প্রচ্ছদ নিবন্ধ - সোমা দত্ত
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধআমার এক বোন ছিল যে খুব ছোটবেলায় অকারণে মিথ্যা কথা বলত। সেইসব মিথ্যার মধ্যে অধিকাংশই ছিল খুব দুঃখজনক কোনো একটি বর্ণনা যেমন মা ছেড়ে চলে গেছে বা বাবা-মা সেপারেটেড এইরকম ধরনের। অনেক পরে আমরা তার এই মিথ্যা বলার প্রবৃত্তি টের পাই। আবার আমার এক বন্ধু ছিল যে খামোকাই আকাশ কুসুম মিথ্যা বলত যেটা আমরা উপভোগ করতাম। যেমন সে হয়তো বলল তার বাবা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিটিং এ ব্যস্ত আজ তাই তাকে নিতে আসবে না স্কুলে। আমরা খুব হাসলাম শুনে হয়তো। কোনো কোনো বন্ধু আবার পরীক্ষায় পাওয়া নম্বর মিথ্যেই বাড়িয়ে বলত। বন্ধু শুধু কেন বন্ধুর মা-ও হয়তো বলল। এমনকি আমি নিজেও মফসসলের নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মে একটু দামী ইস্কুলে পড়ার জন্য আমাদের বাড়িতে টেপ রেকর্ডার না থাকাকালীন সময়ে বন্ধুদের মিথ্যে বলতাম যে আছে। একটু বড় হয়ে বাড়িতে মিথ্যে বলে বন্ধুদের সঙ্গে এদিক ওদিক যাওয়া ইত্যাদি তো আছেই। এইসব ছোটখাটো মিথ্যের সঙ্গে বড় হওয়ার অনেক পরে আমরা জানলাম মিথ্যে বলা একটি অসুখ। আর খুব ছোটবেলায় ‘কদাপি মিথ্যা বলিবে না’ পড়ার সময় আমরা জেনেই গেছিলাম যে ওটি অতি পুরাতন বিদ্যাসাগরীয় রীতি যার কিছুই আর ভ্যালিড নয়। তো যখন জানলাম মিথ্যা বলা একটি অসুখ তখন পাশাপাশি এটিও জানলাম যে সেইসব অসুখ হওয়া মিথ্যাগুলো অন্য, আমাদেরগুলো নয়। এবার এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ বিষয় কিন্তু মিথ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য কারণ অপরাধ যেমন ছোট থেকেই বড় হয় এবং অন্যান্য অনেক অভ্যাস এবং পরিবেশের মাধ্যমে জিনগত ভাবে রেপ্লিকেট করে তেমনি মিথ্যা বলার প্রবণতাও একইরকমভাবে এগোতেই পারে। অর্ধেকের উপর মিথ্যেকে আমরা আগে থেকেই বৈধতা দিয়ে রাখি জীবনে। এখানেই একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় যে কোন কোন মিথ্যা তাহলে বৈধ? যেমন হোয়াইট লাইস বলে একটা প্রচলিত কথা আছে। যে মিথ্যায় কারো ক্ষতি হয় না বিশেষ করে হয়তো মঙ্গলই সাধন হয় তাকে বলা হয় ধরে নেওয়া যেতে পারে। এবার এইসব সফেদ শুদ্ধ মিথ্যা একজনের জন্য মঙ্গলদায়ক হলে যে আরেকজনের জন্য হবে সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না। অশ্বত্থামা হত ইতি গজ এক পক্ষের জন্য মঙ্গলদায়ক হলেও অন্যপক্ষের জন্য ক্ষতি। বৃহত্তর স্বার্থের জন্য কোন ক্ষতিকে স্বীকার করা হবে তার কি কোনো প্রামাণ্য তালিকা আছে না থাকতে পারে। কতগুলো সাধারণ ঘটনা নিয়েই যদি ভাবি তাহলে কিছু উদাহরণ লাগবে। যেমন-
ঘটনা ১- এক উচ্চপদস্থ প্রাইভেট কোম্পানির বিপণন বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজার একজন ক্লায়েন্টকে নিজেদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। উপস্থিত রয়েছেন কোম্পানির বিপণন বিভাগের কিছু শিক্ষানবিশ এবং বিপণন বিভাগের দায়িত্বে থাকা অন্যান্য জুনিয়র কয়েকজন। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের প্রস্তুতকারক ফর্মুলায় তৈরি বস্তুর গুণমান সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত ব্যাখা করছিলেন। কিন্তু বলার সময় অনেক অতিরিক্ত গুণের উল্লেখ করছিলেন যা আদপেই সত্য নয়। ক্লায়েন্ট চলে যাওয়ার পর একজন শিক্ষানবিশ সাহস সঞ্চয় করে এই ভুল ব্যাখার কারণ জানতে চাইলে ম্যানেজার বললেন ওটুকু বলতে হয়। এভাবেই বলবে।
ঘটনা ২- মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। ছেলের বাবা ছেলের রোজগার এবং পড়াশুনা সম্পর্কে কথা বলছেন ভাবি বেয়াই এর সঙ্গে। যা বলছেন বেশ খানিক বাড়িয়ে বলছেন। কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পর ছেলেটির বোন এসে তার বাবার কাছে জানতে চাইল ওই অতিরঞ্জিত গুণগ্রাহিতার কারণ। বাবা বললেন, ওরকম বলতে হয়।
ঘটনা ৩ – বায়োডেটা তৈরি করার সময় সিনিয়র দাদা জুনিয়র বোনকে বলল কয়েক টেকনিকাল নলেজ এক্সট্রা লিখে দিলাম। বোন বলল আমি বিষয়গুলো জানিনা। দাদা বলল, না জানলেও চলবে কিন্তু এগুলো না লিখলে চাকরি হবে না। ওরকম একটু লিখতে হয়।
ঘটনা ৪ – অমিয়বাবু নিজের এপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ডকে প্রায়ই ব্যক্তিগত কাজে দোকানে পাঠান। বিনিময়ে তাকে বকসিস দেন দশ কুড়ি টাকা। একজন বাসিন্দা খবর পেয়ে সরাসরি অমিয়বাবুকে জিগ্যাসা করলে তিনি সত্য অস্বীকার করলেন। তার নাতি তাকে বলল, দাদু কেন মিথ্যে বললে? অমিয়বাবু বললেন প্রয়োজনে ওরকম একটু বলতে হয়।
ঘটনা ৫ – নতুন রান্নার লোক রাখছেন অমৃতা। বললেন পরিবারে তিনজন লোকের দুবেলার রান্না করতে হবে। একটা সবজি আর মাছ। কাজের লোক দ্বিগুণ মাইনে চাইল। দোনামনা করে হলেও রাজি হলেন অমৃতা। লোক চলে যাওয়ার পর শাশুড়ি বললেন তুমি এত কমিয়ে রান্নার কথা বললে কেন? আমাদের তো তিন চাররকম পদ হয়। এছাড়া সকালের খাবার তৈরি করতে হয়। অমৃতা বললেন ওসব ওরকমই বলতে হয়। পরে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজ করিয়ে নেবক্ষণে।
এই যে ঘটনাগুলোর উদাহরণ এলো সেগুলো খুব নির্বিষ ধরনের বা খুবই নিরীহ ধরনের উদাহরণ। এই যে ছোট একটি কথা ওরকম বলতে হয় এর উপর নির্ভর করে আসলে ছোট থেকে শুরু করে যেকোনো বড় অপরাধও সংঘটিত হয়ে যায়। আমরা ভাবি আমরা তো অপরাধ করি না। আমরা সুশিক্ষিত, মার্জিত। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাই। কিন্তু আমরা জানিনা আমরা আসলে তা করি না। খুব সূক্ষ্মভাবে ভাবলেই দেখা যাবে অপঘাতে মৃত্যু হয় সত্যের কী অবলীলায়। সহজ করমর্দন করি আমরা বন্ধুর সঙ্গে মিথ্যা দিয়েই। নিজেকে কৈফয়ত দিই এমনই বলতে হয়। মিথ্যার সঙ্গে সহবাস করি অথচ কী অদ্ভুতভাবে তাকে বৈধতা প্রদান করি। মানুষ সাধারণভাবে নিজের রোজগার নিয়ে মিথ্যা বলে তাকে স্বাভাবিক মনে করে। নিজের অর্থনৈতিক উদারতার অভাবকে ঢাকতে মিথ্যা হিসেব নিকেশ নিয়ে মিথ্যা বলে। তারাই আবার অর্থনৈতিক সাম্যের কথা বলে। বড় হোটেলে খাওয়ার পরে টিপস দেয় দেড়শো টাকা কিন্তু বাইরে যে দারোয়ান মাথায় ছাতা ধরে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয় তাকে দেয় দশটাকা। আইনক্সে সিনেমা দেখে পপকর্ণ খেয়ে নষ্ট করে দু’হাজার টাকা বাজারে পেঁপে কিনতে গিয়ে দরদস্তুর করে। এ এক বিচিত্র সভ্যতা যা আসলে অসভ্যতাকেই কোয়ালিফাই করে এগোয় প্রতিমুহূর্তে। ভালোমানুষেরা মিথ্যে বলার সময় তাকে সত্য বলে প্রতীয়মান করতে যৌক্তিকতার আশ্রয় নেন। মিথ্যেকে সত্যি করে তোলার অস্বস্তি তাকে আরও বেশি মিথ্যাবাদী করে তোলে। তবু কেন যে সত্যবাদী হওয়ার দাবি করি। আমরা কেন যে বুঝিনা আমরা খেলাঘরের পুতুলের মতো। ভিডিও গেমের প্রোগামের মতো। আমাদের চলাচল, আমাদের রীতি, অভ্যাস, সত্য মিথ্যা সব জড়িয়ে পেঁচিয়ে এক করে ফেললেও সে-সবই পূর্ব নির্দিষ্ট। আমাদের এরকম আর ওরকমের মাঝে একটা মস্ত বড় বাঁচার লড়াই থাকে। সেই লড়াই স্তরে স্তরে সভ্যতার সেই আদিম যুগ থেকে বাড়ছে। যত বাড়ছে তত জটিল হচ্ছে। যত জটিল হচ্ছে তত মিশিয়ে ফেলছে সত্য অসত্য। আমরা জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত হয়ে চলেছি। আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার ভাষা পরিবর্তন করছে। একজন ব্যক্তির অবিচ্ছিন্নভাবে মিথ্যা বলার অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতাকে মিথোম্যানিয়া বলে। এটা এক ধরনের প্যাথোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। মিথোম্যানিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেকে নায়কের মতো দেখানোর জন্য এবং তাদের আশেপাশের লোকেদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা বা সহানুভূতি অর্জনের জন্য মিথ্যা বলে। মিথোম্যানিয়াকরা হয়তো বুঝতে পারে না যে তারা মিথ্যা বলছে এবং বিশ্বাস করে যে তারা তাদের কল্পনা দিয়ে যে চিন্তাভাবনা তৈরি করে তা বাস্তব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এইরকম মিথ্যা কথা বলা মানুষগুলো নিজেকেও মিথ্যাটা বলে। অর্থাৎ মিথ্যার প্রতি একটা বিশ্বাস তৈরি করে তাকে সত্য বানানোর প্রচেষ্টা চলে তাদের মধ্যে। পরিস্থিতির প্রভাবে যে মিথ্যেগুলো আমরা সাধারণত বলে থাকি সেগুলিকে সাদা মিথ্যে বলা যেতে পারে। মিথোম্যানিয়াকদের এইসব মিথ্যা হোয়াইট লাইজ বা সাদা মিথ্যার অন্তর্গত নয়। মনোবিজ্ঞানিদের মতে প্রত্যেক মানুষই দিনে একটি কি দুটো সাদা মিথ্যে বলে থাকে। যা মূলত প্রয়োজনে বলা হয় অর্থাৎ যার কোনো সদর্থক ভূমিকা থাকতে পারে। এই সদর্থক ভূমিকা কথাটিও বেশ গোলমেলে। কারণ যেকোনো বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা ব্যক্তিসাপেক্ষে বদলে যেতে পারে। অর্থাৎ যাকে হোয়াইট লাইজ বলা হচ্ছে তা সর্বজনস্বীকৃতভাবে হোয়াইট নাও হতে পারে। যেমন যদি মনের রোগের কথাই ভাবি তাহলে বলা হয়, মিথোম্যানিয়ার মতো প্রায় একই রকম একটি মানসিক সমস্যা কনফ্যাবুলেশন। এতে দেখা যায় ব্যক্তি বাস্তব ঘটনার পরিবর্তে কিছু কাল্পনিক বা বিকৃত গল্প তৈরি করে যার প্রভাব খারাপ ভালো দুই-ই হতে পারে। ব্যক্তি সেই খারাপ বা ভালো সম্পর্কে কোনো সচেতনতা বহন করে না। মনোবিজ্ঞানিরা বলছেন যে এই ধরনের সমস্যাগুলো অন্য অনেক মানসিক রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেমন ডিমেনশিয়া বা কোরসাকফ সিন্ড্রোম। এইরকম তথ্য খুঁজে যদি মিথ্যাকে প্যাথোলজিক্যালি কাঁটা ছেঁড়া করা হয় তাহলে অনেক ব্যাধি, অনেক উপসর্গ এবং সে-সবের অগুনতি উদাহরণ বেরোবে। কিন্তু যা সামনে আসবে না তা হলো সাদা মিথ্যের সঙ্গে মিশে থাকা ধূসরতা। এই ধূসরতা একটি অস্পষ্ট অবস্থার দিকে আঙুল তোলে যা সত্য এবং মিথ্যে দুটিকেই একাধারে ঘোলাটে করে তুলছে যুগের চলনের সঙ্গে সঙ্গে। এমন নয় যে এর উদ্ভব খুব সম্প্রতি হয়েছে। এই ধূসরতা রয়েছে পৌরাণিক কাল থেকেই। মিথ থেকেই এসেছে মিথ্যা। দেব দেবীর ম্যাজিক, তাদের তুষ্ট করে পাওয়া অলৌকিক ক্ষমতা কী মিথ্যা নয়? গল্প উপন্যাসের মিথ্যা সর্বজনস্বীকৃত মিথ্যা। কিন্তু তার মধ্যেও ভাগ রয়েছে। কল্পনাকে রূপায়িত করে লেখা উপন্যাস আর কাল্পনিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে তোলা বিশ্বাস এক নয়। উপন্যাস ঘোষণাপূর্বক কাল্পনিক। কিন্তু পুরান বা পৌরাণিক বিশ্বাস, ভগবানের লীলাখেলার কাল্পনিক গল্প ঘোষণাপূর্বক কাল্পনিক নয়। এখানে বিশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে এবং মিথ থেকে আসা সেইসব মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করবার জন্য অজস্র মিথ্যা বলে। মনোবিজ্ঞান এই মিথ্যাকে কীভাবে ব্যাখা করে? মেসিয়াহ কমপ্লেক্স বা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে দেবত্ব আরোপ করাও একধরনের বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ। কিন্তু সাধারণভাবে এই অন্ধত্ব দেখা যাওয়ার আগে পর্যন্ত সেটিকে স্বাভাবিক মনে করা হয়। তাহলে এরপর স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিকের দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। অর্থাৎ কোন কোন প্যারামিটারের উপর ভিত্তি করে আপনি কাউকে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক বলবেন? ধর্মন্মোত্ত মানুষ কি স্বাভাবিক? ধর্মন্মোত্ততার চূড়ান্ত নিদর্শন পাওয়ার আগে পর্যন্ত কি তাকে আপনি অস্বাভাবিক বলবেন? যুক্তি তর্কের বাইরে গিয়ে কাল্পনিক হয়ে ওঠার পরেও তার গ্রহণযোগ্যতা বৈধ থাকে কেন? ছোটবেলা থেকে শিশুকে বিশ্বাস অর্থে ঈশ্বর সম্পর্কিত অবাস্তব কাল্পনিক কাহিনি শোনানো হয় কেন? প্রফেসর শঙ্কু যদি কাল্পনিক চরিত্র হন তবে দুর্বাশা কেন কাল্পনিক নন? পাগলা দাশুর মিথ্যা যদি মিথ্যা হয় তবে হনুমানের পাহাড় তুলে নিয়ে আসার কাহিনি কেন কাল্পনিক নয়? এবং পৌরাণিক দেবতাদের এইসব কীর্তিকলাপকে নাল অ্যান্ড ভয়েড করে তুললে বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের ধর্মন্মোত্ত ব্যবহার কেন মানসিক সমস্যা নয়? সত্যজিত ‘দেবী’ চলচ্চিত্রে এর অনেকখানি চর্চা রয়েছে। চর্চা হয়তো আরও অনেক রয়েছে এই বিষয়ে কিন্তু মিথ্যে অলক্ষ্যে সত্যিতে পরিণত হচ্ছে আধুনিক সভ্যতাতে। যদি এইসমস্ত অলৌকিক বিশ্বাসকে বহন করে নিয়ে চলা হোয়াইট লাইজ হয় তাহলে জনৈক মিথোম্যানিয়াকের মিথ্যাই বা সাদা নয় কেন? এরপরে আসে রাজনৈতিক মিথ্যা। তারপরে রয়েছে সামাজিক মিথ্যা যার মধ্যে খানিকটা ওই বিশ্বাসের বিষয়টাও মিশে আছে। প্রতি মুহূর্তে মিথ্যা বলা হয় এবং তাকে বৈধতা দেওয়া হয়। সে মিথ্যে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাকে যুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক ঘোষণা করা হয় এমনকি যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলেও তাকে মানসিক ব্যাধির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় না। কেন অকারণ মিথ্যাকে প্রশ্রয় দিতে বলা হয় ‘ওরকম বলতে হয়।’ কেন সাদা মিথ্যার মধ্যে থাকা ধূসর অংশকে ব্যাখা করা হয় না? হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন ‘কারণে মিথ্যা বলার চেয়ে অকারণে মিথ্যা বলতে মানুষ বেশি পছন্দ করে’। সে তো করেই কিন্তু সেই মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে যত মিথ্যা বলা হয় সে আরও জটিল প্রক্রিয়া। আসলে আমরা একটি প্যাথোলজিক্যাল মিথ্যার অভ্যাসকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করে চলেছি প্রতিমুহূর্তে একথা বলতে বাধা কই? জিনগতভাবে আমরা প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তুলছি স্বাভাবিক মিথ্যা বলার অভ্যাসে।



0 comments: