0

সম্পাদকীয়

Posted in








পর্দা জুড়ে খয়েরি রঙা অন্ধকার আর তার মধ্য দিয়ে মাঝবয়সী উপবীতধারী এক পুরুষ পায়ের আঙুলে দড়ি বেঁধে অসীম ক্লেশে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একটি লাশ। সৎকারের উদ্দেশে। মৃতদেহটি এক দলিতের। কন্যাদায় থেকে মুক্ত হবার জন্য যে গ্রামের উচ্চবর্ণের প্রতিভূ সেই ব্রাহ্মণের গৃহে ভৃত্যের কাজ করতে সম্মত হয়েছিল। মৃত্যুর পরও যাতে নিম্নবর্গের সেই মানুষটির ছোঁয়াচ না লেগে যায়, তার জন্যই সেই বিশেষ ব্যবস্থাপনা। 

মুন্সি প্রেমচন্দের ছোটগল্প অবলম্বনে ১৯৮১ সালে নির্মিত সত্যজিৎ রায়ের ছবি 'সদগতি'র এই দৃশ্য দেখতে দেখতে শিউরে উঠেছি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না 'সদগতি' কাহিনি আকারে প্রকাশ পেয়েছিল চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পাঁচ দশক আগে। তার অর্থ পঞ্চাশ বছর পরেও বদলায়নি এই দেশ। তেমনই প্রাসঙ্গিক রয়ে গিয়েছিল অস্পৃশ্যতার বিষয়টি। 

আর সম্প্রতি সারাদিনের অজস্র টুকরো খবরের মধ্যে চোখ আটকে গেল একটি চমকপ্রদ মানচিত্রে। একটি সমীক্ষার ফলাফল বলছে দেশের অধিকাংশ অঞ্চল প্রবলভাবে এখনও বহাল রেখেছে আদিম সেই প্রথা! আজও। শিরদাঁড়া দিয়ে বরফঠান্ডা স্রোত নেমে গেল তৎক্ষণাৎ। 

চিত্রটি সঠিক হলে সামাজিক এই দূষণ এখনও গ্রাস করে রেখেছে ডিজিটাল ভারতকে। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ভারতবর্ষের উন্নয়নের কার্পেটের তলায় লুক্কায়িত এ কোন দেশ? নানা জাতি, ধর্ম আর কৃষ্টির এই মিলনভূমির সর্বত্র কমবেশি শোণিত-চিহ্ন! প্রতিনিয়ত সামাজিক সমতার সোচ্চার ঘোষণা কি প্রকৃতপক্ষে এক রাজনৈতিক ঢক্কানিনাদ? মুখোশের আড়ালে না-দেখা মুখটি কি তবে ভয়াল? উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার সন্নিকটে বসবাস করে নিকষ আঁধার - এই তত্ত্বের কাছেই কি পরাজয় ঘটবে আমাদের? বারংবার?

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান!

0 comments: