3

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয় 




ভারতের পূর্বশেষে
আমি বসে আজি; যে শ্যামল বঙ্গদেশে
জয়দেব কবি, আর এক বর্ষাদিনে
দেখেছিলা দিগন্তের তমালবিপিনে
শ্যামচ্ছায়া, পূর্ণ মেঘে মেদুর অম্বর।…

এসেছে নব যৌবনা বরষা। শহুরে সভ্যতার ইঁদুর দৌড়ে এমন করে বর্ষা উপভোগ করার সুযোগ হয়ত একটু কম। তবুও, বৃষ্টিতে ভেজা নরম হৃদয় নিয়ে এই বেশ ভাল আছি।

আজকাল দেখি, এই নগর কেন্দ্রিক সভ্যতায় যৌথপরিবার ভেঙে যাওয়া, মানুষের ‘আত্মকেন্দ্রিক’ হয়ে ওঠা, ইত্যাদি নিয়ে বিদগ্ধজন বেশ বিমর্ষ। আসলে ঘটনাগুলোকে অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হয় একটু স্বস্তি পাওয়া যায়। বস্তুত, এই যৌথপরিবারের ধারণাটা এখন কালের নিয়মেই অবলুপ্তির পথে। এই ধারণাটিকে promote করতে গিয়ে অন্ধের মত শুধু তার ভাল দিক উল্লেখ করলেই চলবে কি? খুব ছোটবেলায় আমিও এক যৌথ পরিবারেরই অংশ ছিলাম। আমার তো মনে হয়, তখনকার চেয়ে এক বৃহত্তর বিশ্বপরিবারের অংশ হিসাবে এখন অনেক বেশী ভাল আছি। আর ‘আত্মকেন্দ্রিক’ শব্দটাও এখন অচল। পরিবর্তে ‘আত্মসচেতন’ শব্দটি অধিক ব্যবহার্য ও গ্রহণীয়। সভ্যতার অগ্রগতির নিজস্ব কারণেই আত্মসচেতনতার প্রয়োজন ছিল। এই আত্মকেন্দ্রিকতা, মানসিক বিকারগ্রস্ততা, ইত্যাদি স্বভাবের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ও তার বহুল ব্যবহার সর্বকালে সর্ব যুগে একই ছিল, সঠিক বলতে কি, আগে বেশী ছিল। আধুনিক মানুষ বরঞ্চ অনেক বেশী balanced । এখন প্রচারের আলোয় আসছে, তাই জানা যাচ্ছে, আগে যেতো না, এইই পার্থক্য মাত্র। যাঁরা বলেন, আগে ভাল ছিলাম – এখন খারাপ আছি, তাঁদের অসম্মান না করেই বলি, তাঁরা সুবিধাভোগী। উন্নতির সুবিধা এবং নিজের সময়ের স্বপ্নসুখ – একই সঙ্গে দুটোই উপভোগ করেন। মেনে নিতেই হবে, আসলে আমরা আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।

এবার একটু অন্য কথা। আগামী মাসে প্রকাশিত হতে চলেছে ঋতবাক বর্ষপূর্তি সংখ্যা। সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুরা লেখার বিষয় নির্বাচনে সচেতন ও যত্নশীল, জানি। তবুও দুটি বিষয়ে আরো একটু যত্নশীল হওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি – সেদুটি হল, বানান এবং যতি চিহ্নের ব্যবহার। যেকোন যতি চিহ্নের পরে space, কমা-র সঠিক ব্যবহার, বাক্যের মধ্যে বিন্দু চিহ্নের (dot) যথেচ্ছ ব্যবহারের লোভ সম্বরণ, ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বেশী সচেতন হতে হবে। বানানের ক্ষেত্রে অভিধানের সাহায্য নেওয়াই যেতে পারে। অতিরিক্ত বানান ভুল লেখার মানহানি ঘটায়। সর্বোপরি বলি, লেখা পাঠানোর আগে নিজেই proof check করুন। আপনার নির্ভুল লেখা আপনার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীলতার পরিচায়ক।

ভাল থাকবেন, সঙ্গে থাকবেন।

শুভেচ্ছান্তে

সুস্মিতা বসু সিং

3 comments:

  1. আত্মকেন্দ্রিক ও আত্মসচেতনতার এমন ক্লাসিক আলোচনা সমৃদ্ধ সম্পাদকীয় এই ঋতবাকের উৎকর্ষতাই ঘোষণা করে।

    ReplyDelete
  2. সম্পাদকীয় বেশ সহজবোধ্য ভাষায় ও ভাবে লিখিত, পড়ে ভাল লাগল। তবে একেবারে শেষ অনুচ্ছেদে এসে একটু থমকালাম। বানান নিয়ে সচেতনতা অবশ্যই কাম্য। অভিধান দেখে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু একই শব্দের বানানে ভিন্নতা দেখেছি। এখানেই দেখছি 'কেন্দ্রিয়' ও 'বেশী' লেখা হয়েছে। প্রতি পত্রিকা তার নিজস্ব বানানা নীতি মেনে চলে, যা লেখকদের বানানের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। আমার এই মন্তব্যের জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে রাখলাম। ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

    ReplyDelete