মুক্তগদ্যঃ শিবলী শাহেদ
Posted in মুক্তগদ্য
মুক্তগদ্য
যে শহরের নাম প্রান্তমুখী
শিবলী শাহেদ
বারান্দায় দাঁড়ালেই মনে হয়— বাড়ির সামনে যে রাস্তাটি সটান শুয়ে পড়েছে— তারও আছে কোনো ব্যতিক্রমী পরিচয়। ফলে রাস্তায় নামি। দেখি দুপাশ দিয়ে উঠে গেছে কত সুসভ্য দালান। হেলানো, স্থির চক্ষু। এরকম এক মাঝারি উচ্চতার দালানের সাথে দু'দণ্ড চোখাচোখিও হয়ে গেল। আর তক্ষুণি পাগলটা হাত তুলে ডাক দিল। কী হে, খবর ভালো? আমি মাথা নাড়াই। স্রোতের মতো রিকশা আসে, যায়। রিকশার ঘণ্টাধ্বনিতে হৈ হৈ ক'রে জেগে ওঠে প্রান্তমুখী শহর।
নতুন ক'রে রাস্তার সাথে পরিচয়ের মূল পর্বটুকু পেরুতে না পেরুতেই আরেক রাস্তার সূচনাবিন্দুতে এসে স্থির হলাম। এখানেই আমার শৈশবের ইশকুল। প্রান্তমুখী উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দাঁড়াই। টের পাই, কথারা হারায়নি। যে জায়গায় যে কথাগুলো বলা হয়েছিল সেখানেই সেগুলো রয়ে গেছে, ঘুরছে। ছদ্মবেশী ছায়ায় যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসছে স্মৃতিজাগানিয়া সমস্ত হাওয়া-সংলাপ!
আজ ক্লাস করব না...
ছুটি, ছুটি...
ক্যান্টিনে যাই...
স্যার আজ আসেন নাই...
বিদায় বন্ধু সৌরভ...
এসেম্বলি হবে এক্ষুণি...
দোস্ত, আসি...
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি...
আমার পৃথিবীটা দুলে ওঠে। আমি শৈশব হারিয়েছি, আমার তো আর কিছু হারাবার নাই। ফলে ঘাসের বুকে আমি নতজানু হয়ে ঈশ্বরের কাছে শৈশবকেই ফিরে চাই। অদূরেই শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষক রোল কল করছেন। আমি করিডর ধরে হাঁটতে থাকি। শিক্ষক কোথায়, এ তো সেই পাগলটা। আমাকে দেখেই হাত নাড়লো। কী হে, খবর ভালো? আমি ধন্দে প'ড়ে যাই। কম্পিত পায়ে ফের এগুতে থাকি। আরেকটা কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। যে শিক্ষক পড়াচ্ছেন তিনি অবিকল আমার মতো দেখতে, ছাত্রদের মুখগুলোও সব আমারই মুখ। নিঃশব্দে নিজের ভীড়ের ভিতর গিয়ে বসে পড়ি। আর অপলকে দেখি— এই শহরের সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে আমি আমাকেই শিখিয়ে চলেছি বৃত্তাভিমুখী জীবনের আরো কোনও দুর্বোধ্য সমীকরণ...
0 comments: