0

কবিতা - গৌতম দাস

Posted in



















দিকনির্দেশ

এখানে আর আমার নাম কেউ মুখে আনে না, সময়, সে তো আসলে চলে বিপরীত অপেক্ষায়, হারুনের ছেলে বন্ধুদের সাথে কাজের খোঁজে বিদেশ গিয়ে ফিরলো না আর

হারুন রোজ তাই অপেক্ষায় থাকে একটি চিঠির, আর ঐ যে মেয়েটি সামনের শনিবার বয়-ফ্রেন্ডকে বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেবে বলে বাসের হাতল ধরতে ছুটেছিল

সে-ও আর ফিরে আসেনি বাসস্টপে, ছাপোষা মধ্য বয়স্ক মানুষটিও চায়ের ভাড় বেঞ্চে রেখে সেই যে সেদিন রাস্তা পার করে সিগারেট কিনতে গেলো

আজও সে ফিরে আসলো না...

আসলে বড় অপেক্ষার শহর এই শহর, সন্ধে নামলে তাই এখানে কাঁধ জড়িয়ে বাতাসের উৎসব শুরু হয়, বুড়ো ক্ল্যারিনেটবাদকের টুপি তখন উপচে ওঠে করুণায়, পাতাল রেলের সিঁড়ির শেষে ফিসফিস করে গল্পে মেতে ওঠে দুই অসফল মানুষ

ছদ্মবেশী শহর তাদের কথা শুনবে বলে কান পাতে তখন

আর আমি বাড়ি ফেরার দিকনির্দেশ যেন হারিয়ে ফেলি

শুধু মনে পড়ে যেদিকেই হাঁটি, এ অপেক্ষার শেষ নেই, সাবধানে হাঁটি

জানতে চাইলে কাউকে বলি না কতদূর আসলে যেতে চাই...

বাড়ি ফেরার আগে মৃত্যুর পরেরটুকু শুধু যেন লিখে যেতে চাই...







প্রতিশ্রুতি

আলো জ্বালানো নিষেধ, মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে সব তারা, ধুলোবালি মনে স্মৃতিকথা নিয়ে বসে আছি ছাদের কিনারে

নাবিক তো ঘরে ফেরে এসময়ই, দুয়ার খুলে দেয় তার নারী, তবু সমুদ্র আর চাঁদ আজ আত্মহত্যার স্বপ্ন দেখে

যেমন নি:শর্ত কবিতার মত তুমি আজও ভেসে যাও জোৎস্না হয়ে, পাহাড়ের বুকে বদলাও বারবার তোমার গতিপথ

প্রতিশ্রুতিগুলি চিরদিন শুধু থেকে যায়

গোপন কথার মতই সৎ







মিথ্যে

মনে মনে দৃশ্যপট এভাবেই সাজিয়েছি

পথ চলতি এ শহরের কোনো এক ব্যস্ত অথবা অব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ করেই তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে একদিন, দূর থেকে তোমায় দেখে দাঁড়িয়ে পড়ব আর কাছে এসে চোখ তুলে আমায় দেখে চমকে উঠবে তুমি, ততক্ষণে আমার ধুকপুক করা বুকের ওঠানামা সামলে খুব আলতো করে তোমায় জিজ্ঞাসা করব, কেমন আছ, ঈষৎ ঘাড় নেড়ে সেকথার জবাব দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুমি জানতে চাইবে কবে চশমা নিলাম, ছেলে কোন ক্লাসে পড়ছে, বৌকে নিয়ে গতবার শীতে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলাম কি না, আমিও জেনে নেব তোমার মেয়ে বনজোৎস্নার কথা, তোমার স্বামীর কথা, অলস দুপুরে এখনও কি তুমি মাঝে মাঝে রং তুলি নিয়ে ছবি আঁকো, এইসব ...

আসলে এসব এক দৃশ্যকল্প মাত্র অথবা এক অস্থির অস্থিরতা যা শুধু আমাকেই ছুঁয়ে থাকে অথবা বলতে পারো গলে পড়া মোমের নীচের বাসনা-রুদ্ধ মুখ

কিংবা মেনে নিতে পারো সেই বিশ্বাস

বিন্দুর ওপর যে কোনো সময় আমি জেগে উঠতে পারি, জেগে উঠতে পারি এক সৌধ হয়ে অথবা সংকেত ছাড়াই চলে যেতে পারি কখনো বিস্মৃতির আড়ালে...

তস্কর বাতাস শুধু তখন ছুঁয়ে থাকবে তোমায়, ছুঁয়ে থাকবে আমার আকাঙ্ক্ষা হয়ে...

একদিম তুমি একে বিভ্রম বলেছিলে

কিন্তু সত্যি বলো তো, কখনো কি মিথ্যে বলতে পেরেছিলে...

0 comments: