0

গল্প - মনোজ কর

Posted in



















 চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্ব




 চতুর্থ পর্ব

পানু রায় বড়কালীর অফিসে ঢুকেই দেখলেন ঘর আলো করে সেক্রেটারির টেবিলে বসে আছে এক লম্বা, ফর্সা, নীলচক্ষু, কৃষ্ণকেশী সুন্দরী। বুঝতে অসুবিধে হলনা এই মহিলাই এলিনা রাই, বড়কালীর নতুন সেক্রেটারি। আসবাবপত্রগুলোর অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। টেবিলটা আগে যেদিকে ছিল সেখান থেকে সরিয়ে উল্টোদিকে রাখা হয়েছে। কুচকুচে কালো মেহগিনির প্রেক্ষাপটে এলিনা রাইএর রঙ যেন ফেটে বেরুচ্ছে। পানু রায় বুঝলেন টেবিলের অবস্থান পরিবর্তনের পিছনে অন্য কিছু ভাবনাচিন্তা কাজ করেছে। পানু রায় নিশ্চিত হলেন যখন দেখলেন যে জানালার পর্দার রঙ এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যাতে তার থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘরের উজ্জ্বলতা অনেকগুন বেড়ে যায় আর তার সঙ্গে বেড়ে যায় এলিনার সযত্নে প্রসাধন করা মুখের ঔজ্জ্বল্য। পানু রায় দরজা খুলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অফিসের ফোন বেজে উঠলো। এলিনা হাসিমুখে পানু রায়কে স্বাগত জানিয়ে ফোনটা তুলে নিল। ঠোঁটের কাছে ফোনটা নিয়ে কয়েক মিনিট এত আস্তে কথা বলল এলিনা যে এত কাছে বসে থেকেও কিছুই শুনতে পেলেন না পানু রায়। শুধু শুনতে পাওয়া গেল ফোন রাখার সময় এলিনা বলল,’ কৃষ্ণকালী শহরে নেই। আমি দুঃখিত। আমি জানিনা উনি কবে ফিরবেন। আপনি কোনও মেসেজ দিতে চান? ও আচ্ছা, অনেক ধন্যবাদ।‘ফোন রেখে এলিনা পানু রায়ের দিকে তাকাল। পানু রায় বললেন,’ আমার নাম পানু রায়।‘

-আপনিই পানু রায়। আপনার কথা স্যারের কাছে শুনেছি। আপনিই ওনার আইনি পরামর্শদাতা, তাই না?’

-ঠিক বলেছেন।

-আপনার অফিস থেকে আপনার সেক্রেটারি একটু আগে ফোন করেছিলেন। বললেন আমি যেন স্যার ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ওনাকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি।

-অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা, আপনি কি টেবিলটা সরিয়েছেন? ওটাতো আগে ওখানে ছিল না।

-না আমি সরাইনি।

-কিন্তু মনীষা যখন ছিল তখন ওটা উল্টোদিকে ছিল।

-হ্যাঁ, মনীষা টেবিলটা যেখানে রেখেছিল সেখান থেকে আমি সরিয়েছি। ও টেবিলটা ভুল জায়গায় রেখেছিল। ওখানে আলো ঠিকমত পৌঁছচ্ছিল না।

-মনীষার সঙ্গে আপনার কথা হয়?

-না, সেরকম কথা হয় না। তবে এখানে দু’বার এসেছিল। তার বেশি কিছু নয়।

-ওর নাম আগে মনীষা ঝা ছিল। এখন ওর পদবি কী হয়েছে জানেন?

-ওর সঙ্গে যার বিয়ে হয়েছে তার নাম পরেশ প্রসাদ।

-ঠিক ঠিক। আমার এবার মনে পড়েছে। আচ্ছা এলিনা, কৃষ্ণকালী এখন কোথায়?

-উনি ব্যবসার কাজে বাইরে গেছেন।

-কবে গেছেন?

-উনি গতকাল বিকাল থেকে অফিসে নেই।

পানু রায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এলিনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনও বিশেষ কারণে গেছেন?’

এলিনা বলল,’ না, বিশেষ কিছু নয়। আপনি তো জানেন উনি প্রায়ই ব্যবসার কাজে বাইরে যান। ওনার বিভিন্নরকম ব্যবসা আছে। তাছাড়া নানা শহরে ওনার সম্পত্তিও আছে।

পানু রায় বললেন,’ আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমি ওনাকে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকি।‘

-হ্যাঁ, আমি ওনাকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি।

-আমার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করার খুব দরকার।

-সেটা কি রেবা কৈরালা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে?

পানু রায় মুখের ভাবে কিছু প্রকাশ না করে জিজ্ঞাসা করলেন,’ কেন? একথা কেন জিজ্ঞাসা করছেন?’

এলিনা বলল,’ দেখুন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। আমি চাই না এই আলোচনায় কোনও তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে। আমরা কি এই অফিস সামনে থাকে বন্ধ করে পিছনের দরজা খুলে স্যারের ব্যক্তিগত কেবিনে গিয়ে আলোচনা করতে পারি? সেখানে কেউ আসতে পারবে না।

পানু রায় বললেন,’ অবশ্যই।‘এলিনা চেয়ার থেকে উঠে লম্বা লম্বা পা ফেলে বাইরে বেরিয়ে অফিস বন্ধ করে পিছনের দিক দিয়ে গিয়ে একটা মস্ত দরজা খুলে একটা সুসজ্জিত বিশাল ঘরে ঢুকল। পিছনে পিছনে পানু রায়ও ঢুকলেন। এলিনা কৃষ্ণকালীর মস্ত মেহগিনি টেবিলের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঘুরে পানু রায়ের দিকে সোজা তাকিয়ে এমন ভাবে দাঁড়াল যেন মনে হল কোনও সিনেমার শট দিচ্ছে।

- স্যার কিন্তু ভীষণ রেগে যাবেন যদি শোনেন যে আমি আপনার সঙ্গে রেবা কৈরালার ব্যাপারে কোনও কথা বলেছি। আপনি মানুষের চরিত্র ভালোই বোঝেন এবং আপনাকে নিশ্চয়ই বলে দেবার প্রয়োজন নেই যে রেবা কৈরালা একজন অত্যন্ত স্বার্থপর এবং ধুরন্ধর মহিলা।আপনি নিশ্চয়ই জানেন রেবা কৈরালার সঙ্গে স্যারের ছেলে কালীকৃষ্ণের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। এখন কালীকৃষ্ণের নজর একটি অন্য মেয়ের দিকে পড়েছে এবং রেবা কৈরালা স্যারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারছি না রেবার আসল উদ্দেশ্য কী? তবে রেবা নিজের লাভ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। আমি রেবার ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে চাই না এবং আশা করি আপনিও চান না। কিন্তু একটা কথা আপনাকে বলি, আপনি কিন্তু খতিয়ে না দেখে ওর গল্পে বিশ্বাস করবেন না।

এতটা বলে এলিনা একটু থামল। তারপর বলল,’ স্যার বা কালীকৃষ্ণ যদি ঘুণাক্ষরেও টের পায় যে আমি আপনাকে এসব কথা বলেছি তাহলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে তাড়িয়ে দেবে। অবশ্য তাহলেও স্যারের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার কোনও পরিবর্তন হবে না। এখন আপনি বলুন আপনি আমাদের এই আলোচনার গোপনীয়তা রক্ষা করবেন না স্যারকে এই আলোচনার কথা জানিয়ে দেবেন।

পানু রায় বললেন,’ আপনি আমাকে বিশ্বাস করে কথাগুলো বলেছেন। কথা দিলাম সেই বিশ্বাস অটুট থাকবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন কোনও তৃতীয় ব্যক্তি ঘুণাক্ষরেও একথা জানবে না।‘

এলিনা পানু রায়ের সামনে এগিয়ে এসে বলল,’ অনেক ধন্যবাদ।‘ তারপর নিজের হাতদু’টো পানু রায়ের দিকে বাড়িয়ে দিল। পানু রায় নিজের দু’ হাতের মধ্যে এলিনার হাতদু’টো নিয়ে বললেন,’ আমার বয়স ১০৫। এখন আমি আসি।‘ বিস্মিত এলিনা অবাক হয়ে দেখল শিরদাঁড়া সোজা করে দৃঢ় পদক্ষেপে দরজার ওপারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন পানু রায়।




 পঞ্চম পর্ব

বড়কালীর অফিস থেকে বেরিয়ে পানু রায় সুন্দরীকে ফোন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন,’ মনীষা ঝা মানে এখন মনীষা প্রসাদের ঠিকানা আছে তোমার কাছে?’ ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে সুন্দরী বলল,’দাদু, ধরে থাক। আমি তোমাকে মনীষার ফোন নম্বর কিংবা ঠিকানা দিচ্ছি।‘

-আমার ঠিকানা চাই।

কিছুক্ষণ পরে সুন্দরী পানু রায়কে মনীষার ঠিকানা জানিয়ে বলল,’ মনীষাকে আমার আদর আর শুভেচ্ছা জানিও।‘

‘অবশ্যই’ বলে পানু রায় হাত দেখিয়ে একটা ট্যাক্সি থামিয়ে মনীষার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। প্রায় আধঘন্টা পরে ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল,’ এসে গেছি।‘ পানু রায় ভাড়া মিটিয়ে বললেন,’ একটু অপেক্ষা কর। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরব।‘

ট্যাক্সি থেকে নেমে বাড়িটার কাছে পৌঁছে বেল বাজাতে যাবেন ঠিক তখনই একগাল হেসে দরজা খুলে দাঁড়াল মনীষা। বলল,’ পানু রায়!!! আপনাকে কতদিন পরে দেখলাম। কি যে আনন্দ হচ্ছে আমার! ভেতরে আসুন।‘পানু রায় ঢুকতে ঢুকতে বললেন,’ তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে, মনীষা।‘ মনীষা হেসে বলল,’ আপনি আগের মতই রসিক আছেন। আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হতে আর মাত্র দু’ মাস। আমাকে এখন দেখতে হয়েছে হাতির মত। আমি বাড়ির সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। বসার ঘরটাও পরিস্কার করা হয় না। অপরিচ্ছন্নতা ক্ষমা করবেন। এই চেয়ারটায় বসুন। কী নেবেন চা না কফি? ‘

-না না, ঠিক আছে। আমি এসেছিলাম কৃষ্ণকালী সম্বন্ধে কিছু খবর জানতে।

-কী সংক্রান্ত খবর?

-আমি জানতে চাই কী করে ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে?

-কেন? উনি কি শহরের বাইরে?

-হ্যাঁ, সেটাই তো সমস্যার কারণ।

-আপনি এলিনার সঙ্গে কথা বলেছেন?

-হ্যাঁ, ওর সঙ্গেই প্রথমে যোগাযোগ করেছিলাম।

-কিন্তু যা জানার ছিল তা জানতে পারলেন না, তাই তো?

-না, আসলে কিছুই জানতে পারলাম না।

মনীষা হেসে বলল,’ আমিও দু’বার অফিসে গিয়েছিলাম।এমনি জানতে সব কী রকম চলছে। কোনও উত্তরই পাইনি। তাই আর যাইনা।

-তোমার সঙ্গে কৃষ্ণকালীর দেখা হয়েছিল?

-না, দু’বারের একবারও না। প্রথমবার আমি জানতাম উনি খুব ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু দ্বিতীয়বার এলিনা তো স্যারকে জানাতেই চাইলনা যে আমি ওনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।

-কিন্তু কেন? কিছু আন্দাজ করতে পার?

-আমি জানিনা। আমি স্যারের অফিসে কাজ করেছি প্রায় বারো বছর। বারো বছর সময় ওনার ব্যবসা এবং ওনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার পক্ষে যথেষ্ট, তাই না? ওনার স্ত্রীবিয়োগের পর উনি একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। উনি যখন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসছিলেন তখনই আমার বিয়ের ঠিক হয়। কিন্তু ওনার এই অবস্থায় আমি কিছুতেই ওনাকে লম্বা ছুটি নেবার কথা বলতে পারছিলাম না। বিশ্বাস করুন আমি বিয়ে প্রায় তিন মাস পিছিয়ে দিলাম যাতে ওনার ব্যবসার কোনও ক্ষতি না হয়।

-তারপর?

- উনিই কী ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে আমি কিছু একটা ওনাকে বলতে পারছি না। তারপর আমার আঙ্গুলে হীরের আংটি দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে আমার বিয়ে কবে। তারপর কথায় কথায় বুঝতে পারলেন যে আমি ওনার কাছে ব্যাপারটা লুকোতে চাইছি। উনি ভীষণ রাগারাগি করলেন। বললেন এটা আমার করা উচিৎ হয়নি এবং আর দেরি না করে বিয়েটা সেরে ফেলতে। না হলে, উনি আমাকে আর অফিসে আসতে দেবেন না। এমন মানুষ আজকের দিনে সত্যিই পাওয়া যায় না।

-যখন তুমি ওখানে ছিলে তখন রেবা কৈরালার কথা শুনেছিলে?

-না, রেবা কৈরালা পরে এসেছে। আমি যখন ছিলাম তখন কালীকৃষ্ণের প্রেম চলছিল এলিনা রাইএর সঙ্গে। কিন্তু সম্পর্কটা আস্তে আস্তে ভেঙে যাচ্ছিল বলে শুনছিলাম। ঘন ঘন সুন্দরী মেয়েদের প্রেমে পড়া কালীকৃষ্ণের স্বভাব। পরে শুনলাম রেবা কৈরালা বলে এক সুন্দরীর আগমণ ঘটেছে কালীকৃষ্ণের জীবনে। তাই এই ভাঙন এলিনার সঙ্গে ভালোবাসার। কালীকৃষ্ণের অনুরোধে স্যার এলিনাকে চাকরিতে বহাল করেন। অফিসের শোভা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনও কাজে আসেনি এলিনা। নীতিজ্ঞানহীন এবং নাকউঁচু এক মহিলা। টাইপ করা ছাড়া আর কিছু ওর আসেনা। সারাদিন টিভি আর ভিডিওতে সুন্দরী সেক্রেটারিরা কীরকম পোষাক পরে, কীরকম সাজগোজ করে সেইসব দেখে দেখে সময় কাটায়।

-তাহলে, কৃষ্ণকালীর ব্যবসা কী করে সামলাচ্ছে এলিনা?

-আমিওতো সেটাই জানতে চাই।

-আমার মনে হয় কৃষ্ণকালী কাঠমান্ডুতে আছে। কাঠমান্ডুতে গেলে সাধারণত কোথায় থাকে কৃষ্ণকালী?

মনীষা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,’ সাভেরা মোটেলে থাকার সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ। ওটা অপেক্ষাকৃত নতুন কিন্তু খুব ভালো বলে শুনেছি। আমি বারদুয়েক বুকিং করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এলিনা অবশ্যই জানবে স্যার কোথায় উঠেছেন।

-এলিনা বলল ও কিছু জানেনা।

মনীষা ঘাড় নেড়ে বলল,’ হতেই পারেনা। স্যার বাইরে থাকলেও সবসময়ে অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এমনকি যখন উনি কাউকে না জানিয়ে কোথাও যেতেন তখনও কিন্তু আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। আমাকে জানিয়ে রাখতেন প্রয়োজনে কোথায় ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব।‘

-কিন্তু এলিনা বলল এই ব্যাপারে ও সম্পূর্ণ অন্ধকারে। অবশ্য সত্যি কথা নাও বলতে পারে। হয়ত ইচ্ছে করেই জানাল না।

-মিথ্যে বলছে বলেই আমার মনে হয়, মিঃ রায়।আমি আপনাকে এতটুকু প্রভাবিত করতে চাইনা। আপনি নিশ্চয়ই বোঝেন বিয়ের পর একটা মেয়ের অনেক পরিবর্তন হয়। বাড়িতে অনেক বেশি সময় দেবার দরকার হয়। সম্পূর্ণ নিজের সংসার। সব দায়িত্ব নিজের। তবুও ওই অবস্থায় স্যারকে একেবারে ছেড়ে যাবার কথা ভাবিনি। আমি স্যারকে বলেছিলাম সময় করে মাঝেমধ্যে এসে আমি এলিনাকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দেব যাতে কোনও অসুবিধে না হয়। কিন্তু এলিনা কোনও আগ্রহ দেখাল না। আমি চলে এলাম। ভাবলাম কিছু দরকার হলে নিশ্চয়ই ফোন করবে।তার পরেও ফোন এলনা দেখে একদিন ওই অঞ্চলে কিছু কেনাকাটা সেরে ভাবলাম হাতে যখন একটু সময় আছে অফিসে গিয়ে স্যারের সঙ্গে একবার দেখা করে আসি, অনেকদিন দেখা হয়নি। স্যারের যদি কোনও সাহায্যের দরকার হয় জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারি। কিন্তু এলিনা আমার সঙ্গে বাইরের লোকের মতই ব্যবহার করল। বলল স্যারের সঙ্গে দেখা হবে না। উনি নাকি জরুরী মিটিংএ আছেন। ফিরে এলাম। প্রায় দু’মাস পরে আবার একদিন কী মনে হল অফিসে গেলাম। সেদিন এলিনা আমার সঙ্গে একটু বেশি ভদ্রতাই করল। প্রায় দশ পনের মিনিট বসে রইলাম। এলিনার সঙ্গে টুকটাক কথা চালাচ্ছিলাম। ও কিন্তু স্যারকে জানালই না যে আমি দেখা করতে এসেছি। আমি আর এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাইলাম না।ফিরে এলাম। ভাবলাম যদি দরকার হয় স্যার নিশ্চয়ই আমাকে ফোন করবেন।

-ফোন এসেছিল?

মনীষা রাগে খানিকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,’ আমি নিশ্চিত যে আমি চলে আসার পর অন্তত একশ’ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে ওরা যেখানে আমার সাহায্য দরকার ছিল।আমি বুঝতে পারি ঐ নাটুকে, ন্যাকা এলিনা কেন আমাকে ফোন করেনি কিন্তু আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা কেন স্যার আমাকে ফোন করলেন না? যে খবরটা আমার দিতে এক সেকেন্ডও লাগবে না সেই খবর এলিনা ফাইল ঘেঁটে খুঁজেই পাবে না, খবর দেওয়া তো দূরের কথা। কোথায় কোন ফাইল আছে তাই ও ভালো করে জানেনা।

- তুমি কৃষ্ণকালীকে তারপর কখনও ফোন করনি?

-না। আমি ভেবেছিলাম দরকার হলে স্যার আমাকে ফোন করবেন। আমি চাইনি ঐ মেয়েটা তৃতীয়বারের জন্য আমাকে হেনস্তা করুক।

-বেশ, আজ তাহলে আমি আসি। তুমি মাঝেমধ্যে ফোন কোরো। আবার সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে আমাদের অফিসে এসো। আমি এবং সুন্দরী খুব খুশি হবো তুমি এলে।ভালো থেকো।আশা করি সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটে যাবে।

-নিশ্চয়ই আসবো। খুব ভালো লাগলো আপনার সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হয়ে।খুব ভালো থাকবেন।

মনীষা দরজায় দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না পানু রায় অপেক্ষারত ট্যাক্সিতে উঠে অফিসের দিকে রওনা দিলেন।

0 comments: