গল্প - সজল কুমার মাইতি
Posted in গল্পসময় সকাল ছ টা পঁয়তাল্লিশ। ইলেকট্রিক বেলের কর্ণসংহারী নির্মম শব্দের হুঙ্কার। নিমাই যেন এই বেলের সুইচে আঙুল চেপে ধরলে ছাড়তে চায় না। এর শব্দে প্রান সংহার না হোক কর্নসংহার অবশ্যম্ভাবি।
এই নিমাই অফিসিয়ালি মধ্য কলকাতায় এই কলেজের কেউ নয়। কিন্তু মর্নিং সেকশনের সে ই একমাত্র সহায় সম্বল। ছাত্রদের জন্য, শিক্ষকদের জন্য ও। কলেজের এই সেকশনটিকে মোটামুটি অভিভাবকহীন বলা যেতে পারে। কলেজ প্রশাসক থাকেন না, কেউ দায়িত্বে ও নেই। এই নিমাই ই সবার ভরসা।
এই প্রথম ক্লাসে তিনটে সেকশনে একমাত্র টিচার রেনু স্যার হাজির। বাকি দুটি সেকশনের একটিতে কম্পাঙ্ক স্যার ও লায়লা ম্যাডাম। দুজনে ই গরহাজির। ছাত্রছাত্রীরা নিমাইকে জিজ্ঞেস করে, “ কম্পাঙ্ক স্যার এসছেন?”
“না। ওনার রুটিনে ক্লাস চেঞ্জ করে নিয়েছেন, ওটা দশটায়।”
“ লায়লা ম্যাডামের মেয়ের শরীর খারাপ। উনি আসবেন না। তোদের অ্যাটেন্ডেন্স আমায় দিয়ে যা।”
পরের পিরিয়ডে ও তথৈবচ। দুটো সেকশনের টিচার আছে তো বাকিটা খালি। তার ও একটাতে হাতি স্যার এলো কুড়ি মিনিট পর। আসলে উনি অনেক দূর থেকে আসেন কিনা ! আর নিয়ামক স্যার অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত আছেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে এই ক্লাস নেওয়ার সময় ও মানসিকতা কোনোটাই নেই।
এইরুপ তাইরে না তাইরে না করতে করতে কলেজের দিবা বিভাগ শুরু। এখন একটু হৈ চৈ শুরু হলো। এখন সেকশন ও ক্লাসের সংখ্যা ও বেশি। প্রথম ক্লাসে যাদু স্যার ক্লাসে গেছেন। মাথা নিচু করে রোল কল করে যেই মাথা তুলে দেখেন অর্ধেক ক্লাস ফাঁকা। “ আরে আমি তো চাইছিলাম বাকিরা ও যাক। তা তোরা কি করতে রইলি? এই একঘন্টা কি পড়ানো যায় বলতো? আর যদি পড়াই ও, তাহলে তো তিনদিনে সিলেবাস শেষ।”
এক ছাত্রী এসে বি সি স্যারকেই জিজ্ঞেস করে “ স্যার, বি সি এসেছেন?”
এমন সময় কম্পাঙ্ক স্টাফরুমে ঢোকে। স্টাফরুমের ডেসিবেল বাড়তে থাকে। বাকিদের কিছুজন ছাত্রদের বলেন “ রোল নাম্বার দিয়ে যা।” অনেক টিচার ক্লাসে গেলেন আর পর মুহূর্তে অ্যাটেন্টডেন্স দিয়ে ই বেরিয়ে এলেন। এ চিত্রনাট্য চলতেই থাকে। রুটিনে নাম আছে টিচার নেই। আবার ক্লাস আছে টিচারের নাম নেই।
এখন রিসেস। চা টিফিনে স্টাফরুম ম ম করছে। ডেসিবেল ও চরমে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কলেজ প্রশাসক। আসলে প্রশাসক কলেজে ঢোকেন বেলা দ্বিপ্রহরে। পারিবারিক দোকান সামলিয়ে সংসারের অনেক কিছু তদ্বির করে আসতে হবে তো! কেউ কেউ বলেন “ আরে, এত গরম পড়েছে। কোল্ডড্রিঙ্কের আর আইসক্রীমের ডিমান্ড হাই। খদ্দের ছেড়ে কি আর আসা যায়?” অন্য কেউ হয়তো সংযোজন করেন “ হয়তো দেখুন, CAS করতে কোথাও গেছেন।” যখন স্টাফরুম এইরকম জমাটি হাই ডেসিবেল আলোচনায় মগ্ন, তখন একজন ঢুকলেন। ঠিক যেন “ When a clown enters into a palace. The clown doesn’t become king. The palace becomes a circus.” জোকার স্যারের প্রবেশ। আর গোটা স্টাফরুম জুনিয়র সিনিয়র সবাই হামলে পড়ে তার ওপর। যেন বুভুক্ষু হায়েনার দল চিতল হরিণ পেয়েছে।
লেখক যখন এই গল্প তার এক বন্ধুকে শোনাচ্ছিল, বন্ধুর জিজ্ঞাসা, “ এ কি একদিন? না প্রতিদিন?”
0 comments: