0

রম্যরচনাঃ শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in


রম্যরচনা



ভাষা বিভ্রাট
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



নাঃ, কিছুতেই আর ধরে রাখা যাচ্ছে না । যতই শক্ত করে ধরতে যাই, প্যাঁকাল মাছের মত পিছ্‌লে যাচ্ছে বার বার । ‘ছায়ার সাথে যুদ্ধ করে গাত্রে হল ব্যথা’ । যেই বললাম – না, পরিশীলিত থাকছে না । ওমনি এক যুবকের প্রশ্ন – ‘সেটা কি কাকা, খায় না মাথায় দেয় ?’ কাকা শব্দটা এ যাবৎ শ্রদ্ধার বলেই জানতাম, এখন দেখি তা ঠাট্টার ডাক ।

সেদিন এক আসরে উপস্থিত ছিলাম । কয়েকজন বেশ নামী মানুষ মঞ্চ আলো করে বসে আছেন । বক্তৃতার ঝাঁজে চায়ের পেয়ালায় তুফান । বর্তমানের বেশ নামজাদা সব কবি-সাহিত্যিক । বাংলা সাহিত্যে ইংরাজি বা অন্য কোনও ভাষার শব্দের বহুল ব্যবহারে যে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই, তাঁরা যে এ হেন ছুৎমার্গীও নন, সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আলোচনা চলছে বিস্তর । একটা কোণ বেছে চুপচাপ বসে পড়লাম । সচরাচর এমন আসর এড়িয়ে চলি । এবার অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়েছে । তাও সব প্রায় ঠিকই ছিল । মেনি বিড়ালের মত এক কোণে চুপটি করে বসেছিলাম । শব্দ ব্রহ্ম । এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে দুরন্ত গতিতে প্রবাহমান । আমি নির্বিকার । কোন কিছুতেই আর কিছু যায় আসে না । পড়েছি যবনের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না । এক আধচেনা বক্তা আমাকেই সালিশ মেনে বসলেন । ব্যস, আর কি থামানো যায় বাঁকুড়ার রোখ !

সেদিন মেট্রোতেও এমনিতর হয়েছিল । ফুটপাথ নিয়ে তর্কের ফুলঝুরি । কোনোমতে বসার জায়গা পেয়েছিলাম । ভাবলাম একটা কবিতা গেঁথে ফেলা যাবে । কয়েকটা পঙক্তি সকাল থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । তা কোথায় কি ! মাথার মধ্যেকার শব্দগুলোর সাথে কর্ণকুহরে লাফ দিয়ে পড়ে ঢুঁসিয়ে দিতে থাকা শব্দগুলোর মধ্যে কোনও বনিবনা নেই । শেষমেশ আর থাকতে না পেরে যিনি খুব চেঁচাচ্ছিলেন, তাঁকে বলেই ফেললাম – ‘ভাই, এই কলকাতা শহরে আমায় একটা ফুটপাথের ঠিকানা দিতে পারেন, একটু হাঁটবো’ । সঙ্গে সঙ্গে সারা কামরায় হাসির হর্‌রা । কিন্তু হলে কি হয়, ততক্ষণে ঘোষণা শুরু হয়ে গেছে – ‘এটি অন্তিম ষ্টেশন, গাড়ির কামরা খালি করে দিন’ । সব চট্‌কে গেলো ।

আজও তাই । শীতাতপ ঘরে বসে বেশ একটা ঝিমুনি ঝিমুনি ভাব । তবে খুবই সংযত । আমি আবার নিঃশব্দ ঘুমে ঠিক বিশ্বাসী নই । পাড়াপড়শি জানবে না যে একজন পদ্মলাভ করছেন, সে আবার ঘুম নাকি, ছোঃ । যাই হোক, বেশ ছিলাম । কিন্তু ঐ বক্তা মশায়ের সেটা সইল না । আমার ঝিমুনি কাটানোর জন্যেই কি না জানি না, বলে বসলেন – কি মান্তুবাবু, ঠিক বলছি তো ? আমি খাস বাঁকড়ি । বলতে চেয়েছিলাম – ‘আইজ্ঞা, লেজ্জ্য কথা বটে ।‘ কিন্তু ফস্‌ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো – ‘আইজ্ঞা, মাইনতে লাইর্‌লম ।‘ তারপর খানিকটা কেশে, খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে, অত্যন্ত বিনীত ভাবে বললাম – ‘না মানে, আমি এ বাবদে সামান্য ভিন্ন মত পোষণ করি কি না, তাই বলছিলাম আর কি, মানে যদি ঐ আপনার বলার পর অনুগ্রহ করে আমায় মিনিট দুই বলার সুযোগ দেন.........’ ইত্যাদি, ইত্যাদি । নিশ্চিত ছিলাম - অনেক মাথা, আমি পর্যন্ত আসতে আসতে সময় পক্ষী ফুড়ুৎ, আমিও হাওয়া । কিন্তু কপাল মন্দ । ঠিক তাঁর পরেই উদ্‌ঘোষক মশাই আমায় ডেকে ফেললেন । ব্যস্‌, বুকটা কেমন ধড়ফড় করে উঠলো । চোখের সামনে সর্ষেক্ষেত । পিতৃদেব বরাবর বলতেন – ভোরবেলা উঠে সূর্যপ্রণাম করা উচিৎ, তাতে মনে বল পাওয়া যায় । আমি গেঁতো বাঙালি । ভোর কারে কয় তাই জানলাম না, তো সূর্যপ্রণাম । এখন ফল ভোগ কর । ঠকঠকে হাঁটু নিয়ে অতঃপর মঞ্চে ।

বেশী বকবক করা আবার আমার ধাতে সয় না । অম্বলের রুগী । চোঁয়া ঢেকুর উঠতে থাকে । জিভে টক বিস্বাদ । পৃথিবীটাকে টোকো বলে ভুল হয় । তাই গৌরচন্দ্রিকায় না গিয়ে একেবারে সরাসরি বললাম – ‘আমায় যদি একটাও এমন কোনও ভিন-ভাষার লেখা দেখাতে পারেন যেখানে বাংলা শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে আপনাদের সমস্ত যুক্তি আমি মেনে নিতে রাজী আছি । যে অভাবী, সে গ্রহীতা হয় । সমৃদ্ধের হাত পাতার দরকার পড়ে না । বাংলা ভাষা কি আজও এতটাই দীন যে তাকে সেই গড়ে ওঠার সময়ের ভিক্ষাবৃত্তি আজও চালিয়ে যেতে হবে ! আর কবে স্বাধীন হব আমরা ! আর কতদিন মেনে নেবো এই সংস্কৃতিশাসন ! অনেকদিন তো হল, কথায় কথায় হস্তপ্রসারণের এ প্রবৃত্তি, আসুন এবার নাহয় বর্জন করা যাক ।‘............সবাই চুপ । হাততালি তো দূরে থাক, সমস্ত মুখ কাষ্ঠকঠিন । মুহূর্তে থমথমে পরিবেশ । শুধু কোথা থেকে যেন একটা টিকটিকি বলে উঠলো – ঠিক...ঠিক...ঠিক... । বুঝলাম – ভীমরুলের চাকে ঢিল ছুঁড়ে ফেলেছি । এক্ষুনি পিঠটান না দিলে কপালে দুঃখ আছে । অতএব তড়িঘড়ি ‘নমস্কার’ বলে কোনও প্রত্যুত্তরের সুযোগ না দিয়ে সোজা বাইরে । চা-জলখাবারের দায়িত্বে থাকা তরুণটি ঢিপ করে একটা প্রণাম করে বলল – স্যার, আমি প্রবাল । তার মাথায় হাত রেখে বললাম – ‘ভাল থেকো । শ্বেত নয়, রক্ত প্রবাল হোয়ো ।‘ তারপর সোজা রাস্তায় । দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেলাম, পেছনে তখন আমার মুণ্ডুপাত হচ্ছে ।

শীত কাল । রবিবারের সকাল । কোলেবাবু গায়ে ভাল করে চাদর জড়িয়ে হাতে এক ঘটি ( হ্যাঁ, সেটাকে এ ছাড়া আর কিছু বলা ঠিক হবে না ) গরম চা নিয়ে বারান্দায় ঠিক যেখানে এক চিলতে রোদ এসে পড়ে, সেখানে বসে আয়েস করে চুমুক দিচ্ছেন । মাঝে মাঝে নানান রকম তৃপ্তিসূচক শব্দ করছেন । মেজাজটা যে বেশ ফুরফুরে তা বেশ স্পষ্ট । এরপর বাজার যাবেন । কাটা পোনা না কি একটু কচি পাঁঠা নিয়েই ফেলবেন, মনের কোণে তারই সুখতর্ক চলছে । এমন সময় চায়ের কাপ হাতে ছোট মেয়ে ঈশানী হাজীর । সবে কলেজে পা । খঞ্জনা ভাব । ডানামেলা দিন । হবেই । বারান্দার ওপর দিয়েই প্রায় রাস্তা । নানান মানুষের আসা যাওয়া । হঠাৎ ঈশানীর তীব্র চিৎকার – ‘হাই......’ । এক দৌড়ে প্রায় রাস্তায় । খানিকটা চা চলকে মাটিতে । কোলেবাবু চ্যাঙ মাছের মত একটু ছিটকে গিয়ে চাদর সামলালেন । ওদিকে তখন কলকল...কলকল । খানিক বাদে অন্যজনের ঈষৎ উঁচু গলা – ‘বাই’, এবং মেয়ের ফিরে আসা । কোলেবাবু এই সুন্দর সকালটা কিছুতেই মাটি করতে চান না, তাই মৃদু কন্ঠে সামান্য অনুযোগ করেন – ‘কি যে করিস ! আস্তে যাবি তো ! এক্ষুণি চাদরে চা পড়ত’ । মেয়ের আদুরে প্রত্যুত্তর – ‘ও তাই ! ‘Am so sorry বাপী’ । তখনও বাবা-মেয়ের কথা শেষ হয়নি, এবার রাস্তের উল্টো দিকের বাড়ি থেকে ভেসে এল – ‘হাই ঈশানী...’ । আবার খানিকটা ছুটোছুটি । আবার খানিকটা কলকল । কিন্তু এবার আর কোলেবাবু নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না । চাদর যদিও বা চা এড়াতে সক্ষম হোল, তিনি নিজেকে সামলাতে পারলেন না । পঞ্চাশোর্ধ্ব চর্বির তালটি পপাত ধরণী তলে । নিজে যদিও বা সামলে সুমলে উঠে দাঁড়ালেন, রাগ সামলাতে পারলেন না । হনহন করে তাদের কাছে গিয়ে প্রায় চিৎকার করে বললেন – ‘তোদের কি এমন বাপ-মা মরেছে রে, যে সকাল থেকে সব হায়-হায় শুরু করলি !!’ সদ্যযুবতীদ্বয় এই অকস্মাৎ আক্রমণের জন্যে আদৌ প্রস্তুত ছিল না । কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যে যার নিজের ঘরে ফিরে গেলো ।

আমি নিশ্চিত, কোলেবাবু খুব একটা রবীন্দ্রনাথ পড়েননি । নাহলে তিনি বুঝতেন – আগে একের মুঠো আলগা হয়, তারপর তাতে দশের মুঠোর চাপ প’ড়ে আদল যায় বিগড়ে । নিজের মুঠো আলগা করেছেন তিনি নিজেই । মেয়েকে ইংরিজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চেয়ে যদি একই সাথে এটাও আশা করে থেকেন যে মেয়ে আপাদমস্তক বাঙালিয়ানায় মোড়া থাকবে, তাহলে সে অত্যন্ত ভুল ভাবনা । বঙ্কিমের কথায় – বিষবৃক্ষে রসাল নহে, বিষফলই ফলে । ছোটবেলায় মেয়ের আদো-আদো কণ্ঠে ‘আবোলতাবোল’ নয়, বহুল প্রচলিত খাস ইংরিজি রাইম ‘Jack & Jill, went up the hill…..’ সবাইকে ডেকে ডেকে শুনিয়েছেন । পাঁচনগেলা মুখ করে সবাই তারিফ করেছে । তিনি তাতে গর্ব বোধ করেছেন । আজ তার ‘হায়-হায়’ খারাপ লাগলে চলবে কেন ! বাঙালির এই কেরানী মনোবৃত্তি আজও গেলো না । গাছেরও খাব, তলারও কুড়াবো । আমার এটাও চাই, আবার ওটাও চাই ।

দু’শো বছরের পরাধীন দাসত্বের বীজাণু ৬৭ বছর স্বাধীনতার পরও রক্তটাকে পরিশুদ্ধ করতে পারল না । একটু চোখ মেললেই নানান সব এমন এগিয়ে থাকা দেশের দেখা পাব, যারা নিজেদের ভাষাকে বাস্তবিকই শ্রদ্ধা করে । সে সব দেশে যে কোন বিদেশী ভাষা চুড়ান্ত ভাবেই ব্রাত্য । তাদের লেখা-পড়া, গবেষণা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি, অগ্রগতি, কোথাও কোনও টান পড়ে না । বাঙালির ‘দেন না...দেন না’ স্বভাব আর যায় না কিছুতেই । সেদিন এমনই সেই মেট্রোতেই একদল যুবক আলোচনারত । যতটুকু বুঝলাম IPL Cricket নিয়ে যে তাণ্ডব চলছে তাতে তারা বীতশ্রদ্ধ, এবং সে টাকায় যে রাজ্যের আরও অনেক প্রয়োজনীয় উন্নতি সাধন সম্ভব, তাই ছিল তাদের বিতর্কের বিষয় । বেশ উপভোগ করছিলাম । কিন্তু সবটা বুঝতে পারছিলাম না । পাশের ছেলেটিকে আলতো করে বললাম – ‘ঠিক বিষয়ে কথা বলছ তোমরা । তোমাদের প্রজন্ম যে এমন করে ভাবে, তা দেখে বেশ ভাল লাগছে । তা সব কথা তো আমি বুঝতে পারছি না, তোমরা যদি একটু বাংলায় কথা বল......’ । ছেলেটি অবাক বিস্ময়ে খানিকক্ষণ আমায় দেখল । তারপর ঘাড় মাথা ঝাঁকিয়ে বন্ধুদের প্রশ্ন করলো – ‘Buddy, we speaking French ?’ আরও অবাক বন্ধুদের জিজ্ঞাস্য – এ প্রশ্ন কেন ! তাতে তার বক্তব্য – ‘কাকা যে বাংলায় কথা বলতে বলছে !!’ এবার তুমুল হাসির পালা । এবং আমার মুখ লুকোবার । উঠে অন্য কামরায় গিয়ে দমদম পর্যন্ত দাঁড়িয়েই এলাম । 

ভাষাটা দেখতে দেখতে একটা খিচুড়ি মার্কা বকচ্ছপ রূপ ধারণ করছে । একটা গোটা বাক্য কেউ আর বাংলায় বলছেন না । স্বামীজী এত করে বোঝালেন – ‘অনুকরণ দ্বারা পরের জিনিষ নিজের হয় না’ । তবু বাঙালির নিরেট ঘিলুতে তা ঢুকল না । অন্য ভাষার শব্দ প্রয়োগ করলেই না কি তথাকথিত Smart হওয়া যায় । অতএব বুঝি না বুঝি, সঠিক উচ্চারণ করতে পারি আর নাই পারি, ব্যবহার করতেই হবে । এক কবি সম্মেলনের আসরে বঙ্গজ তরুণ উদ্‌ঘোষক কথায় বাজিমাত করে চলেছে । কোন এক বাণিজ্যিক FM Channel’এর সে নাকি ডাকসাইটে ‘রেডিও জকি’ । এক বর্ষীয়ান কবির পরিবেশনার পর ছেলেটি বলে উঠলো – ‘আপ সালামত রহে’ । প্রবীণ মানুষটি যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে বলে উঠলেন – ‘জো লব্‌জ আতি নহি, ও না বোলা করেঁ বর্‌খুদার । ‘সলামৎ রহেঁ’ ঔর ‘সালা মত রহে’ দোনো মে আসমান জমিন কা ফর্ক হ্যায়’ । এ ভাষা যে ঐ প্রবীণ এত ভাল করে জানেন, তা কেউ আশা করেননি । ছেলেটি তো নয়ই । কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হল - বাংলা ভাষাও আজ আর ‘সলামৎ’ নেই, এ যেন সেই ‘সালা মত রহে’র দিকেই ক্রমধাবমান ।

এ কথা অনস্বীকার্য যে নানান কারণে বাংলায় বহুল অন্য ভাষার শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে । তারা কখনও বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে, কখনও অকারণ সহযোগ হওয়ার কারণে হয় সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে, অথবা অযথা অভিধানকে ভারী করেছে । আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ । অন্যের দ্বারে হাত পেতে ভিক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা নেই । তবু কি অসীম মানসিক দৈন্য আমাদের মনকে ছেয়ে রেখেছে । ভয় পাই ভাষাটা হারিয়ে না যায় ! যদি সত্যিই তা হয়, তাহলে সেদিন যাঁরা খেসারত দেবেন, তাঁরা কিন্তু আমাদের প্রজন্মকেই দায়ী করবেন, এবং কার্যত তাঁরা ঠিকই করবেন, কারণ আমরাই মাইকেল বিস্মৃত হয়ে এবং ‘...ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি......’ নিজেদের স্বকীয়তা ভুলে, নিজেদের ঐতিহ্যের কথা ভুলে, একটা আলেয়ার দিকে নিত্য ছুটে চলেছি ।

ঝুমি’কে খুব মনে পড়ে । জামশেদপুরে থাকাকালীন ওরা আমাদের প্রতিবেশী ছিল । ভাইয়ের বিয়েতে সবাই মিলে রাত জেগে গায়ে হলুদের তত্ত্ব সাজাচ্ছি । প্রত্যেকটা ট্রের আলাদা আলাদা নামকরণ করা হচ্ছে । এ বাবদে আমার একটু সুনাম থাকায় ও বিষয়টা সবাই আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছে । নববধূর চটিজোড়ার ট্রে’টির নাম দিলাম ‘পাদুকা’ । তখনও নাম লেখা কাগজগুলো ট্রে’তে চেটানো হয়নি । ঝুমি নেড়েচেড়ে দেখছিল । হঠাৎ প্রায় চিৎকার করে উঠলো – ‘দাদা, what a lovely name, পাদুকা । তোমার ছেলে হলে নাম রাখবো । ওঃ কি nice name হবে – পাদুকা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়’ । ঈশ্বর আমায় রক্ষা করেছেন । ঝুমি তার আগেই বিয়ে হয়ে অনেক দূরে পাড়ি দিয়েছে । আমিও চাকরিগত কারণে অন্য প্রদেশে । আমার সন্তানের নাম রাখার সুযোগ সে পায়নি । কিন্তু এখন দেখেশুনে মনে হয়, সুযোগটা পেলে মন্দ হোত না । দিন দিন ভাষার যা অবস্থা হচ্ছে, তাতে পিতৃদেবের খড়মটি বার বার চোখের ওপর ভেসে ওঠে বৈকি ।

0 comments: