পথে প্রান্তরে - রঞ্জন ঘোষ দস্তিদার
Posted in পথে প্রান্তরেসেই পথ এসে মিলে গেল শেষে’ --- পাক্কা হাইওয়েতে। যদি ঠিক ঠাক মনে পরে এস এইচ ৫৪। স্টেট হাইওয়ে ৫৪। এটা পুনা থেকে আসছে। একদম পাটা রাস্তা। গাড়ি এবার শোঁ শোঁ করে ছুটছে।
তোমরা যতই গুগুল কর, আমি পাড়ার মোড়ে দাঁড়ান ছেলেদের গুগুলের থেকেও বেশি ভরসা করি। মনে পড়ে রাত দেড়টায় গুগুল ভরসা করে তিন জন বেঘোরে প্রাণ হারাল বিহারে? রাতের আঁধারে তাদের অসম্পূর্ণ ব্রিজে তুলে দিয়েছিল, গুগুল। সত্যি। বিহারে। সোজা শুকনো নদীখাতে। তিনজনই শেষ।
“এই, এই রাস্তায় অলক্ষুণে কথা নয়, তোমার যাকে খুশি জিজ্ঞেস কর”।
অবশেষে আমরা MTDC ---MAHARASTRA TOURISM DEVELOPMENT CORPORATION এর বেশ বড় হোটেলে পৌঁছে গেলাম। মস্ত সিং দরজা, অর্ধ চন্দ্রাকৃতি বাড়ি। নতুন ঝকঝক করছে তা নয়, তবে দৈন্য দশাও নয়। ভ্রু কুঁচকে গেল, এত বড় পারকিং লট, একটাও গাড়ি নেই কেন? আবার একবার চোখ মেলে আন্দাজ নিলাম। নয় নয় করে এখানে শ’খানেক গেস্ট থাকতে পারে। আমাদের নাকি যে দুটি মাত্র ভি আই পি ঘর আছে, তাই ই দেওয়া হয়েছে। বন্ধুবর বললেন
“মেক মাই ট্রিপ থেকে বুক করা। MTDC তার ওপর। ঘাবড়াও মত”।
ঝটকা লাগল আবার সেই সাবেকি হুড়কো টেনে তালা দেওয়া। খটাং করে খুলে দড়িতে বাঁধা চাবি হাতে ধরিয়ে দিলে!
ওরেব্বাবা। এটা বসার ঘর? তা ১৬ বাই ১২ হবে। থ্রি পিস সোফা, সামনে টি টেবল। রাইটিং ডেস্ক। ডান পাশে বারান্দা তিনটি চেয়ার। ঐ বন্ধ দরজার ওপাশে আমি শোবার ঘর ভেবেছিলাম। এসি নেই। এ কথা অবশ্য আগেই জানিয়েছেন ওনারা। বাঁ পাশের দরজা দিয়ে ঢুকলাম, মস্ত বেডরুম। ১৬ বাই ১৪ হবে। আর বাকি যা সব থাকে, আছে। বিছানার চাদর পরিষ্কার। কিন্তু…। ওয়াশরুম ও পরিষ্কার তবে সাবান ইত্যাদি দেওয়া নেই। জল গরম করার একটা কেটল দেখলাম, কোন টি ব্যাগ নেই। বেশ, একটা রাত তো কাটিয়ে দাও। জলের বোতল দিতে বললাম। কোনায় রাখা সেই যে প্লাস্টিকের কল লাগানো কলসি মত পাওয়া যেত না, তাই দেখিয়ে বলল ‘জল ভরা আছে, গ্লাস দিয়ে যাচ্ছি’। মাথাটা----- বললাম মাথাকে একটা রাত তো, ঠাণ্ডা থাকো বাপু।
“চা পাওয়া যাবে”?
“ডাইনিং এ যেতে হবে। রুম সার্ভিস নেই”।
অন্যেরা মাল পত্র নাড়া চাড়া করছে। আমি দুটো কুকি নিয়ে হাঁটা দিলাম ডাইনিং কোথায় দেখতে। কোথাও নোংরা নেই। কিন্তু একটা দীন ভাব সর্বত্র। খুব গর্বিত গরীব লোক। ডাইনিঙে রিসেপ্সনে যে মেয়েটি বসে আছে তাকেই বললাম
“চা হবে চার কাপ”?
“এখন”? ঘড়ি দেখল সে।
হাতের কুকিটা বাড়িয়ে দিলাম। লজ্জা পেল। না না।
বললাম
“নাও, নাও। দুটো বাজে দেখ”।
পেছনে আর একটি ছেলে দাঁড়িয়েছে এসে।
“দাও, ওকেও দাও একটু। আমার কাছে একটাই আছে”। নিল, লজ্জা করে। বলল
“বসুন, আমি ব্যবস্থা করছি। আপনারা ভি আই পি রুমে আছেন না”?
সে ভেতরে গেল চা এর বন্দোবস্ত করতে। ফিরে এসে বলল
“এখানে খাবেন না”।
আমি পরিষ্কার একটা ডাইনিং হলে --- ত্রিশ চল্লিশ জন একসাথে খেতে পারে, এমন বড় হলে—বসে ভাবছি ব্যাপারটা কি। জানতে চাইলাম কেন?
চুপ। আবার বলল
“এখানে লাঞ্চ খাবেন না”।
চা এল। বেশ ভালো চা।
সবাই এসে পড়লে বললাম আমার অভিজ্ঞতার কথা। ওরা শুনে এসেছে। একটু এগিয়ে নটরাজে খাওয়া পাওয়া যাবে।
খিদে পেয়েছে। চল। ওখানে গিয়ে আগে জল কিনতে হবে।
গাড়িতে উঠতে উঠতেই নামতে হল। কাছেই।
বাহরে, বেশ বড় খাবার জায়গা। যেখানে বসলাম, সামনের দেওয়ালটা পুরোন দিনের রেডিওর মডেল দিয়ে ভরা। মাঝে বুদ্ধদেব। টুকুস করে একটা ছবি নিলাম। ভালো লেগেছে।
আগে ড্রাইভারের জন্য অর্ডার দেওয়া হল।
ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জলের বোতল এল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কোথাও প্যাকিং এর তারিখ বা এক্সপায়ারি দেখলাম না। ‘কিনলে’ ব্রান্ড। বলাতে বিরক্ত হল। আরো গোটা দুই বোতল আনল। একটা খুলে ঢক ঢক করে খেয়েই নিল খানিকটা। আমাদের দেখানোর জন্য। হাতের পিঠ দিয়ে মুখটা মুছে বললঃ
“কই প্রাব্লেম নাই”।
আমাকে বলল সবাই
“ছাড়ুন, দুটো মুখে দিয়ে চলুন তো। বাইরে থেকে কিনে নেব”।
খাবার এল। আমি তখনও বসি নি। একজন মুখে দিয়েই বলল
“দেখুন তো, মিক্স ভেজ ঠিক নেই মনে হচ্ছে”।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ”। আর একজনও বলল।
সে ম্যানেজার সাহেব যেন অপেক্ষা করছিলেন। গুপ গুপ করে দু চামচ মুখে দিয়ে বললেন
“বেএ এ শ ঠিক আছে”।
তার গলা চড়ছে। আমরা ছোট খাটো কেউ নই। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা ডাল ভাত খেয়ে নেব ভাবলাম।
আমি বাইরে বেরিয়ে এসেছি। ভাবছি, এত ঘুরে বেড়াই আমরা, এমন তো হয় নি কখনো।
গাড়ি ঢুকছে একটা। যেচে পড়ে বললাম
“হেথা নয়, হেথা নয়। অন্য কোথা, অন্য কোনখানে”।
আমার দিকে অবাক চেয়ে তারা – মধ্যবয়সী দুজন --গাড়ি ঘোরাল। বেরনোর মুখে আর একটি গাড়িকেও সঙ্গে নিয়ে গেল।
“ভোলে বাবা পার করেগা……” এইবার আমরা চললাম শঙ্কর দর্শনে। জানলাম ন’ দশ কিলোমিটার। চল।
পথে আমরা দুপাশে দেখেতে দেখতে চলেছি খাবার জায়গা, বা দোকান, যেখানে বোতলের জল পাওয়া যেতে পারে। এই তো আস্তে আস্তে জমজমাট হচ্ছে। বাড়ছে দোকান পাট, খাবার জায়গা টুকি টাকি, কিছু মিছু কেনা কাটার দোকান। লোকজন ও দেখা যাচ্ছে বেশি। বুঝলাম এসে পড়েছি। রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে পড়ল ছেলের দল। আর গাড়ি যাবে না। ওনাদের গাড়ি নিতে হবে ৫০০ টাকা। না হয় হেঁটে যাও। আমরা নেমে পড়লাম। সেই কখন থেকে গাড়িতে বসে, একটু হাঁটতে ভালোই লাগবে। সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজ এলো
“কত দূর”?
“এই আমি কি গুগুল নাকি রে”?
আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস কর।
খবর এসেই গেল। এই তো সামনেই। বিনিময়ে কপালে তিলক কাটতে হল। ছবি তুলল ওরা। বিশেষত আমাকে কায়দা করে সামনে ধরে। আমাকে তিলক পড়িয়ে ওরা সবাই খুব মজা পেয়েছে।
খেয়াল করিনি কখন সিঁড়ি নামতে শুরু করেছি। একটু বাদেই আমি সবিশেষ জ্ঞানী হয়ে গেলাম।
“শোন, যত নামবে, ঠিক ততটাই উঠতে হবে কিন্তু”।
ঠিক, ঠিক। কিন্তু কেউই থামল না। আমি আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়তে থাকলাম। একটা বসার জায়গা--- মাঝে মাঝেই আছে দেখলাম---দেখে বসেই পড়লাম। ওরা দূর থেকে হাত নাড়ছে ‘এসো’।
আমি ধ্যানস্থ। পথ বেঁকে গেল।
যাক বাবা, আমি মুক্ত।
আশেপাশে এইবার একটু চোখ ঘোরান যাবে। উল্টো দিকেই একজন জলের বোতল, দুএকটা কাঁচা ফল নিয়ে বসে একজন। কেটে একটু নুন ঝাল মাখিয়ে দিচ্ছে। সেই পুরোন কথা মনে পরে গেল। ইস, আমার কছে একটা পয়সাও নেই। প্রতিবার বাড়ি/ গাড়ি থেকে বেরোবার আগে ভাবি ক’টা টাকা সঙ্গে নিয়ে নামব। ভুলে যাই। যাকগে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোভ দি।
ঠিক আমার পাশে একজন এসে বসলেন। ঘর্মাক্ত। একটু ভারি নিঃশ্বাস। আমার থেকে একটু ছোটই হবেন।
“কদি আলে তুমি? বসা”।
“আত্তা”। বসতে বসতে বললেন উনি। যাক, আমার ফুটা মারাঠি পাশ! সঙ্গে সঙ্গে হিন্দিতে নামতে চাইলাম।
“কুটুন আলে”? আরে ‘এ যে মানে না মানা’! আবার?
“কোলাপুর”। আবার পাশ!!
যা জানা গেল, উনি একা নন। ওনার গিন্নি দেখলাম গোটা দশেক সিঁড়ি ওপরে কোমরে হাত দিয়ে বেশ একটা ‘কে ভাই’ গোছের চাহনি নিয়ে আমার ওপর লক্ষ্য রাখছেন। ওনারা বড় দল বেরিয়েছেন কোলাপুর থেকে। বাসে। উনিশটি তীর্থ সেরে বাড়ি ফিরবেন। মনে মনে ভাবছি কত দিনের? থাকছেন কোথায়? ইত্যাদি। ওনার ডাক এল। ‘চলি’ বলে উঠে পড়লেন উনি।
আমি একা হয়ে পড়লাম আবার। গুটিকয় সিঁড়ি নেমে বেশ একটা আবিষ্কারের মত আনন্দ পেলাম। ডান হাতে দুটি সিঁড়ি উঠেই একটা হোটেল। ঢুকেই পড়লাম। কেউ নেই কোথাও। কথার আওয়াজ পাচ্ছি, কাউকে দেখছি না। পাশাপাশি তিনটি ঘর। পরিপাটি বিছানা করা, একটি চেয়ার। পাশের বারান্দা দিয়ে গিয়ে টয়লেট। হাতের বোতল টেবিলে রেখে চেয়ারে বসে পড়লাম। বেশ একটা উত্তেজনা। কেউ এলে কি বলব? এই সব ভাবছি। নিজেকেই জিজ্ঞেস করলাম
‘কত বয়স হল আপনার’?
হ্যাঁ, একজন এসে পড়ল। আলাপচারি হল। এই হোটেলে বেশ “গ্রাহক” হয়। এটা ওনার শব্দ কিন্তু। হিন্দিতে কথা বলছিলাম কিনা আমরা। বললাম “জি হা, বঙ্গালসে”। জানা গেল এই আনন্দ বিহারের ‘উ এস পি’ হল এখান থেকে ভোর চারটেয় উঠে দর্শনে যাওয়া যায়।
আফশোস, আগে খবর পেলে এখানেই থাকতাম আমরা। ইত্যাদি।
“আপনি যান নি”? সে ভারি অবাক।
“পায়ে ব্যাথা”, মুখটা করুণ করে বললাম।
বেরিয়ে এলাম। ওরা এসে আমাকে দেখতে পাবে না। চমকেই উঠেছিলাম। কটা সিঁড়ির পর একটা ল্যান্ডিং মত। মানে সিঁড়ি হীন একটু সমতল। সেখানে প্রায় আছড়ে পড়লেন এক বৃদ্ধা। আমি হাই হাই করে উঠতে গিয়েও দেখলাম ওনার দুপাশে দুজন আছে। মেয়ে বা বউমা আর ছেলে বা জামাই। কাউকেই ওনাকে ধরতে দিলেন না। ওখানে ওভাবেই একটু দম নিয়ে হাত বাড়ালেন। ওদের সাপোর্ট নিয়ে বেশ কষ্ট করেই দাঁড়ালেন।
এটা কি? ধর্ম? সংস্কার? না কি ভক্তি? কি? চালিকা শক্তিটি কি?
কিন্তু এর একটা জোর আছে। ওপরের দিকে তাকালাম। এখনো কত সিঁড়ি আরো ভাংতে হবে ওনাদের? সামনের দোকানি বউটিকে জিজ্ঞেস করলাম কত সিঁড়ি আর বাকি? জানে না, বা বলতে চাইছে “এটা একটা প্রশ্ন হল”!!
ওনার ‘মোবাইল ঘাঁটা ছেলের কাছে একই প্রশ্ন রাখলাম। কত সিঁড়ি নামতে হয়?
সেও যে লুকটা দিল ‘হু কেয়ারস’?
জানে না, নাকি বলতে চায় না, নাকি বলতে চায় দর্শন করতে গেলে কে সিঁড়ি গোনে?
মনটা একটু ঘোলা হয়ে গেল। এই তো চলছে। লোকে অনেক কষ্ট করে আসছে। শারীরিক। খরচও তো আছে। কই মুখে তো আনন্দ বা তৃপ্তি দেখলাম না ? তাহলে কিসের তীর্থ?
আমার লোকেদের দেখতে পেলাম আসছে। সাড়ে তিনটে হবে, দুপুর। উল্টো দিকে যে ভিকিরিটি অন্ধ(? )সেজে এতক্ষণ বসেছিল, সে পরিপাটি করে একটা চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়ল। আর কিছু মিলবে না এখন। সন্ধ্যেবেলায় দেখা যাবেখ’ন।
“এই, এই, পেয়ারা কিনতেই হবে কিন্তু”। বায়না ধরলাম।আমাকে নিয়ে যাও নি তোমরা। আমার মালকিন অনেক ভেবে মত দিলেন। ব্যস, আমি নেমে পড়লাম ফিল্ডে। কাটো, ঝালনুন টা মাখাও বেশ করে। তারপর মালকিনের রক্তচক্ষু থোড়াই কেয়ার করে শুরু করে দিলাম।
টিপস এই সময় ওনার দিকে তাকাবেন না।
এবার কপালের তিলক মোছায় মন দিলাম।
বাইরে একটা দুটো করে আলো জ্বলে উঠছে। এখনও সন্ধ্যা দিদিমনি আসেন নি। ও মা, নজরে এল, মালকিনও খাচ্ছেন! কিমাশ্চর্যম।
আমরা এক ক্রেট মানে ২৪টা জল কিনে নিলাম। ছেলেটি আমাদের গাড়িতে তুলে দিল সব। বেশ ভারি, পারতাম না। ধন্যবাদ।
আমরা এবার মন দিলাম একটা ভালো খাবার জায়গা ঠিক করায়। একটার সামনে দিয়ে গেলাম, অন্যটির নাম জেনে এলাম। BLUE MORMON.
রাতের খাবার খেতে আমরা যখন বেরলাম, বেশ আঁধার চারিদিক। আমার চিন্তা হচ্ছিল। বলল তো একটা নাম। আছে কি নেই জানিনা। খবরটা ঠিক তো?
একটু এগোতেই রাস্তার বাঁ দিকে বোর্ড। এই তো। চল চল। পাওয়া গেছে। গাড়ি বাঁ দিকে ঘুরল। গাড়ির হেডলাইটের রেখার বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
আমার আন্দামানের কথা মনে পড়ল। ওখানেও আমরা রাতের পার্টি করে হোটেলে ফিরছিলাম। একদম মিশকালো আঁধার।
“আবার তোমার ছেলেমানুষি? না, না আপনি বন্ধ করবেন না আলো”। আমি সেই ড্রাইভারের পাশে বসে বলেছিলাম এবারের মতই “আলোটা একটু বন্ধ করবেন। এই আঁধারে একটু নাইব, প্লিজ,প্লিজ”।
সে যে কি আঁধার!
চিত্রাঙ্গদা।
“এই নেভাও না ভাই আলোটা” ।
আলো বন্ধ হল। সেই, সেই আঁধার। ভরতপুরেও এমনি হয়েছিল জানো? এখানে তো আমরা গাড়িতে। ওখানে আমরা হাঁটছিলাম তিন বন্ধু। দু পাশে জঙ্গল। কেউ জঙ্গলের ধারে থাকতে চাইছে না, ঠেলাঠেলি করে মাঝে চলে আসার চেষ্টা করছে!
পরে সেই নিয়ে আমরা কত মজা করেছি।
হঠাত দূরে দেখা গেল আলোর রেখা। সবাই একসাথে কথা বলে উঠল।
“ওটাই কি”?
গাড়ি থামল। বাঁ হাতে দারুণ একটা হোটেল। ঝকমক করছে আলোয়। সিঁড়ির ধাপে ধাপে তিনটি ছেলে বসে মোবাইল ঘাঁটছে। দুটো বুড়ো মস্ত কুকুর ঝিমোচ্ছে। ভেতরে চমক ছিল। দারুণ ডাইনিং হল, সুন্দর সাজানো। ৫০/৬০ জন আরামসে বসতে পারবে। আমরা খুশি। ম্যাডাম শুধু জানতে চেয়েছেন ছেলেটির কাছে ‘কি রে মাংস পাওয়া যাবে কি’? ছেলেটি কিছু বলতে গিয়েও গিলে ফেলল। ক্যাশ কাউন্টারের দিকে তাকাল। ওখান থেকে আওয়াজ এল
“মিলেগা। চিকেন। মাটন নাহি মিলেগা। সব্জি জো চাহিয়ে। চিকেন হান্ডি লে লিজিয়ে”।
“চাপাটি”?
“মিলেগা। পারোটা, রোটি, নান”।
অর্ডার দিয়ে ওনার ডেস্কে পৌঁছে গেলাম।
“ভাই আপনাদের তো পেলাম না নেটে”?
“ছোড়িয়ে, ও বহুত কামিসান খাতা হ্যাঁয়। হামারা রেট কম। জো হোতা হ্যাঁয় ডাইরেকট”।
“রেট কিতনা”?
“সাড়ে তিন, নাস্তাকে সাথ।
“আভি কিতনা বোরডার হ্যয়”?
“আভি কই নাহি হ্যাঁয়। সানিচারসে আ জাতা হ্যাঁয়”।
“বিজনেস ক্যাসা”?
“পাটিল সাব কা হোটল”। হাত দিয়ে ছবি দেখাল। লাইফ সাইজ।
“উনকা গেস্ট আতা হ্যাঁয় বহত। আভি নেই দিখেগা, পিছে হেলিপ্যাড হ্যাঁয়”।
“সাব আতা হ্যাঁয় ইধার”?
“আভি নাহি। ইলেকশান হ্যায় না। কাল উঙ্কা নমিনেশান ফাইল করনা হ্যায়”।
খাওয়া দারুণ হল। ভারি তৃপ্তির খাওয়া হল। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট এখানেই হবে। আলুপরোটা অউর সবজি।
0 comments: