1

ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

Posted in



ধারাবাহিক


এক কিশোরীর রোজনামচা - ১৪

সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়








Diary Entry - 11
10th. July, 1942, Friday



প্রিয় কিটী, 

আগের চিঠিতে তোমায় যতদূর সম্ভব বিস্তৃত ভাবে আমাদের বর্তমান আবাসস্থলের বর্ণনা দিয়েছি। হয়তঃ আমার বর্ণনাটা কিছু লম্বা-চওড়া হয়ে গেছে। তুমি আশা করি, বিরক্তি বা ক্লান্তি বোধ করনি! তুমি ত’ জানই, তোমাকে ছাড়া, আর কাউকেই আমি আমার কথা বলতে বা জানাতে পারি না। তা’ছাড়াও আমার মনে হয়েছিল তোমায় সবকিছু আমার পরিস্কার করে জানান উচিৎ। তোমার জানা দরকার, আমরা কি রকম জায়গায় ছিলাম, আর কি’রকম জায়গায় এখন আছি। কি’ভাবে আছি সে কথা ত’ তোমায় অবশ্যই জানাব। তবে তা’ ক্রমে ক্রমে। (ফ্রাংক পরিবার, তাদের পুরানো আবাসস্থল থেকে ৫ ই, মতান্তরে ৬ ই জুলাই, তাদের গোপন আবাসস্থলে এসেছিল। অ্যানি ফ্রাঙ্ক এখানে আসার পরে তার ডাইরিতে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিল --- অনুবাদক।) 

গোপন জায়গার স্কেচ। এই ছবিটি Wikipedia থেকে সংগৃহীত। 

তুমি কি জান, আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। আর কখনও হবে কি’না জানি না। বিশেষ করে, আমাদের এই নতুন গোপন আশ্রয়স্থল সম্পর্কে। তাই সে বিষয়ে তুমি শুনতে না চাইলেও, আমি তোমাকে বলব। আমরা প্রিন্সেনগ্রাচেটে (Prinsengrachet) পৌছানো মাত্র মিয়েপ (Miep) তড়িঘড়ি কোনকিছু বলার অবকাশ না দিয়েই, উপরের তলায় গুপ্ত উপগৃহে আমাদের প্রায় টেনে নিয়ে চলে গেলেন। আর তারপর আমাদের, সামনে বই, ফাইল ইত্যাদি সাজানো একটা শেলভ-এর পিছনের দরজা খুলে, ঘরে ঢুকিয়ে নিয়েই পিছনের দরজা বন্ধ করে দিলেন। ঘরে তখন শুধুই আমরা।কোথায় এলাম, এসব বোঝার কোন অবকাশই দিল না আমাদের। শুধু বুঝলাম আমরা লুকিয়ে পড়লাম। অবশ্য আমারা আসার আগেই মারগট এসে আমাদের জন্যে ঘরে অপেক্ষা করছিল। তাকে আগেই মিয়েপ সাইকেলের পিছনে বসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত তারই সাইকেলে আমাদের চেয়ে অনেক আগেই এখানে এসে পৌছিয়েছে। যেটাকে আমাদের বসার ঘর বলে বলা হলো, সেখানে ঢুকে দেখি ঘরটা অবর্ণনীয় আবর্জনায় ভর্তি হয়ে আছে। শুধু বসার ঘরই নয় অনান্য সব ঘর গুলোর অবস্থা একই। বাজে জিনিষ আর আবর্জনায় ভর্তি। যে সব প্যাকিং বাক্সগুলোয় গত মাসে অফিসের বিভিন্ন জিনিষের নাম করে, গৃহস্থালীর জিনিষ এসেছিল, সেই প্যাকিংবাক্সগুলো মেঝের ওপর আর ঘরের বিছানার ওপর ডাঁই করে রাখা আছে। আর পাশের ছোট ঘরগুলোতে বিছানার চাদর তোষক, বালিশ গালিচা ইত্যাদি ঘরের মেঝে থেকে প্রায় সিলিং পর্যন্ত ঠেসে রাখা আছে। সুতরাং রাত্রে যদি ভালভাবে একটা সুন্দর বিছানায় শুতে চাই এবং ঘুমোতে চাই, তা’হলে তৎক্ষণাৎ আমাদের ঘর পরিস্কারে হাত লাগাতে হতো। না হলে শোওয়ার মতো জায়গাই খুঁজে পেতাম না। তাই আমরাও ক্লান্তির কথা না ভেবে, তৎক্ষণাৎ ঘর গুছানোর কাজে হাত লাগালাম। তা’ছাড়া আমরা যদি ক্লান্তির কথা না ভুলতাম, তা’হলে, মা আর মারগটকে পরিষ্কার করার কাজে সঙ্গে সঙ্গে লেগে যেতে হতো। তারাও আমাদের মতোই ক্লান্ত ছিল। বিশেষ করে মারগট ত’ মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। কারণ প্রথমে তাকেই ত’ চিঠি দেয় দেখা করার জন্য। সে যে এখানে আসতে পারবে, আমাদের সাথে থাকতে পারবে এটাই ত’ সে ভাবেনি। 

আমরা যে অবস্থায় এখানে এসে পৌঁছেছিলাম, তাতে মা আর মারগটের পক্ষে ঘর সব ঘর পরিষ্কার করা, তাকে শোওয়ার যোগ্য করে তোলা, পরিস্কার করার কাজ সম্পূর্ণ করা, দুজনের পক্ষে কোনভাবেই করা সম্ভব ছিল না। তবুও প্রথমে এসে, তারা বেশ কিছুক্ষণ কাজ করে, শেষে ক্লান্তির চোটে বিছানায় শুয়ে পড়ল। বুঝতেই পারছ, তাদের সত্যিই আর নড়ার ক্ষমতাই ছিল না! এ’সময় ক্লান্তিও আসে! কারণ ত’ শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও, আগে-পড়ের সব ঘটনা তাদের বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। তাদের পক্ষে বোধহয় সহ্য করা আর সম্ভব ছিল না। কিন্তু ভয় নেই। আমাদের পরিবারে এমন দুজন এখনও আছে যারা “সততঃ কর্মক্ষম” কোনকিছুই তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। তাদের কাছে সামনের দিকটাই শুধু জীবন। যেটা ঘটতে পারত, কিংবা যেটা ঘটে গেছে সেটা জীবনের একটা বাতিল অংশ ---- এ’রকম লোক আর কারা হতে পারে? আমি আর আমার বাবা ছাড়া। আমরা ঠিক করলাম এখুনি কাজ শুরু করতে হবে। ক্লান্তিতে বসে বা শুয়ে থাকলে চলবে না। এখন ক্লান্তিতে শুয়ে পড়লে, রাত্রে আর শুতে পারব না। 

সারাদিন ধরে আমি আর বাবা, না-খোলা প্যাকিংবাক্সগুলো একএক করে খুললাম। ভিতরের জিনিষগুলো বার করে আলমারিতে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখলাম। বিছানায় তোষক আর চাদর টান-টান করে পারলাম। এইভাবে আস্তে আস্তে সব কাজ শেষ করলাম। সত্যিই তখন প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছিল। তবে এরফলে যে রাত্রে সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো পরিস্কার বিছানায় একটা ঘুম হবে, এ’কথা আমি হলপ করে বলতেপারি। আর হলও তাই, রাত্রে বিছানায় শোওয়ার পর, মুহূর্তের মধ্যে ক্লান্তিতে ডুবে গেলাম। সারাদিন গা-গরম করার মত কোন খবরও পাইনি বা ঘটনাও ঘটেনি। অবশ্য তার জন্য আমাদের বিশেষ কোন আগ্রহও ছিল না। চারদিকে এত খবর ঘটে চলেছে, যে কোনটা নতুন আর কোনটা পুরানো, তা’ বেছে দেখার অবকাশও ছিল না। মা আর মারগট এতই ক্লান্ত ছিল, যে বিছানা থেকে উঠে খাওয়ার মতো উৎসাহটুকুও তাদের ছিল না। আমি আর বাবা সারাদিন এতই ব্যস্ত ছিলাম যে খাওয়ার কথা ভাবার সময়টুকুও আমরা পাইনি। বলতে পার, সেদিন প্রায় না খেয়েই ঘুমাতে চলে গেলাম। 

গোপন আস্তানায় অ্যানি ও তার বন্ধু ফ্রিটজ ফেফ্রার ডান দিকের ঘরটিতে থাকত আর
বাম দিকের ঘরে থাকতেন অ্যানির বাবা, মা আর দিদি মারগট। 

গতদিন আমরা যে জায়গাটা ছেড়ে (বলতে পার বাড়িটা ছেড়ে) চলে এসেছিলাম আমাদের লুকানো জায়গায়, মঙ্গলবার সকালে আমরা সেখানেই গিয়েছিলাম। ইলি আর মিয়েপ আমাদের সাপ্তাহিক রেশন জোগাড় করে রেখেছিলেন। আমরা সেগুলো আনতে গিয়েছিলাম। ইত্যবসরে বাবা আমাদের জায়গাটা আরও ভাল করে আড়াল করে দিলেন। বাইরে থেকে যাতে একটুকরো আলোও দেখা না যায় তার পাকাপাকি ব্যবস্থা করলেন। বলতে পার, এবার থেকে আমাদের প্রায় অন্ধকার ঘরেই দিনের বেলাটাও কাটাতে হবে। সকাল বেলায় রেশন এনে, আমরা প্রায় সারাদিন ধরে ভিতরের রান্নাঘরের মেঝেটাকে ঘষে ঘষে পরিস্কার ও ব্যবহারযোগ্য করার চেষ্টা করলাম। সত্যি কথা, এই বুধবারের আগে পর্যন্ত আমাদের জীবনের এই আকস্মিক পরিবর্তনের বিন্দুমাত্র আভাস আমাদের ছিল না। তাই চিন্তা করার অবকাশটুকুও আমরা পাইনি। তারপর একটু গুছিয়ে নিয়ে, তোমায় এই পরিবর্তনের বিষয়ে খুঁটিনাটি সব কিছু বলার অবকাশ হলো। একই সাথে আমি একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম আমার জীবনে কি কি পরিবর্তন এসেছে, এবং সেই পরিবর্তনের ধারা বা প্রভাব এখনও নিরন্তরভাবে কি ভাবে ঘটে চলেছে।

তোমার অ্যানি 



অনুবাদকের বিশেষ ভাষ্য - 

অ্যানি ফ্রাঙ্কের বাবা ওটো ফ্রাঙ্ক এক উচ্চ মধ্যবিত্ত জার্মান- ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মূল্যবোধও ঠিক সে’রকমভাবেই গড়ে উঠেছিল। তিনিও উচ্চ মধ্যবিত্তের জীবনধারার সাথে অভ্যস্ত ছিলেন। ফ্রাঙ্কফ্রুট শহরের বহিরাংশের যে অঞ্চলে তাঁরা বাস করতেন, সেই অঞ্চলটিও ছিল, সেইরকমই জার্মানির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উচ্চ মধ্যবিত্তের লোকজনের বাসস্থান। অ্যানি ও তার দিদি মারগটের প্রথম শৈশব এই পরিবেশের মধ্যেই কেটেছিল। 

১৯২৯ সালের ১২ই জুন অ্যানি ফ্রাঙ্কের জন্ম। তার জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই জার্মান ক্রমেই পরিবর্তিত হতে থাকে। শান্ত ও সুস্থ বাতাবরণের মধ্যে ক্রমেই রাজনীতির অশান্ত বাষ্প অন্তরসলিলার মত বইতে শুরু করে। 

১৯১৯ সালে দুর্বল ভাইমার প্রজাতন্ত্র পরিস্থিতির চাপে ভারসাই চুক্তি, বিনা শর্তে, মেনে নিতে বাধ্য হয়। ভারসাই চুক্তি কেবল জার্মান প্রতাপকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়নি, এই চুক্তি প্রায় প্রত্যক্ষভাবে জার্মান জাতীয়তাবাদের অহংকারকে দুমড়ে দিতে চেয়েছিল। যুদ্ধ অপরাধের দেনা শোধ করতে বেহিসাবী কাগজী মুদ্রার প্রচলন করে ভাইমার প্রজাতন্ত্র জার্মান বাসীকে উপহার দেয় অকল্পনীয় মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব। প্রজাতন্ত্রের এই উপহার কার্যত চরম দক্ষিণপন্থী ও অতি সমাজতন্ত্রীদের মিলনের পথ সুগম করে দেয়, আর প্রজাতন্ত্রের অবসানের পথকে ত্বরান্বিত করার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া শুরু করে। এই নিশ্চিত আর সুগম পথ ধরেই অস্ট্রিয়ান যুবক হিটলারের উত্থান শীর্ষ মুখী হয়ে ওঠে। এই সময়টা ছিল ১৯৩৪ সাল। হিটলারের মুখে ছিল, শান্তি, প্রগতি ও জাতীয় উন্নতির আশাবাদ। আর তাঁর স্বপ্নে ছিল জার্মান জাতিবোধকে জাগ্রত করা, তার উত্থানের পথে সকল প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে তাকে গৌরবান্বিত করে তোলা। বিশেষকরে ইহুদি বিরোধীতাকে তীব্র করে তোলা।

১৯১৯ সালে হিটলার ছিলেন জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সদস্য। এই সাধারণ সদস্যই ১৯৩৩-৩৪ সালের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টিকে পরিবর্তিত করেন, ন্যাশন্যাল সোশালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে । চরম ইহুদি বিদ্বেষ আর জার্মান জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্টতা প্রতিষ্ঠার সার্বিক চেষ্টা ছিল এই দলের কর্মসূচীর ও মতাদর্শের দুই প্রধান স্তম্ভ। অনেক কিছুর মধ্যে, শেষ পর্যন্ত হিটলারের চূড়ান্ত ক্ষমতা দখলের অন্যতম হাতিয়ার ছিল কমিউনিস্টদের প্রতি ঘৃণা, সন্দেহ ও আক্রমণের তত্ব প্রচার। ইতিহাসে যখনই চরম দক্ষিণপন্থি ও অতি বামপন্থী কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেছে, তখনই তাদের সামনে প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বা তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে সামনে এসেছে কমিউনিস্ট পার্টি। জার্মানির ক্ষেত্রেও অন্যথা কিছু হয়নি। হিটলারও সেই একই অস্ত্রে শান দিতে ব্যবহার করেছিলেন, রাইখস্ট্যাগের সভাগৃহে অগ্নিসংযোগের মিথ্যা দোষারোপ। হিটলারের জীবনীকার অ্যালান বুলক লিখেছিলেন, “হিটলারের একমাত্র কর্মসূচী ছিল ক্ষমতা দখল। প্রথমে জার্মানির ওপর নিজের ক্ষমতা, তারপর ইউরোপের ওপর জার্মানির একছত্র আধিপত্য। বাকী সবই ছিল তার বাতায়ন সজ্জা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে হলক্যাস্ট আতঙ্ক থেকে জীবিত ফিরে আসা, ফ্রাঙ্ক পরিবারের একমাত্র সদস্য ওটো ফ্রাঙ্ক, তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন, “আমার এখনও ১৯৩২ সালের প্রথম দিকের সেইসব চোরা আতঙ্কের কথা মনে পড়ে। রাস্তা দিয়ে ঝোড়ো নাৎসি যুব- বাহিনীর দর্পিত মিছিলের কথা। সেই দর্পিত মিছিল থেকে উচ্চস্বরে গান ভেসে আসছে, ‘হাতের এই ক্ষুধার্ত হাতিয়ার তখনই শান্ত হবে, যখন তার শরীর বেয়ে চুঁইয়ে পড়বে ইহুদির গরম তাজা রক্ত’। 

১৯৩৩ সালে হিটলারকে, যখন তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবুরগ চ্যান্সেলার পদে নিযুক্ত করেন, তখনই ওটো ফ্রাঙ্ক বুঝতে পেরেছিলেন, পারিবারিক নিরাপত্তার জন্য, তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে জার্মান ত্যাগ করতে হবে। জন্মভূমি ত্যাগ করার মানসিক যন্ত্রণা ও লাঞ্ছনাকে তিনি এই ভেবে উপশম করিয়েছিলেন যে, ‘জার্মানি একটি দেশমাত্র। সে পৃথিবী নয়। তাই আমি আমার পরিবার সহ দেশ ত্যাগ করছি, কিন্তু পৃথিবী নয়’। 

প্রথমে ফ্রাঙ্ক পরিবার জার্মানি ত্যাগ করে ১৯৩৩ সালের শেষের দিকে, নেদারল্যান্ডের আমস্টারড্যামে শহরে থাকার জন্য আসেন। এই প্রসঙ্গে অ্যানি ফ্রাঙ্ক তার ডাইরিতে লেখে, “আমরা জাতিতে ইহুদি ছিলাম, তাই আমাদের দেশত্যাগ করে চলে আসতে হয়েছিল। এ’ছাড়া চলে আসার অন্য কোন কারণ ছিল না।“ ওটো ফ্রাঙ্ক ভেবেছিলেন, জার্মান ছেড়ে চলে গেলে তাঁরা, অর্থাৎ তাদের পরিবার হিটলারের জাতী বিদ্বেষ থেকে রেহাই পাবে, এবং মুক্ত মনে ব্যবসা ও সংসার করতে পারবেন। ১৯৩৪ সালে তিনি তাঁর দুই কন্যাকে আমস্টারড্যামের স্থানীয় একটা মন্টেসরী স্কুলে ভর্তি করেন। এরপর বাকী ত্রিশ দশকের পুরোটা ওটো ফ্রাঙ্ক সপরিবারে সুখে ও নিশ্চিন্তে বসবাস করতে থাকেন। 



কিন্তু ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি পোল্যান্ড দখল করে, কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সলতেতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর ১৯৪০ সালের ১০ই মে, জার্মানির নাৎসি বাহিনী নেদারল্যান্ড আক্রমণ করে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে নেদারল্যান্ডের উপর তাদের কর্তৃত্ব কায়েম করে। ১৫ই মে নেদারল্যান্ড দখল করার পর ফ্রাঙ্ক ও তাদের মতো অন্যান্য ইহুদি পরিবারের স্বাভাবিক জীবনে নতুন করে জাতিবিদ্বেষের কালো মেঘ ঘনাতে শুরু করে। অ্যানি তার ডাইরিতে লিখেছে, “১৯৪০ এর মে মাসের পর থেকেই যুদ্ধ, ডাচ বাহিনীর আত্মসমর্পণ সর্বোপরি জার্মান নাৎসিদের দখল, আমাদের নিত্যকার জীবনের স্বাভাবিক সুখ, শান্তি, রাত্রের ঘুম ইত্যাদি সব ক্রমে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। আমরা, ইহুদিরা, বুঝতে পারি, আমাদের “কালো” দিন এগিয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসে, নেদারল্যান্ডের নাৎসি প্রশাসন “ইহুদি বিরোধী” আইন লাগু করে। সাধারণ মানুষ থেকে ইহুদিদের পৃথক করার জন্য, তাদের আইন মোতাবেক বাধ্য করা হয়, জামায় হলুদ রঙের “তারা” লাগিয়ে বের হতে। এমন কি’ স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার অধিকার ইহুদিদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। তখনই ওটো ফ্রাঙ্ক বাধ্য হন, প্রথমতঃ, তার দুই ডাচ বন্ধুর হাতে ওপেক্টোর মালিকানা হস্তান্তর করতে, দ্বিতীয়তঃ, পরিবারসহ আত্মগোপন করার জন্য ওপেক্টো- হাউসের পিছনে একটি উপগৃহ বা অ্যানেক্স ভবন তৈরী করতে।

1 comment:

  1. Rajnoitik othapora sudhu je akta desher varsammoi nosto kore na Annie der Moto hajar poribar er bhobishot o nosto kore dae..

    ReplyDelete