গল্প - মনোজ কর
Posted in গল্পঅষ্টম পর্ব
ঠিক সন্ধ্যা ৮টার সময় পানু রায় রিজেন্ট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি রেখে মূল প্রবেশদ্বারের সামনে এসে দাঁড়ালেন। দেখলেন দরজার ডানদিকে অনেকগুলো টেপা সুইচ। প্রত্যেকটা সুইচের পাশে ফ্ল্যাট নং এবং মালিকের নাম লেখা। ফ্ল্যাট নং ২১১’র পাশে লেখা শিবুলাল রেগমি। পানু রায় বেল টিপলেন। তিনতলার বারান্দা থেকে একটি পুরুষকন্ঠ জিজ্ঞাসা করল,’কাকে চাই?’
-শিবুলাল রেগমিকে।
-আপনার নাম?
-পানু রায়।
-কী দরকার?
-সম্পত্তির মালিকানা বিক্রীর ব্যাপারে দেখা করতে চাই।
-ভিতরে আসুন। তিনতলায়।
সামনের দরজাটা খুলে গেল। পানু রায় ভিতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দরজা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। পানু রায় লিফটে করে তিনতলায় উঠলেন। লিফট থেকে নেমেই দেখলেন বাঁ দিকের ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলা । একজন লোক অনেকটা ছায়ামূর্তির মত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অল্প আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। লোকটা জিজ্ঞাসা করল,’ আপনি পানু রায়?’ পানু রায় বললেন,’ হ্যাঁ, আপনি শিবুলাল?’ লোকটা বলল,’হ্যাঁ।‘
-আমি আপনার সঙ্গে সম্পত্তির মালিকানা বিক্রীর ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আমি কৃষ্ণকালী চৌধুরীর হয়ে আপনার কাছে এসেছি।
লোকটা ভিতরে গিয়ে আলো জ্বালাল। আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল লোকটা রোগা,লম্বা এবং স্মার্ট। বেশ ঝকঝকে চেহারা। বয়স বছর চল্লিশ হবে। লোকটা একগাল হেসে বলল,’ মিঃ রায়, ভিতরে আসুন। আপনি আমাকে খুঁজে পেলেন কী করে? ‘পানু রায় বললেন,’ আমি কৃষ্ণকালীর আইনি পরামর্শদাতা।‘ শিবুলাল বলল,’ আচ্ছা, কিন্তু আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।‘ তারপর খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,’ আপনিই কি সেই ১০৫ বছর বয়সের যুবক পানু রায় ?’ পানু রায় হাসলেন,বললেন,’ ঠিকই ধরেছেন।‘ শিবুলাল বলল,’ কী সৌভাগ্য আমার! আপনি বসুন।‘তারপর করমর্দন করে জিজ্ঞাসা করল,’ কী নেবেন, চা, কফি বা অন্য কিছু পানীয়?’
-না না, কিছু নয়। আসলে আমার হাতে বেশি সময় নেই।
-আমারও তাই।একটু পরেই আর একজন আসার কথা আছে। আমরা কি সরাসরি কাজের কথায় আসতে পারি? আপনি নিশ্চয়ই সম্পত্তির মালিকানার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ৪৫ শতাংশ আমার কাছে। ১৫ শতাংশ কৃষ্ণকালীবাবুর কাছে আর বাকি ৪০ শতাংশ রেবা কৈরালার কাছে। কাঠমান্ডুর এই সম্পত্তিগুলো অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। আসলে জুয়াখেলা কাঠমান্ডুতে আইনসিদ্ধ।আর সেখানেই পার্থক্য।তাছাড়া জুয়া মানেই জুয়াড়িদের ভিড়। আর যেহেতু অন্য জায়গায় জুয়া খেলা বেআইনি তাই অনেকে আইনি জুয়ার সঙ্গে বেআইনি জুয়াকে গুলিয়ে ফেলে।
-আমি ব্যাপারটা বুঝি এবং আমি গুলিয়ে ফেলিনা। আপনি বলুন।
-আসল কথায় আসা যাক। কৃষ্ণকালী চৌধুরী তাঁর মালিকানা হস্তান্তরের বদলে কত টাকা আশা করেন?
-আপনি কত দিতে চান?
-আমার একটা শেষ প্রস্তাব আছে -১৫ শতাংশ মালিকানা বদলে ত্রিশ লক্ষ টাকা।
-অনেক কম বলছেন। ১৫ শতাংশের দাম আপনি যা বলছেন তার থেকে অনেক বেশি।
-সেটা আপনার মত। আপনি আপনার মত প্রকাশ করতেই পারেন। আমার মতে ত্রিশ লক্ষ অনেক বেশি দিচ্ছি কারণ এই পনের শতাংশ কিনলে নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে চলে আসবে।
-ঠিক আছে। আমি কৃষ্ণকালীকে জানিয়ে দেব।তবে আমার মনে হয়না এত কমে সে রাজি হবে।
-এর চেয়ে বেশি আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর একটা কথা বলে রাখি।ইতিমধ্যে যদি নিয়ন্ত্রণ কোনওভাবে আমার হাতে চলে আসে তাহলে কিন্তু এই দাম প্রযোজ্য হবে না। তখন আমি অন্য দাম দেব। সেটা অবশ্যই অনেক কম হবে বুঝতেই পারছেন।
-আমার মনে হয় না। আপনার বোধহয় কম মালিকানার অধিকারীদের ঝামেলা পাকানোর ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা কম।
-আপনি হয়ত জানেন না কী ধরণের লোকের সঙ্গে আপনি কাজ করছেন।
-ঠিক কথা। আপনিও হয়ত বুঝছেন না কী ধরণের লোকের সঙ্গে আপনি কথা বলছেন।
- মিঃ রায়, ব্যাপারটা ব্যবসার মধ্যেই রাখুন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না। আপনি আঘাত পেতে পারেন।
-আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না। আমি সহজে ভয় পাইনা। একশ বছরে এসব হম্বিতম্বি আমি অনেক শুনেছি। রেবা কৈরালার বাবা খুন হবার পর আপনি সস্তায় বাকি মালিকানা কিনেছেন কারণ বাকি তিন অংশীদাররা ভয় পেয়েছিল। কৃষ্ণকালী এবং আমি দু’জনেই ভয় কী জিনিস জানিনা।
-মিঃ রায়, আমি কোনও ঝামেলা চাই না।
-তাহলে ঝামেলা নিমন্ত্রণ করে ডেকে আনবেন না।আপনাকে জানিয়ে রাখি কৃষ্ণকালী এককভাবে নিজের মালিকানা বিক্রী করবে না।উনি এবং রেবা কৈরালা যৌথভাবেই তাঁদের অংশীদারত্ব বিক্রী করবেন।
- ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে আমি রেবা কৈরালাকেও একই হিসাবে দাম দিচ্ছি। আপনি যদি…
ঠিক সেইসময়ই টেলিফোন বেজে উঠলো। শিবুলাল একটু ভয় পেয়ে গেল মনে হলো। তাড়াতাড়ি উঠে পাশের ঘরে চলে গেল ফোন ধরতে। পানু রায় শুনতে পেলেন শিবুলাল বলছে,’ না, না। এখন নয়। আপনি এটা করতে পারেন না।‘ তারপর শিবুলাল খুব নিচুগলায় কী যেন বলল। পানু রায়ের কানে এল না। তারপর আবার শিবুলালের গলা শোনা গেল,’ আমাকে দু’মিনিট সময় দিন।‘ তারপর ফোন রাখার আওয়াজ। শিবুলাল ঘরে ঢুকল। শিবুলালকে দেখে পানু রায়ের বেশ বিব্রত এবং অস্থির মনে হল। শিবুলাল পানু রায়কে বলল,’ আমাকে মাপ করবেন। সাড়ে আটটায় একজনের আসার কথা আছে। খুব জরুরী একটা বিষয়ে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।‘
-ঠিক আছে। আমি তাহলে আজ আসছি। আপনার টেলিফোন নাম্বারটা যদি দেন।
-দুঃখিত। এটা ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় নাম্বার।
পানু রায় দরজার হাতলে হাত রেখে এক সেকেন্ড অপেক্ষা করলেন। দরজা খোলার আগেই শিবুলাল বলে উঠলো,’ ৬৯৭৫৪’ । পানু রায় ধন্যবাদ জানিয়ে দরজা ঠেলে বাইরে বেরোবার সঙ্গে সঙ্গে শিবুলাল সশব্দে দরজা টেনে বন্ধ করে দিল। পানু রায় লক্ষ্য করলেন দরজায় স্বয়ংক্রিয় তালা নেই এবং দরজাটা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যায় না।
পানু রায় রিজেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করতে থাকলেন। কয়েক মিনিট পরে দেখলেন একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল আর তার থেকে নেমে কৃষ্ণকালী দ্রুতপায়ে রিজেন্ট অ্যাপার্টমেন্টের মূল প্রবেশদ্বারের দিকে এগিয়ে গেল। পানু রায় বড়কালীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গাড়ির হর্ন বাজালেন কিন্তু বড়কালী ঘুরে তাকাল না। পানু রায় দেখলেন পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে বড়কালী ভিতরে চলে গেল। এর তিন-চার মিনিটের মধ্যে বড়কালী ফিরে এল। গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি স্টার্ট দিয়েও সামনে অন্য একটা গাড়ি থাকার জন্য খানিকক্ষণ আটকে থেকে তারপর বেরিয়ে গেল। বড়কালী যখন আটকে ছিল তখন আবার পানু রায় দু-তিনবার হর্ন দিলেন কিন্তু বড়কালী এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে হর্নের আওয়াজ শুনতে পেল না। বড়কালী বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই রেবা কৈরালা এসে পৌঁছল। সময়ের ব্যবধান এত কম ছিল যে রেবা কৈরালা নিশ্চয়ই বড়কালীকে দেখতে পেয়েছে কিন্তু তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কোনও উৎসাহ দেখাল না। রেবা পানু রায়কে দেখতে পেল না। গাড়ি রেখে অ্যাপার্টমেন্টের দরজার দিকে হেঁটে গেল। সুইচ টেপার আগেই এক মোটাসোটা মহিলা দরজা খুলে বেরিয়ে এল এবং বাইরে বেরিয়ে একটু তির্যকভাবে দরজাটা খুলে ধরে রেবাকে ভিতরে যেতে ইঙ্গিত করল।রেবা ভেতরে ঢুকে গেলে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
পানু রায় যতক্ষণ অপেক্ষা করছেন ততক্ষণে কেবলমাত্র বড়কালী ও রেবা কৈরালা মূল দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং বড়কালী ছাড়া এক মোটাসোটা মহিলা দরজা দিয়ে বেরিয়েছে। পানু রায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রিজেন্ট অ্যাপার্টমেন্টের চারপাশে পাক মেরে এলেন। চারদিক বেশ অন্ধকার। এক কোণে একটা ল্যাম্পপোস্ট। তারই অল্প আলোয় রাস্তা দেখা যাচ্ছে।চারপাশ ঘুরে যখন পানু রায় আবার সামনে এলেন দেখলেন রেবা কৈরালার গাড়ি যেখানে ছিল সেখানেই আছে। পানু রায় আরও তিনবার চক্কর লাগিয়ে চতুর্থবার যখন বাড়ির পিছনে পৌঁছলেন তখন লক্ষ্য করলেন এক মহিলা বাড়ির পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে দ্রুত রাস্তায় এসে পৌঁছল এবং গতি কমিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করল। পানু রায় গাড়ির গতি কমিয়ে একেবারে মহিলার পাশে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,’ মিস কৈরালা, আপনাকে কোনও সাহায্য করতে পারি?’ মহিলা হতচকিত হয়ে প্রায় চিৎকার করে একেবারে দেয়ালের ধারে সরে গিয়ে পানু রায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’ ওহ, আপনি! আমাকে তো একেবারে চমকে দিয়েছিলেন।‘
-কিছু মনে করবেন না। আমি সেরকম কিছু করতে চাইনি। আপনি ঠিক আছেন তো?
-হ্যাঁ। সব ঠিক আছে।
-তাহলে বসুন। আমি আপনাকে গাড়ি অবধি পৌঁছে দিচ্ছি। আপনি কোনও দর পেলেন?
-হ্যাঁ, ত্রিশ লক্ষ নগদ। উনি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবেন না বলে জানালেন।
-আপনি এখানে কী করছেন? কতক্ষণ এখানে আছেন?
- আমি শিবুলালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।
-তাই? আমাকে তো কিছু বলল না। আপনাকে কোনও দর দিয়েছে?
-হ্যাঁ দিয়েছে। কিন্তু কত আপনাকে বলতে পারব না। ওটা আপনাকে কৃষ্ণকালীর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। আমি কোনও খবর কাউকে না জানানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অবশ্য খবর বের করার অধিকার আমার আছে। যাই হোক, আপনি কি রাজি হয়ে গেছেন?
-না। আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আমি কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। আমি পরে জানাব বলে এসেছি।
-আলোচনা চলাকালীন কোনও অসুবিধে হয়নি তো? মানে কোনও ভীতি প্রদর্শন বা অন্য কিছু?
-না না, একেবারেই নয়।
-তাহলে আপনি সামনের দরজা দিয়ে না বেরিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে এলেন কেন?
প্রশ্নটা শুনে ঘাবড়ে গিয়ে রেবা জিজ্ঞাসা করল,’ আপনি কী করে জানলেন? আপনি কোথায় ছিলেন?’ পানু রায় বললেন,’ আমি বাড়ির পিছনেই ছিলাম।‘রেবা বলল,’আমি ,না না, ঐ লোকটা ফোনে কথা বলছিল। আমি শুনতে চাইছিলাম ও কার সঙ্গে কী কথা বলছে। আমি রান্নাঘরে ঢুকে গেলাম। মনে হল কথাবার্তা অনেকক্ষণ ধরে চলবে। কিন্তু হঠাৎ ফোন রাখার আওয়াজ পেয়ে আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না এখন কী করবো? লোকটা সামনের ঘরে গেল এবং ঢুকেই দেখবে আমি ওখানে নেই। তাই আমি রান্নাঘরের লাগোয়া পিছনের দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছি। ভেবেছি পরে বলব যে আমার খুব দরকার ছিল তাই ও যখন ফোনে কথা বলছিল ওকে ডিস্টার্ব না করে সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছি।
-লোকটা কার সঙ্গে কথা বলছিল?
-এত কমসময়ের মধ্যে আমি বুঝতে পারলাম না যে কার সঙ্গে কথা হচ্ছে।
-কার সঙ্গে কথা বলছে বা কী বলছে সেটা কেন আপনি জানতে চাইছিলেন? কোনও সঙ্গত কারণ ছিল?
-হ্যাঁ আসলে আমি কৃষ্ণকালী নামটা শুনলাম।তাই ভাবলাম হয়ত উনি ফোন করছেন। কিন্তু পরে মনে হল ফোনের ওপারে কোনও মহিলা আছেন।
-আপনার কী মনে হয়? কে ছিলেন ফোনের ওপারে? কোনও আন্দাজ?
-কালীকৃষ্ণের নবপরিণীতা বধূ হতে পারে। ওরা পাটনায় গিয়ে বিয়ে করেছে।
- কী নিয়ে কথা হচ্ছিল? ব্যবসা সংক্রান্ত না প্রেম সংক্রান্ত? কিছু বুঝতে পারলেন?
-না কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঐ যে আমার গাড়ি। আমি এখানে নেমে যাই। আমি ম্যান্ডেভিলা অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। কৃষ্ণকালীবাবুর সঙ্গে কথা বলার পর আমাকে ফোন করবেন প্লিস।
রেবার কথায় এবং কন্ঠস্বরে হতাশার আভাস পেলেন পানু রায় কিন্তু কিছু বললেন না। পানু রায়ের গাড়ি থেকে নেমে নিজের গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পানু রায়ের দিকে তাকিয়ে রেবা বলল,’ আমি হয়ত আপনাকে বোঝাতে পারিনি যে আমি সত্যিই আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।
রেবা কৈরালার গাড়ি কিছুটা এগিয়ে ডানদিকে ঘুরে পানু রায়ের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।
0 comments: