0

ধারাবাহিক - শৌনক দত্ত

Posted in





















১৩. ভার্জিনিয়া উলফ ও কবি লেখকের আত্মহত্যা





সুপরিচিতাসু সুস্মি,


ষষ্ঠীর রাত। ঘন্টাখানেক আগেই নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে ট্র্রেনে চেপেছি। অনেকদিন হলো তোমার কোন চিঠি পাইনা। ভালো আছো নিশ্চয়? কাজের প্রেশারে চিঠি লিখতে পারছো না মনে হয়। বৈশুর হাতে তৈরি লুচি আার আলুর দম দিয়ে ডিনার সেরে জানালার পাশে বসে আছি বহুক্ষণ। রাতের ট্রেন ছুটছে, এসির জানালায় দূরের কোন আলো কাঁপছে। মনটা আজ খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, তোমাকে খুব মনে পড়ছে। কেন পড়ছে জানিনা। কিংবা এভাবে তোমাকে মনে করা উচিত হচ্ছে কিনা তাও বুঝতে পারছিনা। আমরা আজো যেহেতু মোবাইল নম্বর দেয়া নেয়া করিনি সেহেতু তোমাকে লেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই, পুরো কম্পার্টমেন্ট আধো ঘুমে আমি জেগে বসে তোমাকে লিখছি। আজ সন্ধ্যায় একটা সুইসাইড নোট পড়ছিলাম ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ শেষ বিদায়ের আগে প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশে লেখা এই চিঠিটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর একটি। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ওই চিঠিটি এখনও পড়েন বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীরা, আমিও আগে বহুবার পরেছি কিন্তু কেন জানিনা আজ পড়ার পর থেকেই খুব কষ্ট লাগছে, বয়স বেড়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি। এই চিঠি তোমারও নিশ্চয় পড়া। যেখানে আত্মহত্যাকারী লিখছেন—



প্রিয়তম,

আমি বুঝতে পারছি, আমি আবারও পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এবার হয়তো আমাদের এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত হবে না। আমি নানা রকম স্বর শুনতে পাচ্ছি, কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছি না। তাই যা সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে তা-ই করতে যাচ্ছি আমি। তুমি আমাকে যতটুকু সম্ভব সুখী করেছ। তুমি সে সবই করেছ যা যা কোনও মানুষের তরফে করা সম্ভব। আমার মনে হয় না দুইজন মানুষ মিলে তোমার-আমার চেয়ে বেশি সুখী হতে পারতো, যতদিন না আমার এই ভয়ঙ্কর রোগটা দেখা দেয়। আমি আর এর সাথে যুদ্ধ করতে পারছি না। আমি জানি আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করে ফেলছি, আমি না থাকলেই তুমি কাজ করতে পারবে। এবং তুমি করবেও, আমি জানি তা। এই দেখ, এই চিঠিটাও আমি ঠিকভাবে লিখতে পারছি না। আমি পড়তে পারি না। আমি সর্বার্থে বলতে চাই, আমার জীবনের সমস্ত সুখের জন্য আমি তোমার কাছে ঋণী। তুমি আমার সঙ্গে চরম সহিষ্ণুতা দেখিয়েছ, অসাধারণ সহৃদয় আচরণ করেছ। আমি বলতে চাই- এ সত্য সকলেই জানে। কেউ যদি আমাকে বাঁচাতে পারতো, সেটা হতে তুমিই। তুমি এত ভালো!- আমি তোমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করতে পারি না। আমার মনে হয় না আমাদের দুজনের চেয়ে বেশি সুখী আর কেউ হতে পারবে।



এই কথাগুলো আমারও হতে পারে কিংবা যেকোন সংবেদনশীল মানুষের কথাও হতে পারে তাই না? নিশ্চয় বুঝে ফেলেছো এটা কার সুইসাইড নোট। তার মৃত্যুও কাব্যিক ব্যঞ্জনার। নিজের ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথর বোঝাই করে হেঁটে নেমে গিয়েছিলেন খরস্রোতা পাথুরে নদীতে। আর কোনদিন ফিরে আসেননি। বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতাবাদী সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম অ্যাডলিন ভার্জিনিয়া স্টিফেন উলফ নারীদের হয়ে লিখে গেছেন বহু চিঠি এবং ডায়রি। তাঁর ডায়রিতে বর্ণিত ঘটনাগুলি সেই সময়ের এক বিশ্বস্ত দলিল। পনের বছর বয়েসে তিনি প্রথম ডায়রি লেখেন। আর শেষ লেখাটি লিখেছিলেন মৃত্যুর ঠিক চারদিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চ। তিনি তার লেখা খুব যত্ন করে রঙিন কাগজের মলাটের ভিতরে গুছিয়ে রাখতেন। অতীতচারণা করার সময়ে ডায়রির সাহায্য নিতেন, পরবর্তীতে এই বিষয়ের উপরে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন। তিনি লন্ডনের একটা কলেজে ইংরাজি ও ইতিহাস পড়ানোর পাশাপাশি দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট এবং বিভিন্ন প্রকাশনার জন্যে নিবন্ধ, রিভিউ লেখেন সমসাময়িক এবং ধ্রুপদী সাহিত্য বিষয়ে। এই সময়ে তিনি এবং তাঁর স্বামীর কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা বৌদ্ধিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলেন। লন্ডনের গর্ডন স্কোয়ারে ১৯০৬ সালে ‘থার্সডে ইভিনিং’ এবং পরে ‘ফ্রাইডে ক্লাব’-এ সাহিত্য, শিল্পকলা, বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলত। লেখার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। নারী যখন ফিকশন লেখে তখন তার একটি কক্ষ আর কিছু অর্থ খুব প্রয়োজন”। এই উক্তি বিশ্ব সাহিত্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক ভার্জিনিয়া নারী মুক্তির অগ্রদূত, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার, লিঙ্গবৈষম্য, রাজনৈতিক দর্শন ও সমাজ বিশ্লেষক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য উদ্দেশ্য করে ভার্জিনিয়ার ভাষ্য, যদি নিজস্ব একটা ঘর আর ৫০০ পাউন্ডের নিশ্চয়তা দেয়া হয়, নারীরাও অনেক উন্নতমানের সাহিত্য উপহার দিতে পারবে। জেইন অস্টেন থেকে ব্রন্টি ভগ্নিদ্বয়, জর্জ এলিয়ট ও মেরি কারমাইকেল পর্যন্ত সব লেখিকাই অনেক প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও শেকসপীয়রের স্তরে উন্নীত হতে পারছে না আর্থিকভাবে সামর্থ না থাকার কারনে। আর তাই নারীকে নির্ভর করতে হয় পুরুষের ওপর। আর নারীদের নিচে ফেলে না রাখলে পুরুষরা বড় হবে কি করে- এই মনোভাব বজায় রাখলে নারীদের মুক্তি মিলবে কিভাবে? তদানীন্তন সময়ে ঝাঁঝালো এই প্রশ্ন ব্রিটিশ পুরুষতান্ত্রিক সুশীল সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়।



জীবনের পরিবর্তনশীলতা, সময়, স্মৃতি, সামাজিক সম্পর্ক, এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভার্জিনিয়ার লেখা তার শেষ উপন্যাস বিটুইন দ্য এ্যাক্টস তোমার খুব প্রিয় আমি জানি। তুমি জানো নিশ্চয় ভার্জিনিয়া শিক্ষা, গির্জা, চিকিৎসা, আইন ইত্যাদি নানা জায়গায় কাজের জন্যে শিক্ষিত নারীদের প্রবেশাধিকারের সমস্যা নিয়ে কলম ধরেছিলেন। অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ থেকে নারীদের বহিষ্কারের ফলে তাঁর কলম গর্জে ওঠে। নারী পুরুষের সমতা নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাস, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস রামসে’ পড়েছো কি? কিংবা তার বায়োগ্রাফি ‘ফ্লাস’? রোডলফ বেসিয়ারের একটি নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফিকশনধর্মী এই উপন্যাসটি একটি কুকুরের চোখ দিয়ে পুরো থিমটি তুলে ধরা হয়েছে। ভার্জিনিয়া উলফ তার আন্টি ফটোগ্রাফার জুলিয়া মার্গারেট ক্যামেরুনের জীবনের নানা দিক নিয়ে ‘ফ্রেশওয়াটার’নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। আমার অবশ্য ভালো লাগে ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘এম আই এ স্নব’। বইটিতে মূলত সমাজের ধনাঢ্য শ্রেণী এবং সেই সাথে সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি হওয়ার যে সংকট তা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও তাঁর জেকবস্ রুম, ওরলানডো, দ্য ওয়েভস্ উপন্যাসগুলোও আমার ভালো লাগে।



আমার মাথায় একটা প্রশ্ন সন্ধ্যা থেকে ঘুরছে, লেখকের মৃত্যু, বিশেষত আত্মহত্যা তাঁকে মহান করে কি? বিশ্বসাহিত্যে শতাধিক খ্যাতনামা কবি-লেখকের খোঁজ মিলবে, যাঁরা আত্মহত্যায় নিজেদের জীবনের ছেদ টেনেছেন। খোঁজ নিলে আরও দেখা যাবে, তাঁদের লেখালেখিতে নিজেদের মনোজগতের ছাপ পড়ুক বা না-ই পড়ুক, তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিজীবনে প্রবল মানসিক চাপ বয়ে বেড়িয়েছেন, যা প্রায়ই তাঁদের এক দুঃসহ বিষণ্নতা ও মনোবৈকল্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অতি বিখ্যাত আত্মহননকারী হিসেবে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে—প্রত্যেকেই মনোরোগের নানা লক্ষণে আক্রান্ত ছিলেন। ভার্জিনিয়া উলফের হৃদয়বিদারক সুইসাইডের কথা ভেবে উঠতে উঠতে তোমাকে আরও কয়েকটা নাম মনে করিয়ে দিই— সিলভিয়া প্লাথ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা, ইয়ুকিও মিশিমা। প্রত্যেকে আত্মহন্তারক। মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও বড় যত্নে ঘুমন্ত ছেলেমেয়ের বিছানার পাশে প্লাথ সাজিয়েছিলেন দু-গ্লাস গরম দুধ আর রুটি, তারপর মাথাটা গুঁজে দিয়েছিলেন জ্বলন্ত ওভেনের ভেতরে। হেমিংওয়ে তাঁর সেই আত্মঘাতী রাতে শুতে যাওয়ার ঠিক আগে খেয়েছিলেন নিউ ইয়র্ক স্ট্রিপ স্টেক, বেকড পোট্যাটো আর সিজার স্যালাড, সঙ্গে ছিল দুর্মূল্য বোরদো। কী এক অসহ্য তাড়না তাঁকে ডেকে নিল গহীন ঘুমের ভেতর থেকে, আর সুষুপ্তির অন্তরালে পার্শ্ববর্তিনীকে ফেলে রেখে নীচের বারান্দায় গিয়ে তিনি গুলি চালালেন নিজস্ব করোটি ফুঁড়ে। ‘আত্মহত্যা নিয়ে আমার না আছে কোনও শ্রদ্ধা, না আছে কোনও মায়ামমতা’— এমন পঙ্‌ক্তিমালা লেখার পরেও গ্যাসের নব নিজের হাতে খুলে দিয়ে নিজের শ্বাস রোধ করে মৃত্যু চেয়েছিলেন কাওয়াবাতা। আর মিশিমা? অনেক আশার বারুদ ঠাসা ছিল তাঁর বুকে, সেই সব স্বপ্নজাগরের অকালমৃত্যুসম্ভাবনায় আপন হাতে পেটের নাড়িভুঁড়ি চিরে বের করে বেছে নিলেন হারাকিরি মৃত্যু। সিলভিয়া প্লাথ ভেবে দেখবেন একবার, যেই মুহূর্তে আপনি জানলেন এঁদের প্রত্যেকের আত্মহননবৃত্তান্ত, এঁদের লেখার মোহের চাইতেও এঁদের আত্মহত্যার বয়ানটি জানার দুর্মর লোভ চেপে কি বসছে না আপনার মনে? ‘অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা’ করা সেই ‘বিপন্ন বিস্ময়’ সম্পর্কে অনন্ত কৌতূহল কি আপনাকে কি গ্রাস করছে না? উলফও জানতেন সে-কথা। জানতেন, হাজার আলোর রোশনাই এসে পড়বেই তাঁর জলে ভিজে হেজে-যাওয়া মৃত মুখে, শ্যাওলা-জড়ানো চুলে, পাথরের ভারে ছিঁড়তে বসা পকেটের খাঁজে। লেখকের ‘সুইসাইড নোট’ও সাহিত্যবিচারের আতসকাচের তলায় পড়তে পারে, এ-কথা ভাবতে পেরেছিলেন বলেই, স্বামীকে উদ্দেশ্য করে লেখা সেই শেষ চিঠিতে কৈফিয়তের জবানিতে লিখে গেলেন— ‘দ্যাখো, এ চিঠিটাও আমি ঠিকমতো লিখতেই পারছি না। পড়তেও পারি না আর।’ তবু রেহাই মেলেনি। তিন সপ্তাহ পর অর্ধগলিত সেই শবদেহ যখন শনাক্ত করছেন লিওনার্ড উলফ, ইতিমধ্যেই হাজার অভিযোগের তির ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। ‘ঘোড়ার মতো মুখ আর হাত-কাঁপার জন্মগত রোগ’ওয়ালা এই কপর্দকশূন্য ইহুদিটাকে কেন এককালে বিয়ে করেছিলেন ভার্জিনিয়া স্টিফেন, নিশ্চয় এর অযত্ন আর অবহেলাতেই প্রাণ গেল সম্ভাবনাময়ীর! এমন চিত্রনাট্য তখন রোজ ছাপা হয় খবরের কাগজে। প্লটটা অবশ্য মুখ থুবড়ে পড়ল, কারণ কাগজে-কলমে লিওনার্ড প্রমাণ করলেন, ভার্জিনিয়া ভুগছিলেন বাইপোলার ডিজঅর্ডারে। ভয়াবহ ডিপ্রেশন আর ম্যানিয়াগ্রস্ত উত্তেজনা যে-রোগের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।



সৃজনশীলতার সঙ্গে মানসিক অসুস্থতার কি কোনো সংগোপন সম্পর্ক রয়েছে? কারও কারও ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, ব্যাপারটা এমন একধরনের মানসিক বিকার (কখনো কখনো অসুস্থতার কাছাকাছি), যা সৃজনশীলতাকে উদ্দীপ্ত করতেও সাহায্য করে, আবার অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয়তো একপর্যায়ে বিনাশী রূপ ধরেই আসে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, লেখালেখি বা শিল্পচর্চা ছাড়াও সামগ্রিকভাবে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যাঁরা লিপ্ত, তাঁরা সমাজের অন্যদের থেকে কমপক্ষে ৮ শতিংশ বেশি বিষণ্নতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তবে কবি-লেখকদের বেলায় এই ঝুঁকি আতঙ্কিত হওয়ার মতো বেশি। ভুক্তভোগীদের শতকরা ৫০ জনই আত্মহত্যায় জীবনের ছেদ টেনেছেন এমন তথ্য রয়েছে। মার্কিন ঔপন্যাসিক ই এল ডকটোরো এ বিষয়ে খোলাখুলি মতামত দিয়েছেন এই বলে যে লেখালেখি সামাজিকভাবে অনুমোদনপ্রাপ্ত একধরনের সিজোফ্রেনিয়া।



ভার্জিনিয়া উলফের বিষয়ে ধারণা করা হয়, তাঁর শেষ উপন্যাস বিটুইন দ্য এক্টস-এর (মৃত্যুর পর প্রকাশিত) পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করার পরপরই তাঁকে প্রচণ্ড বিষণ্নতা পেয়ে বসেছিল। ইতিপূর্বেও একাধিকবার এমন হয়েছিল—পরিবারের আপনজনের মৃত্যুতে এবং বই প্রকাশের পর অসন্তুষ্টিতে। তবে সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকবলিত পৃথিবীর নানা দুর্যোগও তাঁর বিষণ্নতাকে মনোবৈকল্যের এক চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়। একার অন্ধকারে ডুবে মরা এই ভার্জিনিয়ার জন্য কোথাও ছিল না একফোঁটা চোখের জল। সবাই তাঁর মেধার দখলস্বত্ব বুঝে নিতে চায় শুধু। একের পর এক খবর তখন সিলমোহর দিয়ে জানান দিচ্ছে ভার্জিনিয়ার মৃত্যুজনিত বিষণ্নতা আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর শহুরে ক্লান্তি আর বিষণ্নতার দ্যোতক। তাদের নির্মম তাত্ত্বিক দর্শনের পুঁজি উপুড় করে এই মৃত্যুকে মুড়ে ফেলতে চাইছে গবেষণার শুখা কাগজে। বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে জীবন দুর্বহ হয়ে পড়ার ঘটনা খ্যাত-অখ্যাত বিস্তর কবি-সাহিত্যিকের বেলায় ঘটেছে। কেবল খ্যাতনামাদের তালিকাই কম দীর্ঘ নয়; তবে এই বিষণ্নতা সবার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তা বলা যাবে না। ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিষণ্নতাসহ নানা বিতর্ক দাঁড় করালেও এর পেছনে বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত রাশিয়ায় বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁর বৈরিতাজনিত হতাশাকে মূলত দায়ী করা হয়ে থাকে। সৃজনশীলতা, বিষণ্নতা ও আত্মহত্যা—এই তিনের অন্তঃসম্পর্ক নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। বইপত্রও লেখা হয়েছে। সুরাহা হওয়ার বিষয় নয়, তবু কোথাও যেন একই সুতার টান টের পান কেউ কেউ, বিশেষত মনোবিশ্লেষকেরা।



তোমাকে লিখতে লিখতে রাত পেরিয়ে পুবের আকাশ রাঙা হয়ে উঠছে। ব্রহ্ম মূহুর্ত পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। আকাশটা প্রথমে গভীর নীল, তারপর ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। দিগন্তে যেন কেউ হালকা হলুদ রঙের তুলির আঁচড় টেনে দিয়েছে। সেই আঁচড়ের ভেতর থেকে বেরোতে শুরু করেছে লালচে আভা। আর কয়েক ঘন্টা পরেই বেনারস নামবো। ভাবছি বহুবছর পরে আবার যখন এসেছি বাবু মায়ের পিন্ডটা দিয়ে যাবো। আবার কবে আসবো আদৌ আসবো কিনা জানিনা। ট্রেনের কামরা জেগে ওঠছে। চিঠিটা বেনারস নেমে পোষ্ট করবো। নিরন্তর ভালো থেকো।



অন্তে প্রীতি হোক

বাসু

২৮ সেপ্টেম্বর,২০২৫

0 comments: