প্রবন্ধ - অরূপ জ্যোতি ভট্টাচার্য
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
প্রেমের প্রশিক্ষণ
অরূপ জ্যোতি ভট্টাচার্য
সাউথ সিটি মল। মেদ চিকন খোলা পিঠে ব্যাকলেস চোলির মেয়েটি। হাতে সিগারেট। সামনের সিটে বয়ফ্রেন্ড। কাউকেই চিনিনা। তবু মনের মধ্যে ঈর্ষা খেলে গেলো । মনকে সান্তনা দিলুম - ওরা ভাই-বোন। যদি স্কুল পাঠক্রমে প্রেম করা শেখাতো। আজ তাহলে আমিও গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসতুম। রোজ কত কি ঘটে যাহা তাহা, এমন কেন সত্যি হয়না আহা! না এটা অলীক কল্পনা নয়। এটাও বাস্তব। লিনাক্স ডেটিং কম্পানির সি ই ও আমাই এন্ডারসন বলছেন - ফ্ল্যার্ট কেমন করে করতে হয় সেটাই শেখানো হয়। কেমন করে কমুনিকেটে করতে হয়। এতে দুজনে কাছে আসে। প্রেমে পরে। প্রেম গভীর হয়। এটাই আজকের বাস্তব যে প্রেম কেমন করে করতে হয়, সেটাও শেখানো হয়।
ফিরে যাই কালিদাসের যুগে। শকুন্তলার নিতম্বের ভারে কাদায় পায়ের ছাপ গোড়ালির দিকে গভীর। স্তনের আকর্ষণে শরীর সামনের দিকে ঝুকে রয়েছে। আর আধুনিক সুনীল বাবুর নায়িকা পুরোনো প্রেমিকের সাথে মিলিত হয় বরকে না জানিয়ে। বরের বন্ধুর দুর্নিবার আকর্ষণে ধরা দেয় মাঝেমাঝে। সদ্য অষ্টাদশী কন্যাকে আড়াল করে রাখে। কাকুর আপিলের নেশায় মেয়ে না ধরা পরে। প্রেম কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না। প্রকৃতির নিয়মে আত্মসমর্পণ। আবার অমিত রায়কে মুছে ফেলে শোভনলালের কাছে ধরা দেয় লাবণ্য। পার্বতীকে খুঁজে পাওয়া যায় চন্দ্রমুখীর তাচ্ছিল্যে। কোথাও প্লেটোনিক প্রেম ধরা দেয় লিবিডোর হাতছানিতে। শেষ হয় অর্গ্যাজমে। না সেখানেও শেষ নয়। একসাথে পথ চলা। এরই নাম প্রেম। পূর্বরাগ। রতি। সঙ্গম। বা শুধুই দর্শন বা শ্রবণ।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা অন্য রকম। টেকনোলজি নির্ভর যুগে ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপ থেকে বেরিয়ে মানুষ ছুটে চলেছে কর্মব্যস্ত জীবনের মায়াজালে। জাসবিনা আলুওয়ালিয়ার কথায় - কেরিয়ার গড়তে গিয়ে অনেক ছেলে মেয়েই ভুলে যাচ্ছে প্রেমের আনন্দ। তাই প্রেমে পড়তেই ভুলে যাচ্ছে মানুষ। ম্যাচমেকিং শুধু নয়, রীতিমতো শেখানো হয় কেমন করে প্রেম করতে হয়। আজকের ম্যাচমেকিং কম্পানিতে শেখানো হচ্ছে প্রেমেপড়া থেকে ডেটিং চ্যাটিং সমস্ত কৌশল। আর এই কৌশল শেখাতে প্রায় ৩৫০০০ টাকার প্যাকেজ। প্রেম করানোর প্রশিক্ষক নন্দিনী চক্রবর্তী বলছেন যে, বর্তমানে এই শিক্ষা এক নতুন বিনিয়োগের মাধ্যম।
প্রেমের প্রশিক্ষণ নিয়ে এক মহিলা ডক্টর পেয়েছেন চারজন প্রেমিক। যেখান থেকে তিনি পছন্দ করবেন জীবন সঙ্গী। নাইনা হিরানান্দানি জানাচ্ছেন, তাঁর কম্পানি ১৮ টি দেশে ৩৬৫৭ টি ডেটিং অর্গানায়িস করেছে। তাই আর জেলাসি নয়। চলার ছন্দে শাড়ির ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া কোমরের হিল্লোল বা নাভির সাহসী প্রকাশ - যা মনে নেশা জাগায়, তাতে আত্মপ্রকাশের দিন এসে গেছে। না কোনও ভয় নয়। সঠিক ভাবে প্রেম করার দিন এসে গেছে। নিজেকে প্রকাশ করার সময় এসে গেছে। শুধু প্রয়োজন একটু প্রশিক্ষণ। একটু সঠিক ভাবে কথা বলার অভ্যাস। প্রেম করা নতুন ভাবে শিখে আবার প্রেম করা যাক।
তথ্য সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া
0 comments: