0

অণুগল্পঃ শাহেদ সেলিম

Posted in



অণুগল্প 




স্বাধীনতা (একটি ফিউচার ফিকশন) ও গ্রহণকাল
শাহেদ সেলিম 



নভোযানটি কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ারপোর্টের টারমাক স্পর্শ করবে। অরিনসহ ৩১৩জনের দলটি শিক্ষা সফরে এসে খুব রোমাঞ্চো অনুভব করতে লাগল। সবুজ পৃথিবীটা অদ্ভুত লাগছে এখান থেকে। দলটি যাবে মানবজাতির সবচেয়ে বড় উৎসব ‘স্বাধীনতার ২০০ মানববছর পুর্তি অনুষ্ঠানে’। অরিনদের যোগাযোগ মডিঊলে ভেসে এলো---‘আজ সোমবার ২৫ ডিসেম্বর ২৩৫০। সুস্বাগতম জানাচ্ছি তোমাদের।পৃথিবী থেকে দূররতম নক্ষত্রপুঞ্জের একটি তোমাদের নিহারিকা। যেখানে ৩ হাজার আলোকবর্ষ স্পেস জুড়ে তোমাদের বসবাস।’

ভেসে আসা শব্দগুলো তাদের সামষ্টিক বুদ্ধিমত্তায় অন্য রকম অনুভুতির সৃষ্টি করল। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে লাগল--

‘তোমাদের মত মহান জাতির প্রথম দলটিকে আজ আমরা সরাসরি আতিথেয়তা দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। আমরা কৃতজ্ঞ তোমাদের কাছে। 

তোমরা জানো— পৃথিবীতে আজ একটি জাতি। একটি দেশ। একটি রাষ্ট্র। একটি সংবিধান।

এই অসম্ভব ঘটনাটি ঘটেছিল—২০০ বছর আগের কোন একদিন। সেদিন শব্দরা জেগে উঠেছিল। 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর লিখিত প্রতিটি নির্দেশ, বিধান, আইন, কোর্টের রায় লেখার সঙ্গে সঙ্গে পালটে যাচ্ছিলো।

শব্দরা নিজেদেরকে বাক্যের ঠিক ঠিক জায়গায় নিয়ে বসাচ্ছিলো। 

বাক্যের অপশব্দগুলো নিজে নিজেই মুছে যাচ্ছিলো। 

পৃথিবীর প্রতিটি সরকারের মধ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। 

অবশেষে গোপন রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল— প্রতিটি রাইটিং ডিভাইস, পার্সনাল কম্পিউটার, সেন্ট্রাল কমপিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটা সফটওয়্যার ইন্সটল হয়ে গিয়েছিল। যে সফটওয়্যারের কাজ হল— প্রতিটি শব্দে চেতনা সৃষ্টি করা, শব্দের সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলা। 

সেই শব্দগুলো পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সংবিধান পালটে দিয়েছিল।

ধর্মগ্রন্থগুলো চটিবইয়ের আকার ধারণ করেছিল।

সব রাজনীতিবিদদের আজীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছিলো। 

পৃথিবীর সব সীমান্তের তারকাটার বেড়া উঠে গিয়েছিল। 

আমরা তোমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতে নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে সেই সফটওয়্যার আবিষ্কারক জন্মেছিলেন। 

সফটওয়্যারটির নামও-

WISE (Word Independence System)’



গ্রহণকাল

--মালাউনের বাচ্চা দরজা খুল।
বাইরে অনেকের আওয়াজ। ধনচে’র বেড়ার ফাঁক দিয়ে কনকনে ঠাণ্ডার সাথে ওই কণ্ঠস্বর তাদের আরো জমিয়ে দিল। দরোজায় ধাক্কা পড়ছে। সরস্বতীর প্রতিমাটি বেড়ায় ঝুলছিল। পড়ে ভেঙ্গে গেল। সাত-আটজন মুখোশে ঢাকা লোক ঘরে ঢুকে পড়ল।

--বাবা, আমগো তো কিছ নাই। কি নিবা তোমরা?
--বুড়ি তুই মাইয়াডারে রাইখা বাইর হ।

তের বছরের কাকলিকে রেখে মাজাভাঙ্গা বুড়িকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিল ঘর থেকে। দরোজা বন্ধ হয়ে গেল। কাকলির সাথে ভেতরে একজন। সে বেরিয়ে এলে একসাথে কয়েকজন ঢুকতে চাইল। 

তখন বুড়ি হাতজোড় করে বলে ওঠেন, ‘আমার নাতিডা ছুড়.........পারব না..... তরা আমারে কর।’

0 comments: