0

কবিতা - সব্যসাচী রায়

Posted in



















দরজার কাছে প্রত্যাবর্তন

একদিন বলেছিলে, "বাড়ি আসলে একরকম মায়া।" আমি তখন হ্যাঁ বলেছিলাম, কারণ আমার মুখটা হয়ে গেছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ একটা হারানো জিনিসের বাক্স।

গত সপ্তাহে ভুল পাখিকে খাবার দিলাম... হাওয়ায় কামড় বসাচ্ছিল, যেন সব গোপন কথা জানে।

কখনো মাঝরাতে উঠে পড়ি—অর্ধেক কথা ঠোঁটে আটকে। বাবার গলাটা মাঝে মাঝে মনে ভেসে উঠছে, একটা পুরনো ওভারকোটের মতো।

মা বলে, শোক একরকম ঋতু। কিন্তু কেউ বলে না— নীরবতাও উত্তরাধিকার হতে পারে। আমারটা হাঁটে খুঁড়িয়ে, আর কাশে মাঝে মাঝে।

একটা মেয়ে একদিন এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরেছিল, যেন হারিয়ে যাবে...ভয়ে আঁকড়ে ছিল। আমি চুপ করে ছিলাম—তাও কি ভালোবাসা হয়?

বিয়ের অ্যালবামটা মোজার নিচে চাপা। কেউ খোলে না, কিন্তু রাতের খাবারের পর আগুনটা একটু জোরে ফোঁস ফোঁস করে।

আয়নায় তাকালে একটা জন্তু দেখি, নিজের নাম জানে না, তবু রোজ এক দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়।



গণিত

গোলাপ, চকোলেট, গোধূলি,
আর ছিল— ছুরি।

অভিশাপ লেখা ইতিহাসে,
প্রেমিকেরা হেরে গেছে।

তুমি দেশলাই হাতে,
আমি ভুল নম্বর।

মৃত এক নম্বরে ফোন বাজে,
কন্ঠ হাসে, থেমে থাকে।
নিঃশব্দের সুর… অন্তহীন ঢেউ।



মেট্রোনোমের ছন্দ

বেতের আঘাতে তাল কেটে গেল রাগের গোপন পত্র।
ধর্ম ছিল না, পাপও নয়, সীমা ছিলো গানের ছন্দ।
আমি দেখলাম, একটা ঘূর্ণি, নৃত্য লুকিয়ে।

টিক-হ্যাঁ, টিক-না, টিক-হ্যাঁ, টিক-
গানটা থামে, প্রশ্ন রেখে।
অর্ধেক নোট কোথায় গেলো? নীরবতা?



নক্ষত্রের কেন্দ্রে

সবকিছুই দাহ্য, একটা উত্তপ্ত বাতাসের মধ্যে
যেকোনো কিছু জ্বলে উঠতে পারে—
কাগজ, শুকনো বুনো ঘাস,
তোমার চুল, আমার হাত,
একটা অস্পষ্ট ভাবনা।

সূর্যাস্ত? নাকি নির্ঘুম ভোর?
নিশ্চিত কিছু নেই, শুধু যা পুড়ে গেছে তা ছাড়া—
ছাই হয়ে যাওয়া জল, গলিত ইস্পাত,
আর সেইসব স্বপ্ন
যা একদিন আগুনের মতো ছিল।

কিন্তু তারও গভীরে,
একটা নক্ষত্রের কেন্দ্রে,
সবকিছু আবার জ্বলে উঠতে পারে।

সবকিছুর তত্ত্ব
আমার ঘর ছোট, তাতে রহস্য নেই।
জানালা খুলে বসি, বাইরে শুনি—
পাখির ডাক, নিঃসন্দেহে পাখিরই।

আমার বইগুলো— পড়তে পারি না,
তারা খুব বেশি মানে করে ফেলেছে।
একজন স্কুল ফাঁকি দেয়: ও জানে যথেষ্ট।
একজন চাকরি হারায়: বুঝিয়ে বলা হয় কেন।
একজন ভেঙে পড়ে: সেও ব্যাখ্যা করা যায়।

এক রোগী সুস্থ হয়, তারপর ওষুধে মারা যায়।
কাগজ জমা দেওয়া হয়: স্বাভাবিক মৃত্যু।
সবটা পরিষ্কার, পরিষ্কার।এত যে, বোঝার দরকার নেই।

0 comments: