মুক্তগদ্যঃ তাহমিনা শাম্মী
Posted in মুক্তগদ্য
মুক্তগদ্য
বিরহীপাখি
তাহমিনা শাম্মী
মধুপুর বনে বাস করে এক বিরহ বিলাসী পাখি। কারণে অকারণে সে বিরহের সাথে নিত্য মিলন ঘটায়। বিরহের সাথে বিলাস করাতেই যেন তার সুখ। একাএকা কথা বলে, চোখের জল ফেলে সে প্রকৃতির সাথে নিজের দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। তবে তার মনে যে সত্যি কোনও কষ্ট ছিলো না তা নয়। তার মনের মধ্যেও এক বড় ব্যাথার ঘা ছিলো, প্রিয় হারানোর ব্যাথা ছিলো। সে বনের কারো সাথে খুব একটা মিশতো না, এমনকি কথাও বলতো না। তাই বনের সবাই তাকে বিরহী পাখী বলে ডাকতো।
একদিন এক শিল্পী পাখি উড়ে এসে বসলো বিরহী পাখির ছোট্ট বাসার সামনে, সেখানে বসে বিরহী পাখির জন্য সে গাইলো মন ভালো করা মন ভোলানো গান। গান শুনে সত্যিই বিরহী পাখীর মন ভালো হয়ে গেলো। বিরহী পাখি তার একাকীত্বের সময়ে একজন সঙ্গীকে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি হলো। সে তার সব দুঃখ ভুলে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো। বললো,
‘‘তোমার গান আমার মন কেড়েছে। তোমার সুর আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। তোমাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। এসো, আমরা প্রাণ খুলে গল্প করি। কতদিন কারো সাথে কথা বলিনি!’’
শিল্পী পাখি বলল, ‘‘না, এখন না। এখন আমি শুধু তোমাকে দেখতে আর তোমার মন ভালো করে দিতে এসেছি।
তুমি আজ রাতে জেগে থেকো, আমি তখন আসবো।
আজ সারারাত তোমার সাথে আড্ডা দেবো।
গান শোনাবো জোনাকি ওড়াবো
রূপকথার গল্প বানাবো
আজ সারারাত জোৎস্না বানাবো
সেই জোৎস্নায় তোমাকে ভেজাবো।’’
একথা শুনে বিরহী পাখি খুব খুশি হলো। বললো, ‘‘তুমি সত্যি আসবে? তবে জোনাকির প্রদীপ দিয়ে দিয়ে সাজাবো আমার ছোট্ট ঘর। পারিজাতের মালা বানাবো তোমার জন্যে। ফুলের মধু দিয়ে বানাবো অমৃত।
তোমার গানে মাতাল হবো, দোলনায় দুলবো।
তোমার গল্পে হারাবো রূপকথার দেশে।
তোমার বানানো জোৎস্নায় ভিজবো, তোমাকেও ভেজাবো।’’
‘তুমি আকাশের সাথে বাতাসের সাথে সময় করো পার,
আমি ফিরবো তোমার জন্য নিয়ে সুখের প্রহর।’
- এই বলে শিল্পী পাখি চলে উড়ে চলে গেলো। বিরহী পাখি তার উড়ে যাওয়া পথে অনেকক্ষণ চেয়ে রইলো। সে তার সব বিরহ ভুলে গুণগুনিয়ে গান ধরলো। সূর্যকে তাড়াতাড়ি বিদায় হতে বলে চাঁদকে আমন্ত্রণ জানাতে লাগলো। সন্ধ্যায় চৈতালি হাওয়াকে শীতল হতে বললো। শিল্পী পাখির জন্য তুলে আনা বন্য ফুল দিয়ে বানালো প্রকাণ্ড এক সিংহাসন। ফুলের দোলনায় বসে সে অপেক্ষা করতে লাগলো।
সূর্য পাটে গেলো। রাত্রি এলো, শুরু হল অপেক্ষা...
জোনাকিরা জ্বেলে দিলো আলো, যৌবনা চাঁদ উঠে এলো মাথার উপর। দক্ষিণের হাওয়া শীতল হলো। অপেক্ষা... একপ্রহর...দুইপ্রহর...তিনপ্রহর...
0 comments: