0

গল্প - অচিন্ত্য দাস

Posted in












উঁচুনিচু পাহাড়ি জমি, চারিদিকে গাছ, গাছ আর গাছ। এখানকার জাতীয় উদ্যান মানে ন্যাশনাল পার্কে ঢুকে ভারি ভালো লাগছিল। পাথরে বাঁধানো রাস্তা এঁকেবেঁকে অরণ্যের ভেতরে চলে গেছে, সে পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। মায়াকানন বলে একটা কথা আছে – এটা তাই। কোথাও পেল্লায় উঁচুউঁচু সেডার, পাইন, স্প্রুস গাছের ঘন বন, কোথাও ঝিরঝিরে ঝরনা নেমেছে আর তা পার হওয়ার জন্য কাঠের সাঁকো। কোথাও অদ্ভুত ধরনের কিছু ফুল ফুটেছে, কোথাও সবুজ জলের পুকুর। একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়াতে হলো – বহু আগুনে পোড়া গাছ ভুলুন্ঠিত, তাদের পুড়ে যাওয়া গায়ে শ্যাওলা জমতে শুরু করেছে। কাছেই দেখলাম একটা বড় ফলকে ছবিটবি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া আছে বনে আগুন লাগার পর কী কী হয়। ক্ষতি কী হয় তা তো মোটামুটি জানা – বায়ু-প্রদূষণ, পশুপাখির প্রাণনাশ ইত্যাদি। কিন্তু শেষের দিকে দেখলাম লেখা আছে আগুনের অনেক উপকারিতাও আছে। দাবানল জিনিসটা প্রকৃতির একটি রীতি বা নিয়ম। জমে থাকা ঝরাপাতার পুরু আস্তর পুড়ে গিয়ে মাটি অনেক কাল পরে পায় আলোর স্পর্শ। মরে যাওয়া পাতার ভেতর যা সার-পদার্থ ছিল তা মাটিতে আবার মিশে গিয়ে নতুন লতাপাতা গাছ-গাছালির পুষ্টি যোগায়। মোটকথা আগুন নতুন সৃষ্টির পথ খুলে দেয়।

এ দেশের সরকার প্রাকৃতিক ব্যাপার-স্যাপার খুব সুন্দর ভাবে সংরক্ষণ করে। এদের দেশে অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ, অবিশ্বাস্য রকমের প্রাকৃতিক শোভা। বিরাট বড়লোকের দেশ, তার মানে অবশ্য এই নয় যে সবার হাতে পয়সা আছে। বহু মানুষ গৃহহীন, রাস্তাঘাটে রেল-স্টেশনে আকছার তাদের দেখা যায়। আর এক শ্রেণী আছে যারা সারাদিন প্রচণ্ড পরিশ্রম করে বেঁচে আছে। হয়তো একটু একটু করে সঞ্চয় করে কোনো রকমে একটা পাকাপাকি আস্তানার ব্যবস্থা করতে পেরেছে। যেমন ফেডেরিক আর মারিয়া।

ফেডেরিকের বাবা ব্রাজিল থেকে ছেলেপিলে নিয়ে এসে এদেশে থিতু হয়েছিলেন। আর মারিয়ারা অনেক প্রজন্ম আগে মেক্সিকো থেকে এসেছিল। দুজনের স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। বিধির বিধানে দুজনের কোথায় যেন দেখা হলো আর সঙ্গে সঙ্গে চার চোখের মিলন। কিছু দিনের মধ্যেই বিবাহ-বন্ধনে জড়িয়ে পড়ল দুজনে। প্রথম দু-চারমাস বেশ কাটলো, যেমন কাটে। কিন্তু তারপরেই মারিয়া বুঝল ফেডেরিকের পুরুষ-সুলভ গোঁ আছে ভালো রকম। চট করে ক্ষেপেও যায় লোকটা। এদিকে ফেডেরিক বুঝল মারিয়া যেমন অভিমানী তেমনি তার জিভের ধার। সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হয়ে রোজই তুমুল ঝগড়া লেগে যেত দুজনের। অবশ্য সকাল অবধি গড়াত না, কারণ কত আর ঝগড়া করবে! সকাল থেকে দুজনেরই তো হাড়ভাঙ্গা খাটনি শুরু হবে, চলবে সেই সন্ধে অবধি। আর দুজনের উপার্জন ছাড়া এ দেশে এ বাজারে কিছুতেই চলে না।

দিন কয়েক ধরে শোনা যাচ্ছিল শহরের পশ্চিম দিকটায় বাড়ির দর নাকি নেমে যাচ্ছে। কারণটা হলো আগুন। একটুই দূরেই বন, সেখানে গত পাঁচ বছরে ছোটবড় আগুন লেগেছে সতেরো বার। আগুনের ভয় লোকে বাড়ি বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। ফেডেরিক বলল, “মাসে মাসে এতগুলো টাকা ভাড়া গুণছি – এই আমাদের সুযোগ। ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে একটা বাড়ি কিনে ফেলি।”

“ওই আগুনের এলাকায়? না, একদম নয়”

ফাটাফাটি চলল টানা দুদিন কিন্তু তারপর বাড়ি কেনাই ঠিক হলো। পয়সা যে বাঁচবে তা তো মিথ্যে নয়, যতই ঝগড়া হোক পয়সার ব্যাপারটাতে এসে দুজনের মত মিলল।

লোন আংশিক পাওয়া যায়, বাকি টাকা তো দিতে হবে। আবার তুলকালাম। এ বলে তোমার অনেক জমানো আছে, ও বলে তুমি তো সংসারে কিছুই দাও না – এবার দাও। যাই হোক শেষমেষ বাড়ি কেনা হয়ে গেল। ছোট একতলা দু-কামরার বাড়ি। সামনে পেছনে খোলা জায়গা একটু। বাড়ি হিসেবে চলনসই, তবে জঙ্গলের বেশ কাছে।

প্রথমে কথা ছিল একটা তাদের শোবার ঘর হবে, আর একটা লিভিং রুম ধরনের। কিন্তু রোজই রাত্তিরে কথা-কাটাকাটির পর হয় ফেডেরিক নয় মারিয়া অন্য ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ত। সাধের ‘লিভিং রুম’ গোঁসা ঘর হয়েই রয়ে গেল।

সেদিন রাতে এত ঝগড়া হয়েছিল যে সকালে ফেডরিক ভাবলো আজ একটা কিছু এসপার-ওসপার করতেই হবে। এ ভাবে আর চলছে না। আরে বাবা, তার নিজেরও তো একটা জীবন আছে! রোজ অশান্তি, রোজ অশান্তি!! বাড়ি কেনার কাগজ বানাতে ক্লড বলে এক ছোকরা উকিলের সাহায্য নিয়েছিল সে। কী ভেবে ফেডরিক ক্লডের কাছে গেল।

“ভাই, ক্লড কী আর বলি তোমাকে – বড় অশান্তি, বড় সমস্যায় ভুগছি গো। রোজই মারিয়ার সঙ্গে ঝগড়া। মারিয়া তো আজকাল আমাকে মানুষ বলেই মনে করছে না…”

“এটা আবার কোনো সমস্যা হলো, বন্ধু! আজকাল ঘরেঘরে তো এই চলছে। দেখো ফেডেরিক, জীবন তোমার একটাই, নষ্ট হতে দিও না। ডিভোর্সের মামলা কর।”

যদিও ফেডেরিক এইরকমই কিছু ভাবতে ভাবতে এসেছিল, ডিভোর্স কথাটা শুনে সে যেন খানিকটা ঘাবড়েই গেল। আমতা আমতা করে বলল, “তা কী করতে হবে…”

ক্লড ছোট ছোট চিরকুটের মত কাগজে খসখস করে কীসব লিখলো, তারপর সাত-আটটা কাগজ একটা খামে ভরে ফেডেরিককে দিল। বললো, “কটা পয়েন্ট আলাদা আলাদা কাগজে লিখে দিলাম। অন্তত তিনটে কি চারটে তোমাকে বাছতে হবে, যেগুলো তুমি কোর্টে প্রমাণ করতে পারবে। আর এই নাও ফর্ম। ভেবেচিন্তে ভর্তি করবে – পয়েণ্টগুলো যেন থাকে। আবার এসো দশ দিন পরে। এখন পঞ্চাশ ডলার বাকসটায় রেখে যাও, আমার ফি। হ্যাঁ, পঞ্চাশ – ফাইভ জিরো…”

এই বাজারে পঞ্চাশটা ডলার গেলো। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো ফেডেরিকের । সন্ধের মুখে বাড়ি ঢুকে ডিনার খেতে বসে ফেডেরিক দেখে স্যুপটা ঠাণ্ডা আর স্বাদটাও কেমন যেন। বলল, “মারিয়া, তুমি রান্নায় মন দিচ্ছো না, স্যুপটা নিজে চেখে দেখেছ? ছাগলেও খাবে না…”

“ছাগলে না খেলেও তুমি খাবে। আমি অত স্পেশাল রান্না করতে পারব না…কাল থেকে তুমি নিজের খাবার বানিয়ে নিও।”
“মানে, তুমি রান্নাটাও করবে না। তাহলে তোমাকে বিয়ে করলাম কেন?”

“সে তুমি জানো, আমি তো বলিনি…”

ফেডেরিকের মাথা গরম হয়ে গেল। বলেই ফেলল, “জানো আজকে আমি উকিলের কাছ থেকে কাগজপত্র সব নিয়ে এসেছি, তোমার থেকে আলাদা হয়ে যাব”

ফেডেরিক ভাবছিল পঞ্চাশ ডলার খরচা হয়েছে ঠিকই কিন্তু এ না হলে মারিয়াকে চাপে ফেলা যেত না। এইবার মারিয়া কেঁদেকেটে…

ও বাবা! কোথায় কী। মারিয়া তো শুনে হেসেই খুন। বলল, “যাও, তুমি কালকেই কেস ফাইল করো। আমার যাবার অনেক জায়গা আছে, অনেকেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে…”

ফেডেরিক ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে গেল। পঞ্চাশ ডলার খরচা করে ভেবেছিল ভালো ওষুধ পাওয়া গেছে, তার তো উল্টো ফল হচ্ছে …দাঁড়াও না, এবার কেস ফাইল করেই ছাড়বে সে।

আর কী কী করবে ভেবে ওঠার আগেই দুজনের ফোনই তীব্র আওয়াজ করে বেজে উঠল। একসঙ্গে। এ তো ফোন আসা নয়। দুজনে ফোন নিয়ে দেখল লাল লাল বড় বড় অক্ষরে লেখা – বনে আগুন লেগেছে, আগুন শহরের দিকে আসতে পারে। সাবধান, সাবধান!!

ব্যাস, আবার তুলকালাম। মারিয়া বলল, “বললাম এখানে বাড়ি নিও না, সেই তোমার জেদ…”

“হ্যাঁ, শেষে তো বললে… নিয়েই নাও, এর থেকে কমে কি আর পাব...”

ঝগড়ার তাপ বাড়তে লাগল, তারপর যেমন হয়, দুজনে দুঘরে শুয়ে পড়ল।

মোরগ-ডাকা ভোরে মারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কালকের মতো তীক্ষ্ণ শব্দে ফোন বাজছে। লাল অক্ষরে লেখাটা পড়েই মারিয়া দৌড়ে গিয়ে ফেডেরিককে ঘুম থেকে তুলল। ওঠো, ওঠো …

বলতে না বলতেই ফেডেরিকের ফোনটাও বেজে উঠল। ভয়ঙ্কর সাবধানবাণী। হাওয়ার গতি শহরের দিকে হওয়ায় আগুন দ্রুত এদিকে এগিয়ে আসছে। এক ঘণ্টার ভেতর বাড়ি ছেড়ে চলে যাও, তার আগে যেতে পারলে ভালো হয়।

ফেডেরিক জানলা দিয়ে দেখল পাহাড়ের ওপারে লাল আগুনের আভা দেখা যাচ্ছে, আর কালো ধোঁয়া তো আছেই। দুজনে কোনোরকমে দরকারি জিনিসপত্র দুটো স্যুটকেস আর একটা ব্যাগে পড়ি-কি-মরি করে ভরতে লাগলো। যা যা মনে পড়ল তখন।

“এই ফেডেরিক, ওষুধের বাক্সটা আগে নাও...”

“নিচ্ছি। মারিয়া তুমি আলমারি থেকে দুজনের পাসপোর্ট আর কার্ডগুলো তাড়াতাড়ি ব্যাগে ভর ... আমি গাড়ি গেটের সামনে আনছি। দুজনের গরম কোট আর স্লিপিং ব্যাগদুটো নিও… কোথায় কোন শেলটারে ঢোকাবে কে জানে।”

দশ বছরের বৃদ্ধ এবং চারবার হাত বদল করা গাড়ি ওদের একটা ছিল বটে। এখন ওটাই ভরসা। দুজনে মিলে যা পারে, যতটা পারে ভরল। মারিয়া হঠাৎ বলল, “দাঁড়াও, আলমারির চাবি আর জুয়েলারি বাক্সটা নেওয়া হয়নি।” ফেডেরিক বলল, “তুমি অন্য জিনিস দেখ, আমি তাড়াতাড়ি নিয়ে আসছি…”

গাড়ি যখন চলল তখন লাল আভা আরও বেড়েছে, ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে।

***

টানা পাঁচদিন শেলটারে থাকতে হলো। দমকল, হেলিকপ্টার, এরোপ্লেন থেকে জল আর কেমিকাল ছড়িয়ে আগুন আয়ত্বে আনা হলো বটে কিন্তু ততদিনে ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক।


ছ-দিনের দিন সকালে রাস্তা খুলল। বোঁচকা-বুঁচকি গাড়িতে তুলে দুজনে রওনা দিল শহরের দিকে। রাস্তায় যেতে যেতে দেখল আগুনের দাপটে সব তছনছ হয়ে গেছে। ভয় ভয় তারা বাড়ির দিকে এগোল, কী দেখবে কে জানে, কপালে কী যে আছে!

গাড়ি থেকে এক পলক দেখেই মারিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। ফেডেরিক তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল, মারিয়ার কান্না আর থামে না। কী আর সান্ত্বনা দেবে ফেডেরিক! বাড়ির একটা দিক পুড়ে গেছে। কাঠের কাঠামোটা কালো কাঠ-কয়লা হয়ে দাঁড়িয়ে – ফাঁকে ফাঁকে কটা অক্ষত সাদা টালি রাক্ষসের দাঁতের মতো বেরিয়ে রয়েছে।

মিন মিন করে ফেডেরিক বলল, “মারিয়া আমাদের শক্ত হতে হবে, একটা দিক তো ঠিক আছে। ইনশিওরেন্স থেকে কিছু তো পাবো। আবার আমরা গড়ে তুলব, মারিয়া। তুমি শুধু মনের জোর হারিও না।”

এরপরের দিনগুলো ছিল অসম্ভব পরিশ্রমের দিন। মিস্ত্রি লাগানোর খরচ অনেক – তাই বিকেলে কাজ থেকে ফিরে দুজনে হাতে হাতে বেশি-ক্ষতি-না-হওয়া দিকটা মেরামত করত সেই রাত অবধি। কাজের মধ্যেও দ্বিমত হতো ঠিকই কিন্তু এত খাটা-খাটনির পর ঝগড়া করার শক্তি আর অবশিষ্ট থাকত না। ঝগড়া করার আর একটা অসুবিধে ছিল – গোঁসা ঘর তো পুড়ে গেছে, শুতে তো হবে একটাই ঘরে! ভোরবেলা আবার দুজনের কাজে বেরিয়ে যাওয়া। এই করে মাস তিনেক কেটে গেল।

এদিকে বীমা কোম্পানী কিছু কিছু টাকা দিতে শুরু করেছে আর সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ঠিকেদার বাড়ি সারাচ্ছে একটু কম খরচে। ঘর-দুয়ারের পোড়া ক্ষতে মলম আর ব্যাণ্ডেজের ব্যবস্থা হওয়াতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাড়িঘরগুলো অল্প অল্প করে আবার স্বাভাবিকের দিকে মোড় নিচ্ছে।

ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক। বাড়ি কেনার পর সঞ্চয় তলানিতে ঠেকে গিয়েছিল আর এ কদিনে ব্যাঙ্কের খাতা প্রায় শূন্য। তবু এরই মধ্যে মারিয়া-ফেডেরিকের জীবনও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আর হপ্তা দুয়েকের ভেতর বাড়ির কাজ হয়ে গেলে দুটো ঘরই ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে। ওদের জীবন যে সত্যি স্বাভাবিক হয়ে আসছে সেটা বোঝা গেল সেদিন রাত্তিরে। মারিয়া বলল. “বীমা কোম্পানী কত টাকা দিয়েছে এখন পর্যন্ত?” ফেডেরিক অঙ্কটা জানাতেই মারিয়া সন্দেহের সুরে বলল, “তোমাকে বিশ্বাস নেই, ঠিক বলছ তো! ও টাকা বাড়ির জন্য, কায়দা করে আবার পকেটে পুরো না!”

ফেডেরিক গেল ক্ষেপে। “হ্যাঁ, আমাকে তো তোমার কোনদিনই বিশ্বাস হয় না। পড়তে অন্য লোকের হাতে, বুঝতে কত ধানে কত চাল …”

কলহের দেবতা দেবর্ষি নারদের অবাধ গতি সব দেশেই। তিনি ধর্মাধর্ম, দেশকাল কিছুই মানেন না। কখন যে তিনি অদৃশ্য হয়ে মারিয়া-ফেডেরিকের মাঝখানে এসে “হোক হোক আরও হোক” বলে চলে গিয়েছেন!! বাক-বিতণ্ডা বাড়তে বাড়তে একেবারে তার সপ্তকে চড়ে গেল! ‘জলসা’ চলল অনেক রাত্তির অবধি, সকালেও দেখা গেল তার রেশ ফেডেরিকের ভেতর র‌য়ে গেছে। ঘুম ভেঙ্গেই ফেডেরিক ঘরের জিনিস-পত্র টেনেটুনে ওলোট-পালট করে ক্লডের দেওয়া খামটা খুঁজতে লাগলো, যার ভেতরে ‘পয়েণ্ট’ লেখা চিরকুটগুলো ছিল। কিছুক্ষণ বৃথা জিনিসপত্র সরিয়ে টরিয়ে বুঝল বাড়ির ওপর এতো ধকল গেছে – ও আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না। ‘পয়েণ্টগুলো’ মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো সে – দুএকটা মনে পড়াতে কাগজ পেনসিল নিয়ে লেখার যোগাড় করছিল এমন সময় মারিয়া এসে দাঁড়াল সামনে। “সকালে এসব কী শুরু করেছ, কাজে যাবে না…”

“না যাব না। যাচ্ছি ক্লডের কাছে, কেস ফাইল করব …”

মারিয়া একটুও না দমে ফুঁসে উঠল, “তোমার সব কিছুতেই দেরি। সেই কবে থেকে আস্তিন গুটিয়ে বলেই চলেছ কেস করব, কেস করব … কিছুই তো করলে না…”

“করিনি তো কী হয়েছে, এখন করব, আজই করব!”

“না, করবে না।”

“মানে?”

“খোকা আসছে, কিংবা খুকি।”

ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল ফেডেরিক। পেনসিলটা হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গড়িয়ে গড়িয়ে খাটের তলায় ঢুকে গেল।


*****


ভাবছিলাম ওই ন্যাশানাল পার্কের ফলকটাতে ঠিক কথাই লেখা ছিল। আগুনের সামনে যা থাকে তা পুড়েঝুড়ে ভস্ম হয়ে যায় বটে কিন্তু কী যেন কী এক যাদুতে তাণ্ডবলীলার মধ্যেও অগ্নিদেব নতুন কিছু শুরু করিয়েই দেন।

0 comments: