বিশেষ প্রবন্ধঃ কেয়া মুখোপাধ্যায়
Posted in বিশেষ প্রবন্ধ
বিশেষ প্রবন্ধ
নির্ভয় আকাশ আর আলোর খোঁজে
কেয়া মুখোপাধ্যায়
আরো একটা আন্তর্জাতিক নারীদিবস চলে গেল।
নারীর অধিকারের দাবিতে শুরু হওয়া এই সংগ্রামের বয়স দাঁড়ালো একশো পাঁচ। ১৯১১ তে জার্মান সোশালিস্ট দলের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে এর সূচনা। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে দাবি উঠল ৮ই মার্চ-কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেবার। উন্নয়ন, শান্তি ও সমতার ভিত্তিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার লক্ষ্য নিয়ে এই দিনটিকে স্বীকৃতি দিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। বিশ্ব নারী আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ১৯৭৫-৮৫ এর দশকটিকে আন্তর্জাতিক নারী দশক ঘোষণা করল। প্রথম স্বীকৃতির পর থেকে আজ পর্যন্ত নানা ‘থিম’ নিয়ে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালন করা হয়ে চলেছে। কখনো ক্ষুধা, দারিদ্র আর অশিক্ষার বিরুদ্ধে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি বা লিঙ্গসমতার দাবিতে আবার কখনো বা হিংসার বিরুদ্ধে লিঙ্গসমতার দাবিতে গোটা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আহ্বান।
১৯৯৫ সালে বেজিং-এ আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রকাশ করল নারী অধিকার সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্র। নারীদের বিশ্বব্যাপী অধিকারহীনতার কথাই আবারো স্পষ্ট হল সেই ঘোষণাপত্রে। তার প্রতিকার হিসেবে নানা কর্মসূচীও ঘোষিত হল। কিন্তু যখন ভাবতে বসি, গত একশো পাঁচ বছর-ব্যাপী এই সুদীর্ঘ মানবিক আন্দোলনের ফল কী হয়েছে বা কতটুকু করা গেছে, তখন সত্যি চমকে উঠতে হয়। অধিকারের দাবিতে এমন চূড়ান্ত ফলাফল-হীন দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন বোধহয় আর দ্বিতীয়টি নেই! একুশ শতকের প্রায় দেড় দশক পেরিয়ে গেলেও, আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক- সবদিকেই বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গায় মেয়েরা আজও তীব্র বৈষম্য আর নির্যাতনের শিকার। নারীর ক্ষমতায়নের কথা ঘোষিত হলেও তার বাস্তব রূপায়নে তেমন উদ্যোগী নয় অধিকাংশ দেশ। এবছর বেজিং-এর সেই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কুড়ি বছর পূর্তি। এই কুড়ি বছরে কিছু কাজ হলেও, এখনো অনেক পথ চলার বাকি। সেই পথও সুগম নয়, অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। সেই ফাঁকগুলোকে ভরাতে চেয়েই এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের থিম:
“Empowering Women, Empowering Humanity: Picture it!”
বলা হচ্ছে:
"Planet 50-50 by 2030. Step it up for Gender Equality"
অনেকে প্রশ্ন তোলেন, তথাকথিত আধুনিক আর প্রগতিশীল হয়েও বছরের মাত্র একটি দিনকে নারীদিবস হিসেবে চিহ্নিত করায় কিসের গৌরব! এই সংরক্ষণে তো একজন নারীর মধ্যে তীব্রভাবে বেঁচে থাকা ‘মানুষ’ সত্ত্বাটির চূড়ান্ত অবমাননা! নারীদিবস কি আজও প্রাসঙ্গিক? উত্তরে বলতে হয়, অবশ্যই! বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে নারী সমাজের বৃহত্তর অংশ আজও নির্যাতন, বঞ্চনা আর শোষণে বিপর্যস্ত। অধিকাংশ সমাজ ব্যবস্থা পুরুষ প্রধান। সামাজিক বিধিনিষেধই হোক কিংবা পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ- সবই পুরুষদের হাতে। তাই পরিবারের পুরুষ সদস্যের ওপরেই নির্ভর করে থাকতে হয় বেশিরভাগ নারীকে। এর ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, তবে তা সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে এতই অপ্রতুল যে তাকে গণ্য করা যায় না। অনেক সময়, মেয়ে-সন্তানের জন্ম দেওয়াটাই অপরাধ! যদি বা কষ্টেসৃষ্টে ভ্রূণ অবস্থায় আবর্জনায় নিক্ষিপ্ত হওয়ার থেকে বেঁচে যায়, তবু সে নেহাতই ‘মেয়ে’ একজন, মানুষ নয় মোটেই। কবিতা সিংহ লিখেছিলেন, ‘মেয়েদের মাথার বাইরের দিকটা নিয়েই সকলের আগ্রহ, মাথার ভিতরটা নিয়ে কারোর কোনও মাথাব্যথা নেই।’ ছোট্ট থেকে একটি মেয়েকে শেখানো হয় সাবধান হতে, বাইরে জুজু কি হুলো বসে আছে। অসাবধান হলেই ধরে নিয়ে যাবে। বলা হয়, ঘরেই সে নিরাপদ, বাইরে ভয়৷ সিমোন দি বুভ্যারের কথায়,
‘মেয়েরা নারী হয়ে জন্মায় না, তাদের নারী হিসাবে গড়ে তোলা হয়।’
নিরাপত্তার আশ্বাস তাকে কেউ দেয় না- না পরিবার, না সমাজ, না রাষ্ট্র!
রাষ্ট্রসঙ্ঘ বলছেন আর পনেরো বছরের মধ্যেই এ বিশ্বে সমতা আনার লক্ষ্যে, লিঙ্গবৈষম্য দূর করে নারী-পুরুষ ৫০-৫০ করতে পদক্ষেপ নিতে।
কিন্তু কী করে দূর হবে এই লিঙ্গবৈষম্য? আন্তর্জাতিক নারীদিবসের ঠিক চারদিন আগে এক ঘন্টার তথ্যচিত্রে সমাজের ভয়ঙ্কর এক বাস্তব উঠে এল যে! লেসলি উডউইন-এর তথ্যচিত্র “ইন্ডিয়া’জ ডটার” দেখিয়ে দিল আমাদের দেশে শুধু পুরুষই নারীকে ধর্ষণ করে না, সমাজও করে, উঠতে-বসতে। দেখিয়ে দিল, পুরুষদের সাত খুন মাফ। কিন্তু সন্ধ্যে নামার আগেই হাঁস-মুরগির খোয়াঁড়ে ফেরার মতই মেয়েদের ঢুকে পড়তে হবে অন্দরে। নাহলে ওই হাঁস-মুরগির মতই ‘অন্ধকারে’ হারিয়ে যাওয়াতে অস্বাভাবিক কিচ্ছু নেই।
ঘন্টাখানেকের ওই তথ্যচিত্রটা দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। চোখের সামনে ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১২-র ভয়ানক নৃশংসতার মুহূর্তগুলোর সাজেস্টিভ অভিনয় দেখা বা ‘নির্ভয়া’ জ্যোতি সিং-এর অসহায় বাবা-মা-র অনুভূতি শোনা বড় যন্ত্রণার। সেইসঙ্গে তীব্র ক্ষোভ আর ঘৃণা তৈরি হচ্ছিল মনে, যখন শুনছিলাম মেয়েদের উচিত-অনুচিত থেকে শুরু করে তার গোটা অস্তিত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছিলেন তথাকথিত কিছু ‘শিক্ষিত’ পুরুষ। সমাজের সামনে ধরা তথ্যচিত্রের এই আয়না দেখিয়ে দিল আমাদের চারপাশে মানুষের চেহারায় ঘুরে বেড়ায় কত বিকৃত মানসিক রোগী।
অনুতাপহীন, নির্বিকার মুখে ধর্ষক মুকেশ সিং বলেছে,
‘ধর্ষণে মেয়েদের দোষই বেশি’, ‘ভদ্রঘরের মেয়ে রাত নয়টার পরে বাড়ির বাইরে থাকে না' ‘ধর্ষণের সময় বাধা দিয়ে মেয়েটা ভুল করেছে', ‘ওর চুপচাপ থাকলে আমরা ‘কাজ সেরে’ওকে ফেলে রেখে চলে যেতাম’, ‘মেয়েটাকে ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিল বলে শরীরের ভেতর থেকে ছিঁড়ে বের করে আনা অন্ত্রের টুকরো কাপড়ে মুড়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল আমার ভাই’, ‘আমাদের যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তা হলে এর পর কেউ ধর্ষণ করলে মেয়েটাকে আর বাঁচিয়ে রাখবে না। একেবারে প্রাণে মেরে ফেলবে!’
আর আইনজীবীরা কী বললেন? আইনজীবী এ পি সিং বললেন,
“আমার মেয়ে বা বোন যদি বিয়ের আগে কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তা হলে তাকে আমার বাগানবাড়িতে নিয়ে গিয়ে সব আত্মীয়স্বজনের সামনে গায়ে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেব,” “সন্ধ্যে সাতটার পর মেয়েদের রাস্তায় বেরোনো উচিত নয়। খুব দরকারে বেরোলেও বাবা, কাকা কি জ্যাঠার মত আত্মীয়েরসঙ্গে। তা নাহলে ছেলেরা ভুল করলে কিছু বলা উচিত নয়!”
আইনজীবী এম এল শর্মা জানালেন,
“lady should not be put on road like food! ‘খাদ্য’ হিসেবে নারীদের রাস্তায় ছেড়ে দিলে তো পুরুষদের উত্তেজনা হবেই।”
ড্রাইভার মুকেশ কি ‘শিক্ষিত’ আইনজীবী সিং আর শর্মা তো একা নয়। অনেক পুরুষের, অনেক তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ পুরুষের মনে চেপে রাখা আসল কথাটা এরা বলে দিয়েছে। এটা দেখে ক’জন পুরুষ উপলব্ধি করবেন যে তাঁদের চিন্তাধারা ভুল, তা জানি না। তবে আশঙ্কা হয়- অনেকেই হয়তো এইসব বক্তব্যগুলোর সঙ্গে সহমত হবেন!
আর শুধু এঁরা কেন? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে অবলীলায় বলেছিলেন, ‘‘জনসংখ্যা বেড়েছে, ধর্ষণ তো বাড়বেই''৷ আমরা কি তা ভুলে গেছি? ভারতের পুলিশ মেয়েদের রাতে ঘর থেকে না বেরোনোর উপদেশ আর ‘শোভন' পোশাক পরার পরামর্শ দিয়েছেন- তা-ও কি মনে নেই আমাদের? মনে নেই কি পুরুষ-মনে পরিবর্তন আনতে চেয়ে নরেন্দ্র মোদীকে স্বাধীনতা দিবসে বলতে হয়েছিল,
‘‘মেয়েদের বাইরে যেতে বাধা দেওয়ার বদলে বাবা-মায়েদের উচিত নিজেদের ছেলেদের উপর নজর রাখা৷”
স্বাধীন একটি দেশে মেয়েদের অবস্থা বুঝতে তারপরও কি আর কিছু বাকি থাকে?
২০১২-র ১৬ই ডিসেম্বরে দিল্লি গণধর্ষণের পরে দিল্লি আর দেশের অন্যান্য শহর দেখেছিল এক অভূতপূর্ব জনজাগরণ। দেশ জুড়ে সেই আন্দোলনকে জিইয়ে রেখে নারীসুরক্ষার দাবির পাশাপাশি ধর্ষক ও নারী-অত্যাচারীর কড়া শাস্তির দাবি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রকে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০১৪-র ২০শে সেপ্টেম্বর আমরা দেখেছি আমাদের ছাত্রদের জাগরণ। যাদবপুরে নির্যাতিত মেয়েটির পাশে দাঁড়াল শুধু কলকাতা শহর নয়, সারা দেশের ছাত্ররা। আবার এটাও বাস্তব যে নির্ভয়ার নৃশংস ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের প্রবল চাপেও কামদুনির অপরাজিতা বা মধ্যমগ্রামের কিশোরীর বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারটুকু রক্ষা পায়নি৷ ধর্ষণের শিকার হয়ে ‘অপরাধ’ করেছিল মধ্যমগ্রামের কিশোরীটি৷ বাড়িওয়ালা নির্দেশ দিয়েছিল তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে, ওই ‘অপরাধ’-এর পরে আর তাকে পাড়ায় থাকতে দেওয়া যায় না৷ তাই আগুনে পুড়তে পুড়তে সে বলেছিল,
‘মা আর বাঁচতে চাই না৷ তুমিও পুড়ে মরে যাও৷ তুমিও তো মেয়ে!’
এ কোথায়, কোন সমাজে আছি আমরা?
প্রশ্নটা সহজ, উত্তরটাও জানা। এ সেই সমাজ, যেখানে কোন নারী ধর্ষণের অভিযোগ জানালে তার কথার যাবতীয় সত্যতা প্রমাণের দায় একমাত্র সেই নারীর ওপরেই বর্তায় (যদিও সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান এর বিপরীত বিন্দুতে)। সেই সমাজ, যেখানে খুব সহজে কেবল নারীটিকেই ‘খারাপ’ কিংবা ‘নষ্ট’ বিশেষণে দেগে দেওয়া যায়! এ সেই সমাজ, যেখানে ধর্ষকের চরমতম অপরাধও বড় সহজে পাল্টে গিয়ে হয়ে দাঁড়ায় ধর্ষিতার লজ্জা! সেই সমাজ, যেখানে শুধু পুরুষরাই নন, অনেক নারীও
ধর্ষিতার পেশা, জীবনযাত্রার ধরণ, পোশাক-আশাক-এর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ইত্যাদি করে থাকেন সোৎসাহে আর শেষ অবধি ধর্ষিতা নারীটিকেই অনায়াসে দোষী সাব্যস্ত করেন। যশোধরা রায়চৌধুরি-র একটি কবিতা সেই সমাজের আয়না হয়ে উঠেছে:
“‘যাই বল, ওটা তুমি একটুও কি এনজয় করোনি?'
এরকমই ভাবে ওরা, পুরুষেরা। অথবা নারীরা?
‘যাক বাবা বেঁচে গেছি, তাছাড়া যে সেজেগুজে তুমি
বিদঘুটে পোষাক পরে চরতে গেছ আদাড়ে বাদাড়ে
কামকুক্কুরী হবে, নইলে কেউ পড়ে ঐসব
লোকের পাল্লায়? ছি ছি! পারছি না কী বেহায়া ভাবতেই!’
-------
হে ধর্ষিতা, তুমি জান, শরীর কোথায় শেষ হয়
কোথা থেকে শুরু হয় অদ্ভুত, দ্বিতীয় অপমান...”
এই সমাজকে পাল্টাতে হবে। শুধু প্রতিবাদী মিছিল আর মোমবাতির শোক-জ্ঞাপন নয়, আরো বড় আর নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বোধ আর চেতনা-সম্পন্ন প্রতিটি সাধারণ মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নারী-হিংসার বিরুদ্ধে, সমাজের সর্বস্তরে মেয়েদের সার্বিক অসম্মানের বিরুদ্ধে একটা অরাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা বড় দরকার এখন। আমরা যে দেবী-র পুজো করি অনেক বাহুল্যে আর আড়ম্বরে, তিনি নারী, পুরাণমতে আদি শক্তি। অথচ সেই দেবীর প্রতিমূর্তি নারীদের শ্রদ্ধা করতে পারি না। তাই লড়াইটা নিজের সঙ্গেও বটে। সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। সেইসঙ্গে ঘরে নারীর অবহেলা আর বাইরে নারীর লাঞ্ছনার নিদারুণ অবস্থাটা পাল্টাতে গেলে নারীদেরও নিজেদের অন্তরের শক্তি উপলব্ধি করতে হবে। নিজেদের অধিকার আর মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে হবে, শিক্ষিত আর স্বাবলম্বী হতে হবে। এটা ১৪২১। আজ থেকে অনেক বছর আগে, ১৩৩৩-র প্রবাসী পত্রিকার এক সংখ্যায় লেখা হয়েছিল-
‘আত্মরক্ষার সামর্থ্য থাকা নারীদের রক্ষণের সর্বোৎকৃষ্ট ও একান্ত আবশ্যক উপায়।’
পুতুলের মতো জীবনযাপন করলে বিদ্যা-বুদ্ধির ঘাটতি এবং শারীরিক অক্ষমতা আমাদের গ্রাস করবে৷ ‘নারী’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন-
“মেয়েদের জীবনে আজ সকল দিক থেকেই স্বতই তার তটের সীমা দূরে চলে যাচ্ছে। নদী উঠছে মহানদী হয়ে।...কালের প্রভাবে মেয়েদের জীবনের ক্ষেত্র এই-যে স্বতই প্রসারিত হয়ে চলেছে, এই-যে মুক্তসংসারের জগতে মেয়েরা আপনিই এসে পড়ছে, এতে করে আত্মরক্ষা এবং আত্মসম্মানের জন্যে তাদের বিশেষ করে বুদ্ধির চর্চা, বিদ্যার চর্চা, একান্ত আবশ্যক হয়ে উঠল।”
আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক আর জরুরি কথাগুলো!
আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার ভারতে আর সেইসঙ্গে গোটা বিশ্বজুড়ে একটা যুদ্ধ চলছে। নারীহিংসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। দেশ আর সমাজ নারীর প্রাপ্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে না পারলে এ যুদ্ধের বিরাম নেই। এই যুদ্ধটা জিততেই হবে। কথায় কথায় আমরা নিজেদেরকে বড় বড় তকমা দিই- আমরা প্রগতিশীল, আমরা সংবেদনশীল। সেটা অন্তত একবার সত্যি করার চেষ্টা করি! চলুন না, আন্তর্জাতিক নারীদিবসে নারীর প্রাপ্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার শপথ করি সবাই মিলে! ঘরের মেয়েটিকে খুঁজে দিই নির্ভয় আকাশ আর নিশ্চিন্ত আলোটুকু!
0 comments: