গল্প - ময়ূরী মিত্র
Posted in গল্পমাটির গৃহে সন্ধে হয় ৷ শঙ্খে শব্দ ওঠে ৷ পিদিম জ্বলে ৷ তুলসীতলায় দুটি সস্তা ধূপকাঠি জ্বালে গরীবের শ্যামা মেয়ে ৷ তাতেই এক মহান গন্ধ ছড়ায় কোণে কোণে ৷ চারপাশের গাছ আগাছা গন্ধমালায় জড়িয়ে যায় ৷ সব গাছ মিলে একটি মহাবৃক্ষ জন্ম নেয় ৷ শ্যামা ছোঁয় তাকে ৷ মনে মনে ৷
পিতা আজ চাল আনেননি ৷ চড়া দাম হাঁকিয়ে বেগুনের গুণ বলতে পারেননি ৷ বেগুন বিকোয় নি --গিমে শাক , লাল শাক কিছুই বিকোয় নি শুধু চিৎকারের অভাবে ৷ ভরা সাঁঝে খিদে সইতে না পেরে পিতা আর মেয়ে এক থালে খেয়েছে কিছু চিড়া আর রাঙা আলু সিদ্ধ ৷
জিভের জ্বালা মেটেনি মেয়ের ৷ প্রদীপ হাতে গভীর পুকুরে নামে মেয়ে ৷ হাতের আলোকখণ্ড থেকে পুকুরের জলে আলো পড়ে ৷ ছোট আলো ছোট হয়েই জলে কাঁপে ৷ অবাক চোখে শ্যামা দেখে দীপের ছোট আলোকে বিন্দু বানিয়ে দিচ্ছে সারা পুকুরে ছড়িয়ে থাকা সাদা জোছনা ৷ গরিব মেয়ে স্থির করতে পারে না -- কোন অংশের জল খাবে সে ৷ চাঁদে ভেজা জল নাকি মাটির দীপের আলো ছিটকানো কম আয়তনের জল !
বৈভব ও স্বল্পতার চিরকালীন ধন্দে পড়ে গরীব ৷ একসময় আকাশের মেঘ এসে চাঁদ ঢাকে ৷ বাতাস ঝোড়ো হয় ৷ মেয়ে দেখে সারা পুকুরের জল কালো কৈ মাছ হয়ে যায় ৷ আর তার মধ্যে ফোটে একটা আলোর ফুল ৷ প্রদীপে আলোকিত জল খেয়ে ঘরে যায় কালো মেয়ে ৷ আচঁলের তলায় আলোটুকু বাঁচিয়ে এনেছে সে ৷
ঘরে ফিরে দেখে --- পিতা পরের দিনের বিক্রির জন্য সবজির চুবড়ি সাজাচ্ছেন ৷ বেছে বেছে টাটকাগুলো তুলেছেন ৷ গলা তাঁর কালও শব্দে ভরবে না ৷ তবু মানুষের খাদ্য হবে খাঁটি ৷
মহাবৃক্ষ শত শিকড় বিকশিত করে আশীর্বাদ দেয় ৷ শ্যামা পিতার কন্ঠ জড়ায় ৷ রাতচরা পাখিরা আলোচনা করে -- ওই দ্যাখ -- মেয়েটার ঝাঁকড়া চুলে এখনো প্রদীপের আলো কাঁপে ৷ চল আজ ওর ঘরে ঠাঁই নি ৷ যা বৃষ্টি ----চ চ ৷ কাল ভোর হলে ওদের জাগাতে হবে না ? দরিদ্র কেন থাকবে পড়ে একেলা বনের মাঝে ৷ আমরা পথ চিনিয়ে দেব তাদের --- সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেব আমাদের পিতাকে৷
মাটির নিবাসে পৌঁছয় রাত্রিকালের পাখি ৷ ধূসর
কাঁথায় ডানা পেতে বসে ৷ দীপটিকে ঘিরে কুটকুট ছড়া কাটে গগনের জীব --
ওরে কালো মেয়ে
ওরে গরীবের মেয়ে
মোদের সঙ্গে আজ তোর
চন্দনফোঁটা খেলা ৷
চাঁদ তারা ফেলে
কোলে তুলে নিয়েছে যে মাটির আলো
মরণ এলেও তার মৃত্যু হবে না কখনো ৷
মানুষ মিলতে ভুলেছে
পাখি আমরা
মিলনের গান গাই ৷
গাইতে গাইতে রাতচরা পাখিদের ঝুঁটিগুলো আজ একটু বেশি লাফাচ্ছে না ? কী এক আবিষ্কারের আনন্দে চোখ ঝলমল করছে না ?
তাই তো !
গরীবকে বাঁচার পথ চেনাতে গিয়ে তারাও তো দেখবে একটি সূর্যভরা দিন --জীবনে এই প্রথম ৷
এ এক মায়াময় লেখা। যার ভালো মন্দ কোন মন্তব্য করা যায় না।
ReplyDeleteঅসাধারণ.erokom অনুভূতি মনে dei vorosa শুধু alor সাবধানে.. positive thinking এর lekha
ReplyDeleteখুব মায়াময় এক লেখা
ReplyDeleteদরিদ্র বলি যাদের তাদের জন্য প্রকৃতির সচ্ছলতার কামনা ভরা লেখা
ReplyDeleteবৈভব ও স্বল্পতার চিরকালীন ধন্ধে পরে গরীব। আহা স্বার্থক অনুভূতি। স্বার্থক কলম তোমার।
ReplyDeleteধনীর ধনের উচ্ছ্বাস থাকে। দরিদ্র কিন্তু স্বল্প কিছুর মাঝেই প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পায়।এবং সেই পারে সূর্যোদয়ের আলোর অপেক্ষা করতে। তার কাছে রাতচরা পাখির আওয়াজ, সূর্যোদয়ের নতুন এক বুক ভরা আশা কে বাঁচিয়ে তোলে। আর সেই বাঁচার আনন্দেই দরিদ্রের চিরকালীন আন্তরিক আনন্দ । খুব সুন্দর লেখা। আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ReplyDeleteExcellent 👌👌..... আবিষ্কারক কে অভিবাদন জানাই.... তুমি যে আমার চোখ খুলে দিলে.... সহজ সরল গ্রাম বাংলার যাপন...... কিন্তু আমরা তো থালায় জল ঢেলে ভাতের পরিমান বারাই না.... চাল মজুত .… আহা, বাপ মেয়ের যাপন কত কষ্টের..... তবুও প্রদীপের আলোয় আলোকিত...
Deleteখুব ভালো লাগলো। নির্ধন আশায় বাঁচে ... আলোর অপেক্ষায় ।
ReplyDeleteআপনার লেখায়, লেখা পড়া ,আর ছবি দেখা দুটোই হয় ۔অক্ষরমালা দিয়ে একটি অতি বাস্তবের ছবি এঁকেছেন ۔😍
ReplyDeleteবড় মন ছুঁয়ে গেলো
ReplyDeleteখুব খুব ভালো লাগলো। লেখা তো নয়,যেন ছবি।
ReplyDeleteVan Gogh এর Starry night না কোন কবির কবিতা নাকি গল্পকারের গল্প .. পাঠ শেষে এমন ই বিষ্ময়ে কাটল কিছু মুহূর্ত। প্রকৃতির প্রাণের খোঁজ পেলে কে বা ধনী আর কে বা গরীব! ভারি সুন্দর তোমার অনুভুতি আর তার প্রকাশ। আমি stumped.
ReplyDeleteকে কায়েত? মনুবাদ নয় আমি বিশ্বাস করি মানবতাবাদে। এবং সেই মত অনুযায়ী জন্মে নয়, কর্মে ব্রাহ্মণ হয়। আর আপনি ব্রাহ্মণ। আপনার লেখার হাত চমৎকার। আর এই লেখাও নিঃসন্দেহে ভারী মায়াময়, সুন্দর।
ReplyDeleteঅপূর্ব মায়াময়
ReplyDeleteমায়াবী কলম আপনার। জাদুরাজ্যে নিয়ে যায় আমায়
ReplyDeleteঅপূর্ব এক অনুভূতি, মন ছুঁয়ে যায়। সুন্দর লেখা। খুব ভাল লাগল
ReplyDeleteএক দরদী কলমের আঁচড়ে যা তৈরী হয়েছে, তাকে গরীবের আখ্যান বলব না, বলব এক ধনী মনের গভীর অনুভূতির গল্প! আর আছে প্রত্যয় - আগামী দিন শুভ হবে সবার জন্য! এ পৃথিবীর প্রাণীকূল দেখবে আলোয় ভরা আকাশ!
ReplyDeleteআমি মুগ্ধ! … সুচিত্রা সেন
গল্প না বলে কবিতা বলাই ভালো ।
ReplyDeleteঅনুভূতি র অপূর্ব বহিঃপ্রকাশ।।
ReplyDeleteঅপূর্ব !!
ReplyDelete🙏 আগেই পড়েছি। পোস্ট করেছিলেন। অপূর্ব লেগেছে। আপনার লেখায় কোন সমালোচনা করার কোনো জায়গা নেই। শুধুই মুগ্ধতা।
ReplyDeleteঅসাধারণ মায়াময় একটা গল্প পড়লাম।
ReplyDeleteখুবই মর্মস্পর্শী রচনা। এক কথায় অসাধারণ। আপনি আরও লিখুন আমাদের জন্য।
ReplyDeleteকি মায়া জড়ানো। এ যেন ছবি !!!
ReplyDeleteকাব্যিক রসে ভরা অসহায়ের আর্তি শুনতে পাই যেন। গতানুগতিকতার বাইরে এমন লেখা চোখে কম পড়ে। জীবন থেকে নেয়া গল্পটি ভালো লেগেছে।
ReplyDeleteবড় সুন্দর লিখেছো।
ReplyDeleteএ শুধু একটা গল্প নয় , এ যেন প্রকৃতির ছোট্ট এক টুকরো ক্যানভাসে আঁকা জীবনচিত্র। চাঁদে ভেজা জল... আহা এমন কত শব্দকল্পনায় খচিত এই ক্যানভাস দিগন্তবিস্তৃত।
ReplyDeleteঅসাধারণ লিখনশৈলী।
অরুণ চট্টোপাধ্যায় ্য
খুব ভাল লাগল। এক অসাধারণ মর্মস্পর্শী লেখা।
ReplyDelete