বইঘর - গ্রন্থকীট
Posted in বইঘর
বইঘর
বইয়ের খবর
গ্রন্থকীট
অক্ষর উড়ান
বৈজয়ন্ত রাহা
প্রকাশক : অসময়
বিনিময় মূল্য : ১০০ টাকা
এই কবিতার বইটির একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এটি কবি বৈজয়ন্ত রাহার আবৃত্তিযোগ্য কবিতার সংকলন। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতায় কবি ও পাঠকের মধ্যে অপর এক অস্তিত্ব বিরাজ করে : কণ্ঠ সম্পদে সমৃদ্ধ বাচিক শিল্পীর। তাঁরই স্বরের ডানায় ভর করে অক্ষরদের উড়ান। সুতরাং এই সংকলনের প্রতিটি কবিতার প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে নাট্যরস। ধরা যাক, 'তুমি শুনতে পাচ্ছ?' কবিতার কথা :
'তুমি চোখ তুললে,
আহত আগুন ছায়া,
যেন রক্তপাত, যেন যুদ্ধের আগে বিউগল বাজবে...।'
বা,
'আদর করে, যত্ন করে সুখ
মুখের কাছে, জ্বালতে পারবে আলো?
তোমার ছোঁয়ায় দিনযাপনের তারা
খসে পড়বে, পাহাড় -- প্রমাণ কালো...' (বলতে নেই)
অথবা,
'এখানে মৃত্যু রেখে গেছে রথ,
একজীবনের সব দাসখৎ
চলো প্রেম করি পাহাড়ের আলো,
কষ্টের কথা নদী জানে ভালো;' (কুঁজো)
এইরকম সব তীক্ষ্ণ অভিঘাত পূর্ণ উচ্চারণ কবিতা থেকে কবিতায়। এ কবিতাগুলি আমাদের সরব করে তোলে। অক্ষর উড়ানে সহায় হয় আমাদের কণ্ঠ।
কুসুম পাতার গান/ বাদাম পাতার গল্প
সুমিত দে
প্রকাশক : শালিনী ঘোষ
বিনিময় মূল্য : ১০০ টাকা।
১) তোমার ছায়া সরে গেছে
সূর্য থেকে আরও সূর্যের দিকে
যে বাগান জুড়ে গিরগিটি বেঁচেছিলাম
সেখানে এখন এমন ফুলের প্রতিধ্বনি
আড়ালের সকল সুখ ঘুচে গেল আমার
এবার আমি নগ্নতায় সেজেছি
তোমার সুচতুর সদয় চোখের জন্য
ঘুমের বাতাস পাঠাও, হে ভাসমান ঈশ্বর
বহুদিন এ দিগরে প্রগাঢ় রাত্রি নামেনি
২) গজল গানের অন্তমিলে কোথায় পাবে?
আমার তো বাস নিস্তরঙ্গ রুক্ষ রোদে
শায়র তোমার বয়েত জুড়ে ঘুমন্ত জুঁই
বোলতা এসে চাক বেঁধেছে আমার বোধে
অন্ধ হলাম তাদের সবিষ হূলে
স্পষ্ট বল কুসুম তুমি ছুঁলে?
৩) অভ্যস্ত প্রাণের পাশে অনভ্যস্ত মৃত শুয়ে আমি
মাথার পাশে জ্বলন্ত ধুপ, স্বর্ণচাঁপা ধোঁয়া স্বর্গগামী
এখনও তো রথ আসেনি, বাক্সপ্যাঁটরা বাঁধাছাঁদা সারা
ততক্ষণ এই দুয়েক পংক্তি মাদকদ্রব্য, অনন্ত মাতলামি।
আপাদমস্তক শিহরিত করে এইসব পংক্তি। তারপর আরও ...আরও। কবিতার পর কবিতা। 'তোরঙ্গ', প্রিয়তমা', 'পুরাণ', 'মারুবেহাগ', 'শ্মশান'...বুঁদ হয়ে যেতে হয়। মাথা নত করে দাঁড়াতে হয় শুদ্ধ কবিতার সামনে। কোনও বিশ্লেষণই অপ্রয়োজনীয় এখানে। কেননা, প্রকৃত কবিতা সঙ্গীতের মতো স্বাধীন। কবি সুমিত দে আখরের চিকারি তারে পরাবাক, বৈখরী, পশ্যন্তি পর্যন্ত বাজিয়ে তোলেন পাঠকের নিলীন চেতনায়। আরেকবার প্রমাণিত হয় A poem is a POEM, is a POEM। বইটির অঙ্গসৌষ্ঠবও দেখার মতো। সব মিলিয়ে এ বই সর্ব ইন্দ্রিয় দিয়ে শুষে নেওয়ার জন্য। অনেকদিন এরকম সুনির্মিত গ্রন্থ আমাদের হাতে আসেনি।
ধুলোউড়ি ছায়া তুমি সিন্ধুভৈরবী
সব্যসাচী ভট্টাচার্য
প্রকাশক : সোঁতা প্রকাশনা
বিনিময় মূল্য : ৭০ টাকা
এই কবিতার বইটির নামই অনেক কথা বলে। সমস্ত কবিতায় কথার অনুষঙ্গ ফিরে ফিরে আসে। কথার ধুলোয় আকাশ ঢাকা। কোলাহলের ধ্বনি ওঠে ঊর্ধপানে :
তোমার আমার
সবার কথায়
নীলকন্ঠ তারারা
রাতপ্রণত...
আরও কথা চাই, দেবে?
নইলে যে নেশা জমবে না! (১০৬)
এই কথার আবিলতা আড়াল করে ভেতরের আলোকে। এক চিরশাশ্বত 'তুমি' ঢাকা পড়ে যায়। নীরবতার আলোয় গড়া, 'আমি'-- এর মধ্যে স্থিত সেই 'তুমি' :
আলোর চোখ আমাকে দেখে
চোখের আলো আমি দেখি
তুমি কে? (১২৬)
কিন্তু এই কল্লোলে কোলাহলেও জাগে সঙ্গীত। কবির বোধি 'তুমি'কে ষড়জ ধরে কথার মাঝের সুর খুঁজে নিয়ে আলাপ করে সিন্ধু ভৈরবীর। আর তখন :
মধ্যমা ছুঁয়ে
শেষ বৈখরীবাক্
কথা...
'কে তুমি!'
পরাবাক ব্যাখ্যা সব
ভিড় করে
গহন কুঠুরিতে ----- (১০৩)
ধোঁয়াচ্ছে
অরিজিত সান্যাল
বিনিময় মূল্য : ১২৫ টাকা
অরিজিত সান্যালের লেখা কবিতার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। তাঁর স্বপ্রকাশনায় 'ধোঁয়াচ্ছে' কাব্যগ্রন্থ পরিচয় ঘটাল। আমরা আবিষ্কার করলাম এক কবিকে যিনি যাপনকে খণ্ড খণ্ড করে ছড়িয়ে দিয়েছেন কবিতায় কবিতায়। আমরা দেখতে পেলাম এক জায়মান নির্মাণ ক্রিয়া। অনুভূতির রঙ ছড়ানো ডাকনামে। সে ডাকনাম প্রেমের : চুম্বনের নোনা স্বাদে গন্ধে রাঙিয়ে দিই তোমার সারা শরীরে অঙ্গে গোপনাঙ্গে, মনে মানসিকতায়, ভালোবাসায় ভালবাসাতে ; যতক্ষণ না তুমি হেসে উঠে বলবে, ভালোবাসি। কখনো দেখি স্মৃতিরপটে বহুবর্ণিল ছবি আঁকা। টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজ : মন খারাপ করা গন্ধ , কফির পেয়ালায় উড়ন্ত আমেজ, সেদিনের রোগা ছেলেটা এখন জীবনদায়ী কবিতায় মগ্ন... কথা রাখতে না পারার অভিমান কখনো রচনা করে ব্যবধান আজ জীবন মধ্যমায় পরম্পরা ছিটকে দিয়েছে পরস্পর দোষারোপে জর্জরিত অবধারিত মিথ্যাচার কী হয়েছে তোমার? তবে ব্যবধানই জীবনের শেষ কথা নয়। নান্দনিকতায় গড়ে ওঠে এক প্রগাঢ় বন্ধন। অথচ কবিহৃদয় জানে এ বন্ধন শব্দ সৃজিত আজ তাই আমাদের কবিতা আকাশের অনেক কাছাকাছি আর তোর আমার সম্পর্ক কিন্তু শুধু কবিতাতেই বাঁধা। বহু ওঠা পড়া, বহু অভিমান নির্বেদ অতিক্রম করে জীবনকে চিনে নিয়ে তাঁর উপলব্ধ জীবন সত্য উচ্চারণ করেন কবি এই খড়কুটো নিয়েই বেঁচে থাকা, এইটুকুই জীবনের সার, হাসি দুঃখ, চলার সাথী, জীবনের অবয়ব, প্রতিবিম্ব, ভারসাম্য। সবই থাকে, সবই আছে... এই উচ্চারণেই স্থিত হয় ধোঁয়ানো জীবনের অস্থিরতা। তবুও সৃষ্টি প্রক্রিয়া এক নিয়ত চলিষ্ণুতার নাম। আমরা তাই কবিকে বলতেই পারি চরৈবতি চরৈবতি।
ঋতবাক-কে অনেক ধন্যবাদ আমার 'ধোঁয়াচ্ছে'র একটি পর্যালোচনা উপস্থাপনের জন্য। রইল সুস্মিতা সিংহ রায়ের জন্য অজস্র শুভেচ্ছা।
ReplyDeleteসগর্বে এগিয়ে চলুক ঋতবাক....!
অক্ষর উড়ান বইটি হাতে নিয়ে আমি মোহিত।আবৃত্তিযোগ্য তো নিশ্চয়,তার পাশাপাশি সম্পূর্ণ বইটি একটি যাপন-যাত্রা বিশেষ।প্রথম কবিতায় কবি যে দেহাতীত বেঁচে থাকার অনিবার্য অভিঘাত এঁকেছেন,শেষ কবিতায় তিনি দেখেছেন দেহপট ছেড়ে অপার্থিব অতীন্দ্রিয় মিলনের জন্য সমুদ্রে পা ঠোকা ঘোড়ার অধীরতা। আর মাঝখানটুকু ভরে আছে জীবনের ওঠা পড়ার নানা বর্ণময় আখ্যানে...কখনো তির্যক, কখনো মায়াময়, কখনো অনাবিল বিশ্লেষণে।অবশ্য -সংগ্রহ যোগ্য।অন্যতম ভালো কবিতাবই।
ReplyDeleteঅক্ষর উড়ান বইটি হাতে নিয়ে আমি মোহিত।আবৃত্তিযোগ্য তো নিশ্চয়,তার পাশাপাশি সম্পূর্ণ বইটি একটি যাপন-যাত্রা বিশেষ।প্রথম কবিতায় কবি যে দেহাতীত বেঁচে থাকার অনিবার্য অভিঘাত এঁকেছেন,শেষ কবিতায় তিনি দেখেছেন দেহপট ছেড়ে অপার্থিব অতীন্দ্রিয় মিলনের জন্য সমুদ্রে পা ঠোকা ঘোড়ার অধীরতা। আর মাঝখানটুকু ভরে আছে জীবনের ওঠা পড়ার নানা বর্ণময় আখ্যানে...কখনো তির্যক, কখনো মায়াময়, কখনো অনাবিল বিশ্লেষণে।অবশ্য -সংগ্রহ যোগ্য।অন্যতম ভালো কবিতাবই।
ReplyDelete