0

প্রচ্ছদ নিবন্ধ - রঞ্জন রায়

Posted in









 
[ইতিমধ্যে আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। আমরা স্পেন ও ইতালিকে পেছনে ফেলে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে, যদিও মৃত্যুহার (২.৭%) ক্রমশঃ কমছে এবং ‘আক্রান্তের সংখ্যা দু’গুণ’ও হবার পিরিয়ড ক্রমশঃ দীর্ঘ (এখন ২৩ দিন) হয়ে চলেছে। শেষ কিস্তিতে আমরা সংক্ষেপে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব সরকারের আর্থিক নীতির ফলে করোনা পরবর্তী ভারতের বদলে যাওয়া ছবিটা কেমন হবে।] 
লকডাউন-৫ বা লকওপেনের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর গত একবছরের খতিয়ান দিতে গিয়ে কোনও অর্থনৈতিক সাফল্য বা নতুন কোনও যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা শোনাতে পারেননি; বিশেষ যে উপলব্ধির কথা বলেছেন সেগুলি—ধারা ৩৭০, তিন তালাক, রামমন্দির ও সি এ এ—বাস্তবে বিজেপির ইলেকশন ম্যানিফেস্টো এবং রাজনৈতিক এজেন্ডার অঙ্গ, কিন্তু দেশের আম জনতার আর্থিক কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কহীন। 
তবে গত ১৭ই মে “আত্মনির্ভর ভারত” বা রিলিফ-২ এর শেষদিনের প্রেজেন্টেশনে নির্মলা সীতারমন শিল্প এবং কৃষি নীতিতে যে ‘রিফর্ম’ বা পরিবর্তনের কথা বলেছেন, তা তাক লাগিয়ে দেবার মতন বটে। 
দেশের অর্থনীতি ক্রমশঃ বাজারের হাতে? 
শিল্পক্ষেত্রে আগে যেগুলো কেবল সরকারি বিনিয়োগের জন্যে নির্ধারিত ছিল, তার প্রায় সবই প্রাইভেট সেক্টরের—দেশি এবং বিদেশি-- বিনিয়োগের জন্য হাট করে খুলে দেওয়া হলো। যেমন সবরকম অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রী; যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ; এটমিক এনার্জি; রেল পরিবহন; খনিজ তেল; কয়লা, লোহা, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, সোনা, হীরে, ইত্যাদি খনি থেকে তোলা, ইত্যাদি। 
এয়ার ইন্ডিয়াকে বেচতে পারলে নাগরিক উড্ডয়ন পুরোটাই প্রাইভেট হবে। বীমাতে প্রাইভেট কোম্পানি ক্রমশঃ জাঁকিয়ে বসছে। পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলোর গঙ্গাযাত্রা কেবল সময়ের অপেক্ষা। বলা হচ্ছে সরকারের কাজ দেশ চালানো, ব্যবসা করা নয়। 
কৃষিক্ষেত্রে ফসল সরকারি মণ্ডিতে বেচার কোনও বাধ্যবাধকতা রইল না। যেকোন রাজ্যের কৃষক তার ফসল দেশের যে কোনও জায়গায় খোলা বাজারে বেচতে পারে। এছাড়া জোর পড়বে কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং বা নীলচাষের মতন আগে প্রাইভেট কোম্পানির থেকে দাদন নিয়ে নিজের জমিতে কোম্পানির মর্জিমতো ফসল ফলানো। 
কিন্তু কিরণ বিসসা- সহ আহ্বায়ক, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর সাস্টেনেবল এগ্রিকালচার, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, এসেনশিয়াল অ্যাক্টে যা সংশোধন হয়েছে, তাতে ব্যাপক কৃষকের বদলে ধনী কৃষক এবং কৃষি পণ্যের বড় কোম্পানিগুলোকে খুশি করা হয়েছে। 
লঘু এবং সীমান্ত কৃষকের ফসল গূদামে রাখার ধরে রাখার ক্ষমতাই নেই, ওদের পেটের দায়ে চটপট ফসল কম দামে বেচে দিতে হয়। ওরা কী করে এই আইনের সুবিধে পাবে? 
আর গতবছর থেকে কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যে বছরে ৬০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে তাতে বাদ পড়ছেন ভুমিহীন ও খেতমজুরেরা; কারণ যোজনায় কৃষক বলতে বোঝানো হয়েছে শুধু যাদের জমি আছে। 
এদিকে রিজার্ভ ব্যাংকের ছ’সদস্যীয় মনিটারি পলিসি কমিটি্র (এমপিসি) গত ২০-২২ মে তারিখের বৈঠকে দেশের অর্থনীতিতে করোনা সম্পর্কিত লকডাউনের প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানান যে ম্যাক্রো ইকনমির তিনটে প্রধান প্যারামিটার বাজারে চাহিদা, ব্যক্তিগত উপভোগ এবং শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের আর্থিক বিনিয়োগ মার খেয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ বৃদ্ধি বলার মতো নয়। তবে কৃষির সাফল্যে ভর করে ইকনমি আগামী বছরে ঘুরে দাঁড়াবে এটাই আশা। 
(অথচ জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৭%! তবে জনসংখ্যার প্রায় ৪৮% লোক কৃষিনির্ভর।) 
আবার ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রত পাত্র মনে করেন-আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি এত গভীর যে, সারতে কত বছর লাগবে বলা কঠিন। 
রিজার্ভ ব্যাংকের মনিটারি পলিসি কমিটি্র(এমপিসি) কাজটা কী? 
এরা নিয়মিত দেশের অর্থনীতিতে টাকার যোগান এবং চাহিদার হিসেব কষে কতটা টাকা বাজারে থাকা উচিত, সেটা ঠিক করে। রিজার্ভ ব্যাংক সেই পরামর্শ অনুযায়ী মন্দার সময় আর্থিক ব্যবস্থায় টাকার যোগান বাড়ায়—ব্যাংকের বন্ড আদি সিকিউরিটি পেপার কিনে বা কম দরে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়ে, যাতে ব্যাংক কম সুদে বাজারে টাকা ধার দিতে পারে। আবার মুদ্রাস্ফীতির সময় বাজারে টাকার যোগান কমায়—ব্যাংককে সরকারি বন্ড বিক্রি করে এবং ব্যাংককে ধার দেবার সুদের হার বাড়িয়ে, যাতে ব্যাংকের কাছে শস্তায় লোন দেবার মতো টাকা না থাকে। 
আপনা হাত, জগন্নাথ? 
কিন্তু অক্টোবর ২০১৮তে রিজার্ভ ব্যাংকের স্বাধিকার বা অটোনমি প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায়। স্বাধীনতার পর প্রথম বার কেন্দ্রীয় সরকার রিজার্ভ ব্যাংক অ্যাক্টের ধারা ৭(১)এর অধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের রাজকোষের চাপ কমাতে রিজার্ভ ব্যাংকের ৭০ বছরে আয় থেকে সঞ্চিত জমা রাশি নিয়ে্‌ নেবার জন্যে চাপ সৃষ্টি করে। তাতে তৎকালীন গভর্নর উর্জিত প্যাটেল পদত্যাগ করেন। ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য রিজার্ভ ব্যাংকের স্বায়ত্ত রক্ষার পক্ষে তিক্ত বক্তব্য রাখেন। তারপর বিরল আচার্যকেও পদত্যাগ করতে হয় এবং নিয়ম বদলে রিজার্ভ ব্যাংকের বোর্ড অফ ডায়রেক্টর্সে সরকারের প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়ানো হয়, ফলে বাজারে টাকার যোগানের সংকোচন বা প্রসারণের প্রশ্নে রিজার্ভ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে কোনও মতভেদ বা বিতর্কের সম্ভাবনাই থাকে না। অবশেষে ২৭ অগাস্ট, ২০১৯ তারিখে রিজার্ভ ব্যাংক নিজেদের রিজার্ভ থেকে ১,৭৬,০৫১ কোটি টাকা বা ১.৭৬ ট্রিলিয়ন টাকা কেন্দ্রীয় সরকারকে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে আর্থিক মন্দা এবং ক্রমাগত কমতে থাকা ট্যাক্স আদায়ের ফলে সরকারের রাজকোষে যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল, তা অনেকটা কমে যায়। অর্থনীতিবিদেরা আশা করেছিলেন এর ফলে সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ নির্মাণ ও কৃষক এবং ছোট বিজনেস এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে কিছু রিলিফ দেবে যাতে বাজারে কেনাকাটা বাড়ে। 
গরীবী হটাও 
ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দল মনে করে দারিদ্র্য দূর হওয়া উচিত এবং এতে সরকারের ভূমিকা আছে। কিন্তু কাকে গরীব বলব, গরীবী রেখার দাঁড়ি কোথায় টানা হবে, সে নিয়ে বিস্তর মতভেদ। তেন্দুলকার কমিটির মতে, এই লাইনটি হলো ব্যক্তিপ্রতি দৈনিক খরচ ২৭ টাকা। 
২০০৯ সালে তেন্দুলকর কমিটি মনে করেন, এখন জনসংখ্যার ২২% দারিদ্র্য রেখার নীচে বাস করে। তবে রঙ্গরাজন কমিটির(২০১২) মতে এই সংখ্যাটি ৩০%। ইউনাইটেড নেশন্স ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টের মতে ২০০৫-৬ থেকে ২০১৫-১৬র মধ্যে ২৭১ মিলিয়ন ভারতীয় গরীবী রেখার উপরে উঠেছে। কিন্তু নভেম্বর ৮, ২০১৬ থেকে উলটো গঙ্গা বইছে। নোটবন্দী এবং জিএসটির জটিলতা ও ডিজিটাল বাধ্যবাধকতার ফলে মার খেল ইনফর্মাল ইকনমি। জিডিপি দ্রুত নিম্নগামী। শেষে করোনার প্রকোপে গত মার্চে এলো চারঘন্টার নোটিসে লকডাউন—কাজ হারিয়েছে কত লোক? বিভিন্ন মতে প্রায় ৫০ থেকে ১২০ মিলিয়ন লোক। এদের উপর নির্ভরশীল পরিবার দ্রুত গরীবী রেখার নীচে নেমে যাচ্ছে। এরা জিরো-ইনকাম গ্রুপ থেকে কবে লোয়ার ইনকাম গ্রুপে ফিরবে আন্দাজ করা কঠিন। 
অভিজিত ব্যানার্জি এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাম্প্রতিক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে বলেন যে, ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং চীন থেকে কাজ ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন্স বা বাংলাদেশে চলে গেছে বলে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। ভারতের আর্থিক কাঠামো, টেকনোলজি, আঁতেপ্রেনারের সাইজ –সবই ওদের তুলনায় বেশি। যদি একবছরে জিডিপি বৃদ্ধির দর ৬% বা ৭% পৌঁছে যায় তাহলেই কাজ হারানো মানুষেরা অনেকেই কাজ ফিরে পাবে। কিন্তু সবই নির্ভর করছে সরকারের সঠিক নীতি নির্ধারণের উপর। 
অধিকাংশ খেটে খাওয়া মানুষের বর্তমান সংকটের আশু সমাধান হিসেবে ওঁর নোট ছাপানোর যুক্তিকে সমর্থন করে উনি আরও বলেন যে গোটা বিশ্বে সবাই এই পথ নিয়েছে—আমেরিকা, বৃটেন, জার্মানি, জাপান সবাই। ভারত কেন শুধুমুদু উলটো পথে হাঁটবে? 
সরকার রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে নতুন করে টাকা ছাপাবে কি না? 
তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় রিলিফ প্যাকেজ (২০ ট্রিলিয়ন) ঘোষণার আগে জানিয়েছিলেন যে, করোনা-জনিত রিলিফ ইত্যাদির ফলে রাজকোষ ঘাটতি বাজেটের সময় বলা ৩% এর জায়গায় ৫% হবে; অর্থাৎ ৭.৮ লক্ষকোটির বদলে ১২ ট্রিলিয়ন টাকা ধার করতে হবে। কিন্তু রিলিফ ঘোষণার সময় বাড়তি টাকা কোত্থেকে আসবে, সেই প্রশ্ন উনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। 


সরকার যদি এই টাকাটা তুলতে বাজারে বন্ড বিক্রি করে তাহলে প্রাইভেট সেক্টরের ধার নেওয়ার জন্যে উপলব্ধ টাকা কমবে, ফলে বাজারে সুদের হার বাড়বে। কিন্তু তা না করে সোজা রিজার্ভ ব্যাংকে ট্রেজারি বিল (বিনা সুদের অল্পকালীন বন্ড) জমা রেখে নোট ছাপিয়ে নিলে বাজারে সুদের হারে কোন প্রভাব পড়বে না, তাই মনে হচ্ছিল নোট ছাপানো হবে। 


কর্পোরেট দুনিয়া কী ভাবছে? 


কোটক মহীন্দ্র ব্যাংকের কর্ণধার এবং কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সি আই আই)এর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান উদয় কোটক প্রধানমন্ত্রীর “আত্মনির্ভর ভারত” যোজনার প্রতি আস্থাশীল। ওঁর মতে লকডাউন খুলে দেওয়ায় মানুষের দুমাসের চেপে রাখা খরচ করার স্পৃহা বাজারে ডিমান্ড বাড়িয়ে দেবে। মদের দোকানে ভিড় তারই ইঙ্গিত বলে উনি মনে করেন। তাই সরকার এখন সাপ্লাই সাইড বা শিল্পব্যবসায়কে টাকা যোগানোর বন্দোবস্ত করে সঠিক নির্ণয় নিয়েছে। উনি মনে করেন আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ দরকার হেলথকেয়ার ও শিক্ষায়। 
তবে আর এক ইন্টারভিউয়ে উনি জানিয়েছেন যে, নোট ছাপানোর বদলে রিজার্ভ ব্যাংক যে ‘ওপেন মার্কেট অপারেশন’ (অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর জমা সরকারি বন্ড কিনে নিয়ে ওদের টাকার যোগান বাড়িয়ে দেওয়া) করছে, সেটাই ঠিক। 
বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর মতে আশু দরকার হলো প্রতি মাসে ১০০০০ টাকা করে গরীবদের হাতে দেয়া এবং এমএস এমইর জন্যে নগদভিত্তিক রিভাইভাল প্যাকেজ। 


‘আত্মনির্ভর ভারত’ ও চীনের মাল বয়কট? 


লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের সৈনিকদের হাতাহাতি খুব বেশি দূর গড়ায়নি। দু’পক্ষেই উচ্চস্তরের আলোচনার মধ্যে দিয়ে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার এবং টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে একটা আহ্বান ছড়িয়ে পড়ছে—চীনের মাল বয়কট কর; ভোক্যাল ফর লোক্যাল হও এবং এভাবেই ভারত “আত্মনির্ভর” হবে। 
মজার ব্যাপার হলো ভারতের চীন থেকে আমদানি ২০১৪ সালে ১২ বিলিয়ন ডলার ছিল, কিন্তু মোদীজির সময় মাত্র পাঁচ বছরে বেড়ে গিয়ে ২০১৮-১৯শে ৭০.৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে—যাতে ভারতের রপ্তানি ১৬.৮ বিলিয়ন ডলার এবং চীন থেকে আমদানি ৭০.৩ বিলিয়ন ডলার। মানে চীনের পাওনা ৫৩.৫ বিলিয়ন ডলার। 
বর্তমান ভারতে অধিকাংশ মোবাইল যেমন রেডমি, অপ্পো, ভিভো, সব চীনের। গত দু’বছরে ভারতে স্টার্ট আপে চীনের প্রাইভেট বিনিয়োগ বেড়ে ২ ট্রিলিয়ন টাকা হয়েছে। ভারতে ৩০ টি বড় স্টার্ট আপের মধ্যে ১৮টি স্টার্ট আপে চীনের প্রাইভেট বিনিয়োগ রয়েছে। ওলা, হাইক, বিগ বাস্কেট, ওওয়াইও, পেটেম (নোটবন্দীর সময় প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞাপন), স্ন্যাপডীল, জোম্যাটো, বোইজু, টিকটক-- সবেতেই চীনের বিনিয়োগ। 


ভারতের কিছু কোম্পানিও চীনে বিনিয়োগ করেছে। 


কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি্র দু’বছর আগের একটি স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী চীনে ৫৪টি ভারতীয় কোম্পানি ম্যানুফ্যাকচারিং, হেলথকেয়ার এবং ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে যুক্ত রয়েছে। 
চীনে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কয়লা এবং বিদ্যুৎ সাপ্লাইয়ে আদানি গ্লোবাল (সিঙ্গাপুরে অফিস, ডঃ রেড্ডিজ ল্যাব, জিন্দাল স্টিল এন্ড পাওয়ার, বিইএম এল, বি এইচ এম এল, অরোবিন্দো ফার্মা এবং মহীন্দ্র এন্ড মহীন্দ্র। 
অনেকের মতে এই বয়কটের আহ্বান খুব একটা ফলপ্রসু হবে না। কারণ সরকারি বাণিজ্য ছাড়াও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রোগ্রামে ভারতে তৈরি বহু উৎপাদনে ব্যবহৃত মেশিন বা তার যন্ত্রাংশ, কেমিক্যালস সব চীন থেকে আসে। এছাড়া অনেক স্টার্ট আপে চীনের আলিবাবা ইত্যাদির বিনিয়োগ রয়েছে। কাজেই কাকে চীনে মাল বলা হবে এটাও একটি বিতর্কিত প্রশ্ন। 
এমনকি, সর্দার প্যাটেলের স্ট্যাচুর বাইরের ব্রোঞ্জের আবরণের প্লেটগুলো পর্য্যন্ত চীনের সিয়াংসি টংকিং কোম্পানিতে ঢালাই হয়ে এসেছে। 
এছাড়া ভারতে চীনের রফতানি ৭৫ বিলিয়ন ডলার ওদের সমগ্র রফতানির ৩%। কিন্তু চীনে ভারতের রফতানি ১৭ বিলিয়ন ডলার যা কিনা দেশের সমগ্র রফতানির ৫.৩%। কাজেই দু’দেশের বাণিজ্য মার খেলে ভারতের লোকসান বেশি। 
কিন্তু কিছু ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন ১০ জুন থেকে দেশ জুড়ে চীনামাল আমদানি বন্ধ করার ডাক দিয়েছে। 






খাব খাব, কোথায় পাব? ধার কর না! শুধবে কে? লবডংকা! 


অর্থশাস্ত্র নামের বিদ্যাটির জন্মের, অর্থাৎ অ্যাডাম স্মিথ-এর সময়ে সরকার বাজারে বন্ড ছেড়ে ঋণ করত মূলতঃ যুদ্ধবিগ্রহের খরচা মেটাতে। অভিজাত এবং সম্পন্ন বর্গের লোকজন সেটা কিনতেন কারণ তাতে সুদের হার চড়া ছিল। ওদের যুক্তি ছিল সরকার এভাবে ঋণ করলে দেশের কোন ক্ষতি নেই। ধার দিচ্ছে দেশের কিছু লোক, নিচ্ছে এবং খরচ করছে ও সুদ দিচ্ছে দেশের সরকার। ‘এক হাত থেকে আরেক হাতে যাচ্ছে-দেশের বাইরে তো যাচ্ছে না’! 
অ্যাডাম স্মিথ তাঁর ম্যাগনাম ওপাস ‘ওয়েলথ অফ নেশন্স’ (১৭৭৬) এর দ্বিতীয় ভল্যুমে এই লাইনের যুক্তির কড়া সমালোচনা করেছেন—মূলতঃ দুটো দিক থেকে। 
এক, এটা নৈতিকভাবে অনুচিত। কারণ এতে দেশের সম্পত্তি শান্তিপূর্ণ উৎপাদক কাজ থেকে সরে যুদ্ধের জন্যে খরচ হয়। এর পরিশোধ হয় আগামী দিনে দীর্ঘসময় ধরে। এভাবে অর্থনীতি ‘বিকৃত’ হয়। 
দুই, এছাড়া সরকারী ঋণ দেশের সম্পত্তির মালিকানা “উৎপাদক শ্রেণী”র হাত থেকে নিয়ে “ বসে বসে খাওয়া” শ্রেণীর হাতে চালান করে এবং মিলিটারি এই টাকায় যুদ্ধে নামে, পরিণামে জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট হয়। 
মার্ক্স এবং উনিশ শতকের প্রায় সব সমাজবাদীরাই ধার করে দেশ চালানোর বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁদের চোখে এটা ব্যক্তি-পুঁজির আধিপত্য জমানোর একটা কল মাত্র। মার্ক্স তাঁর “ক্লাস স্ট্রাগল ইন ফ্রান্স” – ১৮৪৯-৫০ সালে লেখা—বইয়ে সরকারি বন্ডের ওপর ভূস্বামীদের পাওনা মেটাতে নেপোলিয়নের বিত্তমন্ত্রীর হঠাৎ করে মদের উপর ট্যাক্স বাড়ানোর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। 
মজার ব্যাপার হলো বৃটেনের সরকারি ঋণ ১৭৭০ সালে জাতীয় আয়ের ১০০% প্রতিশত এবং ১৮১০ সাল নাগাদ ২০০% ছুঁয়েছিল। এবং বৃটেন এই ধার একশ’ বছর ধরে শোধ করেছিল, বেশির ভাগ সময় শুধু সুদ দিয়ে। ফলে উচ্চবর্গের কাছে খামোকা সরকারকে ট্যাক্স দেওয়ার বদলে ধার দিয়ে সুদ কামানো অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল। 
কিন্তু দেড়শ বছর পরে কি ইকনমিস্টদের চিন্তা বদলে গেছে? নইলে হরদম ফিসক্যাল ডেফিসিট কড়া হাতে সামলানো নিয়ে এত উপদেশের পাশাপাশি ডেফিসিট ফাইনান্স বা সরকারের ধার করে খরচ করা নিয়ে এত বিতর্ক কেন? 
এ নিয়ে এই শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি কী বলছেন শুনুন। 
“ বিংশ শতাব্দীতে পাবলিক ডেট বা সরকারের ঋণ নিয়ে একেবারে অন্যরকম কথা শোনা যেতে লাগল। মনে করা হলো যে, এই ঋণ নীতিগতভাবে সরকারের উন্নয়নমূলক ব্যয় বাড়িয়ে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশের পক্ষে দেশের সম্পত্তি পুনর্বণ্টনে সহায়ক হতে পারে”। 
উনি আরও বলছেন যে, এই দুটো দৃষ্টিকোণের মধ্যে ফারাক বেশ সরল ও স্পষ্ট। উনবিংশ শতাব্দীতে উত্তমর্ণদের (উচ্চবর্গ এবং ভূস্বামী) থেকে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দেবার সময় রাষ্ট্র(খাতক) সুদে-আসলে ভাল করে পুষিয়ে দিত। ফলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ফুলে ফেঁপে উঠত। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে মুদ্রাস্ফীতির (ইনফ্লেশন) ঘায়ে ধার নেওয়া টাকার মূল্য কমে যেত, এবং ফেরত দেওয়া হত মূল্য কমে যাওয়া টাকায়। এভাবে রাষ্ট্র বাজেটের ঘাটতি হলে নতুন কর না বসিয়ে উত্তমর্ণদের টাকায় ঘাটতি পূরণ করে দেশ চালাতে শুরু করল। 


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালোবাজারি ইত্যাদিঃ 


পিকেটি দেখিয়েছেন যে মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে সম্পত্তির পুনর্বন্টন সমাজের একটা ছোট অংশের জন্যেই খাটে। 
আমরা কোলকাতা এবং বঙ্গে বিশ্বযুদ্ধের সময় দুটো জিনিস দেখেছি। 
এক, বিয়াল্লিশের ভয়ংকর মন্বন্তর। চাল বৃটিশ ফৌজের জন্যে বাজেয়াপ্ত হচ্ছে এবং মজুতদাররা লুকিয়ে ফেলে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছে। ফলে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ এবং অনাহারে মৃত্যু। 
দুই, একশ্রেণীর মানুষেরা যুদ্ধের আবশ্যকীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ এবং কালোবাজারি করে রাতারাতি ছিরু পাল থেকে শ্রীহরি ঘোষ হয়ে যাচ্ছে। এরা সম্পত্তি কিনছে ভবানীপুর, বালিগঞ্জ এবং ঢাকুরিয়ার রেললাইনের এপারে। আর এই কালোবাজারি দেশের অর্থনীতিকে খানিকটা চালু রাখে বটে! 


ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং- ভাল না মন্দ? 


এখানে দুইখান কথা আছে। আমেরিকা ইউরোপের মত উন্নত অর্থনীতিতে সাধারণতঃ ইকনমির অন্তর্নিহিত শক্তির প্রায় পূর্ণ দোহন হতে থাকে। তখন বাজারে অতিরিক্ত পয়সা এলে উৎপাদন বা শ্রমশক্তির নিয়োগে বিশেষ তফাত হয় না। তাই বাড়তি টাকা বাজারে পণ্যের দাম দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিকে বলে ‘টু মাচ মানি চেজিং টু ফিউ গুডস’। 
কিন্তু ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের লোকজনের আয় কম, জমাপুঁজি কম, জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বেকার বা ছদ্ম-বেকার, মানে নাম-কে-ওয়াস্তে কিছু একটা করছে। ফলে বাজারে জিনিসের যোগান বাড়লে বা নতুন পণ্য এলেই যে সাততাড়াতাড়ি বিক্রি হবে সে সম্ভাবনা কম। তাই ইন্ডাস্ট্রিও “ফুল ক্যাপাসিটি”তে উৎপাদন করেনা। মহাগুরু কেইন্সের মতে এইসময়, বিশেষ করে মন্দার সময়, সরকার এগিয়ে এসে লোকের হাতে বেকার ভাতা দিলে বা রাস্তা হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ কাজের মাইনে হিসেবে নগদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করলে লোকে বাজারে ভোগ্যপণ্য কিনতে আসবে, ক্রমশঃ বাজার আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াবে। 
যেটা দরকার হিসেব করে ধার নিয়ে নোট ছাপানো এবং প্ল্যান করে কয়েকবছরের মধ্যে সেই ধার চুকিয়ে ফেলা। এভাবে এই ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্যে বিকাশের সহায়ক হবে, লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতির পথে হাঁটবে না। 
আগামী দিনের জীবিকার রূপঃ 
অর্থনীতি কেবল শুকনো টাকাকড়ির হিসেব নয়, কোন বিমূর্ত ছবি বা রকেট সায়েন্স নয়, এটি একটি সামাজিক বিজ্ঞান। তাই এতে প্রতিফলিত হয় আমাদের জীবনশৈলী এবং সংস্কৃতি ও তার বিবর্তন। মনে হচ্ছে জুনের শেষে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে এবং জুলাইয়ের শেষে ১০ লক্ষ। 
এর আতংক এবং বাধ্যবাধকতা আমাদের জীবিকা ও জীবনশৈলীতে কী ধরণের পরিবর্তন আনবে আজ সেটা আন্দাজ করা কঠিন। তবু কয়েকটা কথা বলাই যায়। যেমন কেনাকাটিতে নগদে লেনদেন কমে ক্রমশঃ ডিজিটাল হবে। অনেকগুলো ব্যবসায় এবং ইন্ডাস্ট্রিতে “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” হবে ‘নিও-নর্মাল’। স্কুলকলেজের পড়াশুনোতেও এর ছাপ পড়বে। কিন্তু এর জন্যে দরকার উন্নত স্কিল-সেট যা ব্যয়সাধ্য। ফলে গাঁ এবং ছোট শহরের খেটে খাওয়া পরিবারের নতুন প্রজন্ম হয়তো পিছিয়ে পড়বে এবং কম আয়ের কাজে আটকে থাকবে। 
লকডাউন শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে মার খেয়েছে খেলাধূলো, বিনোদন শিল্প এবং ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ব্যবসায়। 
‘সামাজিক দুরত্ব’ বজায় রাখতে গিয়ে নতুন খোলা রেস্তোরাঁতে টেবিল সাজানো হচ্ছে ফাঁক রেখে, গ্রাহক বসছে পাশাপাশি নয়, মুখোমুখি। এতে ব্যবসায়ের টার্ন ওভারে বিরাট লস। মনে হয় যতদিন না করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে এবং তা আমজনতার হাতে পৌঁছচ্চে ততদিন এভাবেই চালাতে হবে। 


খেলাধূলো 


সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মুখে মুখোস এঁটে কোন খেলাটি খেলা যায়? দাবা। টেনিস? ফুটবল? ক্রিকেট? আইসিএল? কুস্তি-বক্সিং—সাঁতার? 
তবে বার্সিলোনা রিয়েল মাদ্রিদের সঙ্গে মাঠে নামছে, মেসি ট্রেনিং করছেন; দেখা যাক। 


নাটক-সিনেমা 


টিভি সিরিয়ালের শ্যূটিং শুরু হচ্ছে, কিন্তু গ্রুপ থিয়েটার এবং পথ-নাটকের কী হবে? আবেগের প্রকাশ হবে হাত না ধরে? শুধু ডায়লগ বলে? 
জাদুই ঝাপ্পিঃ করোনামুখর দিনে 


ভার্জিনিয়া টেক-এর বিজ্ঞানী লিনসে মার বায়ুবাহিত অসুখের ছড়িয়ে পড়ার বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, মাস্ক লাগিয়ে মুখ পাশের দিকে করে বেঁধে ছোট্ট একটু আলিঙ্গনে সংক্রমণের ভয় নেই বললেই চলে। 


আদিম জীবিকা কি করোনার সামনে মাথা নোয়াবে? 


অল ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক অফ সেক্স ওয়ার্কার্সের প্রেসিডেন্ট কুসুম জানিয়েছেন যে, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সের ভয়ে গ্রাহকেরা আসছে না। তাই কাজ হারিয়ে দিল্লির যৌনকর্মীদের ৬০%-- প্রায় ৩০০০ কর্মী-- তাঁদের নিজের গৃহরাজ্যে ফিরে গেছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ শালিনীর মতো উত্তর প্রদেশের গাঁয়ের বাড়ি ছেড়ে পরিবারের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে দিল্লিতে এসেছিলেন, এখন সেখানেই ফিরে যেতে হচ্ছে। 
গার্স্টিন বাস্টিয়ন রোড বা জিবি রোডের শর্মিলা, রজনীদের মতো অনেকেরই এখন বাচ্চাকে খাওয়ানোর পয়সা জুটছে না—সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। 
কোলকাতার সোনাগাছি এবং অন্যান্য লালবাতি এলাকাতেও প্রায় একই অবস্থা। যৌনকর্মীদের ইউনিয়ন ‘দুর্বার’ এবং কিছু এনজিও’র সহায়তায় এঁদের কোনরকমে দু’বেলা মোটা ভাতের জোগাড় হচ্ছে বটে, কিন্তু কতদিন? খবরে প্রকাশ বড়তলা থানার ওসি দেবজিত ভট্টাচার্য্য ৫০০০ যৌনকর্মী মহিলাকে চিহ্নিত করে কিছু এনজিওর সহায়তায় দুবেলা খাবার জোগানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। 
কিন্তু মানুষ বাঁচতে চায়, তাই বিষম পরিস্থিতিতে হার না মেনে প্রাণপণ লড়াই করে। করোনার হট জোন মুম্বাইনগরী এখন ভয় ধরায়। এখানে বিশেষ ধার্মিক সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষও বাড়ছে। মুম্বাইয়ের গ্রান্ট রোডের যৌনপল্লীর বাসিন্দা রিয়া (নাম বদলে দেওয়া) ও তাঁর সাথীরা টেকনলজি ব্যবহার করে পেশার কৌশল পালটে নিয়েছেন। তাঁরা মোবাইলের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হিন্দু এবং মুসলিম দুটো নাম নিয়ে। উনি নির্ধারিত সময়ে সেজেগুজে কিন্তু ওড়নায় মুখ ঢেকে ভিডিও চ্যাটে বসেন। সময় ৩০ মিনিট, এভাবে প্রতিদিন ঘরে বসেই প্রতি গ্রাহক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে দুই বা তিনজন গ্রাহকের মনোরঞ্জন করেন। উনি খুশি, কাউকে কমিশন দিতে হয়না, গুণ্ডা বা পুলিশের উপদ্রব নেই এবং সবচেয়ে বড় কথা স্বাস্থ্যের উপর চাপ নেই। 


নতুন সম্ভাবনাঃ 


মনে হচ্ছে এই প্যানডেমিকের ঠেলায় আগামী দিনে রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও বাড়বে। মার্ক্স-লেনিনের মত সমাজতন্ত্রী এবং প্রুধোঁ-বাকুনিনের মতো নৈরাজ্যবাদীদের স্বপ্নটি রাষ্ট্র ক্ষয়ে গিয়ে ফুরিয়ে যাবে বা ধ্বংস হবে—সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা আপাততঃ নেই। 
কিন্তু দুটো বিষয়ে রাষ্ট্রের সক্রিয় ভুমিকা নিয়ে করোনা -পরবর্তী দশকে বড় বিতর্ক শুরু হতে চলেছে। এক, ইউনিভার্সাল হেলথ-কেয়ার বা সার্বজনিক স্বাস্থ্য -প্রকল্প এবং ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বা সার্বজনিক মৌলিক আয়। দ্বিতীয়টি নিয়ে কেনিয়া, ইরান ও আলাস্কায় প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আলাদা করে কথা বলা যাবে। 
(সমাপ্ত)

0 comments: