মুক্তগদ্যঃ পল্লববরন পাল
Posted in মুক্তগদ্য
মুক্তগদ্য
নেঃ খাঃ
পল্লববরন পাল
কেনরে তোরা সবাই এখনও বর্ষাকাল? কেনরে তোরা সবাই এখনও ভাঙা পাঁচিল? মুখ তোল। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দ্যাখ – শারদ রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে সেই এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, পুকুর পাড়, তালসারি মাঠে কাশফুলের বাৎসরিক সমুদ্রোৎসব – চিনু কাকার ঝালমুড়ির দোকানে ঝাড়পোঁছ হবে বলে কাঁচের বয়ামগুলো তাক থেকে মাটিতে নেমেছে, গন্ধেশ্বরী স্টোর্সের কাঠের শাটার প্রতি বছরের মতন পুজোর ঠিক আগে আগেই তো রঙ বদলায় – এবার কি আকাশনীল না ঘাসসবুজ? বুল্টিদার বইয়ের দোকানে শারদীয়া পত্রিকা এসেছে?
রাজমিস্ত্রির জীবনে আবার কিসের মহালয়া, কিসের পুজো? – তাই তার পরিবারেও ওসব উৎসব টুৎসব নেই কোনও দিন। কত দূরে দূরে বাবা কাজে যেতো – পাঁচ-ছ’মাস পরপর এক-দুদিনের জন্য যখন বাড়ি আসতো – সেদিনটাই ছিলো আমাদের উৎসব। আমাকে আর ভাইকে বুকে জড়িয়ে বাবা বলতো – তোরাই তো আমার উৎসব। ঐএক-দুদিন মায়ের চোখের দৃষ্টিতে ছড়িয়ে যেতো উৎসবের আলো। হ্যারিকেন দাওয়ায় চারটে থালায় গরম ভাতের গন্ধে ম’ম করতো আমাদের উৎসব।
শুনেছি সেকালে রাজা মহারাজেরা উৎসবে ঢাক ঢোল-খোল-করতাল বাজিয়ে মোষ বলি দিতেন – কেউ কেউ নরবলিও। সতীদাহও তো উৎসব ছিলো একসময়ে। ৭ই জুন, ২০১৩ – ইতিহাস পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে আমিও যে সেরকমই এক অন্য উৎসবের বলি হয়ে ইতিহাস হয়ে যাবো – কে জানতো?
ভাঙা পাঁচিলের গায়ে এখনও লেগে আছে সে উৎসব উল্লাসের দাগ।
কেন রে তোরা সবাই এখনো ৭ই জুন?
কেন রে তোরা সবাই এখনো বর্ষাকাল?
কেন রে তোরা সবাই এখনো ভাঙা পাঁচিল?
মুখ তোল। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দ্যাখ – ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় লেগেছে শারদ রোদ্দুরের ওম – তালসারি মাঠে গরম ভাতের মতন কাশফুলের উৎসব –
দশ হাতে নেচে ওঠ্ টুম্পা –
মাতৃশক্তি সংহত করে জেগে ওঠ্ মৌসুমী -
এ অসুর নিধন ওই সব সরীসৃপ দেব দেবীদের কম্মো নয় – তাঁরা কেউ ব্যস্ত নিরন্তর নিজেদের পকেট গণিতের হিসেব নিয়ে, কেউ প্রাণ ভয়ে ফাইলের আড়ালে গুটিশুটি। মিডিয়াও বাকি বুদ্ধিমানদের রুটিন মাফিক মোমবাতি আহা উহুর আয়ু তো ওই প্রথম দু’মাস।
এ আসুরিক শিরশ্ছেদ উৎসবের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মন্ত্রে গা ঝেড়ে উঠুক সারা বাঙলার কামদুনিরা।
কামদুনি মেয়েটিও দশভূজা আশির্বাদ চেয়েছিলো কলেজ ফেরত
তুমি শুধু বাৎসরিক নির্বাচনী অশ্বডিম্ব প্রসব ও বিতরণ করো
অসুরেরা সাড়ম্বরে উৎসবে বিনিয়োগকারী – প্রমাণিত তুমি অভিভূত
অন্ধকার শিল্প বাড়ে – জ্যামিতিক অনুপাতে কামদুনি বাড়ে সংখ্যায়
দু’মুঠো অন্ধকার নিয়ে আমাদের সম্মিলিত অভিমান এবং আক্রোশ
অন্ধকারতর এই গুগুলিয় মানচিত্রে ঝাড়বাতি জ্বেলে দিতে পারে
যার প্রতিবিম্ব পরিধিতে
ছোটো ছোটো অন্ধকারেরা
আলো খিদে ভিক্ষুকের আচমন সেরে
যে যার সাধ্য মতো
ছায়াবৃত্ত সীমান্তের কাঁটাতার জীবনেও সানন্দ প্রস্তুত
ওরা থাক উৎসবে।
বাকি অন্ধকারটুকু
প্রদীপ শিখার মতো আগলে নিয়ে আমরা হেঁটে যাবো
শহরের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত অসুরের কাছে
মুখের সামনে ছুঁড়ে বলবো –
নেঃ
খাঃ
সমস্ত রাত ধরে তারপর
কামদুনি পাঁচিলের ভাঙা কোণে বসে
উল্লিখিত বহুমূল্য বিসর্গ সমেত
নাগরিক অন্ধকার উইকিপিডিয়া
দশহাত পঞ্চাশ নখে খুঁটেখুঁটে
ভিখিরিটা বাতাসার মতো
চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে – খেতে বাধ্য হবে
যতক্ষণ না কোটি কাক ডাকে ঘুম ভাঙে ঝাড়বাতি রোদ্দুরের
ততদিন এইসব উৎসব টুৎসব ভণ্ডামিতে নেই
অপূর্ব !!
ReplyDelete