গল্প - অসীম দেব
Posted in গল্পভূমিকা –
অনেকেই বিয়ে করে নতুন বউকে সঙ্গে নিয়ে কলেজের রিইউনিয়নে আসেন, এই গল্পটি তাঁদের প্রতি একটি সাবধানবাণী।
------------------------
কলেজের রিইউনিয়নে এতদিন সুহাস একলাই এসেছে। তফাৎটা এই যে এবার নতুন বউ করুণাকে সঙ্গে নিয়ে আসছে। বৌ এই প্রথমবার স্বামীর কলেজে যাচ্ছে, বন্ধুদের রিইউনিয়নে। আর এখানেই সুহাসের মনে একটা চাপা আতঙ্ক, কারণ ওঁর হস্টেলের বন্ধু হারাধনও আসবে। একবার যদি ও নিজের ফর্মে চলে আসে, তাহলেই বিপদ।
দীর্ঘ প্রেমের সময়কাল থেকেই করুণা তাঁর স্বামী সুহাসের কলেজ আর হস্টেল জীবনের অনেক কথা শুনছে। কলেজ কিরকম, কলেজের প্রোফেসর, হোস্টেল, লোকজন বন্ধুরা কেমন ইতাদি ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য, করুণা এসবের বেশিরভাগই বোঝেনি।
রিইউনিয়নে এসে সুহাস কলেজের বাইরের গেটেই ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিলো। আশেপাশের জুনিয়র ছেলেগুলো, চা বিড়ির দোকানগুলো দেখুক যে সুহাস এখন আর ৫৫ নম্বর বাসে চড়ে না। সে এখন ট্যাক্সিতে চড়ে।
“কি হিসুদা, কেমন আছো?”
পরিচিত সম্বোধন। পিছন থেকে কে যেন ডাকছে।
“এই যে হিসুদা, আমি এখানে”, ফার্স্ট গেটের বিড়ির দোকানের নিমাইদা ছেঁড়া গেঞ্জি আর হাঁটুর উপর লুঙ্গী তুলে দাঁত বার করে হাসতে হাসতে তার দিকেই আসছে।
এই ভয়টাই সুহাসের ছিলো, যদি আমজনতা সুহাসের পিতৃদত্ত নাম ছেড়ে অন্য নামে ডাকে। শালাগুলো কি দেখতে পায় না, যে সঙ্গে বৌ আছে? বাপের দেওয়া নামে কি আমায় সম্বোধন করা যায় না? নিমাইদা দাঁত কেলিয়ে হাঁটুর উপরে লুঙ্গী তুলে সুহাসের নতুন বৌয়ের সাথে আলাপ করতে আসছে।
“কি হিসুদা, বিয়ে করে বৌদিকে নিয়ে এসেছো, খুব ভালো, খুব ভালো। বউদি, আমি নিমাই, ওই দেখুন আমার ছোট্ট বিড়ি তামাকের দোকান। গাঁজাও সাপ্লাই করি। কলেজের সবাই আমার কাস্টমার, হিসুদাও আমার বড় কাস্টমার ছিলো, নিয়মিত তামাক কিনতো, গাঁজা কিনতো।”
একটু থেমে আবার শুরু করলো “বৌদি, এনাদের জন্যই আমার দোকান চলে। হস্টেলের গ্র্যান্ড ফিস্টের দিনে আমিই হোস্টেলে হোস্টেলে গাঁজা সাপ্লাই করি। একদম টপ কোয়ালিটি গাঁজা বৌদি, কোন দু’নম্বরী মাল নয়। মালের গ্যারান্টি দিই। হিসুদা অনেক খেয়েছে। সব জানে।”
করুণা অবাক। দুটি সম্পূর্ন নতুন তথ্য। স্বামীর নাম হিসুদা? আর করুণা এতবছর ধরে এত প্রেম করলো, অথচ সে জানেই না যে সুহাস গাঁজা, তামাক খায়?
নিমাইদা একটু থেমে দম নিলো, ভাবছে আর কিভাবে ওর দোকানের প্রশংসা করা যায়, বা নতুন বৌদিকে ইম্প্রেস করা যায়। “বৌদি, আপনি জানেন না। এখানে ছেলেরা যতদিন কলেজে পড়ে, তখন সব বিড়ি খায়, তামাক খায়। অনেকে গাঁজাও খায়। এই যেমন হিসুদা। তারপর পাস করে মাইনেপত্তর পেলে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে তারপরই সিগারেট ধরে”।
নিমাইদা বয়সে বড়, ছোটভাই সুহাসকে উপদেশ দিলো, “হিসুদা। বিয়ে করেছো, এবার গাঁজা টাজা ছেড়ে দাও।“
এতদিন, বা এত বছর ধরে সুহাস বউ করুণাকে যা যা বোঝানোর চেস্টা করেছিলো, নিমাইদা এই কয়েক মিনিটেই সব ধূলিস্যাৎ করে দিলো। সুহাসের ধৈর্য্যচ্যুতির কারণ আছে। আর নতুন বৌও তাঁর ভাসুরের বয়সী অপরিচিত দেওরের সত্যভাষনে এতটুকুও খুশী হয়নি। নিমাইদা কিন্তু নির্বিকার সরল মানুষ, হাঁটুর উপর লুঙ্গী তুলে দাঁত বের করে হাসছে। কানে কানে প্রশ্ন করলো “বউদি কি জানে, তোমার নাম হিসু?”
সুহাস রাগে লুচির মতন ফুলছে। “চুপ করো নিমাইদা। এই নামে না ডাকলে চলছিলো না?”
- সরি হিসুদা, কিন্তু আমি তো তোমার ভালো নাম জানিই না। জানলে আর অন্য কি নামে ডাকাডাকি করতাম?
- ঠিক আছে। এবার লুঙ্গিটা নীচে নামাও।
নিমাইদা’র তখন ফ্লো এসে গেছে, এখন থামবে না। “বউদি, জানেন তো, এখানের প্রিন্সিপাল সাহেব, ডিরেক্টর সাহেব যখন ছাত্র ছিলো, তখন আমার থেকেই বিড়ি কিনতো। তোমার বর তো কত্তবার আমার থেকে মাসের শেষে ধারে বিড়ি তামাক গাঁজা কিনেছে”। নিমাইদা নিজেই বুঝতে পারছে না কোথায় গিয়ে থামতে হবে।
এবার নিমাইদা অন্য প্রসঙ্গে এলো।
- আচ্ছা হিসুদা, তোমার দোস্ত হারাধনদা কিরকম পাবলিক বলো তো? এখন ভালো চাকরি করছে। কয়লাখনিতে শুনেছি বিশাল মাইনে পায়। গতবার এসে আমার থেকে পুরো প্যাকেট সিগারেট নিলো, বললো, খুচরো নেই। এই এক বছরে এতবার কলেজ এলো, প্রতিবার বলে খুচরো নেই। তুমিই বল, হিসুদা, ভালো ভালো চাকরি করা ইঞ্জিনিয়ারদের এসব মানায়?
সুহাস ভাবে এখনই পালাতে হবে। হারাধন তার বিশেষ বন্ধু, যাকে বলে জিগরি দোস্ত। একই হস্টেলে এঁদের গ্যাং ছিলো। নিক্কো পার্কের প্রোগ্রামে হারাধন কলকাতায় এলে এখন সুহাসের বাড়িতেই ওঠে। করুণার কাছে এই হারাধনের যত গুণাবলীর প্রফাইল দেওয়া ছিলো, আজ সব মাঠে মারা গেলো। সুহাস এখানে আর দাঁড়াতেই চায় না। কোনরকমে বলে, “নিমাইদা, ঠিক আছে। আমি হারাকে বলে দেবো”।
- নিমাইদা, আপনার কত টাকা বাকি আছে?
এটা সুহাসের বউয়ের প্রশ্ন।
- বেশি না বৌদি, কুড়ি পঁচিশ মতন। খাতা দেখে বলতে হবে। কিন্তু বৌদি, আমরা গরিব। এই কুড়ি পঁচিশ টাকাই আমাদের কাছে অনেক।
- আমি, দিয়ে দিচ্ছি।
- না না বৌদি, আপনি কেন দেবেন? আমি দেখেছি, হারাধনদা এই খানিক আগেই কলেজে ঢুকলো। কত ডাকলাম, শুনতেই পেলো না। আমি আজ কোনসময় একবার হারাধনদাকে ঠিক ধরে নেবো।
- নিমাইদা, আপনি উনাকে ধরবেন? আপনার হারাধন দেখুন কোন কয়লার খনিতে গিয়ে কয়লায় তলায় চাপা পড়ে গেছেন। আর আমায় বৌদি যখন বলছেন, তাহলে আমার থেকে এই কটা প্রাপ্য টাকা নিতে অসুবিধে কেন?
এক্কেবারে মোক্ষম সেনটু। আর তার কোপটা গিয়ে পড়ল সুহাসের ওপর। পকেট থেকে পঁচিশটা কড়কড়ে টাকা বের করে নিমাইকে দিতে হলো। “এটা রাখো নিমাইদা, আমি হারাধনের থেকে নিয়ে নেবো”।
সুহাসের বউ তাতেও ছাড়ে না।
- ওনাকে আরও পঁচিশ টাকা দাও। আগে ধারে খেয়েছ। এখন চাকরি করছ। দাও, আরও পঁচিশ টাকা দাও ওনাকে।
কৃতজ্ঞতায় নিমাইএর চোখে জল এসে গেলো।
- বৌদি, সত্যি বলছি, সবাই যেন আপনার মতন ভালো হয়।
- হ্যাঁ নিমাইদা। আপনার দোকানও যেন ভালো চলে, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি।
করুণার কথায় নিমাইএর ভাবনায় টাল খেয়ে গেলো।
- বৌদি। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন প্রতি বছর কলেজে যেন এই হিসুদার মতন বিড়ি, গাঁজা খাওয়া ছাত্ররা আসে। হিসুদার মতন কয়েকজন বড় বড় কাস্টমার থাকলেই আমার দোকান চলে যাবে।
সুহাস বুঝলো এখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়ানো ঠিক হবে না। তাড়াতাড়ি করুণাকে নিয়ে কলেজের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই করুণা প্রশ্ন করলো, “উনি তোমাকে হিসু নামে ডাকলেন কেন?”
- আরে সুহাস থেকে শর্ট করে হিসু করেছে।
- সুহাস থেকে শর্ট করে হিসু? লজিক টা কি?
সুহাস কি যে বলবে ভেবেই পায় না।
- তুমি কি হস্টেলে হিসুর জন্য বিখ্যাত ছিলে?
প্রসঙ্গ পাল্টাতে হবে, কিন্ত অন্য কি প্রসঙ্গে কথা বলা যায় সেটাই মাথায় আসছে না।
আর সামনেই দ্বিতীয় আপদ। কলেজে ঢোকার মুখেই শ্যামলীর সাথে দেখা, এক্কেবারে সামনা সামনি। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায়ই নেই। শ্যামলীদের বাড়ি কলেজের সামনে ফার্স্ট গেটেই। থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় শ্যামলীর সাথে সুহাসের পরিচয় হয়েছিলো।
“আরে? পিনাকীদা যে। কেমন আছো?”
এখানেও একটা রহস্য আছে। শ্যামলী এই সুহাস রায়কে পিনাকী মজুমদার নামেই জানে, চেনে। সুহাস মাথা চুলকাচ্ছে, ব্লাড প্রেসার এক্ষুনি ফল করে যাবে। ইতিমধ্যে শ্যামলী আরও একটি প্রশ্ন ছেড়ে দিয়েছে “ট্যুর থেকে কবে ফিরলে পিনাকীদা? বাব্বা, এতই ট্যুর করছো যে আমাকে এতদিনে একটিবার ফোন করারও সময় পেলে না?”
সুহাস করুণার দিকে তাকায় আর চারপাশ দেখে। ততক্ষণে শ্যামলীর তৃতীয় প্রশ্ন “কি এত ভাবছো পিনাকীদা? নতুন বৌ নিয়ে রিইউনিয়নে এসেছো, নার্ভাস লাগছে? ঠিক আছে, এখন যাও। পরে সময় নিয়ে একবার ফোন কোরো। আগের মতই শনিবার বা রবিবারে সকালে ফোন করবে, অন্যসময় নয়। ভুলবে না যেন।”
করুণার খুব কৌতুহল হলো। “আপনি এঁকে চেনেন?”
- বাঃ, পিনাকীদাকে আমি চিনবো না? বালিগঞ্জের পিনাকী মজুমদার, কলেজের স্টার ক্রিকেট প্লেয়ার, এখন ম্যাকলাল ভারতের ইঞ্জিনিয়ার। আপনাকে বলেনি হয়তো, আমরা দুজনে একসময় খুবই বন্ধু ছিলাম। আমরা একসাথে সিনেমা, রেস্টুরেন্ট, বেলুড় মঠ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ভিক্টোরিয়া, এসব অনেক জায়গায় গিয়েছি।
কয়েক সেকেন্ড থেমে মেয়েটি বললো
- পিনাকীদা, আমার এখন একটু তাড়া আছে। তোমরা এনজয় করো, হ্যাঁ। আমি যাই। পরে কথা হবে। ফোন করবে কিন্তু, ভুলে যেও না।
শ্যামলী চলে গেলো। করুণা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার শ্যামলীকে দেখে নিয়ে সুহাসকে জিজ্ঞেস করলো “তুমি ওনাকে চেনো?”
করুণার প্রশ্নে সুহাসের চেতনা ফিরে এলো। “আরে না, না। নিশ্চয় কারোর সাথে গুলিয়ে ফেলেছে।”
- গুলিয়ে ফেলেছে? ও জানলো কি করে যে তুমি ম্যাকলাল ভারতে চাকরী করছো, বা বালিগঞ্জে থাকো? আর তুমি যে এত ঘন ঘন ট্যুর করো, সেটাই বা সে কি করে জানে?
- আরে বোঝো না? কোথাও আমার কথা শুনেছে, আর আন্দাজে ছেড়ে দিয়েছে।
- বাঃ, আন্দাজে একজন বলতে পারে তুমি কোথায় থাকো? কোথায় চাকরি করো? আর তোমার যে পিনাকী মজুমদার বলে একটা নাম আছে, এটাও তো আমি জানতাম না।
যেভাবে দিনটার শুরু হলো, না জানি ভেতরে আর কি অপেক্ষা করছে? সুহাস আর দেরী না করে ফার্স্ট গেট দিয়ে এগিয়ে গেলো। করুণাও ছাড়বে না। “তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হারাধন’দা বিড়িওয়ালার থেকে ধারে খেয়ে পয়সা দেয় না। আর তুমি দিনরাত তোমার সেই বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রশংসা করো। এইরকম তোমার ফ্রেন্ড সার্কেল?”
সুহাস চুপ, মুখে কোনো কথা নেই।
- আজ তোমাদের হস্টেলের গ্যাং এর হাজা, ঈগল, সিআরপি এঁদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ো তো। দেখতে চাই তোমার গ্যাং কেমন ছিলো।
সুহাস বউকে নিয়ে এগিয়ে যায়। নেতাজী ভবনের রাস্তায় দূর থেকেই দেখছে যে ইলেকট্রিক্যালের প্রফেসর পাগলাবাবু এদিকেই আসছেন। পাগলাবাবুকে সবাই চেনে, জানে কিন্তু আসল নাম কেউ জানে না। ছাত্রদের কাছে উনি এক আতঙ্ক। কখন যে কাকে কি বলে দেবেন, এটাই ভয়। পাগলাবাবুকে দূর থেকে দেখেই অজানা আতঙ্কে সুহাস বউকে একটু এগিয়ে দিলো। বৌএর পিছনে মুখ লুকিয়ে সে চলেছে। কিন্তু পারলো না। আজ একদম সামনাসামনি পড়ে গেছে, পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায়ই নেই। সুহাস পাগলাবাবুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। “স্যার কেমন আছেন?”
পাগলাবাবু কি যেন ভাবলেন। “আমার শরীরের খোঁজ নিচ্ছো। তুমি কি ডাক্তার?”
- না স্যার, আপনি আমাদের ইলেকট্রিক্যালের পেপার পড়িয়েছিলেন।
- তুমি আমার ক্লাসে পড়েছো? মানে আমায় তুমি চেনো?
- হ্যাঁ স্যার, আপনি তো আমাদের পড়িয়েছেন।
- আমি তোমায় পড়িয়েছি? তাহলে তুমি নিশ্চয়ই আমার নামটাও জানো। তা আমার নামটা কি একবার বলো তো?
এই, এটাই ভয় ছিলো। উনি যে কখন কাকে কি প্রশ্ন করে বসেন? এই কলেজে সবাই ওনাকে পাগলাবাবু নামেই চেনে। সুহাস ওনার ভালো নাম কোনদিনই জানতো না, আজকেও জানে না।
সুহাস কথাটা ঘুড়িয়ে দিলো। “স্যার, আমি সিভিলের ছিলাম।“
পাগলাবাবুও ছাড়বেন না। “সে তো বুঝলাম তুমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তুমি বলছো যে আমার কাছে পড়েছো। অথচ তুমি তোমার মাস্টারমশাইয়ের নামটাই জানো না।“
কেন যে সুহাস পাগলাবাবুর সাথে যেচে প্রণাম করতে গেলো।? পাশ কাটিয়ে চলে গেলেই পারতো। এদিকে পাগলাবাবুও ছাড়বেন না
- তার মানে আমি তোমায় পড়িয়েছিলাম, অথচ তুমি তোমার মাস্টারমশাইয়ের নামটাই ভুলে গেছো। ঠিক আছে। আমিই বলে দিচ্ছি। আমার নাম পাগলা ব্যানার্জি। কি এবার মনে পড়ছে?
সুহাসের মুখে আর কোন কথা নেই। আর করুণা ভাবছে কি অবলীলায় একজন প্রফেসর নিজের নাম বলছেন, পাগলা ব্যানার্জি? স্যার আবার প্রশ্ন করলেন, “কি যেন বলছিলে তুমি? কিসের ইঞ্জিনিয়ার?”
- স্যার সিভিল।
- ভালো, খুব ভালো। আমার ল্যাবে কি একটাও মোটর সার্কিট বানাতে পেরেছিলে?
- হ্যাঁ স্যার, বাড়িতে খাতাটা এখনো রেখে দিয়েছি।
- বাঃ, বেশ করেছো। তা এখন কি করছ? পাড়াতে গম ভাঙানোর দোকান দিয়েছো? দেখো, কেরামতি দেখিয়ে তোমার গম ভাঙানোর দোকান যেন আবার শর্ট সার্কিটে উড়িয়ে দিও না।
- না স্যার, ম্যাকলাল ভারতে আছি। নামী প্রজেক্ট ফার্ম স্যার, কনসট্রাকশন সাইটে কাজ করছি।
- কি সব্বনাশের কাণ্ড! কনসট্রাকশন প্রজেক্টে বিল্ডিং বানাও? তোমার তৈরি বিল্ডিং তো ভূমিকম্প ছাড়াই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। কাগজের হেডলাইন হয়ে যাবে। কি ভয়ংকর ব্যাপার! এক কাজ করবে, যেখানে যেখানে তুমি বড় বড় বিল্ডিং বানাচ্ছো তার লিস্টি আমায় দিয়ে দিও, ওর ধারেকাছে দিয়ে তো যাওয়াই যাবে না। জানিয়ে খুব ভালো করেছো। সাবধান হতে হবে।”
সুহাস চুপ করে আছে। একবার বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো। পাগলাবাবু আর ওদের আটকে না রেখে ছেড়ে দিলেন “যাও যাও তোমার জিনিয়াস ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুরা তোমার জন্য ময়দানে অপেক্ষা করছেন।”
পাগলাবাবু এগিয়ে গেলেন। সুহাসের বউ সামান্য একটু দূরেই ছিলো, সব কথাই তাঁর কানে গেছে। “উনি তোমার স্যার ছিলেন?”
- হ্যাঁ, পাগলাটে লোক, ইলেকট্রিক্যালের প্রোফেসর ছিলেন।
- একটা কথা বলো। তুমি ইলেকট্রিক্যালের ছাত্র, অথচ ওনাকে সিভিল বললে কেন? আর উনিই বা তোমাকে গম ভাঙানোর দোকান করতে বলবেন কেন?
সুহাস চুপ করে গেলো। উত্তর দিলেই কথা বাড়বে।
একটু এগিয়ে নেতাজী ভবনের সামনে গিয়ে দেখে ধীরে ধীরে ভিড় বাড়ছে। প্রাক্তন ছাত্রদের মাঝে কিছু বর্তমান ছাত্রছাত্রীরাও আছে। রিসেপশন ডেস্কে কয়েকটি মেয়ে বসে রেজিস্ট্রেশনে ব্যাস্ত। সৌমিত্র পাশ করে গেছে, কিন্তু দেবযানী এখনও কলেজে পড়ছে। সৌমিত্র এখন কারনে অকারণে কলেজে আসে। আজকে দেবযানী রিইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে বসেছে। আর সৌমিত্র প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে দেবযানীর পাশে বসে আধ পাতার রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ফিলআপ করাচ্ছে। দূরে সংযনী দাঁত বার করে তিন বছরের জুনিয়র ঝুমের সাথে গপ্পো করছে। আজ অনেকদিন পরে সে ঝুমকে পেয়েছে। সুহাসের খুব হিংসে হলো। ওরও খুব ইচ্ছে ওই ডেস্কের মেয়েগুলোর সাথে খানিক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে। মনটাও ভালো থাকবে। কলেজ টিমের ক্রিকেট প্লেয়ার ছিলো, লেগ স্পিন বোলার। অথচ মেয়েগুলো কলেজে থাকতে ওঁকে পাত্তাই দিলো না। সুহাস আড়চোখে দেখে বউ দূর থেকে ঠিক তাকেই দেখছে। না, থাক। আজকে শুরু থেকেই এখানে সময় ভালো যাচ্ছে না। একবার ভাবলো যে আজকে বউকে না নিয়ে এলেই হয়তো ভালো হতো।
রেজিস্ট্রেশনে নামধাম লিখিয়ে ফিরতেই হুলোর সাথে দেখা। হুলো অনেক আগে সুহাসের এক’বছরের সিনিয়র ছিলো। সে কলেজ ছেড়ে যাবে না। আর মাস্টারমশাইরাও ওঁকে পরীক্ষায় নম্বর দেবেন না। এইভাবে চলতে চলতে হুলো সুহাসের তিন বছরের জুনিয়র হয়ে গেলো। বহু পরিশ্রম করে হুলো এখন ফাইনাল ইয়ারে উঠেছে। তবে ফাইন্যাল ইয়ারে হুলো এখন কতদিন থাকবে সেটা কেউই বলতে পারবে না।
“আব্বে ধেনো, তুই এসেছিস?”
হুলো সুহাসকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেলো। সব্বোনাশ, এক্কেবারে বউএর সামনে। তারপর বলে, “ধেনো, শোন না। সন্ধেবেলা আমকে একবার গার্ডেন বারে নিয়ে যাবি? অনেকদিন যাইনি রে, হাতে পয়সাও নেই। তুই তো চাকরি করিস। আজকের দিনে আমাকে একটা ভালোমন্দ মাল খাওয়াবি না?”
প্রথমে ফার্স্ট গেটে নিমাইদা, তারপর শ্যামলী, তারপর পাগলাবাবু, এবার হুলো, আর তার চুমু। দিন এক্কেবারেই ভালো যাচ্ছে না। কাটাতে হবে, হুলোকে কাটাতেই হবে।
- “না না, হুলোদা, আজ নয়। অসুবিধা আছে।”
হুলো শুনবে না। বলে, “না, না। আজকেই যাবো। আর এই শনিবারেই চল মোকাম্বো যাবো। গুরু হেব্বি একটা মাল এসেছে, ভেরোনিকা, রাশিয়ান টপ পিস। হেব্বি নাচে। যা ঝাঁকুনি দেখায়, তোকেও কাঁপিয়ে দেবে, এক্কেবারে দে দনাদ্দন কেস। মাইরি বলছি, তুই এর আগে অনেক অনেক দেখেছিস, কিন্তু এরকম রাশিয়ান পিস দেখিসনি। মা কালীর দিব্বি রে, বাজারে এক নম্বর জেনুইন পিস।
- না না না, ওসব এখন নয়, একদম নয়।
- গুরু, একবার চলো প্লীজ, তুমি আগে যা দেখেছ, সেরকম না। এক্কেবারে নতুন ফ্রেস পিস, গ্যারান্টি কেস। টপ কোয়ালিটি। একবার শুধু দেখবি চল।
সুহাস আবার আড়চোখে বউকে দেখে নিলো। হে ভগবান, আজ কি যে হচ্ছে? তাড়াতাড়ি হুলোকে কাটিয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে গেলো।
লর্ডসের মাঠে এদিক ওদিক অনেক বসার জায়গা করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তনীরা এক একটা টেবিল ঘিরে বসা। সুকান্ত অঞ্জনার সাথে দেখা। ওরা ক্লাসমেট। কলেজের পাঁচ বছর ওদের সম্পর্ক ছিলো “তুই”। অঞ্জনা মাস্টার্স করতে এলো, সুকান্তও পিছন পিছন এলো। এরপরেই ওঁদের “তুই” হয়ে গেলো “তুমি”। বাদল এক কোনায় পল্লবীর সাথে গপ্পো করছে। বাদলকে এত খুশি খুশি খুব কমই দেখা যায়। তার পাশেই সোমনাথ আর মিতালি। সোহম যথারীতি মেয়েদের ফটো তুলতে ব্যাস্ত।
লোকজন ধীরে ধীরে আসছে। সুহাস তাঁর নিজের দলে ভিড়ে গিয়ে করুণার সাথে বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিলো। একজনের নাম কিছুতেই মনে আসে না। অবস্থা বুঝে বন্ধুটিই সমাধান করে দিলো “শোনো, আমার নাম ঝাঁটা। তোমার বর আমার বাপমায়ের দেওয়া নামটা মনে করবার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারবে না”।
করুণা অবাকই হলো। অনেকরকম নাম হয়, তা বলে ঝ্যাঁটা?
- ঝ্যাঁটা? অদ্ভুত নাম তো! এরকম নাম কেন?
- ঝ্যাঁটা নয়, ঝ্যাঁটা নয়। ঝাঁটা, ঝাঁটা। উচ্চারণটা স্পষ্ট করো। ফার্স্ট ইয়ারে স্টুডেন্ট সেলুনে আমি স্পেশাল হেয়ার কাট করেছিলাম। তারপর থেকেই আমার এই নাম। আগামী তিরিশ বছর পরেও আমার এই নামই থাকবে।
- ওঃ। আপনাদের এরকম নাম হয়?
- কেন? তোমার বরের নাম তো ধেনো? তোমায় বলেনি?
করুণা এই প্রথমবার শুনলো। খানিক আগেই শুনলো হিসু, আর এখন ধেনো?
- ওর নাম যে ধেনো সেটা আমায় কিন্তু আগে কোনোদিন বলেনি।
- বলেনি? আশ্চর্য। তাহলে এখন থেকে জেনে রাখো। আর এই দ্যখো, এই যে সামনে যাদের যাদের দেখতে পাচ্ছো, এখানের নাম হলো, এই যে ডানদিক থেকে আমি ঝাঁটা। আমার পরে সখী, দৈত্য, তোমার বর ধেনো, মামদো, সিআরপি, তারপর মাসী, আর লাস্টে বসে অপর্ণা।
- অপর্ণা? ব্যাটাছেলের নাম অপর্ণা, মাসী? এরকম নাম কেন?
- হ্যাঁ, অপর্ণা। ব্যাটাছেলে অপর্ণা। তবে কেন সে অপর্ণা হলো, সেই উত্তর আমরা জানি না। অনেক মুনির অনেক মত। কিন্তু এককথায় সে আমাদের সবার অপর্ণা।
- আর মামদো কেন?
- ভগবান ওঁকে ধবধবে ফর্সা বানিয়েছেন, তাই মামদো।
করুণার বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো, ব্যাটাছেলের নাম অপর্ণা। সামনে একটা মোটা গাবদাগোবদা ব্যাটাছেলে মাসীও বসে আছে।
- আপনাদের হাজা, ইগল আসেনি?
খানিক থেমে আবার বললো
- একবার আপনাদের নৃপেষদাকে দেখিয়ে দেবেন তো। ওনার কথা অনেক শুনেছি।
করুনার খুব জানার ইচ্ছে যে ওর বরের নাম ধেনো কেন? “আরে ফার্স্ট ইয়ারে তোমার বর সকালবেলায় ধেনো মদ দিয়ে দাঁত মেজে কুলকুচি করতো। তাই।”
করুণা কিছুই বুঝলো না। ধেনো মদ দিয়ে কিভাবে কুলকুচি করে?
ঝাঁটা এখানেই থামলো না। “তোমার বরের অনেক নাম। কলেজের খাতায় সুহাস,আমাদের কাছে হিসু আর ধেনো। কলেজের বাইরে পিনাকী। আরেকটা নাম আছে, এখানে বলা যাবে না। ওসব ব্যাপার তুমি বুঝবেও না।”
পাতি তখন মাঠের খবর এনেছে। “একদিন মাঠে যাবি? গাগা বলছিলো হিরো এখন ভালো দৌড়চ্ছে। চল এই শনিবারেই যাই।” সুহাসের যাওয়ার ইচ্ছে নেই। “না বে, বড্ড বেশি রেট। আর ওখানে গেলে আরও শ’ দু’শ এমনি বেরিয়ে যায়।“
- মিসেস মার্গারিটার সাথে দেখা হলেই তোর খোঁজ নেয়। বলছিলো তোর সাথে কাঠমান্ডূ ট্রিপে যাবে। তবে আমি বলেছি তুই এখন কোথায় আছিস আমি কিছুই জানিনা।
সুহাস আবার একবার বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো। পাতি জানে না যে সুহাস তাঁর বৌকে নিয়ে এসেছে। “তবে চল, আজ এতদিন বাদে সবাই এসেছি। একবার সবাই গোডাউন গেটের ঠেকে গিয়ে কিছু একটা নম্বর লাগিয়ে আসি। ওপেনে ক্লোজে যা খুশি। এমনিই চল। অনেকদিন খেলিনি। যাবি?”
সুহাস আর তাঁর বউ শুধুই শুনে যায়। মুখে কোনো কথা নেই। মুখ খুললেই বিপদ।
এমন সময় হটাৎ পাশেই কে যেন জোরে জোরে অন্য কাউকে বলছে, “আবে *****************।“
ইসসসসসসস!!!! কি ভাষা? সুহাস এই ভয়টাই পাচ্ছিলও।
অপর্না করুণার কানে কানে বললো, “হারাধনকে চেনো? ইনিই হারাধন।“
- কিন্তু হারাধন’দা তো আমাদের বাড়িতে কতবার এসেছেন। এরকম তো দেখিনি।
- কারণ সেটা অন্য হারাধন। আর আজকে এখানে যা দেখছো, এটাই অরিজিনাল হারাধন।
একটু পরে লেটো এসে বসলো। লেটো গতকাল দুপুরেই তাঁর পুরনো হস্টেলে এসে উঠেছে। সঙ্গে হোমো, নুনু’দা আরও কয়েকজন। কাল দুপুর তিনটে থেকে হস্টেলে তিনপাত্তি শুরু হয়েছিলো, চলেছে আজ ভোররাত পর্যন্ত। সুহাসের বউকে সে খেয়াল করেনি। “আব্বে ধেনো, খবর কি তোর? কাল দুপুরে থেকে হোল নাইট তিনপাত্তি হলো। তোকে মিস করলাম। এখন আছিস কোথায়? তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হোমো তোর খোঁজ করছিলো।”
সুহাস এবার ভাবছে আজকে না এলেই ভালো ছিলো। লেটো এবার এক নতুন অধ্যায় খুলে দিলো। “ধেনো, তোর মনে আছে? ব্যাতাইতলার করবী, হাওড়া গার্লসের চন্দনা। উফ, কি অসাধারণ সব পার্টনারগুলো ছিলো রে! আর বি গার্ডেনেরও আমাদের কি সব দিন ছিলো। লাইফে সব এখন শ্মশান হয়ে গেলো। জানিস তো, তোর চন্দনা এখন ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে হেভি লাইন মারছে”।
এক নিঃশ্বাসে লেটো কথাগুলো বলে গেলো। গোটো পাশেই ছিলো। বুঝল আলোচনা কোন ভয়ংকর দিকে এগিয়ে চলেছে। পরিস্থিতি ম্যনেজ করে তাড়াতাড়ি লেটোর সাথে সুহাসের বউয়ের পরিচয় করিয়ে দিলো। লেটো জানতোই না যে হিসু বিয়ে করে ফেলেছে, আর আজ বৌকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। একটু অপ্রস্তুত হয়েও লেটো আবার সেই নিজের ফর্মে ফিরে গেলো। “গুরু হুসু, তুমি এর মধ্যেই মাল নামিয়ে দিলে? তা একটা আধটা শ্যালিকা আছে নাকি ভাই?”
ইতিমধ্যে হোমো আর নুনু’দা এসে হাজির। গোটোই পরিচয় করিয়ে দিলো, “এই হচ্ছে আমাদের হোমো আর নুনু’দা। এই হোমো তোমার বরের বিশেষ বন্ধু।”
হোমো খুব স্মার্ট, বললো, “জানি না, নেক্সট কবে আবার দেখা হবে, আমি ইউএস যাচ্ছি।“
পাশ থেকে কে যেন বললো, “সেই ফার্স্ট ইয়ারের দিন থেকে হোমোর দেহটাই শুধু এদেশে পড়ে আছে, আত্মাটা পড়ে রয়েছে আমেরিকায়।“
অপর্না কানে কানে বললো,”এই হলো তোমার বরের বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে হোমো বললে রেগে যায়। সমকামী বললে খুশী হয়।“
ইতিমধ্যে ব্যাতাইতলা গার্ডেন বারের ছেলেটি একটা ফটো নিয়ে ঘুরছে। “আমার বাবা মারা গেছেন। খাতায় লিখে গেছেন, ইনি বছর কয়েক আগে এসে চোলাই খেয়েছিলেন, বলেছিলেন পরে পয়সা দিয়ে যাবেন। বাবা খাতায় লিখে রেখেছেন।“
সর্বনাশ, এ তো গাগার ফটো।
ধীরে ধীরে লর্ডসে সন্ধ্যা নেমে আসে। এবার যে যার নিজের বাড়ি ফিরে যাবে। সুহাস বউকে নিয়ে ফার্স্ট গেটে ফিরে আসে, ট্যাক্সি ধরবে।
অনেকক্ষণ দুজনে কোনো কথা হয়নি। সুহাস বুঝতে পারছে যে ওর বউ এর মুড ভালো নেই। নিজেই যেচে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে, এত চুপচাপ কেন?
- কেন জিজ্ঞেস করছ? তোমার একটা ভালো নাম থাকতেও লোকে কেন তোমায় হিসু আর ধেনো নামে ডাকে? এরকম নিকনেম কেন হবে? কে এক মেয়ে তোমাকে পিনাকী মুজমাদার নামে চেনে। তোমার পার্টনার ছিলো ব্যাতাইতলার করবী, হাওড়া গার্লসের চন্দনা। তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হারাধনের ভাষা শুনলাম। সে আবার বিড়িওয়ালার পয়সা দেয় না। আরেক বন্ধু মদের দোকানে ধার রেখে পালিয়ে যায়। আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড হলো হোমো, সমকামী। তুমি বিয়ে করেছো মানে বন্ধুর ভাষায় মাল নামিয়েছো? তোমরা তামাক খাও, গাঁজা খাও। গরম ভেরোনিকার কাঁপুনি দেখতে যাও। গার্ডেন বারে যাও। তোমার প্রোফেসর ভাবে তুমি গম ভাঙ্গার দোকান খুলবে। তুমি রেসের মাঠে যাও। কে এক মিসেস মার্গারিটা রেসের মাঠে তোমার খোঁজ নেয়, তোমাকে নিয়ে কাঠমান্ডূ যেতে চায়। তোমরা গোডাউন গেটে সাট্টা খেলো। তুমি কোন এক চন্দনাকে লাইন মারতে, এখন সে তোমাকে ছেড়ে একটা ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেকে লাইন মারে। তোমার বন্ধুরা হলো নুনু’দা, মামদো, হুলো, ঝ্যাঁটা। এরপর বলবে আমার কেমন লাগা উচিৎ?”
মাইরি, হেব্বি ভুল হয়ে গেছে।
বউটাকে আরও বেশ কয়েক বছর পুরনো করে তারপর কলেজে নিয়ে আসলে ঠিক হতো। এখন এর মেরামতি করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।
আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের নিখুঁত বর্ণনা। দারুন লাগলো।
ReplyDeleteদারুন দারুন। ফাটাফাটি লেখা
ReplyDeleteখুব সুন্দর খুব মজার। কৃষানু বসুর মাধ্যমে লেখাটা আমাদের গ্রুপে এসেছে।
ReplyDeleteপড়লাম।ভালো লিখেছো তোমাদের কলেজ জীবনের স্মৃতি । নিকনেমে তোমরা বেশ প্রোগ্রেসিভ ছিলে !
ReplyDeleteAnobaddyo. Beca 63 App group- e post koray dilam. 60 active members even now.
ReplyDeleteJ -da.
অনেক দিন পর খুব হাসলাম। তবে ডোজটা বেশ বেশি দিয়েছ।
ReplyDeleteএক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। দারুন লিখেছো। ❤❤
ReplyDeleteআগে থেকে training না পেলে এরকমই কেস হবে।
ReplyDeleteDarun Darun 👌👌
ReplyDeleteDurdanto!! Kichu bolar nei!!
ReplyDeleteএককথায় "ফাটাফাটি "।
ReplyDeleteSignature presentation!!! Bravo!!! Keep it up!!!! This is typical and original bikkolej!!!!!!most nostalgic! Greatly miss those heavenly days.
ReplyDeleteচরিত্র গুলো বেশীর ভাগই অসীমের ব্যাচের। রিলেট করতে অসুবিধা হয় না। এটাই আমাদের বিক্কলেজ।
ReplyDeleteজব্বর লিখেছো, মাইরী।
ReplyDeleteআহা!
ReplyDeleteমধুর বচন
ততোধিক সুমধুর বয়ান
আরও অনেক বিখ্যাত চরিত্র বাদ গেলো ।
ReplyDeleteসামনের তুলে ধরিস।
তুমি কিন্তু দারুন লিখেছো👌
ReplyDeleteআমাদের 74 গ্রূপে পোস্ট করেছি without your permission.
দুর্দান্ত। ফাটাফাটি । আমারই এতো বছর বাদে বুক কাঁপছে। বউকে নিয়ে বার পাঁচেক ঘুরে এসেছি । তবে ও কলেজের নাম ধামে অভ্যস্ত । আর আমার গাঁজা বা মাল খাওয়া তো প্রথম জীবনে দেখেছে আর দাদার কাছে " তবে থাক " এর গল্পও শুনেছে ।
ReplyDeleteবিজিত কুমার রায়
দুর্দান্ত লেখা। কলেজ জীবনের নিখুঁত বর্ণনা। অনেক চরিত্রকেই চেনা মনে হল। খুব খানিক হাসলাম।
ReplyDeleteA very hilarious account of students' days in a residential engineering college . Very well written with vivid descriptions.
ReplyDeleteখুব খুব সুন্দর লেখা! এটাতো ভাইরাল হয়ে গেছে। খুব বাঁচা বেঁচে গেছি.. বিয়ের প্রথমদিকেই বৌকে নিয়ে কলেজ যাইনি। যারা কলেজের ছেলে বা মেয়ে বিয়ে করেছে — তাদের এ বিপদে পড়তে হবে না !
ReplyDeleteখুব সুন্দর লেখা হয়েছে দাদা!
ReplyDeleteখুব মজা পেলাম!
নামকরণের অভিনবত্ব আছে। লেখাটা খুব ঝরঝরে, তবে ডোজটা একটু বেশি হয়ে গেছে বোধহয়। চালিয়ে যাও। কলেজের গল্প আরও শুনতে চাই
ReplyDeleteদারুন! আমার এক বন্ধু ফরোয়ার্ড করেছে।
ReplyDeleteরঞ্জন চক্রবর্তী।
অনেকবার পড়েছি, আবার পড়লাম। আমাদের কলেজ, হোস্টেল আর বন্ধুদের নিয়ে এক অনির্বচনীয় ছবি। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteহিমাংশু পাল , বি ই কলেজ ১৯৯০ ব্যাচ
Deleteপড়লাম, নিজের মনেই হাসলাম, কলেজ জীবনের নস্টালজিয়া হানা দিল.....খুব ভাল লিখেছেন, জবাব নেই, চালিয়ে যান। প্রত্যাশায় রইলাম রশিকলালের পরের লেখার জন্য।
ReplyDeleteরস না থাকলে জীবনই বৃথা। বিক্কলেজের অপূর্ব অসাধারণ এই রস, যা চার-পাঁচ বছর আহরণ করে বাকি সারাটা জীবন বিতরণ আর উপভোগ করা যায়, যা আমাদের বুড়ো হয়েও বুড়িয়ে যেতে দেয় না, এ এক অমূল্য সম্পদ। এ এক অনাবিল অবলীল অথচ অনশ্লীল উচ্চকিত রস যা ছেয়ে থাকতো আমাদের অতি সাধারণ যাপন কে আর ঢেকে রাখতো আমাদের কঠিন কঠোর পড়াশোনার সাধন কে। এ রসে যারা বঞ্চিত তাদের জন্যে সত্যি ভারি দুঃখ হয়। এ রসের আর এক গুণ, এ বেঁধে রাখে প্রজন্মের পর প্রজন্মের বিক্কলেজী কুশীলবদের এক অকাট্য প্রীতির বাঁধনে। এই লেখায় অসীমদা সামান্য সাহিত্যিক অতিকথনের স্বাধীনতা নিলেও, যে এক খন্ডচিত্র তুলে ধরেছে তা একেবারে সত্যি, আমাদেরও এরকম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। এসব উপাখ্যান যত ধরে রাখা যায় ততই ভালো, কারণ দিন ক্রমশ রসহীন হয়ে আসছে... অভিনন্দন দাদা... আরো আসুক... সুদীপ্ত চক্রবর্তী আর্কি বিরাশি
ReplyDeleteবেচারা সুহাস ওরফে পিনাকি ওরফে হিসু। নতুন বৌএর কাছে এক্কেবারে নাকানিচুবানি। যতই গল্প হোক, অনেকের জীবনেই এত বড় না হলেও ছোটখাটো নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে। লেখকের নির্মল হাস্যরসের ও রসিকতাবোধের পরিচয় পেলাম।
ReplyDeleteযদিও গল্প, তবু অনেকাংশেই সত্যি। অনেকে ভালো ছেলেই এরকম বিড়ম্বনার শিকার হয়।
ReplyDeleteI understand the story is based on the campus hostel days of any engineering college, but it happens with other colleges also. Its a wonderful narration. Great writing
ReplyDeleteখুবই সরস লেখা বিক্কলেজের কলেজ জীবন অবলম্বনে। ভীষণভাবে উপভোগ করলাম।
ReplyDeleteপড়তে পড়তে আমার নিজের কলেজ হস্টেলের দিনগুলো মনে পড়ে গেলো। দারুণ হয়েছে ভাই/দাদা।
ReplyDeleteশ্রীকান্ত মুখোপাধ্যায়
পড়লাম, এবং কিছু ফরোয়ার্ডও করে দিলাম। এককথায় গল্প হলেও কিছু কিছু সত্যি, আমাদের অনেকেরই এই অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
ReplyDeleteসুজন মুখোপাধ্যায়
কলেজের ক্যাম্পাস জীবনের এক অনবদ্য রসময় জীবনের ছবি খুব সাবলীলতার সাথে লিখেছেন।
ReplyDeleteঐ সময়ের ছাত্র জীবনের অনেক মজার অভিজ্ঞতার ও আনন্দের হাটের চিত্র আপনার পরিশীলিত লেখনীর মধ্যে ফুটে উঠেছে।
খুব ভাল লাগল পড়ে।👌👌
অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এক ঢোকে গিলে ফেললাম। চালিয়ে খেলে যা।
ReplyDeleteচমৎকার, খুব ভালো লাগলো, অনেকটাই সঞ্জীব চ্যাটার্জী অথবা তারাপদ রায়ের ঘরানার লেখা, অনাস্বাদিত এবং সম্পূর্ণ আধুনিক লেখা। আমাদের মতন যারা হস্টেলে থাকে নি, তারাও এঞ্জয় করবে।
ReplyDeleteআরো অনেক অনেক লেখার আশায় রইলাম।
পার্থপ্রতিম নিয়োগী, ফরিদাবাদ
এক বারে পড়ে উঠতে পারিনি; হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেতে, ক দিনের ফাঁক দিতে হয়েছে ক বার।
ReplyDeleteঅপূর্ব ভাষা ব্যবহার করেছেন - সে নিমাইদার হোক বা হুলোর। আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসাধারণ।
আগেও বলেছি, এবারেও - আপনার কলম অক্ষয় হোক। 💐