4

ধারাবাহিক - প্রিয়াঙ্কা চ্যাটার্জী

Posted in




পর্ব-৫ 

শয়তান কখন যে তার মায়াজাল বিস্তার করে, তা বোধ করি কালের জানা নেই। সঠিক সময়ের অপেক্ষায় সে থাকে, সময় উপস্থিত হলেই সর্বগ্রাসী রূপে হয় প্রকট। সময়, তিথি, এসব বড় অদ্ভূত। এসবের তিলেক পরিবর্তনে ঘটে যায় অনভিপ্রেত ঘটনা। লোভ, ক্ষমতায় যখন মোহান্ধ হয় মানুষ, তখনই সে ছদ্মবেশ ধারণ করে এসে মানুষের মনকে করে বশীভূত। সেইরূপ সকলে যখন টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে ভুলেছিলেন সব কিছু, তখন যেন বিস্তৃত হয়েছে মায়াজাল, সকলের চক্ষুর আড়ালে। সহদেব ভুলে গেছিলেন দারুক এবং ঐ অঙ্গুরীয়র কথা। কদাচিৎ সম্রাটের ব্যবহার তাকে অবাক করলেও, কালের পরিবর্তন বলে তিনি অগ্রাহ্য করেছেন। 

এক দিন রাত্রিতে মহাদেবী কুমারের মহলের দিকে আসছিলেন। প্রবেশের আগে কানে আসে কিছু নিম্নস্বরের বার্তালাপ। কক্ষে প্রবেশ না করে উঁকি দিয়ে দেখেন, এক দেবী মূর্তির সামনে মহারাজ কাকুতি মিনতি করে অত্যন্ত নীচু স্বরে কথা বলছেন। 
কক্ষ অন্ধকার। একটি প্রদীপ জ্বলছে। সেই ক্ষীণ আলোকে দেখা যায় সম্রাটের মুখে অপরিসীম ক্রোধ। একটি মার্জারকে (বিড়াল) হত্যা করে তিনি একটি বাটিতে তার রক্ত নিয়ে তাতে একটি অঙ্গুরীয় ফেলে উৎসর্গ করলেন দেবীকে। সেই রক্ত তিনি নিজে পান করলেন। বীভৎস সে রূপ! পান করার পর সেই অঙ্গুরীয় ধারণ করলেন তিনি। এসময় এক পরভৃৎ(কাক), কা কা রবে উড়ে যায়। অঙ্গুরীয় হতে এক রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলছেন, 
-- কিছুদিনের অপেক্ষা মাতা, তারপরেই আমি শুরু করব যাত্রা। 
কক্ষ তীব্র কটু পচনশীল গন্ধেপূর্ণ। বাইরে থেকে মহাদেবীও পেয়েছেন সেই গন্ধ। ভীত বুদ্ধিমতী মহাদেবী সঙ্গোপনে সে স্থান পরিত্যাগ করেন। 
গোপনে সহদেবকে সকল কথাই জানান মহাদেবী। 
সহদেব, মহাদেবীর কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। সম্রাট তার বাল্যবন্ধু, ভ্রাতাসম। দিবসকালে তার সদাহাস্যময় রূপ, বন্ধুত্ব সব কিছুই বড় বেমানান মহাদেবীর বলা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। মহাদেবীর রাত্রিকালে দেখা কোনো ভয়াল স্বপ্ন ভেবেই তিনি গুরুত্ব দিলেন না। অনেক সময় ভ্রম হয়, সেটাকেই সত্য বলে ভাবে মানুষ, এই ধারণার বশবর্তী ছিলেন সহদেব। 

পর দিন প্রাতে এক তস্কর ধরা পড়ে। পুরবাসী বিচার প্রার্থনা করলে, মহারাজের মুখে ক্ষণেকের তরে গম্ভীর হয়। তিনি আদেশ দেন, 
--এর দুই হস্তের সমস্ত অঙ্গুলি কর্তন করে তাতে লবন ও মরিচ ছড়িয়ে দাও। 
সম্রাটের মুখে খেলে যায় নিষ্ঠুর হাস্য। শিউরে উঠলেন সহদেব, মহাদেবী, পুরবাসীগণ। এ কোন রাজন? অশোকের মতো মহামতির এ কি পরিবর্তন? ফিসফিস করে এক পুরবাসী বলে, 
--ইনি মহামতি সম্রাট অশোক নন, ইনি চণ্ডাশোক!


4 comments:

  1. বাহ ��

    ReplyDelete
  2. দুর্দান্ত লাগছে গল্পটা... অশোক নিয়ে এরকম একটা দুর্দান্ত গল্প পড়তে পারবো আশা করিনি প্রথমে...

    ReplyDelete