0

কবিতাঃ জয়া চৌধুরী

Posted in


কবিতা



পক্ষাঘাত
জয়া চৌধুরী




পক্ষাঘাত হলে অসাড় লাগে চামড়া
আসলে ঠিক লাগে কি না একথাও বলে বোঝাতে পারি না।
আজকাল কিছুতেই কিস্যু টের পাই না শরীরমনে
তেরো নম্বর বাচ্চা বিয়োনোর পরে চোদ্দর বেলা মমতাজ বেগমেরও
নিশ্চিত কিচ্ছু মনে হয় নি কেবল
অভ্যাসেই আঁতুড়ে গিয়ে উঠেছিল সেই কতশ’ বৎসর আগে।
অজ গ্রাম অথচ সাহিত্য করার মত নেই বেশি কিছু গোলা ভরা ধান
পাকা ধানের মরাই ইত্যাদির বাইরে যে গুলোর গুণতি সেই গুলোর কথা বলছি আর কী।
তো সেই সব গ্রামের সদ্য মাসিক হওয়া যে মেয়েগুলো
চালান হয়ে এ লিঙ্গ ও লিঙ্গ ফেরতা হতে হতে
যৌনাঙ্গে সম্পূর্ণ বোধহীন পক্ষাঘাত হয়ে যায়
পথের ধারে স্টেশনে মন্দিরের সামনে মায় সেক্টর ফাইভের বাসে ওঠার মোড়েও
যে সব বাচ্চাগুলো ঘুর ঘুর করে নাকে জিভে
নেশার বস্তু গুঁজে সেগুলোকে খিদে বোধের পক্ষাঘাত বলতেই হয়
রোজ সকালে বিছানায় কিম্বা চায়ের দোকানে মেট্রোর ভীড়ে চোখ মেললেই শুধু
নোংরা, অশোভন, নঞর্থক ছবি খবর দেখেও একটু পরে গুটিয়ে
রেখে রোজ ওমলেট রুটি খাওয়া যায় না বলে চিৎকার করি
মা বউয়ের সাথে তখন মনের অসাড় ভাবটা টের পাই খুব
রোজ স্বামীর সাথে সতীত্বের, ভালো বৌ হবার কিংবা আধুনিকা অথচ
অনুগতা পত্নী হবার সীতা টাইপ হবার পরীক্ষা দিতে দিতে
কবে প্রেমে পড়ে বাবা মার সাথে ঝগড়া করে বিয়ে করেছিলাম
সেই খুশি খুশি প্রেম প্রেম ভাবটা পক্ষাঘাত রুগীর মতই অদৃশ্য থাকে জীবনে
সাধ করে রাজনীতি দিয়ে দুনিয়া বদলে দেবার স্বপ্নটা যে স্রেফ
টাইম পাস ছিল কলেজ জীবন থেকে সেদিন অবধি সেকথা টের পেয়ে
স্রেফ চোখের পাতা কাঁপিয়ে অফিসের নেক্সট ইনক্রিমেন্টের আলোচনায়
তদ্গত থাকতে থাকতে দাঁত তোলার আগে
মাড়িতে দেওয়া ইঞ্জেকশনে ওটাকে অবশ অসাড় করে নিয়ে
বিছানায় শুতে যাই যখন... সেখানেই স্বপ্নে মাঝ গঙ্গায়
তলিয়ে যাচ্ছি ভেবে হঠাৎ ধড়মড়িয়ে উঠে বসেই চারদিকটায় আবার
সেই এক নেগেটিভ ভেবে চিৎপাত হয়ে পড়ে থাকি।
অপেক্ষা করি সকালের আয়া কাজে এলে আমায় পাশ ফিরিয়ে দেবে কখন
একা একা নড়তে পারি না চুল থেকে নখ আমার পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে আছে
এখন প্রাণপণ মনটাকে আগলাচ্ছি... কি জানি কবে এটার পালা আসবে!

0 comments: