ছোটগল্প - স্বাতি রায়
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
সংখ্যা শুধু এক
স্বাতি রায়
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে। অবশ্য ধোঁয়াশার দৌলতে আজকাল সবসময়ই ছায়া ছায়া। তাতে কিই বা আসে যায়! সকালে দশটার মধ্যে অফিসে ঢুকে যাওয়া, আর বেরোতে বেরোতে সেই সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা, আটটা। এর মাঝে বিকেল আসে যায় নিজের খেয়ালে। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সবাই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। একে অপরকে গুড নাইট বলে। অনুপমার কথা ওদের খেয়ালও থাকে না। সত্যি কথা বলতে, অনুপমার তাতে সুবিধাই। নিজেকে আড়ালে রাখতে ও ভালবাসে। না হলে এত বড় একটা অফিসে একটানা পাঁচ বছর কাজ করার পরেও কোনও বন্ধু হয় না ওর! একা মানুষের জীবনটা অসহনীয় হত। অনুপমা বেঁচে গেল শুধু ওর বসের জন্যে। সে ভদ্রলোক হলেন কাজ-পাগল। দিনের চব্বিশ ঘণ্টাই তিনি পারলে অফিসের কাজে ভরিয়ে রাখতে পারলে ভালো থাকেন। সরকারী অফিসে কোথা থেকে যে এত কাজ জোগাড় করেন, কে জানে! ওঁর জন্যেই অনুপমার টেবিলে ফাইলের অভাব ঘটে না কখনো। এই অফিসে যোগ দেওয়ার কদিন পরে প্রথম যেদিন অনুপমা বিকালবেলা অফিস ছুটির পরেও থেকে গেছিল হাতের ফাইল সারতে, তুমুল হৈ চৈ শুরু হয়েছিল। পরের দিন সকালে বিস্ময়-বোধ, ব্যঙ্গ-কৌতুক, অযাচিত মন্তব্য সব ধেয়ে এসেছিল বিশাল ঘরের এক অন্ধ কোণায় থাকা ওর টেবিলে। একটু বা হুমকি-শাসানিরও মিশেল ছিল কি? তবে সে এতটাই অভিভাবক-সুলভ ও উপদেশ-পূর্ণ মিষ্টি কথার আড়ালে যে তাকে নিখাদ ভালবাসা বলে ভুল হতেই পারে। অনুপমা কর্ণপাত করেনি। পরের দিন, তারও পরের দিন রাত করে বেরিয়েছে অফিস থেকে। ধীরে ধীরে সবার সয়ে গেছে। ঠিক যেমন সয়ে গেছে ওর নীরবে সময় কাটানো। টেস্ট ম্যাচের ধারাবিবরণী বা ক্ষমতার অন্দরমহলের রসাল মুচমুচে খবরও যাকে নিজস্ব খাঁচা থেকে বের করে সবার সঙ্গে গল্পে মাতাতে পারে না, তাকে নিয়ে অত ভাবার দরকার নেই। একটা দ্বন্দ্ব তবু ছিল। এ মেয়ে সহকর্মীদের পাত্তা না দিলেও নিশ্চয়ই উপরমহলে নিজের জাল ছড়াবে। তবে ওই চেহারা নিয়ে কতটা কি সফল হবে সে বিষয়ে বাজির লড়াইও চলেছিল কদিন অফিসে। ধীরে ধীরে থিতিয়ে এসেছে। সবাই দেখেছে মায় মজুমদার সাহেবের সঙ্গেও হেসে কখনো কথা বলে না মেয়েটা। বস্তুত কাজের কথার বাইরে কথাই বলে না। কোনও ছাঁচেই ফেলতে না পেরে হতাশ হয়ে শেষকালে হাল ছেড়েছিল ওর সহকর্মীরা। অনুপমাও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল। কথায় অংশ না নিলেও তো কথা কানে আসতে ছাড়ে না!
অনুপমা। ৩০। রোগা। লম্বা। ও যে রাজ্যের আদি বাসিন্দা, সেই সিকিমের মেয়েদের তুলনায় অনেকখানি বেশি লম্বা। একটু পুরুষালী চেহারা। পেশী-কিলবিলান কেঠো মহিলা-চেহারার সঙ্গে এ শহর পরিচিত। আজকাল অলিতে গলিতে জিমের দৌলতে তো সাধারণ বাড়ির মেয়ে-বৌরাও ফিল্ম-স্টারদের মত বডি বানাচ্ছে। কোথায় গেল আগেকার দিনের খাতে-পিতে মা-মাসিদের চেহারা! তবু সেই জিম-বিহারিণীদের কথা মাথায় রেখেও বলতে হয়, অনুপমার চেহারায় কিসের যেন একটা খামতি আছে। প্রথম প্রথম অফিসের লেডি-কিলাররা খুব চেষ্টা করেছিল। এই মেয়ের চারপাশের ওই অদেখা আখরে লেখা দূরে-হঠো বলয় ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকতে হবে। বুঝতে হবে, কতগুলি পরত সরালে ওই কাঠিন্য উবে যায়! দূরে-ঠেলে-রাখা আর কাছে-ঘেঁষার-অসীম-চেষ্টা দুয়ের মধ্যে একটা প্রবল দড়ি টানাটানি খেলা চলেছিল ক’দিন। শহরে নতুন আসা মেয়েটির কাছে সিনেমা দেখা, গানের জলসায় যাওয়া বা রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার প্রস্তাব আসতে থাকল প্রায় রোজই। তবে অনুপমা এ বাবদে পোক্ত। তাই প্রস্তাব এড়াতে বাজে অজুহাত না দেখিয়ে সোজাসুজি না শব্দটি ব্যবহার করেছিল ও। অনেকবার ‘না’ শোনার পর আস্তে আস্তে অন্যপক্ষের উৎসাহ কমে এল। অনুপমার জীবনে রয়ে গেল অফিস-বাড়ি আর দিনগত পাপক্ষয়।
অবশ্য কঠোর না হতে পারলে সেই ছোট্ট গ্রাম থেকে আজ এই শহরে এসে পৌঁছতে পারত না। এখানে সবাই জানে অনুপমা সিকিমের মেয়ে। জনতার জন্যে ওইটুকু খবরই যথেষ্ট। যারা তাতেও না থেমে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতেই থাকে, তাদের ও শুধু মাঙ্গানের নাম বলে। আসলে তো মাঙ্গানের থেকেও প্রায় দু'ঘণ্টার রাস্তা চাওয়াং বাজার। সেখান থেকে মাথায়, কাঁধে পোঁটলা চাপিয়ে আরো মিনিট চল্লিশেক পাড়ি দিলে তবে ওদের ঘর। দূর থেকে নিশানের মত দেখা যায় বারান্দায় রোদে মেলা টুকটুকে লাল সোয়েটার। ওখানেই আছেন ওর দাদু, বাবা, ভাই, মা। আর পাইন-বনের স্যাঁতসেঁতে মাটিতে নিভন্ত রোদের সঙ্গে লুটোপুটি খাচ্ছে ওর শৈশব। কুয়াশা নামে সেখানেও। হাল্কা, নির্ভার কুয়াশা- দামী পশমিনা শালের মতো জড়িয়ে ধরে চারদিক। এখানকার মত টুঁটি চিপে ধরে না। যেদিন যেদিন তেমন রোদ ওঠে, কুয়াশার আবরণ যায় ছিঁড়ে-খুঁড়ে। ঘরের পাশের ঘন সবুজের আস্তরণ আর মিঠে মিঠে হাওয়ায় নেশা ধরায়। আমেজ কাটিয়ে মুখ তুলতে পারলে, চোখে পড়ে মেঘের মতো পাহাড়-দেবতাদের। মাথায় তাদের ঝকঝকে বরফের মুকুট। সে সব কথা মনে পড়লে শুধু বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণ। কতদিন, কতদিন হয়ে গেল। ১৬ বছর বয়েসে ঘর ছেড়েছিল। প্রথম প্রথম ছুটি ছাটায় বাড়ি ফেরা, আবার ফিরে আসা সেই হোস্টেল, পড়াশোনার জগতে। যে অনুভূতিগুলো এতদিন ছিল আবছা, সেগুলো ক্রমশ তীব্র হলো। এলো সেই জীবন তোলপাড় করা দিন-রাতগুলো, নিজেকে নতুন করে চেনা, বাবা মাকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান, বাবা-মা-দাদু-ভাই সবার ক্রোধ, হতাশা, চোখের জল, সব ছাড়িয়ে কিছুই-না-বোঝার হতাশা যার শেষ হলো সারাজীবনের মতো ঘর ছাড়ায় ... কিন্তু না। সেসব আর মনে করতে চায় না অনুপমা। কি হবে আর সে কথা ভেবে? সিকিম থেকে শিলিগুড়ি হয়ে কলকাতা। কলকাতায় শেষের চার পাঁচ বছর তো প্রায় অজ্ঞাতবাসেই কেটেছে। মা বাবার লুকানো স্নেহটুকু শুধু বুঝত মাঝে মাঝে মোটা টাকার মানিঅর্ডারে। টাকার তীব্র প্রয়োজন ছিল সে সময়। নিজের কতই বা আর সঞ্চয় ছিল! মূল্যের বিনিময়ে পাওয়া নতুন জীবন। তারপরে তো আবার চলা শুরু এই শহরে। অনেকটা ভয় আর বিষণ্ণতাকে সঙ্গী করে। মানুষকেই আজ বড় ভয় ওর। নিজের মানুষজনেরাই যাকে বোঝে না, কেই বা বুঝবে তাকে! তাই স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া এই একা-থাকা-যন্ত্র-জীবন।
কপালে অবশ্য অফিসটা জুটেছে ভালো। শহর থেকে একটু একটেরে হলেও পুরনো দিনের বাড়ি। উঁচু উঁচু ছাদ। বড় বড় দরজা, জানলা। সেগুলো অবশ্য বন্ধই থাকে শীতাতপ-যন্ত্রের কল্যাণে। তবু সামনের চওড়া খোলা বারান্দাটা রয়েই গেছে। আর রয়েছে বারান্দার সামনের বড় রাস্তা পেরিয়ে এক চিলতে মাঠ। রুক্ষ, লাল মাটি, কোথাও একটুকু সবুজ নেই। তবু মাঠ তো। খাবার ঘরে বা টয়লেটে যেতে গেলে সেই বারান্দা দিয়েই যেতে হয়। প্রতিবারই পা টেনে ধরে ওই মাঠ। নিজের ছবি দেখতে পায় অনুপমা ওই মাঠের মধ্যে। নিষ্ফলা, ফুটি-ফাটা, মোটেই নয়নসুখ না, তবু আছে। তবে এ অফিসের সব থেকে ভালো জায়গা ওই বারান্দাও না। সে হলো টয়লেট-খানা। সরকারী অফিসের টয়লেট তো আর আহামরি কিছু হতে পারে না। তবে কি করে যেন হাজারটা বিধি-নিষেধের চোখ এড়িয়ে এখানে একটা অন্য রকম ব্যবস্থা আছে। আর দশটা সরকারী অফিসের মত এখানে ছেলেদের আর মেয়েদের টয়লেট আলাদা নয়। বরং আছে একটা আলাদা টয়লেট ব্লক, ছেলে মেয়ে সবারই ব্যবহারের জন্য। তাতে রয়েছে অনেক গুলো স্বয়ং-সম্পূর্ণ কুঠুরি। সরকারী পরিসরে কি করে যে এটা টিকে আছে কে জানে! হয়তো ওদের দপ্তরটাই শৌচালয় নিয়ে কাজ করে বলে এদিকে এখনো কারো চোখ পড়ে নি। সঠিক জানে না অনুপমা। শুধু জানে, এটার জন্যেই সে টিকে আছে এখানে।
বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এল প্রায়। চটপট হাতের কাজগুলো সেরে ফেলছিল। হঠাৎ গলা খাঁকারির শব্দে মুখ তুলে দেখে সামনেই মজুমদার সাহেব। হাতে একটা ফাইল। একটু ইতস্তত করে কোনও সম্ভাষণ বা সম্বোধন না করেই ওঁর নিজস্ব স্টাইলে বললেন, ‘‘এই ফাইলটা একটু দেখে দিতে হবে, সব তথ্য প্রমাণ ঠিক আছে কিনা। তাড়া নেই, কাল দেখতে শুরু করলেও হবে।’’ অনুপমাও যন্ত্রের মতো হাতের ফাইলটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিল। কাল সকালে এসে ওটা নিয়ে বসবে। যে ফাইলটা নিয়ে কাজ করছিল অনুপমা, তাতে রেকমেন্ডেশন লেখা শেষ। ফাইল বন্ধ করে টেবিলের অন্য ধারে সরিয়ে দিল অনুপমা। তারপর একটু কৌতূহলের বশেই চোখ বোলাতে গেল মজুমদার সাহেবের দিয়ে যাওয়া ফাইলটাতে। একটু পড়েই পিঠ খাড়া করে বসলো। সিকিমের এক জনপ্রতিনিধির পাঠানো চিঠি। সারমর্ম হল, তার প্রতিনিধিত্বের এলাকার একটি গ্রামের বাজারে পাবলিক টয়লেটের বড়ই অসুবিধা। সেখানে সরকারী জমিতে শৌচালয়, কিন্তু তাতে ছেলে মেয়েদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা নেই বলে সমস্যা হচ্ছে। অনুমতি হলে ওখানকার দুটি এক-কক্ষ শৌচালয়কে ভেঙ্গে ছেলে-মেয়েদের জন্যে আলাদা শৌচের স্থান করে দেওয়া যাবে। তাতে অনেকগুলি স্টল করা সম্ভব হবে। আর বাজারে আসা মানুষজনের সমস্যারও সমাধান হবে। নির্মাণের ৫০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার দেবেন এবং বাকী ৫০ শতাংশ ওই জন প্রতিনিধির তরফ থেকেই দেওয়া হবে। শুধু সরকারী অনুমতিটুকুই প্রয়োজন। তারও প্রয়োজন হতো না, কিন্তু জানা গেছে যে ওই শৌচালয় স্বচ্ছ ভারত মিশনের অনুমতিতে বানানো। আরও অদ্ভুত হলো, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ফান্ডের টাকায় এর রক্ষণাবেক্ষণ চলে। সেই ব্যবসায়ীটি সম্প্রতি মারা গেছেন। তাই স্বচ্ছ ভারত মিশনের কাছেই অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। সঙ্গে একটি স্থানীয় বাসিন্দাদের নাম-ঠিকানা-সই সহ এই একই মর্মে জনপ্রতিনিধির কাছে পাঠানো আবেদন-পত্রও আছে। আর আছে গাদা-খানেক চিঠির তাড়া, পুনর্নির্মাণ কাজের অর্থনৈতিক সংস্থানের প্রমাণ হিসেবে।
উত্তেজনার চোটে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় অনুপমা। এই রাত্রেও মজুমদার সাহেবের ঘরে আলো জ্বলছে। এখন বিরক্ত করা উচিত হবে কি না সে ভাবনা সিকেয় তুলে দিয়ে অনুপমা দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে ওঁর ঘরে। ফাইলটা হাতে তুলে নিয়ে উত্তেজিত গলায় বলে ওঠে, ‘‘স্যার এটা করা কি ঠিক হবে?’’ মজুমদার সাহেব মুখে কোনও কথা না বলে বাড়িয়ে দেন একটি ছাপানো রিপোর্ট। বিষণ্ণ স্বরে থেমে থেমে বলেন, “আমার সন্তান দূর্বার বন্ধু ছিল উত্তম। তোমাদের সিকিমের লোক। উত্তর সিকিমের গ্রামের ছেলে। দূর্বা তো সিকিম মণিপালে পড়ত। মেধার জোরে স্কলারশিপ নিয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছিল উত্তম। দুজনের আলাপ ওখানে। আলাপ থেকে গভীর বন্ধুত্ব। প্রায় পনের বছর আগের কথা। তারপর দুজনে চাকরীতে ঢোকে। এই শহরেই। দুজনের আলাদা অফিস অবশ্য। তাতে ওদের বন্ধুত্বে কোনও দাগ পরেনি। ওর মা, আমি, আমরা প্রায় ধরেই নিয়েছিলাম যে এবার ওদের বিয়ের কথা উঠল বলে। কি করে জানব আসলে কি ঝড়ের মধ্যে দিয়ে পথ পেরতে হচ্ছে ওদের! তারপরই তো... ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যে তো শুধু অঙ্ক কষতে শিখিয়েছে। জীবনের মুখোমুখি হতে শেখায় নি। ঠিক কি যে হয়েছিল তা আমরা জানতেও পারিনি। শুধু জানি দুজনে একসঙ্গে সুইসাইড করে। ওদের সুইসাইড নোট পড়ে আমরা প্রথম জানতে পেরেছিলাম। দূর্বা তবু নিজের কথা লিখে রেখে গিয়েছিল। উত্তম তাও করেনি। শুধু বাবাকে লিখে গিয়েছিল, পারলে যেন উনি ওদের স্কুলে একটা কমন টয়লেট করে দেন। বেচারি ভদ্রলোক! সব কিছু শুনে উনি তো হতবাক! অবশ্য উনি কেন, আমরাও তো সমান বিধ্বস্ত ছিলাম। একটিবার ওরা আগে জানাল না! এতটুকুও ভরসা করতে পারল না আমাদের? কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারতাম হয়ত।” গলাটা প্রায় আর শোনা যাচ্ছে না মজুমদার সাহেবের। ফিসফিস করে বলছেন, “কিম্বা হয়তো কিছুই করতে পারতাম না। বাপ মা হয়ে সন্তানের রোজকার যুদ্ধ অসহায় ভাবে দেখতে হত শুধু। ওরা সে দিক দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়ে গেল... তারপরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মিনিসট্রি অবধি ছোটাছুটি করে এইটুকু ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম। এই অফিসের টয়লেটটুকু আর উত্তমের গ্রামেরটা। নেহাতই দু-চার জন আমলা বন্ধু ছিল, তাই। তাও তো উত্তমের ইচ্ছা আমরা মেটাতে পারিনি, ওর স্কুলে আমরা কমন শৌচালয় করে দিতে পারিনি। শেষে উত্তমের বাবা বাজার-কমিটিতে নিজের প্রতিপত্তি খাটিয়ে স্কুলের কাছে, বাজারের আওতার মধ্যে এক ফালি জমি কিনে সেটা সরকারকে দান করেন। সেই জমিতে...” হাতের তালুতে মুখ ঢাকলেন এক আমলা-পিতা।
পায়ে পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে অনুপমা। হাতে ধরা মজুমদার সাহেবের দেওয়া রিপোর্টের দিকে তাকায়। ২০১১ সালের সেন্সাস রিপোর্ট। হাইলাইটার দিয়ে আণ্ডার-লাইন করা, রুরাল সিকিমে ট্রান্স-জেন্ডারের সংখ্যা সরকারী মতে এক জন। সরকারী… মতে… এক। কান্না চাপতে চাপতে দ্রুত টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে অনুপমা ওরফে অনুরাগ শ্রেষ্ঠা।
0 comments: