ছোটগল্পঃ মুস্তাইন সুজাত
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
গল্পটা প্রণয়ঘটিত কিংবা নিছক প্রেমের
মুস্তাইন সুজাত
ঝলমল রোদ। বিকেল হয়েছে, তবু আলোর ধার এতটুকু কমেনি। একটু পর মার্কেটে যাব। সপ্তাহের বাজার সদাই করতে। ঠিক তখনই মোবাইলের স্ক্রিনে অপরিচিত নম্বরটা ভেসে ওঠে। প্রথমে ওপাশের গলাটা একদম চিনতে পারিনি। গম্ভীর রাশভারী আওয়াজ। জিজ্ঞেস করতে পরিচয় দিলো, সে নাকি আমার স্কুলবন্ধু। অনেকগুলো নাম বললো হড়হড় করে... মুশি, আতি, রাজন, জহির, সাফি, রুবি, রেজি, তাশা, আরও কে কে যেন। তাদের কৈশোরের চেহারাগুলা একটু একটু ভাসছে চোখে। আজ থেকে ১৫ বছর আগের স্মৃতির সুতো ধরিয়ে দিলে ফিরে যাই গোবিনন্দনপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
-তুই নিশ্চয়ই রাজন?
-চিনতে পেরেছিস তাহলে? যাক, বাঁচা গেলো।
-এতদিন পর কোত্থেকে বন্ধু?
-তোর শহরেই আছি। তুই কোথায় আছিস? বল, দেখা করবো।
-সোজা বাসায় চলে আয়। আজ ছুটিতে আছি।
-তোর বউ বাসায় আছে না?
-বউ গেছে বাপের বাড়ি। আর থাকলেই বা কি?
-আছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম, এই আর কি। আসছি।
রাজন আসলো সন্ধ্যার পর। কৈশোরের সময়টা কাটিয়ে বয়সটাই কেবল বেড়েছে আমাদের। আর সব আগের মত। স্কুলজীবন শেষে আমি চলে আসি ঢাকায়। রাজন চলে যায় চট্টগ্রামে। এরপর থেকে কেবল ঈদে-পার্বণেই দেখা হতো আমাদের। শেষ দিকে এসে যোগাযোগ একেবারেই কমে গেছিলো। পড়াশুনা শেষে এখন দুজনেই চাকরি বাকরি করছি। স্কুলে রাজন ছিলো আমার অতি কাছের বন্ধু। এতটাই কাছের যে, একে অন্যের গোপন কথা পরম নির্ভরতায় শেয়ার করতাম, পাছে কে কার ক্ষতি করে ফেলে এরকম বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিলো না কারও মনে।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে আমরা বসলাম টিভি রুমে। নিঃশব্দ মৌনতার মাঝে টুকটাক আলাপ চলছে। এতদিন পর দেখা... কেমন যেন হালকা জড়তা উভয়ের মধ্যেই। এরই ভিতর লক্ষ্য করলাম, রাজন উসখুস করছে। এই সিমটমটা ওর পুরনো। গোপন কিছু বলার আগে বেটা ওরকম করবেই।
-কি রে, সিরিয়াস কিছু বলবি, নাকি ঘুমিয়ে পড়বি?
-এতদিন পর তোর সাথে দেখা, কত কথা জমে আছে জানিস?
-তাই নাকি? কোনও গোপন কথা?
-কিছুটা সেরকমই। আমার জীবনে সদ্য ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। বেশ লম্বা এবং কাহিনী নির্ভর। আসলে তোকে না বলে শান্তি পাচ্ছি না। সে জন্যই অনেক কষ্ট করে তোর নাম্বার যোগাড় করা। তুই যদি শুনবি বলে অভয় দিস তাইলে বলতে পারি।
-এই দাঁড়া দাঁড়া, গোপন কথা আবার লম্বা ঘটনা! তাইলে চা যোগে শুনা লাগে যে!
কেটলিটা চুলায় বসিয়ে ফিরে আসতেই রাজন জানিয়ে দেয়, কাহিনীর মাঝে কোনও কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না। আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ি। একেবারে শেষে যত ইচ্ছা প্রশ্ন করতে পারবো। মেনে নিই ঘাড় কাত করে। এরপর রাজন কাহিনীতে ঢোকে।
আমাদের প্রথম পরিচয় ছিলো বেশ সাবলীল এবং মাঝে কিছুদিন যোগাযোগও ছিলো না। পরে যখন যোগাযোগ হয়, একটা সম্ভাব্য পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। আচমকা একদিন সে বলে বসে-আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
-আদেশ না প্রশ্ন এটা?
-প্রশ্ন। ধরুন, আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভেঙে গেলো। মানে, কোনও কারণে আমাদের ডিভোর্স হলো। তাহলে কি আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
-তা হঠাৎ এ কথা?
-এমনিই, মনে হলো তাই বললাম।
-মাথায় রাখলাম প্রস্তাবটা।
সে আর কিছু বলেনি। শুধু-এখন রাখি, পরে কথা হবে-বলে ফোনটা কেটে দেয়। আমি ঘাবড়ে যাইনি এই ব্যবহারে। এরকম অনেকবারই হয়েছে যে কথার ফুলঝুরি ছোটাতে ছোটাতে যখন ভাবের জগতে পা রেখেছি মাত্র কিংবা রোমান্টিকতার পিক-এ উঠেছি, সহসাই-পরে কথা বলবো- বলে রেখে দিয়েছে মোবাইলটা। আর প্রশ্নের বেলায়? এমন আরও হাজারটা উদ্ভট জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হয়েছে আগেও। এই যেমন ধর, পুনরায় যোগাযোগের পর কথাবার্তা শুরুর ৩/৪ দিনের মাথায়; তখনও সম্বোধনটা আপনি থেকে তুমিতে নামেনি আমার দিক থেকে, আচমকা বলে বসল-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ঠিক ঠিক জবাব দেবেন?
-হ্যাঁ বলুন।
-আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন?
-না, এমনিই। বলুন না, আমাকে ভালোবাসেন কিনা?
কি বলবো ভেবে উঠতে পারিনি। তখন আমার কথারা কেবল প্রসঙ্গ বদলায়, এক গাছ থেকে অন্য গাছে, এক শাখা থেকে অন্য শাখায় উড়ে উড়ে বসে। কথার মোচড়ানোতে শেষমেষ সে বোধহয় হাল ছেড়ে দেয়।
-ঠিক আছে, এখন বলা লাগবে না। পরে বললেও হবে।
আর আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। পরে আরও অনেকবার এমন অনেক কথাই বলেছে সে। একসময় আর ওসব আমাকে বিচলিত করতো না। আমাদের কথার শুরুটা হতো ফেসবুকে। স্কাইপিতে। দিনের প্রারম্ভে শুভ সকাল জানিয়ে সেই যে শুরু, একেবারে মধ্য রাতে গুড নাইটে সমাপ্তি। দেশে নেটওয়ার্কের যে বেহাল দশা, প্রায়ই নেট কানেকশান চলে যেতো। তখন ফোন কানে লাগাতে হতো। বিশেষ করে রাতের দিকে। সে যখন তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতো কিংবা তার স্বামী যেদিন একটু রাত করে অফিস থেকে ফিরবে বলে জানিয়ে দিতো, তখনই। আসলে, কথা চলতে থাকাতে এক পর্যায়ে গিয়ে পরস্পরের মোহ ছাড়াতে পারতাম না আমরা, কিংবা কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। আমরা কথা বলতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমার ব্যাপারটা ছিলো আলাদা। খুব কম সংখ্যক বন্ধুবান্ধবের সন্নিবেশ ঘটেছে আমার, বিশেষ করে কলেজ আর ভার্সিটি লাইফে। তাদের মধ্যে যে ২/৪ জন মেয়ে বন্ধু আছে তারা স্বামী-সন্তান নিয়ে নিজস্ব সংসারে ডুব দিয়েছে। কালে ভদ্রে যোগাযোগ হয় আমাদের। আমি একা চাকুরীজীবী একজন ছত্রিশে যুবক। একপেশে জীবনের কিছুটা ক্লান্তি দূর করতে আমিও তার আহবানে সাড়া দিই।
এখানে রাজন থামে। ফাঁকে ফাঁকে আমাদের চা চলছে। রাত হিম বাতাসে ভর করে ভোরের দিকে এগুচ্ছে। রাজনের একনাগারে কথা বলার ধরনে-ভঙ্গিমায় আমি সেই কলেজ জীবনের রাজনকে খুঁজে পাই। এতটুকু বদলায়নি। সে বলে যায়...
-শুরুর পর্বটা হবে হবে করছিলো ভাইয়া সম্বোধনে কিংবা ‘আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতন’ একটা সম্পর্কের রেশ ধরে, যা সচরাচরই এরকম ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। আর আমিও আগে থেকেই বুঝে যাই সেটা। প্রশ্রয় না দিয়ে অন্যদিকে ডাইভার্ট করি। বার বার পিছলে যাই। তাছাড়া আমার কিন্তু পাতানো ভাইবোন সম্পর্কটা খুব একটা ভালো লাগে যে এমন না, তবে মন্দও লাগে না। যদিও আমার বাবার একজন পাতানো বোন আছে, তাদের দেখলে ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্কের প্রতি কুর্নিশ মাখা শ্রদ্ধা জেগে উঠে। আমারো ইচ্ছে আছে এরকম একজন বোন পাতাবো। তবে এখন নয়। আর ওকে তো নয়ই।
-বাহ, অদ্ভুত কাহিনী তো! -না বলে পারলাম না।
-তোকে না বললাম কথা না বলতে মাঝে? ভুলে গেছিস?
-এই চুপ করলাম। আর কথা কবো না।
-চট্টগ্রাম আর সিলেট। পাক্কা একদিনের যাতায়াত রাস্তা হলেও আমাদের দেখা হতো প্রায়ই। একবিংশ শতাব্দীতে ডিজিটাল বাংলাদেশে স্কাইপিতে দেখাদেখিটা খুব একটা সমস্যার বিষয় না। তাছাড়া আমার দিক থেকে তো একদমই না। একলা থাকি, ৯৯৯ স্কোয়ারফিটের এক ফ্ল্যাটে। সকালে কাজের মহিলা এসে ঘরদোর পরিষ্কার করে। হাঁড়ি পাতিল, থালা বাসন মেজে ধুয়ে তারপর নাস্তা রেডি করে। যাবার সময় আগের রাতের বাসী ভাত-তরকারি বাটিতে করে নিয়ে যায়। এটা শুরুর দিনই আমি তাকে বলে দিয়েছি। দুপুরে অফিসের কাছে হোটেলে খেয়ে নিই। বিকেলে বাইরে হালকা নাস্তা আর রাতে বাসায় ফিরে নিজ হাতে রান্না করি। রান্নার এই সময়টুকু আমার নিজস্ব। গত ৮ বছর ধরে এরকমই চলছে। মাঝে মাঝে ব্যত্তয় যে ঘটে না তা না। আর বাকিটা সময় আমি একা। অফিস ছুটির দিনে সারাদিন বাসায় থাকি। সিগারেটের নেশা নেই তবে প্রায়ই মোড়ের দোকান থেকে খিলিপান এনে রাখি। ওখানে পানের খিলিটা বেশ বানায়।
কিন্তু ওর দিক থেকে একা হয়ে যাওয়া হয়ে ওঠে না সবসময়। বিবাহিতা, স্বামী-সংসার-চাকুরি সব দিক সামাল দিয়ে তবেই সময় বের করতে হয় তার। ও একটা বেসরকারি অফিসে বসে। যদিও সে চাকরির কোনও দরকার নেই। শ্বশুরের জমানো সম্পদ আর স্বামীর বেতন-ভাতা দিয়ে দিব্যি চলে যায়। আর তার টাকা জমা হয় ফিক্সড একাউন্টে। কিছুটা সময় নিজের করে কাটানোর জন্য নাকি চাকরি করা। আমাকে সব কিছুই বলে সে।সপ্তাহে ৫ দিন সকাল ১০টা-৫টা অফিস। এরই ফাঁক গলিয়ে ঠিক সময় বের করে নেয়।সপ্তাহান্তে যে ২ দিন ছুটি পায়, সংসার গোছাতে গোছাতেই কেটে যায় সময়। তারই ভিতর দিয়ে আমাদের কথা হয়। রান্না করতে করতে কিংবা টিভি দেখতে দেখতে আমরা এগোই।
স্বামীর কিংবা পরিবারের কারো সাথে যখনই রাগ-অভিমান হয় কিংবা মতের বনাবনি হয় না, তখনই আমাকে চরমভাবে খুঁজতে থাকে সে। আমার তো সময়ের অভাব নেই। সংসার নেই, তাই বৌ-ছেলেমেয়ের চিন্তা নেই। তাই যখন তখন ধরা দিই, এবং সব সময় আমার দরজা খোলা রাখি। কোনও বিশেষ চিন্তায় থাকলে মাঝে মাঝে আমিও ভুলে যাই। আবার এক এক সময় ইচ্ছা করেই ভুলতে থাকি।
-সন্ধ্যায় ফোন দিসিলা?
-এখন জিজ্ঞেস করে কি হবে? যখন দরকার ছিলো তখন তো পাইনি?
-একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-তা ব্যস্তই তো থাকবে। আমি কে সময় দেওয়ার?
-সরি।
-ইটস ওকে।
সম্পর্ক অদ্ভুত ভাবে তাড়িত হয়। যখন সুযোগ থাকে তখন সম্পর্ক বাঁধা পড়ে থাকে আলাদা গণ্ডিতে। যেখানে সম্পর্ক থাকে অন্যরকম সম্বোধনে এবং মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ায় আবদ্ধ। আর যখন সম্পর্কের একটা মধুর রসায়নে ডুবছি ২জনে, তখন ১জন থেকে অন্যজন ১দিনের রাস্তা দূরত্বে।-
রাজন দম নেয়। এই নিয়ে ৩দফা চা শেষ হয়ে ৪র্থ দফা চলছে। আমি তন্ময় হয়ে শুনি। রাজন এগিয়ে যায়...
-জানিস, আমাদের কিন্তু সশরীরে দেখা হয়নি। দেখা করার কথা ছিলো, ইচ্ছাও যে ছিলো না তা না। মূলত আমিই এগোইনি ওপথে। আমার অফিস থেকে ২/১০ দিন ছুটি ম্যানেজ করা কোনও ব্যাপার না। চট্টগ্রাম থেকে এই সিলেট ঘুরে আসা তেমন কোনও কষ্টসাধ্য কাজও না। তবে সমস্যাটা হতো ওর দিক থেকে। ছোট্ট খোলামেলা পরিচ্ছন্ন শহর সিলেট। শহরের মাঝেই এক উপশহর; মূলত সিলেটকে নগরীই বলে সবাই। নিশ্চয়ই খেয়াল করেছিস, রিক্সাই একমাত্র ঐ নগরীর আভ্যন্তরীণ বাহন। যে ২/৪ টা ছোট্ট মিনি বাস আর টেম্পো জাতীয় ভটভটি যান আছে, ওইগুলা নগরীর বাইরের এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষায় ব্যস্ত। আর রিক্সায় চড়ে ঘুরাঘুরি করাটা একটু রিস্কি হয়ে যায়।
সিলেট নগরীতে যে ক’খানা ক্যাফে আছে, রেস্টুরেন্ট আছে, ওগুলো ডেটিং করার জন্য উপযুক্ত আড়াল নয়। তবে কলেজ এবং ভার্সিটির ক্যাম্পাসে যদিও প্রেম চলে; আমার এই বয়সটা ওখানেও বেমানান। উপরন্তু যে কোন সময় যে কোন পরিচিত জনের চোখে পড়ে যেতে পারে যুগলরা। তখনই বিপদের সম্ভাবনা।
একটা জিনিস আমি অনুধাবন করেছি, সে আমাকে বরাবরই নিজের দিকে উগ্রভাবে টেনেছে। সেই টানে আমি শুয়ে পড়েছি বিছানায়, ভূতলে লুটিয়েছি আর একটা দেহ সম্বন্ধীয় আকর্ষণের দিকে একটু একটু করে ধাবিত হয়েছি। কেন হয়েছি তারও কারণ আছে বেশ কিছু। সে আমাকে মোবাইলের ওপার থেকে চপাচপ উম্ম উম্ম চুমু খেয়েছে। কোন মেয়ের ঠোঁট নিঃসৃত চুমুর শব্দ এই প্রথম আমি শুনেছি মেয়েটির ঠোঁটের কাছে কান লাগিয়ে। তখন আমার কি যে দশা হয়েছে! প্রতিউত্তরে চপচপ চপচপ করে চুমু দিতে দিতে এই ভাটিবয়সেও আঠারোর যৌবন কচলাতে ইচ্ছে করেছে আমার। পরক্ষণেই সে বলেছে, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখবে না তো আবার? নিজেকে সংযত রেখেছি। শুধু হেসেছি কান ফাটিয়ে। হেসে নিজের দিকটা হালকা করেছি মাত্র। কারণ, তাকে আমি ওভাবে কল্পনা করিনি তখনও। তাই বলতে পারিনি উত্তরে, আমি যে তখন কেবল স্বপ্নই দেখতাম, দেখতে চাইতাম। কিন্তুআজ আমার সবই যে দুঃখের স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন!
একাকী কোনও রাতে যখন তার আদরাকাঙ্ক্ষা জাগতো, তখন আমাকেও জাগিয়ে তুলতো নেটওয়ার্ক দিয়ে। আমি তখন হয়তো গভীর নিদ্রায় কাতরাচ্ছি কিংবা একাকীত্বকে সঙ্গী করে বসে বসে শহুরে জোছনা দেখছি।
-আমার না খুব আদর পেতে ইচ্ছে করছে...
-তোমার বরকে ডেকে নাও।
-তুমি জানোনা আমি এখন বাপের বাড়িতে? আর আমার এমন বরভাগ্য নেই যে ডাকলেই দৌড়ে আসবে।
-তাহলে বল, আমি কি করতে পারি এখন?
-কিচ্ছু করতে হবে না। বাদ দাও।
-বাদ দিলাম। কিন্তু আমারও যে...
হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কি বলতে যাচ্ছি। সে তখন ওখান থেকেই কথার মোড় ঘুরিয়ে ফেলে অন্য দিকে।
আমি তার বরকে জানিনা। তাকে জানার ইচ্ছাও হয়নি আমার। তবে তার সম্পর্কে বলেছে আমাকে। বর সুপুরুষ। বর্ণনায় মনে হয়েছে আমার, এই সুপুরুষ যুবার আদরে সে অখুশি, এটা ভাবা যায় না। আবার ওর মতন এমন কথাসুন্দরী বৌয়ের প্রতি বরের অনাগ্রহ কিংবা উপেক্ষা-হতেই পারে না! আসলে যে বাহ্যিকতাই জীবনের সব না, কিংবা স্পষ্ট করে বললে তৃপ্ত দাম্পত্য না, এটা আমাকে সরাসরি বলতে চায়নি সে। অনেকবার এর ইঙ্গিত পেয়েছি আমি। আবার ভেবেছি, সে কি ইচ্ছে করেই আমাকে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছে?
আমার বরাবরই টাইমিং-এ ভুল। পৃথিবীতে আসতে দেরি হয়ে গেছে কিছুটা। তা না হলে আমার যে বহুমুখী প্রতিভারা আছে সেগুলোর কোনও একটা দিয়ে দিব্যি ভালো একটা অবস্থানে চলে যাওয়া যেত। চেষ্টাও করেছি একের পর এক। কিন্তু বাধ সাধালো আমার অগ্রজরা। যে জায়গাতেই যাই, কোন না কোন একজন ওই জায়গাটা দখল করে আছে-এই দেখতে দেখতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। নিয়তি ভেবে ভুলের মাঝেই বেঁচে থাকার রসদ খুঁজছি।-
এবার রাজনকে জিজ্ঞেস না করে পারি না,-এখানে টাইমিং-এর ব্যাপারটা আসলো কোত্থেকে? আর কেনইবা?
রাজন মুচকি হাসে। উত্তরে সে শুধু একটা পংক্তি আওড়ায়- সময় গেলে সাধন হবে না -এরপর ঘুমিয়ে যেতে যেতে বলে, গুড নাইট বন্ধু।
তখন কাকডাকা ভোর।
দুপুরের দিকে রাজন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। যাবার আগে আমাকে বলে, -কথাগুলা একমাত্র তোকেই শেয়ার করলাম বন্ধু।
বিদায়ের সময় আমি রাজনের চেহারা দেখে অনেক কিছুই আঁচ করতে চেষ্টা করি।
বাসাটা হঠাৎ কেমন ফাঁকা লাগতে শুরু করেবিকেল হতেই। ভিতরটাও।সন্ধ্যার পর থেকে লাগাতার বউকে কল দিচ্ছি। অপারেটর কেবল একই কথা শোনাচ্ছে-সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ল্যান্ডফোনে কল দিয়ে জানতে পারলাম, বউ নাকি বাসায় আসবে বলে সেই বিকেলে বেরিয়েছে। মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে আমার। মুখ থেকে অস্ফুট একটা শব্দ বেরিয়ে আসে- সব্বোনাশ!
বেশ ভালো লাগলো !
ReplyDelete