0

মুক্তগদ্য - দীপাঞ্জনা মণ্ডল

Posted in


মুক্তগদ্য


হয়ে ওঠার অন্ধকার ও ফিনিক্সের আগুনযাপন
দীপাঞ্জনা মণ্ডল


অপর্যাপ্ত আলোর জন্য দুজনে দুজনের মুখ দেখছিল অপলক, দৃষ্টিটা জন্মাচ্ছিল গলার অথবা আঙুলের ডগার সীমাবদ্ধতা থেকে। বলায় বা ছোঁয়ায় যা আঁকা যায় না - চাঁদের আলোর প্রতিফলন, পর্দার ছেনালি আর অনিয়মিত শ্বাস সেই সব গুনগুন করে চলছিল। চোখ দীর্ঘ পরিশ্রমে ঘেমে উঠছিল, আর সেই চকচকে ঘেমে ওঠা আলোর ক্রমাগত স্থান পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লুকোচুরি খেলছিল ধরা না পড়ে অথচ আছেই এমন প্রামাণ্য অনিশ্চয়তায়।

ঘুম দরকার ছিল পরের দিনের পশরা সাজানোর বাধ্যবাধকতায়। এদিকে চোখ উপচানো বর্জ্যের জন্য চাদর, বালিশ, তোশক তো কোন ছাড়, ছড়ানো ছিটনো গুটিসুটি পোশাক, আধভেজা গামছারা, এমনকি ছপছপে বাথরুমটা, কেউ চওড়া কাঁধ অথবা শান্ত বুক এগিয়ে দেয়নি। এখন ওই বাড়তি উপজাতটির ভদ্রস্থ গতি না করা অব্দি ঘুম কেমন পাতলা হয়ে থাকছিল। জলে দ্রবীভূত হয়ে ঘুম ভেসে যাচ্ছিল ধুলো সরিয়ে। জলপথের ঢাল স্পষ্ট হচ্ছিল। চোখের কোলে আর কানের মাথা ছুঁয়ে চুলের গহিনে বহুস্রোতা গঙ্গা ঐরাবতের প্রার্থনা জানাচ্ছিল। জল বারবার ধুলো সরিয়ে দেয় সমস্ত অর্জিত স্মৃতি আর তার ব্যক্তিক উপলব্ধির পরতের উপর থেকে। এবং সমস্ত বন্ধ বইয়ের ভাঁজ তখনও পাললিক শিলার মতো জীবাশ্মদের অবয়ব প্রদর্শন করে।

প্রার্থনার বিভঙ্গেই একজোড়া চোখ মাথা নুইয়েছিল, আর যে কোনও মাথা নুয়ে পড়লেই যে অনেক সব দুর্ঘটনা ঘটে, তার অন্যতম ঘুমে জেগে থাকা। অন্যজোড়া ছটফট করে ডানা ঝাপটাচ্ছিল তখনও, আর ঘাম। ভোর আসছিল। একটা বেজি প্রাতর্ভ্রমণ সারতে সারতে ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছে নিত্যনৈমিত্তিক মদনমোহন তর্কালঙ্কার আচরণ করে নিচ্ছিল। ঘুমন্ত আনত প্রার্থনা বিড়বিড় করছিল অদীক্ষিত মরা মন্ত্র দেবভাষায়। জ্যান্ত একবগ্‌গাটি তখনও তার উপাচার নিয়ে সন্ত্রস্ত, সব অসংস্কৃত প্রাকৃত হয়ে ওঠাদের কৌমার্য নিয়ে। আশপাশের সমস্ত প্রত্যাখ্যান অঞ্জলির আদরে মাখিয়ে সে কাগজের নৌকা ভাসাচ্ছিল ঘেমে ওঠা চোখের মুষলধারার নিচেই। টলমল দু-এক কলি সাধবার আগেই সে সব খড়কুটো ঘূর্ণিতে ঘুলিয়ে যাচ্ছিল।

ঘেমে ঘেমে সমস্ত শারীরিক স্বচ্ছলতা হারিয়ে তাকিয়ে থাকা আর কিছুই দেখছিল না। কোনও পরিবর্তন আলোর অথবা রূপান্তরিত আন্তরিকতার। বর্জ্যরা মাছিদের সঙ্গে কিছু সম্পর্কে বাধ্য হচ্ছিল। মাছের কাঁটা অথবা মাংসের নলি, যা কিনা জিভ-দাঁত-আঙুলের প্ররোচনায় শহিদ হওয়াকে সার্থকতা বিশ্বাস করেছিল রাতের ভোজসভার মধ্যমণিত্বে, আলোর সামনে থতমত নিজেদের কঙ্কাল আবিষ্কার করছিল আর নিজস্বতার নেই হয়ে যাওয়া নিয়ে মণ্ড পাকিয়েও একলা নিঃস্ব শূন্য অপেক্ষা করাকে দুঃসময় বলে মানিয়ে নিচ্ছিল। সুদৃশ্য ডাস্টবিনে ওদের আশ্রয়ের প্রদর্শন, এমনকি ওদেরও আত্মঘাতী আঘাত করবার বিষয়ে মূল্যবোধ ছড়াচ্ছিল। সেই সব ঝকঝকে বহুজাতিক দর্শন ব্লটিঙে শুষে যাচ্ছিল জল, আর বারুদ যে ওরা নয় তা রাত্রিকালীন ভোজের পরে সুনিশ্চিত হওয়া গেছিল সকালের প্রাতঃকৃত্যের নিঃশব্দ হালকা হওয়ায়।

সারাদিনের জন্য প্রস্তুত বেজির তৎপরতায় সমস্ত শয়তান, আদিম পাপ অথবা সমকালীন খিদের অধিকারের ইস্তেহার নিয়ে ইঁদুরের গর্তে লুকোয়, সপ্তাহান্তে একটা স্বজনবান্ধবের একত্রিত হবার উছলা খুঁজে পেতে রাখে, অথবা মাসান্তে অফবীট টুরিস্ট স্পটের স্পন্সর বাগানোর ফাঁদ পাতে।

দোতলার ব্যালকনি থেকে টিপ করবার জন্য হাতে কিছু সময় দুলতে পাচ্ছিল সমস্ত দলাপাকানো অনুভূতি আর আহ্লাদে গদগদ ভাবছিল‘আপন হাতের দোলে দোলাও’, ঠিক তক্ষুনি সাক্ষ্যপ্রমাণাদি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভ্যস্ত সতর্কতার সঙ্গে চোখের উপজাত, মাছ ও মাংসের কঙ্কাল, ডাঁটার ছিবড়ে উদ্বৃত্তের আছাড় খেল নির্ভুল লক্ষ্যে রাস্তার ভ্যাটে। সমস্ত শারীরিক ও মানসিক যত্ন পাতে সাজিয়ে দেবার আগে পর্যন্ত যা কিছু প্রাপ্য বুঝে নেবার শেষতম সুযোগ। অথবা ডাস্টবিনে যাওয়া সরকারি বাহনে সওয়ারি হতে। গোটানো চাদর টানটান,কোঁচকানো পোশাক, অন্তর্বাস, কানের দুল অথবা লাইটার অন্তর্হিত হয় সামাজিক বাধ্যতায়। হঠাৎ খাবার অদৃশ্য হতে মনমরা মাছি সকালের রংচটা খানকির মতো ময়লাটে পর্দাটার সঙ্গে দুটো-চারটে খেজুরে আলাপ সেরে রাখে। মৌখিক সদালাপটুকু রেখে গেলে পরে কখনও কোনও কাজ সহজে হবার সম্ভাবনা। পর্দাও শেষ সকালের রোদে স্যাঁতস্যাঁতে গা এলিয়ে দিতে দিতে মাছিকে ঠোনা মেরে বলে, ফেসবুকের প্রো পিকটা ঝিঙ্কু হয়েছে। মাছি জানলার বাইরে যায়,পর্দা আড়মোড়া ভাঙে।

ঘর এইমত অভ্যাগতবিমুক্ত হলে সভাকবি নান্দনিক ঠাটবাটে বিষয়কর্মে নিযুক্ত হন। তাঁর এবারের প্রার্থনায় সজাগ মস্তিস্ক বড় প্রয়োজন, অবশ্যই নত দৃষ্টির অভ্যাস তাঁর সহজাত। উদাসীন সভাকবি কুটিল শহুরে বাস্তবতার মৃত্যুফাঁদ এড়িয়ে গা বাঁচিয়ে কোনও অলৌকিক সমাপতনে দরবারে হাজিরা দেন। তাঁর প্রার্থনার চোখ তখন ভিক্ষান্নের সন্ধানে শ্যেনদৃষ্টি। মহারাজা সেলাম পেয়ে কিছু দ্রব হলে হঠাৎ সভাকবির ঝোলা থেকে একতাড়া নোনতা জল বেরিয়ে আসে। মহারাজা নুনের সততা চেখে ভগ্নাংশের হিসেবে কিছু চিত্তবিনোদন বাহাল করেন। সভাকবি অসন্তুষ্ট মনে প্রথমে কবিতায় পদমর্যাদাবশত গুঁজতে পারবেন না এমন কিছু উপাধিতে রাজাকে ভূষিত করে তারপরে এই যথোপযুক্ত পরিমাণ না পাওয়া মেনে নেওয়া জনিত মহত্ত্বে নিজেকে স্বভাবকবি নির্দিষ্ট করেন। এবং এই স্বীকৃতি আর যাতে কেউ না পায় তাই বাকি সমস্ত বঞ্চিতকেই প্রচণ্ড প্রতিবাদের প্ররোচনা দিতে থাকেন।

এইসব ঘটনার সময়ে সেই রাতজাগা ঘেমো চোখ দুটো একরাশ কালি মেখে একা একা পিচ ভাঙছিল। একটা গন্ধ ছাড়া আর কেউ ছিল না তার পাশে। পর্দা, মাছি, বাথরুম, গামছা অথবা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসার সময় দরজার বন্ধ হবার তাড়াহুড়ো, কেউ না, কিচ্ছু না। অথচ গন্ধটা ওকে মেখে নিচ্ছিল। একটা মদির গন্ধ, ঘুমের গন্ধ,ঘামের না কি! একটা বলয়ের মতো সামনের চর্বিখোঁজা হাত বা পাশের বইমুখোর থেকে ওকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। ও অন্য একটা ঘরে পৌঁছে অনেকের ব্যবহার করা বাথরুমে স্নান সেরে নেবার পরেও গন্ধটা ওকে শুঁকে যেতে থাকে। দিনে দিনে এমন হয় সমস্ত পৃথিবীটা ওর কাছে গন্ধহীন অথবা এক অনুপ্রবেশকারী অবৈধ গন্ধের আকর হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই, আপনারা জানেন, গন্ধের না থাকায় খাবারেরা ওর কাছে পঙ্গু, গন্ধটা ওকে গিলে ফেলে বলে, ওর গলা দিয়ে খাবার নামতে চায় না। পেটে খিদে হানটান করে, আর মুখ সমস্ত খাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

ছ'মাস ন'মাস কেটে যায়। গন্ধশূন্য। কেউ ওর রান্না চেখে চোখ মুখ নাচিয়ে তুললে ওর তাকে মারতে ইচ্ছে করে। চোখ বুজে খেলে ও চা অথবা কফিও আলাদা করতে পারে না। ঠিক এই সময়েই একদিন ও মুখ থুবড়ে পড়ে একটা কাঁচা নর্দমার উপরে। কালো জলের ভিতর থেকে কিছু লার্ভা ওকে কৌতূহলী পর্যবেক্ষণে রাখে। গন্ধ না পাওয়াতে ওর গা গুলোয় না। লার্ভারা ব্যাপারটা সহজে নিতে পারে না। যতযতবার ও পয়োঃপ্রণালীপথে কিছু বয়ে যাওয়া কল্পনা করে কুলকুচি অথবা স্নানের জল বয়ে যেতে দেখে অথবা আর যা যা সম্ভাবনা এ জাতীয় আপনাদের দৈনন্দিনের বন্ধ স্নানঘরের ওপারের, কোনও এক কালিন্দী মোহ হয়ে আসে ওর পাশে। এমনকি লার্ভারাও এ অসুখ বহন করেনি, শুধু কিছু তোতাকাহিনী। জন্ম হোক যথা তথা, তবু উত্তরাধিকারে পাওয়া নর্দমার প্রতি তার পৃষ্ঠপোষকদের উন্নাসিকতায় লার্ভাদের দেশঘরের নিশ্চয়তা, সহানুভূতি আদায়ের নিশ্চিত উপায়। ওর চোখে সেই ঘৃণার অনুপস্থিতি না সমস্ত লার্ভার জন্মানো ডানাগুলোকে অনিশ্চয়তা দেয়। গন্ধের ঘেন্না চলে যায় তবু।

একা একা জেগে থাকা, চেয়ে থাকা, ঘেমে নেয়ে ওঠা চোখে আর ত্বকে, খিদে আর তেষ্টা সব নিয়ে নিমীলিত প্রার্থনার সামনে দাঁড়ানোর পরে দেখা যায় সমস্ত রাজকীয় অভিজ্ঞান রাঘববোয়ালের ভল্টে সুরক্ষিত। অভিজ্ঞান পেয়ে পরে রাজাকেও সরানো হয়েছে। আর সব তো খিদের সমবণ্টনের দাবিতে। সুতরাং বিপ্লব প্রমাণিত। অথচ মাছি ছাড়া আর সবাই খিদেতে হন্যে। সভাকবির স্বভাব সম্পর্কে সন্দেহের আগে তিনি প্রার্থনায় বসলেন ক্ষমার। নিজের জন্য ক্ষমার যুক্তি জমিয়ে কিছু পরে চোখ খুলে বললেন, ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ –এই সত্য। অতএব সমস্ত প্রার্থনা আদতে ভণ্ডামি।

সেইসব জেগে থাকার রাতগুলো মুহূর্তে নেই হয়ে যায়। যেহেতু কোনও প্রার্থনা ছিল না, তাই কোনও নতচোখ ছিল না, তাই সেই নতির দর্শক আসলে থাকতেই পারেনা। পর্দা আর মাছি ও বাথরুমের মেঝে খলখল হেসে ওঠে। অপলক চোখের অন্ধত্ব, একপেশে গন্ধের বিভ্রান্তি, খিদের উস্কানি, সব তালগোল পাকিয়ে যায়। সভাকবি একটা স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন সংঘ গড়ে তোলবার প্রস্তাব দেন, মাছির আলপনা ও পর্দার সরগম সেখানে কবিতার পাশাপাশি দেওয়াল সাজায়।

বইয়ের গন্ধ, ইউক্যালিপটাস, সাঁতলানো মুসুরির ডাল কাউকে খুঁজে না পেতে পেতে হারিয়ে যেতে থাকে রোজ। চোখ একরকমের ইস্তফা দেয় কাজে। ক্রমাগত ঘাম ঝরিয়ে নিঃস্ব তারা। সন্ধ্যের অন্ধকার গঙ্গার পাড়ে ওর পাশে বসে। একটু একটু করে গল্পে ফিরে আসবার জন্য কাছি বাঁধা নৌকাটা ওর পিঠ চাপড়াতে থাকে। কান্নার সেই চোখদুটোর অশ্রুগ্রন্থি শুকিয়ে যায়, আর ওর এতোলবেতোল দেখা-চাখার মধ্যে চোখ প্রাণপণে শেষ জলের রেশটুকু ধরে রাখে পাতার কানায়। এতকাল ঝরে পড়া জলেরা ওর কান্নার নাম পায়নি, অথচ এই শিকড়হীন শুকিয়ে ওঠা ডেড সি দিব্য গণ্ডাকয় ‘যো হুজুর’-এর নিঃশর্ত মালিকানা পায়। সুতরাং ওই এক কুমিরছানা দেখিয়ে জীবিকার্জনের পথ মসৃণ করে নেয় ও। এমনকি এই ভেজা ভেজা দীর্ঘ আঁখিপল্লব নিয়ে ও গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্রের জন্য দরপত্র জমা দেয়। বন্ধ খামের ভেতরে চালান করে দিতে থাকে ওর গন্ধ, স্পর্শ,ঘাম, শব্দ আর কিছু ফাঁপানো নিজেকে।

সভাকবি কি একটা টের পেয়ে স্নানের জলে ক’ফোঁটা বাড়তি ওডিকোলন মেশান। জেগে থাকা চোখের মণি সচল হয়, কি যেন দেখতে পায় আবছায়া। গন্ধের খোলসটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়। পৃথিবীর খিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠা যায়। ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত হাড় আর কাঁটা ছাড়া কোথাও কিছু নেই তখন। যাদের আঙুলে আগলে জিভ ছুঁইয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল অতীতে। অতীতের থেকে তবু কোনও এক সঞ্জীবনী উৎসে তাদের পূর্ণযৌবনের গন্ধ অবিকল খিদে বাড়িয়ে দিয়ে যায়। ডাস্টবিনে ভয় বেবাক কাটে তাদের উৎসের অনুসন্ধানে।

মাছিদের পোয়াবারো। খিদের দাবি ক্রমশ স্বীকৃতি পায় বলে শয়তান মাঠে নামে। খিদেকে লেলিয়ে দিয়ে সামনের পথে নিজে খিড়কি খোলে। ওগরানো বিষ দিয়ে ঘুমের ওষুধ। খিদেকে চাগিয়ে দেয় ঘুমের ওষুধের বাজারটা জমিয়ে তুলতে। চাঁদের আলোর মায়ায়, অন্ধকারের ছায়ায় ছায়ায় যে ঘুম পর্দায় দোল খেয়ে ঝুপঝাপ নামে, তা নীলচে আঠালো। খিদেরা ঘুমিয়ে পড়লে তিতকুটে গলা নিয়ে বাথরুমে ওক তোলা শুরু হয়। আঙুল পৌঁছয় গলায়। তেতো স্বাদ স্থানপরিবর্তন করে না। চোখ কিছু নোনা জল ওগরায়। বিষ ধুয়ে যায়, ঘুম। গঙ্গার জলে সূর্য স্নান সেরে ওঠে। বেজির গন্ধ পেয়ে শয়তান হামা টানে জোর।

সভাকবি ফ্যাশন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে ক্বচিতে ত্বরিতে বস্তিবাসীদের গরম কাপড় বিলোতে নামেন। অন্যসময়ে শব্দে ‘শব দে’ধ্বনি তুলে ভরে পাওয়া প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার কেশরাশি ঝাঁকান। অন্যথায় খুলির ভিতর তাঁদের কোনও দ্বন্দ্ব নেই। বশীকরণের জন্য আনা একটা মাছের কাঁটা আঙুলে বিঁধে কবি তাড়িত হলে সমস্ত ডাস্টবিন আর নর্দমা গা ঝাড়া দেয়। ডাস্টবিনের ভয় অথবা নর্দমার ঘেন্না নেই হয়ে যেতে অশ্রুহীনতার লজ্জা চলে যায় সেই ঘেমেনেয়ে একলা হয়ে থাকা চোখদুটোর। খোলা চোখদুটো জেগে থাকার ক্লান্তিতে, জীবনধারণের নুনটুকু খুইয়ে এক আদর, অভিমান, খুনসুটি একাধিক চ্যাট-এ বইয়ে দিতে দিতে দক্ষ জীবন হয়ে ওঠে।

কিছু কুকুর আর বেড়াল আর ক্ষুধার্ত নিয়ে একত্রে ওরা সমস্ত মাছ-মাংসের স্বত্ব নিয়ে নেয়। ডাস্টবিনে নয়, কাঁটা ও হাড় সসম্মানে গৃহীত হয় বিড়াল-কুকুরে। সমস্ত শুঁয়োপোকা প্রজাপতি হতে দেখে লার্ভারা অন্যান্য ডানা পাতে রোদে। রোঁদে বেরোয় বেজি। সাপ গর্তে খোলস খুলে ফেলে। মাছি কানা হয়, অতএব লক্ষ্যভেদ হয়না স্বভাবে কবির।

একটা শীতের রাত ঠাণ্ডা মেঝেতে পা ছুঁইয়েই তড়বড়ে চড়ে দাঁড়াবার একজোড়া অপেক্ষমান পা খুঁজে পায়। টুপটাপ শিশির জমাতে থাকে ভোর। হিরের কুচোগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যায় রামধনুর পেলব গন্ধ।

0 comments: