প্রবন্ধ - আইভি চট্টোপাধ্যায়
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
উপনিষদ : ব্যবহারিক জীবনে প্রাসঙ্গিকতা
আইভি চট্টোপাধ্যায়
“মধুবাতা ঋতায়তে। মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব:। মাধ্বীর্ন: সন্তু ওষধি:।
মধু নক্তমুতোষসো। মধুমত্ পার্থিবং রজ:। মধু দ্যৌরস্তু ন: পিতা।
মধুমান্নো বনস্পতির্মধুমানস্তু সূর্য:। মাধ্বীর্গাবো ভবন্তু ন: ॥“ (বৃহদারণ্যক ৬॥৩॥৬॥)
বাতাসে মধু বয়, নদীর জলে মধুর ক্ষরণ। ওষধিরা মধুময় হোক। দিবা ও উষা মধুময় হোক। পৃথিবীর ধূলি মধু। আমাদের পিতা দ্যৌ মধুময়। বনস্পতি, সূর্য, গাভীরা সব মধুময় হোক।
উপনিষদপাঠের সঙ্গে আমার সম্পর্কের সূত্র এই স্তোত্র। প্রথম যেদিন এই কথাগুলো পড়লাম, আমার ভেতর জুড়ে এক আনন্দের প্রকাশ। চমৎকার এক অনুভূতি। এই যে আমি, আমার চারপাশ, আকাশ বাতাস আলো প্রকৃতি.. সমগ্র বিশ্বব্যাপী এক আনন্দের প্রকাশ এই স্তোত্রে।
উপনিষদের প্রতি আগ্রহের সেই শুরু। ক্রমে আসক্তি। এমন আনন্দরসে পরিপ্লাবিত সাহিত্য খুব বেশি তো নেই। কৌতূহলে আমি উপনিষদ রচনাকাল ও সেই সময়ের ইতিহাস নিয়েও আগ্রহী হয়ে পড়ি।
সাধারণ দর্শন যেভাবে লিখিত, উপনিষদের দর্শন সেভাবে গড়ে ওঠে নি। সাধারণ দার্শনিকের অনুসন্ধানমার্গ অনেকটাই বিচারমার্গ। মনের যে অংশ চিন্তা করে, কেবল সেই অংশকেই অবলম্বন করে সত্যের অনুসন্ধান। উপনিষদের ঋষি কিন্তু খানিক দার্শনিক, খানিক কবি। কেবলই বিচারমার্গে তিনি সমাধান খোঁজেন নি।
উপনিষদের ভাবধারাকে সুসংবদ্ধভাবে সাজানোর উদ্দেশ্যে বাদরায়ণ ব্রহ্মসূত্র রচনা করেছিলেন। সেকালে বিশেষ শাস্ত্রকে সূত্রের আকারে রচনা করার একটা প্রবণতা ছিল। সূত্রের উদ্দেশ্য ছিল, শাস্ত্রের বিস্তারিত ভাবটিকে সংক্ষিপ্ত আকার দেওয়া। আর আজকের পৃথিবীতে তো গভীর ভাবনার ব্যক্তিগত সময় পর্যন্ত নেই। অজস্র কথা, নিরন্তর কথা। শব্দ ব্যবহারে অমিতব্যয়, চূড়ান্ত অসংযম। অন্যের কথা, গভীর কোনও কথা শোনার সময় নেই। অসংখ্য গণমাধ্যমে নিরন্তর ক্যাপস্যুলড জ্ঞানের চাষ। তিরিশ সেকেন্ডের এক একটি মনোহারী বিজ্ঞাপনে জীবনদর্শনের ক্যাপস্যুলড বাণী। শাস্ত্রপাঠের সময় বা আগ্রহ কই? তাই সেকালের নিরিখে শাস্ত্রগুলোর সংক্ষিপ্ত-করণের ভাবনাটা বেশ বুঝি।
কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত-করণের কারণে বহু শাস্ত্রবাক্য আজ দুর্বোধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ বহু সূত্র এমন আকার নিয়েছে যে, মূল বক্তব্য উদ্ধার করাই দুষ্কর। ব্রহ্মসূত্রের ক্ষেত্রে এই বিভ্রাট ঘটেছিল সবচেয়ে বেশি।
পরবর্তীযুগের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, মূল উপনিষদের দর্শনের ব্যাখ্যা এবং অর্থ বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন ভাবে করেছেন। যেমন শঙ্কর, রামানুজ, মধ্বাচার্য, বল্লভাচার্য, নিম্বার্ক, বলদেব বিদ্যাভূষণ। এঁদের ব্যাখ্যাগুলো এমনই পরষ্পরবিরোধী এবং স্বতন্ত্র যে প্রত্যেকটিকে এক একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক তত্ত্ব হিসেবে স্থাপন করা যায়।
এই যুক্তি থেকেই শঙ্করের ভাষ্য ‘অদ্বৈতবাদ’ নামে পরিচিত। রামানুজের ভাষ্যের পরিচিতি ‘বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ’ নামে, মধ্বাচার্যের ভাষ্য ‘দ্বৈতবাদ’, নিম্বার্কের ভাষ্য ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদ’, বল্লভাচার্যের ভাষ্য ‘বিশুদ্ধাদ্বৈতবাদ’ এবং বলদেবের ভাষ্যের পরিচিতি ‘অচিন্ত্যভেদাভেদ’ নামে। প্রতিটিই ভাষ্য ‘বেদান্ত দর্শন’ হিসেবে খ্যাত, কারণ এই সব ‘বাদ’-ই ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তসূত্রের ব্যাখ্যা করে।
‘উপনিষদ’ শব্দটি সহজ, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে ‘উপনিষদ’-এর সহজ সরল স্বাভাবিক অর্থ আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। যুগে যুগে মনীষীরা একটি গূঢ় অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে উপনিষদকে অনর্থক এক জটিল দর্শনে পরিণত করেছেন। ‘উপনিষদ’ শব্দটি যে বেদান্তের সমার্থবোধক শব্দ, তাও আমরা ভুলতে বসেছি।
আমার মনে হয়, ‘উপনিষদ’-এর অর্থের ব্যাখ্যা করা উচিত সময়ের কথা মাথায় রেখে। যে সময় উপনিষদ রচিত হয়, সে কালের ভাবধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তা যদি হয়, তাহলে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন বা পরজন্মবাদ সম্পর্কিত ব্যাখ্যাগুলো নিরর্থক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ প্রাচীন উপনিষদের জন্ম যে যুগে, তখন জন্মান্তরবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সে যুগে আজকের মতো দার্শনিক জ্ঞানের কোনও ব্যবহারিক উদ্দেশ্যও ছিল না। জানার জন্যে জানা, ব্রহ্মকে জানা-ই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।
বর্তমানে আমরা যতগুলো উপনিষদ দেখতে পাই, প্রাচীনকালে তা ছিল না। বেদের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় মাত্র সাতটি উপনিষদের নাম পাওয়া যায়। ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যে শঙ্কর ষোলোটি উপনিষদের বার্তা উদ্ধৃত করেছিলেন। মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারাশিকো পঞ্চাশটি উপনিষদের অনুবাদ করেছিলেন।
মুক্তিক উপনিষদে একশ’ আটটি উপনিষদের উল্লেখ আছে। বাসুদেব লক্ষণ শাস্ত্রীর সঙ্কলনে উপনিষদের সংখ্যা একশ’ কুড়ি। এইভাবে উপনিষদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গবেষকরা এত গোলমেলে হিসেবের মধ্যে না গিয়ে উপনিষদগুলোকে মূল তিন শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
- ব্রহ্মবাদী বা সর্বেশ্বরবাদী
- যোগবাদী ও সন্ন্যাসবাদী
- ভক্তিবাদী বা পৌরাণিক দেবতাপন্থী
এইখানে ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাধারার স্তর সম্বন্ধে কয়েকটি কথা প্রাসঙ্গিক। ভারতীয় ধর্ম বা দর্শনের ইতিহাসে চারটি স্তর।
এক, বৈদিক স্তর। ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের প্রাধান্য। আবার অনেক দেবতা থেকে একেশ্বরবাদ এবং সর্বেশ্বরবাদ অভিমুখী চিন্তার শুরুও এ সময় থেকেই।
দুই, পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যার স্তর। এ সময় মানুষ ব্রহ্ম সম্বন্ধে জানতে উত্সুক হয়েছে। ব্রাহ্মণের শেষ অংশে বিশুদ্ধ দার্শনিক চিন্তা ধর্মের স্থান নিয়েছে এই স্তরেই।
তিন, ষড়দর্শন বা মুক্তিমার্গের স্তর। এ সময় থেকেই মানুষ মনে করতে শুরু করেছে যে জ্ঞানমার্গই মুক্তির পথ। জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মদর্শনের সময়কাল এই।
চার, পৌরাণিক ভক্তিমার্গের স্তর। একেশ্বরবাদের প্রতিষ্ঠা এ সময়। ঈশ্বরে ভক্তিই মুক্তির উপায়, এমন ভাবনার শুরু।
ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই বেদের উত্পত্তি। বেদের দুটি মূল অংশ – ‘সংহিতা’ ও ‘ব্রাহ্মণ’। সংহিতায় বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশে রচিত ‘সুক্ত’ বা স্তোত্র। ব্রাহ্মণের আলোচ্য বিষয় হলো যজ্ঞবিধি। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, আনুষ্ঠানিক ব্যাপারস্যাপার নিয়ে ব্রাহ্মণের জন্ম হলেও তার বিষয়বস্তু ক্রমে মানবিক মনন-বিষয়ক ব্যাপারে পরিণতি পেয়েছে। বেদের যে অংশটি তখনকার দিনে অরণ্যে গিয়ে পড়তে হতো, তার নাম ‘আরণ্যক’। গৃহস্থ আশ্রমের শেষে মানুষ বানপ্রস্থে থাকাকালীন যে যাগযজ্ঞ করবে, তার বিধি।
এর ঠিক পর থেকেই দেখা যায়, একটি চিন্তার কাল শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ দার্শনিক চিন্তার কাল। এ সময়ে কোনও যাগযজ্ঞের কথাই নেই। এই সময়টিই ‘উপনিষদ’-এর কাল।
বেদের ‘সংহিতা’ ও ব্রাহ্মণের ‘উপনিষদ’ অংশে এ সময় বারোটি উপনিষদের উল্লেখ পাওয়া যায় :
ইশাবাস্য, ঐতরেয়, কৌষীতকি, তৈত্তিরীয়, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, কেন, কঠ, শ্বেতাশ্বতর, প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য।
এই প্রতিটি প্রাচীনতম উপনিষদের মূল কথা – পরাবিদ্যা। পরমব্রহ্ম বিষয়ে জ্ঞান। ব্রহ্মবাদ।
ইশাবাস্য হলো একমাত্র উপনিষদ, যেটি বেদের সংহিতা-র অংশ। ঐতরেয় ঋগবেদের ঐতরেয় আরণ্যকের সঙ্গে যুক্ত। কৌষীতকি ঋগবেদের শাঙ্খায়ন আরণ্যকের শেষ অংশ। তৈত্তিরীয় কৃষ্ণযজুর্বেদের অংশ, বৃহদারণ্যক শুক্লযজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণের অংশ। ছান্দোগ্য সামবেদের ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অংশ।
কেন উপনিষদ সামবেদের জৈমিনীয় ব্রাহ্মণের অংশ।
কেন ছাড়া প্রাচীন এই ছয়টি উপনিষদ গদ্যে রচিত। কেন আংশিক পদ্যে লেখা। আবার মাণ্ডুক্য ছাড়া বাকি কঠ, শ্বেতাশ্বতর, প্রশ্ন, মুণ্ডক সব উপনিষদই পদ্যে রচিত।
পরাবিদ্যা এবং ব্রহ্মবাদ ছাড়া উপনিষদের মূল ভাবটি হলো এক সর্বব্যাপী উপলব্ধির ভাব। এক নৈতিক আদর্শ যা স্বার্থ ও পরার্থের সামঞ্জস্য বিধানে সহায়ক। মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
তাই স্বভাবত মানুষ স্বার্থপর। উপনিষদ এই সমস্যার সমাধান দিয়েছে নতুন পথে। স্বার্থপর মানুষও কিন্তু নিজ নিজ প্রিয়জনের জন্যে সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারে। সন্তানের জন্যে স্নেহে, বন্ধুর জন্যে কিংবা ভালোবাসার মানুষটির জন্যে স্বার্থপর মানুষ পরার্থপর হয়ে উঠছে, এমন হামেশাই হয়।
তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ যদি স্বার্থত্যাগ করতে পারে, সন্তানের স্বার্থ যদি মায়ের স্বার্থের সঙ্গে এক হয়ে যেতে পারে, তাহলে অন্যক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে না কেন? মানুষের হৃদয়বৃত্তি যদি প্রসারিত হয়, স্নেহ প্রীতি ও ভালোবাসার আঙিনা যদি একটু বিস্তৃত হয়, ‘সব মানুষই আমার নিজের’ -এমন বোধ তৈরী হয়, তবে স্বার্থত্যাগ সম্ভব।
পরাবিদ্যা এবং ব্রহ্মবাদ এক ব্রহ্মের কথা বলে। ব্রহ্ম এক, তিনি সব কিছুতে জড়িয়ে আছেন।
ছান্দোগ্য উপনিষদে ব্রহ্মের প্রতিশব্দ হলো ভূমা। প্রতিশব্দ হিসেবে বিভিন্ন উপনিষদে আরেকটি শব্দ বারবার পাওয়া যায়। আত্মন। এই আত্মন ব্যক্তিবিশেষের আত্মা নন। ব্রহ্ম বা ভূমা বা আত্মন সবার ভেতরে বিদ্যমান। এই ব্রহ্মকে জানতে চাওয়া আর বুঝতে চাওয়াই মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। উপনিষদের দর্শন তাই বলে।
এক পরমসত্তা। বিশ্বের মূলে যে বিশেষ তত্ত্ব, যা থেকে বিভিন্ন প্রাণ ও অপ্রাণের জন্ম, জীবনধারণ এবং শেষে বিলীন হওয়া। সেই পরমসত্তা আর কিছু না, ব্রহ্ম বা ভূমা বা আত্মন। রূপ রস গন্ধ স্পর্শ শব্দের এই জগত পরমসত্তার স্বাভাবিক প্রকাশ।
এই পরমসত্তাকে উপলব্ধি করার জন্যে মনন চাই, বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়বৃত্তিও চাই। যদি ব্রহ্মই বিশ্বের সবকিছুর মধ্যে বিদ্যমান, তাঁর সম্পর্কে সম্পর্কিত হয়ে প্রতিটি জীব তাহলে আত্মীয়।
উপনিষদের এই মূলমন্ত্র। এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে গাইতে পারা যায়..
কী আনন্দ, কী আনন্দ, কি আনন্দ
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ...
নিজেকে বহুর মধ্যে মিলিয়ে নিয়ে সামগ্রিক দৃষ্টি দিয়ে বিশ্বের দিকে চোখ মেলে চাইলে যে আনন্দ, সেই হলো ব্রহ্মের আনন্দ। ভূমানন্দ।
ব্রহ্ম সমস্ত প্রাণীতে, উদ্ভিদে, সচেতন অচেতন প্রতিটিই বস্তুতে বিরাজমান। উপনিষদের তত্ত্ব এই।
এই দর্শন আত্মস্থ করলে তাই সবাই নিজের, সবাই আপন। স্বার্থ আর পরার্থের দ্বন্দ্ব থাকে না। কিন্তু আজকের মানুষের জীবনে এই উপনিষদ-পাঠের গুরুত্ব কোথায়। কিভাবেই বা রক্ষা হয় এই ভারত-সংস্কৃতি। আজকের ব্যবহারিক জীবনে এই প্রাচীন সাহিত্যের স্থান ঠিক কোথায়।
আমার মনে হয়েছে যে, উপনিষদের লক্ষ্য ইন্দ্রিয়-নিয়ন্ত্রণ। সার্থক জীবনযাপনের জন্য উপনিষদ-পাঠ আবশ্যক। উপনিষদের সঙ্গে সন্ন্যাসবাদের মূল পার্থক্য হলো, কৃচ্ছ্রসাধন ও ইন্দ্রিয়-নিরোধের পথে না গিয়েও দেহ-মনের ওপর সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার। সমাজ-কল্যাণে মানুষের মন ব্যবহার হওয়া। সন্ন্যাসী হয়ে জীবন থেকে পলায়ন নয়। উপনিষদ বলে, মানুষের জীবনে যেমন ত্যাগের স্থান আছে, তেমনই ভোগেরও স্থান। এই দুইয়ের সামঞ্জস্যেই জীবনের সার্থকতা।
উপনিষদের মূল কথা – সত্যম শিবম সুন্দরম।
গোলযোগ বাধছে মানুষের স্বভাব নিয়ে। সব ধর্মেই বলা হচ্ছে, পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। দয়া করো। মজার কথাটা এই যে, ধর্মমতের অনুরাগীরা সহিষ্ণুতার চর্চায় পাপীর স্বাধীনতা নিয়েও নরমপন্থী। এক্ষেত্রে উপায় একটিই। পাপীর নিজের অন্তরের পথে যাত্রা। মানবমুক্তি। মানুষের সবচেয়ে বড় জিনিস তার স্বাধীনতা। চিন্তার স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সৃষ্টির স্বাধীনতা, ব্যাখ্যা করার স্বাধীনতা। রাসেল, রবীন্দ্রনাথ, রাধাকৃষ্ণন কিংবা বুদ্ধ চৈতন্যদেব রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ কেউই পপুলার ধর্মকে আশ্রয় করেন নি। ধর্ম কোনও আচার অনুষ্ঠান নয়, ধর্ম এক নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী।
এই সহজ কথাটা আমরা ভুলে থাকি। উপনিষদ-চর্চা আমাদের সেই নীতিজ্ঞানে সহায়ক।
ব্যবহারিক জীবনে উপনিষদের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? কতটা? কেবল সুন্দর স্বাস্থ্য, বিদ্যা বা বুদ্ধি নিয়ে একজন ‘মানুষ’ হয় না। মানুষ গড়ে ওঠে সমাজের অঙ্গ হিসেবে। সমগ্র সমাজের কল্যাণের সঙ্গে নিজের স্বার্থের সামঞ্জস্য রেখে যে চলতে পারে, তার নীতিজ্ঞান হয়েছে বলা যায়। উপনিষদের যুগে এই নৈতিক শিক্ষাকে বিশেষ স্থান দেওয়া হতো।
এই প্রসঙ্গে বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটি গল্প বলি।(বৃহদারণ্যক॥৫॥২॥৩॥)
আদিকালে ঋষি প্রজাপতির আশ্রমে তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থী দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যাচর্চা করছিলেন। দেবতা, দানব, মানব। শিক্ষাশেষে সমাবর্তন। এই সময় গুরুর কাছে শেষ উপদেশ প্রার্থনার রীতি। প্রথমে
দেবতাদের দল। গুরু তাদের উপদেশ দিলেন, ‘দ’। তারপর মানব শিষ্যদেরও একই উপদেশ দিলেন, ‘দ’। সবার শেষে দানবদের পাল। গুরু একই উপদেশ দিলেন, ‘দ’।
দেবতা উপদেশ নিলেন এইভাবে, ‘দ’ অর্থাৎ ‘দাম্যত’। আত্মদমন করো। কামনা দমন করে শান্ত হও।
মানুষ সে উপদেশ নিলেন, ‘দ’ অর্থে ‘দত্ত’। দান করো।
দানব উপদেশ নিল ‘দ’ অর্থাৎ ‘দয়ধ্বম’। দয়া করো। দয়ালু হও।
দেবতা অসীম ক্ষমতার আধার। সে ক্ষমতার অপব্যবহার হলে সমাজের অমঙ্গল। তাই তাদের আত্মদমন করার উপদেশ। মানুষ স্বভাবত লোভী ও ভোগী। তাই দান-এর উপদেশ। যা পাও তা একা ভোগ কোরো না। দানব অসুররা হিংসাপরায়ণ। এই প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিলে সমাজে অন্যের উত্পীড়নের আশঙ্কা। তাই তাদের জন্যে দয়া-র উপদেশ।
আজ সভ্যতার অনেকখানি পথ পেরিয়ে এসে আমরা জানি, একজন মানুষের মধ্যেই দেব-দানব-মানবের সহাবস্থান। প্রতিটি মানুষের মধ্যে দেব-দানব-মানব তিন বৃত্তির খেলা। তাই আজও মানুষের বিশেষ নৈতিক গুণের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই প্রসঙ্গে একটা স্বীকারোক্তি আছে আমার।
বৃহদারণ্যকের গল্পটা পড়ার ইচ্ছে হয়েছিল এক পাশ্চাত্য কবির কবিতা পড়ে। টি এস এলিয়ট।
এলিয়টের ‘দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’ কাব্যে অনেক উদ্ধৃতি। পশ্চিমি পাঠকের কাছে বৃহদারণ্যক উপনিষদ থেকে উদ্ধৃতি। আদি মন্ত্রগুলোকে অক্ষুণ্ণ রেখে এই উদ্ধৃতি।
এলিয়টের এই বৈশিষ্ট্য আমায় খুব অবাক করে। অনায়াসে তিনি উচ্চারণ করেন, ‘দয়ধ্বম, দত্ত, দাম্যত’। উপনিষদের এই মন্ত্র.. ‘দয়ধ্বম, দত্ত, দাম্যত’। সর্বকালীন যার আবেদন। অনায়াস সাবলীলতায় এলিয়ট পাঠকের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
সমারসেট মম-এর গল্প ‘রেজারস এজ’ কঠ-উপনিষদের ‘ক্ষুরস্য ধারা’-র অনুবাদ। ম্যাক্সমুলার ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র ও দর্শনের প্রতি গভীর পক্ষপাত দেখিয়েছেন। ম্যাক্সমুলারের ‘সেক্রেড বুকস অফ দ্য ইস্ট’-এ উপনিষদের অনুবাদও আছে। মার্কিন সাহিত্যিক রাল্ফ ওয়াল্ডো ইমারশনের একটি কবিতার নাম ‘ব্রহ্ম’, একটি প্রবন্ধের নাম ‘ওভার সোল’। এই সাহিত্যিক যে উপনিষদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন, বেশ বোঝা যায়।
আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির অনেক কথাই পশ্চিমের লেখক-কবির কলমে পড়ছি আগে, তারপর খোঁজ করছি। ব্যবহারিক জীবনে যে উপনিষদকে জায়গা দিই নি, তার প্রমাণে এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে ?
ছান্দোগ্য উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের ষোড়শ ও সপ্তদশ খণ্ডে একটি চমত্কার বর্ণনা আছে।
মানুষের সমগ্র জীবনকে এখানে একটি যজ্ঞরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বৈদিক যুগে সব যজ্ঞের সেরা ছিল ‘সোমযাগ’। সোমযাগে পাঁচদিন ধরে অনুষ্ঠান হতো। প্রথম দিনে ‘দীক্ষা’। সেদিন সংযমের দিন। পান ও আহার নিষেধ। পরের তিনদিন ধরে ‘উপসৎ’। পান আহার আমোদ প্রমোদের ঢালাও আয়োজন। পঞ্চমদিনে মূল অনুষ্ঠান ‘সবন’। সোমলতা ছেঁচে রস বার করা, দিনে তিন বার, সকাল দুপুর ও সন্ধ্যায়। সেইসঙ্গে স্তোত্রগান আর শাস্ত্রপাঠ। এই ক্রিয়াটির নাম ‘স্তুতশস্ত্র’। যজ্ঞশেষে যজ্ঞপাত্রগুলোকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার নাম ‘অবভৃথ’। সব শেষে যজ্ঞে যোগদান করা সব ঋত্বিককে ‘দক্ষিণা’ দেওয়ার রীতি।
এই পাঁচটি ক্রিয়া, ‘দীক্ষা’- ‘উপসত্’- ‘স্তুতশস্ত্র’- ‘অবভৃথ’- ‘দক্ষিণা’, মানুষের জীবনের কর্মের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ছান্দোগ্য উপনিষদে।
সংযমী মানুষের সংযত আচরণের তুলনা হলো দীক্ষা। সাধারণ মানুষের সাধারণ যাপনের তুলনা উপসত্। জীবনধারণের শর্ত মিটিয়েও মানুষ হাসে, খেলা করে, প্রীতিপ্রকাশ করে। এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে স্তুতশস্ত্র-এর। তারপর জীবন শেষ হলে অবভৃথ, মৃত্তিকা-পাত্র জলে ভাসিয়ে দেবার মতো করেই জীবনের লীলা শেষ।
বাকি রইল দক্ষিণা-র কথা। মানুষের জীবন-যজ্ঞের দক্ষিণা দিতে হয় সারা জীবন ধরে। কি সেই দক্ষিণা ? তপস্যা, দান, আর্জব (প্রার্থনা), অহিংসা, সত্যভাষণ।
‘অথ যত্তপো দানমার্জবমহিংসা সত্যবচনমিতি
তা অস্য দক্ষিণা: ॥‘ (ছান্দোগ্য॥৩॥ ১৭॥ 8)
এইখানেই উপনিষদের শিক্ষার সার্থকতা। যে মহৎ গুণগুলো মানুষের জীবনকে সার্থক করে, সমাজের কল্যাণ-সাধন করে, সেগুলোকে মানুষের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হিসেবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপনিষদে।
প্রাচীন ভারতীয় জীবনদর্শন এ কথাই বারবার বলেছে। আমরা সমগ্র বিশ্বজগৎ ও সমগ্র মানবজাতিকে হৃদয়ে ধারণ করেছি। মানবচৈতন্যলোক ও মানবমঙ্গল আমাদের মন্ত্র। ভারত-সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ দান – অহিংসা আর সত্যভাষণ। মহাত্মা গান্ধীর জীবনে আমরা দেখি, উপনিষদের এই বার্তাই তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র।
উপনিষদের দর্শন ইন্দ্রিয়-নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়, ইন্দ্রিয়-দমন নয়। সংযম এবং নীতি-জ্ঞান সেই চেতনা তৈরী করে যাতে মানুষ সংসারে থেকেই মুক্তির আনন্দ পেতে পারে।
এই প্রসঙ্গে গীতা ও উপনিষদের দর্শনের একটি তুলনামূলক আলোচনা করা যেতে পারে। গীতা শিক্ষা দেয়, কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে, কর্মফল সম্পর্কে উদাসীন থেকে কর্তব্যকর্ম সম্পাদন। যিনি সকল কামনা ত্যাগ করেন তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ। যিনি সুখ-দু:খ ভয়-ক্রোধে সমান উদাসীন তিনি স্থিতধী।
কর্মফল ত্যাগই প্রকৃত যোগ। নিজের কাজটুকু করো, ফলের আশা কোরো না।
উপনিষদের আদর্শের সঙ্গে এইখানে গীতার আদর্শের তফাৎ। উপনিষদ বলে, হৃদয়বৃত্তিকে বাদ দিয়ে মানুষ হয় না। উপনিষদ বলে, সুখভোগের ইচ্ছে একটি স্বাভাবিক ইচ্ছে। দয়া করো, দান করো, আত্মদমন করো। কিন্তু মা সন্তানের প্রিয় হোক, সন্তান মায়ের প্রিয় হোক, মানুষ মানুষকে ভালোবাসুক, বিশ্ববাসী বিশ্ববাসীকে ভালোবাসুক। ব্রহ্মের স্বরূপ, ব্রহ্মের সর্বব্যাপী-রূপ অনুভব করে প্রতিটি মানুষ একে অন্যের সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করুক।
ইসলাম ধর্মে পাঁচটি অবশ্যকর্তব্য ঈশ্বরনির্ভর জীবনযাপনের রীতি আছে। প্রার্থনা, উপবাস, দান, তীর্থযাত্রা, ঈশ্বরবিশ্বাস। সন্ত সুফীরা নিরন্তর বলেন, ‘আমি ঈশ্বরের বন্ধু’। উপাসনা, পূজা, ইত্যাদি সুফীদের কাছে নিরর্থক। সুফীরা বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর জলে-স্থলে-পাখির গানে-সমুদ্রের তরঙ্গে বিরাজ করেন। ধর্মের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত মানবপ্রেমই ঈশ্বরপ্রেম।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘অদ্বৈতবাদ ধর্মের এবং চিন্তার শেষ কথা’। অদ্বৈতবাদের মূল কথা হলো সর্বজনীন সর্বকালীন মানব।
ঘুরেফিরে তাহলে সেই এক জায়গায় এসে দাঁড়াল। যুগে যুগে ছন্দে গানে নৃত্যে চিত্রকলায় স্থাপত্যে জীবনের এই মূল সুর। মানুষের চলমান জীবনের তরঙ্গের সুর। গঙ্গা যমুনা সরস্বতী থেকে হিমালয় নীলগিরি, সর্বত্রই সে তরঙ্গ। মানুষের সংস্কৃতি সভ্যতা ধর্ম সবই সেই তরঙ্গ। সর্বাত্মক সে রূপ।
দেহমন-বিশিষ্ট মানুষ পণ্যের বাজারে ধর্ম সংগ্রহের পথে শ্রেয়কে চিনে নিতে পারে যেন, তাই উপনিষদচর্চা। পুজো করবার আবেগটা বড় হয়ে উঠলে পুজোর মূল ভাবনাটা হারিয়ে যায়। বড় হয়ে ওঠে পুজোর সামগ্রী আর বহুবিধ আয়োজনের অনুষ্ঠান। সত্যের সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে, মধুর রসের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে যায়।
আমরা এই সামঞ্জস্যবোধের দর্শনটাই হারিয়ে ফেলছি না তো? সেই সামঞ্জস্য যাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘শান্তমশিবমদ্বৈতম। জগতের মধ্যে সামঞ্জস্য তিনি শান্তম, সমাজের মধ্যে সামঞ্জস্য তিনি শিবম, আত্মার মধ্যে সামঞ্জস্য তিনি অদ্বৈতম’। এই সামঞ্জস্যবোধ উপনিষদের শিক্ষা।
মানুষ নিজের চেয়ে বেশি কাউকে ভালোবাসে না। নিজের সুখ, সুবিধে, স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ব্যস্ত মানুষের সর্বদাই অন্যের স্বার্থের সঙ্গে সংঘর্ষ। এই স্বার্থ ও পরার্থের লড়াইয়ের মীমাংসার জন্যেই উপনিষদ।
নীতিজ্ঞান না হলে জ্ঞান শুধুমাত্র পাণ্ডিত্যে আবদ্ধ থাকে। এই নীতিজ্ঞান দার্শনিকজ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়। যা অনবদ্য কর্ম, তাইই কর্তব্যকর্ম।
‘যান্যনবদ্যানি কর্মাণি
তানি সেবিতব্যানি। নো ইতরাণি ॥‘ (তৈত্তিরীয়১॥১১॥২)
‘অনবদ্য’ কর্ম প্রসঙ্গে উপনিষদের ব্যাখ্যা হলো, যা সামগ্রিকভাবে কল্যাণকর তা-ই অনবদ্য। যা অনবদ্য নয়, তাকে ‘বর্জন’ করার কথা। এইই উপনিষদের বার্তা। সমস্ত সমাজের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে জীবনভোগ, কেবলমাত্র অনবদ্য কর্ম সম্পাদনে আনন্দ খুঁজে নেওয়া। উপনিষদের নৈতিক আদর্শ এই। আজকের মানুষের জীবনে এর চেয়ে প্রাসঙ্গিক বার্তা আর কি-ই বা হতে পারে !
আজ সমাজে মূল্যবোধ-লুপ্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই মানুষরা বিবেকবর্জিত, যে কোনও কাজ করতে পারে। সন্ত্রাসবাদ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদ.. মানুষের গতি অব্যাহত। আজকের মানুষের জীবনযাত্রায় অহমিকা, অহঙ্কারসর্বস্বতা। সবচেয়ে বড় কথা, জ্ঞানী মানুষ সমাজে মুখ খোলেন না।
অজ্ঞানী বাগাড়ম্বরসর্বস্ব মানুষ নিরন্তর নানা বিষয়ে বক্তব্য জানিয়ে চলেছে। অজস্র কথা, নিরন্তর কথা, সর্ব বিষয়ে শেষকথা বলার হিড়িক। এখানেই শেষ নয়।
সমাজে, শিল্পে, সাহিত্যে, নাটকে, চিত্রকলাতে রক্তের গন্ধ, হিংসার প্রচার। ধনতন্ত্রবাদী সমাজের সবচেয়ে বড় অসুখ – অসমবন্টন, অসম আচরণ, বর্ণবৈষম্য, বিশ্বাসহীনতা। এখানে ঈশ্বরকে ব্যবহার করা হয় ঈশ্বরহীন পথে। ধ্বংসের আর হিংসার হাতিয়ার হিসেবে।
আজকের সমাজে তাই উপনিষদ শিক্ষার প্রযোজন খুব। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন, ‘মানুষের অভিব্যক্তির গতি অন্তরের দিকে’।
পৃথিবীতে সব সময়ই কিছু চিন্তাশীল, সংবেদনশীল, মানবপ্রেমিক মানুষ পাওয়া গেছে। তাঁদের বার্তা আজ আমাদের পাথেয় হোক। আদিম মানুষ ছিল বর্বর, পশুর মতো, ভৌতিক জীবনের সীমায় তার মন আর কর্ম আবদ্ধ ছিল। প্রাচীনযুগেই কিন্তু মনীষীরা সেই আদিম মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন।
আজকের দিনে সে পথের বার্তা সমান প্রাসঙ্গিক।
চলাটাই মানুষের কাজ। নিজেকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলা মানুষের ধর্ম। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, উপনিষদের কথাটিই, ‘এই আরোর দিকে, এই ছাড়িয়ে যাবার দিকে মানুষের শ্রী, তার ঐশ্বর্য, তার মহত্ব’।
অন্তরের দিকে তীর্থযাত্রা আরম্ভ হোক। ‘মানুষ’-এর জয় হোক। এই প্রার্থনা।
তথ্যসূত্র :
*বিভিন্ন উপনিষদ
*উপনিষদের দর্শন –হিরণ্ময় বন্দোপাধ্যায়
*বিবেকানন্দ বেদান্ত ও হিন্দুধর্ম –হোসেনুর রহমান
*ধর্ম সংকট –হোসেনুর রহমান
*রবীন্দ্র রচনাবলী
*ভারতীয় সাধনার ধারা –গোপীনাথ কবিরাজ
*দ্য ওয়েস্টল্যান্ড: হোয়াট দ্য থান্ডার সেইড –টি এস এলিয়ট
*দ্য সিস্টেম অফ বেদান্ত – ডয়সেন
অসাধারন। আইভির গল্পের মতোই প্রাঞ্জল ও সুখপাঠ্য। পড়ে ঋদ্ধ হলাম। - পল্লব
ReplyDeleteঅসাধারণ তুলনা মূলক প্রবন্ধ, বতর্মানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, আমি ফেসবুকে শেয়ার করলাম (শেয়ার করার অপশন আছে দেখে)
ReplyDeleteখুব প্রাসঙ্গিক। লেখা সুন্দর।
ReplyDeleteএত প্রাঞ্জলভাবে বেদান্ত প্রাসঙ্গিতা বিশেষতঃ উপনিষদ নিয়ে বোধগম্য লেখা মুগ্ধ ঋদ্ধ হলাম। হিংসাদীর্ণ রুধিরলিপ্ত বর্তমান অস্হির সময়ের অবলম্বন উপনিষদের ভূমানন্দ। নাল্পে সুখমস্তি...অপেক্ষায় রইলাম মধূস্নাত হবার।
ReplyDeleteসমৃদ্ধ হলাম। দেশ জুড়ে আজ যে অসহিষ্ণুতা তার মধ্যে আসল ধর্মের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে এই প্রবন্ধে। সল্প পরিসরে সত্য শিব সুন্দরের রেখাচিত্র এই প্রবন্ধ।
ReplyDeleteঅত্যন্ত সহজ সরল ভাষায়, মানব জীবনে, উপনিষদের প্রাসঙ্গিকতাকে, অসাধারণ লেখন শৈলীর মাধ্যমে, সুখপাঠ্য ভাবে উপস্থাপিত করেছেন।
ReplyDeleteউপনিষদ এক কালজয়ী সৃষ্টি যা সাধারণ্যে স্বল্প পরিচিত-ই রয়ে গেছে।
আপনার এই প্রয়াস তাই একান্তই প্রশংসার্হ।
লেখাটি সত্যিই মুগ্ধ করলো।
--- চঞ্চল ভট্টাচার্য, ক'লকাতা।।