0

গল্প - সমরেন্দ্র বিশ্বাস

Posted in




















শহরের সাজানো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ট্রেন বাস ট্যাক্সি, প্রতিবেশী আত্মীয় পরিজন – এসব কোনোকিছুই ভালো লাগছিল না লোকটার! তাই ঘর ছেড়ে নীলকন্ঠ বেড়িয়ে পড়লো। ঘুরে ঘুরে কিছুদিন কাটালো গ্রামগঞ্জে। তার ভালো লাগছিল না চারপাশের গাছগাছালি, বনজঞ্জল, জলা। ভালো লাগছিল না কোনো কিছুই!

লোকেরা বললো - নীলকন্ঠবাবু আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ!

মনের দুঃখে নীলকন্ঠ নিজের দেশ ছেড়ে উড়াল দিল সমুদ্রের দিকে। অন্য কোনো দেশের খোঁজে। ভাবলো, পাখি হয়ে আকাশে উড়বে, যতক্ষণ না তার পছন্দ মতো নতুন কোনো দেশ খুঁজে পায়। তাই সে ওড়া শুরু করলো।

আশ্চর্যের ব্যাপার! উড়তে উড়তে নীলকন্ঠ একসময়ে একটা পাখি-মানুষ হয়ে গেলো!

তারপর থেকেই এই দুনিয়ার সীমাহীন সংসারে নীলকন্ঠ উড়ছে আর উড়ছে! নীচে সীমাহীন সমুদ্র, অশান্ত ঢেউ। সে প্রতিজ্ঞা করলো, তাকে উড়তেই হবে, যতক্ষণ না নতুন কোনো দেশের সন্ধান পায়।

অজানা অচেনা পথ, নিচে অথৈ জল। প্রচন্ড ঝড়ঝঞ্জায় নীলকন্ঠ দিক ভ্রান্ত হয়ে গেলো। উড়তে উড়তে তার হাতের কয়েকটা পালক খসে পড়লো!

এমনই বিপন্ন দিনে নীলকন্ঠর সাথে দেখা আরেক ঝাঁক পাখির। সেই দলে ছিল পাখিদের সর্দারণী, তাকে দেখে নীলকন্ঠ চিনতে পারল – সে তার পুরানো প্রেমিকা রাধারাণী!

সেই সর্দারণী, মানে প্রাক্তন প্রেমিকা রাধারাণী, ঘাড় বেঁকিয়ে কিচির মিচির করে বল্লো, একে তো আমাদের দলে নেয়া যাবে না! এ ভিন্ন জাতের, ভিন্ন দলের, ভিন্ন বিচারের প্রাণী!

অগত্যা একাকী নীলকন্ঠ দলছাড়া উড়তে উড়তে খেই হারিয়ে ফেললো। তার মনে পড়লো ফেলে আসা শহর - সেখানকার ঘরবাড়ি, লোকজন, রাস্তাঘাট, ট্রেন বাস ট্যাক্সি; মাথার উপরে উড়ন্ত হাওয়াই জাহাজের কথা।

মাঝ আকাশে সূর্য। ঝড়ো হাওয়া। নিচে অথৈ সমুদ্র। সে আরো জোরে জোরে ডানা ঝাপ্টালো। আকাশ থেকে প্রচন্ড শব্দে বাজ ফাটলো। কেউ বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলো – ‘নীলকন্ঠ, তাকিয়ে দেখ! সামনেই মুক্তি! অমৃতালোক! যার খোঁজে তুই ঘর ছেড়ে আকাশে উড়েছিস!’

এক সময়ে ধেয়ে এলো চক্রবাত, ঘূর্ণি, এল-নিনো। তার পছন্দ মতো নতুন কোনো দেশ খুঁজে পাবার আগেই সে পৌঁছে গেলো চক্রবাতের কেন্দ্রে! ঘূর্ণির প্রচন্ড আবর্তে লোকটা ঢুকে গেল অতল সমুদ্রের নীচে – মৃত্যুর শহরে! না কি পৌঁছে গেলো নতুন কোনো এক দেশে যার সন্ধানে সে আকাশে উড়ছিল?

ঘূর্ণিঝড় থেমে গেলে কয়েকদিন পরে সমুদ্রের কিনারায় পাওয়া গেলো একটা ভাঙাচোরা নৌকা আর নীলকন্ঠ নস্করের পচাগলা দেহ। দেহটা কোথা থেকে এলো, কি ভাবে এলো, কেউ তার হদিশ দিতে পারলো না।

0 comments: