পথে প্রান্তরে - রঞ্জন ঘোষ দস্তিদার
Posted in পথে প্রান্তরেভীমা শঙ্কর
গল্প বলছে এই শিবের সাথে ত্রিপুরাসুরের যুদ্ধ হয়েছিল। দুজন ডাকিনী যোগিনী শিবকে জিততে সাহায্য করেছিল। ভাবো একবার গল্পের গরু কৈলাসে উঠে গেল! শিবের সাহায্য লাগছে!! বেশ, লাগছে। বিশ্বাসে মিলায়ে ----- তাই তাদের দুজনেরও মন্দির আছে। এখানে।
ভীমা নদীর খাতে বলে ভীমাশঙ্কর। বলছে জ্যোতিঃ লিঙ্গ।
আচ্ছা, এই জ্যোতিঃ লিঙ্গ সব কেন ভারতে? শিব কি সবার শিব নয়?
ধর্মস্থান। ব্যবসার সুযোগ অনেকরকম। ভি আই পি দর্শন ৫০০ টাকা। রুদ্রাভিষেক ২১০০ টাকা। লোকজন আসে। থাকে। হোটেল লাগবে, আছে। খাওয়াদাওয়া ? আছে। তবে কিনা নিরামিষ। সব ধর্মস্থানের চরিত্র একরকম। কোথাও ভিড় বেশি, কোথাও কম। আমি খুব একটা বিশ্বাসী লোক নই। আমার দেখার চোখটা এই রকমই।তবে এখানে একটা স্পেশাল ব্যাপার আছে। এখানে ছোঁয়া যায় লিঙ্গ! ভোর পাঁচটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত খোলা। ২৩০ সিঁড়ি ওঠানামা আছে।
বেরিয়ে পড়ার আগে এই টুকুই খবর জোগাড় করা গেল। টান টা অনেকটা রাস্তা গাড়িতে যাওয়ার। তাও আধা পাহাড়ি রাস্তা। চলো বেড়িয়ে পড়া যাক।
প্রতিযোগিতা ছিল। আরো একটা নাম ঘোরাফেরা করছিল ভান্ডারধারা। ওটাকে চেক করার ভার পড়ল আমার ওপর। আসলে আমাদের দুজনেরই তখন সময়ের অভাব। বেড়ানোর ছক দায়সারা ভাবে হয় না। অথচ তাই হচ্ছে দেখ।
ভান্ডারধারা ইগতপুরির কাছে একটা রিসোর্ট গ্রাম। এই ইগতপুরি নামটার সাথে জড়িয়ে আছে স্মৃতির গল্প। আমাদের মামাবাড়ি ছিল বম্বেতে। মানে মার বাপের বাড়ি। বছরে, দু বছরে একবার দুবার বম্বে যাওয়া হত। তখনই শোনা নাম ইগতপুরি। সেই ছোটবেলায়। মা আগে থেকেই বলে দিত “ইগতপুরি আসছে” আমরা তিন ভাই (আর একভাই ছোট কিনা, মনে নেই) ঠেলাঠেলি করে জালনার পাশে গিয়ে বসতাম। কাচ ফেলা থাকত। তখন কয়লার ইঞ্জিন ছিল। কাচ খোলা থাকলে গুঁড়ো কয়লা আসত ভেতরে। মানুষ থেকে বিছানা পত্তর সব কালো করে দিত। তখন একটা ব্যাপার ছিল , সঙ্গে হোল্ডোল (হোলড অল) থাকত। তাতে থাকত বিছানা পত্তর আরো কত কি!! ইগতপুরি আমাদের কাছে খুব আদরের। কারন এবার গুহা আসবে পর পর। পশ্চিম ঘাট পর্বত মালা। আমরা পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়ছি। আর এবার ইঞ্জিন বদল হবে। কয়লার ইঞ্জিন বাদ, ডিজেল ইঞ্জিন লাগবে। জালনার কাচ খোলা যাবে।
ভান্ডারধারা যেতে হলে মুম্বাই থেকে সোজাসুজি যাওয়া যায়, ১৮৫ কিমি। গাড়িতে যাওয়াই যায়। প্রাভারা নদির পাড়ে, একদম প্রকৃতির কোলে এই গ্রাম। লেক, ঝর্না হাত বাড়ালেই। উইলসন বাঁধ, আরথার লেক, রান্ধা ঝোরা। ট্যুরিস্ট তো আসবেই। আমরাও যেতে পারি, যেতেই পারি। থাকব কোথায়? দেখি, থাকার জায়গা খুঁজি। পুরুষওয়াড়ি বলে একটা জায়গায় নাকি ‘জোনাকি মেলা’ আছে। সত্যি? ওখানে এল ই ডি র উৎপাত থাকবে না তো? যাব তাহলে। দেখতেই হবে। জোনাকির আলোয় মেলা, নাকি মেলাই জোনাকি আছে ওখানে?
বলছে দু দুটো গড় আছে। রতনগড় আর হরিশ্চন্দ্রগড়। ও হরি, এতো পাহাড় চড়ার জায়গা! আমরা পারব কি? পাহাড় চড়তেই হবে এমন কথা নেই। দেখিই না খাওয়া থাকার কি ব্যবস্থা। ওখানে। ”কালসুবাই” ট্রেক শুরু হয়। সাহ্যাদ্রি পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু চুড়া এটাই। দেখি, দেখি দেখাই যাক না।
ব্যাপারটা না নিতে পারছি, না ফেলতে পারছি। দেখি দেখি হোটেল দেখি।
একটাও পছন্দ হচ্ছে না। সব হোটেল ট্রেকারদের সুবিধে বুঝে করা। তাও না হয় মানিয়ে নেওয়া যায়। ওয়াশরুম ছবিতেই যা দেখাচ্ছে, আসলে কি হবে? ভাবাই যাচ্ছে না। হাতে সময় নেই একদম। যেতে হলে আজই বুক করতে হবে। আমাদের যাত্রা পরশু। টেনশন হচ্ছে ।
ফোন এল। আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না। আমরা ভীমাশঙ্কর যাচ্ছি। হোটেল বুক হয়ে গেছে। আমি একাই ডিসিশন নিলাম। টাকা দিয়ে দিয়েছি। ২৩, ২৪। ২২আমার বাড়ি চলে আসবেন। আমরা সকাল সাতটায় বেরিয়ে পড়ব। গাড়িও ঠিক। ইনোভা। আমরা চার জন। আরাম করে যাবো।
বাঁচলাম।
0 comments: