0

রম্যরচনা: শর্মিষ্ঠা ঘোষ

Posted in


রম্যরচনা



সুখের রচনা 
শর্মিষ্ঠা ঘোষ



মন্দ কি যদি একটা বাতিল হলে পাঁচটা দরজা খুলে যায় ... দরজার মাপে ইচ্ছেটাকে কেটে নিলেই দেখুন, আপনি সুখি। ... সুখি হবার হরেকরকম্বা ঘুরে বেড়াচ্ছে, উড়ে বেড়াচ্ছে ... আপনি পাখি ধরা প্রাকটিস করুন, খুব একটা কঠিন না ... আপনি ছোটবেলায় ফড়িঙের ল্যাজে সুতো বেঁধেছেন... মকমকি ব্যাঙ মেরে খেলার মাঠে পিকনিক করেছেন কিনা জানি না ... আপনি যাকে বলে সুবোধ অবোধ বালক হলেও হতে পারেন ... ভেবে দেখুন, সেসব দিনেও আপনি খানিকটা অসুখী ছিলেন... আপনি অঙ্কে কাঁচা হতে পারেন, ইংরেজিতে তুখোড় ... রবিঠাকুরের কবিতার প্যারডিতে সিদ্ধহস্ত বানানে কালিদাস ... ক্লাস ফাইভেই আপনার জন্মরহস্য উন্মোচিত করতে পারেন ... স্বেছায় বা দুরু দুরু বুকে ফুঁকে দেখতে পারেন চারমিনার... ক্লাসের ফার্স্ট বয় কিম্বা ক্লাস ক্যাপ্টেন কে আপনি গুরু মানতেন ... স্কুলম্যাচে চান্স পাবার জন্য ভোর বেলার ঘুম সাক্রিফাইস করে মাঠে যেতেন... প্রতিপক্ষ তাও মাঝেমাঝে ভাগ্যের দোষে জিতে যেত ... আপনার ডাংগুলি ক্রিকেট ব্যাটের আভিজাত্যে মাথা নোয়াত ... গাড়ি করে যারা ইস্কুল আসতো তারা আপনাকে চিনত কিম্বা চিনতো না ... আপনি তখনও ভাবছিলেন সঠিক কপাল করে কজন জন্মায়... পরের জন্মে একটা পয়সাঅয়ালা বাপ কিনবেন থুরি জোটাবেন... কিম্বা একদম উল্টো, ধরুন ন্যাকা বোকা ভালমানুষ টাইপের আপনি বড় একলা ছিলেন ... বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে খেতে পেতেন কিন্তু মা মরা বিলুর মত স্বাধীন ছিলেন না ... পাশের বাড়ির মিনাকুমারী আপনাকে পিওন করে বিলুকে চিঠি পাঠাত ... কিম্বা আপনার বান্ধবী আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখলেই গুলগুল টুথপেস্ত... এই দেখুন, আপনি যতক্ষণ না ইচ্ছে টাকে দর্জির কাঁচি চেনাচ্ছেন, আপনি সুখি নন ... আপনার সমস্ত ব্যামোর ওষুধ একটি নেহাত সাদামাটা কাঁচি ... সেন্সর করতে শিখুন বেরহমিসে, ক্যাঁচক্যাঁচ এফোঁড় ওফোঁড় করেদিন আহ্লাদীপনা ... মাথায় গাট্টা মেরে বেঁটে করে দিন মাথা চাড়া দেওয়া অবাধ্য ইচ্ছেসকল ... সবুজ রঙের ওনিডা ডেভিলের চোখ বেঁধে কানামাছি খেলুন, প্রতিবেশীর ঈর্ষা থাকলে থাক, আপনার কভি নেহি ...দিনে একশোআট বার জপ করুন, ‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ’ ...বন্ধুর ফুটফুটে বোনকে দেখে দাঁত ক্যালানো অভ্যাস করুন, ভাবতে থাকুন, নিজের বোনের মত ... সুন্দরী দেখলেই ট্যাঁরা না হয়ে মাতৃরূপে অঞ্জলি দিতে থাকুন, সে আপনাকে দাদা কিম্বা ‘সে’ ভাবতে পারলেই খাপ খুলবেন একমাত্র ... তারপর , আহা কি আনন্দ জগত সংসারে , মনে মনে সুখ থাকে, দুখ কভু নাহি ডাকে, আহা ! ... ওঃ হো , আপনি তো বড় হচ্ছেন অতঃপর, প্রায়োরিটি বদলে যাচ্ছে যে ... ওপেল আস্ট্রা ফরেন লিকার ডলার ইউরো স্ট্যাটাস পার্কস বিজনেস ক্লাস উড়ান র‍্যাটরেস অয়াক্সিং করা বউ আইনস্টাইনের মত ব্রেনি ছেলে ক্যাটরিনা কাইফের মত মেয়ে মেডিক্লেমই আপনার সর্বনাশ করতে পারে, অতএব সাবধান, আপনি কর্ম করুন গীতার স্টাইলে, তারপর ‘টাকা মাটি মাটি টাকা’, তারপর ইয়োগা মেডিটেশান বাবা অমুক তমুক কপালভাতি লাফিং ক্লাব এন জি ও, অবরে সবরে সাহিত্য মারান সংস্কৃতি করুন মালকোঁচা মারুন, নীচে জকি ... ওঃ হো , আপনার বিবেক বিষয়টাও ফেলবার নয়, সোসিও ইকনমিক্যাল ডিবেটে কর্ড লেস ফাটিয়ে আসুন, পলিটিক্সটা হ্যান্ডেল করুন মেপেজুপে, ভণ্ডুল করবেন না যেন ... তারপর দেখুন সুখ নামছে মদির রাত্তির ভিজে তক্ষকের সত্যবাদিতায় কামসূত্রের পৃষ্ঠায় আগাপাশতলা সিজনাল জ্বরের মত অর্গাজমের থরথর বেয়ে ... সুখ একটি পাখি বিশেষ, পায়রার ন্যায়, চবুতরায় জল দানা যতক্ষণ, গলার শিরা ফুলিয়ে লক্কা পায়রার মত গুটুর গুটুর ... সুখ একটি লোক দ্যাখানোর আইটেম, সুখ একটি মানুষ খেকো তিমি, অনেক ফন্দি ফিকির করে লাইন অব কন্ট্রোলে রুটিন মার্চ করানোর মেগা সিরিয়ালে আপনি ঘ্যামা সুখি লোক, ঐ দেখুন, আপনি রোল মডেল হয়ে উঠছেন নিজেরই ... ফেউ ডাক ও আছে না এরপর ? বৃদ্ধাশ্রম পেনশান লাইফ সার্টিফিকেট সম্পত্তির উইল ব্লাড সুগার হাই প্রেশার কোলেস্টেরল সব নিয়ে ‘আমার যা আছে, আমি সকল দিতে পারি নি তোমারে, নাথ’ গাইবেন না, ‘আমার যেসব দিতে হবে’, ইটস রিয়ালি আপ টু উ মাই ডিয়ার, আমি আর ফ্যাদ্রা প্যাঁচাল পাড়তে পারি না ...

0 comments: