ছোটগল্প - সাম্য দত্ত
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
বাগী
সাম্য দত্ত
হিসসসসসসস
এইবার সাপটাকে দেখতে পায় আয়েষা। পাহাড়ি কেউটে, রঙটা হলুদ বলেই বোধহয় এতক্ষণ চোখে পড়েনি। হলুদ ছাড়া আর কোন রঙটাই বা আছে এখানে? মূর্তিমান দম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ভুঁইফোঁড় সব টিলা, জগদ্দল একেকটা পাথর- সবকিছুতেই তো সেই হলুদের ছাপ! চামড়ায় জ্বালা ধরানো রোদের রঙ হলুদ, শুকনো হাওয়ায় উড়ে বেড়ানো বালির রঙও হলুদ- প্রকৃতি যেন তার যাবতীয় রঙের জৌলুস হারিয়ে এই রুক্ষ হলুদের রাজ্যে প্রবেশ করেছে।
পরস্পরের গায়ে হেলান দেওয়া দুটো পাথরের ফাঁকে, একটা গর্তের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে সাপটা। ওই যে! চেরা জিভে সূর্যের আলো পড়ে ঝিকিয়ে উঠছে! লিকলিকে হলুদ শরীরটা এতক্ষণ মিশে ছিল পাথরের রঙে, এইবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আশেপাশের গ্রামগুলোকে লুঠমারি থেকে রেহাই দেওয়া হয়। বদলে গাঁও-বুড়োরা ভেট পাঠায় নিয়ম করে। বস্তা ভর্তি গেঁহুর সঙ্গে দু'একটা নধর বকরাও আসে মাঝেসাঝে। লুঠের রাতে বাগীরা দিস্তা দিস্তা রুটি ওড়ায়, একেকজন সাবাড় করে একটা আস্ত পাঁঠা।
ভেট পাওয়া বকরাগুলোকে এখানে চরাতে নিয়ে আসে গুজ্জর। গিনতিতে একটা কম দেখেই সন্দেহ করেছিল, অনেক খোঁজাখুঁজির পর এই পাথরটার সামনেই জন্তুটার লাশ পাওয়া যায়। পায়ে জোড়া দাঁতের দাগ নিয়ে, মরে কাঠ হয়ে পড়ে ছিল। - জরুর ইসি নে কিয়া হোগা!
ফণা তুলেছে সাপটা। মনে মনে একটু হাসল আয়েষা। বেহড়ের নিয়ম জানিসনা তুই? খুন কা বদলা খুন! এখানে সহাবস্থানের নিয়ম খাটে না রে! হম সবহি হত্যারে হ্যাঁয়। সবাই ঘাতক! তুই, আমি... সব্বাই! বেঁচে থাকার তাগিদেই, আত্মরক্ষার নানান কৌশল আমাদের শিখে নিতে হয়েছে। আমার হাতের লাঠিটা দেখেছিস? এই দেখ! এবার এই লাঠি তোর মাথায় পড়বে। তারপর, হয় মারব, আর নাহয়-
"অব মর তু!"
লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেছিল আয়েষা। কিন্তু, দু'পা এগিয়েই থমকে দাঁড়াতে হলো-
হিসসসসসসস......
সাপটা গজরাচ্ছে বটে, তবে ঠিক রাগে নয়। যেন একটু ত্রস্ত, সতর্ক ভাব। চোখের স্বাভাবিক ক্রূর দৃষ্টিটাও নেই, বদলে কেমন একটা অসহায়তার আভাস। গর্তের ভেতরে চোখ পড়তেই, কারণটা বুঝতে পারে আয়েষা।
মাদী সাপ। সদ্য ডিম পেড়েছে, শরীর শ্রান্তিতে স্লথ। ডিমগুলো আঁকড়ে পড়ে আছে একফালি সরু সুতোর মতো। আয়েষাকে তেড়ে আসতে দেখেই আবার গর্তে গিয়ে ঢুকেছিল। এবার ধীরে ধীরে, অতি কষ্টে মাথাটুকু তোলে।
হাতের লাঠি ধরা রইল হাতেই, মারা আর হলো না। সেই যে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল, দাঁড়িয়েই রইল বোকার মতো। সাপটা একদৃষ্টে তাকে লক্ষ্য করছে। সেদিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, আয়েষার অজান্তেই একসময় নেমে এল তার লাঠিসমেত হাতটা।
তারপর, দু'দিকে দুজনের সম্মোহিত দৃষ্টির মাঝখানে, স্তব্ধ হয়ে রইল একটা দীর্ঘ সময়। ঠিক কতক্ষণ? কে জানে! বেহড়ের রুক্ষ প্রকৃতি আরও থমথমে হয়ে উঠলো সেই নৈঃশব্দের ভারে।
কেবল একটা মৃদু শিসের শব্দ, মৃদু অথচ তীক্ষ্ণ, বারেবারে আছড়ে পড়লো সেই নিস্তব্ধতার বুক চিরে:
হিসসসসসসস
ছোট্ট একটা মানুষ। ফুটফুটে, নিষ্পাপ। তুলতুলে হাত-পা নেড়ে খেলা করে আর থেকে থেকেই কেঁদে ওঠে তার মাখন-নরম গলায়: ওঁয়া-ওঁয়া ওঁয়া... দেখতে দেখতে ঠাকুর উজাগর সিং-এর পাথুরে মুখটাও কেমন কোমল হয়ে যায়। আ মলো যা! সর্দার কাঁদবে নাকি?
ও সোনা, কবে আসবি তুই? কতদিন পর ডাকবি 'আম্মি' বলে? বল না রে! ও সোনা...
একটা অস্পষ্ট খসখস শব্দ শুনে ধড়মড়িয়ে জেগে ওঠে আয়েষা। অভ্যস্ত হাত অন্ধকারেও খুঁজে নেয় বিশ্বস্ত রাইফেলটাকে, আর তারপর...
"ভাগো, পুলিসকে কুত্তে পিছে হ্যাঁয়!"
-এই চেতাবনিটুকুরই অপেক্ষা। শোনামাত্র দৌড়-দৌড়-দৌড়। যমুনার বেহড় আর দুর্ভেদ্য সব ডাঙ্গ এফোঁড়-ওফোঁড় করে পালিয়ে বেড়ানো। দিন নেই, রাত নেই, শুধুই শিকারী কুকুরের তাড়া খাওয়া খরগোশের মত পালানো।
তবুও আয়েষা বেগম বাঁচতে চেয়েছিল। না, নিজের জন্য নয়। হারানো অতীতের টুকরো টুকরো স্মৃতি যখন দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসে,ঘেন্নায় মুখ বিকৃত করে থুতু ফেলে আয়েষা। আর ভবিষ্যৎ? মরা চাঁদের আলোয় ক্লান্ত হাসি খেলে যায় তার মুখে। বাগীর ভবিতব্য তো জানাই আছে, ভাগতে রহো! ভাগতে রহো, যতক্ষণ না নিয়তির সেই অলঙ্ঘনীয় বুলেট এসে সব ভাগদৌড় থামিয়ে দিচ্ছে।
দিনের পর দিন হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে, ময়াল সাপের মতো ক্লান্তি এসে প্যাঁচে -প্যাঁচে জড়িয়ে ধরে শরীর। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডাগর চোখদুটো বুজে আসে। আর তখনই স্বপ্ন দেখে আয়েষা- ছোট্ট একটা মানুষ। ফুটফুটে, নিষ্পাপ... ঘুমের দেশের অন্ধকার আকাশ চিরে একফালি বিদ্যুৎঝলকের মত একটা স্বপ্ন। ক্ষণস্থায়ী, ঠুনকো। তবুও সেটুকুকে আঁকড়ে ধরেই বাগীরাণী আয়েষা বাঁচতে চেয়েছিল।
পোয়াতি মেয়েমানুষ বাগীর দলের পক্ষে বোঝা। ঠাকুর জানতে পারলে হয়তো... না, মুখ বুজে থেকেছে আয়েষা। ঝাঁসি, টিকমগড়,হামিরপুর- লম্বা লম্বা পাড়িতে ভারি শরীরটা হাঁপিয়ে উঠেছে। তবুও তার ভেতরে বেড়ে ওঠা আরেকটা প্রাণের অস্তিত্ব, অনেকদিন অবধি কাউকে টের পেতে দেয়নি। কিন্তু বেহমাই-এর খাড়াই পথে অবসন্ন আয়েষা যেদিন নিজের বমিতে মুখ গুঁজে পড়ে রইল, সেদিন আর লুকোছাপা খাটল না-
"মর যা শালী কুত্তি! শালী, তু অর তেরে ইস বচ্চেকো লেকে ম্যাঁয় কঁহা কঁহা ভটকতা ফিরুঙ্গা?"
উজাগর সিং প্রথমটায় রাগারাগি, তারপর মারধর করেছে। ঠাকুরের জুতো আর রাইফেলের বাঁট নীল চাকা চাকা কালশিটের দাগ বসিয়েছে আয়েষার শরীরে। কিন্তু আয়েষাকে টলানো যায়নি। "ম্যায় বচ্চা নহি গিরাউঙ্গি।"
তাই গ্রীষ্মের এক সকালে, আয়েষার মৃতদেহ যখন পুলিশের ট্রাকে উলঙ্গ করে টাঙ্গিয়ে সারা টিকমগড় ঘোরানো হচ্ছে, তামাশা দেখতে জড় হওয়া হাজার খানেক লোকের ভিড় থেকে দু'একটা বিস্মিত কন্ঠস্বর শোনা গেল:
"শালী চুড়েইল পেট সে থি কেয়া?"
বাপ-মা মরা আয়েষা বড় হচ্ছিল মামারবাড়িতে। মামা মানুষটি বড়ই স্নেহপ্রবণ, বিশেষত রাতবিরেতে তাঁর স্নেহের বাঁধ ভাঙতো। মামী ফরিদা বেগম যে রাতে তাঁর স্বামীকে ভাগ্নীর ওপর আবিষ্কার করেন, ঠিক তার দু'দিন পর আয়েষার ষোলোয় পা দেবার কথা। তড়িঘড়ি করে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল সারহুপুরের এক দোজবরে বুড়োর সঙ্গে।
মরদকে দেখেই আয়েষার মন বিদ্রোহ করে উঠেছিল। সুহাগরাতে সেই অথর্ব বুড়ো যখন তার গরারার কোমরের ফালিতে টান দিয়েই হ্যা হ্যা করে হাঁপাতে লাগলো, রাগে আর বিরক্তিতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো আয়েষার।
জোড়া পায়ের লাথিটা লেগেছিল পাঁজরের ঠিক মাঝখানে। ছিটকে পড়েছিল বুড়ো আহমদ খাঁ।
তালাক! তালাক! তালাক!
"আরে মিঁয়া! কাহেকা রপট? চিড়িয়া উড় গয়ি।" থানেদার সাহেব কার্যত ভাগিয়েই দিয়েছিলেন আহমদ খাঁকে।
মামী তাকে দ্বিতীয় দফা পার করার মতলব করেছিলেন। একহাত ফেরতা হলে কী হয়, আগুনে রূপ ষোড়শী আয়েষার। গাঁয়ের ছেলেছোকরাদের বুরি নজর তো আছেই, ঘরের লোকটিকেই বা ভরসা কি? কিন্তু ফরিদা বেগমকে এযাত্রায় আর বিশেষ পরিশ্রম করতে হল না। ঠাকুর উজাগর সিং-এর গিরোহ যেদিন গ্রাম লুঠতে এসে তাকে তুলে নিয়ে গেল, অবাক চোখে আয়েষা দেখল, মামী টুঁ-শব্দটিও করলেন না। আর অ্যাদ্দিন তার পেছন-পেছন ঘোরা সেইসব মরদের দল? তাদের বেশিরভাগই পালিয়েছে। যারা পালাতে পারেনি, যাবার সময় তাদের নিথর দেহে পদাঘাত করে গেল ডাকাতের দল। নোনজুর হাত পাকা, তার কাট্টার অব্যর্থ নিশানা সেই লুব্ধ চাতকদের চোখের ওপর চিরস্থায়ী পর্দা নামিয়ে দিয়েছে।
তা, এ আর এমন কি ব্যাপার! লাশ তো পড়েছে মোটে দশটা, আর একটা ছোকরিকে তুলে নিয়ে গেছে বাগীরা। ধুর! এত ছোটখাটো ব্যাপারে পুলিশের মাথা ঘামানোর কী আছে? "ই চম্বল নদীমে, আধা পানি বহেতা হ্যায়, অউর বাকি আধা খুন। সমঝে?"
-"ভুল যাও মিঁয়া।" থানেদার সাহেব হাই তুললেন।
ভুলে তিনি নিজেও গিয়েছিলেন। কিন্তু একদিন তাঁকে মনে করতেই হল, যখন ওপর মহল থেকে তাড়া এল- আয়েষাকে চাই, 'অপারেশন বিউটি কুইন।'
ততদিনে বাগী আয়েষা বেগমের মাথার দাম ধার্য হয়েছে: দেড় লক্ষ টাকা!
-‘‘কা রে মোরী, তু পুতলী বন পায়েগি?’’
ঘাড় ঘুরিয়ে ঠাকুরের মুখের দিকে একপলক তাকায় আয়েষা। যেন ছেনি-বাটালি দিয়ে পাথরে খোদাই করা মুখ, কাঠিন্যের মধ্যেও একটা সৌন্দর্য্য আছে। ঈষৎ তামাটে মুখের সঙ্গে সরু গোঁফজোড়া মানিয়েছে ভালো। বেড়ালের মত চোখদুটোয় ধূর্তামি ছাড়াও কী একটা যেন আছে...
-‘‘কা, পুতলী কৌন থি, পতো হ্যায় না?’’
পুতলীর নাম কে না শুনেছে? বেহড়ের ত্রাস পুতলী আশপাশের তিনটে রাজ্যের পুলিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। ঠাকুরের বলিষ্ঠ হাত বন্দুকের ওপর তার হাতদুটো ধরে আছে, একটা শিরশিরে ভালো লাগায় অবশ হয়ে যাচ্ছে শরীর।
-"মোয়কা পুতলীসে ভি আগে বঢ়না হই।" দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারণ করে আয়েষা।
-"শাবাস! ফির লাগা নিশানা।" উজাগরের হিংস্র হাসির হলকা লাগে আয়েষার কানে।
অনেকদিন পর একটা সরেস পকড় পাওয়া গিয়েছিল। আগ্রার ধনী ব্যবসায়ী ব্রিজমোহন গুপ্তার ছেলের জন্য পঞ্চাশ হাজার ফিরৌতি হেঁকেছিল ঠাকুর। বেঁকে বসলো ব্রিজমোহন। পয়সা দিতে ইনকার তো করলোই, ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য হত্যে দিয়ে পড়লো এক শালা মিনিস্টারের পায়ে। পুলিশে ঠাকুরের মুখবীর ছড়ানো আছে, তারাই খবর দিয়েছে- কানপুর থেকে টিম আসছে ঠাকুর উজাগর সিং-এর দলকে ধরতে। ধরতে পারলে পুলিশ যে তাকে কয়েদ অবধি নিয়ে যাবার ঝক্কি পোহাবে না, ঠাকুর ভালোভাবেই জানে। "ঠোক দেগা সিধা। অগলে দিন অখবার মে ছাপেগা, পুলিশকে সাথ মুঠভেড়মে ডাকু উজাগর সিংকা মৌত। শাল্লা..."
নাহ! ডেরা তুলতে হবে আজই। তবে তারও আগে, বোঝা নামাতে হবে ঘাড় থেকে।
-‘‘লাগা নিশানা!’’
পেছনের পাহাড় এখন কুয়াশায় অদৃশ্য। সেদিক থেকে একঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া এসে আয়েষাকে সামান্য কাঁপিয়ে তোলে। পালিয়ে যাওয়া যায় না? কিন্তু যাবেটা কোথায়? আবার মামা-মামীর কাছে? ভাবতেও ঘেন্না করে আয়েষার। তার চেয়ে... এই তো ভালো! সামনে লক্ষ্য তো স্থির করাই আছে, পুতলীকেও ছাপিয়ে যেতে হবে।
পকড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা হয়েছে একটা গাছের সঙ্গে। থরথর করে কাঁপছে ছেলেটা, নোংরা করে ফেলেছে পরনের কাপড়-চোপড়। সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বন্দুকের ঘোড়া টিপে দিল আয়েষা, চোখের পাতাও কাঁপল না... 'পুতলীসে ভি আগে বঢ়না হই!'
মোটাসোটা মহিলার মুখটা চেনা চেনা ঠেকেছিল প্রথমটায়। তাদেরই গাঁয়ের কেউ? হবে হয়তো!
হাতে ধরা কানের দুলটার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে ছিল আয়েষা। দুলের সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটার কানেরও খানিকটা ছিঁড়ে এসেছে। মেয়ের মা তাই তারস্বরে অভিশাপ দিচ্ছে তাকে। বাসভর্তি লোক ভয়ে সিঁটিয়ে আছে, চেঁচাচ্ছে কেবল একজন: - ‘‘ডায়েন! শ্রাপ লাগেগি তেরেকো! কুত্তেকি মৌত মরেগি তু! শালী চুড়েইল...’’
নাহ্! চিনতে পারে না আয়েষা। তিতিবিরক্ত হয়ে বন্দুক উঁচিয়ে ধরে মহিলার দিকে।
চিনতে পারেনি আহমদ খাঁও। সারহুপুরের কুড়িটা বাড়িতে একসাথে ডাকাতি করা দলটার নেতৃত্ব দিল এক ঔরত, তাতেই তার বিস্ময়ের অবধি ছিল না। তাই বেলবটমস পরা সেই দুরন্ত ঔরত যখন হাতখানেক দূর থেকে গুলি করে তার কপাল ফুঁড়ে দিচ্ছে, তখন তার সাথে বছর পাঁচেক আগে শেষবার দেখা এক ষোড়শীর কোনও মিলই খুঁজে পায়নি আহমদ খাঁ।
না, আহমদ খাঁর দিকে বন্দুক তাক করেও হাত কাঁপেনি আয়েষার। তবে, সেই রাতে লুঠ সেরে ফেরার পথেই, প্রথমবার অনুভব করেছিল নতুন অতিথির আগমন বার্তা। কাঁপা-কাঁপা হাতটা নিজের পেটের ওপর রাখতে, কী এক অনভ্যস্ত রোমাঞ্চে শিহরিত হয়েছিল তার সারা শরীর। মা হতে চলেছে আয়েষা! বাগী আয়েষা বেগম!
নিশুতি রাতে, প্রায় জনশূন্য সেই গিরিখাতে দাঁড়িয়ে, বেহড়ের প্রতিটা পাথর থেকে নিজের দুরুদুরু হৃৎস্পন্দনের প্রতিধ্বনি শুনেছিল আয়েষা।
ব্রিটিশ আমলের আইসিএস-দের মধ্যে হাতেগোনা যে কয়েকজন এখনও অবশিষ্ট রয়েছেন, পেস্টনজি ওয়াদিয়া তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অবসরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এই অফিসারটি প্রশাসনিক মহলে খ্যাত তাঁর হিমশীতল মস্তিষ্কের জন্য। পেস্টনজির একটা বড় গুণ, কোনও অবস্থাতেই বিশেষ বিচলিত হন না। অন্তত হিমাঙ্কের অনেক নীচ থেকে ভেসে আসা তাঁর চাহনি, আর ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রাখা বাঁকা হাসিটা দেখে মনের ভাব টের পাওয়া যায় না।
আজ এই ঘর ভর্তি সাংবাদিকের হাজারো বেয়াড়া প্রশ্নের সামনে পড়েও পেস্টনজি তাঁর মার্কামারা চাহনি আর বাঁকা হাসিটা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। মাঝেমধ্যে হালকা দু'একটা কুঞ্চন কপালে দেখা দিচ্ছিল বটে, কিন্তু সে কেবল কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
-‘‘ইয়েস, আই হোল্ড দ্য প্রেস রেসপন্সিবল কমপ্লিটলি। চম্বলের বাগীদের আপনারা অতীতেও গ্লোরিফাই করেছেন, এখনও করছেন... কে, কেন, কোন পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাগীর জীবন বেছে নিয়েছে, দিজ স্পেকিউলেশনস আর ইউজলেস। দ্য ভ্যালি অফ চম্বল ইজ ইনফেস্টেড উইথ থাউজ্যান্ডস অফ ডেকয়েটস। আপনারা যদি প্রত্যেকের ইতিহাস ধরে ধরে তাদের সোসিও-ইকোনমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বিচার করতে বসেন... ওয়েল, দেন দ্য কার্স অন দিস ভ্যালি উইল প্রিভেইল ফরএভার... সোসাইটি ডিমান্ডস প্রোটেকশন আগেনস্ট ক্রিমিনালস, অ্যান্ড আয়েষা ইজ আ ক্রিমিনাল... উত্তরপ্রদেশ সরকার আয়েষাকে এক মাস সময় দিচ্ছে। এই সময়সীমার মধ্যে সে রাজ্যের যে কোনো থানায় আত্মসমর্পণ করতে পারে। কিন্তু তারপর, আর একটা দিনও নয়। আওয়ার প্রভিন্সিয়াল আর্মড কন্স্ট্যাবুলারি ইজ রেডি টু এলিমিনেট হার।’’
-‘‘কহেকা দবিশ! ঠাকুরকো গর্দনমে সাঙ্গিন ঘুসাকে মারা কুত্তোঁনে!’’
খবরের কাগজটা খসে পড়ে হাত থেকে। পা দুটো থরথর করে কাঁপছিল, লম্বুর হাতটা ধরে কোনমতে মাটিতে বসে পড়ে আয়েষা।
কাগজের প্রথম পাতাতেই খবরটা জ্বলজ্বল করছে। পড়তে পারে না আয়েষা, কখনও কেউ হাতে ধরে অক্ষর চেনায়নি তাকে, কিন্তু ছবিটা দেখেই তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সার দিয়ে সাজানো আছে মৃতদেহগুলো: ঠাকুর উজাগর সিং, গুজ্জর, বলবন্ত... শরীরী হাবভাবে সফল শিকারীর অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে, একটা লাশের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন শঙ্করলাল বাজপেয়ী, কলপী থানার অফিসার ইন চার্জ।
ছয় মাস পার হয়ে গেছে আয়েষার। খিরিয়াঘাট গ্রামের একটা ভাঙাচোরা বাড়িতে তাকে অস্থায়ী ভাবে রেখে গিয়েছিল ঠাকুর। এই বাড়ির মালিক রামভরোস ঠাকুরের কিরকম আত্মীয়। রামভরোসই লম্বুকে এখানে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিল। দরজা খুলে লম্বুর মুখখানা দেখেই আশঙ্কায় বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছিল আয়েষার।
-‘‘কোইভি... কোইভি নহি বচা?’’
-"জরুর উস নোনজুনে গদ্দারি কিয়া হোগা!" গর্জে ওঠে লম্বু, "ম্যায় বোল রহা হুঁ বাই, লিখ লেনা মেরি বাত! শাল্লা হারামখোর..."
নোনজু! নোনজু তো প্রথম দিন থেকে এই গ্যাং-এর সদস্য! ঠাকুর উজাগর সিং নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসতো তাকে। সেই নোনজু... নাহ্! আর ভাবতে পারে না আয়েষা।
-‘‘হমে বদলা লেনা পড়েগা, বাই! ফিরসে গ্যাং বনানা পড়েগা।’’
প্রতিশোধ! খুন কা বদলা খুন! তার মানে তো আবার সেই বেহড়ের জীবনে ফিরে যাওয়া! না না... লম্বুর অনর্গল বাক্যস্রোতের কিছুই আর আয়েষার কানে ঢুকছিল না। চিন্তাভাবনাগুলো জট পাকিয়ে যাচ্ছে, ধোঁয়াটে লাগছে মাথার ভেতরটা। এমন সময়-
পেটের ওপর একবার হাত দিয়েই চমকে ওঠে আয়েষা। বাচ্চাটা হঠাৎ প্রবল দাপাদাপি শুরু করেছে, যেন বারবার লাথি মেরে ভেঙে ফেলতে চাইছে গর্ভের অন্ধকার। একটা হাত পেটের ওপর রেখে, স্থির হয়ে বসে থাকে আয়েষা।
-‘‘লম্বু! মোয়কা হাজির হোনা হই।’’
কী বলছে বাই? সারেন্ডার করবে? বাই-এর কি হঠাৎ মাথা খারাপ হয়ে গেল? প্রতিবাদে ফেটে পড়ে লম্বু। পুলিশের কাছে গেলে, পুলিশ তাদের ছাল ছাড়িয়ে থানার চৌহদ্দিতে টাঙ্গিয়ে রাখবে।
-‘‘নহি রে, পুলিশকে পাস নহি। ম্যায় বাবাকে সামনে হাজির হোনা চাহতি হুঁ।’’
বাবা বিনোবা ভাবে চম্বলের বাগীদের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান। বছর দশেক আগে, প্রবীণ এই গান্ধীবাদী নেতা সর্বোদয় যাত্রা শুরু করেছিলেন। "সব ভূমি গোপাল কী"- তাঁর প্রেমের বর্তিকার টানে হাতিয়ার তুলে রেখেছিল একুশ জন বাগী। সরকার যাদের ধরতে পারলে ফাঁসিকাঠে ঝোলাতো, তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বাবা।
নাহ্! আয়েষাও বাবার কাছেই হাজির হবে, প্রাণ ভিক্ষা চাইবে নিজের আর পেটেরটার জন্য।
কিন্তু যাবে কি করে? লম্বুই তাকে কঠোর বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। বাবা এখন থাকেন তাঁর সর্বধাম আশ্রমে, ওয়ার্ধার কাছে পাওনারে। এখান থেকে নাহোক দুশো কিলোমিটার! এই অবস্থায় আয়েষাকে সেখানে নিয়ে যেতে হলে গাড়ি ভাড়া করতে হয়।
-‘‘পর হমারে জেবমে তো ফুটি কৌড়ি ভি নহি হ্যায়!’’
একমুহূর্ত চুপ করে থেকে, দৌড়ে গিয়ে নিজের রাইফেলটা নিয়ে আসে আয়েষা। বাগী পান সিং-এর আড্ডা এখান থেকে খুব দূর তো নয়! বিরাট বড় গ্যাং, বাড়তি গুলি-বন্দুকের প্রয়োজন তাদের হবেই!
-‘‘মেরি রাইফেল অউর ই সারা কার্তুজ গিরমি রখ উনকে পাস। কুছ তো আহি যায়েগা হাথমে! ইতনে মে নহি হোগা কা? এ লম্বু! চুপ কাহে হ্যায়? বোলনা কুছ... এ লম্বু! বোলনা...’’
-‘‘শি ওয়ান্টস টু সারেন্ডার? দ্যাটস ফানি!’’
হামীরপুরের পুলিশ সুপার যজুবেন্দ্র সিং বুঝে উঠতে পারলেন না, এর মধ্যে মজাটা ঠিক কোথায়! কর্তা যেখানে নিজেই সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন
-‘‘বাট উই আর নট ইন্টারেস্টেড টু ক্যাচ হার অ্যালাইভ। নো নো, নট অ্যাট অল!’’
বড়কর্তার বরফ শীতল চাহনির সামনে ঘেমে ওঠেন যজুবেন্দ্র। আয়েষা বেগম এখন তাঁর এলাকাতেই লুকিয়ে আছে। পুলিশের ইনফর্মারদের পাঠানো খবর ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে ওপরমহলে।
-‘‘আয়েষাকে এখন কোর্টে প্রোডিউস করা মানে, সাধ করে দীর্ঘমেয়াদি ঝঞ্ঝাট ঘাড়ে নেওয়া। ওহ্ নো! শি ইজ নট ওয়র্থ দ্যাট ট্রাবল।’’
-‘‘বাট স্যার...’’
-‘‘বিগত দুই দশকে আমি একশোরও বেশি ডাকাতকে ঠাণ্ডা করেছি। বাট বিফোর আই রিটায়ার, আই ওয়ান্ট অ্যানাদার ফেদার ইন মাই ক্যাপ। ’’
-‘‘স্যার, দ্যাট গার্ল-’’
-‘‘সিং, আই উড অ্যাপ্রিসিয়েট, ইফ ইউ অ্যাড্রেস হার অ্যাজ 'দ্যাট বিচ।'’’
-‘‘ইয়েস স্যার...দ্যাট...দ্যাট আয়েষা, শি ইজ প্রেগনেন্ট!’’
-‘‘ইয়েস, আই হ্যাভ বিন ইনফর্মড সো।’’
-‘‘সো স্যার...’’
-‘‘সো হোয়াট, সিং?’’
-"বাট স্যার," পেস্টনজির তাচ্ছিল্যের হাসিটা একরকম অগ্রাহ্য করেই বলে ওঠেন যজুবেন্দ্র সিং, "ডিড উই নট মেক অ্যান এক্সেপশন ফর উধম সিং? হি ওয়াজ অ্যালাউড টু সারেন্ডার। সো..."
এবার ঘর কাঁপিয়ে অট্টহাস্য করে ওঠেন পেস্টনজি। "তোমার কাছ থেকে এরকম ছেলেমানুষি তুলনা আমি আশা করিনি, সিং! ইউ আর ইন সার্ভিস ফর আ লং টাইম নাউ! লোয়ার কাস্টগুলোর মধ্যে উধম সিং-এর কী ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল, তুমি জানো না? ইলেকশনের ঠিক মুখে উধমকে এক্সিকিউট করা মানে... ওহ্ নো! উই কুড নট অ্যাফর্ড টু টেক দ্যাট রিস্ক।"
-"বাট স্যার," যজুবেন্দ্র একটা শেষ চেষ্টা করেন, "আয়েষা বিলংস টু দ্য মাইনরিটি কমিউনিটি। ইফ উই এক্সিকিউট হার, ওন্ট দ্যাট..."
-"তুমি আয়েষার মার্ডার ভিকটিমদের লিস্টটা দেখেছ?" পেস্টনজির গলায় আবার কেজো সুর ফিরে আসে, "অর্ধেকরও বেশি মুসলমান। না হে, ওর জন্য মুসলমানদের কোনো সিমপ্যাথি নেই। আর তাছাড়া... উই ডোন্ট হ্যাভ এনি ইলেকশন ইন নেক্সট ফিউ ইয়ার্স!"
যজুবেন্দ্র সিং এরপরেও দাঁড়িয়ে ছিলেন। কর্তার শেষ কথাগুলো চাবুকের মত আছড়ে পড়লো তাঁর কানে:
-‘‘দিস ডিসকাশন ইজ ওভার, সিং! আই এক্সপেক্ট আ নাইস ফেয়ারওয়েল প্রেজেন্ট ফ্রম ইউ। অ্যান্ড নাথিং উইল মেক মি মোর হ্যাপি দ্যান আয়েষা’স প্রিটি হেড।’’
-‘‘তো কেয়া নয়া এম্বাসেডর চাহিয়ে? ইতনেমে বস ইয়েহি মিলেগা... লেনা হ্যায় তো লো, বরনা দফা হো যাও!’’
মোরেনার গ্যারেজ মালিকের সঙ্গে লম্বুর দরাদরির সময়, একপাশে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে ছিল আয়েষা। পার্টি বেকায়দায় পড়েছে বুঝলে সব গ্যারেজওয়ালাই দর চড়ায়, পর ইয়ে কুত্তা তো খুন চুস রহা হ্যায়! শাল্লা হারামী, কয়েকদিন আগে হলে- শালা গাড়ি তো নয়, গাড়ির কঙ্কাল!
নেহাৎ লম্বুর হাত ভালো! এই এবড়োখেবড়ো পথে এতটা চালিয়ে এসেছে, অথচ এই খাটারা গাড়ি এতটুকুও লাফায়নি, ঝাঁকুনিতে একবারও ককিয়ে উঠতে হয়নি আয়েষাকে। এককালে কানপুর-আগ্রা সড়কে ট্রেকার চালাতো, অনভ্যাসেও পুরনো দক্ষতায় মরচে পড়েনি। ভাঙাচোরা রাস্তার পেল্লায় সব গাড্ডা পার হয়ে যাচ্ছে অনায়াসে।
পেছনের সীটে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে নিজের ভাবনায় বুঁদ হয়ে ছিল আয়েষা। আশ্রমের লোকেরা কি তাকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেবে? লম্বু বলছিল, বাবা এখন বুড়া হয়েছেন, লোকজনের সঙ্গে মোলাকাত করতে চান না। তবুও, এই অভাগীকে কি তিনি ফিরিয়ে দেবেন? আচ্ছা, বাবার কথা নিশ্চয়ই সরকার ফেলতে পারবে না! বাবা দয়া করলে, ফাঁসিকা ফান্দা এড়াতে পারবে আয়েষা। জেলে দেবে?দিক না! উমর কয়েদই দিক! অন্তত প্রাণটা টিকিয়ে রাখা যাবে এযাত্রায়! আর বেঁচে থাকা মানে তো, সেই স্বপ্নটাকেও বাঁচিয়ে রাখা... সেই ছোট্ট মানুষ। ফুটফুটে, নিষ্পাপ। তুলতুলে হাত-পা নেড়ে খেলা করবে আর থেকেথেকেই কেঁদে উঠবে মাখন-নরম গলায়...
আধো ঘুম, আধো জাগরণে দেখা সেই স্বপ্নের মদিরতা আচ্ছন্ন করে দেয় আয়েষাকে। শরীরটাই কেবল গাড়িতে পড়ে ছিল, নেশাতুর মন অনেক আগেই পৌঁছে গেছে বাবা বিনোবা ভাবের চরণে।
নাহ্! এই ঘোরটুকু কাটতে দিতে চায়নি আয়েষা। চেয়েছিল বাকি পথটা এইভাবেই পেরিয়ে যাক, কোনও বিপদের আশঙ্কা তার দুঃস্বপ্নেও স্থান পায়নি। তাই, কুঁয়ারী নদীর সাঁকোয় ওঠার মুখে, রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখেও তার সন্দেহ হয়নি। স্বপ্নালু চোখেই নেমে এসেছিল লম্বুর পেছন পেছন। এমনকি, রাস্তার দু'ধারে ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে যারা বেড়িয়ে এলো, তাদের উর্দির খাকি রঙ দেখেও না।
চটকটা ভাঙলো একটা কানফাটানো শব্দে। লম্বুর শরীরটা হাঁটুর কাছ থেকে দুমড়ে পড়ে গেল একটা খড়ের পুতুলের মত। স্বপ্নের স্বর্গ থেকে আছড়ে পড়ার যন্ত্রনায় আর্তনাদ করে উঠলো আয়েষা:
-‘‘মত চালাও গোলি! ম্যায় হাজির হোনে যা রহি হুঁ, মত চালাও গোলি!’’
অনেকগুলো থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলে একসঙ্গে গুলি লোড করার আওয়াজ হলো। শিউরে উঠে আয়েষা দেখলো, রাইফেলগুলোর মুখ আস্তে আস্তে তারই দিকে উঠছে।
-‘‘রহম করো! খুদাকে ওয়াস্তে, রহম করো! মেরে পেট মে বাচ্চা হ্যায়!... অবে কুত্তোঁ, গোলি মত চালাও... ম্যায় হাজির হোনা চাহতি হুঁ...’’
কয়েক মুহূর্তের একটা স্বপ্ন। ক্ষণস্থায়ী, ঠুনকো। তবুও, সেটুকুকে আঁকড়ে ধরেই আয়েষা বেগম বাঁচতে চেয়েছিল। খাকি উর্দির জান্তব উল্লাস যখন তার মৃতদেহের ওপর থেকে চোলিটা টেনে খুলে নিচ্ছে, আয়েষার সেই স্বপ্ন তখন অবিশ্রান্ত লাল ধারায় গিয়ে মিশছিল কুঁয়ারী নদীর জলে।
0 comments: