ছোটগল্পঃ তাপসকিরণ রায়
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
চরণামৃত
তাপসকিরণ রায়
নারী জাতী স্বভাবত ভক্তিমতী হন। পুরুষেরা ভক্ত নন, এমনটা বলা যাবে না। তবে তাঁদের স্টাইল নাস্তিক বনে থাকা।
শিবের প্রতি স্ত্রী জাতি বড় আসক্ত। পতি-দেবকে না মানলেও তাঁরা শিবের সঙ্গে তুলনা করেন। শিবালয়ে স্ত্রীবর্গের জমায়েত বেশী হয়।
আমার স্ত্রীও বড় শিবভক্ত। প্রতি সোমবার শিবের মাথায় তাঁকে জল ঢালতেই হবে। ঘরের আসনের শিবের সেখানে মর্যাদা কম।
স্ত্রী শিবের মাথায় জল ঢালতে যান। সে জলের ধার থেকেই ঘট ভরে চরণামৃত নিয়ে আসেন। আর সে অমৃত আমায় গ্রহণ করতে হয়।
স্ত্রীর অনুযোগ, সঙ্গে তো যাবে না, অন্তত চরণামৃত তো ভক্তি ভরে নাও !
স্ত্রীর যুক্তি ফেলার মত নয়। জানি না, আমার মুখে অভক্তির ছাপ ফুটে ওঠে কেন !
স্ত্রী আমার কপালে মন্দিরের ফুল ঠেকান, চরণামৃত ঢেলে দেন আমার হাতে।
--কি হল প্রণাম না করে মুখে দিয়ে দিলে ?
তা ঠিক, তাড়াহুড়োয় প্রণাম করতেই বুঝি ভুলে গেছি। আমি কপালে হাত ঠেকাই।
ছোট মন্দির। স্ত্রী বলেন, মন্দির আবার ছোট বড়, ভক্তি হল আসল কথা।
কথা মন্দ নয়, সমর্থন যোগ্য। কলোনির মন্দির, তবে মন্দির কমিটির লোকরা দেখভাল ভালোভাবে করতে পারেন না। মাঝে মাঝে দেখা যায় মন্দিরদ্বার হাট হয়ে খোলা, আশপাশ জনশূন্য। স্ত্রীর কাছেই এ সব শোনা।
সেদিন স্ত্রী আমার হাতের তালাতে ঢেলে দিলেন চরণামৃত। আমি শিব ভক্তের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ভক্ত কম নই। নির্দ্বিধায় ভক্তি যোগে সে অমৃত ঢক করে ঢেলে দিলাম গলায়। কিন্তু ব্যাপারটা কি হল ? এ কেমন স্বাদের অমৃত রে বাবা ! এত চোনা ভাব, দুর্গন্ধযুক্ত কেন ?
--এটা কি খাওয়ালে তুমি ? এমন চোনা চোনা--থু থু—
আর থু থু, গলাধঃকরণ চিজ আর কোন ভাবেই গলা হয়ে ফিরে আসার নয়!
--তোমার সবটাতেই অভক্তি--স্ত্রী মন্তব্য করে উঠলেন।
শেষ পর্যন্ত রহস্যের উদ্ঘাটন হল। শিব মন্দিরের দরজা খোলা ছিল। আশপাশের কুকুর নন্দনেরা ঠ্যাং উঁচিয়ে বাবার মাথায় জল ঢেলে গেছেন। তার ওপরে স্ত্রী আমার জল ঢেলে কাছিয়ে কুছিয়ে আমার জন্যে নিয়ে এসে ছিলেন বাবার চরণামৃত !
Besh mojar lekha.
ReplyDelete