Next
Previous
Showing posts with label মুক্ত গদ্য. Show all posts
0

মুক্তগদ্য: শমীক জয় সেনগুপ্ত

Posted in


মুক্তগদ্য



নষ্টগদ্য- স্মার্ত 
শমীক জয় সেনগুপ্ত 



স্মৃতি বড় একটা সঙ্গ ছাড়ে না আমার। আর আমার সাথে তার যত বোঝাপরা হচ্ছে তত মজবুত হয়ে উঠেছে সম্পর্কগুলো। এখন ঘুমের মধ্যে খুব বেশী কিছু দেখতে পাই না, তবে মন ভালো না থাকলে মনে হয় আম্মা আর আমার ছ্যাপ ছড়ানো খাটে এক্ষুণি হামানদিস্তার শব্দ শুনতে পাব। আর আধশোয়া হয়ে ঝুলতে ঝুলতে আবার গলা জড়িয়ে ধরে আব্দারের সুরে বলবো "এই বুড়ি তারপর-"

তার আর পর হয় না। ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখলে যেমন সব কিছু মনে হয় ছুটে পালাচ্ছে, তা সে ঘর বাড়ি গাছ আকাশ যাই হক না কেন তেমনিভাবে দৃশ্যপট বদলে যায়। বড়দিদি স্কুল থেকে ফিরে আম্মাকে বলে- "মাসিমা, আস্তে বলুন।মণি জেগে যাবে।"

আমি বড়দিদির কোলের মধ্যে মুখ ঘস্টাতে থাকি। বড় বেশী মনে পরে যায় আজকাল।

দাদু তখন পিয়ারলেসে ভর্তি। মা বাবা আম্মা সবাই ব্যস্ত, সমো আমায় নিয়ে একাডেমী গেল। জীবনে নিজের আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শণী। একটা গাছ, তাতে একটা দোলনাতে দোল খাচ্ছে একটা ছেলে আর মেয়ে। দুটোই রোবট রোবট দেখতে আর গাছটা এলোমেলো। বড়দির বাড়ি থেকে আমার জীবনে প্রথম এক্সিবিশন। কত আর বয়স তখন, বছর সাতের হব।

মামার ডাক দিচ্ছে "ডাকু-" যেমন এখনো দেয়, আর চোখ খুললেই আমি বলি ঝাপ দেব। মা যেন দুহাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই আমায় কত কাছ থেকে দেখছে, এত কাছ থেকে যে আমিও নিজেকে দেখতে পাই না। 

আজ আম্মা নেই, বড়দিও না। আমি এখন এতটাই বড় যে চেয়েও ইচ্ছে মত বলতে পারিনা কি চাই। 

এক এক সময় পিসিমণির বাড়ির পিছনের পুকুরটাকে মনে পড়ে। ওদের তখন কাঠের বাড়ি, টিনের চাল ছিল। আমি নাকি ঠাম্মাকে জিজ্ঞেস করতাম "ঠাম্মা, তোমরা হাটে (hut) থাকো?"

ঠাম্মা। পিসামণির মা। আম্মার পরে ঠাম্মার ওপর আমার জোড় ছিল অনেকটা। ঠাম্মা আমারা যাব জানলে মুড়ির মোয়া বানিয়ে রাখত। জানত তার গুবলাই মোয়া ভালবাসে খুব।

কোথায় কোথায় একটু আধটু চোখ লেগে এলেই মন বলছে সব ফিরে পাব। আচ্ছা, ভাই কি দেখতে পায় ছোটদাদান ওর সাথে ক্যারাম খেলছে। পাওয়াটা ত উচিৎ কারন ওর সব কিছুই যখন আমার মত। আসলে ছোটদাদান ভাইকে বেশী ভালবাসত, আর দিদান আমায়। আমার ভাই, আমার সব থেকে আদরের। মিমি আর ভাই ওরা না এলে আমি কোনদিন দাদা হতে পারতাম না। এতগুলো ভাই-বোনকে ভালোবাসতেও পারতাম না। কুট্টি আর আমি আমরা পিঠাপিঠি ত' তাই আমাদের বন্ডিংটা যতটা ভাই-বোনের ততটাই বন্ধুত্বের। ছেলেবেলা থেকে এটা জেনেই বড় হয়েছি আমরা যমজ। ওখানে টান আছে, ভাল মন্দের ভাবনা আছে, কিন্তু দরকারের দাদাগিরিটা নেই। আম্মার ছেলে ভুলানি গল্পে দুর্গাষষ্ঠীতে গনেশ ঠাকুর এল মা বাবার কৈলাসে। কিন্তু বোন ছাড়া সে কোথাও যায় না, তাই লক্ষ্মী ঠাকুরনকে চটপট কোজাগরীর রাতে চলে আসতে হল। নইলে পাছে ভায়ের অসুবিধা হয়।

কি লিখছি কেন লিখছি এত কথা নিজেও জানি না। আমি ত ডাইরী লেখা ছেড়ে দিয়েছি বহুকাল হয়। তাই কি হাঁপিয়ে উঠছি। আসলে নষ্ট মন নষ্ট কলমে আর যাই হক দেবতার পূজো হয় না। আমি কি তবে সত্যি ফুরিয়ে যাচ্ছি? 

মনে হচ্ছে কি যেন তাল কাটছে। আমি জানি না। আসলে ক্যাওরাতলার সামনে দিয়ে আসার সময় আজকাল গন্ধটা খুব নাকে লাগে। খৈ, ধূপ অগঢ়ু কোন কিছুই তাকে ঢাকতে পারে না। গন্ধটা শিক-কাবাবের। আগেও গন্ধটা আসত, খালি বুঝতে চাইতাম না। এখন বুঝি কি না বলতে পারি না তবে গন্ধের মধ্যে ছেলেবেলার দুটোদিন খুব বেশী মিশে আছে। যেদিন দাদুকে সবাই নিয়ে গিয়ে ঐ ফার্নেসে ঢুকিয়ে দিল সেদিন আমি জানলাম মৃত্যু কি? আমি নাকি অনেকদিন গুম মেরে ছিলাম বেশ কিছুদিন। 

আম্মার সময় সব কাজ কর্ম করলেও আমার পৃথিবী যে একটা জায়গায় এসে থমকে গেছে বুঝতে পেরেছিলাম। আসলে মা বাবা মামা আর সুভাষমামা ছাড়া, আমার বড়দি আর আমার আম্মা আমার সব ছিল। 

বড়দি কোন সুযোগ দিল না, চলে গেল। কেন জানি না আজ খুব খেই-হারা এই সব কথা মনে হচ্ছে। স্মৃতিকেও আজ বিশ্রাম দিতে হবে, সে পাগল হয়ে গেছে তাই ফ্ল্যাশব্যাকে আমি আর আমার শৈশব কৈশোর সব আসছে ফিরেফিরে। ঠিক আমার মামীর একচুল-দুচুল গল্পের মত। ভয় হচ্ছে একসাথে সব কিছু না জানি আবার বিস্মরণে চলে যায়।।
0

মুক্তগদ্য: বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

Posted in



মুক্তগদ্য



কাগজ ক্লোরোফিল
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়



একটা ট্রেন চলে যাচ্ছে, আমরা তাকিয়ে আছি তার গতিপথের দিকে । একটার পর একটা বিন্দু পেরিয়ে যাচ্ছে । ধুলি ধূসর শূন্য ধানক্ষেতের উপর আমাদের নির্বাচিত স্বপ্নের ছায়া পড়ছে । অমোঘ কিন্তু পরমুহূর্তেই থমকে যাচ্ছে ছায়ার নিবিড়তা, ঘনত্ব । সারিবদ্ধ গাছের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখির মিছিল । কোলাহল গিলে নিচ্ছে শূন্যতা । এ ছবিও স্থির নয় । বদলে যাচ্ছে তার প্রকরণ । একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে চারপাশ । ভিন্ন রঙ এসে লাগছে আমাদের দেখার পরিসরে । চীৎকার ডিঙিয়ে কোলাহল অতিক্রম করে কোথায় যেতে চাইছি ? কাদামাটির অক্ষরে লিখছি প্রসূতিসদন । কেবল ই দৃশ্যের জন্মান্তর । একাধিক শব্দের ভিতরকণিকা অক্ষররশ্মির বিচ্ছুরণ থেকে আলো ফেলতে চাইছি নিজের অন্তর্গত পরিক্রমায়, জ্যোৎস্নাবিহীন উপত্যকায় ।এই তেজস্ব্বী উদ্দামতা কি শেষ অবধি কোথাও পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের ? এই অগ্নিবর্ষিতা এই মায়াবিস্মিত মুহূর্ত কি সত্যি সত্যিই প্রজননশীল ? সময়ের ব্যবধান মুছে দিতে না পারলেও কোথাও যাচ্ছে ট্রেনটা । স্বরযন্ত্রের রিফ্লেক্ট পেরিয়ে এক নির্বেদী যাত্রায় ।

আমার জীবন মানে তো কেবল আমার ই হাততালি মুখর প্রতিধ্বনি নয় । পরম্পরাহীন অপ্রকৃতস্থ পরিমাপ নয় বা আবেগের অপাঠ্য প্রতিবেদন নয় । কি ছুঁয়ে আছি তবে ? কতদূর ব্যাপ্ত সেই হাতের স্পর্শনশীলতা ? ক্ষুধা বা তৃষ্ণা নিয়ে যে হাহাকার বেজে উঠছে অহরহ জীবনের জন্য , অস্তিত্বের জন্য । এই বহমানতা সেই সামগ্রিকের দিকে যাত্রা । এক বিদেহী অথচ অনিবার্য তার লিপিরূপ । অনুরাগী মুদ্রণযন্ত্রে ভরাট করছি সাদা পৃষ্ঠা । অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করছি পথচিত্র । কিম্বা তাও হয়তো নয় । প্রকৃত সান্নিধ্য থেকে বহুদূরে দাঁড়িয়ে স্বপ্নিল ট্রেনের মত মানসভ্রমণে বাড়িয়ে দিচ্ছি পা । স্যুররিয়াল জার্নি । মিথ্যের রূপমগ্নতা থেকে তুমি ঠিক আমাকে খুঁজে নেবে, খুঁজে নেবে বিপন্ন অলসতা । এই মজলিশ জাগরণে যুক্তাক্ষর বসিয়ে নিতে হবে সাড়ম্বরে । প্রতিক্ষণেই তো নির্মিত হচ্ছে কথনবিশ্ব । নিরাবয়ব কিনারায় দাঁড়িয়েও উন্মোচিত হচ্ছে নতুন প্রান্তিক পরিসর । তৈরি হচ্ছে পুনঃপ্রসঙ্গায়ন এবং পুনঃভাষ্যের উদ্যম । আমরা কি পুরানো জিজ্ঞাসা গুলিকে নবীকৃত করব ? যা অমীমাংসীত থেকে গেছে বা যার অভিঘাত এখনো বেজে চলেছে কোথাও দূরে । 

একাধিক মুখ ও চিত্রিত খোলস থেকে কিভাবে খুঁজে নেব লিপ্ত স্বরবর্ণ ? মেধায় অনুভূতিতে বিচ্ছিন্নতার রহস্যবলয় ছিড়ে কুঁচি কুঁচি নিরুত্তাপ দগ্ধ রজঃস্বলা । “আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে আসি” । বর্ণ রতি প্রমোদিত জীবনের দিকে । ক্লোরোফিলের দিকে । ধুলো আর কাদা ঘাঁটা সম্ভোগের মাঝে । বারবার । অথচ অতীত নেই, স্মৃতি নেই আনন্দের অন্তরালে প্রশ্ন আর চিন্তার আঘাত বিযুক্ত এক বিসমানুপাতিক জায়মান উপলব্ধি –পর্যটন । ট্রেন ছুটে চলেছে । দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে । সাদা কাগজ ভরিয়ে দেয় এইসব চিত্রিত কোলাজ । “পৃথিবীর পথ ছেড়ে আকাশের নক্ষত্রের পথ চায় না সে ’’ ।
1

মুক্ত গদ্য : শমীক জয় সেনগুপ্ত

Posted in


মুক্ত গদ্য 




নষ্ট গদ্য - আশ্রয় 
শমীক জয় সেনগুপ্ত 




ঘুম থেকে উঠতেই মায়ের কথা -"বাবাই স্নান সার, জল পাবি না।" 

এই এক ঝামেলা শুরু হয়েছে আমাদের এখানে...থেকে থেকে জল চলে যাচ্ছে। 

ঘুমের মধ্যে কঁকিয়ে উঠি, গরমের নিঃশ্বাস পড়ছে ঘাড়ে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। 

আমার ঘরটা ছোট। বুক শেলফেই একটা তাক জুড়ে আমার ঠাকুর দেবতারা, আমার পূর্বজেরা অ্যাডজাস্ট করে চলেছে। মা বলেন আর বই কিনিস না... এত অবহেলায় বইগুলো থাকছে শুধুমাত্র আমরা ওদের গুছিয়ে রাখতে পারছি না বলে, যে এতে ওদের অপমান হয়। অপ নয় আমার মনে হয় উপসর্গটা বোধহয় অভি হবে। 

ছেলেবেলা থেকেই জেনে এসেছি ঐ কাগজে বাঁধানো বস্তুগুলোই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। ঠিকই জেনেছি কারণ  জীবনের সব বাঁকেই বন্ধুরা আমার যাত্রাপথ যত বন্ধুর করেছে, বিশ্বাসকে শতখন্ড করা থেকে শুরু করে অপরাপর কত অভিযোগ কত আণুসাঙ্গিক ফাটল... সবই আমার টার্মিনোলজিতে এক একটা ফেটাল এরর। কিন্তু বইগুলো ঠকাতে পারেনা ... তাই ঠকায়নি। আমার করা অযত্ন মেনে নিয়েছে। 

তাই তারা অভিমান করতেই পারে। এ অধিকার তাদের আছে। 

আমার আকাশে কাল বৃষ্টি-ঝড় হয়নি। 

কিন্তু রবিবার অতীতকে পাশাপাশি দেখলাম। অনুভব করতে পারিনি। ভিজতে চেয়েছি তাও সব নির্যাস সোঁদা গন্ধ হতে পারেনি। 

বাসে উঠলে কত লোকের সাথে গায়ে গা ঠেকে। এমন সব জায়গাও ঠেকে যায় যা ঠেকাবার দরকার থাকেনা, কিন্তু ভিড়ে সে প্রতিরোধ ব্যর্থ। 

তারা কি তাই বলে আমার নিজের নাকি??? তাদের দেখলে মুখে তৃপ্তি জাগেনা, মনে স্ফূর্তি আসেনা। তারা সহযাত্রী। যাত্রাপথে কায়াসঙ্গী। সবাই ত আর বন্ধু নয়। 

অতীতের কিছু পাতা তাহলে আজ আর প্রিয় নয়। তাই কি?? 

না তারা ত খুবই কাছের। 

তবু কেন যে আজ সেই স্মৃতিগুলো শুধু সহযাত্রীর ভিড় মনে হল সেটা বুঝতেই পারলাম না। 



আজ মনে মনে অনেকটা রাস্তা হাঁটলাম। কোন রাস্তার চোরাবাঁকে এক আঁজলা জল ভরে স্মৃতি বলছে জিরিয়ে নাও। 

কোথাও বা তারা হুটোপুটি লাগিয়ে দিল। বলছে "সময় নেই...যেতে হবে। ভিড় বাড়ালে চলবে কেন?" 

সত্যি সময় বড় কম, আর সামর্থের মুঠি তার থেকেও বেশী দুর্বল। সবে ত জংগুলো সরিয়ে এনে শাণ দেওয়া শুরু করলাম মনটাকে, তাও সে ভীষণভাবে জব্দ হয়ে আছে। 

বাস ছুটছে আর পাল্লা দিয়ে হাওয়াও। 

মন ছুটছে মেঘের মত আর ঢিমে আঁচে ফোটানো লিকার চায়ের মত অনুভূতিগুলি আরেকটু উষ্ণতা খোঁজে। 

মনে আছে ছেলেবেলায় কারুর সাথে ভাব জমাতে হলে আর কোন উপায় না দেখলে লোক ডেকে ঝগড়া করতাম। তবু কথা ত হত'! 

তাতে কি হবে? 

কিছুই না। শুধু ভাবে অভাবে বুঝিয়ে দেওয়া "একা নই"। 

যেখানে আসল সত্যিটা সবাই মন থেকেই জানি। আর নিঃসঙ্গ মন বৃষ্টির ছাঁটের মতই ভিজিয়ে দিয়ে যায়। ভাগ্যিস চোখের পাতাগুলো বর্ষাতি হয়ে ছিল, না হলে আয়লা সুনামি বা অপরাপর মনের উচ্ছাস ও স্ফিতীদের রাশ টানা দায় হত। 

আসলে সব বৃষ্টি ত আর রেনকোটে বাঁধ মানে না। 

তাতে ভিজতে হয়, নেহাতই অকারণে  পুড়তেও হয়- নয় ত মেঘ-পিওনের ডাকে সারা দেওয়া যায় না, আর চিঠির মতই গোপন হরফগুলো ডুব সাঁতারে আলোকবর্ষ পার করে যায়। 

মন তার নাগাল পায় না।
0

মুক্ত গদ্য : অব্যয় অনিন্দ্য

Posted in


মুক্ত গদ্য 




কবিতা আসলে এক ধরনের কূটনীতি 
অব্যয় অনিন্দ্য 


কবিতা আমার কীর্তিনাশার খেয়া। খেয়াটা আমাকে নেয় না তার কোলে। তবে আমার গন্ধটাকে নেয় আঁচলে গিট দিয়ে। নিয়ে তুলে দেয় বিশ্ব-মননের ট্রেনে। গন্ধটা অবশ্য খেয়ায় ওঠার আগে অনেকগুলি লোকাল স্টেশান ছুঁয়ে এসেছে। জীয়ন পুকুর পাড়ে দাদুর হাতে শৈশবকে দিয়ে ঠাকুরমার ঝুলি ছুঁয়েছে। পদাবলীর লেজ ধরে রবীন্দ্রনাথকে ছুঁয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ফেলে আন্তর্জাতিকতার মশাল নিতে চেয়েছে করতলে। ঘুরেছে সাত মহাদেশের প্রভাতকে স্বাগত জানিয়ে। গন্ধটাকে কোলে নিয়ে এখন আধুনিকতার উত্তরেই দৌড়াচ্ছে কবিতার খেয়া। কবিতার সাথে আমার ইটিশ-পিটিশ সেই রাবার ঢিলা হাফ-প্যান্টের সময় থেকেই। একদিন বকফুল ভাঁজার মত প্রজাপতিকে ভাঁজতে চাইলে দাদু হাতে তুলে দিয়েছিল আলো আর আঁধারের দীক্ষা। সেই দীক্ষা থেকে উঠে আসা সৌন্দর্যকে বসতে দেবার জায়গা পাচ্ছিলাম না। নিরুপায় হয়ে ওই সৌন্দর্যকে দিলাম কবিতার পিঁড়ি। সুন্দরকে বুকে করে চলতে শুরু করল আমার কবিতা। আনত সন্ধ্যা-সূর্য্যকে টাটা দিয়ে ঘরে ফিরতে থাকা তৈ তৈ হাঁসের ডানায় ছিল ও। ছিল কিশোরীর সদ্য ফোটা বুকে। লটকন গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ ঝুলে ছিল সুন্দর কবিতাগুলি। সুন্দরের সাথে কবিতার লটর-পটর অবশ্য বেশিদিন চলতে পারেনি – আসলে চলতে দেয়নি। দেয়নি সুন্দরের উল্টা পিঠে ঝুলে থাকা সামাজিক হিংসার কালো বিড়াল। বিড়ালটার স্বার্থমাখা চাহনি আর চাহনিতে ভাসতে থাকা থাবা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল পৈচাশিকতার স্টেশনে। সেই স্টেশনে কিন্তু আমি একা যাইনি – কবিতাকেও নিয়েছিলাম সাথে। সাম্প্রদায়িক জিহ্বা, স্বর্গ-ফাঁদ, ধর্ষকামী-মর্ষকামী রন্ধনশালা সব ঘুরে এসেছে আমার কবিতা। ঠোঁটে নিয়েছে অগ্নিগিরি। এখানে এসে কবিতা প্রায়ই আর আমার কথা শোনেনি। শুরু হয়েছে কবিতার সাথে আমার কূটনীতি। কবিতাও আসলে এক ধরনের কূটনীতি – একটা নেগোসিয়েশান। কালের প্রবাহের কোন একটা অংশকে কবিতা ঠোঁটে ধারণ করে তাঁর নিজেরই প্রয়োজনে। এখানে ঠোঁট কতটুকু ধরবে তার নেগোসিয়েশান চলে কবির সাথে সময়ের। ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে’ – কূটনীতির এমন ব্লাংকচেক নির্দিধায় কবিদের দিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই সত্যের কূটনীতি কবিতার সারা সত্ত্বায়। অন্যদিকে আবার কবিতার দেহ ও মনের সাথে পাঠকের নেগোসিয়েশান চলে নিরন্তর। নিজের জীবনের ক্যানভাসে কবিতাকে নিয়ে যেতে পাঠকও খোঁজে সময়ের ডাকবাক্স। এভাবেই সময়ের হাসি কান্না ছুঁয়ে কবিতা হয়ে ওঠে একটা কূটনীতি।
2

মুক্ত গদ্য: শমীক জয় সেনগুপ্ত

Posted in




মুক্ত গদ্য



নষ্টগদ্য - ভালবাসি
শমীক জয় সেনগুপ্ত 



১. 

তোমাকে লেখার আগে সম্বোধনটা ঝালিয়ে নিতে হত। ওরা বলতো আমি নাকি না লিখলেও কবিতার মতই ঝরঝরে ! আর তুমি হাসতে- 


আচ্ছা তোমার নাম কি ভানু না রবি- আসলে ঐ নাম ত অচল এখন। যে নামই হক আমি কিন্তু আজও পুড়ি ঘন কালো মেঘের সঙ্গে। সঙ্গোপণে যে কথা বলার ছিল তারা অনুচ্চারিত রয়েছে। তোমায় নিয়ে যা লিখেছি সে সব ত আর পদ্মপাতায় ভাসাবার নয়; পদ্মের ও ভারি অভাব। 


আমার শরীর জুড়ে রিমিঝিমি সুর। আর নূপূরের শিঞ্জিনী মুখরিত আমার মনের শিসমহলায় ঝাপটা মারছে তোমার মতই অন্য কেউ। আমি ভাসতে ভালোবাসি। পৃথিবীর গ্লাণি -অভাবে আমি বিচলিত নই, আমার মনের বিলোলতায় তুমি আস আমার সাজে, অন্য আমি হয়ে।। 


লোকে বলে প্রেমিক- কেউ গাল পেরে বলে কলঙ্কী .. কিন্তু কেউ জানে না আমি আসলে কাকে নিয়ে ভাবতে পারি। ওরা জানে না রোজই তুমি তোমার মতই কথা দিয়ে আমায় সাজাও; তাই তো ওরা তোমায় আরতি করে ভক্তিভাবে আর আমাকে দেয় শিউলির বন , কাশের ঝাড় শরতের আকাশ আর একরাশ অভিমান।
আমি যখন লিখি, ওরা রবি ঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে বলে 'জয় করে ভয় না যাওয়া স্নব।" আমিও তখন তোমার মতই হাসি। হাসলে চোখের চিকচিকানিরা আপনি লুকিয়ে যায়। হাসলে বড় মিঠা লাগে আমায়। 


কি নাম যেন তোমার ?? রবি বা ভানু যে নয় সে ত আমি জোর গলায় বলি.. সমার্থকের ভিড়ে তোমার সামর্থ খুবই কম। তাই ত বৃষ্টি ভিজিয়ে যায় আমায়, না না আমাকে নয়- তাকে যে তোমায় ভালোবাসে। কি নাম যেন তার ?? নতুন দিনে তোমার আর আমার মধ্যে বেঁচে থাকা তোমার সেই তার এর এখন অন্য নাম। আর ভিজতে থাকা বৃষ্টির জলে অনঙ্গদেব আজও দগ্ধ হয় অন্তরদহনে ।। 



২. 

সময়টা দেখছি হারাধনের ছেলের মতই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে চলেছে। যত কমছে ততই আর স্বার্থপরতা আর আত্মকেন্দ্রিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তার সাথে সুখী পারাবতপ্রিয়ার শূণ্য অভিসারের জল শুকোনো দাগ মনে করিয়ে দিচ্ছে "বেলা যে পড়ে এল...জলকে চল"।। 


জাল ফেলে মাছ ধরা যাদের ব্যবসা তাদের আমরা জেলে বলি, কিন্তু আমার মনকে জালে বাঁধবে যে সে বীতংসের স্রষ্টা এখন নিভৃতে সুখে নিজেকে দেখছে, আর ভাবছে আবার সময়ের অপচয় করতে হবে। সত্যি আমাকে বাঁধতে পারে এমন মন আজ ফাগুনের চৈতী হাওয়ার আশ্রয় ছেড়ে উষ্ণ লু হয়েছে। আমাকে সে যতই বিঁধছে, আমি ততই সুখের আবেশে মৃত্যুকে কামনা করছি কাঙ্খিত শরীরের মত। 


আকছাড় কত কথা বিনবিনিয়ে ওঠে, কিছু চুমুর মত ঠোঁটে জাপটে থাকে আবার কিছু বুজকুরি দিয়ে হারিয়ে যায়-
সেদিন মাধুকরী করে কিছু বানী এনেছিলেম, ইচ্ছে ছিল তাকে দিয়ে আমার ভাঙা দেউলে আলপোনা দেব। তা হল না...কারন ভালবাসলে কৈফিয়ত দিতে দিতে জান জেরবার হয়।
সে জিজ্ঞেস করলে -"এত টান কিসের?"
আমি বললেম- "ভালবাসার।"
সে আবার জানতে চাইলে-" প্রেম করিস !!!"
আমি বলেছি-"শুধু ভালবাসি।"
প্রেম না করেও যে ভালবাসা যায় তা বুঝি আমার নাম না জানা সেই বঁধূয়ার মনে ধরলো না। সে আবার বলল - "কেন প্রেম করিস না।"
বলেছিলাম যে আর ওর কাছে কিছু চাইবার নেই আমার... বলে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম। ও বোঝেনি,যেমন আগেও বুঝত না। 


আচ্ছা, সত্যি কি কিছুই চাই না। এই যে সময়ের থেমে আসার শব্দ শুনতে পাচ্ছি, তার মধ্যে মন কি একবারও চায়নি এই সময় আমার দপদপ করা মাথায়, জ্বরে নুঁইয়ে পড়া দেহে সে এসে একবার, শুধু একটিবারের জন্য, হাত রাখুক। এও ত' প্রতিদানে চাওয়ার মতই। তবে আমিও দ্বিচারী।



আমার এখন জানলার দিকে মুখ। আকাশে ভাসছে শঙ্খচিল। ডানায় আগুনের শিখা। প্রথম আলোয় যা ছিল নিতান্তই দুধ সফেন ভালবাসা, এখন ক্রমাগত ঘঁসা মাজায় সেও অগ্নিগর্ভ প্রেম হয়েছে। হতভাগ্য নিজেও মরবে আর ভাসার আনন্দকেও মারবে।



বিশ্বাস কর আমি তোর কাছে একঘেঁয়ে হতে চাইনে, আর এই না চাওয়াটাই আমাকে প্রেমিক হওয়া থেকে নিরত রখেছে। 
আর তাই বোধহয় সপ্তাশ্বের গনগনে আঁচেও আমি অশুদ্ধই থেকে যাই।
1

মুক্ত গদ্য: শর্মিষ্ঠা ঘোষ

Posted in





মুক্ত গদ্য




আম 
শর্মিষ্ঠা ঘোষ





মর্নিং গুলো কপি পেস্ট করে যাচ্ছি ... তোমাকে কাল যেখানে চুমু খেয়েছিলাম,
আজও সেখানেই কি ? তুমি তো প্রতিটা ছাপের ওপর তৈরী করবে ব্যারিকেড ...
স্পর্শের ওপর, গন্ধের ওপর, তোমায় চেয়ে দেখার ওপর, তোমায় বলা আমার কথাদের ওপর, চলভাষ প্রেরিত চুমুর শব্দের ওপর, এক একটা আখাম্বা সৌধ নামিয়ে দেবে অম্লানবদনে ... আমি প্রতিটি নতুন আদরের আগে খুঁজে যাব অনাবিষ্কৃত অপাপবিদ্ধ ভূভাগ ...



তুমি আমার ক্লিশে প্রকাশিত আদ্যিকালের আকাশ আর মুক্তি, ভুলভাল যত
বেহায়াপনা হ্যাংলামো আর উল্টোপাল্টা অনাবশ্যক ... তুমি আমার আদেখলে সব ভালোলাগার অসহ্য দেখানেপনা ... তোমাকে তোমার শুভনামে ডেকে ওঠা হোলোনা আজও, অথচ মনে মনে যে ডাকি কতবার... তোমার ছবি যতবার আমার চোখ পড়ে ততবারই আদরভাসি... অথচ একটি শীৎকারও নাভি কাঁপিয়ে কন্ঠনালী সাঁতার দিল না আজও... আমাদের যাপন কত যে ইচ্ছে স্বপ্নবাহিত ... কত যে ফ্যান্টাসি যাপন জলে আমাদের স্বপ্নেরা ভেসে গ্যাছে ... কত যে স্বপ্নে তুমি এসে এসে ফিরে চলে গ্যাছ ... কত যে অগোচরের আসা যাওয়ার পাশে পাশে তোমার আমার বেঁচে থাকারা হাঁটে ...



আমি তোমার ঠিকঠাক কত নম্বরী গুনতে গেলে তুমি নিজেও ভেবলে যাবে ... কোনো আইডেনটিফিকেশান মার্ক নেই আমার ... স্রেফ ভ্যাদভেদে আম ... আরও অনেক আরব্য রজনীর অন্যতম চাহনেওয়ালা... কোনো বিশেষ নামে ডাকিনা তোমায় তাই ...সাধারণ্যের ধূলিধূসরিত অনন্য চাহিদায় এটুকুই যা শোভন প্রলেপ ... আগুনের বৃত্তে আরেক অভিমন্যু কবে যেন কোন অজানিত মুহূর্তের তীব্রতায় সঁপে দিলাম আমার সমস্ত অগোছালো ... কে বলে, আর মুক্তি চাই ? এর চেয়ে মরণও বন্ধু বেশি, এর চেয়ে পটাসিয়াম সায়ানাইডও বেশি ভালবাসে যুগল অঙ্গুরীয়, এর চেয়ে ঘৃণ্য আত্মরতিও ভালবাসে ওষ্ঠ অধর ... 


2

মুক্ত গদ্য: বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

Posted in




মুক্ত গদ্য 



প্রান্তিক জানলা 
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 



আলপনা এঁকে যাই আলোয় ছায়ায় 

অকস্মাৎ তাদের দেখা দুটি দ্বীপখন্ড পেরিয়ে এসে একদিন।যেভাবে আমাদের দেখা হয় পৃথিবীতে । তাদের এখন কোনও নাম নেই । গল্পের প্রয়োজনে দুটো নাম দেওয়া যাক রুদ্র ও সুমন । রুদ্র ও সুমনের দেখা এক নীলাভ দুপুরে । ফড়িং এর ছায়ায় স্তব্ধতার আহ্নিকরেখা । প্রান্তিক জানলার নিভৃত আলো এসে পড়ছে তাদের অস্তিত্বে । বকের মাছ শিকারী অভিলাষে ক্লান্তির পা – ছাপ । হারানো সম্বিতের ভেতর থেকে ফিরে আসছে দ্বিধা জড়ানো জিজ্ঞাসা 

– কেমন আছিস ? ভালো তো ? 

-কেন ? প্রতি জিজ্ঞাসায় জারিত সুমনের উত্তর । 



মেঘের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিগত উত্তাপ ।রুদ্র ভাবছে কেন এই কেন ? ইতি অথবা নেতিবাচক হতে পারে অবস্থান । রুদ্র হাই তুলল ।ক্লান্তি নয় অসহায় মনে হচ্ছিল ওর দাঁতের হলুদ স্মৃতি ।এনামেল উঠে যাওয়া অতীত ।ধূসর চিহ্নের মত জেগে থাকে বিষাক্ত কিছু মোচড় । থেমে যেতে ইচ্ছে করে দিগন্তের কাছে । রুদ্র থামে । 



তাকায় দূরে । এবং স্পষ্ট দেখে 

১ সুমনের পাঞ্জাবীর বুকপকেটে জেগে থাকা বাষ্পমোচন । 

২ স্থির হয়ে থেমে আছে কিছু আভাস দুরারোগ্য প্রেমের মত এখনও । 

৩ মেঘ নয় তালাচাবি দেওয়া ঘর যেখানে বৃষ্টির জাদুকাঠি গচ্ছিত রেখেছে কেউ 



সুমনের কাঁধে হাত রাখে রুদ্র – কতদিন পর দেখা । তোর মনে আছে ? 

- কি ? 

- সেইসব চিহ্ন । 

- না তো । তোর ? 

সব নেই তবু দুএকটা ..এক মঞ্চে তোর সাথে দেখা হয়েছিল । ভুবন গ্রাম । 

- তাই -তখন তোর অন্য একটা নাম ছিল ।জনার্দন ।ভি ভি আই পি আলো এসে পড়ল তোর গায়ে । ওমনি ফুড়ুৎ । কোথায় হারিয়ে গেলি তুই 

-হারাই নি তো , তোকেই খুঁজেছি চিরকাল । 

-আমি শালা বেকার ভবঘুরে প্রেম দিওয়ানা ।বরবাদ হয়ে যাওয়া তামাম ছাই । 



সুমন হাসে । সে তো অন্য এক নিলয়ের কথা । ভিনগ্রহের । তোর মনখারাপ এখনও গেল না 

আমাকে ভিড়ের মধ্যে ঠেলে দিলি তুই । আলোর দিকে । সমাবেশের দিকে । 

-ভিড় আমার পছন্দ নয় । জন্মান্ধের কোন আলোক ধারণা নেই । 

-আলোর মাইরি বিরাট নেশা । প্রেমের বাপ ... 



রুদ্র এক নিঃস্পৃহ অন্ধকারে আলুলায়িত জীবনের কথা ভাবে। একা একা বাঁশি বাজায়। গাছের পাতায় ঢেকে নেয় চোখ মুখ সর্বত্র ।আত্মগোপন পর্ব ।অন্ধকার বিলাসী নয় তবু , বিপন্নতা নয় বরং তীব্র সাহসই বীরুৎ অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় ওর দিনপ্রবাহে। মেঘচাপ বিযুক্ত এক ফুরফুরে বাতাস খেলে বেড়ায় চারদিকে ।চরাচরে কোলাহল পর্ব ।তামাদি হয়ে যাওয়া দিনপুরানের ভেতর জেগে ওঠে অনাবিল শব্দের মহিমা । আড়ম্বর হীন কিন্তু প্রতিশ্রুতিময় । এক ধ্বনিত ইঙ্গিতের ভেতর মাথা তুলে অনেক দুস্প্রাপ্য জিজ্ঞাসা 

–কিছু ভাবছিস ? 

-হ্যাঁ । রুদ্র মাথা নাড়ে । 

- কি ? -কিরকম ভাবে বেঁচেছিলাম আমরা।একটু স্মৃতির অন্তরে দৌড়লে মন্দ হয় না । 



একমাত্র বাস স্টপেজ। স্নিগ্ধা দাঁড়িয়েছিল সেখানে ।ওর হাতে গোলাপি রুমাল ।ওড়নায় রাণী মৌমাছি । গুনগুন করে গাইছিল – এই করেছ ভালো নিঠুর হে । শব্দের ভেতর অনুরাগ বেজে ওঠে ।ঝলসে যাওয়া বর্ণমালা । তেজস্ক্রিয় আগুন । বিপজ্জনক বলেছিলি তুই। আমার তো কোনও মুদ্রাদোষ ছিলনা । 



- হ্যা । মনে পড়ল রোল নম্বর – থার্টি ফোর । 

- এখনও মনে আছে বিবর্ণতার পরেও 

- আত্মার বিনাশ নেই 

- বিবর্ণতা ? 

- হয় তো নেই । না হলে মেমরি কার্ডে থেকে গেল কি করে ? 

- অনুশোচনা আছে ? কাটাকুটি । 

-সেতু পারাপারের পর আর কোনও অনুশোচনা থাকেনা । সবই তো খেলা । অনিবার্য সুড়ঙ্গ পরিক্রমা । ভাবনাটানেল । 

-সত্য তাহলে কোনটা ? এই ফেরা না মায়াসরণি  ? 

- সত্য বলে কিছু নেই । মগ্নতা । যখন যেভাবে মগ্ন ... তাই স্থির। 



ধূলা ঝড়ের মাঝে দিশা সন্ধান। সব চরিত্র বাস্তবিক। স্তরগুলো অনিবার্য।স্তরগুলো স্বাভাবিক ।ভাঙন প্রক্রিয়ার মধ্যেই সনাক্তকরণ  নিজেকে । নিজের চারপাশ প্রদক্ষিণ । তারপর সবকিছু পুড়ে ছাই আবার ফিনিক্স পাখির মত উজ্জীবন । বৃত্ত ভেঙে সাঁতরে সাঁতরে আত্মমোচন কাল শেষ ।লিপিবদ্ধ ঘর্মাক্ষর ।সব ফালতু । কাজ কাম না থাকলে যা হয় । 

- তোর বাঁশি টা এখনও আছে ? সুমন জিজ্ঞেস করে । 

-নেই । ফেলে এসেছি । সুরগুলো আছে । মাঝে মাঝে মনে হয় জোরে জোরে বাঁশি বাজাই । তোলপাড় হোক আকাশ বাতাস। আমার তো কোন আলো ছিলনা , শব্দই ছিল কেবল । বাঁশিটাও হারিয়ে গেল । 

-আলো তো এক সময় নিভে যায় । তখন সব সমান, আঁধার । 

-শব্দ থাকে ? হ্যা । জোরের সাথে থাকে । 

- জন্মান্তর পেরিয়ে আসতে পারে ? 

- জানিনা । নশ্বরতার ভাবনায় থাকে প্রগলভ বার্তা ।প্রান্তিক আবর্জনা ফেলে শুদ্ধ হয় ডাস্টবিন ।পোশাক বদল করে ছিন্নকোষ ।একদিন মেঘের আড়ালে গিয়ে থমকে যায় আবিল উপত্যকা ।ইচ্ছে করে সূর্যের আলো নাইট ল্যাম্পের মত করে দিতে । 

-তোর তো আলোর ধারণা ছিলনা কোনোদিন । 

-ছিল না বলেই তো এত রাগ হিংসা কাতরতা । এখন মনে হয় ফালতু সব ।তবু পথ থাকে । পরিক্রমণ  আর অতিক্রমণের ধারণা নিয়ে -তাও নয় । কে কাকে অতিক্রম করে ? রাস্তা আলাদা হলে অতিক্রম ই তো মিনিংলেশ । 



২ 

এখানে রাত বা দিনের কোন তত্ত্ব  নেই । এক নিরাসক্ত সময় উপত্যকা । তবু তাদের এই আলাপন মুহূর্তকে দুপুর বলেই চিহ্নিত করা যায় । কেননা ক্লান্তিতে তাদের ছায়া ছোট হয়ে আসছে । এক অলীক দিবানিদ্রায় নিরবচ্ছিন্ন স্বপ্নঘোরের মধ্যে নিরাকৃতি কিছু ধারণা  । আনন্দ ও বিষাদ সব মিলেমিশে একাকার । শরীরবিহীন এক চৈতন্যবোধের ভেতর হামাগুড়ি দিচ্ছে বিশাল জলরাশি । একটা সেতুনির্মাণের ইচ্ছে প্রকট হয় একসময় ।

 -যাব কিকরে বাকি পথ ? অনেক সাঁতরে এসেছি। আর দম নেই । অথচ থেমে থাকাও তো যায়না । তোর কোন আকাঙ্খা নেই ? সুমন বলে ওঠে । 

- আছে । ঘুরে বেড়াতে এত ভাল লাগে এখনও । 

-আমারও ।দুটো দ্বীপ পেরিয়ে চলে এলাম .. কত কি দেখা বাকি থেকে গেছে। বারবার পোশাক বদল করলেও শেষ হবেনা ।এই চাওয়া পাওয়া।চলতেই থাকবে। 

- গতিজাড্য ।বাঁচতে বাঁচতে একটা নিয়ম তৈরি হয়ে যায় নিজের চারপাশে । গল্পের মত, যেখানে সেখানে থেমে যাওয়া যায়না 

- সুসঙ্গত জীবনভার বিমুক্ত এক বিশৃঙ্খল বাতাস এসে চাবুক মারুক আমাকে... বারবার চাইতাম । বেশ মজা লাগে, এখনও লাগছে । 

-দুনিয়া চিরকালই এক অসন্তুষ্টির জায়গা । সবাই স্বপ্ন দেখবে। হা পিত্যেস করবে । খোল করতাল বাজাবে। অনুভুতির দীপ জ্বেলে শরীর পুড়িয়ে মস্তি মজা এনজয় ...তারপর... সব সমান । কোনো মানে হয় এই রুদ্ধশ্বাস জার্নির। তবু কেন যে বারবার টানে । বিভ্রান্ত আবেগের ভেতর দিয়ে পথ হারাবো বলেই পথে নামা । দৃশ্য আর শব্দের শুভেচ্ছা বিনিময় । 

- কোথায় যাবি । কিছু খুঁজে পেলি ? অন্তত একটা মোমবাতি ? সুমন প্রশ্ন করে। 

-না , চেষ্টা চালাচ্ছি গুরু। কিম্বা হয় তো কিছুই ভাবছিনা। যেমন জীবন নিয়ে সিরিয়াসলি কিছু ভাবিনি । 



ক্রোমোজোম তো চক্রব্যুহের মত ।অতৃপ্ত আকাঙ্খায় গড়িয়ে যায় দিনকাল । দৌড় দৌড় দৌ......ড় । বাতিল খোলস ছুঁড়ে আসা তো কবেই চুকে গেছে । পা অবধি ডুবে আছে মনকেমন । আবার অনুপ্রবেশের ইচ্ছে । 



প্রান্তিক জানলায় রোদবাসনা ঝলমল করে একসময় । সাব্যস্ত উপবৃত্ত পেরিয়ে তৈরি হয় ডানার অবয়ব । জানলার বাইরে শান্ত নিরুত্তাপ কিছু নম্বর উড়ে যায় । ডিজিটাল পাখি । ঠোঁট থেকে ঠোঁটে ভালবাসার ভাস্কর্য বুনন ।বাতিল সম্ভাবনার ভেতর প্রানস্বপ্ন ।শিহরণ । রিসাইকল বিন স্বপ্ন বুনে দেয় - ফটোসিন্থেসিস। নৌকা ভাসছে দূরে। 



ওরে ও মাঝি , রাঙা স্বপনদেশে যাব পাল তুলে দে নৌকার ........