গন্ধে ছিলো সম্প্রীতির নরম ঠিকানা
যেন সাত সমুদ্দুর এক শ্বাসে বুক বারান্দায়
আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে তাই হাতে নাও পুষ্পপ্রস্তাব
এ পথেই একমাত্র মানুষের ক্রমমুক্তি হবে
ফুল ও ফুলকি এই দ্বন্দ্ব সমাস ব্যকরণে
কারক-বিভক্তি নয়, ভক্তিহীন শ্লেষ অলঙ্কার
মন্ত্র ছিলো – ভালো হোক শ্রেণীহীন সব মানুষের
৫
যারা ভেবেছিলো শ্রেণীহীন হলে বাজিমাত
যারা রেখেছিলো কাঁধে কাঁধ আর হাতে হাত
যারা বিশ্বাস করেছিলো - শুধু বিপ্লব
পারে সমস্যা সমাধান করে দিতে সব -
দেয়ালে দেয়ালে দুনিয়ার সব মজদুর
এক হও – লিখে লাল গান আর লাল সুর
মিছিলে হেঁটেছে - তারা আজ শত টুকরোয়
ভেঙে চুরমার - নিজেরা এ ওকে ঠুকরোয়
শ্রেণীহীন সেই সমাজ গড়ার ইচ্ছে
এখন নিজের ইসিজি রিডিং নিচ্ছে
মুলতুবি থাক ক্লাশ-স্ট্রাগলের দ্বন্দ্ব
আমরা-ওরার সুক্ষ্ম বিচার গন্ধ
এখন সময় হুঙ্কার তোলা কোরাসে
অ্যাসিড-বৃষ্টি মূত্রের ফস- ফোরাসে
বিভাজনপ্রিয় ধর্মের হোক শুদ্ধি
সত্যিকারের মানবধর্মে বুদ্ধি
সংহত হোক - ধ্বংসের থেকে মুক্তি
আসুক। তখন তক্ক গপ্পো যুক্তি
৬
একটা বারান্দা শুধু নাঘর নাঘাট রয়ে গেলো
কারণ সে পরিযায়ী, উপেক্ষিত ক্যান্টিলিভার
কাঠামো দাক্ষিণ্যে বাঁচে - যেমন দলিত এ সমাজে
অতএব ভারি পর্দা, এসি ঠাণ্ডা, নকশি জাজিম
এবং মাংসভাত, দিবানিদ্রা, টিভি সিরিয়াল
এ সবের যোগ্য নয় – নিষেধ নিষেধ
আমরা ঘরের মধ্যে লকডাউন লুডো সহবাসী
আমরা উচ্চবর্ণ ঘরে ফিরি রাষ্ট্রের বিমানে
এসসি-এসটি তুমি – যাও রোদে পোড়ো, আর হাঁটো
বুকে কইমৎস জান, জানি মরবে না
ভেঙেচুরে পড়বে না ক্যান্টিলিভার
কারণ সে রোদে জলে পুড়ে ভিজে
নিজ শ্বাস নিজ শ্রমে উপার্জন করে
আকাশের কাছে শেখে মহত্তর যাপন সংগ্রাম
দূরের সমুদ্রের কাছে গর্জনের সারেগামা শিখে
কোনো এক আশ্চর্য সকালে
সমুদ্র আর আকাশের দ্বৈত নীল যেখানে মিশেছে
দিকচক্রবাকের মুখোমুখি
নতজানু হয়ে বসে, বলে – ক্ষমা কোরো
কাগজ আমরা দেখাবো না
হে দিগন্ত, তোমার উজাড় নীলে
আমাকে নীলকন্ঠ করো
প্রলয়নৃত্যের জন্য এই দ্যাখো বাঁধছি নূপুর