ছোটগল্পঃ শ্যামল সোম
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখে ছিলাম আমার সর্বনাশ (কাল্পনিক গল্প)
শ্যামল সোম
চৈতী হাওয়ায় গাছের ঝরা শুকনো পাতা উড়ে যায়। শুকনো পাতার উপর মর মর শব্দে বনের নিস্তব্ধতা ব্যহত হয়। একটা কাঠবিড়ালী তর তর করে উঠে গেল পাতা বিহীন গাছ বেয়ে, গাছের কঠোর বাসায় ডিমের ওপর বসে মা পাখী তা দিচ্ছে। গিরগিটিটা সবুজ থেকে হলুদ রঙ ধরে ইতি উতি চাইছে।
গাছের আড়াল থেকে সূর্যাস্ত শেষ আলো এসে পড়েছে।
বসন্তের ছোঁয়ায় লালে লাল আগুন ফুটছে পলাশ গাছে, আর ঐ কৃষ্ণ চূড়া গাছে গাছে।
স্বপ্না আর রঞ্জনের মাথায় ওপর ঝরে পড়লো শুকনো পাতা। দুজনে এক সঙ্গে হেসে ওঠে। রঞ্জন পাতাটা নিয়ে স্বপ্নার সারা মুখে বোলাতে থাকে।
-আমার ভীষণ ভয় করে রঞ্জন ?
-খুব স্বাভাবিক, তুমি নন্দিনী আহমেদ, আমি রঞ্জন মুখার্জি, আমাদের ধর্ম আলাদা--
-কিন্তু আমাদের ভালোবাসা, পাঁচ বছরের প্রেম?
-হা হা হা - ওদের কাছে কানাকড়ি দাম নেই--নন্দিনী
-কিন্তু রঞ্জন, তোমাকে ছেড়ে আমি---কি -কি করে আমি? হায় আল্লা!
-এখনই চোখের জল ফেলে না , পরে অনেক কাঁদতে হবে--
-পরস্পরকে ভালোবেসে আমরা কোন অন্যায় করিনি
-কিন্তু আমাদের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির বিশাল ফারাক--
-কি সব পাগলের মতো বলছো তুমি ? আমরা দুজনে বাঙালি, বাংলাভাষী
-নন্দিনী! সত্য রে লহ সহজে ! আমাদের দুজনের - না আমাদের দুই সম্প্রদায় বড় প্রিয় কবি বলেছেন, সত্য কে --
-হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি ?
-প্রীতি, ভালোবাসা, অবশ্যই ধর্মের অনুশাসন মেনে -সামাজিক দায় স্বীকার করে--
-আমাদের মাতৃভাষা বাংলা!
-ভাষার মধ্যে ও অনেক অমিল, আমরা বলি জল, তোমরা বল পানি, অথচ সেই একই বস্তু আমাদের তৃষ্ণা মেটায়। একই ঈশ্বর, একই সৃষ্টি কর্তা। তবু একে অপরের ধর্মে প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস নেই- প্রীতি নেই - এইটা বাস্তব- নন্দিনী! গৌর কিশোর ঘোষের "প্রেম নেই" উপন্যাস পড়ছো?
-না, না -প্লিজ রঞ্জন, চুপ কর --দোহাই চুপ কর--
-কাঁদলে তোমায় ভীষণ সুন্দর দেখায়, নন্দিনী !
-কাঁদাবে বলেই কী তুমি তাহলে এত বছর তুমি আমাকে--
-কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে -- এ গান তো তুমি আমায় বহুবার শুনিয়েছো--
-কেন! কেন! কেন ! রঞ্জন, কেন এত আমাকে ভালোবেসে ছিলে?
-আমার নলিনী! কখন কবে যে তোমাকে এত ভালোবেসে ফেললাম ! তা আমি-আ-আমি নিজেই জানতে পারি নি--
-আমি থানায় যাবো, কোর্টে হাজির হয়ে বলবো আমরা পরিনত বয়স্ক ! দেশে আইন আছে--
-আইন মোতাবেক ব্যবস্থা পুলিশ করবে। তারপর ওদের নির্যাতন অত্যাচার--আর আইন-- হে-হ-
-আইনত নিষিদ্ধ নয় আমাদের সম্পর্ক
-নন্দিনী, আইনের অনুমোদনের বহু যুগ আগে ধর্মীয় অনুশাসন, আচার অনুষ্ঠান প্রতিপালন হয়ে আসছে। স্বেচ্ছাচার বা ব্যভিচার, ধর্ম বিরুদ্ধাচারণ করে বাহবা হাততালি পাওয়া যায় কিন্তু বাস্তব জীবন ভীষণ কঠিন--
-রঞ্জন, আজ এত বছর পরে এখন এ সব --আমি কিছু বুঝতে পারছি না--
-এখন এই কথা বলছি, কারণ পরবর্তী সময়ে আমাদের বিবাহিত জীবনে সমস্যা আসবে-আসবে-আমাদের সন্তানেরা কোনদিনই ভালোভাবে ঈদ বা দুর্গা পূজা কোন আনন্দ ঠিক মতো উপভোগ করতে পারবে না। কাউকে হেসে বলতে পারবে না ঈদ মোবারক বা শুভ বিজায়ার শুভেচ্ছা।
-এ সব আমি কিছু ভাবতে রাজি নই। তুমি পাশে আছো আমি সব বাধা বিপত্তি লঙ্ঘন করে তোমার হাত ধরে যে কোন মুহূর্তে চলে যেতে পারি!
-মুসলিম মেয়ে কোন হিন্দু ধর্মের ছেলে কে ভালোবেসে বিবাহ করবে, সে আমার ধর্মের ও সমাজের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কেউই মেনে নেবে না। ঠিক সেই ভাবেই তোমার সমাজ ও ধর্মের কেউই আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। এই অধর্মীয়, অসামাজিক সম্পর্কের বিরুদ্ধে ওরা হয়ত-
-আজ আমি কোন বাধাই মানবো না। একটাই জীবন, এ জীবনের চলার পথে আমি তোমায় চিরকাল পাশে চাই, রঞ্জন।
-তুমি তোমার ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে রাজি আছো।
-ধধধর্ম-- ধধর্ম, কিন্তু ধর্ম নিয়ে কোন আপত্তি কোন দিন-আমাদের মধ্যে-
-ভবিষ্যতে বিতর্ক হতে পারে ? আমি শুধু কতগুলো সমস্যা, আসন্ন যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, তারই প্রস্তুতি-- এই স্বপ্না বহুদূর থেকে ভেসে আসা কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছো?
-না, কিসের আওয়াজ?
-এই জঙ্গলের আশ্রয় থেকে এখনই বেড়িয়ে পড়তে হবে--
-কেন ?
-আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি--
-হাঁ, আমিও শুনতে পারছি, রঞ্জন, ও কিসের আওয়াজ?
-জীপ গাড়ি, অনেকগুলো গাড়ির দ্রুত গতিতে ছুটে আসার আওয়াজ, নন্দিনী,
আমাদের খুঁজে বের করতে--আমাদের আপনজন আত্মীয় স্বজনদের সাথে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায় লোকজন লাঠি, বন্দুক ! ছুরি ! শানিত অস্ত্র নিয়ে ছুটে আসছে।
-কেন? কেন, রঞ্জন? আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে এখনও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, মানুষের ভয়ে মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালাচ্ছে?
-নন্দিনী, শিগ্গির আমার বাইকের পিছনে উঠে বসো--
-রঞ্জন, আমরা কোথায় চলছি--
-দূরে -বহু দূরে -কোথাও -কোনখানে--সূর্য এসে যেথায় মেশে রাতের পারাপারে- নূতন কোন ভোরের অপেক্ষায়--
0 comments: