0

অনুগল্প : শ্যামল সোম

Posted in



অনুগল্প


হাবুর বউ পিয়ালী পালিয়েছে
শ্যামল সোম



হাবুর খুবই মন খারাপ করে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আজ তিন হয়ে গেল, খায় না, শোয় না, কাজে যায় নি বেশ অনেক দিন হয়ে গেল, ভালো হাতের কাজ জানে -ওস্তাদ কারিগর, কারিগর কারখানার মালিক হাবুর কাজের নিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ রয়েছিল। বিশু বললে, তুই একটা গর্ধব, ভুল মেয়েকে ভালোবেসে ছিলি, আমরা সবাই কত করে বোঝাতাম, যে মেয়ে বিয়ের আগেই বলে দামী মোবাইল ফোন কিনে দাও, কোলকাতার মলে ঐ মেয়েকে নিয়ে গেলি কেনাকাটা করতে, তোকে হাবাগোবা পেয়ে, দুয়ে মুসে ছেড়েছে। শালা এর নাম প্রেম, ও সব প্রেম ভালোবাসায় অনেক হাঁপাতে হয় গুরু। ও সব ঝুট ঝামেলায় আমি নেই, আমার সোজা হিসাব, শালা ধর তক্তা মার পেরেক, পেরেক ঠুকে সরে পড়, তুই হাঁদারাম !

বসে বসে ভাবেছে হাবু এই বছর দুয়েক বহু হাবুডুবু খেয়ে, বহুত টাকা গচ্চা দিয়ে, এখন এই নির্জনে বন বাদারে, কখন শ্মশানে, ভূতের খাল পারে, একা একা ঘোরে, লুকিয়ে চোখের জল মুছে ফেলে, পাছে কেউ যদি দেখে।

পিয়ালীকে, বড় ভালোবেসে ফেলেছিল, উজ্জল শ্যাম বর্ণা, সরু কোমর, উন্নত স্তন, শরীরের সুবাদে হাবু মোহগ্রস্ত বদ্ধ উন্মাদের মত, পিয়ালীর- রূপ সাগরে ডুব দিতে গিয়ে নুনের পুতুল গেল গলে।

বিয়ের রাতে গা ভরা গয়না, আসমানী রঙের বেনারসী, নিজে পছন্দ করে কিনে ছিল, বিউটি পার্লারের, মেয়েটা আলাদা বেশী টাকা নিয়ে কী অপূর্ব সাজিয়ে ছিল।

আহাহা, হাবু শুভ দৃষ্টির সময় উন্মাদের মত ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে আছে! হাসির রোল উঠলো, নাপিত রসের ছড়া কাটছে, কি হল ? মালা বদল করবে কে? ও পাড়ার সে? অনেকেই পিয়ালীর এই ছিনালিকে রথতলা নন্দের সঙ্গে এখানে সেখানে বাইকে চোড়ে, হাওয়া হয়ে যেত।

হাবু, দু একবার সাঁই করে বেড়িয়ে যেতে দেখেছিল, আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করতে গলা জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে সে কী কান্না, মা মরা মেয়ে বাপ আবার বিয়ে করেছে, সৎমায়ের অভাবের সংসার, দুবেলা পেরে খেতে পায় না, দাদার মত নন্দদা শুনে ভালো হোটেলে খাওয়াল আবার এই দেখো ননী থেকে কী সুন্দর গয়নার সেট কিনে দিয়েছে ।

হাবু কোন সাধ অপূর্ণ রাখবে না বলে নিজের কেনা জমি বেচে, কারখানা বড়বাবু কে হাতে পায়ে ধরে নিজস্ব জমা মোটা টাকা খরচ করে বিয়ে করে তারপর কনে বউ সেজে এসে- হাবুর মা বৌদি, বোনকে জড়িয়ে ধরে কত আদিখ্যেত !

বিশুকে আড়ালে বলতে শুনলো " শালি ছেনাল মাগো! "
ফুল সজ্জা ভর দুপুরে একা মায়ের ঘরে ঘুমিয়ে স্বপন দেখছে দীঘায় পিয়ালীর সঙ্গে একসাথে স্নান করছে ! হঠাৎ হৈ চৈ চিৎকার, মায়ের আর্তনাদ, বৌদি বুকফাটা কান্না, ধুর চরে উঠে শুনে হতভম্ব, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু দু-বাড়ির গয়না, নূতন শাড়ীগুলো, বেনারসী নয়, বৌদির ও অন্তঃপুরের অনেকের গয়না, নিয়ে - " হাবুর বউ পিয়ালী পাইলেছে! " 

রাতে পুলিশ এলো, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পয়েজন স্প্রে করে ছিল সারা ঘরে ঘরে। একেই সবাই ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে, ঐ সুযোগে পগার পার, আবার হাবুর ভালোবাসার সংযোগে এ বাড়িতে অনেক বারই আসার জন্য সব নখ দর্পণ, নন্দ দার দাদাগিরি, থানা পুলিশের এ সব আর ভালো লাগে না।

তারপর একদিন খবর এলো বাড়ি থেকে গ্রামের থেকে - মায়ের কাছ হতে, সংসারে ছেড়ে, সমস্ত বন্ধন মুক্ত হয়ে, সংসারের মায়া কাটিয়ে, হারিয়ে যাওয়া হাবু কাশীর কেদার ঘাটে গেরুয়া ধারী সন্ন্যাসী স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ হয়ে গাইছেন ,
--- " মন লাগে মেরে ইয়ার, ফকিরী মে, 
জো সুখ পায়ও, রাম ভজন মে " !

নূতন এক অমূল্য জীবন এলো, অরূপ রতন পেলো হাবুল চন্দ্র ঘোষ।

0 comments: