1

পথে প্রান্তরেঃ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

Posted in


পথে প্রান্তরে


গোপালপুর, উড়িষ্যা 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী 



‘সমুদ্র’ বাঙ্গালীর এক প্রধান আকর্ষণ । শুধু বাঙ্গালী কেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক আমাদের দেশের সমুদ্রের টানে দেশ বিদেশ থেকে আসেন । ভারতবর্ষের পর্যটন মানচিত্রে গোপালপুর সমুদ্র সৈকতের ততটা প্রাধান্য নেই বললেই চলে । সমুদ্র বলতে প্রথমেই ছাপোষা সাধারণ বাঙ্গালীর মাথায় নাড়া চাড়া দেয় হয় ‘পুরী’ নয় ‘দীঘা’ । “গোপালপুরের” সমুদ্র সৈকতের চিত্রপট পুরী দীঘার চেয়ে অনেকটা আলাদা । খুব সুন্দর অথচ শান্ত এই গোপালপুরের সমুদ্র সৈকত । যে দেখেছে তাকে বার বার ঐ সমুদ্রের সৌন্দর্য টেনে আনে এবং আনবে। তাই বোধ হয় এবারে রাস পূর্ণিমার দিন (৬ নভেম্বর ২০১৪) গোপালপুরে প্রচুর বাঙ্গালী টুরিস্ট দেখলাম । 

এবারে গোপালপুর যাওয়ার প্রোগ্রামটা করি আমার এক অন্তরঙ্গ বন্ধুর পরামর্শে । ৫ নভেম্বরে, ২০১৪, বুধবার আমরা সকলে মিলে রওনা 'দি গোপালপুর ভায়া চিলকা । আমার গাড়ী নিয়েই যাই । ড্রাইভার আমার বন্ধু স্বয়ং । আমাদের ৪-৫ দিনের প্রোগ্রাম তাই ড্রাইভার নিতে আমার বন্ধু বারণ করেন। 

ভুবনেশ্বর থেকে ৫ নম্বর জাতীয় রাজপথ ধরে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এক ছোট্ট শহর ‘বালুগাঁ’ পৌঁছে গেলাম । এই বালুগাঁ চিলকার কাঁকড়া ও চিংড়ীর জন্য প্রসিদ্ধ । এখান থেকে দেশ বিদেশে চিংড়ী ও কাঁকড়া রপ্তানি হয়। বালুগাঁ থেকে বরকুল মাত্র ৩ কিলোমিটার । বরকুল , চিলকা হ্রদের সংলগ্ন একটি ছোট্ট যায়গা । ওখানে উড়িষ্যা সরকারের পর্যটন বিভাগের সুন্দর কটেজ , পান্থনিবাস আছে । বরকুল থেকে প্রায় পর্যটক মটর বোটে চিলকা হ্রদের ওপর বোটিং করে কালিজাই মন্দির, ‘নলবন’ বিদেশী পক্ষী আশ্রয়স্থল , তা ছাড়া চিলকা হ্রদের মধ্যে অবস্থিত অনেক ছোট বড় যায়গা যেমন পারিকুদ , নুয়াপড়া , কৃষ্ণ প্রসাদ , তিতিপ, মালুদ ইত্যাদি । আবার যারা সাতপড়া থেকে যান চিলকা তে,  তারা ডলফিন দেখতে যান  চিলকার মোহানা সমুদ্র সন্নিকটে । সরকারি মোটর বোট নেওয়াই ভালো, কারণ  ওতে রিস্ক কম থাকে । 

চিলকার কথা আগেই লিখেছি তাই আর না বাড়িয়ে সোজা গোপালপুরের কথায় যাই । বরকুল থেকে গোপালপুর ছক ৭০ কিলোমিটার। ওখান-থেকে SH 30 ধরে আরও ১০ কিলোমিটার ভঞ্জবিহার ইউনিভার্সিটি , (গঞ্জাম) বহরমপুরের রাস্তা ধরে যেতে হয় । আরেকটা রাস্তা আছে সেটা বহরমপুর(উড়িষ্যা) থেকে গোপালপুর । ওটা প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা । গোপালপুর পৌঁছে গেলাম বিকেল ৪ টে নাগাদ । আগে থেকেই হোটেল বুক করা ছিল, তাই গোপালপুর পৌঁছেই হোটেলে চেক ইন করে যে যার রুমে ঢ়ুকে পড়ি। আমরা সব্বাই ফ্রেশ হয়ে চলে যাই সি বিচে । 

গোপালপুর একটা ছোট্ট শহর। বঙ্গোপসাগরের ধারে এই শহর উড়িষ্যার দক্ষিণে গঞ্জাম জেলার অতি পুরাতন কিছু স্মৃতি নিয়ে অবস্থিত। 

২০১১-র  জনগণনা অনুযাই এখানকার লোক সংখ্যা ৬৬৬৩ । এখানে প্রায় সকলে জেলে সম্প্রদায়ের। তেলুগু আর উড়িয়া এখানকার প্রধান অধিবাসী । আছেন কিছু সাহেব তাঁরা ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় থেকে আছেন । এনাদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে । দু চারটে ঘর অবশিষ্ট আছে । প্রায় সকলে গোয়া নয়, কোলকাতাতে চলে গিয়েছেন। ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে এখানে একটা ছোট বন্দর ছিল । কাছেই একটা লাইট হাউস আছে । বার্মা এবং রেঙ্গুন থেকে চাল আমদানি করা হত এই পথে । তখন এখানে অনেক বাঙ্গালী ব্যবসায়ীরা প্রধানত চালের ব্যবসা করতেন । এখন কিছু বাঙ্গালী গঞ্জাম, বহরমপুরে আছেন তবে তাঁদের সংখ্যা নগণ্য । এখান থেকে উড়িষ্যার গঞ্জাম জেলার বহরমপুর শহর মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । অন্ধ্র রাজ্যের সীমান্তবর্তী  অঞ্চল, তাই মূলত তেলুগু এবং উড়িয়া প্রচলিত ভাষা । 

এখানকার সমুদ্র তট শান্ত এবং সুন্দর । ঝাউ বনের ধারে প্রশস্ত ৪ কিলোমিটার ঊর্ধ্ব সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি । মাঝে মাঝে স্তূপাকার বালুকা রাশি । গোপালপুরের সমুদ্র কিন্তু খুব গভীর এবং এখানকার আন্ডার কারেন্ট অনেক সময় মৃত্যুর কারণ  হতে পারে । তাই একে রিপ কারেন্ট বলা হয় । 

সমুদ্রের ধারে ধারে ছোট ছোট গ্রাম- বক্সিপালি , গোলাবন্ধ , কস্তুপেটা , হাতিপাদ , কির্তিপুর , মার্কন্ডি, ইত্যাদি প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বায় । ঝাউ , কাজু বাদাম এবং নারকোল গাছে ভর্তি এলাকা । কাছেই ধবলেশ্বরের মন্দির । খুব জাগ্রত শিবের মন্দির । শিব রাত্রিতে খুব ভীড় হয় ভক্তদের ।

গোপালপুরের সবচেয়ে বড় ৫ তারকা হোটেল “মে ফেয়ার” । এই হোটেল আগে “পাম বিচ রিসোর্ট” নামে পরিচিত ছিল । এখন তার মালিকানা পরিবর্তন হওয়াতে শিল্প পতি এবং পূর্বতন কেন্দ্র মন্ত্রী শ্রী দিলিপ রায়ের “মে ফেয়ার” ব্যানারে পরিচালিত । ১৫০০০ টাকা এক দিনে শুধু থাকা আর কমপ্লিমেন্টারি ব্রেক ফাস্ট । ব্যাস !

গোপালপুরে দু রাত তিন দিন কাটিয়ে ফিরে আসি । ফেরার সময় গঞ্জামের বিখ্যাত শক্তি পীঠস্থান তারা তারিণী দর্শন করে ফিরি।



** পরের কোনো আলোচনায় তারা তারিণী র বিষয়ে  লিখবো ।







1 comment:

  1. আশ্চর্য হচ্ছি দেখে আমার লেখা পথে প্রান্তরে "গোপালপুর,ঊড়িশ্যা" সম্পুর্ণ অদৃশ্য । কেন বলুনতো ? ছবিগুলো আছে ,লেখাটা অদৃশ্য ।

    ReplyDelete