প্রবন্ধ - শিবাংশু দে
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
আমি যে গান গাই, জানিনে সে...
শিবাংশু দে
বাইশে শ্রাবণের দিন তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। রোগতপ্ত শরীরের মায়া কাটিয়ে মিশে গিয়েছিলেন ধরিত্রীর অনুপুঙ্খ আশ্রয়ের মধ্যে। কিন্তু মানুষ এখনও কাঁদছে। কেন? কে জানে? সে ব্যাসদেবও নেই, নেই নহুষ রাজাও। শুধু অন্তহীন বিস্ময়পর্বে গ্রস্ত হয়ে আছে সহস্র ভক্তজন। এইদিনে তাঁকে স্মরণ মানে বাইশে শ্রাবণের কিছু ছাপমারা গান। " জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে", " আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু", "অশ্রুনদীর সুদূর পারে", "আমার যেদিন ভেসে গেছে"। মাসটাও শ্রাবণ, তাই বর্ষার জলে অশ্রুর অনুষঙ্গ। এক বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠানে গেয়েছিলুম প্রিয় গান, "কিছু বলবো বলে এসেছিলেম।" গুণে গুণে আটজন প্রশ্ন করেছিলেন এই গানটি 'বাইশে শ্রাবণে'র 'মাহাত্ম্য'কে সঠিক ধারণ করতে পারে কি না? কবি'কে শোকের আধারে বেঁধে রাখতে উৎসুক শ্রোতা বোধ হয় সংখ্যায় অধিক। প্রেমের প্রশ্রয়ে জাগিয়ে রাখার জন্য মনস্ক, সচেতন শ্রোতারা কী আর প্রস্তুত হবেন? কোনওদিন? জানিনা। অধুনা প্রজন্ম থেকে রবীন্দ্রনাথ ক্রমশঃ দূরে চলে যাচ্ছেন।
আমাদের সন্তানদের প্রজন্মে কবি'র গান সম্ভবতঃ তাৎপর্য হারিয়েছে। কারণ আমাদের প্রজন্ম তাঁর গান অনন্ত, অনর্গল শুধু 'শুনে' গেছি। প্রস্তুতিহীন আলস্যে ধরে রাখতে পারিনি। নিজেদের অক্ষমতায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই অমূল্য উত্তরাধিকারটির মর্যাদা ধূসর করে ফেলেছি। দিনের পর দিন। তবু আমাদের প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি জানি, আমার মতো আরও অনেক অনেক শ্রোতার, বা বলা ভালো উত্তরাধিকারীর কাছে, রবীন্দ্রসঙ্গীত এখনও জীবনের চতুর্থ মাত্রা। সুরে, শব্দে, কাব্যে, চেতনায় বা সংক্ষেপে বলতে গেলে, পাতি বেঁচে থাকায়। তাই আমি এখন সময় পেলেই অধিকারীজনদের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিময় করি। কলকাতা বা শান্তিনিকেতনকে উৎস আকর মেনে নিয়ে এখানে এলেই বিষয়টি নিয়ে শিকড় থেকে পল্লবের খোঁজ করি। সময়ের উদ্বর্তনে মননের মধু নিয়ে সৃজনবধূরা স্বতস্ফূর্ত উঠে আসে। বিভিন্ন ঘরানার রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভিন্নতর অভিঘাত সমূহ আজকের শ্রোতার কাছে সে জন্যই বিস্ময়ের বিপন্ন স্রোত। অন্তত মনোযোগী শ্রোতার জন্য তো বটেই। প্রজন্মের ব্যবধানে গায়নের ধরণে ও শোনায় স্বতোৎসার অভ্যেস পাল্টায়। সে অভ্যেসেই শ্রোতারা ঠিক করে দেন, কীভাবে কবির গান গাইতে হবে। বিশ্বায়িত বাজারের পণ্য হিসেবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্থানটি কোথায় নির্দিষ্ট হবে? বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বিবর্তিত গায়ন পদ্ধতি নিয়ে নানা কথা ওঠে। শুনতে পাই, সাহানাদেবীর গানের থেকে কাননদেবীর গানের পেশকারি অধিক উজ্জ্বল। আমিও এ বিষয়ে একমত। অথচ আমরা সচেতনভাবেই সাহানাদেবীর একান্ত অনুরাগী শ্রোতা। এমন কি কবি নিজেই যখন বলতেন, সাহানাদেবীর গলায় তাঁর গান পূর্ণ মর্যাদা পায়। কিন্তু রাইচাঁদ বড়াল বা পঙ্কজকুমার, কাননদেবীর গানের মধ্যে কোন অতিরিক্ত রসায়নটি যোজনা করতেন, যাতে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত অধিকাংশ শ্রোতার ভালো লাগতো? ওস্তাদের মার'টা কোথায়? কঠোর অনুসন্ধান করেও কিন্তু এই সব পরিবেশনার মধ্যে কোনও আপোস করার অভিপ্রেত পাইনি। অর্থাৎ কোনও ডায়লিউশন নেই। তাঁদের নিষ্ঠা, সচেতন শ্রোতার কাছে এখনও প্রাসঙ্গিক। ঠাকুরবাড়ির কুলুঙ্গি আর শান্তিনিকেতনের উপাসনাগৃহের বাইরে যে সংখ্যাগুরু শ্রোতার দল, তাঁদের জন্য পঙ্কজকুমার, সঙ্গে কুন্দনলাল যে রসটি পরিবেশন করতে পারতেন, দাবি অনুযায়ী অনেক বেশি উৎসমুখী, 'শুদ্ধ' ঘরানার শিল্পীরা সেটা পারতেন না। অথচ ইন্দিরাদেবী দেবব্রতকে আলাদা করে পথনির্দেশ দিতেন, একক গাইতে উৎসাহিত করতেন। এর সঙ্গেই শান্তিনিকেতনের ধারায় অন্যমাত্রার স্ফূর্ত গায়ন নিয়ে এসেছিলেন সুচিত্রা। ছয় থেকে আট দশকে একসঙ্গে এতজন সিদ্ধ শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের মান'কে যে পর্যায়ে তুলে দিয়েছিলেন, সেটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জটি পরবর্তী শতকের শূন্য ও প্রথম দশকের গায়কদের নাগালের বাইরে চলে গেলো। একেবারে শীর্ষস্থানে থাকা পরিবেশকরাও 'গলাটা ভালো' জাতীয় মন্তব্যের সীমায় বাঁধা রয়ে গেলেন। তখন থেকেই সনিষ্ঠ, অনুরাগী শ্রোতাদের জন্য কবি'র হাতে পেনসিল ছাড়া বিশেষ কিছু বাঁচলো না।
আসলে কিছু বিদগ্ধ মানুষ, হয়তো সদুদ্দেশ্যেই, কবির গানের 'পবিত্রতা' নিয়ে বড্ডো বেশি স্পর্শকাতর ছিলেন। তাঁরা নিজেদের সমর্থনে কবি'র নানা উক্তি'র স্বপ্রণোদিত ব্যাখ্যাও প্রস্তুত করতেন। এই জাতীয় জটিলতার উৎস ছিলো দীর্ঘ জীবনের নানা স্তরে করা কবি'র বহু স্ববিরোধী মন্তব্য। অনেকটা গীতা বা কুরাণের নানা স্ববিরোধী ঊদ্ধৃতি যেমন কায়েমিস্বার্থের মানুষেরা নিজেদের সুবিধেমতন ব্যবহার করেন, সেভাবেই। নিজের গান, বা বৃহদার্থে 'গান' সম্বন্ধে কবির ধারণা সারা জীবনে পাল্টে গেছে বারবার। নিজের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন যে তাঁর 'গ্রেটেস্ট ভাইস' হলো 'ইনকনসিস্টেন্সি' আর তাঁর 'গ্রেটেস্ট ভার্চু'ও হলো ঐ 'ইনকনসিস্টেন্সি'। এই জায়গাটিতে আমাদের মতো ইতর মানুষেরা কবি'র সঙ্গে একাত্ম বোধ করতে শুরু করি। নিজের সম্বন্ধে তাঁর এই মূল্যায়ণ যে কত যথার্থ ছিলো তার প্রমাণ পেয়েছি বহুবার। যেমন ১৯১২ সালে 'জীবনস্মৃতি'র একটি অধ্যায় তিনি শুরু করেছিলেন এইভাবে, ''বাক্য যেখানে শেষ হইয়াছে সেইখানেই গানের প্রারম্ভ।'' তিনি লিখেছিলেন, ''সুর কেন কথার দাস হইবে'' অথবা ''...গীতকলার নিজেরই একটি বিশেষ প্রকৃতি ও বিশেষ কাজ আছে। গানে যখন কথা থাকে তখন কথার উচিত হয়না সেই সুযোগে গান'কে ছাড়াইয়া যাওয়া, সেখানে সে গানেরই বাহনমাত্র। গান নিজের ঐশ্বর্যেই বড়ো, বাক্যের দাসত্ব সে কেন করিতে যাইবে।'' এখানে 'গান' বলতে তিনি সুর'কেই সমার্থবোধ করছেন। সেই গ্রন্থেরই আরেক স্থানে তিনি একটি বিশেষ স্মৃতির উল্লেখ করে বলছেন, ''... সুর যে জায়গায় কথাটা উড়াইয়া লইয়া গেল, কথা আপনি সেখানে পায়ে হাঁটিয়া গিয়া পৌঁছিতে পারিত না।'' কিন্তু দিলীপকুমারের সঙ্গে তাঁর যখনই প্রাসঙ্গিক আলাপ হয়েছে তিনি আমাদের কালোয়াতি গানে সুরের ইম্প্রোভাইজেশন, যা'কে দিলীপকুমার নাম দিয়েছিলেন 'সুরবিহার', বিষয়ে নিজের দ্বিধা প্রকট করেছেন। ১৯১২ সালে তাঁর এ বিষয়ে ধারণা ১৯৩৮ সালে পাল্টে গেলো। তখন তিনি বলছেন (এ বিষয়ে) ''মত বদলিয়েছি। কতবার বদলিয়েছি তার ঠিক নেই।'' তিনি আরও জানাচ্ছেন, হিন্দুস্তানি কালোয়াতি গানের তিনি কদরদান, তার রস তিনি পূর্ণতঃ উপভোগ করেন। কিন্তু 'খাঁচার পাখি'র মতো শুধু বুলি আউড়ে গেলে কিন্তু সঙ্গীতে মুক্তি নেই। তিনি চাইছেন নতুন সৃষ্টি ও গণ্ডি ভেঙে নতুন জীবনের পথ। এই ধারণাটি তিনি গ্রহণ করেছেন আবহমান কালের বাংলা পদাবলীসঙ্গীত থেকে। যে শৈলিতে পদাবলী, গীতকলাকে সঙ্গিনী করে শিল্পকে জাগিয়ে তুলেছিলো। সুর যখন কথার সঙ্গিনী হয়ে উঠবে, তখনই এই যুগলবন্দি থেকেই সার্থক হয়ে উঠবে সঙ্গীত। এই বর্ণনাটি কিন্তু যথার্থ উপমা সহকারে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন 'জীবনস্মৃতি'তে বহুকাল আগেই, ''.... আমাদের দেশে স্ত্রী যেমন স্বামীর অধীনতা স্বীকার করিয়াই স্বামীর উপর কর্তৃত্ব করিতে পারে, এ দেশে গানও তেমনি বাক্যের অনুবর্তন করিবার ভার লইয়া বাক্যকে ছাড়াইয়া যায়।'' ১৯৩৭ সালে তিনি ধূর্জটিপ্রসাদকে লিখেছিলেন , ''... কথাও সুরকে বেগ দেয়, সুরও কথাকে বেগ দেয়, উভয়ের মধ্যে আদানপ্রদানের স্বাভাবিক সম্বন্ধ আছে।'' ১৯২১ সালে বলেছিলেন, ''... সংগীতের মধ্যে বাণীর মিলন সাধনই এখন আমার প্রধান সাধনা হয়ে উঠেছে'' (আমাদের সংগীত)। এই সময়েই তিনি আরও লিখেছিলেন, ''...বাংলাদেশে কাব্যের সহযোগে সংগীতের যে বিকাশ হচ্ছে, সে এক অপরূপ জিনিস হয়ে উঠবে। তাতে রাগরাগিণীর বিশুদ্ধতা থাকবে না, যেমন কীর্তনে তা নেই; অর্থাৎ গানের জাত রক্ষা হবে না, নিয়মের স্খলন হতে থাকবে, কেননা তাকে বাণীর দাবি মেনে চলতে হবে। কিন্তু এমনতরো পরিণয়ে পরস্পরের মন জোগাবার জন্য উভয় পক্ষেরই নিজের জিদ কিছু কিছু না ছাড়লে মিলন সুন্দর হয় না।'' তারপর ১৯২৬ সালে তিনি দিলীপকুমারকে আবার লিখেছিলেন, ''...কীর্তনে বাঙালির গানে সঙ্গীত ও কাব্যের যে অর্ধনারীশ্বর মূর্তি, বাঙালির অন্য সাধারণ গানেও তাই।''
দিলীপকুমারের সঙ্গে তাঁর এই বার্তালাপ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মূল কাঠামোটি বিষয়ে কবির অবস্থান কী রকম। দিলীপকুমার চেয়েছিলেন তাঁর গানের ব্যক্তিত্বস্বরূপটি নির্মাণ করবেন গায়ক বা 'রূপকার', আমাদের কালোয়াতি গানের মতো। কিন্তু কবি জানতেন সেই ব্যক্তিত্ব ইতোমধ্যেই নির্মিত হয়ে গেছে সুরকারের সৃজিত কাঠামোতে। গায়ক বা রূপকার সেই প্রচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বকে প্রাণ দেবেন তাঁর স্বরে, পরিবেশনায়, কিন্তু সুরকারকে অতিক্রম করে যাবার অধিকার তাঁর থাকবে না।
'' ... যে মানুষ গান বাঁধিবে আর যে মানুষ গান গাহিবে দুজনেই যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে তো রসের গঙ্গাযমুনাসংগম। যে গান গাওয়া হইতেছে সেটা যে কেবল আবৃত্তি নয়, তাহা যে তখন-তখনি জীবন-উৎস হইতে তাজা উঠিতেছে, এটা অনুভব করিলে শ্রোতার আনন্দ অক্লান্ত অম্লান হইয়া থাকে। কিন্তু মুশকিল এই যে, সৃষ্টি করিবার ক্ষমতা জগতে বিরল। যাদের শক্তি আছে তারা গান বাঁধে, আর যাদের শিক্ষা আছে তারা গান গায়–সাধারণত এরা দুই জাতের মানুষ। দৈবাৎ ইহাদের জোড় মেলে, কিন্তু প্রায় মেলে না। ফলে দাঁড়ায় এই যে, কলাকৌশলের কলা অংশটা থাকে গানকর্তার ভাগে, আর ওস্তাদের ভাগে পড়ে কৌশল অংশটা। কৌশল জিনিসটা খাদ হিসাবেই চলে, সোনা হিসাবে নয়। কিন্তু ওস্তাদের হাতে খাদের মিশল বাড়িতেই থাকে। কেননা, ওস্তাদ মানুষটাই মাঝারি, এবং মাঝারির প্রভুত্বই জগতে সব চেয়ে বড়ো দুর্ঘটনা। এইজন্যে ভারতের বৈঠকী সংগীত কালক্রমে সুরসভা ছাড়িয়া অসুরের কুস্তির আখড়ায় নামিয়াছে। সেখানে তান-মান-লয়ের তাণ্ডবটাই প্রবল হইয়া ওঠে, আসল গানটা ঝাপ্সা হইয়া থাকে।'' (সংগীতের মুক্তি)
এ বিষয়ে আমার মনে হয় তাঁর অভিপ্রেত অনেকটা পাশ্চাত্যের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধরনের সঙ্গে মেলে। সেখানেও স্বরলিপির নির্দিষ্ট বাঁধনকে আপোসহীনভাবে স্বীকার করে নিয়েও বিভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনে নিজস্বতার সিলমোহর লক্ষ্য করা যায়। তবে এই মিলটা শুধু সুরের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হতে পারে, সুর ও বাণীর মালা গাঁথার সাফল্য এক্ষেত্রে অর্জিত হয়না। নিজের সৃষ্টির অবয়বকে এইভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার সাধ ও সাধ্য, শুধু বাংলায় কেন সারা ভারতবর্ষে কোথাও চোখে পড়েনি। বাংলাতে অন্য যেসব প্রধান কম্পোজার ছিলেন, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল বা নজরুল কেউই নিজস্ব সৃষ্টির পরিবেশন পদ্ধতি বিষয়ে এ জাতীয় স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট নীতিনির্দেশ রেখে যাননি। তাই তাঁদের গান পরিবেশনের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে দিলীপকুমারের অভীপ্সাই বলবতী হয়েছে, যেটা আমাদের আবহমান কালের গীতকৌশল। যদিও এই মুহূর্তের প্রজন্মে বহু নবীন শিল্পীদের গান শুনে মনে হয় দিলীপকুমারই জিতে যাচ্ছেন। বহুক্ষেত্রে গায়কই গানের ভাগ্য নির্ধারণ করছেন। এটা চিরকালীন ভারতীয় প্রবণতা। কিন্তু এই প্রশ্নটিতে রবীন্দ্রনাথ নিতান্ত ব্যতিক্রম। তাঁর অনুশাসনের ভুবনটি য়ুরোপীয় ছাঁচের। গানকে কোনও মূল্যেই "সুরসভা ছাড়িয়া অসুরের কুস্তির আখড়ায়" পরিণত করার বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদ। দ্বন্দ্বটি এইখানেই জন্ম নেয়। তাঁর শিল্পের ব্যাখ্যায় গভীরতার যে শর্ত কবি আরোপ করেছিলেন, শুধু আজকে নয়, চিরকালই অনেক পারফর্মারই তা সঠিক অনুধাবন করতে পারেননি। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার ভেদরেখাটি ঘুচিয়ে দিতে তাঁদের উদ্যমের অভাব নেই। শিল্পীর ইনকনসিস্টেন্সির উৎস থাকে সৃজনশীলতার দোলাচলে। কিন্তু টাইরানি'র জন্ম মূর্খতা থেকে আসে। ওটা তাৎক্ষণিকের বিকার। অথচ সঙ্গতভাবেই তাঁর শিক্ষায় আমরা অনন্ত আশাবাদী হয়ে থাকতে চাই। কালের ধর্মে কবির গানের পরিবেশনে পরিবর্তন নিশ্চয় আসবে। কিন্তু সংযমই সমস্ত শাশ্বত শিল্পের প্রধান শর্ত, কবির গানের ক্ষেত্রেও তার কোনও ব্যতিক্রম হবেনা। প্রকৃত শিল্পীরা স্বধর্মে সংযত হয়ে থাকবেন, এটাই একমাত্র অভিপ্রায়।
আমরা ইতর মানুষ। শাস্ত্রবাক্যের অচল উপলব্ধির থেকে অনুভূতির সতত দোলাচলে অস্থির প্রেমের প্রলাপে অধিক আস্থা রাখি। গুরু যখন বলছেন, ইনকনসিস্টেন্সিই একযোগে প্রধানতম পুণ্য ও পাপ, আমাদের জন্য তার থেকে বড়ো দিক নির্দেশ আর কী হতে পারে?
এবার বাইশে শ্রাবণে সব মার্কামারা গান নির্বাসনে পাঠিয়ে সারাদিন শুধু গাইবো, "নীল দিগন্তে, ঐ ফুলের আগুন লাগলো।" ফাগুনহাওয়া, শাওনপশলা, ফুলের আগুন, চিতার ফুলকি, সবাই মিলে একটা আকাশ হয়ে উঠবে। কবি'র ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠা প্রায় অদৃশ্য হাসিটি আমি দেখতে পাবো। নিমতলা নয়, আমার জন্য তিনি সতত অপেক্ষা করেন ছাতিমতলায়। পঁচিশ, বাইশ সব একাকার করে দেন দমকা হাওয়ায়। শুধু সমুখের পথ দিয়ে তাঁর পলাতকা ছায়া আমার গানের বন্ধন মেনে নেয়।
নিতেই হবে....
Sundar bishkeshhn! Gaan o gayaker GangaJamuna sangam e shrotar abogahon Tao ekti Marta rakhe -- se ki bhabe Kobe ki rokom parishthitite Dub dilo --- amar mone hoy ganer byapare Mind ta rule korle tar ektokom Rup Aar Brain rule korle tar aar ek rokom!
ReplyDeleteJai gaan shuni ge-- eto ganer Kothay ganer testa Peye gelo😊