0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


সমিদ্ধম্ অগ্নিং সমিধা গিরা গৃণে। 

আমার বাণীর সমিধে যে অগ্নি জ্বলে তাকে বন্দনা করি। 

এই বন্দনাই সেই তপ যা ঘনীভূত হয়ে হৃদয়ে জন্ম নেয় আলোকবিহগী বাক্। তারপর তার যাত্রা আরম্ভ। আলো থেকে আলোতে, লৌকিক চেতনা থেকে লোকোত্তর চেতনায়, বৈখরী থেকে পশ্যন্তীতে। মাতৃভাষার ধ্বনি স্রোত থেকে জেগে ওঠে বিশ্বভাষা পরাবাক্। তাই ঋতবাক অর্চনা করে তার মাতৃভাষাকে। 

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একবার আপনার, আমার মাতৃভাষা বাংলার দিকে তাকাই আসুন। আমরা বাংলা গদ্যকে নিয়ে ভাবছি এই মুহূর্তে। কারণ, আমরা গদ্যেই ভাব বিনিময় করে থাকি। ১৫৫৫ সালে অহোমরাজকে রাজা নরনারায়ণ মল্লদেবের লেখা পত্রটি লিখিত বাংলা গদ্যের আদিতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এবং এর ভাষা বোধগম্যও : 'লেখনং কার্যঞ্চ [।] এথা আমার কুশল [।] তোমার কুশল নিরন্তরে বাঞ্ছা করি [।]...' 

তবু, আমরা ১৮০১ সালটিকে বেশী গুরুত্ব দেব। কারণ ঐ বছরই বাঙালীর লেখা প্রথম বাংলা বই প্রকাশ পায়। মিশনারী বাংলাকে আলোচনায় না আনার কারণ তাঁদের বাঙলা যতটা না ধর্মপ্রচারের মাধ্যম ততটা ভাষা বা সাহিত্য চর্চার নয়। উইলিয়ম কেরির বিচিত্র বাংলা যে তৎকালীন বঙ্গীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়েরও অস্বস্তির কারণ হয়েছিল এবং কোনওভাবেই যে তা বাংলা ভাষার বহমানতার অংশ বলে পরিগণিত হতে পারে না, ঋতবাকের এই সংখ্যার প্রচ্ছদ নিবন্ধে তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। অতএব, রামরাম বসু বা মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের বাংলা গদ্য দিয়েই বাংলা গদ্যের পথচলা শুরু। দুটি উদাহরণ দিই। 

১) পরে রাজা বিক্রমাদিত্য ও বসন্তরায় ও প্রতাপাদিত্য তিনজন এক নিভৃত স্থানে যাইয়া বসিলে রাজা বসন্তরায় জিজ্ঞাসা করিলেন পুত্র কি সমাচার আসিবামাত্রেই কিমার্থে এমত ২ আচরণ করিলা। (রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র। রামরাম বসু। ১৮০১) 

২) যদি কাহারও কোন দ্রব্য হারায়, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ তাহাকে দেওয়া উচিত; আপনার হইল মনে করিয়া লুকাইয়া রাখিলে চুরি করা হয়। (বোধোদয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৫১) 

ঠিক পঞ্চাশ বছরের ব্যবধান। কোথা থেকে কোথায় এসেছে বাংলা গদ্য! অন্য যে কোনও ভাষায় যে পরিবর্তন আসতে সময় লাগে দু'তিন শতাব্দী, বাঙলায় তা এসেছে মাত্র অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে। বাংলা ভাষা তাই বিশিষ্ট। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ঝরা রক্তের তিলক কপালে এভাষা সযত্ন পরিচর্যার দাবী রাখে। ঋতবাক এ দাবী মানে। আপনারাও। 

সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। মাতৃভাষাকে যাপনে এনে স্বস্থ থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর

0 comments: