0

সম্পাদকীয়

Posted in



































সম্প্রতি ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ হল মেয়েদের ক্রিকেট খেলায়। ইতিপূর্বে তীরে এসে তরী ডোবার ঘটনা স্মৃতিকে আচ্ছন্ন করে রাখলেও এবারের শাপমুক্তি আসমুদ্র হিমাচলকে জুড়ে দিয়েছে এক অদৃশ্য আনন্দবন্ধনে। অথচ পরিসংখ্যান বলছে সেমিফাইনালের আগে এই গণজাগরণ ছিল অনেকটাই স্তিমিত।

বিষয়টি একাধিক কারণেই আহ্লাদের। প্রথমত ক্রিকেট বিশ্বের দৈত্য অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে হারানো এবং ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে কার্যত দর্শকে পরিণত করে বিজয়ী হওয়া সহজ ছিল না। দ্বিতীয়ত, ভারতের মতো একটি দেশে, যেখানে সংবিধান নারী পুরুষের সম মর্যাদার কথা বললেও সামাজিক স্তরে তার যথার্থ প্রতিফলন চোখে পড়ে না আজও, সেখানে এই জয়ের গুরুত্ব অসীম।

এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। গোল বাধল বিজয়োৎসবের একটি বিশেষ মুহূর্তকে ঘিরে। মাঠের মধ্যে, পুরস্কার মঞ্চের কাছে জেমাইমা রডরিগস্ শুয়ে। পা দুটি তাঁর প্রসারিত। হাতদুটি মাথার ওপরে। এক আশ্চর্য প্রশান্তি তাঁর সর্বাঙ্গে আর তাঁর সতীর্থরা পুষ্পবৃষ্টি করছেন তাঁর ওপরে মেরি গো রাউন্ডের ভঙ্গিমায়। আজীবন ফ্রেম করে রেখে দেওয়ার মতো একটি দৃশ্য।

এক্ষেত্রে অনেকের প্রতিক্রিয়া হল বিপরীত। সমাজের এই স্বনিযুক্ত অভিভাবকরা মনে করলেন জেমাইমার উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভঙ্গিটি অতি কদর্য, অন্যদের প্রতি অতি নোংরা এক দৃষ্টান্ত!

এই যে দেখার চোখ, এটি তো যেকোনও সভ্য মানুষের এক অর্জন আর এখানেই ঘটে যায় যাবতীয় পার্থক্য। এই চোখের অসৌজন্যেই হস্তিনাপুরের এক পাশা খেলার আসরে পরাজিত হয়ে তাঁর সহধর্মিণীকে পণ রেখেছিলেন এক পুরুষ আর আজকের ভারতবর্ষে নেশাতুর এক স্বামী তাঁর স্ত্রীকে পণ রেখে জুয়ায় হারলেন এবং সেই রমণী হলেন গণধর্ষিতা। তাঁরই প্রিয়জনের দ্বারা। কৃষ্ণার মর্যাদা বাঁচাতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের দুখিনী মেয়েটিকে এই ভয়াবহ নিগ্রহ থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি কেউই।

জেমাইমার উদ্‌যাপনের ভঙ্গিটির সমালোচকদের মননভূমিতে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে যে ধর্ষককূল, ভারতের বিজয়োল্লাসে সেদিন সামিল হয়েছিল তারাও। এমন ভাবা হলে তা অসঙ্গত হবে না।

সুস্থ থাকুন। দায়বদ্ধ থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

0 comments: